রাধারমণ দত্তের গান নিয়ে আজকের আয়োজন। রাধারমণ দত্ত , পুরো নাম জন্মসূত্রে “রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ”। রাধারমণ দত্ত একজন বাংলা সাহিত্যিক, সাধক কবি, বৈঞ্চব বাউল, ধামালি নৃত্য-এর প্রবর্তক। সংগীতানুরাগীদের কাছে তিনি রাধারমণ বলেই সমাধিক পরিচিত। বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোককবি রাধারমণ দত্ত। তার রচিত ধামাইল গান সিলেট ও ভারতের বাঙ্গালীদের কাছে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। রাধা রমন নিজের মেধা ও দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। কৃষ্ণ বিরহের আকূতি আর না-পাওয়ার ব্যথা কিংবা সব পেয়েও না-পাওয়ার কষ্ট তাকে সাধকে পরিণত করেছে। তিনি দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানা ধরনের কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন।
Table of Contents
রাধারমণ দত্তের গান:
রাধারমণ কালক্রমে তিনি একজন স্বভাবকবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রচনা করেন হাজার হাজার বাউল গান । লিখেছেন কয়েক শ ধামাইল গান। রাধারমণ দত্ত একাধারে গীতিকার, সুরকার, ও শিল্পী ছিলেন। রাধারমণ একজন কৃঞ্চপ্রেমিক ছিলেন। কৃঞ্চবিরহে তিনি লিখেছেন অসংখ গান। আসুন দেখে নেই তার গানের সম্ভার:
বসে ভাবছ কীরে মন ভোমরা – রাধারমণ দত্ত
বসে ভাবছ কীরে মন ভোমরা
ছয় চোরায় ডুবাইল তোমারে।
দিন গেল বেপথ বেসেবে, বুঝি আমার কর্মদোষে
আমার সাধন সিদ্ধি কিছুই হইল না রে।।
একটি গাছের ভাল পাতা নাই তার কোনো কাল
বেটু ছাড়া ধরছে ফুলের কলি রে মন ভোমরা।
ডাল আছে পাতা নাই এ ফুল ফুটিয়াছে সই
পদ্ম যেন ভাসে গঙ্গার জলে রে ভোমরা
ভাইবে রাধারমণ বলে ঢেউ উঠিল আপন মনে
যে গান ভাবিক ছাড়া বুঝবে না পণ্ডিতেরে।
সজনী গো গুরু ধন ধন চিনলাম না – রাধারমণ দত্ত
সজনী গো গুরু ধন ধন চিনলাম না।
অমূল্য ধন গুরুর চরণ ভজন হইল না।।
বেচিলাম জিনিস নগদ বাকী, লইয়া গেল দিয়া ফাঁকি
আর কতদিন বসে থাকি আসল উসল হৈল না।।
আমার মনেতে মন পাগল, বনে পাগল ময়না
হৃদয় পিঞ্জিরার পাখি সিয়ালে বেড়ায় না।
কামনদীতে তিন ধারা চিনতে পারলাম না
সেই নদী চিনতে পারলে তন্ত্ৰমন্ত্র লাগে না।
শ্রীরাধারমণ বলে আমার ঘাটে যাওয়া হইল না
বেভুলেতে দিন গায়াইলাম গুরুর চরণ ভজালাম না।
ওরে পাষান মন রে জনমে হরির নাম ভোইল না – রাধারমণ দত্ত
ওরে পাষান মন রে জনমে হরির নাম ভোইল না।
ঐ হরির নাম লইলেরে শমনের ভয় আর রবে না।।
যখন ছিলে মা-র উদরে মহামায়ায় দামোদরে
মহামায়ার মায়ায় পড়ে গুরু কী ধন চিনলায় না।।
মহামায়ায় ছলে কোন রে মন ভুইলে রলে।
এ দেহা প্ৰাণান্ত হলে ঘৃণায় কেগ ছবে না।।
ধন যত সব রবে পড়ি সিন্দুকে সব রবে পড়ি
মইলে নিবে কড়ার কড়ি আম্রকাষ্ঠ দুইচার খানা।।
তীক্ষ্ণ আনন দিবে জ্বাইলে তার মাঝে পালাইয়ে
যতসব মায়া চাইলে সম্পর্কে কিছুই রবে না।।
যে নামে কারুল শঙ্কা যাবে তারে কোন ভেইলাছ রে
মিছে পরবাসে করতে আছ কালযাপনা।।
কালগত যবে হবে দারাসুত কোথায় রবে
ভাইবে রাধারমণ বলে সঙ্গের সঙ্গী কেও হবে না।।
কৃষ্ণনাম লও রে মন দুরাচার – রাধারমণ দত্ত
কৃষ্ণনাম লও রে মন দুরাচার
কৃষ্ণ বিনে সকলি অসার।।
পানি উঠে ভাঙ্গা নাওয়ে কার ভরসায় বৈঠা বাও রে
নৌকা আস্তে আস্তে তল অইলো রে।।
যখন নৌকা অইল অতুল অখন করো কার বল রে
ভাই বন্ধু সবই রইলা চাইয়া রে।।
সঙ্গে নিলাম মাঝে বেটা সে ফালাইয়া গেল বৈঠা
শুধু নৌকা ফিরে ঘাটে ঘাটে রে।
ভাইরে রাধারমণ বলে মানব জনম যায় বিফলে
জীবন সহিতে অইবায় পার।
ও চোখে আমার শুরু আর শেষ – রাধারমণ দত্ত
ও চোখে আমার শুরু আর শেষ
আমারি জীবন আর আমারি মরণ।
একই আকাশে দেখেছি যে আমি
পূর্ণিমা চাঁদ আর চন্দ্রগ্রহণ।।
তুমি দীপের আলো, তুমি আলেয়া।
পালতোলা তরি তুমি, ঝড়েরি খেয়া।
যে খেলা খেলেছো, তখনি সে ভাবে।
খেলে গেছে, এ মন।
তুমি ফাগুনে বেলা, ফুলেরি হাসি
সর্বনাশে দিনে তুমি হাহাকারের বাঁশি।
সুখেরি বাঁধনে, ব্যাথারি রোধনে,
করেছি আপন।
এই যে দেহতরী কে করিল সুগঠন – রাধারমণ দত্ত
এই যে দেহতরী কে করিল সুগঠন
মেস্তরিরে চিনিলায় নারে মন।।
ঐ যে নাওয়ের আছে জোড়া জোড়ায় জোড়ায়
গিলটি মারা
কে করিল গঠন।।
লোহা ছাড়া তক্তা মারা, কিবা শোভা পাটাতন।।
এই যে নাওয়ের ষোল্লতালা
খুল্লায় নারে ও মন ভোলা ঘুমে অচেতন।।
তালা খুলবে যখন দেখবে তখন
মোহর মারা আছে ধন।।
একবার খুলে দেখা রে নয়ন।
রাধারমণ বলে দিল কালা তোর
জন্ম হইল অকারণ।
আরও দেখুন: