কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের গান নিয়ে আজকের আয়োজন। কমলাকান্ত ভট্টাচার্য ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমানের তার মাতুলালয়ের জান্না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মহেশ্বর ভট্টাচার্য এবং মাতার নাম মহামায়াদেবী।
কিশোর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে মা মহামায়াদেবী দুই শিশু পুত্র কমলাকান্ত ও শ্যামাকান্তকে নিয়ে পিত্রালয়ে আসেন। মহামায়াদেবী কমলাকান্তকে পড়াশোনার জন্য টোলে ভর্তি করে দেন। টোলে পড়াশোনার পাশাপাশি কমলাকান্ত গোপনে সাধন ভজন অনুশীলন শুরু করেন। বর্ধমানের মহারাজ তেজচন্দ্র তার উচ্ছৃঙ্খল পুত্র প্রতাপচন্দ্রকে শিক্ষা দীক্ষায় উপযুক্ত করে তোলার জন্য কমলাকান্তকে বর্ধমানে নিয়োগ দেন। লাকুড্ডিতে তার বাড়ি তৈরি করে দিলেন। মহারাজ তেজচন্দ্র কোটালহাটে কমলাকান্তের সাধন ভজনের জন্য মন্দির করে দেন। সেখানে কমলাকান্ত কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে সাধনা করতেন। শাক্ত পদাবলী তে রামপ্রসাদ সেনের পরেই কমলাকান্তের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি শতাধিক ভক্তিগীতি রচনা করেন। আগমনী ও বিজয়া পদে তিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন। ১৮২১ খ্রীষ্টাব্দে কমলাকান্ত মৃত্যুবরণ করেন।
Table of Contents
কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের গান :
সমর আলো করে কার কামিনী
সমর আলো করে কার কামিনী!
সজল জলদ জিনিয়া কায়, দশনে প্রকাশে দামিনী৷৷
এলায়ে চাঁচর চিকুর পাশ, সুরাসুর মাঝে না করে ত্রাস,
অট্টহাসে দানব নাশে, রণ প্রকাশে রঙ্গিণী৷৷
কিবা শোভা করে শ্রমজ বিন্দু, ঘনতনু ঘেরি কুমুদবন্ধু,
অমিয় সিন্ধু হেরিয়া ইন্দু, মলিন এ কোন মোহিনী৷৷
এ কি অসম্ভব ভব পরাভব, পদতলে শবসদৃশ নীরব,
কমলাকান্ত কর অনুভব, কে বটে ও গজগামিনী৷৷
ওরে নবমী নিশি না হৈওরে অবসান
ওরে নবমী নিশি ! না হৈওরে অবসান |
শুনেছি দারুণ তুমি, না রাখ সতের মান ||
খলের প্রধান যতো, কে আছে তোমার মতো |
আপনি হৈয়ে হত, বধ রে পরেরি প্রাণ ||
প্রফুল্ল কুমুদবরে, সচন্দন লয়ে করে ;
কৃতাঞ্জলি হৈয়ে, তোমার চরণে করিবো দান |
মোরে হইয়ে শুভদয়, নাশ দিন-মণি-ভয়,
যেন না সহিতে হয় রে ! শিবের বচন বাণ |
হেরিয়ে তনয়া মুখ, পাসরিলাম সব দুখ্ ;
আজি সে কেমন সুখ, হতেছে স্বপন জ্ঞান |
কমলাকান্তের বাণী শন গো গিরিরাণি !
লুকায়ে রেখো না মায়েরে হৃদয় দিয়ে স্থান ||
শ্যামা যদি হের নয়নে গো
শ্যামা যদি হের নয়নে গো !
ইথে বল ক্ষতি কি তোমার ||
জননী হইয়ে এই যন্ত্রণা দেখিয়ে
দয়া না করিলে এ কোন্ বিচার
আগমে নিগমে শুনি পতিত-পাবনী তুমি,
আমি যে পতিত দুরাচার |
অধম-তারণ-বোলে, যদি মনে অভিলাষ,
কমলাকান্তেরে কর পার গো ||
সদানন্দময়ী কালী মহাকালের মনমোহিনী গো মা
সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী গো মা !
তুমি আপন সুখে আপনি নাচ, আপনি দাও মা করতালি ||
আদিভূতা সনাতনী, শূণ্যরূপা শশী-ভালী |
ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন হে মা, মুণ্ডমালা কোথায় পেলি ||
সবে মাত্র তুমি যন্ত্রী, যন্ত্র আমরা তন্ত্রে চলি |
তুমি যেমন রাখো তেমনি থাকি, যেমন বলাও তেমনি বলি |
অশান্ত কমলাকান্ত বলে দিয়ে গালাগালি—
এবার সর্বনাশি, ধ’রে অসি, ধর্মাধর্ম দুটোই খেলি ||
তুমি যে আমার নয়নের নয়ন
তুমি যে আমার, নয়নের নয়ন,
মনেরই মন, প্রাণেরই প্রাণ, শ্যামা !
এ দেহের দেহী, জীবনের জীবন ||
ধর্মার্থ কাম মোক্ষ পরধাম প্রাপ্তি গতি,
অগতির গতি, কারণেরই কারণ |
কমলাকান্ত কুলকান্ত,
প্রবল কৃতান্ত ভবতারণ ||
রংগে নাচে রণ-মাঝে
রংগে নাচে রণ-মাঝে, কার্ কামিনী মুক্তকেশী |
হৈয়ে দিগম্বরী ভয়ঙ্করী, করে ধরে তীক্ষ্ণ অসি ||
কে রে তিমির বরণী বামা, হৈয়ৈ নবীনা ষোড়শী |
গলে দোলে মুণ্ডমালা, মুখে মৃদু মৃদু হাসি ||
বিনাশে দনুজগণে, দেখে মনে ভয় বাসি!
দ্যাখো, শব-ছলে চরণ-তলে, আশুতোষ পড়িল আসি |
কে রে ! ডাকিনী যোগিনী, মায়ের সঙ্গে ফেরে অহর্নিশি |
ঘন ঘন হুহুঙ্কারে, দিতির নন্দন নাশি ||
কমলাকান্তের মন অন্য নহে অভিলাষি |
আমার কালো-রূপ অন্তরে ভেবে, সদানন্দ সদা সুখী।।
নব সজল জলদ কায়
নব সজল জলদ কায় |
কালো রূপ হেরিলে আঁখি জুড়ায় ||
কপালে সিন্দুর, কটিতে ঘুংগুর, রতন নূপুর পায় |
হাসিতে হাসিতে কত,
দানব দলিছে, রুধির লেগেছে গায় ||
অতি সুশীতল চরণ-যুগল, প্রফুল্ল কমল-প্রায় |
কমলাকান্তের মন নিরন্তর, ও চরণে
ভ্রমর হইতে চা
কেন রে আমার শ্যামা মাকে বলো কালো
কেন রে আমার শ্যামা মাকে বলো কালো।।
যদি কালো বটে, তবে কেন ভূবন করে আলো ?
মা মোর কখনো শ্বেত, কখনো পীত,
কখনো নীল-লোহিত রে ;—
আমি জানিতে না পারি জননী কেমন,
ভাবিতে জনম গেল রে।।
আরও দেখুন: