পাগলা কানাই এর গান

আজকে আমরা পাগলা কানাই এর গান এর সংস্করণ প্রকাশ করবো। পাগলা কানাই বা কানাই শেখ আধ্যাত্নিক চিন্তা চেতনার সাধক-অসংখ্য দেহতত্ত্ব, জারি, বাউল, মারফতি, ধূয়া, মুর্শিদি গানের স্রষ্টা। পাগলা কানাই ১৮০৩ সালে তৎকালীন যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার, বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার, বেড়বাড়ি গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম কুড়ন শেখ, মায়ের নাম মোমেনা খাতুন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কানাই সবার বড়। ভাইয়ের নাম উজোল শেখ, বোন স্বরনারী। বাল্যকালেই তার বাবা কুড়ন শেখ মারা যান।

পিতৃহারা হয়ে কানাই ভবঘুরে হয়ে যান। জীবনের তাগিদে মোমেনা খাতুন কোনো উপায়ান্তর না দেখে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চেউনে ভাটপাড়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তিনিও মারা গেলে বোন স্বরনারী দুই ভাইকে নিজের আশ্রয়ে বেড়বাড়ি নিয়ে আসেন। বোনের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা ভালো হওয়াতে কানাইয়ের গান চর্চার রাস্তা আরও সহজ হয়। কানাই বোনের বাড়ির গরুর পাল চরাতেন আর গান বাঁধতেন, তাতে সুর দিতেন। ছোটবেলা থেকেই পাগলাকানাই দুরন্ত প্রকৃতির, পাগলাটে স্বভাবের এবং আধ্যাত্ম প্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। এ খেয়ালীপনার জন্যে শৈশবে স্নেহবশতঃ লোকে তার নামের সাথে “পাগলা’ অভিধাটি (উপনাম) যুক্ত করে। তার কর্মকীর্তির সাথে এ পাগলা উপাধিটি অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত হয়েছে।

সুর দেওয়া হয়ে গেলে আপন মনে গলা ছেড়ে তা গাইতেন। অস্থির পাগল এই স্বভাবকবির কোনো জায়গায় বেশি দিন ভালো লাগত না। গরু চরানো রেখে কাজ নেন মাগুরা জেলার আঠারখাদার জমিদার চক্রবর্তী পরিবারের বেড়বাড়ির নীলকুঠিতে। দুই টাকা বেতনের সেই খালাসির চাকরি বেশি দিন করা হয়ে ওঠেনি। গানের টানে চাকরি ছেড়ে পথে বের হন আবারও।

গরু চরাতে গিয়ে ধুয়ো জারীগান গাইতেন এবং উপস্থিত সবাই তার সঙ্গীত মুগ্ধ হয়ে শুনত। এভাবে ধুয়োজারীতে তার হাতে খড়ি হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তার কোন সঙ্গীত শিক্ষা না থাকলেও এখানকার তৎকালীন আউল-বাউল, সাধু-ফকির প্রভৃতি গুণীজনের পদচারণা সর্বোপরি জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কবির আত্মার আত্ম-জিজ্ঞাসা ও আত্ম-অন্বেষণ তাকে প্রখর অধ্যাত্মজ্ঞানে পরিপূর্ণ করে তোলে। তার গানে ইসলাম ও আল্লাহর প্রিয় নবীর, মুহাম্মাদ , প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ পায়। পাগলা কানাই নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতি ও মেধা ছিল অত্যন্ত প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে একের পর এক গান রচনা করতে পারতেন।[৬] তিনি যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা রাজশাহী, বগুড়া প্রভৃতি স্থানে আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ গান গেয়ে বেড়াতেন।

এ পর্যন্ত পাগলা কানাই রচিত গানের মধ্য মাত্র শ’তিনেক সংগৃহীত হয়েছে। মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, ড, মাযহারুল ইসলাম, আবু তালিব, আমিন উদ্দিন শাহ, দুর্গাদাস লাহিড়ী, উপেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্য প্রমুখ মনীষীগণ পাগলা কানাইয়ের গানের সংগ্রহ ও গবেষণা করেছেন।

পাগলা কানাইরে গান

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ১

 

পাগলা কানাই এর গানের পর্ব ১:

(১)

আরে ও আল্লাহ, আরশ উল্লাহ তা’লা একেলা বসে কর খেলা বসে একেলা (আরশে)। দু’নের পোক্ষ-আদি যত, তা কব কত, শুনতে পাই কেতাবে। সেই নামের ভার, ওগো পরওয়ার দিয়েছো এক ফেরেশতার ও তার অপূর্ব গঠন মোরগের সুরাত, থাকে এক তরক আসমানের পার। যখন সে মোরগ বলে শুনে সে আওয়াজ দু’নের পোক্ষ-আদি-নিশিভাগ রাতি, তোর নাম ধরে ডাকে। তাই শুনে উম্মাৎ গণ হয়োবা চেতন-হায়গো আল্লাহ্ হায়গো; ঐ ফজরের নামাজ যে জন পড়ে থাকে।

আর দুয়োমের’ ফেরেশতা যে, দু’নের আগুন পানি যোগায় সে, ও তার এক অংগ আগুন, এক অংগ পানি । আহা! কাদের গণী-গঠেছ তুমি, তোমার নামের ধ্বনী শুনি । কোথায় আসমান কোথায় জমিন । ও তায় ছিলে-ছি- ছয় তরক আসমানের পর, বানাইছ এক দ’রে। বান্দার হায়াৎ ধরে, তাইরি মাঝে রেখেছ সারে॥ আর চারোমের কয়েদ’ মুছো, পঞ্চমে উম্মতের জান ফেরেশতা রেখেছ, তুমি ছয়োমে চতুর সাতমে মকদূর আরশ কুরসী করলে খাড়া।

তোমার হু-হুংকার নাম, ওগো গুণোধাম, সবে মেরাজ সে জাগার নাম, কেতাবে শুনি । যেদিন রাসুলকে দিলেন দুনিয়ার নায়েবী ॥ তুমি আল্লাহ, তুমি ইল্লাহ, তুমি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ । তুমি বসে সেই স্থানে ওগো নিরাঞ্জন-জীবরিল মারফত বোরাক পাঠিয়ে দিলে। হযরত দেখে বোরাক ঘোড়া, জরদোজ খাড়া”, বোরাকে তখনই উঠিলে।

দোস্ত কর-দোস্ত কর” দুনিয়ার নায়েবী-কও আমার জন্য এনেছ কি? আমি আয়ছি শূন্যেকার, দাড়ায় কোথাকার; চন্দ্র বক্ষ পেতে দিল, বোরাক দাড়াল” । যত শুণ্যের ফেরেশতারা দস্তখত দিল, হইল। মুরতাজ ঐ ভেবে দেখ রে খোদার বান্দা হজরত পৌঁছিলেন সেই সবে মেরাজ 1 তাই ভেবে পাগলা কানাই কয়, ওগো মালেক সাঁই-তুমি লা-শরীকালা, তোমার শরীকদার কেউ নাই । হজুরী নবী হাজির হল, তখনই গায়েবী আওয়াজ পেল, আচ্ছালামু আলায়কা ইয়া আয়-ইউহান্নবী”।

সেই নবীর পরে মেহের করে, বকশিয়ে দিলেন আল্লাজী ॥ উপরে সাত দারে”, তার উপরে পর্দা-কার”, উমিকি তা জানে । আমি শুনেছি কোরানে, আরও আলেমের মুখে। তোমার হু-হুংকার নাম দরিয়ায় ভাসে

১-এখানে, যথাযথ কার্য সম্পাদন করা । ২-সমস্ত সৃষ্টি কুল। ৩- প্রথম আসমান। ৪- দ্বিতীয় আসমান। ৫-পরপর সাজানো। ৬-দরিয়া, এখানে বিশেষ স্থান/ আলমে আরওয়াহ। ৭ নেতা। ৮-কর্মদক্ষ । ৯-ক্ষমতা, শক্তি-সামর্থ। ১০-জরি বসানো কাপড়, মূল্যবান পোশাক। এখানে, বিশেষ পোষাক । ১১-প্রস্তুত হলো। ১২-সম্বোধন অর্থে। ১৪-প্রতি শহর, তিন ঘটিকায় এক গ্রহর।

১৫-রাসুল (সঃ) বায়তুল মুকাদস থেকে চন্দ্রে অবতরণ করেন । এবং সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এটা উর্দ্ধ আকাশে প্রথম নামাজ । ১৬- প্রথম আসমানে একজন ফেরস্তা থাকে । আল্লাহ পাক মোরগের সুরাত দিয়ে রেখেছেন। সে মোরগ প্রতি প্রহরে ডাকে । তাই শুনে দুনিয়ার সমস্ত পক্ষীকুল প্রহর ঘোষণা করে। ১৭ মान আল্লাহর সর্ববিধ প্রশংসা।

১৮-আল্লাহ তালা। ১৯-সম্মান করা, মেনে নেয়া অনুগত হওয়া। ২০-খুনি। হওয়া। ২১-আমরা নামাযে আত্তাহিয়াতু/তাসাহুদ পড়ি । তা চারটি অংশে বিভক্ত । প্রথম মহানবী (সঃ) বলেছেন । দ্বিতীয় আল্লাহ তালা জবাব দিয়েছেন । তৃতীয় নবী (সঃ) পুনঃসংযোজন করেছেন। চতুর্থ ফেরেস্তাকুল যোগ করেছেন। ২২-সাত আসমান । ২৩-কিছু দিয়ে ঢাকা। ২৪- দুনিয়া, এখানে সমগ্র সৃষ্টিকুল হতে পারে ।

(২)

লা-ইলাহা উল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ রাছুল। ঐ নাম হয়না যেন ভুল। ঐ নাম ভুল হইলে পড়বি ফোরে হারাবি দুই কূল। নবীজির তারক ধর, নামাজ পড়, নবীর আইন কর কবুল । নবী তরাইবেন রোজ হাশরে-শফায়েৎ করিবেন রাছুল ॥ নবী বেটি দু’নের খুটি, বেহেস্তের দাওনদার, নবী হয় পারেরই কাণ্ডার। যেদিন ইসরাফিল ফুঁকিবেন শিঙ্গা, দু’নে হবে নিয়াকার যেদিন ফাতেমা হবেন কিস্তি, ইমাম হোসেন হবেন পারের কান্ডার।

পুল-সিরাতে হীরার ধারে, তরাবেন দনের পয়গম্বার আর সোজা রাখ নামাজ পড়, ওরে আমার মন। ভজো নবীজির চরণ। আবার খাস জবানে বলছে আল্লাহ্, চেন আদম তোন আদমে আছে নবী জানতে পাবি, আদমে সাঁই পাক নিরাঞ্জন । তাই পাগলা কানাই কয়, ওরে আমার মন-পাছে তোর খাড়া কাল শমন । ১-দেহ । ২-আকারহীন । ৩-সর্দার । ৪-মৃত্যু।

()

আর আওয়ালে আল্লাহর কাম, বিসমিল্লাহ হয় দুয়োমের নাম: আমি ছয়োমে সালাম জানাই । পাগলা কানাই আলো আসরে সালাম জানাই দশজনেরও পায় । (অসম্পূর্ণ)

(৪)

হযরত নবী ডেকে বলে ও দায়েনী, তুমি কর ছয়লাবী। মুখে লা-ইলাহা কলমা পড়, যদি হাখ-নিবি’ । ধর হাত, নয় ঘটিবে বিপদ, আমার হুকুম দিচ্ছেন দীননাথ । মুখে ইল্লাল্লাহ দম ছাড়, ও কাফেরের জাত। দাই তখন উঠে বলে, আমার একি হল দায় ।

গর্ভের ভিতর কথা কয়, আমার শুনে লাগে ভয়। আমি দাইর ঘরেতে জন্ম নিয়ে, এমন দায় তো ঠেকি নাই । তাই পাগলা কানাই কয়, তাড়াতাড়ি পড় কলমা, ছেড়ে দেব তোমায় ॥ (অসম্পূর্ণ) ১- এখনে, কলেমা গ্রহণ করা। ২-মসলিস সম্প্রদায়। এরা সাধারণতঃ ক্ষৌর/কর্ম, নব জাতকের নাড়ি ছেদন, ধাত্রীকর্ম করে। এদেরকে দাই/ধাই বলা হয়।

(৫)

শুন মোমিন মোছলমান, কর এই আকবতের কাম; বেলা গেল । বেগাফিলে/বগাবিলে বসে আছ, গা তোল গা তোল। ঐ দেখ মাগরিবের ওক্ত হয়েছে, এ সময় নামাজ পড়। আমার সেই নামাজের দায়, আল্লাহ কি হবে হায় হায়, ভয় সে বড় রোজহাসর ॥ আলেম নই নির্গুণের কানাইরে, পড়ে শোনাবে । যে বান্দা পড়বেনা নামাজ, তরি পর জুলমাত হবে। আর সাত তবক আসমানের নিচেই, আত্মা রাখিবে। যত উম্মত গোনাগার, পুড়ে হবে ছারেখার; তার তাপেতে ৷ চান্দুয়া টাঙ্গাবেন হযরত রে হায় উম্মত হায় উম্মত বলে । ও ঝাপ দিবেন আগুনের পার ॥ (অসম্পূর্ণ) ।

১-দ্বীনের কাজ । ২-এখানে দুটি শব্দই উপযুক্ত। বে-গাফিলে অর্থ গাফলতি করা । বগা বীল বলে বেড়বাড়ির পূর্ব দিকে একটা বিল আছে। একদিন পাগলা কানাই সন্ধার দিকে ঐ পথে বাড়ি আসবার সময় কিছু লোকের মাছ মারা দেখতে পান । তিনি সাথীদের নিয়ে ঐ বিলের ধারে নামাজ পড়লেন । তখনও ওরা ওঠে নি দেখে এই কবিতা/গান করেন ।

(৬)

পহেলা বিসমিল্লাহ পয়দা, নামাজ আ’লো এই দুনিয়ায় । তিনশো ষাট দিনে, এক বচ্ছোর হয় । বার মাসে তের চন্দ্র, উদয় হয় । কোন দিন বেহেস্তের দুয়োর, খুলে ছিলেন মালেক সাঁই ॥ আর তুমি তো মমিনার’ ছেলে, সভায় দেচ্ছ পরিচয় ।

আর পাঁচ ওক্ত নামাজের মদি, কয়টা তার সিজদা হয় । কয়টা হয় তার রুকু সিজদা, কয়বার আলহামদু দরুদ পড়তে হয় । সভার মাঝে পাগলা কানাই কয়ে যায় । কোন সুরাতে দুই বিসমিল্লাহ’ আছে, কোন সুরাতে নাই। কোন সুরাতে নয় মীম আছে, কোন সুরাতে নাই” । সে কথা সভায় আসে দিবা সত্য পরিচয় ॥ (উঃ পঃ নংঃ-৭৪৬, পরিঃ, ইদু বিশ্বাস) ১-সুরা নমল । ২-সুরা তওবা। ৩-সুরা ফাল । ৪-সুরা কাওসার। ৫-সতী নারী ।

(৭)

শোন সবে ভাই সকলরা, নামাজ রোজা পড়তি হবে। এমন দায়েমী নামাজ না পড়িলে, খোদা কি রাজী হবে। তাই বুঝিয়ে পড় কলেমা, দেহের ময়লা দূর হবে রোজা নামাজ সংগের সাথী, অন্ধকারে গোরের বাতি; তাই বুঝিয়ে খোদার বান্দা, কর শরীয়তি । পুল-সিরাত হীরার ধারে, পার হবি যদি ॥ আত্মা খোঁজ মীম মোকামে, কাবা শরীফ মক্কা যেখানে । এই মানুষে আছে মক্কা, তোৱা মুর্শিদে চিনে নে । কানাই বলে কাতর হালে, তোর দিন গেল মনে মনে।

(৮)

নামাজ পড় নামাজ পড়, নামাজকে ভুলো না। নামাজকে ভুললে পরে, কানাই আখের পাবা না । বে-নামাজী দাগাবাজী, শয়তান হয়ে থেকো না। শয়তান হয়ে থাকলে পরে, জানাজা হবে না। নামাজের স্বাক্ষী আছেরে ছয় জনা, কাঁসার ঘটি নামাজের পাটি ।

উচিৎ মত দেবে স্বাক্ষী, পানি আর মা-থাকী। কাষ্ঠের খড়ম আর কানাইরে, তোর মাথার কাপড়ের টুপি ॥ তিন জন বে-নামাজী, চলছে এক রাস্ত াতে। তাদের সাথে দেখা হল, শুয়োরের সাথে। শুয়োর কেদে আরজ করে, আন্নাজীর কাছেতে। বে-নামাজীর সাথে দেখা হল গো আল্লাহ-আজ আমরা না পাব খাতে

(৯)

মরণের আগে মর, শমনকে শান্ত কর, যদি তাই করতে পার ভবপারে যাবিরে মন রসনা। জিন্দা দেহে মুরদা-বসন থাকতে কেন পরোনা । মন তুমি মরার ভাব জান না । ওরে মরার আগে না মরিলে, পরে কিছুই হবে না । আমি মরে দেখেছি, মরার বসন পরেছি, কয়েক দিন বেঁচে আছি।

তোরা দেখবি যদি আয়, পাগলা কানাই বলতেছি । আমি চোখ বুজিলে সলক দেখি ভাইরে, চোখ মেললে আধার হয় । পাগলা কানাইর এখন, আর নাই মরণের ভয়। তোরা মরবি কে আয় । মরণের ভয় কর, ভব সিন্ধু পারে চল, সেথা কালা-কালের ভয় রবে না। মার ডাস্কা কালের পরে, জিন্দা দেহ মুর্দা ক’রে; হবা পার, মুর্শিদ নবী হবেন কান্ডার |

১-কাফনের কাপড়। ২-লোভাতুর। ৩-জীবিত কালে ঋপুর তাড়নায় মানুষ অনেক কিছু অনুভব করতে পারে না । মৃত্যু হলে সে তাড়না থাকে না। তখন সব কিছু বুঝতে পারে। তাই সলক দেখা ও আধার হবার কথা বলা হয়েছে। মৃত্যু/আজরাইল । ৪-এই বাক্যটিতে এটাই ব্যক্ত হয় যে, কবির মুরশিদ/পীর/এগু নি/পথ প্রদর্শক অন্য কেহ নয়, সয়ং রসুলই (সঃ) ছিলেন তার মুরশিদ ।

(১০)

বুড়ো বয়সে পাগলা কানাই, এ ধুয়ো বান্দেছে ভাই, ধুয়োর নাম স্বর্গ-পাতালে । ভাইরে ভাই ধুয়োর বিচার কে করে? ভবের পরে এক শকশো পয়দা, আল্লাহর পয়দা নাইকো সে। আসমান জমিন পবন পানি, ত্রিভুবন জুড়ে রাখেছে । পাগলা কানাইর বাড়ি তার কাছে ! আদমের নাই বুনিয়াদ, মুহম্মদের নাই সে উম্মাৎ, ভবের পরে ঝুটিমুট খেলায় । কত ফকির বৈষ্টম আলেম ফাজেল-পড়ে যাবে তার ঠেলায় ।

পাগলা কানাই মিথ্যা বলে নাই ॥ তিনে দশ-দুনিয়া”, সে শকশো নাই তিন ছাড়া, (ভাই সকলরে) বেদ-পূরাণে খুঁজলে পাবা না। আবার অসাবধানে থাকলে পরে, সে তো কারও ছাড়বে না। গেছে চার কাল, হবে সব রসাতল, কারও পরকাল হবে নাই। পড়ে সে শকশের ঠেলায়, কেহ বসে কান্দে গাছ তালায় ॥

শকশো-এই শকশের নাম কি ? ড. মযহারুল ইসলাম সাহেব ‘ভাত’ বলে উল্ল্যেখ করেছেন কিছু ফকিরদের বরাত দিয়ে। কিন্তু তা আদৌও ঠিক নয়। পাগলা কানাইর বাড়ি তার কাছে বলে উল্লেখ হয়েছে।

তা হলে শকশো বড়, পাগলা কানাই ছোট । ভাত বা খাদ্যের প্রভাব কেউ এড়াতে পারে না সত্য। কিন্তু ফকির দরবেশদের পিছে দুনিয়া ঘোরে এবং সাধারণ মানুষ দুনিয়ার পিছে ঘোরে । তাহলে শকশোটা কি ? এর মর্ম ব্যক্ত না করায় ভাল । অত্যন্ত গুহ্য বিষয় যা সাধারণে প্রকাশ করা মৃত্যু তুল্য । এজন্য চুপ করে থাকায় বাঞ্চনীয় ।

যেহেতু গানটি বিশেষ ক্ষেত্রে মরিয়া হয়ে রচনা করা হয়েছে সে কারন গায়ক গন ভাত বলে বা অন্য কিছু বলে বুঝিয়ে থাকেন । তবে এ ধরনের গান সাধারন আসরে না করায় ভাল । প্রকাশ থাকে যে কবি শিষ্য সুলতান মোল্লা এ ধরনের গানের ব্যাখ্যা করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন । ১-যা ইচ্ছে তাই করা । ২-দেহ দুনিয়া(দশ ইন্দ্রীয় দিয়ে তৈরি)।

৩-অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ (বায়ু, পিত্ত, কফ)। ৪-বাল্য, যৌবন, পৌড়, বৃদ্ধ কাল । ৫- হরিনাকুন্ডু থানার চাঁদপুর নিবাসী জনাব বাদল বিশ্বাস ১১২ (১৯৭২ সাল) বছর বয়সে এই তথ্য প্রদান করেন যে ১২৯৭ সালের ঝড়ে ও বন্যায় নগরবাথান হাটের ঘর বাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে পুনঃহাট জমজমাট করবার উদ্দেশ্যে গানের আয়োজন করা হয় । তরিবুল্লাহ ও সুলতান মোল্লাহর মধ্যে পাল্লায় সুলতান হেরে যান । তিনি বেড়বাড়ি ওস্তাদের কাছে দোয়া নিতে আসেন । তখন পাগলা কানাই অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় আছেন ।

সুলতানের কথা শুনে কবি সাহেব উঠে বসলেন । বললেন,“নিয়ে আয় পালকি, দেখব তারের ভিন্নি” । পালকিতে চড়ে নগরবাথান গেলেন । আসরে দুইজন শিষ্যের ঘাড়ে হাত রেখে দাড়িয়ে এই গান করেন। এ গানের উত্তর তরিবুল্লাহর দেয়ার সাধ্য ছিল না। তিনি বললেন,” পাগলা কানাই ওস্তাদ ব্যক্তি, তার গানের উত্তর দেয়া আমার সাধ্য নেই” ।

(১১)

পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরা, কত রং দেখিলাম ভবে এসে দুই চোখি। আমি যতই করলাম দিবা ধর্ম, সবই হলো ফাকিজুকি । একটু ভালা কইতে হলো, মুখে কেবল আল্লাহ্ ডাকি । এর এক জন নারী অন্য পুরুষ, দুই জনার এক কবরে মাটি দিয়ে থুইছিল ।

আমি শুনতে পাই মুর্শিদের মুখি, জিন্দা তাদের ছেলে হ 1 ছেলে হলি শোন বলি, তিন জন ভবের পারে আলো ॥ তুমি রাখ ঈমান, কুটি নয় বাত, পুছ` কর আলেমের ঠাঁই, সত্য কি মিথ্যাকথা । তুমি যেজন জান সে তা মানো, আমার আল্লাজীর ক্ষমতা । আল্লাহর শুকুর মিরা” দরগায়” তিরা”, দলিল কভু মিথ্যা হবে না ॥ ১-প্ৰশংসা বা সত্য কথা । ২-জিজ্ঞাসা করা । ৩,৪-ভজনা করা, প্রশংসা করা। ৫- আল্লাহর নিকট । ৬-নম্র ভাবে ।

(১২)

আসরে এসে এক মজার কথা মনে হয়েছে । ভবের পারে এক সতী নারী, চার যুগ জন্ম নিয়েছে। কথা বলি দশের কাছে, শাস্ত্রে প্রমাণ আছে । আমি জিজ্ঞাসী ঐ বয়াতির কাছে ॥ শ্বশুরের সঙ্গে মজিয়ে রঙ্গ, সেই যে নারী গর্ভ হয়েছে।

নারীর পতি এসে কোলে বসে, মা বোল বলে ডাকতেছে । পতিকে বলছে বাবা, আমার এই দুগ্ধ খাবা, নারীর জামার, তারে হরণ করতেছে ॥ সেই যে নারী ভবের পারে, কেউ চেনে কেউ চেনে না। তাই বুঝে মন আপন কাজে, ঠিক রাখো ষোল আনা । পাগলা কানাই ভাবে বলে, নারীর চরণ পালাম না। যদি পাতাম নারীর চরণ, সারে নিতাম মনস্কাম; ভবে থাকতে, কোন বিপদ হত না ॥ ১-সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি । ২-নারীর গুণ বা ক্ষমতা ।

(১৩)

পাগলা কানাই বলে, ওরে ভবে আসা যাওয়া সার হল । গেল দিন, আমার দ্বীন গেল, দিনে দিনে তোর দ্বীন ফুরাল। ভবের কর্ম যার যার, দিন থাকতে তাহা সার, আছে ধর্ম-কর্ম-মর্ম আদি, আমার কিছুই না হল ॥ ওরে যেমন দিন কাল গিয়েছে, আজও আছে আর এক দিন । তোর সামনে কাল সামনে কাল, আমার বাকি আর এক দিন ।

আমার ভেবে হলো তনু ক্ষীণ । হিসাব নিবেন আমার রব্বুল আলামিন ॥ এই রোজমী ছলে কবে যেতে হবে, তাও নাই মনে। গেল তিনদিনকার দুই দিন, সামনে আর এক দিনে । দিনে দিনে মুহম্মদের দ্বীন আর কি তোমার হবে। লা-ইলাহা কলমা পড়, ইল্লাল্লাহ দম ফের ছাড়, মোমিন সকলে। ১-রজম/ কঠিন হিসাব নিয়ে । ২-কেয়ামত ।

(১৪)

পাগলা কানাই বলে, আমি অতি মূর্খ মতি, আপনারা কলছেন আমার গান গাতি; অসাধ্য নাড় আমি এক জন। আমি সিলামালেকম জানাই সভায়, আছেন যত মোমিনগণ । আলেক নিলে শান্তি হয় জীবন। আমি হিন্দু বংশে প্রণাম করি, প্রণামের যোগ্য যে জন হন । আর যদি বলেন নামাজ রোজা, যা করলে হয় ঈমান তাজা । সেও কথা বল আমারে ।

ওরে নামাজ রোজা কেউ না ক’রে, তারা বুঝি যাবে ভব পারে? আমি যাব কোন বেহেস্তে, মুর্শিদ কোন কাজের ফলে ॥ আর শোন বয়াতি বলি তোমার, পষ্ট জবাব দাও আমার, শুনলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় । ওরে মক্কার দুয়ারে দক্ষিণ শিয়রে, কোন ব্যক্তির গোর’ দেওয়া হয়। সে কথার দিবা পরিচয়। যদি না বল পষ্ট করে, বয়াতি ভাই-তোমার অল্পে ছাড়ব নাই ৷ ১-কাবা শরীফের পাশে হজরত হাজেরা, ইসমাইল, ইয়াহইয়া(আঃ) এর কবর । উহাকে হাতিম শরীফ বলে ।

(১৫)

শোন শোন ভাই সকলরা, বলি দশের ঠাঁই । আপন ঘরের খবর না জানে, পারের খবর নেয়। কয়েক জন হাত বাড়ায়ে, আসমানের চাঁদ ধরতে যায়। পাগলা কানাই বলে, ভাইরে শুনে হাসি পায় ॥ কোথায় তোমার স্থিতি, পয়দা কোথায় সে সতী ।

কে করিল দেহের গঠন, কও তোমার জন্ম হয় কিসি। সাত সান্ডা’ বারো কুন্ডম, কিসে উৎপত্তি । বারো মাসে তেরো ছেলে, আরও বেটি” পোয়াতি। সে যে, ডিম্ব ভরে নরেকারে, সেও কথাটি বিচার করে, বয়াতি ভাই তোমার হবে কতি ॥ ১-আসমান । ২-বুরুজ বা সূর্য । ৩-বারো মাসে তেরো চন্দ্র উদয়। ৪-এখানে চন্দ্র।

(১৬)

পাগলা কানাই বলেরে ভাই, ধুয়োর জবাব দিতে হল । হযরত নবীর আশা ছিল, মুছা নবীর হাতে দিল । নীল দরিয়ার মাঝে নবী ফেলে দিল । আজগবী তার মুখ হল, চার কোড়ল” নব্বই লক্ষ মুখ সেই শকশের ছিল (অসম্পূর্ণ) (প্রশ্ন পদঃ-পরিঃ ৭২০ নম্বর পদ, ইদু বিশ্বাস) ১-কেতাবে প্রকাশ যে আদম(আঃ) বেহেশত হতে আশা নিয়ে এসেছিলেন । সেই আশা ছিল মুছা(আঃ) এর আশা । ২-কোটি ।

(১৭)

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, তুমি দাড় টানো জোরে জোরে । আমি কানাই হাল ধরেছি, লাগবে তরী ঐ কুলে । আমার পাগলা কানাই হাল ধরেছে, ভিড়াও তরী ঐ কুলে সরস্বতীর শ্রী চরণে, আমি সালাম জানায় বারে বারে। আবার বালুক বলে করবেন দয়া, অধমও পাগল বলে ॥ ইল্লাল্লায় আছে পাঁচ, লা-ইলাহায় আছে সাত; আবার সাত পাঁচ বারো হরফে, কলমা তুমি সারো।

(১৮)

ভবপারে যাবিরে মন, মনরে রসনা । দিন থাকতে কলমা পড়ে/মুর্শিদ ধরে, সাধনা ভজন করলে না । তুমি পরকালের ভবপারের চেষ্টা করলে নাস। তোর দিনে দিনে দ্বীন গত হলো, চেয়ে দেখরে দ্বীন কানা ॥ তোর পৈতৃক ধন, ঋপু ছয় জন, আগে বশ কর তারে ।

নইলে প্রাণ যাবে হীরার ধারে । ঐ নাম ভুললে পরে পড়বি ফেরে, পুল-সুরাত পার হবি কেমন করে । ওরে দায়মালি চোর গাঁজাখোর, আর কত বুঝাবো তোরে ॥ তাই পাগলা কানাই বলে, আমার অবুঝ মন রসনা । বারে বারে বলছি তোরে, কর পারেরই ভাবনা। তোর দিনে দিনে দ্বীন ফুরিয়ে গেলো, (ও মন)তার করো সাধনা ॥ ১- দাগী আসামী ।

(১৯)

ভোলা মন না বুঝে কেন কু-পথ গামী হও। মায়া রসে ধর্মের পথে কন্টক কেন রও। এমন সু-সংগ করে ভংগ মন, কেন অসৎ লোকের সংগে রও। এখন ছাড়হ কু-কর্ম, করহে ধর্ম, দিন থাকিতে দীননাথের নামটি লও ॥ ওরে/হারে মন তোর কপালে কী জানি ঘটে, সুমুখ বাড়ি রলি বসে, (তোর) নিল পাছ বাড়ি লুটে । তোর (বুঝি) আসা যাওয়া সার হলো মন, তোর যাতি হলো (বুঝি) ভূতির বেগার খাটে ।

তাও জেনে কি জান না, হা-রে মন রসনা,তোর খানা-বাড়ি” লুটে নিলো যত বোম্বাটে । তুই বুঝলিনারে মন, ও ভোলামন, তোর দিন গত হয়েছে। ধর্ম পথে ইষ্টম্বরের খত’ লেখা রয়েছে। সে খত উসুলের দায় সব বাকি আছে। পাগলা কানাই কয় মহাজনের দায় গলায় বাধেছে । যে দিন ধর্ম আদালতে বিচার হবে মন, সেদিন উসুলের দায় কী হবে পাছে । তুমি দেখে কি দেখ না, জেনে কি জান না-(হায় রে মন রসনা), তোর ঘাড়ে বুঝি শয়তান চড়েছে । ১-বসত বাড়ি । ২-ছিল মারা । ৩-চিঠি ।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ১

 

(২০)

আমার মনের মনে আর কথা শোনে না। আমার মনে যা বলে তা আর করবো না। করে আমার ইহায় হলো-করে ইহায় হলো, মনে চুরি করে, (আবার) মনে ধ’রে মারে, এত ফল মোর কপালে ছিল । (ওরে) এসব মনেতে ঘটালো । ছিলাম আমি মনের বশ, মনের সর্বনাশ, মনের দোষে নিকাশ দিতে হলো । মন কি বড় ভালো ভালো, মন কি বড় ভালো ॥ আমার মনের মনে জানে মনের কথা, মন দিয়েছে মনেরে ব্যথা।

গোল করো না কাজে কাজে, গোল করো না কাজে । পাগলা কানাই বলে আসবার কালে, জানতাম যদি বাজে, এমন বিদেশ স্বদেশ ভেবে না রইতাম, আমার দেশে যেয়ে শান্ত হয়ে, দিনকতক কাল বসত করতাম । তাই পাগলা কানাই কয়, যে জন সাধু হয়, মনের কথা কেউ শোনে ? ওরে আমি তো চোর নয়, দেবতা ঘটায়। ষোল আনা ওর কনে কনে, ষোল আনা ওর কনে ?? ১-দুনিয়ার বসত । ২-আখেরাতের বসত।

(২১)

আরে ও পাগলা কানাই বলে, ঠেকবিরে মন কালাকালে, বইসা মায়া জালে। ও তুই ভবে এসে রইলি বসে, চিনলি না মন তারে; ও তুই দেখরে নয়ন মেলে। আর কি হবে সাধের জনম? তোর দিন যে গেলো চলে। গেলে দিন আর পাবি না দ্বীন কানা-তোর দিন যে আইলো সারে ॥ যে দিন ধড় ছাড়িয়া মালেক যাবে, খালি দেহ পড়ে রবে, এই ভবের বাজারে।

সে দিন মাতা-পিতা, পুত্র-কন্যা, কেউ চাবে না ফিরে । তোর নিবে যমুনার ঐ তীরে সোনার অংগে দেবে পোড়া, দয়া হবে না ধড়ে। দেহে থাকতে মন, হওরে চেতন, ও ভোলা মন, করতে চাও রায়ত গিরি। দাও না কেন মাল গুজারী, আসল তুমি করলা চুরি । তোমার আদালতের আরজী দিয়ে, করবে ডিগরি জারী । তোর কাল শমন আসবে বাড়ি, মালক্রোকের পিয়াদা এসে হাতে দেবে দড়ি। সকল ধন লুটে নেবে রে-আরে ও শূন্য হবে তোর পুরী ॥ ১-তীর অর্থ কুল, এখানে শ্মশান বা কবরখানা ।

(২২)

পাগলা কানাই বলে ও মন ভোলা, ছাড়ো প্রেম রসের খেলা, দেখ তোর ডুবে যায় বেলা। ও তোর সংগের সাথী কেউ না হবে, কান্দবি বসে একেলা-মন পাগেলা, দিন থাকিতে দ্বীনের কর্ম কিছুই করলে না।

তুই ভবে এসে রইলি বসে কাল কাটালি হাসে রসে, তুই ভুলে রইলি মায়ারই বশে। ও তোর শমন আসে বানবে কষে, সেদিন তোর কি হবে মন ? কোথায় রবে তোর স্বজন ভাই বোন। সুখে মুখ তোর সকল সার হবে, ভাই-বন্ধু দ্বারা-স্বজন তোর সঙ্গে না যাবে । আর তিরিশ দানা পঞ্চ মতি, তাই পড়িলে হবে গতি, আর সে হবে তোর সঙ্গের সাথী । ওরে রোজ হাসরে ময়দান পরে, হিসাব নিবেন আল্লাজী । মন তাই ভাবি- উসুলের জমা খরচ সবই রইলো বাকি ॥

(২৩)

চেয়ে দেখরে আমার মন রসনা, এ ভবে থেকে তোর লব্ধা হলো না; তুই যারে বলিশ আপন আপন, সে তোর আপন হলো না। বুঝে দেখরে দীন কানাই, বিদেশীর সংগে প্রেম করিস নাই; সে যে ঘটাবে তোর বিষম যন্ত্রণা ॥ ও তোর জা’রে নেবে ছয় জনা বোম্বাটে, কপালে কি জানি কী ঘটে ।

তোর মালখানাতে সিদ কাটিয়ে, মালামাল নেবে সব লুটে । ও তুই করলিনে মন সাধন ভজন, মলি তুই ভূতির বেগার খাটে ॥ মন তোর চির দিন কি এমনি যাবে, দিনে দিনে দ্বীন গত হয়ে যাবে । পরকাল তোমার ঘিরে নেবে, একা তোর যেতে হবে । ভাই-বন্ধু- দারা-সূত, কেহই সংগে না যাবে ॥ ১-লাভ। ২-ষড়রিপু ।

(২৪)

ও মন বলি তুমি শোন না, আছেরে বন্ধু ছয় জনা। সময় বন্ধ হলে পরে, অসময় তোর কেউ হবে না। আমি তাই বলছি তোরে, ও মন রসনা। আছে আল্লাহ, আরশ কুরসী, পরকাল ভুল না । দিনে দ্বীন ফুরাল, ও তার সাধন হল না, ॥ ও তাই ভেবে দেখরে মন, তোমার হবে না সাধন । মিছে কামে রইলি বসে, হয়ে পৌরীত জন। সংসারেতে নাই কোন সার, অসার হল আল্লাহ ত্রি-ভুবন ।

মিছে কাহে রইলি বসে, হয়ে অকারণ ॥ সংসারেতে দৌলত বড় ভালা । এই দুনিয়া ছাড়ে যেদিন যাতি হবে ভাই, এই দুনিয়া ছাড়ে যেদিন যাবা গোরে । বলো সে দিন কী হবে অন্ধকার, কোন জনা বাতি জ্বালে দেবে তোমারে । তাই পাগলা কানাই কয়, আল্লাহ কি জানি কি হয়। দিন থাকিতে কু-পথ ছাড়, মন বলি তোমারে ১-ছয় রিপু বন্ধু রূপে । ২-মৃত্যুর সময় । ৩-পুরোবাসী/বাঈজী ।

(২৫)

শোন বলি ও মন রসনা, তোমার বুঝাইলে কেন বোঝনা । ভজন-সাধন কিছুই করলে না । তোমার ভব সংসার সকলি অসার, সার পদার্থ চিনলে না । মিছে বাজির কারখানা। যে দিন আসবে শমন বাধবে বাধন, ওরে অবুজ মন । ভোজ সে দিন কোন কথা শুনবে না । ভাই বন্ধু পুত্র পরিজন, চেয়ে দেখ সব অকারণ, মাতা পিতা কেহ নাই আপন। আবার কালা এসে জিজ্ঞাসিলে, কি জবাব দিবা তখন ।

ধন দৌলত কোথায় রবে মন। নিদান কালে ভরসা কেবল, সেই শ্রী- গুরুর চরণ মাতা-পিতা না ভজে, সুখে আছ পরকাল খুঁজে, ও কাল রয়েছে তোর পিছেতে । কাগজ যেদিন পড়বে হাতে । সাথী প্রমাণ লাগবে না, ডিগ্রি হবে এক পাতে । পারবানা মন ছাপায়ে যাতে । তাই বুঝিয়ে দলিল পত্র সার, নইলে কানাই যাবা ফাটকে ১-৫ অর্থ আন্ধকার, রু অর্থ আলো অর্থাৎ গুরু । সিদ্ধি দাতা, পাপদাহক, মঙ্গলময় ব্যক্তিকে শ্রী গুরু বলে। অর্থাৎ যিনি অন্ধকার থেকে আলোকে নিতে পারেন ।

(২৬)

শুন বান্দা মনের ধান্দা, ফিরতেছ সদাই। তুমি আইছ ভবে যাইতে হবে, মনে কিছু কর ভয় । ওরে আজ মরিলে কাল দুদিন হবে-অধম পাগলা কানাই ভেবে কয় ॥ টাকা কড়ি ঘর আর বাড়ি খাসেরই ভান্ডার। তুই লুটে খালি ফিরে না চাদি, ও দেখ কি হবে আখেরে এবার। যে দিন তলব দেবে হিসাব নেবে, আপনি পরওয়ার ॥ দেখরে আপনার আপনি ডৌর-কোপনী, ইহাই জান সার ।

তুই মুদলে আঁখি মিছে ফাঁকি দেখরে সকল শূন্যকার। মিথ্যে আশা শালীকের বাসা, জিন্দেগানিত কভু না কর ভরসা। দেখরে পলকে যাবে, সকলই পড়ে রবে; হতে হবে আখেরে পুল-সুরাত পার ১-কাফনের কাপড় । ২-অস্থায়ী । ৩-জীবন কাল ।

(২৭)

পড় রোজা নামাজ আখেরের সুসার, হবা যদি ভব নদী পার, তবে মূল্য গাঁটি কর । লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মন পড় নিরন্তর। তা নইলে পড়বি ফেরে, সেদিন তাইরে নাইরে সার। পুল সিরাতে আছে হীরার ধার ॥ নামাজ পড়া মুখের কথা নয়, দেল মোমিন করতে হয় । তুই শোনরে পাগলা কানাই, এক কথায় সে খাস্ ফেরেশতা, শয়তান হয়ে যায় ॥

(২৮)

পাগলা কানাই বলে ও নতুন সুর’, তোমা বিনে ব্রহ্মগুলে আর তো কেহ নাই। তোর জ্বালাতে জনম ভরে (জ্বলে মরি), ডাঙ্গায় পাইনে ঠাই। অজ্ঞান হই রাত্র দিনি, গাঙ্গে হয় হাটু পানি, তুমি মোরে যা কর সাঁই ॥ আমার মনে বলে, ঘর আ বাড়ি ছেড়ে যাব, ফকির হবো, জঙ্গলেতে রবো । কথার আটন কথার ছাটন, সুরি পাড় বানাবো। ওরে বাইনে আড়া খুটি যার, ধুয়ো দিয়ে ছাবো ঘর, মটকার উপর মুঞ্জরী থোব।

(আবার) আমি একলা দুকলা পথে চলি-হাত নাড়ি আর নাড়ি, তোর সঙ্গে কই কথা। তফাতের লোক দেখে বলে, পাগল নাড়ে মাথে । (আমি) দেখলাম না ভাই দুই চোখি, এই টা কেবল রইলো বাকি, আমার এই জিনগানী` বৃথা ॥
১-আল্লাহ তায়ালা । ২- জিন্দেগী/জীবনকাল ।

(২৯)

পাগলা কানই বলে হায়রে পিরিত, তুইরে যমন জগতের সুরিত’, অমন কি আর হবে-অমন কি আর আছে। পেয়ে অর্থ পিরিতে মত্ত্ব, যে জনা পেয়েছে; সে অধর চাঁন কে ধরেছে। করে পিরিতের ফান্দ, ধরে সে অধর চাঁন্দ; হৃদ কমলে সেই পেতেছে, শাস্ত্রে আছে আছে ॥ আমি শুনেছি রামায়নে চির সায়নে, ত্রেতা যুগে এই ভুবনে; পিরিত করে হুনুমান হায়রে পিরিত করে হুনুমান।

আছে পদে পদে রাম, পদে পদে শ্যাম, পদে পদে জপরে রাম নাম । ওরে শাস্তরে প্রমাণ, আছে শাস্তরে প্রমাণ ॥ পিরিতি আকারে সাকারে নিরাকারে উৎপত্তি। আমি চক্ষে দেখি নাই, কর্ণে শুনতে পাই, জগৎ বন্ধু আছে তাইতি। দেখরে পিরিতির এমনি ধর্ম, সবে কি জানে পিরিতির মর্ম; আমি মূর্খ মতি লেখা পড়ার ভাব জানি না, সে ভাব লজ্জা করে কতি।

তাই আমার এই সংগতি। আছে ত্রৈলক্ষনাথ”, পিরিতির বিচ্ছাদ, কৃষ্ণ হয় রথের সারথী। জগতের পতি করেছে হে দুর্জয়মান, ছেড়ে গেছে বাকা শ্যাম, ওরে সাঁই আছে সেওতি ১-এখানে রতিক্রিয়ার সুখের সংগে তুলনা করা হয়েছে । ২-রামের প্রেমের কথা বলা হয়েছে। ৩-সায়ন অর্থ সন্ধ্যা, এখানে ১৪০০ সালের বেধের টীকাকার সায়ন-এর প্রেম বুঝিয়েছে । ৪-দশা বা হাল । ৫-স্বর্গ, মর্ত, পাতালের অধিপতি । ৬-তাহাতে।

(৩০)

হায়রে হায় পাগলা কানাই কয়, প্রেম বিচ্ছেদে প্রেমের জ্বালায়, ও লো! সখিরে প্রাণ তো বাঁচে না । আসি বলে গেল চলে, আর তো ফিরে আলো না । আমার অবুঝ মন প্রবোধ মানে না । আর কত কাল সইব জ্বালা, ও ঘরে রইতে পারি না ।

ওরে আসতো যদি চিকন কালা, যেত আমার ভব জ্বালা । বন্ধুর সঙ্গে মনের মত, খেলতাম প্রেমের খেলা । আমি কার গলে পরাই সখী, এই ফুলের মালা । মদন তসিলদার ভারী, ওরে মাঝে মাঝে ঋতুরাজ, এসে করে ডিগ্রি জারী সখিরে পেমের আমি উপায় কী করি। আমার মনে বলে প্রাণ ত্যাজিব, ও সখী গলে দিব ছুরি ॥

(৩১)

হায়রে হায় পাগলা কানাই কয়, যৌবন এ সময় কোথায় লুকাল । আমার এখন এইযে শেষ কাল, তোরা সব হইলিরে কাল। কি দোষ পেয়ে ছেড়ে গেলি, অচেতন সকলই হল ॥(অসম্পূর্ণ)

(৩২)

গুরু ভজবো বলে মনে ছিলো বাসনা, আমি পারলাম নারে ভাই। আমি দিন থাকিতে মুর্শিদ ধরে, সাধন ভজন করতে চাই। আমার কঁওড়া লাগায়, আমার মদন চাঁদ গোসাই। আমি কাজে মাতাল হইছি বেতাল, আরও চৌতালে বেড়ায় | আমি চোরের সঙ্গে করি বসতি, সে সদায় সিদ কাটে ঘরে । আবার মদনা বেটা দুষ্টু ভারী, ভয়ে মরি তাহার ডরে। আমি সাধন ভজন করি কেমন করে ।

আবার গুপ্ত তালায় চোরের আনা গোনা, তারে ধরি কেমন করে । কাম-ক্রোধ-লোভ- মোহ-মায়া, ও যার অন্তরেতে নাই । তারই হচ্ছে সাধন ভজন, এই অধীনের শক্তি নাই। আমি মিছে দেশ বিদেশে, চাটকি চাটাম করে বেড়াই। পাগলা কানাই বলেরে ভাই মিছে নটখটি, আমি দেশ বিদেশ ঘুরে পেট বাঁচাই ॥ ১-বাঁধা দেওয়া । ২-এদিক ওদিক।

(৩৩)

তোমরা দেখরে দেখরে এই তরঙ্গে, বা! ফুল ফুঠেছে কতই না রঙ্গে, দেখতে শোভা ভাল ভাল, দেখতে শোভা ভাল । এই মানব সরবরে এই তরঙ্গে, হিঙ্গুল বরণ ফুল, তার কতক হয় লাল, কতক হয় ধলো । কত ব্ৰহ্মা-বিষ্ণু আদি, ভাবে নিরবধি, কী হল, কী হল হায় কী হল, ফুল কোথায় লুকাল, সাধের ফুল কোথায় লুকাল ॥ ফুলের মূলে মূলে হয় জগত পতি, তপ করতেছে দেবতাদি, পাবার অনুসারে’ সারে, ও তা পাবার অনুসারে ।

ফুলের উপরি ভেমর গুঞ্জন-ধরতে কে তার পারে পারে, ধরতে কে তার পারে। এর রবি শশী যারা, ভয়ে ভয়ংকরা, দেবগণ মদন শংকায় মরে। ধরতে কে তার পারে পারে, ধরতে কে তার পারে ফুলের মূল যার স্রোতের নিচেই, শশী ভেমর উদয় করে। গুন গুন স্বরে তেমর অলি, সদাই যাওয়া আসা করে।

তারে ধরবো ধরবো করে, চার যুগ ফেরে, সুধা রাখে শূন্য পাথারে। গরল চতুক ধরে ধরে, ওরে গরল চতুক ধরে। সুধা হয় গরল খেলে হয় মরণ, সে থাকে এক পাত্তরে। সে ফুল ফোটে তার উপরে পাগলা কানাই কয়, ফুল তুলতে যায়, সুধা বলে গরল খেলে মরে । জীবে কি তায় পারে পারে, ওরে নরে কি তায় পারে ॥ ১-সাদা রং। ২-জন্য । ৩-পাত্রে । ৪-চারিদিকে । ৫-মানুষ ।

(৩৪)

আজব এক ফুল ফুটেছে প্রেম সরোবরে । লক্ষ যোজন ফুলের জ্যোতি, যোগীন্দ্র মহন্ত’ আদি, বসে তপ করে তরঙ্গের উপরে । তথায় সে হৈল ডুব খেলে সমুদ্রের কূলে । জল স্থল একসাথে বাতাশের সঙ্গে মিশে, সে মানুষ বসে আছে নদীর কূলে।

ঐ মানুষের বসত শুনি ঢেউ কূলে । গুরু শিষ্য একসাথ হয়ে, যে ঢেউ সইতে পারে, সাধু বলি তাইরি বটে, গিয়েছিল নদীর ঘাটে, ও সে বসে বসে ফুল তোলে। কামিনীর কোলে যেন শিশু দোল দোলে, গরল আছে তার উপরে। খেলে গরল মানুষ মরে, সেই গরল খেয়ে যে জীর্ণ করে, ওরে সে তো যাবে তব নদীর পারে ।

সেই যে নদীর ত্রি-ধারা”, তার মর্যাদা খুব ভারী। উদাস পথিক কানাই বলে, আমি ঘুরে মরি। আমি কেমনে দেবো পাড়ি। সহস্রদল পদ গাথা, গরল খেতে বড়ো বাধা, আমি খায়ে জীর্ণ করি । আমি ভাঙ্গী যদি ফুলের বোটা, সাধু কূলে হবে খোটা । সে জন্য বেড়াচ্ছি নদীর কুলি কূলি । পাগলা কানাই বলে রে-ভাই, দরোশন পাবি ফুল বিকশিত হলি ॥ ১-শিব । সরস্বতী/এড়োলা-পিংগলা সুষুম্মা। ৫-লক্ষ্মী । ২-মোক্ষপ্রাপ্ত/শিব । ৩-মাতা। ৪-বায়ু-পিত্ত-কফ/গঙ্গা-যমুনা-

(৩৫)

এক ফুল ফুটেছে ভব সংসারে। বলব কি সেই ফুলের কথা, ফুল ছাড়া মূল যথা তথা, ফুল ছাড়া ফল ধরে ভিতরে। আমি বলব কিরে ভাই সকলরা, বাহা ফুল ফুটেছে প্রেম সরোবরে ॥ ফুলের হও সন্ধানী যে মহাজনী, পাগলা কানাই উমি কি তা জানি । বসে বসে ঢেউ গুলি সরবরের কূলি রাত্র দিনি । যে বলিতে পারে আমি তাইরি মানি ॥ ফুল ফুটে হয় ব্রহ্মা তুষ্ট, আমি বসে ভাবছি তাই ।

ফুলের সন্ধান করা, এও ঠেকিলাম বিষম দায়। লাল-জরদ-সিয়া-সফেদ, কে হয় বলো-বলো মোর । চার রঙ্গে চার ফুল, (প্রাণে) গাঁথা আছে ওর। ওর কোন ফুলে হয় সাদা- কোন ফুলে হয় শ্রী কৃষ্ণ, কোন ফুলে হয় রাধা ।

(৩৬)

কি মজার ফুল ফুটেছে তরঙ্গের মাঝার, ও সে দেখে ভয়ংকর। ভাসছে ফুল নৈরাকারে, মূল রয়েছে স্থানান্তরে, তদন্তরে নবীজির প্রচার। ফুলে ফল লেখেছেন বিধি, দেবতাদি বুঝা ভার,কি চমৎকার। কি চমৎকার, সেই অমূল্য ফুল, নাই তার মূল, সে ফুল তোলে সাধ্যকার । পাগলা কানাইর হয় অবিশ্বাস, (আরে ও রে) মিছে কাট-কাটারী সার ॥ আর সেই যে ফুলের চতুক” পাশে, দেয় পাহারা ভেমর” আসে, ও ফুলের মূলে আছে শশধর-৫ । আবার লগ্ন যোগে ঝরা কৃষ্টি, দৃষ্টি আছে সৃষ্টিধর, কি চমৎকার ।

ওরে অমূল্য ফুল, নাই তাহার মূল, এ ফুল তোলে সাধ্যকার ॥ ফুলের গরল চতুক পাশে, তাই খেয়ে যে জীর্ণ-৬ করে, ওরে এমন সাধু পায় কোথায়? সেই স্থানে বারো ফুল ফোটে বারো মাসে, নিকাশে দেখা যায় । অ-লগ্নে খেললে জুয়ো, কতো ফুল পড়ে যায় ভূয়া; লগ্ন যোগে যদি এক ফল রয়। সে ফুলে চাঁদের তুল্য হয়, এমন অমূল্য ফুল ধরে তায়। যে পায় সেই রহম নজর, যারে দয়া করে দেছেন দয়াময় ১-শূন্যে । ২-তার মধ্যে । ৩-চতুর্দিক। ৪-ভ্রমর । ৫-চন্দ্র/সৃষ্টিকর্তা। ৬-হজম করা।

(৩৭)

কালিদা’র পূবের ঘাটে রয়েছে সেই ফুল । কেউ বলে তুলব ফুল উপড়োব মূল, যা করে সাঁই মালেকুল । সে ফুলে নূরের ফোঁটা রয়েছে, ওরে সে আসলে নাই তার মূল ॥ কালিদা’র সরোবরে সে ফুল ভাসতেছে । চন্দ্র সূর্য দুই ভাই তারা বারাম দিতেছে । মানুষ নেই বসত শুনি ঢেউয়ের পারে, একথা পাগল কানাই বলতেছে 1 চারটি রঙ্গের চারটি ফুল শাস্ত্রে পাওয়া যায়। কোন রঙ্গের কোন ফুলে তিলাপত হয় ।

কোন ফুলে হয় আকার সাকার, কোন ফুলে হয় নীল নৈরাকার, দীপ্তকার হয় ভবের মাঝার । কোন ফুলে জগত মেতেছে, তাই বলো আমার ॥ ১- খেয়া দেয়া, পাহারা দেয়া, বৈঠকি আলাপ । ২-মিলন হওয়া। ৩-পানির আকার।

(৩৮)

ওরে প্রেম তরঙ্গ ফুটেছে এক ফুল। ফুলের সৌরভে হয় জগৎ আকুল । ফুলের মূলেতে বিরাজ করে বন্ধ মালেকুল । কতো যোগী-মনি দিবা নিশি, সাহায্য করে সেই ফুল । চৌদ্দ ভুবন পরে আছে সেই ফুলের মূল ॥ আর প্রেম তরঙ্গে মাসে মোহর যায় আ’টে। তাই পাগলা কানাই কয়, সেই দয়াময়, সদাই আসে যায়। মাসে ফুল ফোটে। তিন দিক ছাড়া পূবের ঘাটে ঘাটে। সে ফুল একত্র হয়ে প্রেমের ঘাটে।

মর্ম কথা বলবো কি তা বলতে প্রাণ ফাটে। আর দুই ফুলে এর ফুলেরই আকার। সে ফুল ধরবা রে ভাই এমন সাধ্য কার। এই ভবের পারে মুজরী খাটে হয়গো নামাকূল’, যোগ না চিনে ঘোলায় পড়ে, ঘুরাল নিরানতার কেউ ভিমরে বারো, বসে তেরো, দেখে হলাম সরাসর” । কোনায় বসে সোনা 1 দয়াময় দেচ্ছে মেলে যার ॥ ১-বিহ্বল/বিয়াকুপ । ২-সদা সর্বদা। ৩-পরিশ্রম করে । ৪-অবাক হওয়া । ৫- সম্বাদ যন্ত্র। ৬-সাধন যন্ত্র ।

(৩৯)

কি মজার ফুল ফুটেছে কালীদায়, বোঁটা নাই তার ফুটে আছে, ভাসছে দরিয়ায়। ওরে নীল দুয়ারে লাল তুফান ওঠে রে-ওসে ভাসে লাগল কিনারায়। দুই ফুলে এক ফুল জানি, সে ফুলের বোঁটা নাই ॥ আর ফুল সেই হৃদকমলের পরে, চেয়ে দেখ তোরা ।

সে ফুলেতে ব্রহ্মাও ঘেরা । ওর লগ্ন যোগে ফুলটি ধরে, যুগ্নি যোগে ঝরা। নিহার দিয়ে বসে আছে নিরাঞ্জন, সে নদীর কিনারায় ॥ ওর ডাল ছাড়া যার ফুল রয়েছে, ফল ফুল ভেসে যায়। এ কথা পাগলা কানাই কয়, ফুলের জন্ম খণ্ডের কথা, সভায় বলা উচিৎ নয়। কোন ফুলেতে জীবরিল পয়দা হয়, কোন ফুলেতে অলি-আল্লাহ্, কোন ফুলেতে মহাশয়। কোন ফুলেতে জগৎ মাতে, কোন ফুল কোন কোন ধারায় ১-এক যুগ ।

(৪০)

আজব এক ফুল ফুটেছে বটে, দেখে প্রাণ চমকে ওঠে, আচ্ছা মজার ফুল । ফুল ফুটে হয় জগৎ আলো, দেখে প্রাণটি শীতল হল, নাগরে সাগরে মৈথুন করে, কুয়োকারে সে ফুলে ফল হল ।

যে চায় সে পায় সে ফুল, অন্যে কি পাবে বল ॥ গড়ে সুতোর আপন মনে, অন্যে কি তার সন্ধান জানে; পানির হাতুর পানির জল, পানির মদি ভসছে ফল; বিধির কল বোঝে, বোঝে এমন কার সাধ্যি । পানির ফল পানির ছল’, ভাসছে ফল পানির মদ্যি। হল পানি ছল পানি, ভাসছে ফল পানির মধ্যি ১-কৌশল । ২-বিগলিত । ৩-উপলক্ষ ।

(৪১)

ও রাধার পুষ্প ফোঁটে, শুনি বটে, মুর্শিদ আমায় বলেছে, শ্রী কৃষ্ণের পদ্ম ফোটে কোন দিবসে ৷ তুমি তাই বলে দাও আমারে, আমি শুধায় তোমারে। বায়ান্ন বাজার খুঁজে আলাম, মর্ম কথা না পালাম, এ কথা সভায় বল তুমি, আমি বলি তোমারে কোন জাগায় কোন চন্দ্র উদয়, কোন জাগায় ফুলের আসন। চান্দে ঠিক দিয়ে বোঝ এখন তুমি তায় বোঝ নিরাপন, না বোঝ আপন । আমি ১৮ মোকাম ৯ দরজা, খুজে আলাম ত্রি-ভুবন।

সাড়ে ২৪ ফুল হয় কনে, বলে দাও কথার মানে, তুমি বলে দাও তার অন্বেষণ । ধুয়ো গায়ে বেড়াও ফকির, একটা কথা কই তোমার । তুমি জন্মাইলে মায়ের পেটে দুগ্ধ খালে কার । আমি অধম পাগলা কানাই দিশেহারা, কও সমাচার । কয় চীজেতে জন্ম হয় তোমার, তুমি বলে দাও আমার । মুর্শিদ না ভজিলে, পাবে না ধুয়োর বিচার (উঃ পঃ নংঃ-৪২)

(৪২)

ও রাধার পুষ্প ফোঁটে শুনি বটে, অমাবশ্যা যোগ মতন । কৃষ্ণের পদ্ম ফোঁটে কোন দিবসে, ও সে সোমের ঘরে যখন । বায়ান্ন রূপ তখন । আমি স্বর্গ পুরী ত্যাজ্য করে আলাম এখন । ত্রি-পথ ভ্রমি ভিক্ষা প্রদান, বলিরাজ পাতালে যান যখন । চতুক বনে ফুল ফুটেছে, আদি মৃণাল হয় তাতে। রাত্র দিবস চন্দ্র-সূর্য, তুলছে ধুনা” ভবেতে । এর দশ-ফুল হয় জগতে । অধম পাগলা কানাই দিশেহারা, আর পাঁচ ফুল তার মক্কাতে।

সেই ফুলেতে হয় জগত উজালা, আদি ফুল, দীন মোহাম্মদের দীন জগতে ॥ সপনখ’ না ছিলো, দোনু খালির পদ্মা ভাসে ত্রিবিনে’ মিশিল । তখন যুগোল হলো । সাড়ে ২৪ দেহ খানা ১৮ চীজে গঠিল । দশ মাস পূর্ণ হলো । গর্ভ ছাড়ে ভূমে আসে, দায় ঠেকিয়ে মা বলিল । মাগীর দুগ্ধ খায়ে দায়ী হয়ে, মায়াজালে বদ্ধ হলো ॥

(প্রঃ পঃ নংঃ-৪১) ১-চন্দ্র। ২-কিরণ দ্বারা প্রহার করা/বেষ্টন করা। ৩-দেহ ফুল। ৪-এখানে অর্থ রাধা। ৫-দুই খালের মধ্যভাগ। ৬-পানির স্রোত। ৭-গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর মিলন স্থল/সম্বাদ যন্ত্র । ৮-মিলন । ৯-স্ত্রী ।

(৪৩)

আজব একটা ফুল ফুটেছে, প্রেম সরোবরে। ফুলের উদ্যিশ কিছুই না করে, যোগী যোগ সাধনা করে । আবার ফুল ছাড়া তার মুখ রয়েছে, চৌদ্দ ভুবন পরে । কি ভাবে তার মূল আসে, দুই গাছ এক ফুল ধরে । দীন কানাই বলতি না পারে ঘুরে মরে ॥ শুনি ১২ মাসে ১২ ফুল ফোটে, তিন দিক ছাড়া পূবের ঘাটে । কতক ফুল পড়ে যায় বাতাসে, আর লগ্ন যোগ এক ফুল আসে।

আর সকল হয় অকারণ, সকলি যায় জলে ভাসে। অধর চান্দ বসে আছে, ফুলের মূলে আসে আর কত সাধু হয়ে বে-ভুলা, তারা বসে আছে গাছ তালা। ওরে ফুলের আশায়  ঘুরছে দো-বেলা । ফুল মিছে নয় সামান্য ধন, যে করেছে সাধ্য সাধন, পারে সে অমূল্য রতন। দূরে যাবে নিঠুর কালা, ফুল পলি তোর ১৪ পুরুষ হবে উজালা

(৪৪)

প্রেম সরোবারে ফুলের উৎপত্তি হয়। সে ফুল শতদল পদ্মে মুরিদ হয় । দুই বগাবগী করতে গেলে ফুলে ফলটি হয় ॥ প্রথমে হয় ফুলের কলি, দুই দিনের কথা বলি, তিন দিনের দিন ফুটে সে ফুল সহোকার হয়। চার দিনের দিন আসেকের ফুল, ফুটে হয় মদ্যি লাল। পঞ্চম দিনের দিন নীল ফোঁটে, ছয় দিনের দিন মোহরটি আটে, সে ফুলের মদ্যি হয় কলি/জালি ॥ সাত দিনের দিন সাত সমুদ্দুর খাড়া হয়ে যায় ।

অষ্ট দিনের দিন সে ফুল খোলা রয় । দীন কানাই কি সে ফুলের সন্ধান পায়? যে জন শুদ্ধ হবা ফুল ধরিবা, ফচকে লোকের কর্ম নয় । দীন কানাই কয়, সে ফুলের গঠন চিনা বড়ো দায় ॥

(৪৫)

ও ফুল ফুটেছেরে বটে, দেখে প্রাণটি চমকে ওঠে, ওসে আচ্ছা মজার ফুল । সে ফুলে হয় জগত আলো, দেখে প্রাণটি শীতল হলো, যে চাই সে পাবে ফুল, অন্যে কি পাবে বলো । ও ফুল নাগরে নাই সাগরে, মৈথুন করা কুয়োকারে, সেইযে ফুলে ফল হলো ॥ আবার কুয়োকারে সেই যে ফল, ভাবছি বসে বিধির কি কল, পাগলা কানাইর ভাবনা ওঠে মন।

থাকেতে এক আতশ মিশে, পানির পারে বেড়ায় ভাসে, সেথা হাওয়া বয় উজোন ॥ বচ্ছে হাওয়া উজোন-ভাটি, বিধি হলো তার প্রতি, ওরে পানির হাত পানির দাঁত, পানির ফল পানির মাধ্য, ওরে হল পানি আর স্থল* পানি, ভাসছে ফল পানির মধ্যি। ভেবে পাগলা কানাই কয়, বিধির কল বোঝে এমন কার সান্ধি ॥ ১-নগর জাত । ২-অন্ধকারে । ৩-বিষ । ৪-বিশুদ্ধ।

(৪৬)

আজব একটি ফুল ফুটেছে কালিদার ঐ পূবের ঘাটে। বার মাসে বার ফুল ফোঁটে । যোগী যারা জপে তারা বসে সেই ঘাটে। তুলব বলে সেই ফুলের মূল, ডুব দিয়ে হতেছে আকুল, ডোবে না ভাসে ওঠে । কত জন ঘোলায় পড়ে, নটপটে হয়েছে সেই ঘাটে ॥ আর সেই যে ঘাটে লোনা পানি, আর কটা কুম্ভীরে ভয় । দেখে আমার মনে সন্ধ হয়। যে জন ভাল ডুবুরী হয়, ডুব দিয়ে মূল তুলে নেয় ।

সে কি করে কুস্তীরের ভয়, কুস্তীরে কি ধরে খায় । কত জন ঘোলায় পড়ে আসল মূল হারায় ॥ কয় পাগলা কানাই, ফুলের সন্ধান যে জন ভাল পেয়েছে। স্বরূপ পুরে নিহার দিয়ে, মরে বেঁচেছে। মুর্শিদ চান্দ কয় পূর্বের ঘাটে, ঘটবে না তোর নলাটে, তাই সুলতান মোল্লাহ্ বসে ভাবতেছে। পাগলা কানাই কয়, ভোর কপালে হয় ? দেখসে সুলতান ঘাটে কতই সুখ আছে

(৪৭)

এক মজার কথা বলি, তোমরা করো না গোলমালি; ওরে আরাম করে রয়েছে। শুয়ে, মগজ করে খালি । বৃন্দাবন দরশন বুঝি কচুবাগানে করি ॥ ও শুনি মুর্শিদেরই কাছে, ও তা সবার মালুম আছে; ১৮ পোয়া দেহের গঠন, ১৪ পোয়ায় ঠিক দেছে । চেতন যে জন দেখতে পারে, পাগলা কানাই ঘুরে মরে, ওরে জাগা চিনে কোপ দিলে কি, কোপ কি ওঠে ভাসে ॥ (অসম্পূর্ণ)

(৪৮)

পাগলা কানাই বলে, একটা তত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসি। সত্য বলো দিও না ফাঁকি । অজুদ ভাণ্ড করে খণ্ড, দেহের মাঝে আছে কি। সাত তালা আসমাল জমিন, মুর্শিদের মুখে শুনি । কোন তালায় মা জননী, কোন তালায় পানি ॥ আরে ও আছে মক্কার মসজিদ ঘর, ও ঘরে আজান দেয় কোন পয়গম্বর, বল বয়াতি তাহারই সন্ধান। সাত সমুদ্র তের নদী পার, মধ্যে মধ্যে বালুচর, বসত বাড়ি হয় কোন তালায় ।

কোন তালায় হয় সাঁইর কাছারী, কোন তালায় হয় বসত বাড়ি, কোন তালায় হয়েছেন উদয় । আমি আরও শুনি সাত তালা আসমান । ওর কোন জাগায় সুরুজ, কোন জাগায় চান্দ। কয় কোটি তারা আছে, শোনব বায়াতির কাছে, এ কথা না বললে পড়বা ফেরে, কোন তালায় কোন নাম॥

(৪৯)

তারিফ করি কামিলকারে, দুনের গঠন একলা সারে, ভাই সকলরা কুচোকলে’ গড়তেছে । এর চার কলের কল বন্দ রেখে, হাওয়া ভরে চালাচ্ছে। বায় বামা- কল”, তাতে উঠতেছে জল, নাট-কলে আগুন জ্বলতেছে । ও সাঁই হাওয়া ভরে, দেখ কল ঘুরাচ্ছে।

আবার চার চীজে দোকান পাতা, তার উপরে ঘুরছে যাতা, ও দেখ আলের’ পরে আল্লাজীর ঘর। ওরে ভাই সকলরে মরি মরি, ও সে ঘোরছে প্যাচের পার । ইয়ের হাতার খিলি” ঋপু’ আটা, বর্ত° আছে মালের” পর। বঞ্ছারাম খুড়ো” ও সে কলের মুড়ো”, চালাচ্ছে কল, দেখতে চমৎকার ।

ওরে কল ঘোরাচ্ছে সেই দীননাথ কামার” ও তাই ৩৬০ কলের উপর কোন পাড়ন নাই । হাতেম-দলে* বসে কামার পাথরে অঙ্গার নিচেই দেয়। ধূমো- নৌকা গড়তে ডোঙ্গা গড়ে, ও সুতরের কম নয়। যার যা আকৃতি, যে গড়ায় সে কলে” হচ্ছে ধূমোময় । ওরে ভাই সকলরা পাগলা কানাই কয়ে যায়। ইয়ের মাটি, বেণীপুর বসে হাতেম তালে, ওরে কামার বসে গড়ন পড়ায় ।

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগ বিচক্ষণতা । ২-সম্বাদ যন্ত্র । ৩-সাধন যন্ত্র । ৪-এ্যাড়া, পিঙ্গলা সুষমা তিনটি হাওয়ার ধারা ৫-আগুন, পানি, বাতাস, মাটি । ৬-সারথী । ৭- মাথার উপর। ৮-সাধন যন্ত্র। ৯-দেহস্থ ছয় অবস্থা/ভাব। ১০-বাচা/ বেঁচে থাকা। ১১-আ শক্তি। ১২-মন। ১৩-দেহ। ১৪। চালক । ১৫-দেহ কল। ১৬,১৭,১৯- হাপরে চুঙ্গী। ১৮- মন। ২০- চালিকা শক্তি।

(৫০)

শোন বলি ও মন চাষা, নিজে হলি তুই বুদ্ধি নাশা। এই দেহ জমি আবাদ না করে, হলো রে তোর দুঃখ দশা । তুই ধান না বুনে বুনলি চিনে, বছর ভরে ভাবি কিনে, হলো তোরে মনের দূর্দশা।

তা থুয়ে ছয় বলদে হাল জুড়ে, মার জমিনের বাকসা, ওর ষোল পোয়া জমি খানি, আড়ে দিঘী নাই বেশী কমি। ওর মাঝা খানে এক বুরূজ আছে, আর কোম্পানি মহারানী। জমিনের দস্তি গাড়া বারটা, তাতে ঠোল লাগায় মদনা বেটা। তাই পাগলা কানাই কয়-ও দিন থাকতে জমিন আবাদ করলে না ১-ছয় রিপু । ২-আগাছা। ৩-সূর্য।

(৫১)

পাগলা কানাই বলে ভাইরে ভাই, কও এ ঘরের করি কি। সাধ করে বান্দে ঘর এখন ছাড়ে যাতি হয় । আমি আশায় করি কাল কাটাবো, চার যুগে এই ঘরে রবো। আমি ভবো সিন্ধু হবো পার। আমার বাইনে-আড়া দেচ্ছে মোড়া, যুত ভুলে গিয়েছে ঘর । আমি বসে বসে ভাবছি তাই, ক্রমে ক্রমে ঘর পলো দুই খুটির পার । এখন বলে গেল ছার বে ছার, ক্রমে ক্রমে ঘর পলো দুই খুঁটির পার ওরে নতুন কালে কতই ঝড়, গিয়েছে এই ঘরের পার, ঘর তখন ছিলো নিনড়, বাতাসে হেলতো না ঘর।

এই ঘরের মদ্দি ছিলো যারা, কেমন কেমন করে তারা, এর মদ্দি ভাজনতারা বসে রয় । এখন ঋপুর দোষে বান্দন খসে, ছঞ্চের পানি পলো গায় । কখন জানি মটকা ছিড়ে পড়ে যায় । ও ঘরে বসত করলো ১৬ জনা, কেউ দিলোনা ঘরে পোলা, ওরে করে হেলা ছিড়লো ঘরের কাজলি” ।

ওর কেউ চলে না কারও বসে, একলা কানাই করবে কি । যে দোষে ঘুণ লাগেছে পাড়িতি। ঋপু ছয় জন তাদের আবার ভাবনা কি ১-এখানে অর্থ, আজীবন। ২-এখানে কামদেব। ৩-চালিকা শক্তি। ৪-ঘরের মটকার দুই পাশের দুই আটনকে কাজলী বলে । দুই চালে কাজলী বেঁধে মটকা শক্ত করা হয়।

(৫২)

বাহা! মজার ঘর বান্দেছে কামিল কার। পাগলা কানাই দেখে হল, চমৎকার । দিয়ে সাই বারি বিন্দু, তার উপরি সেই ঘর। ও ঘরে ৮০ কোটি আছে মাটি, দুটো বাতি নিরন্তর। শন্যির পারে হেলে দোলে, তবুও পড়ে না সে ঘর 1 ঘরের মাঝ মানেতে আগুন জ্বলে, তবু ঘর পোড়ে না। পানির ঢেউয়ে খেলে আগুন, তবু ঘর নেভে না। আমার দীনবন্ধু গঠেছে, কী আজব কারখানা।

ঘরের বাইনে আড়া দিয়ে মোড়া, যুত ভুলেছে সাধের ঘর । যে দিন ছিঁড়ে পড়বে ঘর, ঢসে হবে ছারে খার ॥ না পাইলে আগুন, পুড়ে যাবে সে ঘর । পানি শুকাইয়া গেলে পরে, সে ঘর শুকনোতে সাঁতার । ইয়ের ঝুড়ি বন্দ হলে সে ঘর, রবে না এই ভবের পর। দুয়ের খাম্বা ভাঙ্গে পড়বে, সে ঘর জমিনের পার ॥

(৫৩)

আশ্চর্য এক কার্য দেখে, আমি প্রাণে বাঁচি না । এক ঘর বান্দেছে নিরাঞ্জন, মুক্তি কথা মুক্তারণ, করণ তাঁর বুঝতে পারলাম না। এমন সত্যতা পৃথিবীর মদি, শ্রীমন্ত ঘর আর হবে না। এখন ধন্য বলি ধন্য বলি, ধন্য ঘরের আট কোনা । এক ঘরেতে চার জিলা, আর বারো থানা । সে ঘরের মধ্যি কী, তার উদ্যিশ পালাম না। । রোজ ঘরেতে রোজ কিয়ামত, হচ্ছে প্রলয় ।

ঘরের উত্তর অংশে গিরিবর, দক্ষিণ অংশে নদীকর, পূর্ব অংশে রবির উদয়। ঘরের পশ্চিম অংশে খাস মহলে, আট কৌশলে বসে আছে এক মশায়। ঘরের চতুক পাশে চার ছক চব্বিশ চন্দ্র, নিত্য উদয় হয়। ঘরের সন্ধান করা পাগলা কানাইর সাধ্য নাই ॥ ঘরের মধ্যে বসত করে ব্যক্তি বহুত জন । কতো ফকির বৈষ্টম আলেম ফাজেল করে অন্বেষণ । সে ঘর শূণ্য ভরে নড়ে চড়ে। তাই ভবতেছে পাগলা কানাই, ঘর দেখে আর বিশ্বাস নাই, অবিশ্বাস কেবল ঐ ঘরে। ঘরের ভরসা নাই ভাবতেছি তাই, কখন না জানি সে ঘর ভাঙ্গে পড়ে।

ঘরের আট কৌশলে বসে আছে যে মশায়, ভয় পায়ে সে যাবে উড়ে। জিলার হাকিম পালাছে জিলা ছাড়ে। সাধের ঘর ভাঙ্গে যাবে বাঁচড়াতে পড়ে ॥ আর ঝড় আসিবে যে দিন, পেলা দেবে সে দিন, কখনই সে ঘর খাড়া রবে না । পাগলা কানাই বলে ওরে আজব কারখানা। এক ঘরেতে চার জিলা আর বারো থানা । আমি সে ঘরের উদ্যিশ পালাম না ॥

(৫৪)

ওরে কোন ঘরামী ঘর বান্দেছে, এক নজর দেখলাম না তারে । ঘরে কুলুপ‍ করা, ইন্দ্র চন্দ্র-ঋপু তারা, ঘরের বাইরে খেলা করে। ঘর বান্দেছে ঘারামী বন্ধু, ভব পারে যাবে সিন্ধু পালিয়ে যাবার পথ রেখেছে, এক ঘরেতে জগত জুড়ে ! ওরে দল ছিল চতুক-দশোম দল, দলে ঘর খাড়া রয়েছে। এক এক দলে এক এক মণি, তপস্বিনী চন্দ্রহীনি, তাতে শোভা করতেছে। সেইযে ঘরে আছে ভুবন জোড়া পুরা রত্ন ধন।

বায়ু-বরণ-ঋপু-ইন্দ্র-যোগী, ঘর বান্দা এই সত্যি যুগি, সে ঘর হাওয়াতে মিলন | পাগলা কানাই বলে খাড়া ঘর ভুবন ডলে আবার ঘর খাড়া সেই শূন্যকারে, বিনা তেলে বাতি জ্বলে । ষোলজনে করছে আরাধন। পালাম না সে ঘরামির অন্বেষণ ১- তালা মারা। ২-পাপড়ি/পত্র/ভেদ করা/বিদির্ণ করা। ৩-দ্বিত/দুই। ৪-দশ অর্থে/পূর্ণ অর্থে। ৫-যে তপ করে । ৬-যার মধ্যে চন্দ্র/আলোক নেই । ৭-বিভিন্ন দেবগণ । ৮-পৃথিবীতে, ভূমণ্ডলে ।

(৫৫)

ভবে এসে দেখলাম ভাই, এক খান মজার কলের ঘর। ওরে নয় দরোজা আট কুঠরী, আঠারো মোকাম ষোল পৌরী, এমন ঘর বান্দেছে সাধ্য কার । ওরে মুলুক জোড়া ঘর বান্দেছে, দুই খুঁটির ঐ পার । ওরে ধন্য ধন্য ঐ মেস্তেরীর বাহার।

ঘরের ছাঞ্চের নীচে ছাল্লা দিয়ে, আমরা দু’জন করতাম বাস। তারা আমাদের বশ, আমরা তাদের বশ একই রাশি। সেই যে ঘরে করতাম বাস, তবু না ফুরালো মনের আশ । আমরা চারটে জাতির চারটে ছেলে, সাধের চারটে ভাই । কারও মাতা নাই কারও পিতা নাই, কেউ কারো বলে দরদ নাই। ঘর দেখে পাগলা কানাই বলে হায় হায় ॥

(৫৬)

আমি ঘর দেখিয়ে মরি, এ ঘর বান্দেছে কোন ধনি। দুই খুটি পরিপাটি, মন্দি আগুন পানি । তার আট কুঠুরী নয় দরোজা, বাতাশ বয় রাত্র দিনি । বাতাশ বন্দ হলে সে ঘর, থাকবে না তা জানি ।। আগুনে পোড়ে না সে ঘর, পানিতে পচে না । বলবো কিরে ভাই সকলরা, বিধির কারখানা। ওরে নতুন কালে ছিলো ভালো, এখন জল মানায় না। আমি খুচী’ দিয়ে রাখতাম সারে ওতার ঘরামী মেলে না ।

আর ঘরের মধ্যে ব্যক্তি বহুত জনা। ওর কেউ কানা, কেউ কালা, সেও তো বিলক্ষণা । আর ঘরের মধ্যে পাগলা কানাই, করছে আনা গোনা । সাধের ঘর ভেঙ্গে যাবে, সেও তো এক ভাবনা। যে না জানে ঘরের সন্ধান, সে তো আধলা কানা । তাই দিন থাকিতে বিশ্বাস ইদু, করগে জানা শোনা ১-তালি দেয়া। ২-অসামান্য ।

(৫৭)

চার পোতায় এক ঘর বান্দেছে, ঘরামীর নাম নিরাঞ্জন” । নীর° দিয়ে বান্দ সে ঘর, ঘরে তার আসন। ওর দুই খুটির পার খাড়া রাগ দিয়ে, করেছে পত্তন। অনুরাগে বান্দা সে ঘর, ষাট রুয়ো বত্রিশ আটন। লগ্নযোগে বান্দা সে ঘর, শুনি মর্শিদের বচন । চোদ্দ পোয়া জমির মদি, বান্দেছে এক আজব ঘর। ঘর বান্দেছে জগত জোড়া, দুই খুটির পার। সে ঘর পাড়ির পারে খাড়া আছে ক্ষমতা। ঘরামী বিটার।

এমন করে বান্দেছে ঘর, তবু জাগায় জাগায় অন্ধকার । পাগলা কানাই বলে ঘরে থাকে, শঙ্কা হয় আমার।। আর সেই যে ঘরে বসত করে, সুখ হলো না আসে। রাত্রি দিনি ভাবছি আমি, ঘরের মদ্যি বসে। ভাবে পাইনে ঘরের দিশে” । ঘর বান্দে ঘরামী বিটা, রাখেছে ঠাশে ঠুশে । ঘরামী চলে গেলে সে ঘর, ভাঙ্গে যাবে মাটিতে মিশে ১-চার চিজ (আগুন, পানি, বাতাস, মাটি)। ২-সৃষ্টিকর্তা । ৩-পানি, আত্ম সত্তা । ৪-মহাব্বত । ৫-লক্ষ্মী । ৬-প্রিয়জন । ৭-শুভসময় । ৮-দেহ জমি । ৯-পরিচয় ।

(৫৮)

দেখ দেখি এক রংয়ের ঘর, ওঘর দেখতে কি চমৎকার । ওরে তিন রংয়ে এক রং মিশিয়ে, চার রংয়ে এক জোড়া ঘর। ঘরের মদি ঘর বান্দেছে, এছাই কামিল কার। ঘরের আড়ে দিঘী চৌদ্দ পোয়া, সদাই বচ্ছে প্রেমের হাওয়া, হাওয়াই জোড়া ঘর ।

ওরে দুই খুটির পার পাড়েম সারে, রাখেছে এক পাড়ির পার । আমার দীন দয়াময় বিরাজ করে গো, সেই যে ঘরেরই মাঝার।। এক বিটি ঘরের নিচেই অগ্নি ধরে নাচে। জন ১৫/১৬ মানুষ জোটে বিটির কাছে । বিটির অগ্নি লয়ে শতদল’ প্যাচে। এক মোসলমান সে বিটির কাছে, অগ্নিতে জ্বালাচ্ছে। বসে, কাষ্ঠ দিতেছে ।

এক হিন্দু° বিটা, পানি লয়ে অগ্নিতে ঢালতেছে । আর এক বিটা অগ্নি লয়ে, পানি ঠাণ্ডা করতেছে ॥ পাগলা কানাই বলে, ঘরের বাইরে নব দ্বারে নব গুন ধরে। দেখে শুনে, কানা-বয়রা বলে, চোর আলো ঘরে। এক ন্যাংড়া মোল্লা বড়ই কল্লা, মাল নিয়ে সে সরে। মাল নিব মাল নিব বিটা, শুধু নড়া নামা করে ১-সৃষ্টিকর্তা/মন মহাজন । ২-বহু দল যুক্ত পদ্ম, লক্ষ্মী । ৩-যে আইনানুগ চলে না ।

(৫৯)

এক কলের ঘারে বসত করে, চার জন রাজা চার খোপে । মন মহান্ত আদি কান্ত, বসে চাঁদ জপে। ঘরের দ্বারে চৌকি ফেরে, বান্দেছে ঘর মজা করে। ঘরের দীনবন্ধু কর্মিকার, আট কুঠরী নব দ্বার; সোনার মানুষ বন্ধ ঘরে, আলো করেছে। তার রূপে ॥ আট কুঠরী ঘরের পাড়েম সারে, দুই খুঁটিতে দিয়েছে জোর মেছেল করা থরে থরে, তবু রাত দিন বয় শোর।

ওর কেউ ধরে, কেউ ফাঁসী দেয়, ঘরের আদালত ঐ ফৌজদার। ঘরের খবরা খবর বললে পরে, হুজুর চতুক দলের বাহাদুর ॥ ঘরে আঠার দলে বারাম খেলে, আছে আট নয় দলে, পাগলা কানাই বলে, ঘরে থেকে হলাম বিভোর ১-পাহারা দেয়া। ২-মজবুত । ৩-গোলযোগ ।

(৬০)

পাগলা কানাই বলে ঘরামী, কও এ ঘরের করি কি? সাধ করে বান্দে ঘর এখন, ছাড়ে যাতি হয়। ঘরের মদি ছিলো যারা, কেমন করে তারা, ইন্দ্র রুপু ছয় জন, তারা বসে রয় । এখন ঋপুর দোষে বাধন খসে, ছাঞ্চের পানি পলো গায় । কখন জানি মটকা ছিড়ে পড়ে যায়, আমি বসে বসে ভাবি তাই ॥ নতুন কালে কতই ঝড় · গিয়েছে এই ঘরের পার, ঘর তখন ছিল নিনড়, বাতাসে হেলতনা ঘর ।

আমি আশায় করি কাল কাটাবো, চার যুগে এই ঘরে রবো, ভবসিন্ধু হব পার। ক্রমে ক্রমে জুত ভুলে গেলো ঘর । এখন ভর পলো দুই খুটির পার। ঘরের ছিলো যারা, চার চন্দ্রে বসে তারা, বলে হইগে পার। থাক থাক পড়ে কানাইর ঘর, ও ঘরে বসত করে সুক নাই আর । ওর যুক্তি করে ষোল জনা, কেউ দিলো না ঘরে পেলা, করে হেলা ছিড়লো ভাই, ঘরের কাজলী । কেউ চলে না কারো বশে, একলা কানাই করবে কি? ঋপু ইন্দ্র তাদের আবার ভাবনা কি । যে দোষে ঘুণ লাগেছে পাড়িতি ॥

(৬১)

পাগলা কানাই বলে, ঘর বান্দেছে চৌষট্টি জোড়া। ঘরের গড়ন যমন তমন, রং দিয়েছে আড়া । ও তুই থাক পড়ে নিগুড় ঘরে, করিসনে আর নড়াচড়া। ঘরের বাহির হলি, শোন বলি, কপিকলে পড়বি ধরা। ওরে তাইরি হাতে পড়বি ধরা ঘরের মটকার পারে একজন বসে, দেখে লাগে ভয়। ভাবছি বসে না পাই দিশে, কিসে যেন শংকা হয়। আবার ঘরের যদি ক্ষণেক নড়ে, ক্ষণেক ক্ষণেক বাইরি দাড়ায় ।

আমি চোখ থাকিতে হলাম কানা, নিগুড় মুনিষ কথা কয়। ওরে আকার সাকার নাইরে তার, বসে বসে ভাবছি তাই ॥ মন অচেতন হয়ে চেতন বলছে যারা, আর আতশ থাক বাদ দিয়ে দিতেছে পারা। ঘরের আব্দুল জব্বার ফাতেমা নিছা, চার জন ঘরের দরোজায়। আমি দেখে অবুঝ হইলাম বেহুশ, ঘুণ লাগে কলের গোড়ায় । ওরে ধন্য ঘরের বশত ভাটি, তা দেখে প্রাণ চমকে উঠি, ভাইরে মাটি নেই, সে গাছের গোড়ায় ॥ ১- আড়াআড়ি । ২-আসল। ৩-ক্ষমতার শক্তি।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ১

 

(৬২)

এক ঘর বান্দেছে রংয়ের মেস্তেরী, বান্দেছে ঘর চমৎকারী। ওর নকশা দেখে হাসে মরি। তার বাইনে আড়া দেচ্ছে দোসারী, দিয়ে উতি কারিগরী, ওরে কুঠারি সারা দেখসে তোরা, আহা ঘর মরি মরি। আঠারো কুঠরী ঘরে, কে কোথায় বসত করে, দেখসে তোরা ঘরের মদি, কি নাম ধরেছে তারি 1 ঘরে কর জন পুরুষ হয়, ইমাম হোসেন বায়তুল্লাহর ঘর কোথায়, কোথায় মোকাম কোথায় মঞ্জিল হয়।

পাঁচ ফকির আছে কোন জাগায়, তা বলিবা নিশ্চয়। ঘরে তামসী এক বালা আছে, দেখলে প্রাণটি শীতল হয়। কও কথা অতীত পতিত, একথা বলবা সঠিক, আন্দাজে বললে তো শোনাবো না।

ঘরের বিশ্বাস করা যায় না কী কারণ। ঘরের দাবাগ্নি সেই আটন-ছাটন, তাই বিশ্বাস হয় নলের মতন। আবার মটকা ছিড়ে পড়বে যেদিন, ভু-দেশে করবে শয়ন । ভেবে পাগলা কানাই বলে, কি হবে মোর কপালে, এই ভবে আসা অকারণ ॥ ১-উহাতে । ২-তমোঃ গুণে প্রভাবিত । ৩-অনুঢ়া সুন্দরী নারী । ৪-শাসন । ৫-ক্ষীণ (তাচ্ছিল অর্থে)। ৬-কবর ।

(৬৩)

দেখ দেখি ঘরের গঠন, দেখে মন হলো উচাটন, মরি মরি ঘরের কিঞ্চিত বারী করিয়ে পত্তন । এর ঘরামী বন্ধন গুনো সিন্ধু ঘর, পাগলা কানাইর বসত করণ”, তাই দিয়েছে ঘরের কিঞ্চিত সার, সার ঘরামীর চরণ ॥ ও তাই আমি আমি এই ঘরে, যাবৎ জীবন ভরে, দিয়েছি কতো শত বাহার, বসত বাস করে। গেলো গত সুখের দিন, ভেবে তনু ক্ষীণ, আর কি ফিরে আসবে সেদিন । ও তাই হয়েছি।

ভাটি, হেলেছে খুঁটি, আমি কোন সময় কি করি ॥ ছিলো বন্ধনের ঘর মহিন্দ্র যোগেতে, খাড়াজোড়া চৌদ্দ ভুবন চৌদ্দ পোয়া রাগেতে, কিঞ্চিত নেমে গেছে। ওতাই ধন্য ধন্য ঘর আমি, এই ত্রি-জগতের, স্বামী, ব্রহ্মাণ্ড ঘরের মধ্যে পোরা, কিছুই নাই কমি । আমি জানি না আর্থ হলাম না বর্ত”, স্বর্গ মর্ত পাতাল ভূমি । তাই দিয়েছে এ ঘর, ভাঙ্গলে এ ঘর, যাবো কোথাকার আমি ॥ ১-জল, এখানে অর্থ ঋপু দোষ। ২-ইন্দ্রিয়। ৩-সত্ত্বঃ, রজোঃ, তমোঃ গুনের জগত বোঝান হয়েছে। ৪-নিজ/দেহঘর। ৫-মনযোগী/নিজের করা।

(৬৪)

ভাইরে ঘরের যদি ঘর বান্দেছে, আচ্ছা মজার কামিলকার। বসত দেখি চালে চালে, বোবা ডাকে শুনসে কালে, কানা বসে পাশা খেলে শন্যির উপর। বিনা তেলে জ্বলছে বাতি, ভাইরে মটকার উপর । আবার সেই যে ঘর, শণ্যির পার শুনতে পাই, এক জন সে ঘরে শুয়ে, বাইরে নিদ্রা যায়। সাগরেতে হাট মিলেছে, ভিটে ভিজে যায় । ল্যাংড়া এক জন দৌড়ে ফেরে, শুকনোয় এক জন সাতার খেলে, পানি ঠাণ্ডা করবো বলে, আগুন লয়ে যায়, এ সব কবার কথা নয়।

ঘরের মেঝে নেই, তার বিছেন পাড়া ভাই, এ কী অনবিচার। সে এক মজার চমৎকার। আগুন নেই সে রাত দিন জ্বলে, পোড়ে না সে ঘর। ঘরের মদি নাইকো পানি, ঢেউ খেলে সে রাত্র দিনি, বাতাস নি’ তা আমিও জানি, রাত দিবস বয় ঝড় । সেই যে ঘরে শন্যির পারে, শতপদ দল” তার। তা দেখে পাগলা কানাইর জ্ঞান নাই আর ১-পানির উপর। ২-দেহ। ৩-শক্তিহীন। 8-লক্ষ্মী বহুদল ৫ পাপড়া।

(৬৫)

শোন শোন ভাই সকলরা, পাগলা কানাই করে যায়। গাছের ডাল, ছাড়া ফল, শন্যির পারে সত্য, মিথ্যা কিছু নাই / শন্যির পারে সেতো মৃত্তিকাতে নাই। ওর শিকড় কনে টের পালাম না, এও ঠেকিলাম বিষম দায় আমাবশ্যা সেই যে গাছে, পূর্ণিমা হয় তাইরি কাছে, চোখ বুজিলে সলক দেখি ভাইরে, চোখ মেললে আধার হয় । তিল প্রমাণ জাগার মদি আঠারটা সিজদা হয়, সে আজব কারখানা। এক হরফে লেখছে মোমিন, ছরোত উল্লাহ দলিল উল্লাহ।

দশ কদম পাঁচ কাল্লাহ, একজনও বলে না আল্লাহ । বেকায়দায় পড়লে নামাজ, তার সিজা হবে না । এক ফেরেশতা জন্ম লয়ে, যোগ ধ্যানে বসে বয় । আড়ে জন্ম নাই তার ধর্ম, ভাইরে কাঁচায়-পাকায় খায়। আর এক ফেরেশতা জন্ম লয়ে, শুকনোতে খেয়া দেয়। নিশান সই তাইরি কাছে, মন ভোলা বসে আছে। ঢেউ গোনে। মনিরদ্দি, ভাইরে তার রতি দুই পাশে ॥ ১-কবির পালি দোহার । এখানে, পুরুষতা শক্তি। ২-দুই পাশে রতি অর্থ, দুইটি অণ্ডকোষ বীর্জ সৃষ্টি করে থাকে । এই বীজকে মনি বলা হয়েছে।

(৬৬)

শন্যির পারে এক দিরাগ পয়দা, মাটি নেই সেই গাছের গোড়ায়, গাছটি তাজা আছে। সেই যে গাছে বারো মাসে ফুল ফল ধরতেছে । ভাইরে, গাছের মদ্দি এক খোন্দল রয়েছে। খোন্দলের মদি চার জন, কি ভাবে রয়েছে । এর একজন খোন্দলছে, হুকি মারে কী দেখতেছে, সে ভাব বুঝতে পারলাম না। আর একজন সে খোন্দলছে, বেরোতি বেরোই না।

আর একজন সে দোম ধরে, বসে আছে তালা মা’রে, আর একজন সে খান্ত হলো না ॥ আর অসারী গাছ সারী হয়। না । পাগলা কানাই কয়, সে গাছে খুঁতো মারা নাই, সে গাছ কেমনে খুঁতো হয়। ছ্যামড়ারা সব যুক্তি করে, খোন্দলতে ছা’ পাড়ে, সেমন ধারা ছা নাই, খাঁচায় পুরে রাখবা ভাই, কেবল সার তাইড়ে-নাইরে না ॥
১-খোন্দলের মধ্যে/গর্তের মধ্যে । ২-উকি মারা । ৩-নিশ্বাস ধরে । ৪-বিরত । ৫- খিল। ৬-নষ্ট । ৭-পাখির বাচ্চা ।

(৬৭)

রূপ নগরে রূপের গাছে সোনার ফুল ফুটে আছে, দেখতে চমৎকার। ডাল ছাড়া সে ফুলের বসত, ফুল ছাড়া সে ফল। গাছের মদি লাহুত দরে, স্রোত বচ্ছে আলম ভরে, সে ফুলের মদ্দি কালা করছে টলমল ॥ ফকির দরবেশ লোকে, মাসে এক ঝলক দেখে, পায়না কোন স্কুল । পাগলা কানাই” বলে, ডাল পাতালে শিকড়েতে ফুল ।

গাছ চলে ভাই উল্টো পালি, সেও কথাটি শোন বলি, মাটি নেই সে গাছের গোড়ায়, উব্দো তাহার মূল নীর নলের দুয়োরে আসে, ফুল বিকাশে যায়। সেই ফুলেতে রত্ন ফলে, তা পাগলা কানাই কয়। ইন্দ্ৰ আদি যোগীন্দ্র ময়, সে সব তিথিতে রয় । তবুও সে হলো না গুড়ো, চার যুগ থেকে গেলো বুড়ো, সে ফুলে ফল ধরানো মুখের কথা নয় ॥ ১- চমৎকার অর্থে । ২-কার সহদর উজোল এর ভনিতা পাওয়া গিয়েছে।

(৬৮)

এক উব্দো দিরাপ পয়দা করে, তার মধ্যি হস্তি ধরে রাখ তিরপিনি । এর দক্ষিনে যার গঙ্গা সাগর, পশ্চিমে বয় সুরধ্বনী” । নীচেই তার পাতাল খানি, সে সব কথা বলো শুনি, দামার খালেও স্রোত বচ্ছে, তাতে শুধুই লোনা পানি ॥ গাছের এক জাগাতে শিকড় আছে, আর গাছের বোয়া নেবেছে দুই জাগায় । এমনি শব্দ গ্রাস করিলে, নদী-নালা বন্দ হয় ।

দূর্জয় পাহাড়ের নীচে, আজব এক দরিয়া আছে, উজোন আর ভাটি স্রোত, সে জাগাতে কেবল বয় ॥ উত্তরে পাগলার খালে, এই পাগলা কানাই বলে, তাতে অধর শুকনো জল । কতো ফকির বোষ্টম আলেম ফাজেল, সে জাগাতে হচ্ছে তল । দক্ষিণে এর সাগর আছে, কয় এক জন ওঠছে ভাসে, অধম পাগলা কানাই মলো হাসে, এও দেখি এক মজার কল ॥ ১-ত্রি-বেণি । ২-গঙ্গা । ৩-বেগবতী খাল/ সম্বাদ যন্ত্র ।

(৬৯)

এক উদ্ব্দো গাছে উব্দো মূল দণ্ডি নদীর নাই তার কুল । তাই নব গুণে নব মহন্ত , কূল চেনে না মন ভ্রান্ত, আদ্যি মানে আদ্যি অন্ত, পাতায় শান্ত, বন্ধ আছে মালেকুল । শুনি খোদার ছোট নবীর বড় ফুল ॥ সেই যে গাছে চারটি ডাল, উত্তরে তার দীঘি পাগলার খাল: পাগলা কানাই উমি, তাও তো শুনি, চন্দ্রহীনি, নব দ্বারে খাটেয় কল । শুনি লোনা গাঙ্গের তীর মোহনায়, ধ’রে থকে ফল ॥ সেই যে ফুলের কথা শোন, বাইশ গুরুর বাইশ করণ, তাই, রিশবী” কুসুম’ দিবসে মুন্দি, ৩০৪ যুগ ঝরা ।

তাই লগ্ন যোগে ফুলটি ফোটে, যুগ্নি’ যোগে ঝরা । তাকি শুনবি তোরা, সেই ফুলের কথা শোন । ওরে দেখবি যদি ফুলের জ্যোতি, তারই প্রতি রেখো মন । দেখো, ফুলের কড়কেতে” ফল ধরে কেমন ॥ ১-যজ্ঞ করা/মন্থন করা । ২-নারী । ৩-মহাদেব/কামশক্তি । ৪-ঘুষ খাওয়া । ৫- ফুল । ৬-আলো । ৭-এক যুগ । ৮-কড়ি ।

(৭০)

আরে ও ভাই, শোন গাছেরই খবর, যমন কোরামের যের-জবর, অমনি পয়দা ফুল। ফুলের মাঝখনেতে ফলে বলে, হায় আল্লাহ রাছুল। কতো ফকির বৈষ্ণব কয়েক জনে, পায় না তারা ফুলের মানে, গাছ তালায় হয়ে নামাকূল ।

আরে ও ভাই ফুলে গাছে ঘেরা, তার সন্ধান কি পাবি তোরা, ফল কোন জাগায় ধরে। ভাটা পলি পড়ে সরে, ভাসে ফুল সেই জোয়ারে। আবার লাল দারিয়াই ঢালছে। পানি, আমি মুর্শিদের মুখে শুনি, যোগ মতন ফুলে ফল ধরে । আরে ও ভাই সন্ধান কে করে, যমন সাধনেতে মতি ঝরে, ধরে মানিক রতন ফল । তাই গাছ রয়েছে উব্দো হয়ে পাতাল মুখো ভাল । আলেম-ফাজেল ক’য়েক জনে, তারাই পায় সে ফুলের মানে, পাগলা কানাই ঠিক পালো না, দারুন বিধির কল

(৭১)

গাছের যদি মানব নদী, সাধু কুল বটে তারা সব বসে নদীর ঘাটে। জোয়ার আলি হাবুডুবু, ফল সকল গেলো ভাসে। পাগলা কানাই ধরতে যেয়ে, ভাইরে বড়ই বিয়াকুপ হয়েছে ॥ ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব তিন জনা ফুলের চতুক পাশে, তারা সব দৃষ্টি করতেছে ।

কোন ফুলে হয় ভোলা যোগী, তারা যোগ সাধনা করতেছে। ফুলের মূলেতে তারা কি ভাবেতে আছে ॥ লাল জরদ সিয়া সফেদ, চারটি রঙের ফুল। কোন ফুলে হয় কালা পয়দা, কোন ফুলে রাছুল । কোন ফুলে হয় দুনিয়ার গঠন, কোন ফুলে হয় মালেকুল। আমাবশ্যা লাগলে চন্দ্রে রে. কোথায় থাকে ফুল

(৭২)

শণ্যির পার এক দিরাগ পয়দা, দেখে লোকেতে হাসে। ওর শিকড় কনে খোঁজ/ঠিক পালাম না, আজব রং দেখে বাঁচিনে হুতাসে । তার মূল রয়েছে উদ্দো হয়ে, পাতাল মুখো ডাল গেছে। সেই যে গাছে অমূল্য ফল ধরতেছে । আর ভোলা মনা, খুশি তিন জনা, তারা সদায় আনন্দ। গিরিশ কালে সরস কোকিল, না শীত সে বসন্ত। ভোমর এসে ডালে বসে হয়েছে ধন্ধ। ঐ যে দেখ দেখ বিদেশী এ মহান্ত° ॥ ফলটি খসে মোহর আঁটে, গাছে ধরে নতুন ফল।

তিন দিনের দিন ভাটা সরে, বদ্ধ পদ্মার-খাল । হুড়ো? সাগর মেঘনা নদী, যমুনায় হয় হাটু জল । তাই পাগলা কানাই বলে, লোকে চলছে হামেহাল” ॥ ১-কোথায় । ২-গরম কাল । ৩-সর্বময় কর্তা । ৪-স্রোতবাহি খাল/সম্মাত যন্ত্র । ৫- লগুড়ের গুতো । ৬-কুল কনারা নেই যায় । ৭-গভীর জল । ৮-কষ্টে সৃষ্টে ।

(৭৩)

ভাইরে ভাই পাগলা কানাই কয়, এক গাছ গড়েছে দীননাথ সুতোর । গাছের চার ডালেতে কুড়ি (২০) পাতা, নয় দরজা তার, বাহা দেখতে চমৎকার ॥ তিন শত চৌষট্টি জোড়া, পাছটি মোড়া, পঞ্চ মাসে গাছের পদি, গাছটি হয় গড়া। গড়ে সুতোর আপন মনে, অন্যে কি তার সন্ধান জানে, ও সে বিনা বোঁটায় জোড়া দিয়ে জোড়া করে পোক্ত, দিন দিনে হলো শক্ত । এলো পঞ্চম পঞ্চ অংগে, অষ্টম এই অংগ, নব মাসে হলো সে ঘর মুক্ত। হলো দশ মাস ফলেরই প্রাকশ, ভবেতে

(৭৪)

আমি দেখে এলাম ভাব নগরে, উব্দো করে দুনের পরে, গড়াইছে এক আজব গাছ। ডাল ছাড়া ফল, ফল ছাড়া ফুল, আছে কতো কাল, ওরে গাছে যেদিন ফল পাকে, পাড়ার লোক আসে/আনে ডাকে, আবার ফল দেখে লোকে হাসে আজব ।

কত ফকির বৈাষ্টম আলেম ফাজেল, তালাশ করে গাছের চারা । ওরে ফুল বাগিচায়, গাছের দ্বারে, তারা খুঁজে পাগল পারা । সেথা পাবা না ফুল বাগিচায়, কুদরতে আছে ঘেরা ॥ ভাইরে সাগরেতে চারার পয়দা হয়, আসমানেতে গাছের শিকড় দেখে লাগে ভয় । পাগলা কানাইর শুনেই লাগে ভয়। অরুণ বরুণ মুনাদিরের ঠাই, চার চীজে পয়দা কল্লেন সাঁই, কুদরতের চারা পয়দা করলেন মাওলায় || (প্রশ্নপদ নম্বরঃ-১৭৫)

(৭৫)

ও ভাই মোলাম পঞ্জের হাটে ঘড়ি পাওয়া যায়। সে তোমার আমার কর্ম নয় । সাধিলে সাধুর তত্ত্ব অর্থ পাওয়া যায় । ও তোর নয় ছয় আশা যাওয়া হবে, জল থুয়ে ডুব খেলা বাঁচড়ায় । শুনি সাধনের ঘড়ি, নব নালায় দম পুরা । বয় ধারা ৬০ মিনিটি দুই কাটা করা । এর ওয়ান টু থ্রী ফোর ফাইভ ৬০ মিনিটি, দুই কাটা এক মিলন করা । ওরে আগুনের জাট, পানির ঢাকা, পবন তার সাথ, তার ঘুরছে চাকা দমেতে । মন মহাজন বসে আছে সেই কাটার পারে । পাগলা কানাই ভেবে বলে, ঘড়িতে দম পুরা আছে

(৭৬)

একদমের জাহাজ ভাই, বানালো কোন জন । দমের এক জাহাজ গড়ে, কি কর্ম করতেছে। দুই দিকে দুই আবের চাকা, হামেশা ঘুরতেছে। চাকাতে নাইকো পাখা, ঘুরতেছে কেয়ছা বাঁকা, আসমান জমিন কেউ জানে না, তার সন্ধান ॥ আব জীবে তোন ভবের হাটে, দমের জাহাজ সেই ঘাটে, সেথা বসে আছে, সেই আতস খাক বাদ, যখন না ছিলো । কি দিয়ে সাঁই দমের জাহাজ, তৈয়ার করিল । 1 মহাজন। সেই জাহাজে চড়লে পরে, পাগলা কানাই ভেবে বলে, তুই আসল হারা হৰি, সেই মন মহাজন

(৭৭)

এক নৌকা এই শূন্যের পার, গঠেছে এই ভাবের পার, নাম তার নৌকা বায়ে চলে দো-ধারী, দুই বৈঠা পড়ে তারিফ করি তারিফ করি সেই দার। বাচ খেলে শুকানোর পরে, ভয়ে মরি তাহার স্তরে, ভাইরে তারিফ কর আছে বিটার ॥ বিনা কাষ্ঠের নৌকা গড়া, দো-সারি গলই পাড়া, ৩২ গলি, ৩৬৪ জোড়া । নৌকার হাল ধরেছে নিরাঞ্জনে, অন্যে কি তার সন্ধান জানে, জোগালদার সে বিন্দু ছাড়া ।

সেই নৌকার বাইশ গলই, মধ্যে তার এক দাড়াও আমি জনম ভরে বোঝায় দিলাম, বোঝায় সারা হল না। আসলে তুফান যাবি মারা, স নৌকার বিশ্বাস পালাম না। পাগলা কানাই ভেবে বলে, ভব পারে যাওয়া ঘটল না। ভব পারে যাবিরে মন, তার মন্তর শিখলি না ।

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ১

(৭৮)

দেখরে সুখ সাগরে সরবরে সুখ পাখি, সেখানে চরে হাটে যায়। তার নিঃশ্বাসেতে জগত জ্বলে, সে মতি খুটে খায় । পাখির আসমানে গা, জমিনে পা; সে কোন ঠাঁয় বসে না, কি দিবা রাতি। পাখি রাত্রি জাগে, কোথায় থাকে, পারিনে কতি। ওরে পাখির পাখায় জগত ঢাকা, আছে চার চীজ চার কারে। এমনি সৌখিন পাখি সে, থাকে রোজ-হাসরের ময়দান পারে । পাগলা কানাই বলে পাখিরে, একদিনও না দেখলাম তোরে ।

 

পাগলা কানাই এর গানের পর্ব ২:

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ২

 

(৭৯)

আমি শুনেছি মুর্শিদের মুখি, খাচায় আছে প্রাণপাখি, পাখি নাইরে মিথ্যা ফাঁকি জুকি। পাখি খাচা থেকে উঠলো ডাকে, দেখলাম না এই দুই চোখি। ওসে থাকে। খাচার ভিতরে, একদিনও না দেখলাম তারে, কথা কয় মুখি আবার সে পোষ মানে না, পোষা পাখি নাই। তারে শিকল দিয়ে রাখবা ভাই, চিরদিন থাকে না। এক জাগায়, এই রূপের খাচায় সুখের পাখি, অধম পাগলা কানাই কয়।

ও সে দুধ-কলা খা’য়ে দিল ফাঁকি, খাচা থুয়ে উড়ে যায় পাখি, ও সে থাকে কোন জাগায় ॥ আর দেশের পাখি দেশে গেলি, শোন পাখি তোরে বলি, তোর জন্যেতে রাত্র দিবস ঝরে দুই আখি । কত ডাকি ফিরে আয় নিঠুর পাখি, ঘৃত-ছানা দেব তোর মুখি, পাখি কি দোষ পেয়ে ফেলে গেলি, আমারে দিয়ে ফাঁকি। ফাঁকি দিয়ে। পালাইয়া গেলে, সাধের পিঞ্জরা ফেলে । ও নিষ্ঠুর পাখি

(৮০)

ওরে ও তুই শোন বলি সুকলাল তোতা, খাচায় বসে কস কথা। বসন্তের নাভিস্থলে, দুই আখি চুরমা ডলে’, তোতা তোরে দেখলাম না। ও তুই চলে গেলি কেও শুধাবে না ও তুই কার বা পাখি, কোথায় ছিলি, কি ভাবে এই খাচায় আলি।

সে দেশে তোর আর কে আছে, বল তোতা তুই আমার কাছে। পাখি তারে কি বলে আলি, কি মায়ায় এই খাচায় বন্ধ রলি ভরে ও তোর সেই দেশেতে যাওয়া ভার, পাখি উড়ো সারো বারংবার। পাগলা কানাই বলে পাখি, না ছাড়ে যাইও আমার । ছাড়ে যাইও না এই পিঞ্জরা খুয়ে, ঘৃত ননী খাস যায়ে, পাখি ছাড়ে যাইও না আমারে ১- মধ্যভাগ। ২- তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।

(৮১)

শুরু পাখিরে সুখের দিন তোর বয়ে গিয়েছে। সুক সাগরে অন্ধকারে বাপের মস্ত কে ধড় পড়ে রয়েছে । দেখবি কুয়োকারে মার গর্ভেতে ওসে ভাসতেছে । ও ভাই সকলরা ভবে প্রকাশ সেইতো করেছে ॥ দুনেদারী কুহকারী বড় ঝাকমারী কে বা কার।

আমি বা কার, সত্যি এটা নরেকার। ধরার ঘাট সামনে আমার, করবো কি, সামনে করে বসে বসে ভাবলে হবে কি, পাগলা কানাই ভেবে মলো, পারবা না পিছতি ॥ আর কর্ম যা লেখেছে কর্মকার, কানলে তো মিটবে না আর, তুমি মনে মনে ভাবো একিন । ঐ ধরার ঘাটে পার হতে হবে, চার কালে একদিন । ঐ নবীর কলমা পড়বা যে খাটে, পার হবা সেই ধরার ঘাটে মূল্য, গাটির পয়সা কেবল মুখে রব্বুল আলামিন

(৮২)

পাগরা কানাই কয়, ও লাল ময়না- তোরে বিনয় করি ছেড়ে যাইও না। ঐ রূপের খাঁচায় সুখের ময়নারে, তুই বসত করলি না ॥ আসবার কালে আইলাম তোর সাথে, এখন (কর্ম) ফেলে চললি ধর্ম পথে। তুমি আমি রঙ্গ রসে, আমরা ছিলাম এই দুনিয়াতে ॥ এখন ফাঁকি দিয়ে ফেলে গেলি, ঐনা ঘোর অন্ধ কারে । আত্মা খোঁজ, মীম মোকামে, ওরে কাবা শরীফ মক্কা যেখানে। তোর এই দেহেতে আছে মক্কারে- মুর্শিদ ধর নে চিনে

(৮৩)

এক রথ গড়ায়ে দীনবন্ধু করেছ কি কাম । সে রথ ঘোরছে দুই চাকে, সদায় উল্টো পাকে; ওসে শন্যি ভরে উড়ে যায়, লেখা আছে রথের চূড়ায়; আমার আল্লাহ মুহম্মদের নাম ॥ হায়াত মউত রিজিক দৌলাত সব বিধাতার। রথের দরজায় আছে চার জন পাহারাদার। পাগলা কানাই বলে আরও চার জন চৌকিদার ॥ ভাইরে দীনবন্ধুর এমনি কাম, রথের মদি বসত শালগ্রাম । মহাবস্তু সাধনের ধন সে, করতেছে আরাম ১. কাজ। ২- এখানে অর্থ, দশ ইন্দ্র ও ষড়কপুর সমন্বয়ে বসত ।

(৮৪)

ভাইরে তারিফ করি কামিল কারে, বানাইছে এ আজব রথ। দুই পাটিতে গ সারা, ওজন হয় ঠিক সাড়ে তিন হাত ও তার ময় দরজা দেখতে মজা চলতেছে পবনের সাথ। নীচেই দুই চাকা ঘোরে, ছয় জন সেই রথের পরে, মার খানেতে বিরাজ করে ভাইরে, ত্রিজগতের নাথ । যেদিন হেলবে চূড়ো হবে গুে চলবে না রথ টানা দিলে । ৬০ সমুদ্রের হাল হবে নড়বড়ে, রণখিল খসে পরে।

পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরা, দেখেছ তোমরা তাহারে । কামিল-কার নাগাল পালি, ঘুচাতাম মনের কালি, ফিরে লাগাতাম তালি, ভাইরে ঘোড়া চলতো খুব জোরে ॥ কামিল-কার কতই গুণ ধরে, থাকেন সেই রথের পরে, ও তার নামটি দীননাথ । ওসে আপনি গড়ে আপনি ভাঙ্গে, ভাল মন্দ তাইরি হাত। তার কেউ চেনে কেউ চেনে না, বায় পিত্তি কফ তিন জনা, সারথী পালায়ে গেলে ভাইরে, ভাঙ্গে পড়বে সে রথ ।

(৮৫)

কানাই বলে নতুন কালে, রথ দেখ চলে ইশারাই। সে রথ পুরনো হলি শোন বলি, জুড ভুলে বেস্তৃত হয়। নড়ে চড়ে খসে পড়েরে, আরে ও রে-ভাই-আর কি আঁটে খাটের ঘাই । তকতা খসে গেল ধ্বসে, এখন ঠেলে ঠুলে চালাতি হয়। জীর্ণ কাষ্ঠের তক্তা রথের, অনুরাগের সারথী। সে রথ দুয়োম তালা, রাগে খোলা, তান জোগাত হেওতি। ঢাকা শহর দিল্লী লাহোর, আরে ও ভাই চলতো রথ দিবা রাতি ।

এখন বান এঁড়ে যায় তক্তা ফাঁড়ে, তুমি মুগুর মারে আটবা কী এর দিন থাকিতে মেরামতি করে যে জন, আবার যোগ মতন যে চালায় যখন, তখনই নতুন । সে রথ অসময়ে রোশনী করা রে-আরে ও ভাই কাল গেলে শুরু ভজন, তাতে লভ্য হয় না। তোর সে রস ছাড়া, বিকার মুখে চালতের অম্বল ১-সুর। ২-রশি। ৩-সময় । ৪-লাভ। ৫-আদি রস।

(৮৬)

পাগলা কানাই বলেরে ভাই, সে কালে দিন আমার নাই; এখন পড়েছি ভাটি । রথের চাকা ঘুরে মুড়ো যায়ে, ভর পলো রথের জাটি। এখন খালি হাতে কি দিয়ে আঁটি । সুতোর দিছিলো এক খান রথ গ’ড়ে, আমি সুখ পালাম না তাতে চড়ে, কোন মজা হলো না ।

আবার জীর্ণ কাষ্ঠের তকতা রথের, মুগুর কেনো দিলে না । নড়তো চড়তো আটতাম বসে, দিতাম দুই চার খাটের ঘাই, জোড়ার মুখ আর ঘসতে পারতো না। গড়নদার যে সুতোর সকলই তাইরি হাত। পাগলা কানাই টা’নে মলো, শুধু খাটের রথ ॥ রথের ২২ মুখ উপর খোপে, পাগলা কানাই তারই দোপে, এখন পড়েছি ভাটি । ওরে জোয়ান কালে ছিলাম ভালো, বদ ছিলো মোর হাটুতি। এখন ১৬ চুঙ্গীর বুদ্ধি কানাইর, গেলো এক চুঙ্গীর মদি ।

(৮৭)

ওরে ভাই লা-মোকামে বসে আছে দীন নাথ। তার কুদরতের কত নিন্দা শুনি, ১৪ পোয়ার মধ্য খানি, ও ভাই গড়াইছেন এক মা’টে রথ। তাতে না দিয়ে খাটে, বিন্দু আটে, কি প্রকারে ঘুরছে জাট। সদাই জ্বলছে দুই বাতি চুঁড়ার পরে রথের মাথ ।

আরে ওরে ভাই, ১০ মাসে রথ গড়া পিটা সারা হয়। দশ মাসে দশ ইল দিয়ে, কিঞ্চিৎ বারী বিন্দু নিয়ে, ওসে দুই ঢাকার পার রথ চালায়। ওরে রথে চড়ে হালুক ধরে দীনবন্ধু কল খাটায় । সে রথ আপনি চলে, ও কেহ ঠেলে নারে ভাই। সেরথ দুনের পরে হাওয়া ভরে, চলছে ঘরে ঘরে, ওরে সে খানিক চলে খানিক চলে নাই। দিয়ে ৩৬৪ জোড়া, রথ করে খাড়া, দীনবন্ধুর কারখানায়। তাই পাগলা কানাই কয়, অমন তো আর দেখি নাই ১-মতি বিন্দু । ২-লাগাম বা রশি ।

(৮৮)

তোরা দেখে যারে ভাই সকলরা আচ্ছা মজার রথ । রথের আঠ কুঠরী সারি সারি, নকশা দেখে হাসে মরি, তাতে ছিলো না গাছ-পাত। আর আতশ থাক বাদ দিয়ে, মিলন করা একই সাথ । চলতেছে রথ হাওয়া ভরে, শুকনোর পর দুই চাকা ঘোরে, বিনা দড়ায় রথ চালাচ্ছে রে আমার দীননাথ । তোরা দেখে যারে ভাই সকলরা, রথের হেলেছে চুঁড়ো, দিনে দিনে জারলো ঘুনী, বাহার দিয়েছে টুনি, আর ছিলো বলরাম খুঁড়ো।

তাই রথের যদি রথের রাজা, আট কুঠুরী নয় দরোজা, তাতে দুই বাতি ছিলো । তেল ফুরিয়ে রোশনাই গেলো, চন্দ্র গ্রহণ লেগে এলো। (বলে গিয়েছে তাড়াতাড়ি, কেমন করে ধরবো পাড়ি) ভাঙ্গা রথ ঠেলতে ঠেলতে, কানাইর দিন বয়ে গেলো। রথ নতুন কালে ছিলো ভালো, দেখতে পরিপাটি। ওর ব্যালন গিয়েছে আড়ো হয়ে, আড়িয়ে গেছে খিলকাটি। আমি ঠেলে ঠুলে দেখলাম কত, আর চলে না নতুনের মত, লক্ষ টাকার রথ খানারে, ভেঙ্গে হয়ে যায় মাটি ১-পত্তন। ২-সম্বাত যন্ত্র । ৩-সাধন যন্ত্র ।

(৮৯)

এই পাগলা কানাই বলে, গড়া রথ নতুন কালে, চালাতাম সাবু বলে, এই শেষ কালে, তাল বেতাল আর চলে না। এখন ঠেলে ঠুলে চালাতে যায়, যে ঠেলবে সে ঠেলে না । আমার ঠেলতে ঠেলতে দিন গিয়েছে, এখন ঠেলা আসে না । আমার দিশেহারা, সারে যাতি পারলাম না। এখন যার কাছে যায় সেই রাগ করে, ভাটি রথ চলে না ॥ রথের চড়নদার যারা, সব সরে পলো তারা, হয়েছি নজর ধরা রথে থাকবো না।

ইন্দ্র চন্দ্র রুপু ছয় জন, তারা প্রবোধ মানে না। কানাইর বর্ণ চলে না ও রথ নতুন যখন গড়া, খুব টনকো ছিলো দড়া, খুব জোরে চলতো ঘোড়া, বেশ পরিপাটি। আমরা তাই দেখে শুনে, রথের এই ষোল জনে দিনকতক টানে টুনে ঠেলে ঠুলে দিয়েছি কত বাহার । এখন সারথী হয়েছে ভাটি, দড়াতে জোর নাইকো আ।। পাগলা কানাইর হলো এখন টানাটানি সার। এ ব চলবে নাকো আর ।

(৯০)

পাগলা কানাই বলে সুতোরের কি গুন পানা। এক রথ গড়েছে তিন কোনা তাতে চড়েছে এক দ্বীন কানা । আর এক জন চড়েছে, সে মোটেই কানে শোনে না। আর এক জন সে কয় না কথা, রথ ঠেলে দেয় যথা তথা; ষোল-জন গোপী, ঠাকুর এক জনা । ঠাকুর পুজা দেয় আর ঘন্টা বাজায় তিন জনা” ॥ রথের চূড়ায় বসে আছে ত্রৈলোক্ষ নাথ” । আছে আট কুঠারী নয়টি পথ, ষোল জন গোপী সাথ, নব দ্বারে নব কীর্তন করে সব ।

গোপীগণে নৃত্ত্ব করে, আপনি রথের ঢাকা ঘোরে, বা! কি আজব লীলায় গড়া রথ । পুরুষ কি প্রকৃতি রথের গতাগত ॥ তাই পাগলা কানাই কয়-শন্যির পর এক রথ গড়েছে, চক্ষে দেখা যায়। যে চড়েছে সেই রথে, চার যুগ উঠেছে পথে, শুনি মানব লীলা রথের পরে, ব্রহ্মাণ্ডে কে বুঝতে পারে, মহাদেব কিঞ্চিত ধ্যানে দেখেছে । ঐ দেখ উর্দ্ধদৃষ্ট হয়ে চক্ষু মুদেছে ১-সম্বাদ যন্ত্র । ২-১০ ইন্দ্র ও ৬ রিপু। ৩-মন-মহাজন । ৪-এ্যাডোলা-পিঙ্গলা- সুষমা। ৫-মালিক। ৬-আসা-যাওয়া ।

(৯১)

এক রথের ধূয়ো বান্দে, পাগল কানাই রাত্র-দিনি কান্দে । বেহাল রূপ ধরে পাগল চান্দে । রথ উজালা করেছে রে ভাই, দেখ সাড়ে চব্বিশ চান্দে । বিনে সুতোয় ছুঁয়ো দিয়েছে রথের সাথে, তোরা দেখ দেখ এক বক বেঁধেছে ভাইরে, সেই উড়ো ফান্দে ॥ রথ দেখা যাচ্ছে ভালো, ও সে মাটে তক্তা কাম পাকা । বকের জন্য চাম-পাতেও ঝাপা । চার চৌকিদার ষোল পৌরী পাহারা রাখা। যে দিন বক উড়িবে রথ পড়িবে, ঘোরবে না আর দুই চাকা ।

পাগলা কানাই বলে ভাইরে, রথে কারো হবে না থাকা ॥ আমি ভাবছি নিরবধি, চব্বিশ দরে রেখেছে রথের মদি । ফিকির করে গড়ায়ছেন বিধি । আয়রে তোরা ধরবি মন বগা, দ্যায়রার মচ্ছ” খাও যদি । সৎ লোক যারা জুয়া চোর তারা, যায় নারে কথার মদ্দি । ভজন গড়ন এক গুনের সুতোর ভাইরে লয়ে সুবুদ্ধি ১-ফাঁদ । ২-অনুরাগ । ৩-চামড়া দিয়ে ঢাকা । ৪-আটকানো । ৫-চার চিজ দিয়ে দেহ গড়া। ৬-১৬ জন ইন্দ্রিয় । ৭-অধিন/স্থান । ৮-কৌশল । ৯-গর্ত । ১০-মাছ ।

(৯২)

চালাও তরী শুকনোর পারে কোন জন । না দিয়ে গলই, বাইশ জলই অপূর্ব। তরীর গঠন। ধন্য সুতোর গড়েরে কোন জন । মোল্লাহ সুতোর বোঝায় হলি, দিবস কয় খালি বলি, হয়ে বিসর্জন। ইচ্ছা করি শুকনোর পারে ভ্রমণ করি ত্রিভুবন আমি ভাবছি বসে তরীর ভাব দেখে। তিন জন ঠাকুর তিন জন মাঝি। নিয়ে, বসে আছে তরীর ভাব লয়ে, অচল সচল প্রেমণ ঠিক রেখে, ব্রহ্মাণ্ড ভাই। তরীতে পোরা, যায় তারা সুখে ।

অন্ধ ধন্দ করেন বন্ধ তারাই বেড়ায় পথ দেখে । ছয় জনে করে মন্ত্রনা, ঘটালো কু-যন্ত্রনা, কানাইর ফেললো বিপাকে ॥ তরীর পারে কত শত জন, কেউ কানা কেউ বোবা, কেহই কেহই কাল । ওরে ভাল কিডা, মাঝি তরীর পার, তার এক মাঝি হলে বে-রাজী, শুকনোই তরী হবে তল । বাতাসে এক শমন এসে, চলিবে নিজ দেশে” পাগলা কানাই তুই চল ॥ ১-নৌকা গঠনে ব্যবহৃত গজাল/দেহের বাইশ কোনা । ২-প্রধান । ৩-মহব্বত । ৪- মৃত্যু পুরী ।

(৯৩)

গড়ে এক জীর্ণ তরী, সদাই ভেবে মরি, কাণ্ডারী হল তার দীনা । মহাজনের মাল, রেখ হে সামাল, বে-গোনে পাল তুলো না। তরীর গুণী ছিল তিন জনা, মন দিয়ে গুণ টানে না, ও তার ঘোলা কাটে না। ছয় জন দাড়ি, করে কোয়াড়ি ভেঙ্গে দিল তারীর বাড়খানা ।

তাই বুঝিয়ে কর হে পুঁজি, মাল খোপে মাঝি রব্বানা ॥ ও তরী রতন মনি, নিচের খোপে শুনি, সুরোধ্বনি বসে আছে। গঙ্গা নারায়নী, শতদলের নিচেই নীল কামিনী রয়েছে। এক জন জুয়োচোর আছে তরীর পিছে । ও তারা (তরীর) ঘোলায় ফেলতেছে । ওরে আড়ানো কানন’ দিবে হে কাটে, তুফান উঠে জল গিয়েছে, কোন দিন কল ছুটে, মাল নেবে লুটে, তরী।

রেখ ঘাটে তার পিছে ॥ তরীর মধ্যে রব্বনা, করছে কি গুণপান, ও সে ক্রমে হল। দিনা। দিনে দিনে জারলো ঘুনে, এখন আর জল মানায় না। পাগলা কানাই ভেবে বলে, আমার কাল আর ঘুচল না ॥ ১-দীননাথ । ২-বায়-পিত্ত-কফ । ৩-গোলজোগ । ৪-উদ্ধতপনা। ৫-কলব। ৬- গঙ্গা/স্বরসতী । ৭-দুর্গম জঙ্গল ।

(৯৪)

পাগলা কানাই বলে, বেশরে ভবে দেখলাম এক খান বেশ তরী । তরীর তরঙ্গ মাঝে ছয় জন, আর আমি ঘুরে মরি । আবার মোনাই কাজি হয়ে রাজী, সেইতি তরীতে চড়ে আইছি মন ব্যাপারী হয়ে। লাভে মূলে করব ব্যবসা, এসে ছিলাম । করে ব্যাপারী । নোনা লেগে গলই খসে, কোন দিন ডুবে যাবে সাধের তরী ।

তাই বলে । এখন আসল বস্তু মূলে হারা, ধন সকল সব খাওয়ালি শঠের দ্বারা জিনিস কিনে, লাভের ধন তোর গেল সব পিঁপড়েই থায়ে দিন থাকতে উপরে পুঁজি, কর সে মহাজন রাজী, আমি বলি বুঝলিনে মন, হারাম থোর পাজি। পাড়ি মাল্লাহ তারা সব করে কোয়াড়ি। আমি কেমন করে কু-বাতাশে তরঙ্গে বেদ পাড়ি। যখন বালির চরে ঠেকে তরী, ছিড়ে যাবে পালের দড়ি, তাই বুঝে ন সদায় কর, কোন দিন যেতে হবে নিজ বাড়ি ॥

(৯৫)

দেখ দেখ ভাই সকলরা, এক রংয়ের মেস্তেরী। তরী চালাচ্ছে ফিকিরী, আমি ভেবে তাই মরি । হ্যাটে-প্যাটে তক্তা দিয়ে চালাচ্ছে তরী । এক মাগীর পার তিন মিনসে বসে রে, আমি ভাবে মরি ॥ এক জনা তার আগের নৌকায়, আরেক জন তার ডৌরায় । আর এক জন তার পাছার নৌকায় রয় । পাগলা কানাই কয়ে যায়, তলে পড়ে বিযুত বিটি, করছেরে হায় হায়।

তোমার গুণটানা বিটি, কোন দিন পালায়ে যায় ॥ পদ্মা নদী বিষম নদী, তাতে উঠছেরে তুফান। বাদাম তুলে দাও হে পাড়ি, বসে রলি কেন। ইদু বিশ্বাস তোর গুণ টানা বিটি-তারে রাখিও সাবধান (প্রশ্ন পদ নম্বরঃ-পরিশিষ্ট ৭০৭ নম্বর পদ, ইদু বিশ্বাস) ১-এপিঠ-ওপিঠ/চারিদিক । ২-তরীর মাঝের নাম ।

(৯৬)

ডুবলো ডুবলো গঙ্গা ভাঙ্গা তনু তরী । এ সংসার সাগর ওমা, এ সংসারো কিসে যাব তরী । সর্ব দফায় বিপদ কিসে, ওমা এই গঙ্গা নামের তরী ॥ ছিলে ছিলে হে গঙ্গা, ব্রহ্ম কুপ-মণ্ডলে’, কৌতুক` কারণে ভবে এলে । এর ভগীরতম তপিষ্যতম হস্য বিধং মধ্যে প্রকাশিলে।

তুমি এসে উদ্ধার হলে। হলে হলে ওগো গঙ্গা কাণ্ডার মুনি । কাণ্ডার পতিত এর পথ করণং পতিত পবনং শিবনং শিবনং । হিত আছে বাসিনী বিন্দু, করনারী সিন্ধু, পাগলা কানাই ভেবে হত ॥ ১-পিতার মস্তক । ২-কামরিপু । টীকাঃ-পিতার মস্তকে সন্তান বীর্য রূপে মীন আকারে ভাসে । গঙ্গা ব্রহ্মার কণ্যা । এখানে মস্তককে কুপ-মণ্ডল বলা হয়েছে।

(৯৭)

কি জবাব দিল্লীর নবাব, জবান নেই জবান বন্দ । বসে আছে চার বন্ধ, সে চোরার এমনি পছন্দ, বুদ্ধির নাগর বিদ্যার সাগর চোখ অন্ধ । বিচার তাহার দেখে হয় সন্দ । সর্ব দফায় চোরের সঙ্গে কি রঙ্গে, রয়েছে সদাই আনন্দ ॥ সে চোর সিদ তাই বলে ।

এখন আসল বস্তু মূলে হারা, ধন সকল সব খাওয়ালি শঠের দ্বারা জিনিস কিনে, লাভের ধন তোর গেল সব পিঁপড়েই থায়ে দিন থাকতে উপরে পুঁজি, কর সে মহাজন রাজী, আমি বলি বুঝলিনে মন, হারাম থোর পাজি। পাড়ি মাল্লাহ তারা সব করে কোয়াড়ি। আমি কেমন করে কু-বাতাশে তরঙ্গে বেদ পাড়ি। যখন বালির চরে ঠেকে তরী, ছিড়ে যাবে পালের দড়ি, তাই বুঝে ন সদায় কর, কোন দিন যেতে হবে নিজ বাড়ি ॥

(৯৮)

দেখ দেখ ভাই সকলরা, এক রংয়ের মেস্তেরী। তরী চালাচ্ছে ফিকিরী, আমি ভেবে তাই মরি । হ্যাটে-প্যাটে তক্তা দিয়ে চালাচ্ছে তরী । এক মাগীর পার তিন মিনসে বসে রে, আমি ভাবে মরি ॥ এক জনা তার আগের নৌকায়, আরেক জন তার ডৌরায় । আর এক জন তার পাছার নৌকায় রয় । পাগলা কানাই কয়ে যায়, তলে পড়ে বিযুত বিটি, করছেরে হায় হায়।

তোমার গুণটানা বিটি, কোন দিন পালায়ে যায় ॥ পদ্মা নদী বিষম নদী, তাতে উঠছেরে তুফান। বাদাম তুলে দাও হে পাড়ি, বসে রলি কেন। ইদু বিশ্বাস তোর গুণ টানা বিটি-তারে রাখিও সাবধান (প্রশ্ন পদ নম্বরঃ-পরিশিষ্ট ৭০৭ নম্বর পদ, ইদু বিশ্বাস) ১-এপিঠ-ওপিঠ/চারিদিক । ২-তরীর মাঝের নাম ।

(৯৯)

ডুবলো ডুবলো গঙ্গা ভাঙ্গা তনু তরী । এ সংসার সাগর ওমা, এ সংসারো কিসে যাব তরী । সর্ব দফায় বিপদ কিসে, ওমা এই গঙ্গা নামের তরী ॥ ছিলে ছিলে হে গঙ্গা, ব্রহ্ম কুপ-মণ্ডলে’, কৌতুক` কারণে ভবে এলে । এর ভগীরতম তপিষ্যতম হস্য বিধং মধ্যে প্রকাশিলে। তুমি এসে উদ্ধার হলে। হলে হলে ওগো গঙ্গা কাণ্ডার মুনি । কাণ্ডার পতিত এর পথ করণং পতিত পবনং শিবনং শিবনং ।

হিত আছে বাসিনী বিন্দু, করনারী সিন্ধু, পাগলা কানাই ভেবে হত ॥ ১-পিতার মস্তক । ২-কামরিপু । টীকাঃ-পিতার মস্তকে সন্তান বীর্য রূপে মীন আকারে ভাসে । গঙ্গা ব্রহ্মার কণ্যা । এখানে মস্তককে কুপ-মণ্ডল বলা হয়েছে।

(১০০)

কি জবাব দিল্লীর নবাব, জবান নেই জবান বন্দ । বসে আছে চার বন্ধ, সে চোরার এমনি পছন্দ, বুদ্ধির নাগর বিদ্যার সাগর চোখ অন্ধ । বিচার তাহার দেখে হয় সন্দ । সর্ব দফায় চোরের সঙ্গে কি রঙ্গে, রয়েছে সদাই আনন্দ ॥ সে চোর সিদ  মানে, আজাজিল আছে কনে, আমি তাই জিজ্ঞাসা করি আর শুনতে পাই আলেমের কাছে, কেতাবে লেখা আছে, ভাইরে সেই আজাজিল শয়তান।

আর কি জন্যেতে শয়তান হল, কল করিয়ে বয়ান । সে যে আগে ছিল খাস ফেরেশতা, সকলের প্রধান। সে সকলের উপরে ছিল, খোদা ছিল মেহেরবান। কও বরাি কথার মানে, আজাজিল আছে কনে, বয়াতি উত্তর দিয়ে রাখ মান ।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ২

 

(১০১)

নারীর প্রেমে কেউ মজো নারে ভাই, কথা বলি রাজ সভায়। আমি কানাই ঠেকলামরে ভাই, ঐ নিকাশের দায় । আমি জো না চিনে, লাঙ্গল কিনে, খাটালাম ক্ষেতে । বীজ বুনে আলামরে ভাই, শূন্যদার ঐ মাঠে। ভাইরে কাচি নিলাম না। তাতে ॥ আমি কি দিয়ে দেব জমার খাজনা, মোর তাই বল । ভাইরে ভাই আমার খাজনা, বকেয়া রল । (অসমাপ্ত)

(১০২)

একটা গানের কথা শুনছ নাকি ভাই । শুনেছো না শুনতে চাও, ঘর জামাইর দুঃখের সীমা নাই । আবার যে জন থাকে শ্বশুর বাড়ি, সেও ভাড়োর পোড়া কপাল হয়। পাত কাটা পাতেলের মতো, তার শোবার জাগা দেয়। বউ রাগ করে অন্যস্তরে বিছেন পাড়ে শোয়। ও সে কয় না কথা কারও ঠাঁই । আবার মাঠেন বাড়ি এসে একটু আগুন চাই। রাগ করিয়ে বউ মুখ ঘুরিয়ে যায়। কান্দে কান্দে মায়ের আগে কয়।

ও মা তোর জামাইর এমনি নীতি, আমার কাছে আগুন চাই। ওসে গন্যি করে বান্দির মতো, তাও কি প্রাণে সয় আমার। সেই দুঃখে গলে। নেবা ছুরি, ও ছুরি-জীবন রাখরো না আর ॥ শ্বশুড়ি উঠে কয় ও কূটনীর বিটা, আমার বাড়ি থাকিস কেন গাধা। ওরে মেয়ে আমার পূর্ণিমার চাঁদ, তোর কি আছে ক্ষমতা । তুই গেলি কত ভাল জামাই পাব, মেয়ের আছে ক্ষমতা । পাগলা কানাই তাই ভাবে কয়, ভাইরে থাকা হলো না ঘর জামাই ।

(১০৩)

পাগলা কানাই কয়, ওরে আমার আল্লাদে জামাই । ওরে জামাই যখন শ্বশুর বাড়ি, শ্বাশুড়ি করে দৌড়া-দৌড়ি, যেয়ে বলে পাড়শীর ঠাঁই । ওরে জামাই এলো আমার বাড়ি, দুগ্ধ দেও তাড়াতাড়ি, অনেক দিন জামাই আসে নাই ॥ আর জামাই যখন খেতে বসিলো, নুনে একটু কম পড়িলো, দৌড়ে পড়শীর বাড়ি গেলো। তিন পোয়া নুন আনিল, জামাইর পাতে ঢালে দিল, লজ্জায় জামাই খেয়ে নিল । তাই ভাবে পাগলা কানাই কয়, ভাইরে এমন মজা কভু দেখি নাই ॥

(১০৪)

আরে ও পাগলা কানাই কয়, শোন ভাই মিথ্যা কথা নাই। ছয় জনের ৬৪ মাথা, পা ২০ খানি, দিয়াছেন মালেক গণি, কও দিন শুনি কি প্রকারে হাটে যায় । আরে ও এক সুতোই গাথা, ছয় জনের ২০ খানি পা, ৬৪ মাথা।

১২ চোখে ছয় খানি মুখ, দেখতে বড় অতি সুখ, চার মুখেতে আহার করে, এই দুনিয়ার পরে, দুই মুখে সে কয় কথা ॥ আরে ও তারা করে আপন কাজ, পাঁচ শুরু পড়ে নামাজ। দুই জন করে আল্লাজীর নাম, বিটার কথায় তো ভারী প্যাচ। ভাইরে ভবের পরে ছয় জনের চার খানি ল্যাজ । ও বয়াতি হবে কতি, দুই জনার কেন দুই রকম সাজ ॥ টীকা:- চার গরু ও দুই মানুষের মই দেয়া ।

(১০৫)

তোরা শোনরে ভাই সকল, কয়ে যায় এই গোরা পাগল । তোরা পাগলেরই কাথা শুনে, সবে হোসনে আর পাগল। বায় পিত্তি কফ তিন জনা, এরাই বাধাচ্ছে আমার গোল ॥ আসে এই ভবের হাটে, বলতে আমার বক্ষ ফাটে। জ্যান্ত এক মানুষ দেখে আলাম, রয়েছে এক মরার প্যাটে। কুম্‌ভীর তার খাচ্ছে কাটে, নব দ্বীপের দক্ষিণ ঘাটে ॥ এক বাজো নারী সে এমনি স্বতী, তার সাড়ে অষ্ট গণ্ডা ছেলে । আজও তার হয়নি বিয়ে, কথা পাগলা কানাই বলে । কি নাম সতীর, কনে থাকে, যাবে ঐ বয়াতি বলে ॥

(১০৬)

দুইটি বয়জা ছয়টি কুসুম, বার বাচ্চার নাম শুনি। পাগলা কানাই ধুয়ো বান্দে, মানে কর ওগো বয়াতি । পানির তলে থাকে এক মানুষ, সে মানুষের আহার কি । সেই পানি শুকাইয়া গেলে, তার উপায় বল হবে কি ॥ কোনদিন পয়দা হল রে আদম হাওয়া, কোনদিন পয়দা হল মা-খাকি। কোন দিন পয়দা হল চন্দ্র সূর্য, কোন দিন পয়দা হল জিব্রাঈল ॥

(১০৭)

আরে ও মিয়ার সোনার মুরোদ্দা চান্দের বাজার। আমরা চার বয়াতি গাচ্ছি জারী এই মিয়ার দরগায় । তাই পাগলা কানাই বলে ও আল্লাহ বলরে, আরে ও মিয়ার জয় জয় ॥ আরে ও মিয়ার খোস নাম বলি আল্লাহর অলি । বাহা! মজার দালান দিয়াছেন নবগঙ্গার কূলি ।

আরও রং দেখা যায় ভাইরে বরষা আলি । আরে ও মিয়ার দালান জলে ভাসে, এও তো ভারী আজব কল। মিয়ার মনে হইছিল থিয়াল, আহারে জমিদারের কপাল। কত বাজে লোকে খায়ে গেল গরীব আর কাঙ্গাল। ও নেকির ভারা কোন দিন যায়না রে তল

(১০৮)

“তরীবুল্লাহ গাচ্ছে জারী, আরমান বাজায় খুনজরী রাশমনি তাল দিতেছে ভা আমি নির্গুণের কানাই, হাজার হাজার সালাম জানাই, আমার উপায় কি বলো তরীবুল্লাহ পাচ্ছে ঘোড়া, আরমান গরু জোড়া, রাশসনি ডাবরা গা পাবেন। মিয়ারা দয়া করে, কানাইকে পাগল বলে, একখানা তেনা-তুনি দিবেন মাজে মিয়া সাজে মিয়া ইয়াসিনকে তোমরা ধরো, আমার বাড়ির মদি যাতি হল । শাল-তার-গরদ বাছাই পাই, চেয়ে দেখরে পাগলা কানাই, কি করি ওর উপায়, ওরা যে মাথা কুটে মলো ॥

(১০৯)

শোনেন শোনেন মিষ্টিবাবু’, দরখাস্ত আমার । ‘আমি পুত্র শোকে অনাথিনী, কান্দে ফিরি রাত্রি দিনি, আমার গান করা ভার । এসেছি এবার দশের চরণ দেখিবার। ওরে ইদু বিশ্বাস’ ওস্তাদ ভাল, কথায় কাজে জানা গেল, ওদের হয়েছে এখন নতুন ধার ।

আমি নির্গুণের কানাই শক্তি নাই আমার আর হরলাল চৌধুরী মরে গেছেন, গিরীশ চৌধুরী” জীবিত আছেন, বাবু অমেত্ব লাল কর, মাইজদ্দিন জর্দার। পবহাটির হরিমল্লিক’, বসত বাটি ভুটের গাতী, বলবো কি হায় মিয়া জসিম জর্দার । সেলিম চৌধুরী মুরোদ্দার। হেডবাবু” ছোট বাবু” আর হরি সরকার”।

সকলেই ভালো বাসেন আমার । মিষ্টিরি বাবুর চাকরী ভারী, তিনি করে থাকেন ফোজদেরী, লায়েক দারোগা মশায়। আমি বড়ো দারোগার নাম না জানি, হাজার হাজার প্রণাম করি, সকলেই রাখবেন রাঙ্গা পায়।

সর্ব চরণে কানাই মুক্তি হয় ১-ম্যাজিস্ট্রেট । ২-শিষ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বি। ৩ ও ৪ জমিদার ছিলেন। ৫-ঝিনাইদহ বার শ্রেষ্ঠ উকিল ও সভাপতি ছিলেন । ৬, ৭ ও ৮-তালুকদার ছিলেন । ৯-নিম জমিদার ছিলেন। ১০ ও ১১-দারোগা ছিলেন । ১২-হরিশ চন্দ্র সরকার। পুলিশ ইনস্পেক্টর ছিলেন।

(১১০)

কানাই কয় ও ছোড়ারা, নাচিস তোরা, হাসিস তো মনে মনে । এক গাছ নেপুরী দিস নে কেনে । মনের সুখে নাচে দেখি এই খানে। কতো ভাব উদয় আজ কানাইর মনে । ওরে নাচে গানে দিন গিয়েছে, বাহার দিয়েছি এত দিনে ।

লোকে মোরে করে গো ঠাট্টা, ও ব্যাটা নাচের কি জানে ॥ যখন ছিলো ছিরি, ঘুরি ফিরি, নাচি রাজ সভায়, মাথায় চুল ছিলো হাত পাঁচ ছয়। দেশ-বিদেশ নাচনার আমার গল্প হয়। এ ভারত বলছেরে সমুদয়। ইরান-তুরান রং রসিয়া আরও কত রাজারই সভায় । খয়রা, বরণ, ঠোঁশ, কায়ারী, আড়, খেমটা, খেমটারে সমুদয় ।

এখন হইছি ভাটি, ভর দিই লাঠি, দত্ত গুলি পড়েছে। কানাইর চুল দাড়ি পাকেছে। না জানি কপালে কি আছে। যে দিন নেবে অন্ধকার কবরের মাঝে ভাই বোন সব কান্দরে আফসোসে থাকলো পড়ে মুলুক জুড়ে, পাগল নাম- কানাই চললো দেশে ১-নুপুর পায়ের ঘুঙুর। ২-অনেক দূর অর্থে। ৩-অনন্দময় নাগর/খুব নামকরা। ৪-নাম ও সুরের নাম । ৫-মৃত্যুপুরী।

(১১১)

এসে ভাই পূর্ব দেশে রইলাম বসে, কেই চেনে কেউ চেনে না। কেহ কেহ করে আনা গোনা । কেহ বলে, পাগলা কানাই ও ওতো হবে না। ওর গনেশের মতে দন্ত ছিলো, পরনে ছিলো দাড়ে-তেনা । কানাই হলি শোন বলি, থাকতো ওর দত্তে র নিশানা ॥ কন্তে এক বিযুত এসে, সভায় বসে, বলছে কানাই কানাই । ও বিটার বলতে লজ্জা নাই । কানাই হলি শোন বলি উজোল থাকতো ছোট ভাই ।

ভবের পরে শুনেছি মোরা, মানুষ জাল করেছে কানাই । ও বিটার কোনই তো চিহ্ন নাই 1 কেহ বলে পাগলা কানাই মরে গিয়েছে। মরা মানুষ সভায় এসে গাওনা করতেছে। কেহ বলে মারিনি ভাই, আছে কানাই শুনেছি লোকের মুখে মক্কা শরীফ গেছে।

এ কথা জারী হয়েছে। কানাই কলমা পড়ে তৌবা হয়ে মন বেঁধেছে । আবার আমি কানাই তাতো জানিনা তবে মক্কা শরীফ যাবার আশায় আছে । এই কু-দিন যেয়ে সু-দিন পাবো-তা কি মোর কপালে আছে

(১১২)

আরে ও পাগলা কানাইর দিন গেল, হয়েছি নড়বড়ে। এখন বলো, রংয়ের ধূয়ো গাও ভালো করে? আমার দাঁত গুলো সব গিয়েছে পড়ে, এখন ছুঁয়ো বাঁধবো কেমন করে । কথায় আমার আ’টি বসে না, ফস্ করে যায় সরে ওরে জোয়ান কি বাহার কালে কতই রং দেখায় । এখন বলে স’রে বস ছ্যাপ পড়ে মোর গায় । হা’টে যাতি হুটরে পড়ি উজোট লাগে পায় । আমার আফসোসেতে ছাতি ফাটে যায় ।

ঘরের বেড়াত নাইরে আমার নাল” পড়ে বুকি । চোখি আমার ঘোম আসে না, ভুন ভুনাই মাছি । রাত দিন আমার হাত আজোড় নেই-চোখির ক্যাতর মুছি। টীকাঃ-নচি, রচি শব্দটা উপহাস করে নচি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ।

(১১৩)

ভাইরে এই উত্তর দেশে আসে পাগলা কানাই বেড়াচ্ছে ভাসে। ওর রূপ দেখে সব লোকেতে হাসে। কেহ কেহ বলে ও ভেদু ছিলো কোন দেশে। বিস্তৃত আজও মরিনি বাঁচে আছে। আমি করবো কিরে ভাই সকলরা, বিধি এই রূপ। গঠেছে। তোমরা দোয়া করো সোনার কানাই-থাক থাক থাক প্রাণেতে বাচে । কেহ কেহ বলেরে বিজুত ভাড়ো, আজও জোয়ান আছে হয়নি তো বুড়ো।

ওর দেখা যায় তেঙড়ো-ভেঙড়ো, কেউ বলে ভাই এক কর্মে লাগে, হয় লাঙ্গলের মুড়ো । আবার কেহ কেহ বলেরে ভাই/আবার কেউ বলে ভাই বিস্তৃত হয়, পাগলা কানাই ঠিক রথের চূড়ো। ওর পুরুষ নিন্দা নাইরে ভাই-বেশ বেশ বেশ জগা- খুড়ো’ ॥ ভাই সকলরে তোমরা এতো প্যাচাল জানো।

গুড়ো গুড়ো কথা কও কেনো । আমি গায় ফাল্গুন’ তোমরা চৈত” মুখো টানো । তোমরা গোল করো না শ্বাওড়ে” হবে, আমার কথা মানো। গানের শত্রু আচাল পাচাল, দিব্যু লোকে তাই জানো ।

গোল করো না ভাই সকলরা চুপ চুপ চুপ মারে শোন ১-বুদ্ধিহীন/গাধা । ২-বজ্জাত শয়তান । ৩-ব্যাকা ত্যাঁড়া । ৪ অধিক বয়সি লোক । ৫-জীবন্ত অর্থে । ৬-মৃত অর্থে । ৭-জামাই-শ্বাশুড়ির অবৈধ সম্পর্ক। ৮-আলোক প্রাপ্ত/জ্ঞানী ।

(১১৪)

ও মোমিন ভাই সালাম আলাইকুম, চাই দশের চরণ ধুলি । এবার কার দুঃখের কথা সভাতে কিছু বলি । একবার চাঁদ বদনে আল্লাহর ধ্বনি বলো, পাগলা কানাই সভায় আলো, দোয়া করবেন ভাই সকলি।

এবারকার ভাদ্র-আশ্বিন-পুষেলী’, ছিলাম বড়ই কাহিলী ॥ তাই বলি ও আল্লাহ মালেক সাঁই-আল্লাহ তুমি বিনে আরতো কেহ নাই কাণ্ডারী। ঈশ্বরচন্দ্র* করিবাজ গয়েশ পুর তিনার বাড়ি। আমাবশ্যার দিন গত রাত্রে খাওয়াইলেন বিষ বড়ি । তিন দিন পর ধিকি ধিকি করে উঠলো নাড়ি । হাত ধরিয়া কবিরাজ কয়, কিঞ্চিৎ আছে দেরী।

তোরা ডালিম আন কুশোর আন, কানাইকে সত্ত্বেক করি ॥ ওরে রজনী প্রভাত কালে, বোন আমার কান্দে বলে, ওরে ওঠ ও নীল মনি, কেন তুই বেহুশ হলে । আমার মাথায় দিয়ে দুঃখের ডালি-তুই আমারে ছাড়ে গেলি, ভাই দেখরে নয়ন মেলে । তোর পাল দোহারগণ কান্দছেরে সব, হায় ওস্তাজী বলে। তোর ভাই কান্দে কাছে বসে, ও তার চক্ষু ভাসে জলে । ১-বেশি শীত অর্থে ।

২-আখ । ৩-রোগ ভোগের পর প্রথম পথ্য । *টীকাঃ-বিখ্যাত কবিরাজ বাবু ঈশ্বর চন্দ্র বিশ্বাস গয়েশপুরের বাসিন্দা ছিলেন। তার পৌত্র বাবু তারাপদ বিশ্বাস কে আমরা দেখেছি । তিনিও নামকরা কবিরাজ ছিলেন। নাড়ি জ্ঞ্যান ভালো ছিল। পরে সব কিছু বিক্রি করে ভারতে চলে যান । তারপদ বিঃ প্রায় ৯০ বছর বেঁচে ছিলেন ।

(১১৫)

একটি বছর ধরে, সুর দিয়ে তৈয়ার করে, চাছে-চুলে থুহাছ তুলে, ফুরসী হুকোর না। হাতের লাঠি পড়ে গেছে, কানাইর বিদ্যা বুদ্ধি বল। উজোলের পরামিশে, ভেবে আর পাইনে দিশে, গোপনে পাগলা কোরেশ টিপে দেছে কল । পরের ধনে আম ছালা, হাতে পিতে পুরে ফেলা, লোকে টের পালো। পাগলা কানাই ভেবে মলো, তাই করলো হেরাজ তুল্য।

কানাইর নামে দেয় ভ্রুটি লোকে যা কতি কতি, অবশেষে পাগলাকানাই, ফাঁকে পড়ে গেলো ॥ আর ধূয়ো বান্দা কেমন মজা, জানে নছরদ্দি । কোরবানের ভারী বুদ্ধি। ঘূনির জাহের মুন্সি, তাহের মুন্সি, আর পাগলা নৈমদ্দি ।

আবার রং চড়ায়ে গায়ে গেছে, রোশন খাঁ, কলিমদ্দি । আবার গেছে, যার যেমন শক্তি দেখো এনাতুল্য, লক্ষীপুরের তরীবুল্য-ধুয়ো বান্দে গায়ে ১-কারুকার্য খচিত পিতলের/রুপা লম্বা নলওয়ালা হুকা ।

(১১৬)

জারী গাতি গেলাম পশ্চিমে শুভদী বাজার । আষাঢ় মাসের সেদিন ছিলো সাতই শুক্রবার । সেই গ্রামের এক বিজুত বিটা, বায়না দিছিল আমার। আমি নাম জানি না, দেখলি চিনি তার ॥ গলাটি চেকুন পেটটি মোটা, বড় শয়তান সেই বিজুত বিটা, যাত্রা করে গেলাম সেই বাড়ি। যেয়ে দেখি ফুট-চাচার চার পোতায় এক চানদড়ি । পাগলা কানাই ভেবে বলে, আল্লাহ উপায় কি করি।

ছ্যামড়ারা কয় ও ওস্তাজী, এখন যাব কার বাড়ি ॥ সান্দে লাগলে আবার চাচী আসে বাড়ি । ছ্যামড়াদের দেখে চাচী, ভাঙ্গে হাঁড়ি-কুঁড়ি । বলে, আসুক আগে সেই কুড়ে বাড়ি । টান দিয়ে আজ ছেড়বো তার নাড়ি । ছ্যামকড়ারা কয় ওগো ওস্তাজী-মান থাকিতে ফিরে চলো বাড়ি ।
১-বাজে লোক । ২-দো-চালা ঘর । ৩-শিষ্য বৃন্দ ।

(১১৭)

ওরে দুই দত্ত উঁচু ছিলো- লোকে বলতো পাগলা কানাই ঐ । একবার, দত্ত পড়েছিলো, পুনরায় দত্ত উঠেছিল, এবার পড়ে দত্ত আর উঠলো নারে ভাই ॥ (অসম্পূর্ণ)

(১১৮)

গায়। আমাদের চেষ্টা করে, বাড়ির পারে আনলো ডাকে, বিটা বড়ই বিস্তৃত- জারী গাতি আইছি কানাই ভান্ডার পাড়ায় । সেই যে দিন মেজবানী হয় যাদাড়ে নেড়ী। আগে কয় ধুয়া গাতি, পরে কয় গাও জারী 1 (অসম্পূর্ণ) ১-খানাপিনা । ২-মিটমিটে শয়তান ।

(১১৯)

আশ্বিস মাসের শেষে, পাগলা কানাই ধুয়ায় নাচে। ওসে পাল-দোহার সঙ্গে লয়ে, চললো দক্ষিণ দেশে । ডানির পালি ছবেদ আলি ও তার বিমার হয়েছে। বাখর গঞ্জ জিলার পরে, ছবেদ আলি কান্দে বলে, আমারে না ফেলে যাই ওরে ভাই, এই না দূর দেশে ।

মরা লাশ মোর নিয়ে যেও, দিও মায়ের কাছে । বৃহস্পতিবার বিকাল বেলা, নাও লাগলো কদম তালা, তোমার ছবেদ আলির বিমার হয়েছে খবর শুনে বাপ কান্দে রয়ে সয়ে । বোন কান্দে হারালাম ভাই-মা কালে আার খায়ে । ঘরের ঘরণী কান্দে হায় আল্লাহ বলে। আমি দেখলামনা দুই নয়ন মেলে। কাঞ্চা বয়সে হলাম নাড়ি, আল্লাহ এই ছিলো মোর কপালে ॥

(১২০)

কইরে কই ওরে সুলতান, তোর যেমন মন-যেভাবে তুই পাস জারী-পছন্দ আছে ভারী। ধুঁয়ো বান্দে মুলুক ছান্দে নাম জারী। না জানি কোন সময় কি করি। উজোল ছিলো মরে গিয়েছে, আমার আর না আছে দেরী ॥ দিয়ে ভক্তি করে উক্তি, ধুয়ো বাঁধগে ত্বরায় করি । আমি মরে গেলি থাকবি কার শিক্ষে। মোকাম- মনজিল বাপরে দেখেনে চক্ষে। করগে সাধন ভজন নামটি জপন কামটি করো।

নিরালায়, যদি তোর কপালেতে হয়। সাধন বিনে সেধন কভু হাত না হয়। নিশির যদি নারদ” আছে, ওরে জানবে কি তোর বাপ কানাই । প্রহ্লাদ ভক্ত আছে ব্যক্ত, যার জন্য হরি নাম ছিন্ন হয় ॥ এসব ধুঁয়ো বান্দা কাল, এসেম জালাল; উল্টো কুল আর বিসমিল্লাহ্, মুসকিলে পাবি হিল্লাহ। দোয়া নাদে আলি, আয়তাল কুরসী ভালায় ভালা। বিপদে না ঠেকবি জ্বালা । চব্বিশ চাঁন্দের ভেদটি লও জেনে, কোন চান্দে হয় কোন চাঁন্দ উজালা। ছয় লতির ভাগ জেনে শুনে, বাবা হগা যা মোল্লার বিটা মোল্লাহ্ ॥

১-এই পদে এটাই বোঝা যায় যে পাগলা কানাইর মৃত্যুর পর সুলকান মোল্লা বেশি দিন বাঁচবেন না । ঘটনাও ঘটেছে তাই । ২-নিজ দেহ-ঘর । ৩-লাভ। ৪- হলুদের মতো উজ্জ্বল রং। ৫-পুরানের বিশিষ্ট্য মুণি, যে গোলযোগ বাঁধানোর শু দি । এখানে অর্থ হলো ভালর মধ্যে খারাপের ঘনঘটা ।

(১২১)

এবার কার ভাদ্র মাসে, বান আলো সর্ব দেশে, ওরে গরু মলো ঘাস ব্যাগরে, মাঠে তলায় পাকা ধান। মানুষ মলো অন্ন বিনে, পোড়া বান আলো কেন ! যতসব নতুন জামাই আশায় করে, শ্বশুর বাড়ি যাবোরে ভাই ।

খায়ে যাবো গোও- রুটি, বরাতে আমার কিছুই নাই। যাবো যাবো করি আশায়, ওরে তার শোবার জাগা নাই । বসে বসে ভাবছি তাই, এবার যাই কি না যাই । পাগলা কানাই ভেবে বলে, বিধি লেখেছে যার কপালে, সময় হলে তাইতো ফলে, বিফলে দিন। যাবে না। আমি কানাই ভাঙ্গা কপাল, সে সুখ আমার হলো না ।

(১২২)

চুপ চুপ ভাই সকলরা গোল করো না, কানাই যেমন ছাচের গোরা, ওর ডাইনে বামে দুজন তারা, পুরুষ নিন্দা নাই । আবার একটু খানি নিন্দা কেবল, খস খসে আর দাদো গা, তা ছাড়া আর তো কিছু না । তোমরা তাইতে হাসে বাঁচো না । করবো কিরে ভাই সকলরা, করনে-আগুলা বিধাতা । লোকে বলে ইদু বিশ্বাসের আচ্ছা কপাল। ও দেশ-বিদেশে গাওনা করে-তশর-গরদ পায়ে থাকে, আরও কতো শাল ।

ওর পরনে দেখি দাড়ে তেনা, ঐ বিটার কি এই বদ হাল । ঐ কি পায়ে থাকে শাল, সেওটা আমার হয় খিয়াল । তুমি কারে বলো ইদু বিশ্বাস, ও তো চাটগাঁয়ে বাঙ্গাল ॥ আমি দেখলাম বটে খুলনার ঘাটে, সেই না বিটা ঐ । ফাঁকি দিয়ে ডাকে নিয়ে, হুক্কা-তামাক সাজে লই। দুটা মন্দ ছন্দ কই, ও বিটা সিলাটে ঐ । কাল দেখলাম ওর গুণ টানে যাতি আজ ওর গুণের বেড়ো কই

(১২৩)

এই উত্তর দেশে আসে, পাগলা কানাই ঠেকেছে দায়। কথা মিথ্যা নাই, উলু- মূল্য কলা-কল্লা, ঐ আবার পাল্লাহ দিতে চায় । তারা তাল জানে না মান জানে না, ধূয়োর উত্তর না রে দেয়। হলুদি খালি বুঝি রাঙ্গা ছেলে হয় ৷ গো-তালা তাল হোস বেতাল-তাল কানা হোস কেন তুই।

ইস্তে গাদন গাদবো তোরে- তোর কোনই স্মরণ নাই। তুমি হাওলে জালে মাকড়া মারে, বলিস যাচ্ছে তাই। তোর জন্মের সাকিন নাইরে ভাই ॥ ৪২ তালা তালের সঙ্গে, ভক্তি করে রাখ। আমার সঙ্গে পাল্লাহ দিস তো, দক্ষিণ দেশে যাস। উজোল বয়াতি কানাই বয়াতি আছে, পার ধুলো চাটে খাস ॥

১-বোকার মতো বেড়ানো। ২-ঝগড়াটে স্বভাবের। ১, ২- বোকার মতো ঝগড়া করে বেড়ানো । ৩-খাবার অযোগ্য। ৪-যা কাষ্ঠ দিয়ে লাঙ্গল ও ঈশ শক্ত করে আটা হয় । ৫-বড় ফাঁক বিশিষ্ঠ জাল । ৬-ছোট ছোট মাছ ।

(১২৪)

প্রথমে আসরে এসে ডাকতেছি মা তোমারে । কৃপা করো স্বরসতী মা জননী-মা- গো রেখো চরণে । আমার কণ্ঠে এসে করো স্থিতি, ছায়া দাও মা আমারে । আসরে আইছি আমি, শোন মা ভবতারিনী, ধেয়ানে জাকছি আমি মাগো, তুমি শোন না কানে ॥ তোমার নামে যাত্রা করে, এসেছি মা এই বিদেশে । যায় যাবে তোর নামের ভেরম মাগো, তাতে আমার কি হবে । যেমন দয়া করেছিলে, চণ্ডি কালী দাশেরে।

ঐ মত করো দয়া, মোরে দাও পদ ছায়া, বিষম-তারা নামটি ধরো মাগো, আমি শুনি পুরানে ॥ পাকে পড়ে পাড়লা কানাই, ডাকতেছি মা তোমারে । তুফানে ছেড়েছি নৌকা মাগো, হাল ধরে নাও কিনারে। বালুক বলে কর কোলে, আছি মা তোর চরণ তলে, বিষম নদীর তুফান ভারী মাগো, আমার প্রাণ কাপে ডরে ॥ ১-সুক্ষাতি । ২-বিপদে ত্রাণকারিণী । ৩-বিপদসংকুল নদী ।

(১২৫)

কহে বিন্দে নিন্দে ছলে, আমি মরি মরি রায় কিশোরী । ওগো ঠ্যাকারী-ঠ্যাকারী লো-তোরে দেখে মরি মরি । গোবিন্দকে নিন্দা করা ঝাকমারী। আবার কেন কাছে যেয়ে কর ঠারাঠারী ॥ আর শশধর পৃথিবী তুল্য নাই যার, তুমি রাখাল বলো তার ।

কত ব্রহ্ম-আদি দেবগণ তারে পাওয়া ভার। বারংবার তার সংগেতে কি ঘটে তোমার । ও ঠ্যাকারী লো-সে যদি হয় রাখাল কালু- তুমি রাধে তার ধেনু বরাবর ॥ দিন গেলো দিন এলো, ও তার হলো নিমাশাম । অস্তিম কালে মৃত্যু দেখে জপো সেই যে নাম। জপো মধুর নাম যত বন্ধু গণ, ভেবে পাগলা কানাই সর্বক্ষণ, দূর্গা কালী কেন হইলো অকারণ । এক ব্রহ্মা দ্বিতীয় নাস্তিঃ, অকারণ হয় ওদের ভ্রমণ । ঠেকবি যখন জানবি তখন, বিপদ কালে কাণ্ডারী মুধুসূদন

(১২৬)

কয় শ্রীমতি বিন্দে দ্যুতি, শুনে আলাম এক নতুন কথা । আমি গিয়েছিলাম ঘাঠে, তাই মনে ওঠে-ওরে তিন বাঁকা এক নাগর ছোঁড়া । তার হাতে বাঁশী যথায় চুঁড়া, বসে সেই যমুনার তটে । তার রূপ দেখিয়ে লো, মোর মনে বিচ্ছাদ ওঠে তার চূঁড়া বাঁকা, বাঁশী বাকা, নিজে বাঁকা-বামে হেলে, সে শ্বশ্মানে থাকে, তা কি জানো । আমি আইছি বিন্দে তোরে কতি, এক বার যায়ে দেখবি যদি, ও সে নাগর কেমন ।

আমার মনে বলে, যায়ে দিই প্রেম আলিঙ্গন ॥ এক পিরিতির নজর পায়ে পাগলা কানাই হয় অজ্ঞান । ওরে পিরিত করেছে শিব ভোলা-উর্ধ দিকে হয়। নয়ন । ওসে ভষ্ম মাখে কেন । শিব ভোলা করে খেলা, জগতে আছে তার প্রমাণ । তাহার দেখে যে জন, প্রেমিক থাকে সে জন। ওরে রাধার প্রেমে জগত নষ্ট, নিতাই প্রেম করলেন পষ্ট, যেজন প্রেমিক থাকো, ও পিরিত ঢেকে রাখো সর্বজন
1 (প্রশ্ন, পরিশিষ্ট ৭৬৪ নং পদ, হরমনি)

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ২

 

(১২৭)

নিশি প্রভাত কালে হইলেন উদয়, রাধের কুঞ্জে এলেন দয়াময় । সেও কাথাটি কয় বিন্দে দ্যুতি, এখন রায়কে আশায় দিয়ে থাকি, গত নিশি ছিলেন কোথায়? কও যথার্থ সত্য হে দয়াময় । তোমার নিজের কষ্ট দেখে, আমার জীবন দক্ষ হয় । তোমার চন্দ্র বদন কিসে শুকিয়েছে, তোমার বসন কেবা ছিড়েছে। তোমার কপালে সিন্দুরের দাগ লেগে আছে। তোমার সব অঙ্গ লহর ধারা দেখি কঙ্কণের দাগ লেগেছে ।

বাহা মজা! বেশ শোভা হয়েছে । তুমি ঐ বেশে আর কুঞ্জে যেও না-তোমার বুঝাহলে বোঝ না, বললে কথা গণ্য করো না। তুমি গঙ্গা জলে চোন করগে-নইলে ও দোষ যাবে না। তাই পাগলা কানাই বলে-ঐ বেশেতে কুে গেলে, রাই কথা বলবে না। (উত্তর পদ ১২৮ নং)

(১২৮)

কয় গোবিন্দ কোথায় লো যুবতী, তোর নাম শুনি বিন্দে দ্যুতি। আমায় কেন করলে অখ্যাতি । আমার আসতে পথে, যবে নিলো সেই মতি। তাইতো হলো মোর এই দূর্গতি । শোন লো বিন্দে দ্যুতি, সদয় শ্যাম পিরিতি ॥ ছিলাম চন্দ্ৰা বতীর কুঞ্জেতে, গমনে আমার দেরী হলো তাইতে। এতোক্ষণ অষ্ট সখীর যোগালাম মন । তাই নদীর ধারে পাগল পারা হইছি এই কারণ ।

রক্ত বরণ দুটি আখি, শোন লো বিন্দে দ্যুতি, সখি গো-তাই-বলি এখন ! আবার যদি মানা করিস লো রাই, তোর মনের সুখে দিয়ে ছাই । আমি কৃষ্ণ ব্রজ ছেড়ে যাই । আমি মথুরাতে রাজা হবো, শোন লো কুটনী বিন্দে তাই । পাগলা কানাই কয় বিন্দে দ্যুতি, আজ তোর ঘটলো কু-মতি তোমার আজ ছেড়ে যায় শ্যাম কানাই ॥ (প্রশ্ন পদ ১২৭নং)

(১২৯)

বিন্দে কহে পিরিতি, ঐ লক্ষী ধরি রাধার কুঞ্জে এসেছিল। সে যে নটবর, প্রভু গদাধর”, চরণ ধরে সাধিল । তবুও গৌরবিনী মান করিল । মানে মানে তোর কি ফল হলো । এখন বসে কান্দতে হলো- শ্যাম হারালো ॥ তুমি যাও গোবিন্দ ত্বরাই যাও মথুরাতে যাও । শ্রীমতির কি হবে গতি- ওরে গোবিন্দ নিন্দে কিসে কও। ওরে ভাল লাগে না চেনি-পানা, চিটে পান করা।

ওরে ভাবছে ভুবোন রাখাল’ ধরা ॥ আপন নষ্ট গিরেই বান্দে পরের নষ্ট করো । পরের জন্য কাটিয়ে কুঁয়ো আপনি ডুবে মরো । থাক থাক তোর মান লয়ে থাক, শ্যাম পাবি আর কোথায় । তোর শ্যাম বড় না মান বড়, দিবা নিশি করো হায় হায় । তার দশোম- দশোম”, কুসুম-কাননে” বাঁশরী বাজায় । এখন তারে ধরবি যেয়ে ঐ রাঙ্গা পায় ॥ ১, ২, ৩, ৪, ৭-কৃষ্ণের পৌরাণিক নাম । ৫-নিষ্কাম প্রেম/ সর্বত । ৬-কামজ প্রেম। ৮-শিব। ৯-রাধা/লক্ষ্মীর কোলে বা বাগানে ।

(১৩০)

শ্বাশুড়িতে আশায় করে ও পরমেশ্বর-জামাই যদি হোত মোর পতি । বসুমার কণ্যা। রামের সংগের সাথী। রাম চন্দ্র বনে গেল, বসুমার আশায় ছিল, ও রাম রাজা। হলি হতো মোর পতি* জনকের বাপ রাজা যুধিষ্ঠির শাস্ত্রে তায় কয়। ও ধর্মের। পুত্র অধর্ম নয় । চার যুগ সে মরে বাঁচে, তার ভাগের কমি আছে, এই সভার মদি বলেরে পাগলা কানাই ॥ আর বিটার পিছে বাবার জন্ম রে-ওরে কোন শাস্ত্রেতে আছে ।

শুনি ফকিরে কয়েছে- জানিনে, তখন ছিলাম গাছে ॥ *টিকা: রাম রাজা হলে বসুমার পতি হতো অর্থে এরুপ যে, বসুমা অর্থ ভুবন । রাম রাজা হলে ভুবনের পতি হতো । সেই অর্থে রাম বসুমার পতি । ১-এখানে গাছ অর্থ পিতার মস্তক, অর্থাৎ জন্মই হয় নি ।

(১৩১)

দ্বাপর যুগে একটা কথা মন, পাগলা কানাই বলে তোরা শোন । পরেশ্বর রাজা ছিল, মৃগ শিকারে গেল, শিকারেতে যায়ে রাজার রানীর কথা মনে হয়-বীর্য টলে যায় । হস্তেতে ধরিয়ে বীর্য তখনি, পাতায় তুলে রাখলেন আপনি ॥ আর পত্র দ্বারা পাঠায় বীর্য মন, আমি বলি তোরা শোন ।

দুই পত্র পক্ষ করে, বীর্য সব ফেলল ঢেলে, পড়িল জলেরই ভিতর । সেই বীর্য করিয়ে ভক্ষণ, হল সন্তানের লক্ষণ, এক গর্ভেতে হল দুই জন ॥ আর ধীবর জাল নিয়ে মৎস্য ধরতে যায় । জাল ফেলে ধীবর বিটা, এক কন্যা সন্তান পায় । কন্যা পায়ে খুশী হয়ে মন, তারে করিল যতন । পরেশ্বর রাজা আলো, নৌকাতে তুলে নিল, ভগ্নি তার মা হইল, আজায় জন্ম দেয় ॥

(১৩২)

মায়ে ছুলে বিটা মরে, খবরে শুনতে পাই । পানির তলে আগুন জ্বলে, তাও কি বিশ্বাস হয়রে ভাই । আয় বড় মেয়ের কোলে বসে, ছেলে দুগ্ধ খায় । তোমরা তাই বিচার করে বল রাজ সভাতে। বসুমাতা করণে সীতা রামেরই সাথে ॥ রাম লক্ষন বলে গেল, বসুমার আশায় ছিল, ও রাম রাজা হলি, হতো মোর পতি ॥ চার যুগে এক বউ আয়েছে, ও বউ ভারী বজ্জাতে, উলের মা ফুলে গিয়েছে।

বিনোদ বসীর গান শুনে, পাগলা কানাই বলে ছি ছি,-ও যে লজ্জায় মরতেছে। তাই মেহের চান্দ” ভাবছে সদায়-নারীর জামাই তারে হরণ করতেছে । ১-পৃথিবী । ২-ইচ্ছাতে । ৩,৪-কবির সমসাময়িক লোককবি ।

(১৩৩)

কানাই বলে বিন্দে-দ্যুতি কেন এমন হও। ঘোমটা টা’নে রইলে বসে, নাগর কান্দে দ্বারে আসে, একবার কথা কও না হাসে, বন্ধুর পানে চাও। আদরিনী গৌরবিনী মানে ক্ষমা দাও, কেন নাগরকে কাঁদাও ৩০ কোটি দেবগণ, যার ধ্যানেতে না পায়। সেওটা কি তোর মনে নাই । সেই নাগরকে ধরেছিলি পায়। কত জনের আছে পতি, কে ধরে কার পায়। ধন-যৌবন দিয়েছ যারে, সে কি ফেলে যায়। এ সব কবার কথা নয়।

দেখরে, না বুঝে পাইছি কচু, এখন তেঁতুল কোথা পায় । পুরুষ ও নিষ্ঠুর জাতি, কে বোঝে তাহার মতি, এখন কর সেই ডাকাতি- হেসে কথা কও । ঘোমটা ফেলে বদন তুলে, বন্ধুর পানে চাও । দুটো মনের কথা কও

(১৩৪)

পাগলা কানাই বলে ভাইরে ভাই, বিধাতার আর লীলা নাই। ওরে মনের আহহ্লাদে আমরা, গান করে সখ দাবড়াই । আর দুই হাতে দুই খুনজরী বাজাই । আজগবী এক কথা শুনেরে, আমার প্রাণ বাঁচে না ভাই ॥ এক দিব্যি পুরুষ ঘাটেতে গেল, ওসে ডুব দিয়ে এক কন্যে হল, এক সওদাগরে ধরে তারে নিল । আবার ১২টা বছর কালে ৩টি সন্তান তার হল। ১২ বছর পরে সেই ঘাটে আলো ।

সেই না ঘাটে স্নান করিয়ে দিব্যি এক পুরুষ হল ॥ আবার পুরুষ হয়ে বাড়ি চলে যায় । বাড়ি যেয়ে বলে হায় রে হায় । কি হল কি হলরে আমায় । আমি পুরুষ হয়ে নামলাম ঘাটে আওরত হয়ে চড়লাম নায়। ১২ বছর করলাম বাণিজ্য সদায় । সে কোন জনা ছিল বয়াতি বলে দাও আমায় ॥

১-আবদুল্লাহ ফাজেল । ইনি ১মে একজন ইহুদি ছিলেন । মেরাজকে অবিশ্বাস ও অবজ্ঞা করে তার উক্ত দশা ঘটে। পরে রছুলের (সঃ) কাছে যেয়ে তওবা করে ইসলাম গ্রহণ করেন ।

(১৩৫)

আজব একটা কথা আমার মনে হয়েছে । কথা কই দশের কাছে। ওয়ে নবিজীর পূর্বে একটা পাখি পয়দা হয়েছে। বুল বুল পাখি এবাদত করতেছে। ও তাই লাম-আলেক সাই আল্লাহর কালাম গো- পাখির গায় লেখা আছে ॥ ৭০ হাজার বছর পাখি, আণ্ডার মাঝে রয়, মাত্র একটা বাচ্চা হয় । ওযে বাচ্চা হলি শোন বলি, বাসায় পড়ে ভষ্ম হয়; কথা বললাম রাজ সভায় ।

ও তাই বিনা বাওতি পাখি পয়দা গো- পাখির মা ছিল কোথায় ॥ মুখমতি পাগলা কানাই, আমার সাধন। ভজন নাই; পাখির নামটা শুনতে চাই। ও তাই কর্ম ছাড়ে সিপাতকে আল্লাহ- গুন গুন শব্দ জারী হয়। নেপুর, থুঞ্জরী কিছুই মাত্র নাই। ও তাই পুল-সোরাতে লহুর মাঝার গো-আমারে তরাবেন মালেক সাই ॥

(১৩৬)

পাগলা কানাই বলে ও মন রসনা, তুমি বুঝেও কেন বোঝ লোকের সঙ্গ নিয়ে, হারালি ১৬ আনা। তোর মাল নিল টেৰোঘাটে, জানেও কি মন জাননা লাভের ধন তোর পিঁপড়ের পানো, চারে দেখে দীনকানা 1 (অসঃ)

(১৩৭)

মায়ের নামটি নিইছো আসে, কেন তার পাওনা দিশে । ও তোর মা বড় কি বাধা বড়, শুনগা যা তোর মুর্শিদের কাছে। আমি তাইতি ডাকি মা মা বলে, দীন কানাই তুই চিনলিনা রে, কানা কি সোনা চেনে ।

মার তুল্য আর কেবা আছে আমি তাই বলছি তোরে । গান-বাজনা স্বরসতী বিদ্যা কি সকলেই জানে। আমি তাইতি ডাকি মা মা বলে, দীন কানা তুই চিনলিনারে-কানাকি সোনা চেনে । ওতার বাপ যেদিন বিষ খাইল, বিষে অঙ্গ কালো হল, বিষের জ্বালায় প্রাণ বাঁচেনা। কাল-সমন নিকটেতে আ’লো। আবার মার তোনের দুধ খায়ে-তোর বাবা প্রাণেতে বাঁচিলো । সমন তার দূরেতে গেল

(১৩৮)

গরীব লোকে বিয়ে করে যায় শ্বশুর বাড়ি খাওয়ারতো বড়ই আমদানী । ওরে সীম বেগুন আর মূলো কদমে, কুমড়ো দেয় থোড় ভাতোড়ী । রাঙ্গা ডাটা বোরই খাটা আরও দেয় মোচার চচ্চড়ী আর শ্বাশুড়ি ঠাকরুণ হাউস করে তোললেন কুষ্টার শাক। ও ব্যঞ্জন হলো ১০টা ভাত। আবার কলার তরকারী আকায় দিয়ে, শালাশী বউ করে রাগ; নাল তরকারী এখন থাক। কাল বিয়ানে তুলে দেবরে-নোপায়, বিলির কলমী শাক।

আর ছিড়া তেনা ছিঁড়া পাটি জামাইর বিছানা করে দেয়। জামাইর হাতে মিষ্টির হাড়ি রয়। ওরে রাত দুপুরের কালে আবার-মশাতে যো করে নেয়। পিঁপড়েই বাসা ভেঙ্গে নিল মাথায়। ছারপোকাতে গল্প করে কর- কানাইরে চুদুবাড়ি কোন জাগায় ।

(১৩৯)

অধম কানাই বলে ছোটকালে পুষেছিলাম এক টিয়ে । তারে দুগ্ধ-ভাত দিয়ে খানা খিলায়ে । গুরে কোনদিন জানি যারে উড়ে, সাধের পিশুরা ঘুয়ে । ওরে কেউ আসছে কেউ যাচ্ছে, কেউ জ্বালে মোমের বাতি; আবার কেউ কেউ যার বাচ ফেলতি। ওর কেউ হয়েছে নৌকার মাঝি, নৌকা বান্ধা বিনা সুতি । তিনি করতেছেন কারবার, যেদিন আসবে তুফান বালির চর, ঘিরে নেবে ঘোর অন্ধকার । ঠেকবে নৌকা দিন দিবসে, শুনে হবে ছারে-যার ।

(১৪০)

অনুমত্ত হয়েছে ধনী, শুনে কালার বাশীর গান। রাণীর সুরে পাগল করে কাটবো তোমার দুটি কান। কানতে কানতে দিন যাবে লো-পাছতালা হবে তোমার সা তুইতো ধনি রাজার মেয়ে, সামলে সুমলে ঘাটে চল। তুইতো ধনি রাজার মেসে বৃষ ভানুর কন্যা হয় । তুইতে ধনি রাজার মেয়ে গো-সামলে সুমলে ঘাটে চ বড় ভাব লাগায়ে পাগলা কানাই, বৃন্দাবনে কয়ে যায় । পিরিতি অমূল্য রতন, যার-তার কপালে নাই । কি মজা মজাইলি হরি গো-বৃন্দাবনের সামনায়

(১৪১)

আমি বলবো কি বলবো কি, সেই ফুলেরই কথা। জগতে নেই তারই মাথা । হিম সাগরে আছে তার পাতা। পাতায় পাতায় ঐক্য হয়ে, এক জাগায় আছে গাঁথা। কই কথা দশের কাছে, ফুল ছাড়া ফল এক পাশে; পড়ে এই ভবের মাঠে, ফলে কয় কথা ॥ লাল জরদ সিয়া সফেদ, চার রঙ্গেরই ফুল। রসুলের আগে পদা ভবে, করেছে মালেকুল । শুনি খোদার ছোট নবীর বড় ফুল। কেউবা আশায় দেচ্ছে কুল । কউবা দিয়ে হচ্ছে নামাকুল। কয় পাগলা কানাই, ও দারুণ বিধি- সংসারে কেবলই ফুল |

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ২

 

(১৪২)

ভাইরে যে ফুলে হয় দুনিয়ার গঠন, করলেনা তার অন্বেষণ; সে ফুল কালো কিবা ধলো । পাগলা কানাই বলে, সে ফুল চান্দের আলো। সদায় মোর সেই চিন্তায় দিন গেল । ফুলটি কোথায় তাই আমারে বলো ॥ দেখ ফুল, কান্ত-জোড়া ফুল, মর্শিদ বলে শোন যা’য়ে চাতকিলীর মত । ভাইরে ফুলটি পাবা, দেখতে জবা, সেইদিন হবে রোজ হাসর। সে ফুল কেমন বস্তু ধন, দিন থাকিতে ফুলের সন্ধান কর এখন । সে ফুলে আছে তো বস্তুধন, ফুল করেছে মুক্তারই কারণ

(১৪৩)

করো ভাই সেই ফুলেরই উল, তাই দেহ কর স্থূল। ব্রহ্মা বিষ্ণু ধরতে যায়ে, হারায় সে ফুলের মূল; তারা হয়ে নামাকুল । হাসান হোসেন ফাতেমা রাছুল, তারা ৪ রঙ্গের এক ফুল । দেল ঢুড়িলে জানতে পারিরে-সেই গভীরের মূল ॥ ফুলের নাম স্বেদ-পদ্ম লাল-জবা, ও তার দুই ডালে দুই আবা; এক ফুলেতে নারীর ভূষণ, দুই ফুলে হয় সভা ।

ও তা গুরু ধরলে পাবা, দেশ-বিদেশ ঘোর-ফের রে- দেখে শাস্তি হবা ॥ তাই পাগলা কানাই বলে, কারও ভাগ্যের ফলে মেলে; যোগ না চিনে কেন আলিরে-এই নদীর কিনারে। সে ফুল সামান্যে কি মেলে । ফুল তুলিতে মুল হারালিরে-নদীর ঘোলায় পড়ে ।

(প্রশ্ন পদ নং-১৪৮)

বলতেছে আপন আপন আপন তোর সকলই পর। তুমি কারে বল আপন আপন, সে দেখ তোর হয়ে যায় পর। পাগলা কানাই বলে, চোঁখ বুজে দেখ অন্ধকার। বেলা গেল সন্ধা হলরে-দিন থাকতে গুরুর চরণ ধর কোনদিনে নথি আসে, কেস হবে দেখনা ভাবে; আদলতে জজের হাতে, অবশ্যই বিচার হবে। তুমি বলছো আপন, ও অবোধ মন, তারা আপন না হবে। পোক্ষ করি বিপক্ষ ৬ জন, স্বাক্ষী তোর দেবে ।

(১৫১)

বারে বারে সভায় আসে, সিলামালেকম জানাই। ওরে তাই জানালাম সালাম, মাবুদ সেই আল্লার পায় । হযরত নবীর পায়ে সালাম, সালাম মা বরকতেই পায়। হযরত আলীর পায়ে ছালাম গো- সালাম দোন ইমামের পায় ।

আর তুমি আল্লাহ লা-শরীকালাহ, তোমার নাম শুনেছি কোরানেতে- নিয়াকার কালুবালা । জলিল জব্বার তোমার নাম, তুমি যে মাবুদ মওলা। ওরে রহমানের রহিম তুমি গো- আল্লাহ তুমি হক তালা । আর আমি কানাই জানাই নিবেদন, তুমি হত্তা তুমি কত্তা, তুমি মালেক রব্বানা। ওরে ভক্তি সিজদা নেনে আওলা গো- আল্লাহ তোমা বিনে কেহ না

(১৫২)

বাহা মজার ঘর কে করেছে তৈয়ার, দেখতে কি চমৎকার। ওঘর আগবাত দিয়ে থাকবাদ দিয়ে, চার চীজে তৈয়ারী ঘর। দুই খুঁটি পরিপাটি, গোড়ায় নাইকো মাটি; হাওয়া দিয়ে করে খাঁটিরে, রাখেছে ঐ কর্মীকার ॥ আর বান্ধে সে ঘর, ঘরে আমলারী কারবার; চার গলি চৌষট্টি বাজার।

ঘরে জজ ম্যাজেষ্টার গভর্নর- রাতদিন সে ঘরের বিচার। ঘর ছাড়া ছাঞ্চেয় বসত, ঘরের লোক সকল অস তারাই আবার দেচ্ছে হরকত রে-বুঝে তাই দেখ মনোরায় ও মন রসনা, ঘরে সুখ তো হল না; রাত-দিবস ঐ ভাবনা । অধম কানাই বলে কাতর দেলে, ঐ ঘরে লাগাও টানা । যেদিন ঘরে সমন জারী, সেদিন তো বিপদ ভারী; কে হইবে রক্ষাকারী রে-কোনদিন যে পড়বে হানা ॥ (উত্তরপদ নাম্বার

(১৫৩)

বাহা এক ঘর বান্দেছে সাঁই দীননাথ কর্মকার । খাড়া রাখেছে দুই খুঁটির পার, এক পাড়ির পার। ঘরে জুত দিয়েছে সাড়ে তিন কড়া, উপরে চর্মের মোড়া মন্দি আছে সৃষ্টিধর, আজব কামিলকার। ঘরের সামনে তার সিন-দরোজা চৌকিদার আছে খাড়া, ডানি-বামে বসে তারা হংস এক জোড়া। তাই কানাই বলে হায় কি হল, সুখের দিন এমনি গেল, আসে হলাম সুবিচার।

আর রোজা নামাজ ত্যাজ্য করে, ভোর হলাম গান তোরে লয়ে; কি জবাব দেব আখেরে বসে ভাবছি এখন । হাসরে ওজন করবেন, দাড়ি ধরবেন মালেক পরোয়ার । হালকা হয়ে যাইতে হবে কেয়ামত মাঝার। ওতাই বানী রাজার কারিগরী, খেদাইনে উঠোন চষি; জমা শূন্য খরচ বেশী, আমার কাজের এই ব্যাপার। দিন থাকতে দ্বীনের কাজ কর, সামনে তুফান দেখতে বড়; মুখেতে পড় সোবহান ।

(প্রশ্নপদ নাম্বার : ১৫২) ১ নীলদাঁড়া। ২-দেহঘর। ৩-সম্বাদ যন্ত্র। ৪-সাধন যন্ত্র। ৫-সূর্য/ এখানে অণ্ডকোষদ্বয় ।

(১৫৪)

আশ্চর্য এক কার্য দেখে প্রাণ বাঁচে না। এক ঘরে বান্দেছে নিরাঞ্জন, মুক্তি কথা মুক্তারণ; করণ তার বুঝতে পারলাম না । এমন সপ্তদল পৃথিবীর মদি-শ্রীমন্ত ঘর আর হবে না। আমি বলবো কারে বলবো কারে, ধন্য ঘরের আট কোনা; এক ঘরেতে চার জিলা আর বারো থানা। সে ঘরের উদ্দিশ করা, আমার সাধ্য না রোজ ঘরেতে রোজ কিয়ামত হচ্ছে প্রলয়।

ঘরের দক্ষিণ অংশে নদীর দ্বার, পূর্ব অংশে গিরিবর; ঘরের উত্তর অংশে নবীর উম্মত রয় । ঘরের পশ্চিম অংশে খোস মহলায়-আট কৌশলে এক মশায়। ঘরের চতুক পাশে ৪ ছক ২৪ চন্দ্ৰ, নিত্য উদয় হয়।

আশ্চর্য ঘর মধ্যে মধ্যে, অন্ধকার হয়। এ ঘরের উদ্দিশ করা, সাধ্য আমার নাই ॥ সে ঘরে ব্যক্তি বহুত জন, কত ফকির বোষ্টম দেখার জন্য, করে অন্বেষণ । সে ঘর শূন্যের পরে, হাওয়া ভরে নড়ে চড়ে; বসে ভাবতেছে পাগলা কানাই । ঘর দেখে আর বিশ্বাস নাই-অবিশ্বাস কেবল ঐ ঘরে। ঝড় আসিবে যে দিন, পেলা দিবে সেই দিন; কখনও ঘর খাড়া রবে না । জিলার আমলা পালাবে জিলা ছাড়ে, সাধের ঘর ভাঙ্গে রবে, ধুলাতে পড়ে॥

(১৫৫)

কি ফল ফুল ফুটিলরে মক্কায় । ফুলের গন্ধে প্রেমানন্দে উজোল মদিনায় । চারি রঙের চার ফুল ফুটেছে, কোন ফুলেতে কেবা আছে; কোন ফুলেতে আল্লাহ রাছুল, কোন ফুল পেল আব্দুল্লায় ॥ নবীজির এই ভাঙ্গা তরী, শরীয়তে বোঝায় ভারী রে-ইমাম হাসান হোসেন দুই ভাই তারা, তরী খুইলা লাগায় কিনারায় পাগলা কানাই ভেবে বলে, ফুল ফুটেছে আঁখি জলে রে-

(১৫৬)

বাহা মাজার ঘর কে করেছে তৈয়ার, দেখতে কি চমৎকার ও ঘর আকবার দিয়ে থাকবাদ দিয়ে, চার চীজে তৈয়ারী ঘর। দুই খুঁটি পরিপাটি, গোড়ায় তার নইকা মাটি: হাওয়া দিয়ে করে খাঁটি রে রাখেছে ঐ কর্মীকার ।

আর বান্দে সে ঘ ঘরে আমলারি কারবার, চার গলি চৌষট্টি বাজার। ঘরে জজ ম্যাজেষ্টার গভর্নর, রাতদিন সে ঘরের বিচার। ঘর ছাড়া ছাঞ্চেয় বসত ঘরের লোক সকল অসং তারাই আমার দেচ্ছে হরকত রে-বুঝে তাই দেখ মনোরায় ও মন রসনা, ঘরে সুখতো হল না; রাত দিবস কেবল ঐ ভাবনা । অধম কানাই বলে কাতর দেশে, ঐ ঘরে লাগাও টানা । যেদিন ঘরে সমন জারী, সে দিন তোর বিপদ ভারী; কে হইবে তোর রক্ষাকারী রে-কোন দিন যে পড়বে হানা

(১৫৭)

জাত ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে গো ওরা জারীর দল করেছে। মুরগীর চামড়া চুলে নিয়ে খুন্জরী ছেয়েছে। ওরা ডুগডুগি বানিয়েছে। থাবা দিলি বোল ওঠে না, হায়রে হায়-তাতে পত্তালি মারেছে । ছালার কোনা কেটে নিয়ে গো-ওরা ফতুয়া বানাইছে।

ইংলিশ কোট গায়ে দিয়ে বিটা বাহার যে দিতেছে। ও বিটা গলায় ঘড়ি ঝুলাইছে । তে-কোনা এক তেড়ি কেটে বাহার যে দিতেছে । পাগলা কানাই ভেবে বলে আমার একটা কথা। পরের ছুঁয়োয় নাম বসিয়ে করছে মোর খাতা। ব্যাটা শুধুই ছুঁচো চুটা। বিদ্যার নামে নন-চনাঢন, কলম ধরার ঘটা। বিটার চড়িয়ে ভাঙবো স্যাটা

(১৫৮)

ও ফুল তুলতে যায়ে, হারায় ফুলের মূল। তারা হয়ে নামাকুল হাসান হোসেন হযরত আলী-ফাতেমা রসুল। তারা চার রঙের এক ফুল। দেল ভুঁড়িলে জানতে পাবি, সেই গভীরের মূল ফুলের নাম শ্বেত-পদ্ম লাল জবা, ও তাই সেই ফুলে দেয় আবা; এক ফুলে হয় যুগ্মি-ভূষণ, চার ফুলে হয় সাবা।

ও তাই গুরু ধরলে পাবা। দেশ বিদেশে ঘোর ফের রে-দেখে শাস্তি হবা । ও তাই পাগলা কানাই বলে, কারও ভাগ্য গুণে মেলে । যোগ না চিনে ফুল তুলিব, সেই নদীর কিনারে। নদী সামান্য নয় রে । ফুল তুলিতে মূল হারাবি রে-নদীর ঘোলায় পড়ে

(১৫৯)

পাগলা কানাই বলে-আজ আমাদের ঘটলো বিষম জ্বালা। ওরে ধুয়োই নাম বসিয়ে, ওস্তাদের হলো মেলা। ওরে দুনেদারী কি ঝাকমারী, খেলছে মউতেরই। খেলা ॥ আজ আমাদের সময় নেই ভাই, বলি দশের কাছে। অগ্নি আহার করে তারা, সমুদ্দুরির মাঝে। (অসমাপ্ত) ।

(১৬০)

শন্যির পারে এক দিরাগ পয়দা রয়েছে ভবের পারে। ওরে আসমান জমিন তাইরি ভিতরে। ডাল ছাড়া পাতায় চাঁন্দ ধরে আর এক মানে আদি চন্দ্র, সেই গাছে আছে বন্ধ; মুর্শিদের ঠাই শুনি । পাগলা কানাই বলেরে ভাই, গাছের নাম রতন মণি ॥ তুমি জাননা যা, আমি তা জানি, যার জন্য মন পাগল হও তুমি । আর চন্দ্র উদয় হল, চাঁন্দের নাম রহিমী । তুই যদি সাধন শিখবি, সাধন কর: তালাশ করে খুঁজে পাও এবার ।

(১৬১)

শোন গাছের একটি কথা, গাছের দুই ডালে দুই পাতা। আবার আসমানেতে শিকড় গেছে রে-গাছের মূলটি কাটা। রোদ নিহারে গাছ মরে না, সাধের গাছ নিত্য থাকে তাজা ॥ শোন ভাই গাছের নয়টা দ’রে, সে গাছ নড়ে চড়ে, গাছের যদি দম রাখেছে সাঁরে। দমটা যেদিন বেরিয়ে যাবে, সাধের গাছ অমনি যাবে মরে ॥ শোন ভাই গাছের নাম উৎপত্তি, চার যুগ গাছের কথা কতি । কানাই পাগল গাছ চেনে না, সাধের গাছ মরে হবে মাটি |

(১৬২)

আমি দেখে আলাম ভাব নগরে, উব্দো করে দুনের পরে, বানাইছে কনকোর এক গাছ। ডাল ছাড়া ফুল, ফুল ছাড়া ফল, ও তা আছে কতকাল । ওরে গাছে ফল যে দিন পাকে, পাড়ার লোক আনে ডাকে, ফল দেখে লোকে হাসে আজব আর কত ফকির-বোষ্টম আলেম-ফাজেল, গাছের চারা তল্লাশ করে।

ফুল বাগিচায় গাছের দ্বার খুঁজলে পরে, পাবানা ফুল বাগিচা, কুদরতে তারা ॥ সাগরেতে তিনার পয়দা হয়। আসমানেতে গাছের শিকড়, কনাইর দেখে লাগে ভয়। অরুণ বরুণ মুনাদিরের ঠাঁই, চার চীজে পয়দা নি, কল্লেন সাঁই; কুদরতে চারা পয়দা, তা জানেন মওলায় 1

(১৬৩)

আজব এক ফুলের কথা আমার মনে হয়েছে। লাল জারদ সিয়া সফেদ, চার রঙ্গের এক ফুল ফুটেছে । কথা মিথ্যা নয় ভাইরে-পাগলা কানাই বলতেছে । আর আকার সাকার, আপে নিয়াকার, বললাম সমুদায়। এর সাড়ে বারো মাসে, চান্দের তুল্য রহিমার চাঁদ উদয় হয় । বল চন্দ্র থাকে কোন জায়গা হিন্দু মলি শোন বলি, আগ্নি দাহন দেয়। মোসলমান মলি শোন বলি, গোর খোদায়ে মাটি দেয়; ওরে খাকে মাটি দেয়। মা খাকি মলি শোন বলি গো-তার গোর হচ্ছেন কোথায় ।
(উত্তর পদ নম্বরঃ-১৭৪)

(১৬৪)

বারে বারে সভাই আসে, মায়ের নিন্দা করো না। আদ্য শক্তি জগৎ মাতা, তারে তুমি চিনলে না। শোন বলিরে মূর্খ দীন কানাই, সেই মায়ের উদরে জন্ম নিয়ে গো-ও তুমি মায়ের নিন্দা করো না শিশু কালে মায়ের কোলে, কত করেছিলে খেলা ।

তোমার বুদ্ধির নামায়, শুধুই কাঁচকলা । বক্ষস্থলে চেয়ে দেখরে, দুটো মধু রসের গোলা ॥ নিয়াকারে ভাই সকলরা, মা জন্মে ছিল । আমার মা বিনে এই ভবের পারে, কে আনিল-তাই বল । আবার মাকে আল্লাহ পয়দা করে,আপনি আল্লাহ বললেন মা । সেই মায়ের উদরে জন্মে গো-মায়ের নিন্দা করো না

(১৬৫)

শত রংয়ের দেখিরে গাভী, এক রংয়ের দুধ গো দেখি । তবে কেন এই জগতে, মানবিছ করতেছি । এই মায়ের দুধগো আমরা, বাপ-বিটায় খাতেছি ॥ সে এক আজব কথা, কথা শুনে লাগে ধাঁধাঁ: একই মায়ের দুধগো দেখ, খায় বাপ-বিটা। তোর সাক্ষী শাস্তরেতে লেখা আছে, জরু হয় মাতা ॥ কথা শুনে লাগে ভয়-সেও কথাটি শুনতে উল্টো শোনা যায়। আগে হয় ছেলের জন্ম, পাছে পিতার জন্ম পায়। পাগলা কানাই ধূঁয়ো বান্দে, রাতদিন বসে কান্দে, ধুঁয়োর মানে করতি। থাকলে পড়ে মুর্খ কবে, কত পণ্ডিতের লাগে ধান্দি ॥

(১৬৬)

পাগলা কানাই বলে ভাই রে ভাই-এক বাপের দুই বিটা, তাজা মরা কেও নাই । সকলেরই এক রক্ত, একই ঘরে আশ্রয়। একই মায়ের দুধগো খায়ে, একই দরিয়ার যায় । কারো গায়ে শালের কোর্তা, কারো গায়ে ছিট; দুই ভায়ের দেখতে বড়ই ফিট । কেবল জবানিতে ছোট বড় বোবা বাঁচাল চেনা যায়। কেউ বলে দুর্গা হরি, কেউ বলে বিসমিল্লাহ আখেরি; তারা পানি খাতি যায়, এক দরিয়ার কেওবা মালা পৈতা ধরে, কেওবা দেখ সুন্নত করে; তবে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি করে, যাচ্ছিস কেন গোল্লায় ॥

(১৬৭)

আরে আশার আসে সাঁই দরদী আর কত দিন রব। দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াইরে-আমি আর বা কোথায় যাব ॥ আমি যার জন্যেতে হয়েছি পাগল, আমি তারে কোথায় পাব । মনের আগুন দ্বিগুণ জ্বলেরে- আমি কি দিয়ে নিভাব ॥ জল দিলে নেভেনা আগুন, আর কত জ্বলিব । আশার আশে সাঁই দরদী, আর কত দিন রব ।

(১৬৮)

ঘরের কথা বলবো কিরে ভাই, ওরে দুই খুঁটির পার আর কত দিন রয়। ওরে সেই ঘরের মদি আছে মানুষ, ঐ দেখ ছিচে ভিজে যায়। ঝড় আসলে ঘর নড়ে চড়ে রে-শেষে দৌড় মারিরে ভাই । একটি ঘর ৯ টি দরজা, তিন-পার্টি বেড়া, সামনে উজালা।

ওরে সেই ঘরে বসত করে, আমার পাগলা মন ভোলা । কাঞ্চন নগরে পাগলা কানাই বসে সে তো কথা শোনে না। ঘর বান্দে ঘরানা গেছে কোন দেশে, ভাইরে সে ঘরের দেব কি তুলনা; পাগল মনা তুমি কিছুই বোঝ না । সমেজ করে বান্দেছে ঘরের বান্দন, খুব কষে কষে। দিনে দিনে সাধের ঘর, চল্লো থাকেতে মিশে ॥ ১-প্রাতঃ, মধ্যাহ্ন, সায়াহ্ন/বায়-পিত্ত-কফ । ২-ঊর্ধ্ব জগত । ৩-সম্পূর্ণ অর্থে ।

(১৬৯)

পাগলা কানাই বলে, ভবে আজব কারখানা দেখে আমার মনের শংকা গেল না; দেখে শুনে প্রাণ তো বাঁচে না। পুরুষের ঋতু হয় যখন, মা তখনে ছিল না। বিষ্ণু হইতে আদ্য শক্তি, তাও কি মনে পড়ে না। সদায় ডাক মা মা বলে, তোমার বাবা ছিল না ॥ তোর মা সত্য যুগে ঠেকেছিল দায়, আমি সেও সভায়; দন্ডের কুলে সূর্যের রঞ্জনা হয়। কত বছর বেশ ধরে মেঘেতে কেবল ঘুরায়।

তোমার মা হয়ে পরো যায়, কথা মিথ্যা নাই; সেও কথা বলি এই সভায়। বিশ্বনাথ মার হইল সখা-নইলে তোর মা বাঁচতো না। বিষ্ণু আসে করে মন্ত্রনা-ও শিব এখন কেন চল না, তুমি না গেলে কালি বাঁচে না। চললো ভোলা-লয়ে আঁচলা ঝোলা, বিছানধারী করলেন পাক ছালা । তোর মাতার মতো মহাকালি করে রে হায় ।

হায় (উত্তর পদ নম্বরঃ-১৭0 )

(১৭০)

ক্ষীরোদ সাগরে বট পত্র শাঁই শাঁই, সে জলেরই আকার । নিয়াকারে ছাল্লা দিল, সৃষ্টির বাসনা হল, তখন সে ধূমায় অন্ধকার । তাই নাভী হতে ময়লা ফেলে, সৃষ্টি করলেন বসুন্ধার, ক্ষীরোদ মাঝার। তাই ঘামেতে শক্তির উৎপত্তি, তিনি তো আদা শক্তি, দূর্গার নাম বল যার ॥ আর শক্তির গর্ভে সন্তান হল তিন, তিন পুরুষও রতন । ব্রহ্মা আর বিষ্ণু শিব, মায়ের জগতে এলেন বেশ বেশ, শক্তির পুত্র, এই পুত্র তিন জন।

তাই শক্তি বলে নারায়নে, আমার স্বামী হবা কোন জন, বল নারায়ন । তাই সাঁই নিরাঞ্জন গেহের কারণ, ভজ এই তিন জনারই, যার হয় তপে মন আর ভেবে শক্তি ধরে মুক্তি, ভজরে তিন জন- ও মন ভজোরে তিন জন।

তাই তিনজনা তিন দেশে গেল, শুনে কু-বচন । তাই পাগলা কানাই বলে, এমন কু চরিত্র মাতা ভবে রল কি কারণ। তাই ব্রহ্মা গেল বিষ্ণু গেল, শিব শিব শিব তখন বুঝিল কারণ। দো কৌলিক রক্ষা করে, শিব উত্তর করে; সতীরে পড়িল বচন । দেহ শত জন্ম মম রাজে, পার দেহ করিতে পত্তন, বল নারায়ন। দেবী শত জন্ম ত্যাগ করিল, দেখে খুশি হল পরেই করে গ্রহণ (প্রশ্নপদ নম্বর- (১৬৯) |

(১৭১)

আরে আরে সামাল সামাল ডুবলো তরী-ওরে মন লায়ে। তুমি কার হুকুমে বোঝায় তরী-তুফানেতে দিলে; হা’ল যেন ছাড়ো না মাঝি হে-থাকো হুঁশিয়ার হয়ে ॥ আরে ওরে চায়ে দেখ তোর-ডওরা খুলে, লাগেছে নোনা। ও তুই দিনে দিনে মহাজনের-হারালি ১৬ আনা। ওরে পদ্মা নদীর মাঝখানেতে রে-ও তুই ডুবালি ভারা ॥ আরে ওরে নৌকায় চড়ে সুখ হল না-পাগলা কানাই কয়। কোন দিন জানি সাধের তরী-ডওরাই আসে ডুবে যায়। কি জওয়াব দেব মহাজনের রে-আমার সেও হয়েছে ভয় ॥

(১৭২)

আমার দেহ জমি আবাদ হল না। ছয় বলদে কথা শোনে না। আবার আমি যখন হালে জুড়ি আইতে কইলে আইতো মানে না ॥ ও সদায় লাঙ্গল চাটে জাংলা চাটে, চঙ্গো টানে না । দেহ জমি পতিত রইল, আবাদ হলো না ॥ গেলি বলদের কাছে রুখে আসে, ক্ষণে ক্ষণে ধরতে চায় ঠাশে, আবার মদনা আঁড়ে, দুষ্টু ভারী-ওসে ভিটে খুঁটে খুঁটে ধস দিছে। পাগলা কানাই বলে হায়রে মন তোর নাই কোন দিশে ।

(১৭৩)

পাগলা কানাই বলেরে ভাই-জষ্টি মাসের সাপটাতে, নৌকা পলো পদ্মাতে; তাতে জালের বংশ নাই । হুম ডাকাতি নৌকা মারলো, জা’লের মা তা দেখতি পায়। জালের বিধবা বউর প্রাণ বাঁচেনা ভাই ॥ জা’লে জাতির এমনি ধারা, কপনী পরে ডুব মারা; ওযে পুষ মাসের শীতি ।

অন্ন বিনে জালের গুষ্টি, শুকিয়ে হল চাল শুটকী । বিনা তেলে আলিয়ে গেল, ওরে নাল সপটা পাটি আবার জালেনী বলে ওরে জা’লে, তুই যাসনেরে আর জলে । মদনা আড়ে ঘিরে নেয়, রাত দুপুরের কালে। আমার আন্ধ্র-শরম সব গেছে চলে, ঐনা তোর হাতেতে পড়ে। ওরে যাসনে জা’লের গুণ টানতি, ও তুই থাকগা শুয়ে ঘরে ।

(১৭৪)

আমার খাকির কথা বলতে লাগে ভয়, আমি বলবো কিরে ভাই; খোদা তালা ভেসে ছিলেন, ডিম্বুর মাঝার। ডিম্বু ভেঙে পয়দা হলো জমিন আর আসমান । ওরে ইশারাই গড়েছেন আল্লাহ, এই দুনিয়া সারেজাহান। ছয় দিনে দুনিয়া পয়দা, গঠেছেন আপে খোদা; পাগলা কানাই কয়, আর এক কথা আমার মনে হয়। আমার দীনের নবী মেয়ারাজে যায় । ওরে, মেয়ারাজের যত বয়ান, আছে এই দুনিয়ায়।

আবার একিন মনে এক যে গোঁয়ার, একিন মনে বসে রয়। ওসে খোদার হুকুম মানেনা, সে মিথ্যা কথা বলে যায়। হযরতকে মিথ্যা বলে, তিন ছেলে তার উদরে হয় । ওরে আসমান জমিন জা’রে জা’রে চলে যাবে, সেই দিনেতে কাঁটায় কাঁটায় করবে হিসাব; যমন পাপ তমন সাজা, সেই দিনে নিতে হবে । মা খাকির গোর কোথায় হবে, বলতে আমার মনে লাগে ব্যাথা । হবে গোর আল্লাজীর আরশে ।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ২

 

(প্রশ্নপদ নম্বরঃ-১৬৩)

(১৭৫)

বাহা এক রথ গড়েছে কামেল কার, ১৪ পোয়া ১৪ ভুবোন বন্ধুর হাতে সাজ । আছে ৯ দরজা দেখতে মজা, চলতেছে পবনের সাথ। মন হেলায়ে ঘুরছে চাকা লক্ষ টাকা মূল্য সে রথ ॥ ৩৬৪ জোড়া নিরাপন, বাঁশো খিলি তক্তারই গঠন; দশে ইন্দ্র হয়ে ঋপু, প্রধান হচ্ছে মন ।

আমি যে দিক চালাই সে দিক চলে, চলে উদয় শূন্যে চারটি মন । ভাল ভাল সব কালো সুতোর-নতুন পুরান করছে মিলন ॥ শুনি সে সুতোর রথেতে আছে, কথা বলবো কার কাছে; ব্রহ্মাণ্ডলী মাল যার ভান্ডারে ওরে সে সেই ভাবে আছে। তারে ধরবার জন্য কতজন, কত ফিকির করতেছে আকিঞ্চন । তপ করতেছে জপ করতেছে সদায় চিন্তা মন। পাগলা কানাই থাকে সেই আশাতেই থাকি বানি সুতোরের অন্বেষণ। মহাসাধন মহাভজোন, অপার সাধন সাই নিরাঞ্জন ॥ (উত্তর পদ নম্বরঃ-৭8 )

(১৭৬)

পাগলা কানাই বলে এই না ঘরে বসত করি আমি। কত দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াই-না পাইলাম ঘরামী । যদি ঘরামী পাতাম, সারে নিতাম-যত বেশী-কমি । ঘরের উঁচা-নিচা কোনা-কানি ॥ ওরে যেদিন আসবেরে ঝড়ি-মারবে বিষম ঠেলা ।

যেদিন রবে পড়ে, সাধের ঘর আর বাড়ি; মিছা ধুলার খেলা । বন্দি রবে সদর আউলা ॥ ওরে ঘরের মদি অকুল নদী-দেখে পরান কাঁপে। ওরে দুই মুর্শিদ বসে তপ করতেছে ঐ না নদীর তটে । আমি শুনে আলাম মুর্শিদের কাছে, প্রাণ চমকে চমকে উঠে। আল্লাহ কখন না জানি নদীর তুফান ওঠে ৷

(১৭৭)

সবে বলে ও পাগলা কানাই ভালো ভাই । ও তুই যমন পুরুষ তমনি ছিরি-দেখে ঘৃণা ওঠে; ও নাম করেছিস বটে । হাটিস যমন বগের হাঁটা-পায় ফুটলো তোর কিসির কাঁটা, ওরে ও পেট ভগরে বিটা-নামে তোর গগন ফাটে ।

এই উত্তোল কি তোর ছোট ভাই? শুনতে পাই-ওরে বিধাতার কি কাজ ছিলনা। গঠেছে কি ছিরি-দেখে আঃ মরি! মরি! নাম করেছো যেমন জগৎ জোড়া, দুই ভাইর দেখি ছন্ন ছাড়া; কেউ কুঁজো কেউ টেংগুশ পাড়া, দেখে হাসে মরি ॥ আর ওরা সভায় আসে যখন, আমরা চা’য়ে দেখি তখন; কালুয়া ভুলুয়া দাঁড়ায় যমন । ওমনি তো দুটি ভাই; যমন কানাই আর বলাই। কানাইর যেমন গলায় দাড়ি, উজলের হাত পা নড়ি! ঐ বেটার নাম এতই ভারী; চল ফিরে যাই বাড়ি ॥

(১৭৮)

ওরে ভাই ব্যাপারী পাড়া সুখের গ্রাম, দেখে জোড়ায় প্রাণ । টুসু দফাদার সোনা পায়ে মিলাইছে চান্দের বাজার। দেশ বিদেশে শব্দ হলো, লোকে আসে শোনে গান ॥ ঘোড়ারও শব্দ শুনে, আনলাম এক লেগাম কিনে, ঘোড়ার ঐ মুখি দেব।

আবার ঘোড়ার পিঠে সোওয়ার হয়ে, রাস্তা দিয়ে ছাড়ে দেব। ব্যাপারী পাড়া পাছে ফেলে, গয়েসপুরীর মধ্য দিয়ে; বেড়বাড়ীর সামনে যায়ে, রাজাপুরী জিড়োবো । আমার বাড়ি গাবা জারিরে, ঘোড়ার পা বান্দা, সোনার দোকানে সোনা বিক্রি হয়, নিক্তি হয় ওজন সই। টুসু দফাদার কয়েছে মোরে, আগিয়ে আসো উজোল বয়াতি, দেখি তোমার হাতখান কই । ধরে নেও সোনার বাজু, হাতে নিয়ে নাচো কিছু, তা দেখে আমরা অতি খুশি হই ॥

 

 

পাগলা কানাই এর গানের পর্ব ৩:

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৩

 

(১৭৯)

পাগলা কানাই বলে, রাই কিশোরী ভেব না, তুমি কানলে আর শ্যাম পারা নাং বিন্দের ত্যাক্ত করো না। তুমি সদায় বলো শ্যাম আনিতে, আমার যেতে মন সরে না । ডেমনা—ডেমনীর কুকড়া ভারী, ভ্যাদা প্রেমে আর জোড়া দেবনা ॥ যখনেতে বল্লাম ও রায় তোমারে, মুখ ঘোরাইলে তখনে, কথা বললে না বদনে। আবার তুই জানিস তোর বন্ধু জানে, আমার যাইতে বল কেনে ।

কালো বলে ঘৃণা করিলে, এখন কালো শ্যাম আসবে কেনে । একবার দেখি হাসাহাসি, আবার দেখি গোসাগোসি; নয়নে দেখতে পায়, এমন পিরিতির মুখে ছাই। পিরিত একবার ভাঙ্গে একবার হয়, এমন পিরিত কভু দেখি নাই । যেমন ছাই ফেলানো ভাঙ্গা কুলো, আমি বিন্দে আছি সদাই । তুমি সদাই বলো শ্যাম আনিতে, গুলো, আমার আর খায়ে কার্য নাই ।

(১৮০)

একটা মানুষ দেখলাম আমি ত্রিবেনীর ঘাটে, কথা বলি দশের নিকটে, ও সে মাটি ছাড়া শূন্যেতে হাটে। ও তার শিরে জটা, বড়ই ন্যাটা, সিন্ধুর ফোঁটা নলাতে; তিনটে সন্তান আছে তার প্যাটে । ও সে নিজের দুগ্ধ নিজেই পান করে, দুগ্ধ নাই হস্তিনীর বাঁটে ॥ ওসে গোমাংস যে করতেছে আহার, জাতি কুলের নাই বিচার; সব দেবতার পূর্বে পূজা তার। ও সে অনুরাগী সর্বত্যাগী, বক্ষস্থলে জুনের ধার । আমি মরি মরি রূপেরই কারবার । পাগলা কানাই বলে হায়রে হায়-ও লীলার নাইরে পারাপার

(১৮১)

আমার মন রে মন, ভ্রমর অলি । ও তুই কোন ফুলেরই মধু খায়ে, আনন্দে রইলি ভুলে; ক্যান শান্ত হলি । সহস্র ধারায় সে ফুল মহা বলি, আমার মন রে মন দেখ রে আসমানে যার ফুল, শিকড়ে তার মূল; হেলে দুলে খেলছে তারা, কতই বা রঙের ফুল । ও তাই পাগলা কানাই বলে, পাবি দেখা, কর্মে যার আছে লেখা; সে ফুলের আঁখি । ব্রহ্মা আদি ওরে কৃষ্ণের সেবায়, না লাগে সে ফুল 1

(১৮২)

আমি মশার জ্বালায় কিনলাম মশারী টাংগায়ে শুয়ে থাকি কি ফিকিরী, ওরে তাই দেখিয়ে মশারা চলে যায় বাড়ি। আবার সব মশাতে যুক্তি করে টানে তোলে। মশারি। আরও কয় পাগলা কানাই গাও ছুঁয়ো জারী। খালি ধুয়োর সুর হল না, ওরে বাজাও খুনজরী ॥ আর মশার জ্বালায় প্রাণ বাঁচেনা ভাই, ওদের মত রাক্ষস তো আর নাই; আমি মশার জ্বালায় কোন বা দেশে যায়।

ওর দিবসেতে তালাশ করে, আমি মশার কোন খোঁজ না পাই। শুধু রাত্রি যোগে দেখতে পাওয়া যায় । তারা গরু ছাগল ভেড়া মহিষরে কিছু থুলো নারে ভাই আর পাগলা কানাই বড়ই ভাগ্যবান, তুমি করে থাক গান; তুমি সর্বকালে সর্বদেশে পেয়ে থাক মান । মশা বলে পাগলা কানাই, আমার কাছে শোন গান। আবার কানের গোড়ায় শুন গুন করে ক্যান । কান কামড়ে ধরে বলে বুনাই কেমন হচ্ছে গান ।

(১৮৩)

আওয়ালে আল্লাজী বন্দন, দুয়োমে বিসমিল্লাহ: ত্রিয়োমে মা থাকি, বন্দন মারজুল্লাহ’ । মক্কা মদিনা বন্ধন, কাবা শরীফ কালুল্লাহ। আমি হযরত আলির চরণ বন্দি, যার দয়ায় করি হিল্লাহ । কানাই অতি অভাগা, ৩০ কোটি দেবতা, কোটি সালাম জানাই; সালাম বিবি বরকতিনীর পায় । ইন্দ্র-চন্দ্র” বাও, দেও- দৈব” পৌরীজন” সবার কদমে সালাম জানালাম এখন।

আমি অতি অকারণ ঘুরিয়ে ১৪ ভূবোন; কিসে পাব ভক্তির অনুমান, খুঁজে পাইনে কি কারণ । রসলুল্লাহর চরণ বন্দি, ইমাম হোসেন হানিফা। ওরে দমের মান্দার, মা-খাকি আর ওস্তাদ, ডাকি জলিল কানুল্লাহ, কাদের কুদরত মওলা; পড়েছি ঘোর তুফানে, এবার রক্ষা কর গো আল্লাহ ॥
১-আল্লাহ ভক্ত গণ । ২-সূর্য ও চন্দ্র । ৩-বাতাস । ৪-দানব কুল । ৫-নারী জাতি।

(১৮৪)

দূর্গমে পড়েছি মাগো দূর্গতি নাশিনী, পাগলা কানাইর গতি দাও মা, পতিত পাবনী । শুনেছি তিরজা’ গুণে তোমার নামের মহিমে, সকলই করতে পার অনন্ত রাগিনী ॥ তোমায় পিতা দক্ষ রাজা, ছাগ মুন্ডু দিলে তারে, গণেশরই হস্তিমস্তু, তোমারই চকোরে, পুত্রকে করিলে স্বামী, তুমি নারোদের মামী, সকলই করতে পার এ ভবে সংসারে ॥ তোমার পিতা দক্ষ রাজা শিব নিন্দা করে, এ কথা শুনিয়ে মাগো শরীরও ছাড়িলে ।

