আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পশ্চিম বঙ্গে কবি। পূর্ববঙ্গের মতো পশ্চিমবঙ্গেও চারণ কবি পাগলাকানাইয়ের আধিপত্য ছিল। যথেষ্ট । এমনকি হুগলীর এমাম বাড়িতেও (টিপু সুলতানের বংশধর) কবির জানা। শোনা ছিল বলে জানা যায় । সারা বাংলাতেই কবির আনা গোনা ছিল।
পশ্চিমবঙ্গে কবি তার দলবল নিয়ে যে সব স্থানে বিশ্রাম নিতেন, তন্মধ্যে হুগলী এমাম বাড়ি, আলমডাঙ্গাধীন জীরেট গ্রামের রহমান খার বাড়ি, হাওড়া থানার। জানাপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন শাহর বাড়ি। এ তথ্য সরবারাহ কারীর বাড়ি, আজমীর শরীফ থেকে আগত বাছা ফকিরের বাড়ি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই বাছা ফকিরের বাড়ি ভাব জগতের রাজা লালন শাহ্ও মাঝে মাঝে এসে থাকতেন । এখানে দুই কবির মহা মিলনে চলতো গভীর আলোচনা ।
উক্ত অঞ্চলে তৎকালে বয়াতি কবি গানের মধ্যে দহঙ্গা থানাধীন রাইকোলা গ্রামের ওহাজ উদ্দিন শাহ্, বশিরহাট জেলার বাদুরা থানাধীন পান্তাপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম ফকির ও বাল্লক শাহ্ ফকির, উক্ত থানার জানাপুর গ্রামের বাবু ফকির প্রভৃতি। বাবু ফকির এতো ভালো লেখাপড়া জানতেন যে সাধারণ লোকে তাকে বি.এ. পাশ বলে মনে করতো।
জানাপুর গ্রামের নসিম সাহ্ ছিলেন কবির শিষ্য ও পালিদোহার। এ তথ্য পরিবেশক কবি শিষ্য ও পালি দোহার এলেম ফকিরের বাড়ি ছিল বারাসাত থানার কুমড়ো কাজীপুর গ্রামে। ১২৬৮ বাংলা সনে তার জন্ম হয় । শেষ বয়সে তিনি যশোরের শহরতলীতে ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবন যাপন করতেন। ১৯৭২ সালে যশোর শহরের খাজা গরীব শাহের মাজারে লেখকের সহিত সাক্ষাত হলে এ তথ্য জানা যায় । অন্য পরিচ্ছেদে এলেম ফকিরের কথা বলা আছে ।
Table of Contents
পশ্চিম বঙ্গে কবি

ঝিনাইদহ কোর্টে কবি
ঝিনাইদহ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হবার বহু পূর্বেই এখানে মামুদশাহী তহশীল (কাছারি) স্থাপিত হয়। হেস্টিংসের আমলে ১৭৯৩ খৃঃ এখানে একটা থানা স্থাপিত হয় । এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, নীল বিদ্রোহ দমন করা । দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষা ও নীল বিদ্রোহ দমনের জন্য যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন করার প্রয়োজন দেখা দেওয়াই এখানে একটা থানা স্থাপন করা হয়।
এই নীল বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করলে এখানে মহকুমা প্রতিষ্ঠা করার দরকার হয়ে পড়ে এবং ১৮৬২ খৃঃ থানাটিকে মহকুমাতে উন্নিত করা হয়। মহকুমা প্রতিষ্ঠা মহোৎসবে ঝিনাইদহ কোর্ট প্রাঙ্গনে বিরাট এক পাল্লা গানের আয়োজন করা হয় । চারণ কবি পাগলা কানাইও পাল্লার দাওয়াত পান। ইদু বিশ্বাস এ জগতে এক উদীয়মান বয়াতি কবি। মাত্র কিছুদিন পূর্বে নলডাঙ্গা রাজাবাড়িতে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন স্বতন্ত্র হিসাবে।
ইতিপূর্বে সে কথা আমরা উল্লেখ করেছি। ওস্তাদের সাথে কোর্টের জলসাতে যোগদানের উদ্দেশ্যে বেড়বাড়ি উপস্থিত হলেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে ঐ রাতেই কবি পাগলা কানাইয়ের শিশু পুত্র ইরাদালী হঠাৎ করেই মারা যায়। ফলে, কবি আর আসর করতে গেলেননা, সঙ্গী-সাথীদের পাঠালেন।
কিন্তু ইদু বিশ্বাসের সাথে কোন বয়াতি গান করে টিকে থাকতে না পারায় কৃর্তৃপক্ষের অনুরোধ সুলতান মোল্লাহ কবিকে নিতে আসেন । অনেক ভেবে-চিন্তে কবি আসরে উপস্থিত হলেন। এসেই তিনি বুঝতে পারলেন ইদু বিশ্বাসের জয়-জয়কার। শিষ্যের সাফল্যে তিনি অত্যন্ত পুলকিত হলেন ।
আসরে উঠে তিনি দেখতে পেলেন, স্বয়ং ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বসে সভার মাঝে । পাশে দারোগা-পুলিশ, বার শ্রেষ্ঠ উকিল বাবু অমৃত লাল কর, পবহাটির হরি মজুমদার, গিরিশ চন্দ্র চৌধুরী, ভুটিয়ারগাতীর ময়জদ্দিন জর্দার, মুরোদ্দার সলিম উল্লাহ চৌধুরী প্রভৃতি খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ বসে আছেন । কবি প্রথমে ম্যজিস্ট্রেট সাহেবকে সালাম জানিয়ে চার পাশ একবার দেখে নিলেন। শুরু করলেন গান-
“শোনেন শোনেন মিস্ত্রি বাবু দরখাস্ত আমার ।
আমি পুত্র শোকে অনাথিনী,
কান্দে ফিরি রাত্র দিনি,
আমার গান করা ভার ।
এসেছি এবার দশের চরণ দেখিবার ।
ওরে ইদু বিশ্বাস ওস্তাদ ভাল,
কথায় কাজে জানা গেল,
ওদের হয়েছে এখন নতুন ধার” । (১০৮ নং পদ)
প্রথম গানেই তিনি (কবি পাগলা কানাই) ম্যজিস্ট্রেট কর্তৃক পুরষ্কৃত হন । কবি পুরষ্কার গ্রহণ করে সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করলেন ।
রোগাক্রান্ত কবি
অতি অল্প বয়সে চারণ কবি পাগলা কানাইয়ের নাম দেশ-বিদেশে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। তার নাম, যশ, খ্যাতি এবং সমসাময়িক এক শ্রেণির বয়াতি কবিগণ হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরতে থাকে। শুধু তাই নয়, এসব বিরুদ্ধবাদী বয়াতিগণ কবিকে চিরতরে সরিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে যাদু-টোনা শুরু করে দেয়। এক দিন কবি হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হলেন । গায়ে ভীষণ ব্যাথা শুরু হলো। সর্বাঙ্গ জ্বলে পুড়ে যেতে লাগলো।
সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। সপ্তাহের মধ্যেই তিনি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলেন। শেষে জীবনের আশা পর্যন্ত রইলো না। শিয়রে বসে পরিবার পরিজন, শিষ্যবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ীগণ সবাই মৃত্যুর ক্ষণ গুণতে লাগলো। সবার মুখে এই কথা, বয়াতি সাহেব আর বাঁচবেন না । এ সম্পর্কে কবির ভাসায় স্পষ্ট উক্তি পাওয়া যায় যে,
“আর কি কানাইয়ের সে দিন আছে,
তিরিক্ষে জ্বরে বল বুদ্ধি গেছে,
শুকাইয়া পোড়া সার”
এ সময় গয়েশপুর গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বিশ্বাস’ নামে এক বিখ্যাত কবিরাজ ছিলেন। তার সাথে কবির যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিলো । তিনি কবির গৃহ চিকিৎসক ছিলেন। বহু ঔষধ-পত্রের পর কবি একটু আরাম বোধ করলেন বটে কিন্তু বিছানা ছাড়তে পরলেন না। শেষে কবিরাজ মশাই ব্যর্থ হয়ে বললেন যে, এ রোগ সারবার নয় । এবার সবাই হাল ছেড়ে দিয়ে বসলেন। শেষে ব্যার্থ চেষ্টাও বন্ধ করে দিলেন। কবির পক্ষে হলো এ এক অসহনীয় জ্বালা।
রোগও যায় না বা তিনি নিজেও দুনিয়ার মায়া কাটাতে পারেন না । কিছুদিন পর শীতের প্রভাব দেখা দিলে কবির শুকনো হাড়ে রস নামতে শুরু করলো । সবার ধারণা কবি এবারই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করবেন । সমস্ত শরীর ফুলে বালিশ । মনে হলো, কখন জানি শরীর ফেটে যায় । কবির জবানিতে-
“আবার আশ্বিন গেলো কার্তিক এলো শীতের আমল,
লোকে বলে পাগলা কানাই এই বেলা মলো ।
ওর হাতে-পায়ে দেখি রস নেমেছে,
বলি ভাই দশের কাছে, ওর নলি শুকিয়ে গেছে,
মাথা ফুলে হলো দেখ ধান সিদ্ধ তলো”।
হাতে পায়ে রস নেমেছে দেখে কবিরাজ মশাই একটু আশার আলো দেখতে পেলেন। তিনি বললেন, এ রোগ সারতে পারে তবে সে বড় দুঃসাধ্য কাজ। বয়াতি ভাইকে বাঁচাতে হলে আড়াই সের অবিবাহিত যুবতী মেয়েদের বক্ষস্থে ঘাম লাগবে।
কিন্তু এ অনুপান সংগ্রহ করা নিয়ে সবাই এ মহা চিন্তা-ভাবনার পড়লো । এও কি সম্ভব মিয়া সলিম উল্লাহ চৌধুরীর কথা আগেই বলেছি । তিনি মাঝে মধ্যে কবির খোঁজ, খবর নিতেন। তিনিও কবিরাজের কথা শুনতে পেলেন । কবিকে আশ্বাস দিয়ে চৌধুরী সাহেব বাড়ি ফিরে আসলেন এবং অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ঘাম সংগ্রহের কাজ শুরু করলেন ।
পাতলা ফিনফিনে পরিস্কার সাদা কাপড়ের টুকরো (যা একবার মাত্র ব্যবহার যোগ্য), পিতলের পাত্র ও সিদ্ধ ধান ভেনে চাল সংগ্রহ করবে । সাথে সাথে গায়ের ঘাম মুছে পাত্রে জমা করবে । এভাবে চৌধুরী সাহেব ৩/৪ সের ঘাম যোগাড় করে বন্ধুত্ব ও মহব্বতের আর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
প্রচলিত আছে যে, এ মাথ যোগাড় করতে চৌধুরী সাহের ৮০ মন ধান ভারানীদের দিতে হয়েছিল। কবিরাজ মশাই ঘাম হাতে পেয়ে খুব খুশী হলেন । তিনি তখনই ঔষধ তৈরি করে ফেললেন । নাম ‘বিষ বড়ি’। আল্লাহর রহমাতে ‘বিষ বড়ি’ মন্ত্রের মতো কাজ করলো। কবি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলেন। কবিরাজ পথ্য দিলেন। কবির ভাষাই-
“ঈশ্বর চন্দ্র কবিরাজ ছিল গয়েশপুর তিনার বাড়ি ।
অমাবশ্যার দিন গত রাত্রি খাওয়াইলেন বিষ বড়ি ।
তিন দিন পর ধিকি ধিকি করে উঠলো মরা নাড়ি ।
হাত ধরিয়া কবিরাজ কয় কিঞ্চিত আছে দেরী।
তোরা ডালিম আন, কুশোর আন, কানাইকে সত্বেক করি”। (১১৪ নং পদ)
দীর্ঘ দিন রোগ ভোগের পর মৃত প্রায় কবি নব জীবন লাভ করলেন। মহান আল্লাহ্র দরবারে হাজারও কোটি শুকরিয়া আদায় করলেন । পরে কবিরাজ মশাই জানান যে কবিকে যাদু-টোনা করা হয়েছিল । ভগবানের অশেষ দয়া তাই বয়াতি ভাই বেঁচে গেলো । পরবর্তীকালে কবির কণ্ঠে সুন্দর করে ধরা পড়েছে,
“ও মমিন ভাই সালাম আলায়কুম-
চাই দশের চরণ ধূলি” । (১১৪ নং পদ)

ঢাকা জেলায় কবি
চারণ কবি পাগলা কানাইয়ের নাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থান থেকে পাল্লা গানের দাওয়াত আসতে থাকে। এমনি এক দাওয়াত মোতাবিক পূর্বাঞ্চলে দলবল নিয়ে একদিন যাত্রা করলেন। নদী মাতৃক এই বাংলাদেশ। কবি একখান ‘ভাওলে নৌকা ভাড়া করলেন ।
পথে কবির দলবল ভীষণ এক ঝড়ের কবলে পড়েন । শিষ্য ইদু বিশ্বাস, ছমির, সুলতান, অমেদ, সহোদর উজোল ও পুত্র গহর আলি। ঝড়ে নৌকা তলিয়ে গেলে অনেক কষ্টে তীরে পৌঁছান । এই পাল্লা গান গাইতে যান ঢাকা জেলার হাটুরে গ্রামের নকোড় আলি মিয়ার বাড়ি । পথে বিপদের কথা শুনে নকোড় মিয়া খুবই দুঃখ প্রকাশ করেন । পরদিন গানের আয়োজন করা হলো।
কবি আসরে যাবার আগেই শ্রোতা মণ্ডলীর মধ্য থেকে নানা প্রকার উদভট কথা কবির কানে আসতে থাকে। আজগুবী ও উপহাস পূর্ণ কথা সহজভাবেই গ্রহণ করলেন । একটা সুন্দর বাক্যের মাধ্যমে সে কথার উত্তর দিলেন-
“এসে ভাই পূর্ব দেশে রইলাম বসে- কেউ চেনে কেউ চেনে না,
কেহ বলে পাগলা কানাই ওতো হবে না । ওর গণেশের মতো দত্ত ছিল,
কেহ কেহ করে আনা গোনা ।
কানাই হলি শোন বলি-
পরণে ছিল দাড়ে তেনা,
থাকতো দন্তের নিশানা।* (১১০ নং পদ)
রংপুর জেলায় কবি
একবার কবি উত্তর বঙ্গের রংপুর জেলায় এক পাল্লা গানের দাওয়াত রক্ষা করতে যান। সেখানে গান করার সময় শ্রোতা মণ্ডলীর মধ্য থেকে কবি সম্পর্কে নানা প্রকার কথার সৃষ্টি হয় । কেউবা রূপ নিয়ে উপহাস করে, কেউবা আবার কবির বয়স নিয়ে ব্যস্ত। আবার জীবিত বা মৃত নিয়েও নানা প্রাকার কথায় শোরগোল শুরু হয়ে গেল । চারণ কবিদের মধ্যে আসরের কোন বিষয়েই নজর এড়ায় না । আমাদের কবির ও সে সব দৃষ্টি এড়ায় নি। সব কথাই তিনি লক্ষ্য করলেন এবং আসরে উঠে গাইলেন-
