বিদ্যাপতির গান নিয়ে আজকের আয়োজন।কবি বিদ্যাপতির জন্ম দ্বারভাঙা জেলার মধুবনী পরগনার বিসফী গ্রামের এক বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার কৌলিক উপাধি ঠক্কুর বা ঠাকুর। বংশপরম্পরায় তারা মিথিলার উচ্চ রাজকর্মচারী ছিলেন। শস্ত্র, শাস্ত্র, রাজ্যশাসন ও সংস্কৃতি সাহিত্যে তাদের দান বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য। তিনি যে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন ছয়জন রাজা ও একজন রানীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ থেকেই তার স্বীকৃতি মেলে।
Table of Contents
বিদ্যাপতির গানঃ
বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিলি কবি। বঙ্গদেশে তার প্রচলিত পদাবলীর ভাষা ব্রজবুলি। কথিত আছে যে পরমপুরুষ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রতিদিন তার রচিত পদ গাইতে ভালবাসতেন। বাঙালিরা চর্যাগীতির ভাষা থেকে এই ব্রজবুলীকে অনেক সহজে বুঝতে পারেন। বিদ্যাপতিকে বাঙালি কবিদের অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। বিদ্যাপতিকে কোন কোন কবি দেহবাদি কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কবি স্মৃতিকার রাজনীতিবিদ ব্যবহারবিদ ও আখ্যান লেখক হিসেবে তিনি সুপরিচিতি। তার রচনাবলির মধ্যে রয়েছে কীর্তিলতা ভূপরিক্রমা, কীর্তিপতাকা, পুরুষ পরীক্ষা, শৈবসর্বস্বসার, গঙ্গাবাক্যাবলি, বিভাগসার, দানবাক্যাবলি, লিখনাবলি, দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী। তিনি প্রায় আট শ’ পদ রচনা করেন। জীবৎকালে বিখ্যাত কবি ও পণ্ডিতরূপে তার প্রতিষ্ঠা ছিল।
মিথিলার কবি হলেও অমর পদাবলি অচিরেই সমগ্র বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মিথিলার উপভাষা ব্রজবুলিই তার পদাবলির বাহন। এই ভাষার ধ্বনি-মাধুর্য ও সঙ্গীতময়তা বাংলা কাব্যকে, বিশেষ করে বৈষ্ণব পদাবলিকে সমৃদ্ধ করেছে।কবি বিদ্যাপতি ‘মৈথিল কোকিল’ ও ‘অভিনব জয়দেব’ নামে খ্যাত।
এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।
সখি হামারি দুখের নাহি ওর।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর॥৩॥
ঝঞঝা ঘন গরজন্তি সন্ততি ভুবন ভরি বরিখিন্তিয়া।
কান্ত পাহুন কাম দারুণ সঘনে খর শর হন্তিয়া॥৭॥
কুশিল শত শত পাত-মোদিত মূর নাচত মাতিয়া।
মত্ত দাদুরী ডাকে ডাহুকী ফাটি যাওত ছাতিয়া॥১১॥
তিমির দিগ ভরি ঘোর যামিনী থির বিজুরি পাঁতিয়া।
বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়বি হরি বিনে দিন রাতিয়া॥১৫॥
কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।
কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর॥
পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।
পিয়ামুখ দরশনে তত সুখ ভেল॥
নির্ধন বলিয়া পিয়ার না কৈলু যতন।
অব হাম জানলু পিয়া বড় ধন॥
আঁচল ভরিয়া যদি মহানিধি পাঙ।
তব হাম দূর দেশে পিয়া না পাঠাঙ॥
শীতের ওড়নি পিয়া গিরিসের বাও।
বরিসার ছত্র পিয়া দরিয়ার নাও॥
ভনয়ে বিদ্যাপতি শন বরনারী।
সুজনক দুখ দিবস দুই চারি॥
হাথক দরপণ মাথক ফুল।
হাথক দরপণ মাথক ফুল।
নয়নক অঞ্জন মুখক তাম্বুল॥
হৃদয়ক মৃগমদ গীমক হার।
দেহক সরবস গেহক সার॥
পাখীক পাখ মীনক পানি।
জীবক জীবন হাম ঐছে জানি॥
তুহু কৈছে মাধব কহ তুহুঁ মোয়।
বিদ্যাপতি কহ দুহু দোহাঁ হোয়॥
আরও পড়ুনঃ