এই কথা শুনিয়ে শিব গো মাথার জট ঝাড়ে। তাই বিরীভদ্র’ নামে এক দৈত্য যে জন্মিল। শিবের হুকুমে পায়ে, বিরীভদ্র যজ্ঞে যায়ে, পেশাবে দক্ষ রাজার যজ্ঞ ভাসালো ॥

১-ত্রি জগতের শক্তি। ২-চক্রান্তে । ৩-শিবের অনুচর। ৪-হিন্দু পুরান মতে প্রজাপতির দক্ষ রাজা যজ্ঞ করে শিবকে অবজ্ঞা করে। ফলে শিবের অনুচর বৃন্দ সে যজ্ঞ পেশাব-পায়খানা করে লন্ডভন্ড করে দেয় ।

(১৮৫)

ভার শালিকে ডাকে বলে ওরে, কাঠ ময়না, ওরে আচাভুয়ো করতেছে গাওনা; জানি কোন খালে করে গোছলের নাচনা। ওর বারই-ভরই তুলোটুনী, ঘুরঘুরী আর খরশালা; পাল দোহার ওরাই ছয়জনা। ওঠে ঠুকরী বগা সঙ্গে লয়েরে- আসরে আলো মাছরাঙ্গা ॥ আর কবুতরে বাজনা করে, চড়ুই বসে রয়-দলো ঘুঘু সেই রাগেনী দেয় । ওর দই রাজা কুলচারা পাখি, তুতী আসে জারী গায় ।

হাঁড়ি চাঁচড়া খুনজরী বাজায়, পেঁচোই লংকা মারে যায়। বাহার মারলো বাদুর বাবু, সেতো গাছে ঝুল খেলায় । আর গাঙ শালিকে গাং জুড়ে, শামুক ভাংগা শাম কুড়ে, হাড়গিলের গলেতে ছালা। পাগলা কানাই বলে হায় গো আল্লাহ, গিন্নিশকুন দাড়ি রাখে, হয়েছে মোল্লাহর বিটা মোল্লাহ ॥

(১৮৬)

অংগদ বলে তুই শোনরে ইন্দ্রজিত । এই লংকা পুরে আসে, আমি দেখলাম এক বিপরীত । তোর যে মায়ের শত পতি, আমি দেখে হলাম লজ্জিত । শোন বলিরে ও ইন্দ্রজিত ॥ ইন্দ্রজিত তোর লজ্জা শরম নাই? আর কোন প্রয়োজন নাই, তোর শুধু বাবার নামটি চায়।

সভায় বসে যত রাবন, বাপ বলিব কার, ভাবতেছি ভাই; তোর বাবার ঠিকানা নাই ৷ আবার পতির মোন্ডা ধরে, ধন্য তোর মারে । এক সে নারী শত পাতর মন কেমনে রাখে। আবার কোন পিতাতে কন্যা হরণ করে। ভাবার কোন নারীতে পিতা পুত্র এক সংগেতে রমন করে। আমার বাবা তোর কোন বাবার লেজ দিয়ে বন্ধন করে। পাগলা কানাই বলে ভাইরে ভাই, বলো- সভার ভিতরে (উত্তর পদ নম্বরঃ-১৮৭)

(১৮৭)

পাগলা কানাই বলে অঙ্গদরে তুই বললি অন্যায় কথা। বাবা আমার রাবন রাজা, পালাম মর্মে ব্যাথা । আমার পিতার স্মরণ করে দেখ; ভবে তার কি ক্ষমতা । ওরে ধানর মূর্খ বানর, সভাতে বল্লি কোন কথা ॥ দেখবি মম পিতা রাবন, শোন তবে বলছি কারণ; মম পিতার উল্লাসে গিয়েছিলাম কৈলাশে; শশী কলোতি, নাই সে যুবতী: নল কুমারের ভাগ্যে ছিল, নামেতে লম্বপতি।

কাম জ্বালায় পীড়িত হয়ে, জোর করে করলেন রতি। কুবির হলেন তাহার শ্বশুর, মোর পিতায় কিসের অখ্যাতি ॥ সন্ধে পুজায় বলি রাজা, ধিয়ান করে ত্রি-ভুবন। ধিয়ান করে বসে আছে, পিছনের দিক দশানন । কুপিত হয়ে লেংগুড় দিয়ে, সে সময় করছিল বন্ধন ।

(প্রশ্নপদ নম্বরঃ-১৮৬)

(১৮৮)

আজব এক শকশো পয়দা হলো ভবের পরে, উবেদা পালি পয়দা বিটা শুনি শান্তরে । উহার সোয়া দুই চোখ শোনে তিনকান; বিধি দিয়েছে তারে পাঁচ মাথা আরও ওঠে ঠ্যাং আড়াই খান। চার লেংগুড় প্রায় সমান, দেখলে ভয় করে ঠেলে নড়ানো যায় না তারে উড়ে যায় বাতাসে। খুঁজলে নাগাল যায় না পাওয়া, আপন মনে আসে । যোগী যারা যোগ ভিমরে বসে আছে, সবাই যায় তারই তলাশে ॥ শোন বয়াতি ভাই তোমার করি জিজ্ঞাসন।

(১৮৯)

শাস্ত্রমত বললাম কথা, জবাব দাও এখন। পুরুষের উদরে ছেলের জন্ম হলো কি কারণ। কি নাম তাহার, কি আকার হয়, পাগলা কানাই করে জিজ্ঞাসন ! সালাম সালাম সালাম করি, আমি দশজনের পায়; পহেলা সালাম করি আমি। খোদার দরগায়। তার পরেতে সালাম করি আমি নবিজীর পায়, যিনি আছেন।

ও-হারে ওস্তাদ যারা হয়। পাগলা কানাই সভায় আলো আল্লাহ তরাও হে আমার # আর মক্কায় সালাম মদিনায় সালাম, নবীর ইয়ারগণ, তার পরেতে সালাম করি এমাম দুয়োজন । মা ফাতেমা দুনিয়ার মাতা, নবীজী হন পরম পিতা, পীর ফেরেস্তা অলি আল্লাহ গো আমায় দিও গো চরণ । তার পরেতে সালাম করি জ্ঞানীগুণী যারা, ময় মুরব্বী ভাই বন্ধুসব গত গেছেন তারা। আমি অতি মূর্খমতি, না জানি ভজনশ্রুতি, ‘পাগলের ভুলভ্রান্তি গো, মাপ করবেন আপনারা ।

(১৯০)

কয় কানাই পাগলা হায়গো আল্লাহ, ডাকছি বারে বার, ওগো আল্লাহ দয়া করে। ভব সিন্ধু কর পার । তোমার নীলে বুঝতে পারে, এমন সাধ্য আছে কার ॥ তুমি করিম, তুমি রহিম, তুমি হও জব্বার; বায়তুল্লাকে খাড়া রাখে, পাথর কর শূন্যের পার । তুমি ইউছুফকে ফেললে কুয়োর মাঝে, তরাও মালেক পরওয়ার ॥ তোমার নামে ভরসা করে, সভায় আলাম আমি। বিষম কালে কোথায় বলি, মা বরকতিনী । পাগলা কানাই ডাকছে বার বার, ওগো আল্লাহ কাদের গনি ।

(১৯১)

পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে, পাখি হলো ফিঙে রাজা মরি হুতাশে। ঝড় আলি চিল আর শকুন, ডালেতে মাথা খোশে। ও তাই লম্বা ঠ্যেং হলদে পাখি, বেওয়া তো বেড়ায় ভাসে। চেগা চিল্লিয়ে বেড়াচ্ছে ॥ আর নরাল সরাল করাল পাখি, কালাদীঘে আর কাচ্ছোরা, পানকৌড়ি করে ঘোরা ফেরা । ওর দল বান্দ আয়েছে ওরা, চলগো মোরা যায় চলে, আখড়াতে বসিগে আমরা

(১৯২)

ভবপারে যাবিরে অবুঝ মন, আমার মনরে রসনা । তুমি দিন থাকতে সাধন ভজন করলেনা । ভবপারের চেষ্টা করলে না। দিনে দিনে তোর দীন ফুরালো, চেয়ে দেখরে দীন কানা ॥ আর দেহের বাদি রিপু ছয়জনা, আগে বশ কর তারে। ঐ নাম ভুলরে পরে পড়বি ফেরে: প্রাণ যাবে হীরার ধারে। পুলসিরাত পার হবি কেমন করে । ওরে দায়মালী চোর, ওরে ও গাঁজা খোর, আর বুঝাব কত পাগলা কানাই কয় ওরে অবুঝ মন, আমার মনরে রসনা । আজ মলে কাল দুদিন হবে, এভাবে দিন যাবে না । ও তুই চায়ে দেখরে দীন কানা

(১৯৩)

ভবে আসে রইলি বসে, কাল কাটালি কালের বসে; যেদিন আসবে শমন বাধবে করে; মন তোমার সেদিন কি হবে । ভাই বিরাদার বন্ধুসব, সেদিন সংগে কেউ না যাবে। তিরিশ মতি পঞ্চ মানিক সংগে কর সাথী, আখেরে তোর হবে গতি। রোজ হাসরে ময়দান পরে হিসাব নেবেন আল্লাজী। তোর জমা খরচ সব রইল বাকি ৷ পাগলা কানাই বলে ও মন ভোলা, ছাড় ছাড় রসের খেলা; তোর সঙ্গের সাথী কেউ হবে না, ডুবে গেল বেলা। কাঁদবি বসে একেলা ও মন পাগেলা; তুই দিন থাকিতে দ্বীনের কাজ, কিছুই করলেনা

(১৯৪)

বাহা মজার রথ গড়েছে দীননাথ, আড়ে দীঘে ওজন হয় ঠিক সাড়ে তিন হাত ওরে চৌদ্দ পোয়া চৌদ্দ ভুবন, রথের গতাগত । ভাল ভালো সেই কালো সুতোর, নতুন পুরান করছে মিলন ॥ আবার দিয়ে জোড়া ৬৪ নিরুপণ, বাঁশো খিলি তক্তারই গঠন; ওরে দশ ইন্দ্র, ছয়ো রিপু, প্রধান হচ্ছে মন। সুভোরকে ধরার জন্য কতজন, আশায় বিলক্ষণ; জপতপ করতেছে সে সদাই চিন্তামন। পাগলা কানাই পায়না সুতোরের অন্বেষণ; মহাজন মহা-ভাজন করে তার কারণ ॥

(১৯৫)

বাহা মজার রথ গড়েছে সুতোরের নাম সৃষ্টিধর, নিচেই দুই ঢাকা তার ঘোরছে নিরন্তর । কত যোগী-ঋষি, জ্ঞানী গুণী, তারা করে সাধন; বসে সেই রথের পার । উপরেতে জ্বলছে বাতি, বাহা দেখতে চমৎকার ॥ আর নতুন রথ পুরাতন হয়েছে, ওরে জুত ভুলে রথ রেজুত হয়েছে; আখের ফানা যাবে জানা, সাধন ভজন করলে না। ব্যাকা চুরা রথের চাকা, আর চালালে চলবে না। গড়নদার যে সুতোর সকলই তাইরি হাত, পাগলা কানাই টানে মল শুধু খাটের রথ

(১৯৬)

পাগলা কানাই বলে এইনা ঘরে বসত করি আমি। কত দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াই-না পালাম ঘরামি । যদি ঘরামি পাতাম সারে নিতাম, যত বেশী কমি ঘরের উওরা সকল, উঁচো-নিচে, সকল কোনকুনি ঘরের মধ্যে সাড়ে ২৪ চন্দ্ৰ আছে সদর আলা; যেদিন আসবেরে বিষম ঝড় মারবে বিষম ঠেলা। পড়ে রবে সাধের এ ঘর, মিছা ধূলো খেলা । সকল কাজ বন্ধ হবে, বন্ধ সদর তালা ॥ ঘরের মধ্যে অকুল নদী, দেখে পরান কাঁপে; কত যোগীন্দ্র মোহান্ত আদি, তারা জপ করতেছে । আমি শুনেছি মুর্শিদেরই কাছে ॥

(১৯৭)

আজব এক ঘর বান্দেছে মজার কামিলকার, আমি দেখে হলাম চমৎকার; ঘরের আট কুঠুরী নয় দরজা, দেখতে কি বাহার। ঘরের মধ্যে বইছে পানি, ঢেউ খেলছে। অনিবার; বিনা তেলে জ্বলছে বাতি মটকার উপর ॥ দুই বৃটির পর ঘরে রাখেছে, চার জেলা আর বারো থানা।

চার বাজারের পার চার দোকান দার করছে বেচা- কেনা, ওরে করছে বেচা-কেনা। বোবার জিনিষ কিনবার কালে, ডাকে সে মূল্য নেয় না। ওরে লুলার মাথায় দোকান থুয়ে দেখে হাসে কানা সে ঘরের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিরাঞ্জন, ওরে এক পাড়ি ঘর করেছে পত্তন; ঘরে বসত করে সুখ হল না, কানাই হল অভাজন । যেদিন থাম ভাঙ্গিবে, ঘর পড়িবে পালাবে তোর মহাজন; দিন থাকিতে সারোরে ভাই, যে পার যে যেমন

(১৯৮)

ঘরের মধ্যে ঘর বেঁধেছে, এছাই মজার কর্মীকার, বসত শুনি কালে কালে, বোবায় ডাকে শুনছে কালে; পাগলা কানাই পাশা খেলে শূন্যের উপর। ঘরের মধ্যে নেই তার বিছান পাতা, দেখি একি চমৎকার ॥ ওরে রাত দিন জ্বলছে আগুন পোড়ে না সে ঘর । ঘরের মধ্যে আগুন পানি, ঢেউ খেলে সে রাত্র দিনি, বাতাস বন্দ ঘরের মদি গো-রাতদিন সে বয় ঝড়।

বিনা তেলে জ্বলছে বাতিরে সে এক মজার কামিলকার ॥ ল্যাংড়া একজন দৌড়ে চলে, শূন্যে একজন সাতার খেলে; পনি ঠান্ডা করবো বলে, একজন আগুন লয়ে যায়; এসব কবার কথা নয়। সেই ঘরে শন্যির পারে, শতদল প্যাচে তার, দেখে শুনে পাগলা কানাইর জ্ঞান নাই আর

(১৯৯)

বাঘের ডাকে অন্তর কাঁপে, গেলে মধুপুরের হাটে, আয় কে যাবি বাঘ শিকারে । সেই যে বাঘের নাকটি উঁচা, কেউ যেন ভাই মারোনা খোঁচা; ও বাঘ তাকায় আড়ে আড়ে। কত শিকারী যাচ্ছে মারা, কত গুলি বন্দুক সহকারে ॥ ডাকিনী- সাখিনী বাঘ, দুই ধারেতে বসে; মুখে তার ঘন দাড়ি, রক্ত খায় সে চুষে । বাঘের নাম ফুলেশ্বরী, নাক নেই তার গন্ধ ভারি, সেই যে বাঘের এমনি রীতি, গন্ধ পাইলে ধরে । আবাল বৃদ্ধ খায় না বাঘ, যুবক পাইলে ধরে। ও বাঘ মারবে সাঁই, কানাই কয়, ঘরের পোতায় ঘোরে ফেরে ॥

(২০০)

আমার দেহ জমি আবাদ হইলো না । আমি মনের মত চাষ করিলাম, তবুও ফসল হলনা । না হলো মোর বেছন বোনা, তাই হলো সেই ভাবনা; কি দিয়ে দেবরে আমি ঐ লাটেরই খাজনা । বোশেক মাসে জো হয়েছিল, ডোলের বেছন ডোলেই রইল; ডানি বামের বলদ দুইটি, জমির আলি যায়ে শুলো। লেজ নাড়ে আর মাথা নাড়ে, বলতো আর দেয় না ॥ মংলা বুদো আড়ে দুটো, ল্যাজ খানা তার পিঠে নিলো। জোয়াল ফেলে দিয়ে তারা, পরের ধন লুটে খালো। পাগলা কানাই বলে। হায়রে হাই-আমার জনম বিফলে গেল ।

(২০১)

হিংসা নিন্দা দূর কর হে মোমিন মোসলমান। হিংসা নিন্দা দূর না হলে, কি ভাবে পাৰি আছান। আদম সেজদা না করে, আজাজিল হয়েছে শয়তান ৷ তোর পাকা বাড়ি দালান কোঠা, সব পড়ে রবে। এ দুনিয়া ত্যাজ্য করে মন, একেলা যেতে হবে। সে দিন মাতা পিতা ভাই বন্ধু সব, সাথে কেউ না রবে । তোর যাবার বেলায় সাদা বসন, খেলকা টুপি সার । তাই পাগলা কানাই বলছেরে মন, আপন আপন কর্ম কর। চার যুগ ধরে থাকবি বন্দী, দেখবি ঘোর অন্ধকার |

(২০২)

আশ্চর্য এক কার্য দেখে প্রাণতো বাঁচে না । আমি ভাবে পাইনে ঠিকানা, সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করলো না; ভবে তারা একেস্তারে আছে দুইজনা ॥ তারা একেস্তারে আছে দুই ভাই, এক নাম ধরে, লোকের মুখে শুনতে পাই। হস্ত পদ চক্ষু-কর্ণ তাদের কিছুই নাই । কে দিয়েছে তাদের জন্ম আমি কারে বা শুধায় ॥ দুইটি ভায়ের মস্তকের উপর দুইটি শিং আছে কি বাহার । দিলে বোঝা হয়ে সোজা, অমনি চলে অনির্বার । বিনা সোয়ারে চলন নেই তার। কানাই বলে অসম্ভব কারবার, সে মর্ম পালাম না রে আর |

(২০৩)

নামাজকে সত্য সত্য পড়েন গো ওস্তাদজী, নামাজ পড়ে যত মুসলি; মুসল্লিদের গুণের কথা, আর আমি বলবো কি । মরা গরু হালাল করে, তারা গোয়ালির মদ্দি মুচিরা গরু ছোলে, মোল্লারা শকুন তাড়ে; শকুন বলে পাগলা কানাই, একি হলো দায়। এক বিটা ফারাজী ছিল, ভষ্ম মাখে গায়। আর এক বিটা ফারাজী ছিল গো—ওসে টাক পড়া মাথায় ॥ মুচিরা টের পাইলে, করে দেবে ফৌজদেরী। হাতে দেবে গরুর দড়ি । হাতে দেবে যত কোয়ড়ি, পায়ে দেবে লোহার বেড়িং ধরে বান্দে লয়ে যাবে গো-ওসে গারদের মধ্যি ॥

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৩

 

(২০৪)

পাগলা কানাই বলে, শোনগো গুরু ধন-আমি ভজিব তোমার চরণ । গুরু চরণ আমার জীবনের জীবন । আমি ঐ চরণ করি স্মরণ, আমি ঐ চরণ করেছি স্মরণ আমি ঐ চরণে মুক্তি লাভ করবো, ঐ চরণ কোলে তুলে নেব; গুরুর চরণ আমি পাব, চরণ মালার হার গাঁথিব । সে হার আমি গলায় পরিব, ঐ চরণে দাসী হবো গুরু যদি আমার হতো, মনের কথা খুলে কতো। পাপ দেহে ফুল ফুটিত, পাপ দেহেতে ফুলের বাগান হতো, গুরু রূপ সদায় ঝলক দিত ৷

(২০৫)

পাগলা কানাই বলেরে ভাই, শুনে এ গুরুর কথা, অন্তরে লাগেছে ব্যথা। সভায় আসে নাড়ে মাথা, গুরু কয় আতা আর বাতা। বুঝতে পারলাম গুরু ক্ষমতা, গুরুধন শুধুই ফ্যানচাটা ॥ গুরুধন মদ খায়েছো, তুমি মদ খায়ে মাতল হয়েছ, গুরু খান্দো মাগীর হাতে পড়েছো। চোষক বান সে মারেছো, ও চোষ বানে রক্ত চুষে নেছে। ১৬ চুঙ্গোর বুদ্ধি গুরুধন, এক চুঙ্গোর মাধ্য গেছে । গুরুর হাড় খাব মাংস খাব, চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবো। খান্দো মাগীর ভাত খাওয়াব, গুরুর কি অল্পে ছাড়িব

(২০৬)

সালাম সালাম সালাম জানাই গো আল্লাহ নবীর ঠাঁই। তার পরেতে সালাম জানাই গো হারে ওস্তাদ যে জন হয় ॥ আর নবীর বেটি দুনের খুঁটি ভেস্তের দাওনদার। পুল-সিরাতে হীরার ধারে, আপনি করবেন পার। তোমার নামের গুনে আইছি গো, ওমা যা কর এবার ॥ পাগলা কানাই সালাম জানাই, এসো মা তারিনী। যেদিন ইস্রাফিল ফুঁকিবেন শিঙ্গা গোদুনে হবে পানি । বিপদ কালে এসে মাগো ওমা তরাও বরকতিনী ॥

(২০৭)

শোন বলিরে মন, তুই ভাবিস অকারণ, মিছে তোর ভাবনা গেল না । তুই রইলি ভুলে মায়ার জালে, মন তারে চিনলি না । তুই রইলি বসে তাদের বশে, তোর ঘটায় বুঝি কু-ঘটনা ॥ তোর সঙ্গেরে সাথী যারা, আপন নয় তারা; তাদের চিনলি না মনচোরা । তারাই বাদী রিপু ছয়জনা, তাদের চিনলে না। শেষকালেতে কি হবে তোর, তার নাইরে ঠিকানা । আর রোজা নামাজ ফরজ কাজ, করলিনে রে মন, রোজ হাসরে পুলসিরাতে পার হতে হবে মন । পাগলা কানাই ভাবে বলে, সেদিন থাকবেনা কোনজন ॥

(২০৮)

পাগলা কানাই বলে ভাইরে ভাই, এক মজার কথা বলে গিয়েছে । কথা ভুলি নাই মনে আছে, ভগবতী যজ্ঞ করেছে । সেই যজ্ঞ করে, তে-তাড়ার হাড় খুলেছে, নিন গড়েছে । মহাদেব রাগী হয়ে সাপের ফণা ধরে, সারথী গড়েছে ।

আর কালী তখন ভাবে মনে মন, আমি ভাবে করি কি এখন । মহিষ হাতে পায় যখন, শিংয়ে পায় তখন; শিংয়ে পায়ে হাতুর গড়ে, টান দিয়ে ফেলে দিয়েছে। বিষ-করম- সাড়াশী লয়ে, নিনির উপর থুয়ে ত্রি-শুল গড়েছে । আয় বড়তে সন্তান যে হল, কথা ভারতে প্রমাণ রইল। ইদু বিশ্বাস প্রশ্ন করে গেল। বিয়ে নাই হতি, কুস্তি দেবী যমুনায় নেমেছিল । সূর্যদেব দেখে তারে, নামায় ভূ-মণ্ডলে; ওরে কর্ণ দেবের জন্ম সেই দিল ॥

(প্রশ্ন পদ নম্বরঃ-৭৪৫, ইদু বিশ্বাস)

(২০৯)

ঐ বয়াতির কথা শুনে, কানাইর মাথা উঠলো জ্বলে। মাথা ঠাণ্ডা করব বলে, সভার মাঝে এসছে। সভার মাঝে বসে রয়েছে। উমটা নারীর ঘোমটা ফেলে, তা দেখে আমার শরীর যায় জ্বলে। আমিতো তো জারো নাইরে, জারো বলে আর গাল দিসনেরে । জারো হচ্ছে তোদের বাবা, নারীর পার দিতেছে সেবা । ঐ বয়াতির কাছে যেয়ে কুশল সংবাদ শুনতে চাচ্ছে। কুশল সংবাদ ভাল না আছে। তোর জমির জ্বর হয়েছে। আবার আমার কাছে বলে দিয়েছে, যেন আমার মিয়া ভাই। আসে 1

(২১০)

আমি আইলাম এই সভায়, ঠেকলাম বিষম দায়; সালাম রাখি দশের পায় । ওরে সভার যে জন গুনীন থাকো, সাকরেদ বলে রাখবেন পায় । শোনরে দোহার ভাই, মনের বাসনা তায়; যদি ভাল বিচার পাই ॥ তুমি শোন সমাচার, পেটে নোংগর কার; অষ্ট হাত ছিল কার ।

নাক দিয়ে খায়, ভেবে হলাম চমৎকার । নাড়ি ভুড়ি রাজ্য ছাড়া; দেও ভাই হিসাব করে, চার নেংগুর তার পিষ্ঠের পারে, চলে উদ্দো হয়ে ॥ অধম পাগল কানাই, বলে যায় সভায়; কোন জাগাতে জন্ম তার । কি পানি করে আহার। রাত্র দিবস ঘুরে বেড়ায়, পালাম না জন্তুর তলাশ ॥

(২১১)

চালাও রে মানবের গাড়ি সোনার মদিনায়। ও গাড়ির নাইরে স্টেশন, ইচ্ছামত চালাও গাড়ি, যেথায় যাইরে মন। ঐ আবার ফাস্ কিলাসে টিকিট কাটে, ধনী মানী চলে যায় ॥ গাড়ির দুই পাশে দুই চাকা দেখ, হাসান হোসেন রয় । ইন্‌জিন হয় সে হয়রত আলী, মাঝখানে রয় ফাতেমায়। এমন সুন্দর গাড়ি আমার, পাগলা কানাই বসে কল ঘুরায়

(২১২)

তবের পারে এক ঘর বান্দেছে, দেখলাম চমৎকার; আঠারো মোকাম আছে, ঠিক যেন ঘরের মাঝার । আঠারোটা মোকামের মধ্যে, কে থাকে কোন জাগায়, কি নাম তাহার। বলবা তুমি সভার মাঝে, এ কথা শুনবে লোকে, বাহবা দেবে তোমার সেই যে ঘরের চামের ছাউনি, পাগলা কানাই তায় কয়। বল দেখি ।

বয়াতি ভাই, ঘরের মটকা মারা কোন জাগায়। ঘরের তীর খাটানো কোন জাগাতে, বায়তুন্নার ঘর কোন জাগায়। ঘরের ছাঞ্চে কোন জাগায়। বলবা তুমি। সভার মাঝে, এ কথা শুনবে লোকে, বেশ বেশ বলবে লোকে ।

(২১৩)

পাগলা কানাই বলে রাই কিশোরী, তুমি মিছে কর ছলনা। যখন পায় ধরে সাধেছিলে, তখন কথা বললে না। মান করলে দুর্জয় ভারী, মান লয়ে বসে থাকো। না। তখনে বললাম তোর, বিনোদনী ধনি, তুমি যে ঠেকার করো না । তুইলো ধনি রাজার মেয়ে, থাকিস বড় কঠিন হয়ে; এখন কানতে কানতে নাগর গেল, নাগরকে দেখলিনা চায়ে । সদাই যাও বিন্দে দ্যুতি, বলে রাই কিশোরী, বন্ধুকে আনে দেও যায়ে।

তোর কথা শুনলে পরে, তে-রাত করে, ও ধনি, নাগর আনব কেমন করে ॥ মান করে রইলি বসে, চিনলি না পরশ কি সোনা । পুরুষ পরশ অমূল্য ধন, সে ধন তুমি চিনলে না। যৌবনের গোমর কর, ঢলে পড়, ঠেকারে কথা বলনা। যৌবন ফুরায়ে গেলি, ভাংবে কলি, ও ধনি, তখন তোমার কেউ ছোবে না ।

(২১৪)

কাসেদ বলে কাতর হালে, ধর পত্র হানিফা, ওরে না ধরিলে আমার প্রাণতো বাঁচে না । আমি ছয়মাস হেঁটেছি, না খেয়েছি, পেয়েছি যন্ত্রণা। আছে জয়নাল আলীর খৎ, মদিনার সংবাদ, পড়ে তো দেখনা । হানেফ যায়ে দেখনা । জয়নাল আলী আছে কারাগারে, তারে উদ্ধার কর না ॥ আবার দামেস্ক শহরে এজিদ নতুন রাজা হয়েছে। ওরে জয়নাল আলীর কারাবদ্ধ রাখেছে ও যে ময়মুনা বুড়ি কুটনি হয়েছে ।

জহরতো দিয়েছে, বড় এমামকে মেরেছে। ছোট এমাম ছিল, কারবালায় মরিল । পানি না পেয়েছে, জীবন বদ্ধ রয়েছে ॥ এ সকল দুঃখের কথা বলবো আমি কার কাছে । বলতে গেলে দেহ ফাটে যাইতেছে । ওরে ফোরাত নদী ছিল, জাল দিয়ে ঘিরিল, পানি না পায়েছে, জীবন দগ্ধ হয়েছে |

(২১৫)

আজব এক রথ গড়েছে দীননাথ সুতোর, কত বৃক্ষ আদি তরুলতা সেই রথের উপর । আবার সারথী এর মধ্যে বসে, বলে চাকা ঘোর । বিনা ল্যাগামে চলছে। রথ, চাকার এইছা জোর ॥ ও রথ গড়েছে ভাল, ভাবতে ভাবতে দিন গেল; শেষ কালেতে রথ ভাঙ্গিবে, তালি দিতে পারবো না ।

দেশী সুতোর দেশী কাষ্টে কাজ হবে না । ও সে রথ চলবে না ॥ পাগলা কানাই বলে, রথ খানি হলো বাকা, নতুন রথে চড়েছি ভাই, জোরে চলতো চাকা । পুরানো হলি রথের জাট, হবেনা আর থাকা। সারথি পালাবে যখন, ঘোরবে না আর চাকা !

(২১৬)

শূন্যের পারে এক দিরাগ পয়দা দেখতে কি মজা, সেই দিরাগে বসত করে চার খোপে এক রাজা। মাসে মাসে ফুলটি ফোটে, কি আজব তামাশা । অমাবশ্যার জোয়ার আসে করছে টলমল, সামাল সামাল দিওরে মন পানির বাঁধাল । আসমানে সেই গাছের শিকড়, জমিনে তার ডাল ৪ বার মাসে বার ফুল ফোটে, সর্ব লোকে কয়; পুরুষের ফুল কোন দিবসে, কয়ে দেও আমায় । পাগলা কানাই বলে, কয় রোজেতে ফুলের গঠন হয়

(২১৭)

এক গাছ গড়েছে দীননাথ মিস্ত্রি, চার ডালে তার কুড়ি পাতা, দেখতে কি বাহার। গড়ে সুতোর আপন মনে, কানাই কি তার সন্ধান জানে, সে যে বিনা বোঁটায় জোড়া ॥ দিয়ে জোড়া করে পোক্ত, দিনে দিনে হল শক্ত; অষ্ট মাসে অষ্ট কড়ি, নব মাসে নব সংযোজন । দশ মাসে পূর্ণ হয়ে ভবে হয় পত্তন ॥ (অসমাপ্ত)

(২১৮)

গোল করো না ভাই সকলরা, পাগলা কানাই বলে; অনেক দিনের পরে পাইছি বয়াতি, পড়েছো আজ কলে । মনের সাধ মিটিয়ে নেব রে-বিটা ধুবি গংগা জলে । কাল নিশিন্দের আকর তুলে, অনুপানের মতো; আনবো এবার তুলেরে সব কচুরি পানা যত; সব গুলো একসাথে করে রে দেব ইস্তেগত ॥ গল্প করে বেড়াও ও ভাই সোনামদ্দি, পাগলা কানাইর দেখরে সে, ক্যাচড় প্যাচড় বুদ্ধি । রোগ চিনেছি ওষুধ দেবরে চালাবো হলকমের মদ্দি ॥

(২১৯)

পাগলা কানাই কয় হায়রে হায়, দেখলাম এক আজব ঘটনা। পানির তলে এক দেবতা, এ কেউ চেনে কেউ চেনে না। তাজা মরা আহার করে খাচ্ছে সেই জনা। ও সে মার্গ দিয়ে বাহ্য করে, চলতে পারে না; সেই বাহ্য খাচ্ছে লোকে, কেউ ঘিন্না করে না ।

সর্বশরীর রে ভাই ঝরকা কাটা তার, রাত দিন সে আহার করে, পেট ভরে না তার ॥ আর একটা শকশো রে ভাই, দুটি শিং মাথার পার । নড়ে না তিন দেবতা, আছে রে সদায়, কোন দেবতা কি নাম তার, বল চান্দ সভায় 1. চড়ে না সে দেখতে ভয়ংকার যোগী সাধু হয়ে ভীতু ভাবছে নিরন্তর । পানির তলে

(২২০)

আমি কই দশের কাছে, মায়ের উদরে কন্যা পেটের ভিতরে। সেই যে কন্যার যে জন পতিরে তার মার হয়নি বিয়ে। সেই যে কণ্যার পতি কেবা হয়, বল এই রাজ আসরে। মরা পতিত হয়ে রয়, মরা কোনখানেতে রয়; এ কথা দলিল ছা বে দলিলে নাই। ও কথা পাগলা কানাই কয়, সত্য কি মিথ্যা রে ভাই, বল এই রাজসভায় ।

(২২১)

চৌদ্দ পোয়া ঘর বান্দেছে এক মজার সৃষ্টিধর, ছাদ দিয়েছে গোপনে তার। এর পাড়িতি দুইখান খুঁটি আছে, নাই কোন দুয়ার যে জন সেই ঘরামী, সংগে থাকে রাত্র দিনি; আজব কর্মিকার । আবার কখনও হয় জন্ম দাতা, কখনও হয় জননী । কখনও সে হয় মুর্শিদগুরু, ও সে হয় যে সর্বগুণী ॥ এসব আজব কথা, না খুজিলে পাবা কোথা; ওরে বিনা সুতোয় ঘর বান্দেছে, চার আটনে ছাঁটা। পাগলা কানাই ভাবছে বসে বসে, এসব আজব কথা ।

(২২২)

বাওহা এক ঘর বান্দেছে ভবের পার, মাটি ছাড়া পাড়েম তার, ঘরেতে ব্যক্তি বহুতার । ওরে দুই খুঁটি পরিপাটি, তাঁর খাটানো কর্মিকার। যেদিন আসবে ঝটকা উড়বে মটকা, ওরে উঠবে না আর ভবের পার ।

ষোলজন বসত করে সেই যে ঘরে, কেউ কারো না বিশ্বাস করে; ঘরের মাল নেচ্ছে চোরে। আবার সামনে থানা, যাবে জানা, তুমি যেদিন পড়বা ফেরে। বিচার হবে লাটের হাতে, কি জবাব দিবা তারে । আবার ছয় চোরা যুক্তি ক’রে, মাল দরজায় সিন দেছে। এক যে বিটা ভারী ঠ্যাটা, ও মাল বাইরে ঢালতেছে। ও চোর ধরবো বলে বাতি জ্বালে, পাগলা কানাই পাহারা দিতেছে ৷

(২২৩)

পাগলা কানাই বলে ও মন চাষা, তোর বুদ্ধি হলো সর্বনাশা; এই মানব জমি আবাদ করলেনা, তাইতো হলো দুঃখ দুদর্শা ॥ তুমি ধান না বুনে বুনলে চিনে, সারা বছর খাবি কিনে, নাই তোমার কোনই ভরসা । আবার ছয় বলদের মজমা ছাড়, মার সেই জমিনের বাকশা। আর ষোল পোয়া জমি খানি, আড়ে দিঘী নাই বেশী কমি, ওসে দেখতে বড় খাসা ॥ আর জমিনের দস্তি আছে বারোটা, তারা বাধায় ন্যাটা; আর আছে মদনা বেটা । পাগলা কানাই বলেরে, দিন থাকতে জমি আবাদ করলে না, ও ফসল ঘরে তুললে না

(২২৪)

শন্যির পার এক ফুল ফুটেছে, দেখে লোকেতে হাসে; শিকড় কাটলে গাছ মরে না, আজব রং মার হতাশে। ও তার সময় হলি, শোন বলি, ফুল ফোঁটে মাসে মাসে। দেখসে তোরা আঁখি মেলে, মইতনে নীর পড়িলে; বিধাতার এমনি লীলা, পানিতে ভাসে । মুর্শিদের চরণ কারে স্মরণ, পাগলা কানাই বলে; চার চীজে এক নিরাগ পয়দা, ফল ধরে ভিতরে। শুনেছি উব্দো তাহার মূল, শিকড়ে তার।

যুগ; ফুলটি রতন কি মইতন, আছে সব ঘরে ঘরে ॥ কত ফকির বৈঞ্চব মনি ঋষি, যোগ ধিয়ানে চিরকাল, সত্য-ত্রেতা-দাপর-কলি, চার যুগে পয়দা গাছের ভাল। হায়াত-মউত রেজেক-দৌলাত, ডাল ছাড়া বিধাতার কল; সাধনে মতি। ঝরে ভাইরে, ধরে দুই গাছে এক ফল ॥

(২২৫)

পাগলা কানাই বলে অন্ধকারে ধন্ধকার ময়। ও নিয়াকারে ডিম্বভরে আমারে আল্লাহতালা ভাসে যায় । আল্লাহর আগে এই দুনিয়াতে, কয়জন পয়দা হলো ভাই ॥ আর কয় কারেতে বেহেস্ত পয়দা, কয় কারেতে দোজক।

ওর কয় কারেতে পয়দা হলো, আলহামদু দুই দরুদ । কয় কারে ওর আসমান জমিন, কয় কারেতে রাত্র আর দিন ॥ মা মা বলে ডাকছে এসে, শোনেন শোনেন সায়েরজী । আর কোন মায়ের উদরে ছিলেন, বলেন গো সাঁইজী। আবার মার উদরে যোগ আসনে, নাম জপিলে কি। উদর ছেড়ে এই ভুমিস্তে পড়ে জন্মিয়ে দেখেছিলে কি ।

(২২৬)

দারুণ বিধি ভবের পার, বেন্দেছে এক কলের ঘর; বিরাজ করছে তাহার উপর । দুই ফকির এই ঘরের খুঁটি, তিনজন তার চড়নদার । আহার নাই নিদ্রাগত, আপন কাজে হয় বিরক্ত; আকার নাই দুর্জয় ফকির, ঠেকায় মাথা আসমানের পার ॥ দুই ফকির ভবে আসে, রাত দিবস বিরাজ করে, করে না ঘরের মমতা। আমরা যারা সেবা করি, সে থাকে অন্যবাড়ি।

পাগলা কানাই বলে ও ভাই সবে, সুখ-সাগর শুকিয়ে যাবে; রাখবি যদি দেহের ঘর, তবে দুই ফকিরের সাহায্য কর ॥ কখন রে ভাই চন্দ্র উদয়, কখন ওঠে জোছনা । বান্দার এই ধড়ে, কখন আন্দারী পড়ে, আন্দারীতে এসে নিন্দলী দেয় চোরে, যে বলিতে পারে, সে হবে দিনকানা ॥

(২২৭)

আর ঘরের কথা বলবো কিরে ভাই, ওরে দুই খুঁটির পার আর কত কাল রয় । ঘরের মধ্যে আছে মানুষ ছিচে ভিজে যায়। ঝড় আলি নড়ে চড়ে, শেষে দৌড় মারিরে ভাই । আর সেই যে ঘরে নয় দরজা, তিন পাটি বেড়া, সামনে উজালা । কাঞ্চন নগর বসে কানাই সে তো কথা শোনে না ॥ আর সমেশ খাঁ বান্দেছে ঘর, খুব কষে কষে। দিনে দিনে থাকির সে ঘর গেল থাকিতে মিশে |

(২২৮)

তুমি শোন বয়াতি ভাই, বড় আক্কেল দিলাম সভায়। যখন ছিলে মার উপরে, তুমি সিজদা দাও কোথায় । কোন দিক তোমার মাথা ছিলরে-কোন দিকেতে ছিল 1 অন্ধকারে পড়েছো নামাজ, তোমার কেবা শিক্ষা দেয়। আর নামাজ পড় রোজা কর, ও বয়াতি ভাই, জায়নামাজ রাখ কোন জাগায়। কোথায় রাখ মাথার উপা তাই বলো আমায়। অন্ধকারে ধন্ধ হয়ে রে, তুমি পড়েছো নামাজ সেই ঘরে।

কখন কোন ফেরেস্তা, তোমার সংগে নামাজ পড়ে আছে পঞ্চ অক্ত নামাজ, মুর্শিদ ধরে জানা চাই; কোন সময় কোন অক্ত হয় । ও কথা পাগলা কানাই কয়, তুমি কখন পড় ইয়াসিন সুরায়। তুমি কখন পড় আলহামদু দরুদ, অন্ধকারে পড়ছো নামাজ; তোমার কে শিক্ষা দেয় ॥

(২২৯)

কানাই বলে কলিকালে, বিয়ে দেয় ছোট ছেলে; তারা দেয় রংয়েরই বাহার। ও রং তিনদিন পর টলকে ওঠে, উপর দিয়ে ভাসে যায়, লোকে কত কয় । আর কি রংয়ের বাহার আছে ভাই ॥ তাল ধরে খেজুর গাছে, মরিবে হায় হায়-শ্বাশুড়ি বলে বউমা তুমি, কাজ কেন কর নাই।

ও বউ কাজ করে না, কাম করে না, মুখ পোড়ায়ে বসে রয়; খাবার বেলায় খায়। ও বউর প্রেম জ্বরে ধরেছে মাথা, আল্লাদে কয় নারে কথা, ঠেকারের জ্বালায় ঘরের বাহির হয়ে বলে, ও গো প্রাণের প্রাণ, তুমি কথা কওনা কেন । বউ লাট বিনে কি কথা কবে আর; স্বামী, তুমি গওনা দেওনা কেন। আমার গলা খালি, মাঞ্জা খালি, কানের ঝুমকো, নাকের মিনে খালি কেন

(২৩০)

আমার মানব জমিন আবাদ হল না, ও গো গুরু কি করি বল না। আমার জমিন যদি হতো আবাদ, জমিনে ফলতো সোনা। আধেক তার আবাদ হল, আধেক তার পতিত রইল; কি দিয়ে দেব আমি লাটেরই খাজনা ॥ আবার বোশেখ মাসে যো চড়ে গেল, ওর ডোলের ধান ডোলেতে রইল, আমার হালের গরু হয়ে হত, তারা হাল কৈ বৈল ।

আমি দিই হালে জুড়ে, অমনি তারা পড়ে শুয়ে, ন্যাজ নাতে আর মাথা ঘোরায়, কানাইর একি দায় হল । মংলা আর বুদো আড়ে, ওরা দুই জন বড়ই কুঁড়ে, ওরা প্রবোধ মানে না । আমি এত যতন করে রাখি, তবুও প্রবোধ মানে না। ন্যাজ নাড়ায় আর মাথা ঘোরায়, তারা কথা শোনে না।

(২৩১)

দেহ কেন্দে বলে ওরে লাল ময়না তোরে বিনয় করি, আমায় ছেড়ে যেওনা।। এমন রুপের খাঁচায় সোনার ময়না, বসত করিল না। আসবার কালে আইলাম আমি তোর সাথে; এখন আমায় ছেড়ে যাসনে পাখি, ধর্মরাজ পথে। ওরে তোমার আমার রংগ রসে, ছিলাম এই দুনিয়ায় । এখন আমার ছেড়ে যাসনে, ঘোর অন্ধকার দুনিয়ায় । আত্মা কেঁদে বলে ও ধড় ভাই, তুমি থাক থাক জিম্মী, আমি দরবারেতে যাই। এখন সাংগ হলো ভবের খেলা, ঐ দেখ ডুবে যায় বেলা এসেছে হুজুরী চিঠি, কানাইর থাকবার উপায় নাই ॥

(২৩২)

করে গগনের পার পর আড়াই পার বেলা, আমার বিধির কি খেলা। এমামের সামনে আলোরে, ও বুঝি জহরের পিয়ালা। এমাম ভাবে আকুল, করলেন কবুল; থাইলেন জহর । এমামের আঁখি হল ঘোর ।

ডাক দিয়ে এলাম বলেরে- ও বিবি, আমি দুশমন ছিলাম তোর ॥ জহর খাওয়ালে আমারে কি দোয় পা’য়ে, ও আমার দুনের দোশর হয়ে । হোসেন আলি, হোসেন আলি, কোথায় রইলি যায়ে । কাশেম ভালীর সংগে দিওরে, ও-দিও ছকিনার বিয়ে। পাগলা কানাই বলে, কি আছে মোর কপালে, ইমাম মরলো বিষের পিয়ালা খায়ে ॥

(২৩৩)