“ভাইরে এই উত্তর দেশে আসে
পাগলা কানাই বেড়াচ্ছে ভা’সে । ওর রূপ দেখে সব লোকেতে হাসে।
“ভাইরে এই উত্তর দেশে আসে, কেহ কেহ বলে ও ভেদু ছিল কোন দেশে ।
বিজুত আজও মরিনি-বাঁচে আছে ।
আমি করবো কিরে ভাই সকলরো- বিধি এই রূপ গঠেছে।
তোমরা দোয়া করো সোনার কানাই
থাক থাক থাক প্রাণে বাঁচে” (১১৩ নং পদ)
(বিষয়খালী নিবাসী জনাব শরাফত হোসেন বয়াতি ৭২ খৃঃ কবির জন্ম বার্ষিকীতে এই ঘটনাটা পরিবেশন করেন।)
বেলতলা গ্রামে কবি
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড থানাধীন বেলতলা গ্রামের খোকাই মণ্ডলের বাড়ি কৰি একবার পাল্লা গান করতে যান। এই জলসাতে কবি সাময়িকভাবে একটু বিব্রত হয়ে পড়েন। একটা গানের কারণে শ্রোতা মণ্ডলী কবির উপর ক্ষেপে যায়। কিন্তু তারা জানে না যে চারণ কবির কাছে ছল-চাতুরী খাটে না। সাধারণ লোকের কাছে বোধগম্যতা যত কঠিনই হোক না কেন, সাধক কবির কাছে তা সচ্ছ, সহজ ও সরল। সেটা ছিল-
“শ্বাশুড়ীতে আশায় করে ও পরমেশ্বর-
জামাই যদি হতো মোর পতি ।
বসুমার কন্যা ছিল রামের সংগের সাথী ।
রাম চন্দ্র বনে গেলো, বসুমার আশায় ছিল,
ও রাম রাজা হলি হতো মোর পতি ।…
(১৩০ নং পদ)
এ গানকে কেন্দ্র করে বিপক্ষ বয়াতিগণ সাধারণ লোককে ক্ষেপিয়ে তোলে। এক পর্যায়ে হিন্দুরা ঘোষণা দিয়ে বসলো যে পাগলা কানাই এর অর্থ করে না দেয় তবে তার মাথা কেটে নেয়া হবে। বিপক্ষ দল এ গানের অর্থ জানলেও কবির বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলে। পাল্লায় কবির সাথে না পেরে অন্য ভাবে জব্দ করাই ছিলো তাদের বাসনা। কবি স্বহাস্য মুখে পরবর্তী আসরে ঘোষণা করলেন, –
“গায়েন শুনে লোকে ভাবে মনে মনে,
মিথ্যা কথা বলছে কানাই ঠকাবার জন্যে ।
আমি শাস্ত্র ছাড়া ধুয়া বান্দি নাই কভু দিনে ।
বলি কথা সভার বিদ্যমানে ।
যদি না পারো তো শুনে নিয়ো,
পাগলা কানাই করে দেবে মানে””।
সীতাকে মাটির মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। অর্থাৎ বসুমা সীতার মাতা। সীতারে সাথে নিয়ে রামচন্দ্র বনে গেলেন । তাই বসুমার আক্ষেপ যে রামচন্দ্র বনবাসে না গেলে রাজা হতেন অর্থাৎ পতি হতেন ।

উত্তর গানের প্রকৃত অর্থ শোনার পর হিন্দু ভায়েরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলো এবং তাদের ভুল বোঝার জন্য পাগলা কানাইয়ের নিকট মাফ চাইলেন । কবি শ্রোতা মণ্ডলীকে বিনয় বানে তুষ্ট করলেন। তবে, বিপক্ষ দলকে তিনি ছাড়লেন না। কথার বানে তাদের তীরবিদ্ধ করলেন । তিনি গাইলেন,-
“গো-তালা তাল হোস বে-তাল,
তোরা তালকানা হোস কেন?
ইস্তে গাদন গাদবো তোদের,
তোদের কোনই স্মরণ নাই ।
হলদি খালিই বুঝি রাঙ্গা ছেলে হয়” ।
(১২৩ নং পদ।)
আরও দেখুনঃ