শোন শোন ভাই সকল, কয়ে যায় গোরা পাগল; ঐ পাগলের কথা শুনে, তোরা কেউ হসনে পাগল । বায়-পিত্ত-কফ তিনজনা, ওরাই আবার বাধিয়েছে গোল ॥ গিয়েছিলাম ভবের হাটে, কতি মোর বক্ষ ফাটে; আবার জ্যান্ত মরা দেখে আলাম, রয়েছে সে মরার প্যেটে।

কুম্ভিরে খাচ্ছে কাটে, নবদ্বীপের দক্ষিণ ঘাটে ॥ আমি পাইনা দেখা ও ভাই সকল, দেখতে পায় কে ? যার হয়েছে চক্ষুদান সেইতি দেখেছে । আছে সেই পাগল মেয়ে, ভবে তার হয়নি বিয়ে। আবার বাজো নারী এমনি সতী, সাড়ে আট গণ্ডা ছেলে; বল বল ও বয়াতি, সে ছেলে বাবা বলবে কারে।

(২৩৪)

আজব এক ফুল ফুটেছে ঘাটে, ফুলের সৌরভে আকুল হয়ে জগত মেতে ওঠে । যোগী যারা জপে তারা, বসে নদীর ঘাটে ॥ আর সেই ঘাটে লোনা পানি, আর কটা কুম্ভিরের ভয় আছে; জান পরাণ চমকে যে ওঠে। যেজন ভাল ডুবুরি হয়, ডুব দিয়ে তার মূল তুলে নেয়; জয় করে সে কুম্বিরের নিকটে। আজব ফুল ফুটেছে রে ঘাটে । ফুলের সন্ধান সে ভাল পেয়েছে, স্বরূপপুর নিহার দিয়ে মরে বেঁচেছে। তোরা খাসনে নদীর তটে। পাগলা কানাই বলে, আমার মুর্শিদ চান বসে আছে, ও পারের ঐ ঘাটে ॥

(২৩৫)

সন্ধাবেলা দেয়না বাতি, দুপুরের দেয় গোবর ছড়া, ঐ বউ আসল লক্ষ । স্বামী যখন মাঠে যায়, বউ তখন যায় গোয়াল পাড়ায়; ব্যবসা ঘোরা ফেরা, বউর ব্যবসা ঘোরা ফেরা। ঘোরা ফেরা করেরে বউ, নজর করে ভ্যাড়া রে ব নজর করে ত্যাড়া। স্বামী বাড়ি আসার সময় হইলে, শুকনো ধানে দেয় নাড়া ও বউ আসল লক্ষী ছাড়া নতুন বউয়ের এমনই গুন, শাকে রাঁধিতে দেয় বেশী নুন, কোথায় গেলি ছোঁড়া ।

নিজ স্বামীকে ঘরে থুয়ে, পরকে নিয়ে নাড়াচাড়া ওসে আসল লক্ষ্মী ছাড়া ॥ বউ যদি আমাদের হত, এসে দাদার খবর নিত; চিন্তা করতো কারা, ঐ বউর নিন্দা করতো কারা । পাগলা কানাই কয়, নয়নরে তুই যে কপাল পোড়া । তুই কান্দিস বউর লাইগা, বউ কান্দে ঐ কৃষ্ণ ছোঁড়া; ও বউ আসর লক্ষ্মী ছাড়া ॥

(২৩৬)

চলরে মন জুম্মায় চল, ইমাম তো আসিল; আজানও হলো। আজান শুনে পড় নামাজ দিবা রজনী। ইমাম তো মেয়ে, তার পিছনে যেয়ে সবাই নামাজ পড়তেছে ওরে মন পাজী, তুই যে বড় নামাজী; নামাজ পড়ে রইলি ভুলে, ভবে আসলি কি বলে।

আসা যাওয়া করে পাইলি দিনের ঐ হাওয়া, বেচে কিনে একেবারে সারলি ওরে মনভুলা ॥ তুই যে জুবানীর ছেলে, দুই রাকাত নামাজ পড়ে, পাতাইলি ধর্মেরও সুবাদ । তুই হইলি কুত্তার চেয়েও খারাপ । পাগলা কানাই বলে সামিয়ানার তলে, নেচে মরলো ঐ বয়াতির গাওনা শুনে

(২৩৭)

শোন মোমিন সিলামালেকম, আমি সালাম জানাই দশের কাছে, নিহার করে। শোনেন দশ জনায় । দোহায় তোর আল্লার আগে, দোহায় তোর মা বরকতের দোহায় তোর স্বরসতীরে, দোহায় তোর ওস্তাদের পায় ॥ এই সভাকারে ভাই, এক ছুঁয়োর মানে চাই; এই ধুয়োর মানে যে করবে, ওস্তাদ মানি তার।

দণ্ডে হয় লক্ষ ছেলে, কও কথা বিচার করে; পিছনে তিন ঠ্যাং আছেরে, চলে সে উদো হয়ে; সভাকারে ভাই, শুনি বুকি মাথা কার। ওসে মুখ দিয়ে খায় না, নাক দিয়ে গেলে; দেখে হলাম চমৎকার । হাতে যখন ঋতু আসরে, মস্তকে গর্ভ হয় তার ।

(২৩৮)

প্রথম আসরে আসে, ডাকতেছি আল্লাহ তোমারে । তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার, লেখেছে এই শাস্ত্রে। তাইতো আল্লাহ ডাকি তোমারে। তোমার নাম শুনেছি জগত পতি, তোমা বিনে নাই গতি, এই ভব সংসারে তুমি হলে সবের পিতা ও বিধাতা এই ভবের পার; যেদিন নেকী বদী হিসাব নেবে, সেইদিন হবে রোজ, হাসর। তাইতো রে ভাই হয়েছি কাতর।

কি জানি হয় পরকালে, কি আছে মোর কপালে, পাগলা কানাই বলে ও বিধি পরোয়ার । আর মা মারফত রাসুলের বিটি ভেঙের দাওনদার; রাসুল খোদার দোস্ত, দীনরেই কাণ্ডার। এই কয় কথা লেখা। আছে, কেতাবের মাঝারে। আদমকে দোস্ত বলে, পাঠালেন ভবের পার। যেদিন নেকী বদীর হিসাব নেবে, সেদিন হবে রোজ হাসর, কি আছে কানাইর কপালে, ও বিধি পরোয়ার ॥

(২৩৯)

দিন গেল খোদার বান্দা বসে ভাবলে হবে কি। নামাজ রোজা দীনের কাজ, দুনের কাজ ফাঁকি । ও মন তুমি বা কার আমি বা কার, চোখ বুজলে দেখ দুনে আঁধার। ও মন সরল প্রাণে কলমা তৈয়র, পড়রে আমার প্রাণ পাখি। সংসারে সকলই অসার গো- সার কেবল, আল্লার নাম ধরে ডাকি ॥ লা ইলাহা ইল্লালাহ, মুহাম্মাদুর রাসুল; তিলেক মাত্র এই কলেমা, না হয় যেন ভুল ।

চার কলেমা পড় জান্নাতবাসী হবা সুখে; ওরে আমার পরাণ বুলবুল । কত আইন বিধান হাদিস কোরান, কলেমা তৈয়ের সকলের মূল। চার কলেমা পুলসেরাতের আড়া গো দলিলায় খবর দেচ্ছে মালেকুল ! সেদিন আজরাঈল আসে বসবে, তোমার বুকের পার, জানটি লয়ে চলে যাবে। আল্লাজীর দরবার। খালি খাঁচা পড়ে রবে, সঙ্গে তোমার কেউ না যাবে; একলা যাবা গোরের মাঝার। ফেরেশতা আসিবে, সওয়াল পুছিবে, যখন তোমার। কি বলে তার জবাব দিবা, কানাই বলে ভোলা মন, দিন থাকিতে চিন্তা কর |

(২৪০)

আমি ঘরের উদ্দিশ জানিনে, ঘরে কয় গালি কয় মোকাম রয়েছে। আর কোন খানাতে বারামখানা, কোন থানাতে বয় হাওয়া; কোন থানাতে অগ্নি থাকে, সে ঘর কোন থানাতে আছে ॥ ঘরের ছাঞ্চের নিচেই বাতি জ্বলতেছে । হু হু শব্দে জ্বলছে বাতি, সদাই কেন টিপ মারতেছে। কেবা তাহার তেল যোগাচ্ছে, বয়াতি সাড়াশী বাটাল, দ্রব্য দেখি চার খানা। সত্যকরে বল বয়াতি আরে ওর গড়া কোন বল আমার কাছে ॥ আর তে-মাথার পার, একজন কর্মিকার, ওর নিন আর হাতুর, থানা

(২৪১)

কানাই বলে বিল শুকালো, মজা হলো মাছরাঙ্গা আর ধাাড়ে। টেকো বলে আমার মাথায় লাগলো কেন কাড়ে। দাদো বলে আমার গায়ে তেল চুয়ায়ে পড়ে। ন্যাংড়া যায় করে হল্লা, খোঁড়া দেয় দাড়িয়ে পান্না; কুঁজো বলে বিছানা পাইলে, শুইতাম চিৎ হয়ে ।

নল বিলি, হাড়ে দিয়ে সতী কলাইলো, ওসে সতী কলাইলো। কানা কয় মেঘ করেছে, দেখ ঐ বক উড়েছে; অন্ধ বলেরে আমার চোখে হিন্দেছে তুলো ॥ বুড়ো হলে মানুষের আপসে বায়ু সরে । নিজে পেদে আর একজনের দিল আচ্ছা করে। ঐ পাড়ার ঐ জমরে বুড়ো, এই পাড়ার এক ছমরে খুঁড়ো, দুই জনাতে বাঁধিয়ে পাল্লারে, ঘোড়ার পায় হিন্দেছে তুলো

(২৪২)

শোন শোন ভাই, পাগলা কানাই কয়, কি মজার ঘর পরওয়ার বান্দেছে । ও ঘরে চামের ছাউনি রয়েছে । ষোল জনা সেইযে ঘরে বন্দি রয়েছে। সুতোর বিটা না হলি, সেও কথা বল শুনি, কি ভাবে শূন্যের উপর খাড়া রয়েছে । সেই ঘরে ইমাম হোসেন, তারা দু’জন বিরাজ করছে। তার মোকাম মঞ্জিল কোন খানে, বল বয়াতি ভাই, এই সভার মাঝখানে তারা হয়ে আছে মায়ের কানের দুল । নানা রঙ্গে খেলে ঝুল । কিভাবে মায়ের কোলে তারা বসে রয়েছে।

(২৪৩)

পাগলা মন আমার, কারবা জন্য বানলাম বাড়িঘর । ছোট বেলায় করতাম খেলা, বান্দে ধুলোর ঘর । বাড়ি যাবার সময় হলি, ও ঘর ভাঙ্গে করতাম চুরমার। দালান বল কৌঠা বল, রবে সারি সারি; মন মনুরা ছাড়ে গেলে, শূন্য হবে বাড়িঘর সখের ঘর আর সুখের বাড়ি, ছেড়ে গেলাম এখন আমি, কেউ আমার হলো না। ঐ আবার থাকতে হবে কবর দেশে, একা একা নিরিবিলি ।

কিরামন কাতেবীন এসে জিজ্ঞাসা করবে, আমার হিসাব আমি দেব, কেন্দে কেন্দে তাই মরি ॥ পাগলা কানাই বলে দুঃখের কথা, আমার আছে হৃদয়ে গাঁথা। আমি কি করিতে কি করিলাম, সংসার এখন বুঝতে নারি। আমি সারা জগৎ ঘুরে মরি, কেউ দিলনা একটা নেকী

(২৪৪)

পাগলা কানাই বলে ও সখিরা, রোদন করে দাড়িয়ে সারি সারি; এই বাঁশি তুই কোথায় পালি । সত্য করে বলো, বাঁশীর জন্ম হয় কোথায় । কয়টা ছিদ্র তাতে রয়। তুমি সত্য করে বল কৃষ্ণ, কোন ছিদ্রে কোন নাম হয়। কোন ছিদ্রে কোন শব্দ বেরোয়, তায় বলো আমায় তুমি যখন থাকতে ধেনুর পালে, বসে বসে কি করতে। না কোন আশা দিয়ে ভরসা, গত নিশি ছিলে কোথায়। সেও কথাটি বলো না আমায় ।

তোমার ডান হাতেতে কি ছিল লেখা, কৃষ্ণ বলো না আমায় আমি স্বর্গ থেকে আইলাম কৌশল্যার বাড়ি। বিয়ে করলো ঘোষ আয়ানী আবার আইয়ানীকে কি জন্যেতে করিলে খোঁজা, সেও কথা শুনি । তুমি সত্য করে বলো। কৃষ্ণ, আমি তোমার কি বলে ডাকি ।

(২৪৫)

এর ছাড়িয়া পাখি পালাইবে যখন, আমার দেহ কান্দে বলিবে তখন। পাখি তোমায় সঙ্গে প্রেম রঙ্গে, অঙ্গে বসি যখন। এখন নেই সে সময়, এই অসময়, পাখিরে তুলে কোথায় করলি গমন ॥ জানিলামরে, নিষ্ঠুর পাখি, তোর দয়া মায়া নাই ।

আমি হাতে হাতে প্রমাণ তোর পাই । তুই নুন খায়ে গুণ গাইলিনারে, তোর মত নেমক হারাম নাই । কোথায় আছে সুহৃদ বন্ধু, আমি কার কাছে দাঁড়াই পাখি তোর সাথে কি আর দেখা হবে, মাবুদ আল্লাহ কি পার করিবে। রোজ হাসরে কেয়ামতে, নেকীরদী ওজন হবে। গোরের মধ্যে আল্লাজী মোর হিসাব নিকাশ নেবে। পাগলা কানাই ভাবে, একে একে হিসাব নেবে, ওরে ও রোজ হাসরে

(২৪৬)

আমি হয়ে বিন্দে তোমারে বলি, তুমি চল কত ফিকিরি। মথুরায় পায়ে কৃষ্ণের দেও গালাগালি । তুই ভাবে দেখরে কৃষ্ণ চন্দ্র, তোর মামী এক রমনী। পাগলা কানাই কয় চোখে হেলা বসন চোরা হে দেখো ঢ্যামনা চাতুরী ॥ তুই হরি দো- জাতের ছেলে, ও তোর একটা কথা যাইরে বলে; গোপীগনে পারে দিও পাটনী হয়ে। তারা পয়সা দিয়ে পার হয়ে বৃন্দাবনে যায় চলেরে যায় চলে । তোমার মামী চোরা দেখিরে, তাদের না দিও ছাড়ে।

তুমি যখনেতে গিয়েছিলে নন্দলায়, তোমার পিতানন্দ, বাথানে রয়, ক্ষুদার জ্বালাতে তোমার ছাতি ফাটে যায় । ভান্ডার পোরা ছিল ননী, চুরি করে খাইলে তাইরে- তুমি খাইলে তাই। সেই কারণে মা যশোদা তোমার বান্দে নিয়ে যায় ॥

(২৪৭)

ওরে ও বিন্দে তোরে বলতেছি, ওরে বড় কষ্ট করে মথুরায় আইছি । এখন বিন্দে আমায় দেও কটুগালি । তাই কুটুনী বিন্দের কুটনী কথা, শুনে মর্মে লাগে ব্যথা; এই কথা তোমায় জিজ্ঞাসী । ওরে মরুক রাধে মরুক বিন্দে তোমার চুলকোয় কোন জাগায় । কামড়ে আইছো মথুরায়। ও তাই নাভীর নিচে শুড় শুড় করে, টিকতে না পার ঘরে; তে-কোনায় চেপ্টা জিলিক দেয় । আরে ও রোগ আমি চিনেছি, শিশি ভরা ওষুদ আছে, নামে ডাক্তার মদন হরি ।

প’ড়ো রুগী চিকিৎসা করি। তার এক ফোটার দাম লক্ষ টাকা, তোদের দেবো মাংনা মাংনা; উচো করো ডানা, সুই ফুটিয়ে মরি ॥ পাগলা কানাই ভেবে কয়, নারী জাতীর স্বভাব ভাল নয়, ওরা ঘরে রইতে পারে না। কামড়ে আইলো মথুরাই। তোর সারা শরীর শুড় গুড় করে, ঠিকতে না পারো ঘরে; মাথার মদ্দি চিড়িক মা’রে যায় ।

(২৪৮)

শোন বিন্দে বলি তোরে, কথা কোস সাবে সুরে । রাধে আমার মামা নয়রে একথা তুই পালি কনে। কানাই কয় যারে ফিরে, উঠগে ঘরে, ওষুধ দেব গোপনে। মামা যখন বিয়ে করতে যায়, আমার তখন সাথে লইয়া যায়। মামা যায়ে বসলো আগে, আমি বসলাম মামার বায়।

বিয়ের যত মন্ত্রগুলো, একে একে পড়লাম সমুদায় বিয়ে পড়ানো হয়ে গেল, রাধে সাত পাক দিল, মামার সাথে পাক দিলাম আবার । ফুলের মালা হাতে নিয়ে, ও রাধা আমার গলায় দিয়ে দেয় । লোকজন উঠলো লাফ মারিয়া ছি! ছি! লজ্জার বিষয় । এই দেখিয়া মৈথুন ঠাকুর বলে, এখন কি করবো আমি, ও রাধে কার কাছে যায় । ঠাকুর বলে রাধে আইয়ানের স্ত্রী হয় । বলি আমি সভার মাঝে, একথা ভুল নাহি হয়॥

(২৪৯)

পাগলা কানাই কয় হাইরে হায় ভালো গানের জবাব দিয়েছ। পোলুয়া খানা ত্যাজ্য করে, ডাল্লাতে মন দিয়েছ । সোনা রূপা বাকসয় পুরে, তামার গহনা গায়ে পরেছ ॥ ভাল ঘোল খালি ইদরাম খুঁড়ো, ঘোষ মশায় বসে রয়েছে। কড়ি দেবে মাধব বুড়ো । সেধোয় মার মুরগী চুরি, মাথা নাড়ায় সীতাই বুড়ি ॥ ভাল, ধীরেন কামার মরেছে, গয়েশ পুরের হরিল্যা কাজী, কলমা খতম জুড়েছে । খানা খাইলেন নরেন বাগদী, বয়াতি বিটা খিলেন করতেছে ।

(২৫০)

বাহা এক ঘর বেন্দেছে দেখ তোরা, ঘর বান্দিয়া বসত, ছানচের নিচে দিয়ে চালা । চার পোতায় ঘর খানি, তিন পোতা রয়েছে খালি । তাইতে তোর উঠান। হয়ে গেল চুরি ॥ দারোয়ানের দেখে শুনে লাগলো ভয়, পাগলা কয় শীত লেগে। জল হইলো গরম ।

জলে ফলে এক সাথ হয়ে জুড়ে দিয়েছে আগুনের কল করেতে ব্রহ্মা জলে, গঙ্গার মূল নাভীস্থলে, এ কথা পাগলা কানাই কয় । হাওয়াতে উঠছে আওয়াজ দেখ তারা ॥ মুখ দিয়ে যখন পানি খাওয়া হয়, কলিজা তার শুকিয়ে যায় । জিহবাতে তার রস থাকে না । আগুনের কলে পড়ে গেলে, পানি ঠাণ্ডা হয়ে যায় । হজম ক’রে পানি নল দিয়ে বের হয় |

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৩

 

(২৫১)

আরব দেশে মানুষ বেশে, এলে একজনা । যার পরশে লোহা ঘষলে হয়ে যা সোনা আরব দেশে মক্কার ঘর, দরজা খুলে তওবা কর; হেরমা খুলে চুে দিলে, মাফ হবে গোনা। যমযম কূপের পানি চোখে দেখছে না ॥ মত গোনাগার দল বাধিয়া চল, আরব সাগড় পাড়ি দিতে দেরী করো না। তেরো মঞ্জিল পাড়ি। দিলে পাইবা মদিনা | পাগলা কানাই ভেবে বলে, নবী উম্মতি উম্মতি বলে, হলেন দেওয়ানা । না বুঝিয়ে দুঃখ দিলে, ও কফের কামিনা ।

(২৫২)

আদম হতে হাওয়া পয়দা, করেছেন মালেক সাঁই । ও দশের চরণে একখান গান গেয়ে যাই। সবে বলে পাগলা কানাইর জ্ঞান বুদ্ধি নাই । মক্কার মসজিদ ঘর কে তৈয়ার করে, ও বয়াতি মিস্ত্রির নামটি জানতে চাই | আদমকে বেহেস্ত রেখে গন্ধম খাওয়ায়ালো, আদম ফের ভবে আলো; কোথায় পাইলো লাংগল জোয়াল, কামার কে ছিল। বলদ হয়ে কে লাংগল টানে, বয়াতি তার মানে বলো কোরানেতে আছে জানা, জিন্দা চার জনা।

দুনিয়া হবে আখেরে ফানা, ও ভাই কৃ-কার্য করোনা, কৃ-কার্য করলে পরে গোনা লিখবে রব্বানা; হাকিম তার কারণ শুনবেনা । একজনের বুকে পিঠে কুজ, দেখতে ভয়ংকার; দু-খানা পাখা ছিল তার। খোদার সাথে বলতো কথা, হাজার হাজার । আপন হস্তে দস্তখত করে, খোদার ঐ আরোশের উপর

(২৫৩)

আছে চার লতিফার মানে, তা জানে কাদের গণী; ডিম্বুরূপে বসত করে ফাতেমা জননী। মুর্শিদের মুখে শুনি, মস্তকেতে আলীর জন্মরে, দেখতে তার স্বামী ॥ পাখির এমনি একটি ধারা, পাগলা মন বুঝলি না তোরা; পুত্রশোকে ইমাম হোসেন যারা, বাতুনে আছেন তারা; পাগলা কানাই কয়, গানের মানে কি সওয়াল সারা।

(২৫৪)

আর দেহের মসজিদখানা, আগে ঠিক কর মনা, আছে মক্কা মদিনা । খুঁজে দেখ ভাই, তাকে তালাশ করা, দেল খাঁটি চাই ॥ আছে পানির নিচে মোমের বাতি, জলতেছে দিবারাতি, ঝড় তুফানে বাতি কভু নেভে নাই ॥ বলছে পাগলা কানাই চান, উপরে হাওয়া নিচেই পানি, মাঝে আগুনের খনি; আগ্নি কুণ্ডে জ্বলছে বাতি, দেহের তলায় ॥

(২৫৫)

কাশেম কয় প্রভাত কালেতে, সখিনা ডাকছি তোমারে; ওরে রণ খোলাতে বাজলো কাড়া, আজ আমি ঘরে রই কেমনে । সখিনা কথা কও নিদ্রা যাও, নিদ্রা ভেঙ্গে চক্ষু মেলে চাও একবার উঠে কথা কও, দেখে মনের সাধ মিটাও।

আমি যাই জনমের মত, সখিনা বিদায় দাও আমায় । চেতন পাইয়া চেখে দেখে, ঘরে বাতি নাই তখন; হায় আল্লাহ কি করিলে। সোনার বাসর ভাঙ্গিয়া পতি বিনা -আমার জীবন, আল্লাহ বিফলে নিলে । পাগলা কানাই তাই বলে, সখিনা কেন্দে কি হবে: ওরে তোমার কপালে লেখেছে বিধি, সখিনা খণ্ডন না যাবে ।

(২৫৬)

কি মজায় রথ গড়েছে সৃষ্টিধর সুতোর, তাঁর ব্রহ্মান্ডে এক মুড়ো, গগনে তার চুড়ো ধন্য সেই কামিলকার নয় দরজা দেখতে মজা, চলতেছে দুই চাকার পার; আচ্ছা মজার গুণোমনি, নাম শুনি তার সৃষ্টিধর ॥ রয়েছে রথের আঠারো বিংশতি ফল, সামনে গড়া মনকল, টানতেছে মহাবল কাছি। ষোল সখি সঙ্গে তিন ঠাকুরের নাচানাচি। হাউসে মরি, খুরি ফিরি, মাঝে মধ্যে আমিও নাচি।

আমি দেখে শুনে ভেবে গুনে, সাধপুরাই যতদিন বাঁচি; যাহোক রথে বেশ বাহারে আছি ॥ ধন্য সুতোর জগতময়, এই দুনিয়ায় রথ গড়ে সে; তারে কি কেহ দেখতে পায়। তারে ধরতে গেলে দেয় না ধরা, তাই পাগলা কানই কয় । কত ফকির বোষ্টম মনি গোসাই, পড়ে আছে রথ খোলায় । এদিক ওদিক হাতড়ে ফেরে, পড়ে ঘোলায় । কেহ হাবুডুবু খায়ে, তরাসে পালায় ॥

(২৫৭)

জীর্ণ তরী মোর আরে বাইতে পারলাম না। এ তরী মোর বইতে ভারী, ভাটায় আর উজায় না ॥ অমূল্য মাল বোঝায় তাতে, বাতি জ্বলছে নদীর মাঝে, ও মন মাঝি তার হাইল ধরিয়া, ভবসিন্ধু দেবে পাড়ি। তরীর মাঝে আছে, পাক কোরানটি আছে গাঁথা, পাক পাঞ্চাতন সঙ্গে নিয়ে ভবনদী পার হওয়া যায় ॥ অধম কানাই ভেবে বলে দেহের আঠারো মোকাম গড়ে; তার বান্দ সুতো ধরে, তরী খানি গড়েছেন সাঁই ॥

(২৫৮)

তোমরা দুইজনে বসে কোন আশে, হিন্দু লোকের মরা মরিলে, হস্তে তুলে নেয় চিতার খাটে । আগে করে অগ্নিকার্য, পাছে দেয় জলের ছিটে ॥ মোছলমানের মৃত্যু হলে, খাট পালঙ্গে নেয় কবরে; এক কবরে তিনটি ছেলে, হলো বুঝি তারে মরার যখন মাংস পচে, কত লোকে দেখে ঘৃণা করে, সাধু আর রসিক যারা, হাত বাড়ায়ে তুলে নেয় কোলে ॥ পাগলা কানাই তাই ভেবে বলে, আমি মৃত্যুর কোন পাইনে মানো । ঐ কবরে তিনটি ছেলে, কেমন করে হয় জনম, এই ছেলের পিতার নামটি কি, ওরে সে মা বলবে কারে ॥

(২৫৯)

তুমি কম্পাস ধরে জমির জরিপ কর। কতখানি অতীত আছে, পতিত কোথায় রয়েছে; কত খানি আছে জলাকর। দেহের ষোল জাগায় চর পড়েছে, স্রোত বছে কোন জাগায়। কোন জাগায় উঠতি আছে, চলতেছে কারবার । পূর্ব উত্তর দক্ষিণ কোণে, তিনকোণে এক পাখি আছে।

সে পাখির নাই পাখা, ঠোঁট নাই আহার করে, ঠ্যাং নাই দৌড়ে ফেরে; দেখরে মন হিসাব করে, কিবা চমৎকার ॥ পাগলা কানাই বলে, সে পাখি কি করে আহার। কোথায় বসত তাহার, ভেবে পাইনে দিশে। সে পাখি কি নাম ধরে, বলনা আমার

(২৬০)

দেখ দেখ প্রেম নদীতে ভাসছে ফুল, সে ফুল যথা আছে, তথা নাই তার মূল; কত সাধু ধরবো বলে যায় নদীর কূল। আমি ভাঙ্গি যদি ফুলের বোটা, সাধুকুলে হবো খোঁটা; একোন ন্যাটা, হারায় তাহার মূল। সে ফুলে আছে মধু দিয়ে শুধু জাররা বিন্দু। ফুলের সৌরভে মন ভেমরা হয় আকুল ॥ ফুলে ফলে মধু যেদিন অংকুর হয়, গুণ গুণ শব্দে ভ্রমর অলি আসে যায়। সকল ফুলে ফল ধরে না, পাগলা কানাই কয় ।

ফুলের চতুর্দিকে সাড়ে চব্বিশ চাঁদ, বাহা কি শোভা পায় । অধর চাঁদ ধয়বো বলে, সুধা বলে গরল খায় । কেউ বা ফুল তুলবো বলে, নেবে জলে হাবুডুবু খায় ॥ নদীর কুলে অজগর ফনি ধরে রয়, গুরু শিষ্য প্রেম নদীর ঘটে, হুস হারিয়ে বেহুস হয় । কোন ফুলে ছেলে জন্ম, কোন ফুলে মেয়ে । চব্বিশ চাদ রয়েছে চতুরপাশে, বিষ খেয়ে মাতোয়ারা হয়ে, নেবে জলে ষোল আনা হারায়

(২৬১)

দেখ সবে ভেবে গুণে এই ভুবনে, মিথ্যা যাও আসা সার; আমরা মিথ্যা করি হাট বাজার, মিথ্যা এ ধন যৌবন আমার। আমার প্রাণের পাখি যেদিন উড়ে যাবে, খালি খাঁচা পড়ে রবে, সঙ্গে তোমার কেউ যাবে না ॥ কোথায় রবে টাকা কড়ি, কোথায় রবে দালান বাড়ি; সবই হবে অন্ধকার, সেদিন ঘুচে যাবে মনের অহংকার ।

দেখ ভাই রোজা নামাজ, আকবতের কাজ; যে জনা হতে পার, মরার আগেতে মর, চার কলেমা জপতে ঈমান দরুদ পড় ॥ আমি শুনেছি আলেমের কাছে, আত্তাহিয়্যাতু পড় পাছে; দুই দিকে সালাম ফিরাও। রোজ হাশরে পয়গম্বরে, পার করিবে হীরার ধার । নিষ্ঠা হয়ে মুর্শিদের চরণ ধর, আগে তওবা করে পরে মোনাজাত কর।

(২৬২)

পাগলা কানাই কয় ওহে পরওয়ার, তোমার বিনে আর গতি নাই; তোমার নামের কারণে ঘুরিয়া বেড়াই। আল্লাহ তোমার নামের এত বরকত, কোরানে তাহা শরীর আমার দক্ষ হয়ে যায়। এক ঘাটে পুরুষ জলে নেমেছিল, সে ডুব দিয়া শুনতে পাই । দুই হাতে দুই খুনজুরী বাড়োই; ভাবনা কি আর ওহে প্রাণ খোদা, কন্যা হলো, সওদাগরে ধরে নিল; বারোটি বছরকালে তিনটি সন্তান হলো, ঘুরে ঘুরে সেই ঘাটে আলো ।

সেই না ঘাটে স্নান করিয়ে কন্যা পুরুষ হইল । সে পুরুষ হয়ে বাড়ি চলে যায়, তার মন বলছে হায় হায়, কি হইল রে আমায় । আমি পুরুষ হয়ে নামলাম জলে, কন্যা উঠলাম পানসী নায়। বার বৎসর খাইলেম বাণিজ্যের সদায় । কোনখানে কোন ওস্তাদ আছে গো, গানের জবাব দাও আমার ।

(২৬৩)

পিরিত পিরিত পিরিত কেমন জন, পিরিত তুই চিনলি নারে মন । নারীর প্রেমে মত্ত হয়ে, হারালি অমূল্য ধন । ভেবে দেখরে মন, প্রেমের চাবি হাতে করে, বসে মালিক মহাজন ॥ পিরিতের আলোতে জগৎ উজালা, পিরিত জানেন মহাজন কালা; আমি মূর্খ মতি সে পিরিতি, বুঝতে নারী সীমা তার । তাই ভবে এসে তাঁর চরণ করি সার, ভব দরিয়ায় তিনি হইবেন কাণ্ডার । পাগলা কানাই কয়, তত্ত্ব লও আমার এই কথার |

(২৬৪)

প্রেম গাছে বাহ মজার ফুল, তার মাঝে ধরে ফল খায় না সে ফল, দেখতে সুরোত লাল, বার মাসে রঙ্গের গাছে, এক ফুল ধরে বারমাস। যেদিন বোঁটা খোলে, ফল ভূমিস্থলে উদয়। যেন অন্ধকার ঘরে প্রসব হয়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন পাওয়া যায়। কত জন ধ্যানে ভেঙ্গে ঘুরছে ফলের আশায় ॥ পাগলা কানাই কয়, সাধু ফল পাওয়ার আশাতে, বসে আছে গাছ তলাতে; কত যোগী ঋষির ধ্যান ভেঙ্গে যায়, ঐ ফুলের আশে । ঘোরে ফুলের বাসে, ঐ না গাছ চলে, খোদা চাঁদ মেলা করেছে ॥

(২৬৫)

ভেবে দুরন্ত কথা প্রাণতো বাঁচে না, এসব বিধির ঘটনা । এমন অমূল্য গাছ কেউ চেনে না, ফল ধরে কাঁচা সোনা । গাছের মধ্যে অগোম দরে, ডালে তার ফল তো ধরে না । ঠিক জানে সে গাছ একা, ফল ধরে তোর ডাল ব্যাকা; ফল ভাবে চলতে পারে, যদি থাকে স্ব-কর্মের লেখা ॥ এক গাছে অংকুর হয়ে, দুই গাছের খেলা, যাতে খুশী মন ভোলা । আবার ভাটা এলে সরে পড়ে, শিকড়ের নিচে বীজের গোলা ।

ভাই সকলের নীলদরের লাল তুফান এসে, উদরপুর মোহর যায় এঁটে। কি মজার দমদমির খাল, ভাসছে জোয়ারে । গাছের বীজ বাহির করে, আবার ভাটা এলে সরে পড়ে; ভাসে জোয়ারে ॥

(২৬৬)

শোন সর্বজন, বলি বিবরণ, শোন ফুলেরই কথা; ফুলের মর্ম জানেন বিধাতা । লাল জরদ সিয়া সফেদ, সে ফুল ভাসে সরোবরে। দীনকানা পায় না তার সন্ধান, ফোটে কলি, কোথায় ভেমর অলি; এখন ভুলে রয়েছে কোথায় । খোদার ছোট মনীর বড় ফুল, গুরু কুলে ব্ৰহ্মাতুষ্টি মোকাম ফুলে হয় রাসুল । সেই গাছের মধ্যে ধরে ফুল, বিধি যারে দিয়েছে ফল, দুই গাছে এক ধরে ফল; ঠিক করে দেখরে নামাকুল।

অরসিক যারা, সাধন করে তারা, এখন খুঁজে পাইনা গাছের মূল যোগীন্দ্র মহন্ত আদি, ফুলের চতুক পাশে, সে ফুল ব্রহ্মান্ডলে, ধরবো বলে, আশায় করে কত সাধু বেড়ায় ঘুরে, ঐ সরোবরের কুলে। পাগলা কানাই কয় ওরে দিনকানা- সে ফুল ধরবি কেমন করে ।

(২৬৭)

শোন ভাই নাট মন্দির এক ঘরের নাম, ঘরের আট কুঠরি নয় দরজা, আঠারো মোকাম। এই চামের ছাউনি ঘরও জানি, কি ঘরামির নাম । সে ঘরে রাত্রদিনে বাজ পড়ে না, মন মানুষ করে আরাম । দিন থাকতে হওরে চেতন, সার কর ঘরামির নাম ॥ সাধের ঘর এমন কি নতুন আছে, কানাই তাই, রাত্রদিন ভাবতেছে। ঘরের মধ্যে অমূল্য মাল, বোঝায় তাতে আছে।

যেদিন ছিঁড়বে না। কাজলের দড়ি, মক্কাতে ঘর ঠিক আছে। আমি আশার আশে রইলাম বসে, না গেলাম ঘরামির কাছে ॥ পাগলা কানাই বলছে ওহে রব্বানা, ঘরের মধ্যে জ্বলছে বাতি, আজব কারখানা । ঝড় আসবে বৃষ্টি পড়বে, ঐ বাতিটা নিভবে না । ঘরের বাতি নিভলে পরে, মন মানুষ ঘরে রবে না

(২৬৮)

শোন ভাই সবে, আলগা কথা বাইন্দা এই ভবে; আল্লাহ তালা করছে হুকুম, আদম হাওয়া বানাইতে । বানাও আদম লবে খোদার নাম, তাতে নেকী আছে, ও তা ফেরেস্তা না করে ॥ শোনেন ভাই আল্লাহর কি কীর্তি, আল্লাহ তায়ালা পাঠাইয়া দিছে এই নীতি, মাটি এনে বানাও আদম; তাতে তোমার ক্ষতি কি ।

পাগলা কানাই কয়, এসে চান সভায় ॥ গানের জব কর ভাই বয়াতি, শেনা ভাই বয়াতির বাছা, শাস্ত্ৰ মত চাঁদ সভাতে জবাব দিয়ে যাও। আদম হাওয়ার সৃষ্টি করে, রেখেছিল কোন জাগায় । এ গানের জবাব কথার মানে বলে যাও ॥

(২৬৯)

শুনি এক রুপের কোঠা, সাড়ে নয় দরজা আটা, ও তার সিন দরজা দেখতে মজা, চৌকোঠায় এক রূপের ছটা, সে ঘর দেখতে মজা, সপ্ততলা আয়না আটার শুনি কোঠার মধ্যে তিন বিটি বসে আছে, আমি শুনতে পাই মুর্শিদের কাছে; তিন গর্ভে হয় একটি ছেলে। সে ছেলে বল মোরে, বাবা বলে ডাকবে কারে । যে জানে সাধু তত্ত্ব, সেই ভাবে সাধুর অর্থ, আমি অতীত পতিত না জানি ভজন; না জনি সাধু তত্ত্ব। আমি পাগলা কানাই, শুনতে চাই ছেলের অর্থ।

(২৭০)

রূপের গৌরব করবি কত কাল। তোর মাটির দেহ ভেঙ্গে যাবে, গায়ে থাকবে না। আর শক্তি বল ॥ পাগলা কানাই বলে, দুই জনা একজন হলে, ভবপারে যাবিরে মন রসনা। নারীর শোভা পুরুষ বল, রুপের গৌরব করবি কতকাল | নুন জলে দিয়ে পাড়ি, নৌকা চলে তাড়াতাড়ি; নৌকার মাত্রা ছয়জন বাদী, নৌকা হবে রসাতল, রূপের গৌরব করবি কতকাল ॥

(২৭১)

পাগলা কানাই কেন্দে বলে, শোনরে ভাই সকলে; ১২৪৬ সালে জৈষ্ঠ্য মাসের হয়। প্রথম । একটি পুত্র ছিল মরিয়া গেল, সেও শোকে হলাম পাগল; বাছা বাছা বলে ডাকি, শুনলি না এখন ঘরে বিনোদিনী কান্দে বলে, তুমি গিয়েছিলে কোনখানে, সোনার যাদু মলিন হইল, দেখলে না দুই নয়নে । আমার সামনে থেকে সোনার যাদু, নিল কোন জনে । তুই কি দোষে গেলিরে পুত্র, মা মা বলে কোলে আয়।

তোর শোকেতে মোর জীবন ফেটে যায় ॥ পাগলা কানাই কেন্দে বলে, শোনরে ভাই দশজনা, যেদিন আসবে শমন করবে দমন, গান বাজনা কিছুই রবে না। আমি শুনেছি মুর্শিদের মুখি, কে তারে আছে জানা। ও মন ভবে এসে ভবের কাম, কিছুই করলে না ॥

(২৭২)

শোনেন শোনেন ভাই সকলরা, বলতেছি আসরে আসে; আয় বড়োতে সন্তান। হলো, বল বয়াতি কার উদরে । হতি ছেলে পতি বিনে, জন্ম নিল কার উদরে। সে ছেলে ভবে এসে, বাবা বলে ডাকবে কারে । (অসম্পূর্ণ)

(২৭৩)

আজব এক দিরাগের কথা ভাই, আমি কই দশের কাছে; সে দেরাগ থাকে কোন খানে । ওরে হাজার বছরের পথে, দেরাগে চার ডাল আছে; দেরাগ থাকে কোন খানে । তার একটির চারটি পাতা, খোদার নাম আছে সেই চারটির মাঝারে । আর একখান ডাল আছে ভাই, কত কোটি পাতা, তা জানেন মালেক বিধাতা। তার পাতায় পাতায় আছে লেখা, সকলের পরমাত্তা।

পাতা রেখেছে কোথায়, ওরে আজরাঈল তার নিচেই বসে, যার পাতা যখন খসে, নিয়ে দেয় কোথায় আর একখান ডাল আছে ভাই, সে মেওয়াজাতি ফল। সে মেওয়া কেউ যদি খায়, তার পেটের ক্ষুধা ভেগে যায়। তাই ছয় মাস থাকে আছুদা, সে ফল রাখে, কোথায়।

কার জন্য কত ফল রেখেছে, ভেঙ্গে কও সভার মাঝে, শোনবে দশজনায় ॥ আর এক ডালে আছে ভাই, সে কত সে আজাব, তা যদি থাকতো। দুনিয়ায়। ওহে দুনিয়ার ক্ষুধা গায়েব হইতো, পড়ে হতো ছারে খার; তার থাকতো না আকার । তাই পাগলা কানাই ভেবে বলে, কার জন্য রাখেছে আজাব, তাই বলো আমার

(২৭৪)

গুরুগো বললে ভালো, জানা গেলো, আছি এই সভায়। তোমার কথা শুনে গুরু দুঃখে জীবন জ্বলে যায় । কোন কলেমা পড়লে গুরু, মনের ঘোর কাটিবে আমায় । আর একটা কথা গুরু, সুধায় বলো না, কোন ওজুতে পড়ায় নামাজ, কেরাত পড়ায় কোন জনা ।

রুকু সেজদা দেয় কে, তারে চিনলাম না । কেবা এসে সালাম ফিরায়, শুনবো মনের বাসনা ॥ আর একটা মানুষ গুরু এই দেহেতে আছে । তুমি বল পষ্ট মনের কষ্ট, আমি সুধায় গুরু তোমার কাছে । সত্য করে বল গুরু সেই মানুষ কোথায়, পাগলা কানাইর শুনতে বাসনা আছে।

(২৭৫)

বেড়বাড়ির পাগলা কানাই কয়, কি কারখানা ঘটিয়েছে খোদায়। ঢাকা জেলা মুর্শিদাবাদ বসে দেখি এক জাগায়। চাঁন্দের বাজার মিলায়েছে গো- পশ্চিমের গাছতলায় ॥ বউ বাজারে তাকায় দেখি চতুর্দিকে ভানু যেন হয়েছে উদয় । পাগলা কানাই বলে, বুড়ি মানত একটা করে যায়। দুধ কলা চিনি দেব গো-যদি বুড়ো জোয়ান হয় ॥ এলোরে ভাই মাজা কুঁজো, চিত্তির-বায় ভেংড়ো কুঁজো, গন্ডগোল গলায়। তারা ধরেছে সন্নাসীর বেশ, ভস্ম মাখে সারা গায়। কয়েকজন বয়াতি এলো গো তাদের টাক পড়া মাথায় ॥

(২৭৬)

একটা কথা বয়াতির কাছে শুনতে চাই । কোন রূপেতে কোন ডালেতে ময়ূর রূপে বসে রয় । কোন দিকে বসে ছিল বয়াতির তায় বলো আমায়। ও তার ঠোঁটের বরন কি ছিল, ও তার মাথার উপর মুকুট ছিল; ঐ মুকুট কে বলো, কথা পাগলা কানাই কয় । বলো বলো এই আসরেতে, সত্য বলো মিথ্যা বলো নাই ॥ ও তার গলার হার কে ছিল, কেমন রংয়ের হারও ছিল; হারের লকেট কে ছিল।

দুই কানে দুই বোলো ছিল, কে কে সেই বলো হলো; ও তার পায়ের রং কি ছিল । কি বুলি বলতো, কমনি ফিরে বলো । কত পশম ছিল তার, ও লেজ কত হাত ছিল ॥ রাখিল; ও লেজ কে পাইলো । পাগলা কানাই ভেবে বলে, কি রূপে আছে ময়ূর; কে বানালো সেই ময়ূর, কত বছর পরে এ দুনিয়াই আসিল । পশমগুলো কোথায় এখন আছে কোনখানে, সত্য করে বলো বলো (উত্তর পদঃ-২৭৭)

(২৭৭)

হলুদ বরণ কুতুব পাখিরে, ও থাকে তোফা গাছের পরে; সত্তর হাজার বছর পাখি। মগডালেতে বসে। কেদে কেদে বলে ময়ূর আল্লাহর কাছে। আর কত দিন রাখবা তোফা গাছের পরে সাড়ে তিন হাত লেজ ছিল বলি তোমারে। হাজিদের ঐ পাগড়ি হলো দুনিয়াতে এসে। যুগে যুগে ফেলাইতো পশম দুনিয়ার উপরে। এক লাখ চব্বিশ হাজার পশম পড়িল দুনিয়ার উপরে । সেই পশমে নবী তৈয়ার, পাগলা কানাই কয়রে ।

একে একে বলবো মানে, চিন্তা করো না রে ॥ হয়রত আলি ছিল মুকুট রূপে, আর ঠোঁটের বরণ ছিল হলুদ; হাসান হোসেন দুই কর্ণের শোভারে-ফাতেমা গলার হার। মন ময়ূরী দীনের নবী, বলি যে তোমার । আইলো নবী শেষ কলিতে, আইলো দুনিয়ায় । কানাই বলে উদ্ধার করে পাপী-তাপী আর, ফিরে আসরে দেব আমি সুরকী কোটায় ঘায় | (প্রশ্নপদ নম্বরঃ-২৭৬)

(২৭৮)

গত সন, চৌদ্দ নাঙ্গল গিয়েছিলাম বিয়ার মাঙন, আমি কোন ফজরে উঠি । বাড়ির মংলা এড়ে ডানি জুড়ে, বিয়াইর সামনে বসি । বিয়াই মারবে খাসি। খাসি থুয়ে মসুড়ির ডাল গো-বিয়াই ঢালে দিল মনের হাউসী ॥ বিয়ারই একটা গাভী ছিল, রাত দুপুরে দুতে গেল; ওরে তিন ছটাক দুধ হলো ।

তিন ছটাকে পানি দিয়ে, নয় ছটাক বানালো । যদি ভাত নিবা নিও, বিয়াই দুধ দিয়ে, পাত দিতো ভাসিয়ে, যদি গাভী না নড়তো পাগলা কানাই ভেবে হতো, সার করলো মনের বুদ্ধি, বেড়বাড়ি তোর বাড়ি? আমি লোকজন নিয়ে ফকরেবাজ এসে করলাম ঝাকমারী । গরীবের বাড়ি, কেমনে করে যাব ফিরে, আমি লজ্জাতে মরি ॥

(২৭৯)

আমার বাতাসে আর প্রাণ জুড়োয় না, বাতাসে অংগ জলে, ঝাঁপ দিব যমুনার জলে । ওরে তবুও আমার প্রাণ জুড়োয় না। গৌরাঙ্গের দিচ্ছে বাতাস, আমার প্রাণে কেন লাগেনা । ভাই বন্ধু দারা সুতো, মরলে সঙ্গে কেউ যাবে না। আজ ব্যাথীর ভাগী যারা, ব্যাথার ব্যাথী কে আছে; পাগলা কানাই কয় হাত ধরে, ডেঙ্গায় কেউ তোলে না ॥ না হইলো মোর মাথা ঘষা, না হইলো মোর কাপড় কাঁচা, কোন দিকে যাই দিশে হারা, আউলে পড়লো চুলগো আমার সাধের বকুল ফুল ।

বকুল তলায় দাড়িয়ে কালা, দিয়ে গেল মনে ব্যাথা, এ ব্যাথা আর নিবারণ হইলো না । আমি কান্দে মরি রাত দিবসে, কালার দেখা পালাম না ॥ কানাই বলে বলবো কথা, রাধে আছে তোমার হৃদয়ে গাঁথা, ও আগুন বন্দ হবে না। তোর আগুন লেগেছে দেহের ভিতর, বাতাসে বন্দ হবে না । বাতাসে মোর অঙ্গ জ্বলে, ঝাঁপ দিব যমুনার জলে, তবুও আমার প্রাণ জুড়ায় না ॥

(২৮০)

বেদে এক ধুলোর ঘর, দৌড়ে যেয়ে ঘরে ওঠো, সে ঘর কি তোমারে আমার । ঘরের উপর চাল নেই তার। বাড়ি যাবার সময় হলে, ও ঘর ভেঙ্গে হবে ছারেখার শুনি মার উদরে একখান ঘর ছিল, দশমাস দশদিন (মা জননী) সেই ঘরে। রেখেছিল। কি খাওয়াতো তাই বলো, কোন শিওরে শোয়াইয়া দিতো তাই বলো। কোন শিওরে শোয়াইতো বয়াতি সভাতে বলো । ও পাগলা কানাই ভেবে… কয়, বয়াতি তোমার সময় বয়ে যায়; কর যেয়ে ভজন সাধন, যাতে হয় মহাজন: কর যেয়ে দীনেরই উপায় ।

(২৮১)

আর তোমরা কেউ চাটাম জান ভাই, একটা চাটামের কথা বলে যাই; ওসে চাটাম দিয়ে মাখা তামুক খায় । চাটাম কোথায় ছিল কে আনিল, আমি তার উদ্দিশ নারে পাই। ওরে শুকনোর পার পলো ঘুয়ে, মাছ মারি চাটাম দিয়ে, চাপ দিয়ে দেখি পাছায় খালই নাই ॥ ও চাটাম ললেম খুলে, চৌদ্দ হাত পানির তলে, ও লাঙ্গল বইছে বিয়ান বিকালে । চাটাম শুনে আমার ধরেছে মাথা, এ চাটাম কোন জাগায় মেলে। চাটামের বাকস খুলে, নেয় তারা আবার গুলে ॥ এমন চাটাম তোমরা শুনছো নাকি ভাই ।

আবার দুইখ্যার মা কয়, ও ছোট দিদি, আবার ঐ পাড়ার কালে যদি, আর তার কথা যদি কেউ শুনতি; আবার খুদ্যার খালে এক ছাগলে তিন বাঘ ধরে খায় । তেমনি ছাগলের পেট ভরে না, তাই পাগলা কানাই কয়। আবার মিনসের পেটে বাচ্চা হয়, সেই কথা তো মিথ্যা নয়; কত বিধবা নারী বলছে একি হায়রে হায়

(২৮২)

ঘরে বাইরে বিবাদ করলে, লোকে শুনে হাসে। এমন অভোলা ফেলে যাইওনা বিদেশে। আমি মাসে মাসে লিখলাম চিঠি, না আইলা দেশে। তাই পাগলা কানাই ভেবে বলে, সখিরে সুখের দিন গেল মাঘ মাসে ॥ আর ও নারকেল তেল সুগন্ধি, আরও বিনোদবরণ তেল; আর ভাতের ক্ষিধা পেট ভরে না, পানি খালে যাবে কই ।

ও চাষার ঘরে বিয়ে যদি দিত বাপ মায়, দিন ভরে কাজ করতো দিতাম গায়। আবার মনের কথা খুলে কতাম সখিরে, ও নমস্কার দিতাম বন্ধুর মাঠে, সন্ধে হলে বাড়ি যায় । আমি ভাতের ডাবর সামনে দিয়ে, আরও হেলান পায়।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৩

 

(২৮৩)

তেরই তারিখ পঁচিশে মাঘ ধুয়ো বেঁধে যাই, কাওয়া কুলি উঠে বলে শোনরে বগলা ভাই। তোমার কাছে একটি কথার নিবেদন জানাই। ফ্যাচকা উঠে বলে প্যাঁচার সমান কুলীন নাই । কত চড়ই, ভারই, গাং সারক মলো শাট পেে ধাড়ে কাউয়া, পাতি কাউয়া, মাছ রাঙ্গা যুক্তি করে । গাংচিল উঠে বলে লঙ্ তোরে । গোড়ল পক্ষির নাম শুনিয়া, সকল পক্ষি ভয় করে।

দুইরাজা নাচন করে, কবুতরের সাথে হাঁস-পায়রা নামাজ পড়ে, ডেকে আজান দেরে। খা সৌরভ দেখে, নর লোকে সালাম ফেরে । খেমারু আর ফেঁপি কোড়া একখানেতে রয়। উপর থেকে ভুবন চিল, কুকড়ো খাওয়ার তাল মেটায়। কুড়া হাঁস মুক্তি করে বিলের কাছে যায়।

মাঝখানেতে মনি কাউর সকলের পাছা দেখায় ডুবারুর তো স্বভাব দোষ, জলে পাড়ে ডুব; লাল গোংগা আর কাচ্চি চোৱা, বালে হাঁসের বড়ই সুখ। ডালে বসে ধু-ধুম পক্ষী, বাদুর ঝোলে নিচে মুখ। চালের বাতায় চামিচিকা, বাটুই পক্ষী খাওয়ার জুত ॥ মানিক জোড়া আর চথা পক্ষী, এক খানেতে রয় ।

উপরে বসে শিকারী বাজ আচ্ছা মতো তাল জোটায় । ডালে বসে গিন্নী শকুন কুতকুতাইয়া চায় । হাঁড় গিলার তো গলায় থলি, জমাদ্দরী লিবার। চায় ৷ আমি অতি মুৰ্খ মতি, নাই কোন বিদ্যা বুদ্ধি, ক্যামন করে করবো আমি এই পক্ষির সায়েরী । আর পক্ষির নাম জানি না, সভাতে প্রকাশ করি । ধূয়ো বান্ধা সারা হলো, পাগলা কানাইর কারি গিদ্দি ॥

(২৮৪)

পাগলা কানাই বলে দুনিয়াদারী ছাড়রে ছাড়, একি দেখি অবিচার, তুই ভাবে দেখরে মন আমার। যে জন থাকে ঘর জামাতা, সেই ভাঁড়োর পোড়া কপাল, দেখে মন কাঁদে আমার ॥ যে ভাঁড়ো থাকে শ্বশুর বাড়ি, সে ভাঁড়োর পোড়া কপাল । ঘরের স্ত্রী লোকের সাথে ঝগড়া হয়, ভাঁড়ো রাগ করে তাকে মারতে যায়। ও ছুড়ি দৌড় দিয়ে ঘরে উঠে মুড়ো ঝাঁটা হাতে লয়। নাম ধরিয়া ডাক দিয়া কয়, আয়রে গোলাম তুই মারতে আয় ॥ আমার বাপের ভাত খায়ে তোর বড় তেড়ি ।

তুই আমার সাথে করিশ আড়ি । খাবি দাবি কাজ করবি, শুয়ে থাকবি বার বাড়ি। বাড়ির মধ্যে আসতে চালি, মারবো মুড়ো ঝাঁটার বাড়ি। হজ্জ করবি কে রে আয়রে আয়, খোদে খোদায় হুজুরের কাবায়। মক্কায় জলিল।

 

পাগলা কানাই এর গানের পর্ব ৪:

 

বাউল ফকির কথা সূচিপত্র

 

(২৮৫)

মক্কায় খলিল, কোন কাবাতে নেকী হাসিল; হৃদ পিঞ্জরে সালাম ফিরাও, ডানে বামে খোদে খোদায় হজুরে কাবায় । মক্কার উত্তরেতে ওজু করে, দক্ষিণে আজান সারে; ঘরের পূর্ব দরজায় পড়ে কলমা, পশ্চিমে হজ্জ আদায় হয় মিয়া ভাই।  মক্কাতে গেলি, ঠেলা ধাক্কা কতই খালি; তুই গাঁটের টাকা খরচ করে, চিনলি ন খোদা কোথায়। পাগলা কানাই ভেবে বলে, দেল কাবাটি ঠিক করিয়ে, কাবাতে পড়লে নামাজ, তবে সে হজ্জ আদায় হয় ।

(২৮৬)

পহেলাতে শুরু করলাম নামেতে বিছমিল্লাহ, দুয়েমেতে মালেক সাঁই মওলা বিয়েমেতে পীর পয়গম্বর মোহাম্মদ রাছুলুল্লাহ । আরশ পরশ বহুত কলমা গো, ওসে পাঠাইছেন মওলা | যত সব মুসল্লিগণ জোট করে এক জায়গা, শুভী নামাজ কাজা করে ভাই, শুক্রবার জুমায় যায়। শিরণী ছালাৎ পাইলে পরে গো, তারা জোট করে সব খায়। বাদুরের দিনে রোজা রাতে করে ভজনা, সারাদিন সে উদো হয়ে ঝোলে, শেষ কালেতে মুসল্লিদের ঝুলতে হবে এ প্যালে । পাগলা কানাই হতবুদ্ধি গো, আল্লাহ তরাও অকালে ॥

(২৮৭)

ওগো আল্লাহ দিনবন্ধু ডাকছি বারে বার, এ অধীনকে দয়া করে ভবসিন্ধু কর পার, তোমার লীলা বুঝতে পারে ভবে, এমন সাধ্য আছে কার? তুমি করিম তুমি রহিম আল্লাহ তুমি হও জব্বার, বায়তুল্লাহকে মুজাম রাখো পাথর রাখ শূণ্যের পর, ইউসুফকে ফেললো কৃয়ার মাঝে, তরালে মালেক পরওয়ার, আল্লাহ তোমার নাম ভরসা করে, সভায় আলাম আমি, পাগলা কানাই ডাকছে বারে বারে, তারাও আল্লাহ গণি, বিষম কালে কোথায় বুলি, মা বরকত জননী ।

(২৮৮)

চাঁদ সভাতে বল আল্লাহর নাম, আমার আল্লাহ বড় মেহেরবান। নাম শুনেছি মালেক ছোবহান, তার কুদরতে পয়দা জমিন ও আসমান, খাম খুটি নাই শূন্যে থাকে ক্যান, তাই বুছে মন হও হুশিয়ারি শোন ভাই মোমিন মুসলমান ॥ করিম রহিম কুদরতের ধ্বনি, আমি মুর্শিদের মুখে শুনি, আরেক নাম তার কাদের গনি ।

আল্লাহ রসুলের এই দুটি নাম পুরান হয় না কি জন্যি, সেই কথা ভাবি রাত্রি দিনি, যার নামের জোরে মূর্তি ভেঙ্গে যায়, সে কথা কোরআনে শুনি ॥ ভাইরে আরেক কথা শুনি কোরআনে, আবার হাশরের সেই ময়দানে, নেকী বদি যাবে ওজনে দোয়া-ধর্ম-নামাজ-রোজা-সাক্ষি-দিবে চার জনে, বান্দার হিসাব হবে সেই দিনে । যে জন করবে নেকী যাবে ভেস্তে, বদির স্থান হবে দোজখে, কানাইর কি হবে সেই দিনে |

(২৮৯)

পহেলা এসে সালাম জানাই, মালেকুল মওলা এই কুল দানে গঠেছেন যিনি, শরীফ কেউ তার নাহিক জানি, একা সে লা শরীকালা দুয়োমেতে সালাম জানাই, তাহার দোস্ত রাছুলউল্লাহ। হাসরের ঐদিনে গোনাগারের হিন্না ।

তারপরে সালাম জানাই, মা বরকত ফাতেমারে, গোনাহগার বান্দার তরে, পার করবেন রোজ হাসরে, পার হবা দাউন ধরে, চার আছহাবের চরণ বন্দি, বন্দি বলি হানিফারে ইমাম হোসেন বন্দি আসরে । এই সভায় সালাম জানাই, মক্কা আরো মদিনায়, মা বাপের ঐ চরণ বন্দি, আমি অতি মূর্খ মতি, সালাম জানাই উস্তাদের পায়, সুজ্ঞানী সভায় যে জন আছেন বালক বলে রাখবেন পায়, পাগলা কানাই সভায় দশের চরণ চায়

(২৯০)

প্রথমে সালাম গো জানাই আল্লাহ নবীর পায়, তার পারে সালাম গো জানাই দশ জনের ঠাঁই, তার পরে সালাম গো জানাই আর ওহারে ওস্তাদ যে জন হয় ॥ এমা নবীর বেটি দুনিয়ার খুঁটি ভেস্তের দাওনদার, পুলসিরাতে দাউন ধরে আপনি করবেন পার, তোমার নামের জোরে আইছি চলে গো হারে ও, ওমা যা কর এইবার ॥ এমা আপ্ত ছিলা গুপ্ত হল্যা দেখলাম নয়নে, অধম পাগল কানাই জাকছে।

তোমকে হরদমে দমে, কিঞ্চিত দাও পদ ছায়া গো, হারে ও ওমা তোমার চরণে। ॥ এ মা তারা ও জগতের পারা এমা তারিণী, যেদিন ইস্ত্রাফিল ফুকবে সিঙ্গা সব হইবে পানি, নৌকা বিনে ডুববে তোমার পিতার উম্মত তা জানি, তুমি তখন আসবে ওমা মোসলমানের বরকতিনী ॥

(২৯১)

মুখে আল্লাহ বল ভাই সকলে, তা ছাড়া আর গতি নাই, মৃত্যুকালে সংগে যাবে, ভেস্তে গেলে পাবে, ঐ নামের বরকত ভাই, দিন থাকতে না জানিলে, শেষে করবিরে হায় হায় ॥ ইউসুফ নবী কুয়ো হতে, রক্ষা পেল ঐ নামে, ইউনুছ নবী মাছের পেটে, থাকল সুখে আছানে, ওরে বেকুফ কি তাই জানে ।

জ্ঞানের কথা জ্ঞানীর কাছে আহম্মকরা না মানে পাগলা কানাই ফেরে পড়ে, মওলা বলে ডাকতেছে, আমি অতি অভাগা, পাক কদমে দাও জাগা, বিদ্যাশে বিপাকে আমায়, ছয় বোম্বেটে ঘিরেছে, ওগো আল্লাহ কাদের গণি, উদ্ধার কর এসে

(২৯২)

দেওয়ান খেজের চাঁদ-ও আমায় দেও আঈসে আছান, পাগলা কানাই ডাকে তোমায়, সামনে দেখি বড় তুফান, তোমার নামের মহিমা, আল্লাহ কোরানে বলে আমি দেশে বিদেশে, ফিরতেছি ঐ নামের বলে ॥ ওরে খেজের নামের জোরে, যেমন আগুন হয় পানি, পানিতে সমুদ্দুরে বিপদে হয় আছানি, আল্লাহ আছে সবার পর, খেজের সে কাঙ্গালের কাণ্ডার ॥ গোনাহগার হওরে যদি, দরিয়ায় তারই নামে, হয়ে যার পার, তার নাম ভরসা করে, আমি আজ দিয়াছি সাতার ॥

(২৯৩)

উদাসীন পাখির জন্যে, প্রাণ কাদে আমার, আমি দেখলাম না রূপ তার। পাখি মধুর মত বাক্য ছড়ায় রে, শুনে আমার প্রাণ বিদরে, পাখি নিগূঢ় তত্ত্ব গেছে ভুলে, বন্দী রইল মায়াজালে, আমার খাচার ভিতর ।

চার কলেমা পড় তোতা, বল আলহামদোলিল্লাহ, দোজখের না থাকিবে জ্বালা, পাখি ভেস্তে যাবা, থাকবা সুখে হবে তোর ভালা, সুখ বিলাসে দিনত যাবে, সুখে রবে, কোলে নিবে মুহম্মদ রাছুলউল্লাহ ॥ উড়ে যাবার কালে তোতা, শিকলে দেয় টান, শুনলাম মধুর গান, পাগলা কানাই ভেবে বলে, ঐ দেখ বেলা যায় ডুবে, ছুরা ইয়াছিন পড়’ মোনাজাত কর, পড় আল্লাহ নবীর নাম

(২৯৪)

সরের সতী স্বরের পতি, মা স্বরে কর ভর, ছয় রাগ ছত্রিশ রাগিণী, এরই মা তোর ভুজঙ্গিনী, ওমা তবু কৃপা সকলের না হয়, তুমি দিয়েছ যার মধুর স্বর, ভুবন মাঝারে, মদনে সব তুচ্ছ করে, গান করে মধুর স্বরে, আদায় করে রাগ আনি॥

স্বরের কথা বল হেথা মা আছে গোলকে প্রমাণ, দেবগণ আর রাধাকেষ্ট জগতে ছিল পষ্ট, বীণ বাজায় আর আরম্ভ করে গান, দেবীর পঞ্চমুখে পঞ্চস্বরে, রাধাকৃষ্ণ দেবীর হন তাতে দেবী কম্পবান, এই গান গেয়ে যান নারদ পতি, ঐমত সরস্বতী-কন্ঠে কর বিরাজমান অতি দৈন্য বিদ্যা শূন্য, শাস্ত্র অভ্যাস নাই, ওমা যন্ত্র অভ্যাস নাই, যন্ত্রের মধ্যে খুঞ্জরী বাজাই, কেবল তাই, ঘৃণা করে ভদ্রলোকে তাইতে লজ্জা হয়, পণ্ডিত ছিল কালিদায়, ভুবনে আছে যার জয়, শক্তিরে পাইল দর্শন, ওমনি মত কানাইকে ওমা দিও শ্রীচরণ । শোন তার লক্ষণ, শ্রী পঞ্চমীর দিন করব পূজা, হইব বিদ্যারাজা, গানে জয় করব ত্রিভুবনে ॥

(২৯৫)

আমি ডাকি গো মা তোমারে, তোমার চরণ দাও মোরে, আমি মূর্খ পাগলা কানাই, বিনয় করে কই তোমারে, ওগো মা, শোন গো মা, কিঞ্চিৎ দয়া, পদ ছায়া, দাও গো আমারে ॥ মা আমায় ঘুরাবি কত, ওরে চোখ বাঁধা বলদের মত, ভবের গাছে জুড়ে পাক, দিয়ে যাচ্ছ অবিরত; খুলে দাও মা চোখের ঠুসি, দেখি মা তোর রাঙা পদ ॥ কালকেতু ব্যাধের ছেলে, চরণ পেলেন তিনি, চণ্ডীমঙ্গল পুরাণে কয়, আমি যে তাই শুনি ॥ আমার জীবন মন সঁপি তোরে, ওগো মা তারিণী, এই আসরে দয়া করে, এস হে বিপদহারিণী ॥

(২৯৬)

তরাও মা ভব তারিণী-তরাও আমারে, এই বিপদে পড়িয়ে মাগো ডাকছি তোমারে, কালকেতু ব্যাধের ছেলে, তারে নিলে ভবপারে, মা গো মা নিজ নামটি ধারণ করে, চরণ দিলে তাহারে, নামটি তোমার ভগবতী, মা গো মা জন্য নিলে যক্ষের ঘরে ।

দেখিয়ে যক্ষেরই ধন, শ্রীরাম লক্ষণ হেরি নয়নে, পিতার সত্য পালন করতে, রাম গেছিল বনে। অঙ্গের বসন ত্যাজ্য করে, গাছের বাকল পরিধানে, চার যুগ ধরে অনাহারে, রাম ফিরেছে বনে বনে, দিক দয়া করলে মাগো, অবশেষে রাম বসল সিংহাসনে । নিরাকার ডিম্বুর উপর ভাসিল যখন, এছাই রঙ্গ ঢেউ তরঙ্গে আসিল তখন, দৃষ্টির উপর সৃষ্টি করে, সৃষ্টি করলেন নারায়ণ, মহাদেবের অনুরাগে দেখাইলেন ত্রিভুবন, কানাই বলে, মায়ের পদতলে, ছাড়ব না রাঙা চরণ

(২৯৭)

তরাও, তরাও বিপদ নাশিনী, তোমার নাম শুনে ডাকি আমি, কালিঘাটে কালী কলঙ্কিনী, শ্মশান কালি মশান কালি, কৈলাশ, কৈলাশ, কৈলাশ ভবানী, তোমায় কানাই ডাকে দাও পদছায়া, ওগো মা তরাও নিজ গুণী ॥ কালকেতু ব্যাধের ছেলে, তারেও তো তরাইলে, আমাদের যবন ঘৃণা করিলে, আছে কার্তিক-গণেশ প্রিয় পুত্র মা-তোমার দুটি ছেলে, আমি অতি নিৰ্গুণে, মা গো মা রেখ চরণ তলে ।

নির্জনেতে তোমায় পালি, ঘুচে যেত মনের কালি, বিপদ বলে কিছু থাকত না, পাগলা কানাইর কপালে চরণ ঘটল না। ডাকছি তোরে মা-জননী যেন নিঠুর হয়োনা, আশা করি চরণ ধনি মা গো মনের এই বাসনা ॥

(২৯৮)

তরাও কালি, শোন বলি, বাল্লুক বলে ফেল না, আছে পার্বতী পুরাণী, দু:খিনী নয়নী, পর ছাড়া পুরাণে শুনি, বীরেশ্বর ব্রহ্মা মোহিনী, পাগলা কানাইর দিও মা চরণ দু খানি ॥ ব্যাধের ছেলে কালকেতু তারে তরালে কোন হেতু, ঐ মত কর দয়া, দাও মোরে পদছায়া, মোর প্রতি কি নাই তোর মায়া, কার্তিক গণেশের মাথা খাও, মোরে এ ঘোরে তরাও, দেখা দাও জগৎ কায়া ॥

তরাও তরাও বিপদ নাশিনী, এই জগতের ভার তোমার পৃষ্ঠে শুনি, যেদিন সেই ইস্রাফিলে ফোকবে শিঙে, হবেরে সব পানি, নৌকা হয়ে তরাবে মা-এ কথাটি-জানি, আরো মুসলমানের বরকত তুমি মা, হিন্দুর ভবানী ॥

(২৯৯)

পাগলা কানাই ডাকে মা মা বলে, মা তুমি ডাকছ কেনে, আমি তাইতে ডাকি মা মা বলে, দিন কানা তা জানবে কেনে, কানা কি সোনা চেনে ॥ তোর বাবা বিষ খাইল, বিষে অংগ কাল হল, আবার বিষের জ্বালায় প্রাণ বাঁচে না, কাল শমন নিকটে এল, তোর বাবা মায়ের কোলে বসে, স্তন ধরে দুধ খেল, কাল শমন দূরে গেল ॥ তুইরে ভব পারে যাবি, কোথায় কাণ্ডারী পাবি, নৌকা চড়ে পার হবি, তুফান দেখে জ্ঞান হারাবি, তোর মা সেচিবে নৌকার পানি, হাল ধরিবে বদর গাজী, তখন অনায়াসে পারে যাবি ।

(৩০০)

বিপদ মার্জনা কর্ত্রী জগধাত্রী তারা, দেখে এই বিপদ আমি কন্ঠ নই তারা, তোর বাবার দেখি বড় বাইতাড়া, তপ জপ যজ্ঞে ভুতে মুতে, ভাসাইল যজ্ঞ তারা, একি রাগ করিলি বিনাশ, ছাগ হল বাপ, ছাগলেরেই বাপ বলে ডাকে তারা ॥ গণেশ তোমার প্রজাপুত্র, প্রসব করলে জননী, পুত্র হল গজানন, হরি সাধন করি মুণ্ডু তা জানি, পিতাপুত্র দিবা রজনী-স্বামী ভোলা, পেটের জ্বালা, রয় ঝোলা দিবা রজনী, পদে পদে বিপদ মাতা, লজ্জার কথা-মা তোর মাতা ছাগলের গৃহিণী ।

এ সব ঘটনা রটনা মার্জনা, তোমা কর্তৃক বটে, ঘটে ঘটে ঘটনা। নির্বোধ বালকের মুখ সর্বদায় চলচালা বালকের খেলা বেড়ায় খেলে, খিজল‍ মা-মা বলি পেটের জ্বালায়, মা তাতে হয় উতলা, থাক বা না থাক, মাতার কোলে কাঁদে কেবল ক্ষুধার জ্বালায়, ও গো তাই, শক্তি পদে ভক্তি চায় অধম পাগলা কানাই

(৩০১)

জয় দূর্গা, দুর্গতি নাশিনী, আমি ভজন সাধন না জানি, সিন্ধু পার কর বিন্দুবাসিনী, আমি ডাকি মা তারা, ওমা তারা সর্ব ঘটে, আছে তারা মম ঘটে, কই মাতারা ডাকছি দিবা রজনী, বিপদে স্থান দাও, হে মা তারিণী ॥ বিপদ তরাতে দেও দুটি চরণ, তুমি দিবা না মা কি কারণ, আমারি তো সাধনারই ধন। অযতনে সাধলে পরে, যাওনা তুমি তাহার দ্বারে, আমারই তো পৈত্রিক বিষয়, তোমার কি বা পিতৃধন ।

পুত্র আদি সাধল তারা বলে পৈত্রিক ধন ॥ তরাও, তরাও তরাও মাগো তরাও বৈতরণী, কত অধম পাপী তাপী পার করেছ গুণমনী, পাগলা কানাই কর জোড়ে কয়, আয় মা আমার কাছে, ক্ষমা কর মা অপরাধ আমার, যা কিছু আর আছে ।

(৩০২)

গুগো মা গুপ্ত ছিলে ব্যক্ত হলে, দেখি নয়নে, পাগলা কানাই ডাকছে ওমা হরদমে দমে, কিঞ্চিৎ পদ ছায়া দেও মা তুমি, ওগো মা তোমার অধমে ॥ ওগো মা নবীর বেটী, দু’নের খুটি, ভেত্তের দাওনদার, পুলসেরাতে হীরের ধারে তুমি করবা পার, তোমার নামের জোরে এসেছি চলে, ওগো মা, এবার যা কর আমার ভরাও তরাও বিপদ নাশিনী, আমি অতি অভাগিনী, এই পৃথিবীর ভার শুনি, রয়েছে তোমর বুকে, হিন্দু মুসলমান সবাই, আজ হক নাম বল মুখে ।

(৩০৩)

মা বল, সকলি ল, এমন মা আর হবে না, সেই মায়ের সাথে করে ছলনা, কোন কার্য সিদ্ধি হ’ল না, এমন মা আর কি হবে, বলি তাই দশের কাছে, ঠিক পাবা কোন দিন, যেদিন অর্থে হবে ফানা ॥ আবার, আল্লাহ আরোশে থেকে দিয়েছে কালেমা, আওল কলেমা, দুয়োম কালেমা, কালেমা ত্রিয়োম চার কালেমা, আল্লাহর না শরীফ আছে, কোরানে ছাফা লিখেছে, শেরেক গোনা কখন খোদা মাপ করিবে না ।

আবার, শরীকা শরিক আছে শোন দশজনা, রাছুলকে দোস্ত বলে করলেন খোদা এ কারখানা, সেই রাছুল কোরানে লেখে দিয়েছে কালেমা, আলেমের পদ ধরে আমি কানাই আছি পড়ে, হাসরের মাঠে সেদিন জারিজুরি খাটবে না ॥

(৩০৪)

সভারই মাঝার সালাম আলেকম জানাই, আমি অতি মূর্খ মতি, না জানি মোর কি গতি, কাজ কর্মের না জানি সন্ধান, তোমরা দশ জনাতে মেহের করে, আজ আমার এই আসরে, চরণে দাও স্থান ॥ গেয়ে বেড়াও ধূয়োজারী, কি নাম তোমার কোথায় ঘর-বাড়ি, আবার কি নাম তোমার পীরের ছিল কোথায় তোমার বসৎ বাড়ি, তাই শুনিয়ে কেমন করে, আমি আজ এই আসরে গাই ধূয়োজারী ॥

লাল জরদ ছিয়া ছফেদ চারটি রঙে কয়, কোন রঙটি কিবা গঠন বলে দাও আমায়, কোন রঙটা আগে পয়দা করেছেন খোদায়, শুয়ে থাকিস আপন ঘরে, কেবা তোর চেতন করে, কেবা তোর ঘরে দুয়র দেয়, কোন বা চক্র কোন বা দলে আল্লাহ রাছুল আসে যায়, শুনব বলে এই আসরে জিজ্ঞাসি তোমায়। সত্য করে কও বয়াতি পাগলা কানাই শুনতে চায় ॥

(৩০৫)

আমি আজৰ কথা কয়ে যাই হেথায়, মুসলমান হয়ে হরিনাম লয়, এমন কথা শুনেছ কোথায়, শাস্ত্র মত বিস্তর কথা, কয়ে যায় ধর্মের সভায়, ডান হাতে তসবী টেপে, বাম হাতে মালা জপে, চলেছে মক্কার পথে, দিয়ে তাজ মাথায় ॥ এমন ধন্য পুরুষ দেখেছ কোথায়, তার নাম মহা পাতক লয়, ও তার নাম শুনিলে শমন পালায়, শমন জুটে না পারে ছুঁতে, ভূমিকম্পে যেন কাঁপায়, পাগলা কানাই বলে যায়, সে মানুষ মলে পরে পোড়ায় কি গোর দেয় ॥

আবার মুসলমানের ওয়ারেশ পুত্র যে হয়, হিন্দুর সংগে সংকীর্তন গায়, কখন কখন নামাজ পড়তে যায়, বলছে আল্লাহ ওগো হরি, জুম্মার ঘরে ছেজদা দেয়, হরি বলে বৃন্দাবনে, নামাজ পড়ে মদিনায়, ঐ রকম ক্রমে ক্রমে যায় ধর্মের সভায় ॥

(৩০৬)

যদি সাধন করতে সাধ থাকে মনে, তারে ডাক হে দমে দমে নইলে সাধন হবে কেমনে ? আমার দয়াল গুরু দয়ার সাগর, সবার মনের ভাব জানে। এক ধারা মা’নে যেই করে সাধন হয় তার ভজন গুরুর চরণ যে জন দোদেল বান্দা কলমা চোর হয়, তার ভজন সাধন বৃথা যায়, দরে ইঁদুর থাকতে দরের মুখ ছাপায়, করে মানুষ দেখলে আল্লাহ আল্লাহ,

দূরে যেয়ে নদা নাচায়, ভাইরে ঐ সাধনে কাম হবে না সাধুর নিশান চোরের নায়, যে ভাবে ভাই যাহার ভক্তি হয়, দয়াল সেই ভাবে তাহার দেখা দেয় আমার দয়াল গুরু সবের মন যোগায়, সে ধনী মানী পার করে না, কাঙ্গালের নায় সখা হয়, লাগবে না তার পার ঘাটের কড়ি, তাই পাগলা কানাই কয়, যে উঠতে পারে সেই তরীতে, তাড়াতাড়ী সে পার হয়ে যায় ।

(৩০৭)

ওরে মনের দুঃখ বলবো কারে শোন ভাই সকল, আমি হয়েছি উলাই পাগল । ছয় জনা আমার দেহের মধ্যি করে গোগুগোল, আমার আমি তাই চিনলাম নারে, আমি ভুলেছি সেই গুরুর বোল, লোকে বলে হয়েছি পাগল, আমি কেমন করে যাব ভবপারে আমার পারের নাই সম্বল ॥ সেই পারের ঘাটে দিচ্ছে খেয়া গুরু কর্ণধার, সে যে ধারে না পয়সারই ধার, রসিক জনে পাইলে পরে অমনি করে পার, যদি প্রেম-রসিক হইতে পার, আগে বান্দরে সেই প্রেমের ধার, গুরুর চরণ করবে নেহার, ও সেদিন শুরু হবে ভরতরি ভাই, শিষ্য হবে কর্ণধার ॥

পাগলা কানাই বলে শুনরে কোরবান কই তোরে, তুই যাবি যদি ভব পারে, গুরুর চরণ সম্বল রেখে চড় ইষ্টিমারে, সে যে অনায়াসে পার করে নিবে, গুরুর ঐ চরণের জোরে-পয়সা কড়ি লাগবে না পারে, সেদিন চরণ টিকিট দেখাইলে ভাই ওমনি দিবে ছাড়ে

(৩০৮)

পাগলা কানাই বলে ও মন রসনা, গুরুর চরণ কর সাধনা, সমন জ্বালার ভয় রবে না ভয় রবে না, আত্ব তত্ত্ব, পরম তত্ত্ব-জ্ঞানীজনে জানে অর্থ, অজ্ঞানে তা জানে না, সেই গুরুর চরণ নিষ্ঠুর অতি তারে কেউ চিনল না, চণ্ডীদাস ও ধনঞ্জয় ঠাকুর রে, কারে কেউ ছাড়তে পারল না ॥ নবরসে নব কীর্তি, করতে পারলে আদর ভক্তি, নয়ন ভরে দেখতে পাবি চব্বিশ পরগণা, আরো গুরুর নামে ডংকা মারে, যাবিরে মন ভবপারে, যাবিরে মন ভবপারে, যাবিরে মন রসনা, সেই গুরুর চরণ করলে স্মরণ মরণ হবে না।

তাই, পাগলা কানাই বলে, ও কোরবান মরণে কেউ সংগী হল না ॥ এক মরণ মরছিল কবির জোলা, তার আফছোছেতে পাগলা ভোলা, কাধে লয়ে আঁচলা ঝোলা, আরো হাড়ের মালা সে যে শ্মশানে মশানে থাকে, সর্ব অংগে ভস্ম মাখে, সর্বদায় থাকে গাছতলা, রূপ নিহারে বইসে সদয় বাজায় বোম ভোলা, আরো অহল্যা পাষাণী ছিল, সেই জানে মরনের জ্বালা ।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৪

 

(৩০৯)

ছাড় খেলা, ওমন ভোলা, ভবে এসে তোমার কি লাভ হোল, তুমি পঞ্চ নামাজ পড়, পরকালে তোমার হবে ভাল, চার ইমামকে ঠিক রাখিয়ে, ইমান হোসেনকে মোজাপ রাখ, মুখে লা-ইলাহা চার কলেমা, হর হামেশা বল ।

রোজা নামাজ তাজ বন্দেগী মন কর সকাল বেলা, সুন্নত ফরজ আদায় করে খোদার নামে দেওগে মেলা, সুরা ইয়াসিন পড় হুঁশিয়ার হয়ে, ঠিক পথে চল মন পাগেলা, তা না হলে তোমায় লয়ে রোজ হাসরে ঘটবে জ্বালা | শরিয়ত, তরিকত, হকিকত, মারফত, চার তরিক ঠিক না হলো, বিড়াল বড় সাঁতারী তার লেজে বাধে কূলো, আঠার হাজার আল্লাহর আলম বাহাত্তর হাজার কালাম, কোন হেতু গঠেছে দানে কোন হেতু জগৎ তামাম, কানাই কয় ওফাৎ হলেন কোন নবী আলাহে ছালাম

(৩১০)

হারে হারে মন ভাব নিরঞ্জন সাধুর সংগে মিলে, যেদিন ভবে এসেছিলেরে মন কি বোল বলিয়ে, দেহ ছেড়ে মহা-আত্মা যখনেতে যায় চলে, হায় কিরে তোর মাটির দেহ, পড়ে রবে ভবের পরে, ভাই বন্ধু দাফন করে রে, সেদিন নিবে কব্বরে হারে অবোধ মন, ওরে পাগল মন, তুমি বুঝে কেন বোঝ না, যেদিন কব্বরেতে অন্ধকারে থাকবিরে তুই একেলা, হবে ঘোর অন্ধকার, দেখে চমৎকার, সেই যে রে কি ভয়ঙ্কর, দুই ফেরেস্তা সেজে এসে পুছবে রে তুই বান্দা কার, কি জবাব দিবি তাহার হুজুরে, সময় থাকতে হওরে হুশিয়ার ॥

ছাড় ছাড় মন, ছাড় ছাড় মন, ছাড় ভবের খেলা, যেদিন ইস্রাফিলের শিঙ্গায় সব হবেরে আখের ফানা, তিরিশ রোজা পঞ্চ নামাজ, কোরানেতে যায় জানা, অধম পাগলা কানাই বলছে রে ভাই, চিনলি না তুই দিন কানা, তিরিশ রোজা পঞ্চ নামাজ সকলে কর সাধনা |

(৩১১)

পাগলা কানাই বলে ও মন রসনা, বুঝাইলে বুঝ মানো না, ভবে আসা যাওয়ার যন্ত্রণা জানলে আর ভরে আসতাম না, আসি বলে ভবে এসে ভাবছে আর যাওয়া হবে না, আশায় আশায় দিন ফুরাবে যাওয়ার দিন নিকটে হবে, যেদিন শমন আসে বাঁধবে ক’ষে, কাঁদবি তুই একা বসে, কাঁদন তোর কেহই শুনবে না ॥

তাই বুঝে কর সাধনা-দিন গেলে কেউ রবে না, প্রেম মায়ায় মজে খাও মিছরিদান, আলেম ফাজেল তাই বুঝে আর পাপ সাগরে ডোবে না, কেউ হয় রাজ্যত্যাগী, কেউ হয় অনুরাগী, কেউ আবার হয় বৈরাগী, সংসারের আশা রাখে না, অধীন পাগলা কানাই কয় মন পাগলা, কেনে কর অবহেলা, ঐ বুঝি ডুবলো বেলা, ছাড় এবার কাম রসের খেলা, শমন যদি করবে দমন-সার কর নাম মালেক আল্লাহ, পাগলা কানাই কয় শোনরে কোরবান আলী, বৃথা ভবে আইলি গেলি, নিজের ধন পরকে দিয়ে কাধে লও আঁচলা ঝোলা ॥

(৩১২)

শোন বলি শোন ওরে মন পাগলা-তুই রইলি কেন অচেতন, কোন দিন যেন। আসবেরে সরকারী শমন, তোর দেহ জমি পতিত তার অন্বেষণ, করে আড়ে দীঘে ঠিক নামাইয়া কোন কোণে ঈশান কোণ-কোন কোণের কোণে। আছে মহাজন, দিন কানা তাই ঠিক পালামনা রইলাম অঞ্চলের মতন 1 কোন কোনেতে বসত বাড়ি কোন কোণেতে ঘর, দিন থাকিতে ভরে মন সেই জমি কর, আড়ে দীঘে ঠিক নামাইয়া ঈশান কোণে দস্তিগার।

একটা ভি বেড়া দিগে তাতে একটা প্রেম ফলের গাছ রোপণ কর, যাতে জন্য খরচ কারেন হবে তোমার, আর ছয় বলদে যায় না যেন ভাই, বাগান রেখো খবরদার ॥ পাগলা কানাই বলে শোনরে কোরবান কই এখন, ও তুই চিনলি না পর আপন, আড়ে দীঘে ঠিক নামাইয়া কোন কোণে ইশান কোন, কোন কোনের কোনে আছে মহাজন, দিন কানা তাই ঠিক পালাম না, রইলাম অঞ্চলের মতন (৩১২) |

(৩১৩)

ও আমার মনেরে লয়ে ঠেকলাম বিষম দায়, সে যে গামছা মোড়ার দলে ফেরে দমবাজে দমবাজো খেলায়।

তারে ধরতে গেলে না দেয় ধরা, পালায়ে যায় কুটনী পাড়া, কেমনে ধরব সে মনচোরা ॥ সে চোরা চুরি করে নেপুর দিয়ে পায়, সে জাগাল ঘরে করে চুরি-ঠিক পায়না দ্বারী পাহারায়, ঘরে থাকতে মানুষ করে চুরি- উংকা মেরে ঘুরে বেড়ায়, তারে ধরা বড় দায় হইল সদরপুরে চোরের বসতি, কামেতে প্রেম গিলটি করা ধরছে, যার আছে জ্ঞান বাতি, যেমন আগলা নাও শয়তানের ঘোড়া, গুরু বলে যার নাই প্রেম ভক্তি, তাই পাগলা কানাই বলে, হোলরে তার ঠগবাজারে গতি |

(৩১৪)

শোন বলি মন পাগল সাররে তিন তাসের খেলা, এই না ভবের হাটে, তোর সংগে আছে ছয়জন দাড়ায়ে, তারা দুষ্ট আর বোম্বাটে, কেউ তারা সংগে না হাঁটে, তারা কাম ছেড়ে যায় লোভের ধারে মন, তোফিল বাঁধে আইটে ॥ দুই মুড়া দুই সব নিকাশের কাগজ, ও আবার লক্ষ্য করে যারা, যদি কুমতি হয় এক দরা মুহুরী খাড়া, জমা ওয়াশীল লেখে তারা, দাখিল হয় এক জনের কাছে, দলিল-পত্ৰ পাগলা কানাই বলে ও আমার মন, সেদিন নিকাশের চোর পড়বে ধরা । তাই বুঝিয়া ও আমার মন, কর সেই আপ্ত সাধন, সাধন কর ত্বরা, তিন তাসের খেলা সাংগ কর মন, খেলা করা আজ সারা ।

(৩১৫)

ধড় বলে মনের কাছে ভাবের খেলা এই তিন তাসে, খেলো সর্বজন। ঠকতে ঠকতে চিনতে পারবি মন, নিদানে পাবি খাঁটি সোনা, ও ধড় তুমি তা জানো না, খেলতে খেলতে খেলুয়া যে জন, ও তারে খেলতে যাবে কেনা ৷ দুই মুড়া দুই ছবি ধরা, ও তোর দলিলের কাগজ নিকাশ করে তারা, তোর সংগে ছিল যোগী অন্য যারা,

ও তারা তিন তাসে মিল দিচ্ছে, ও তার কি জমা খরচ আছে, এই জগতে আর রহিলনা পাছে, ও তারা আর এক জগতে আছে ৷ থাকেতে থাক মিশে যাবে পরমেতে জীব লয় হবে, কার নিকাশ কে দিবে? তিন তাসের খেলা সাঙ্গ হল, হাকিম থাকে কোথাকারে, ও থাকে কোন শহরে, পাগলা কানাই কয় সুবিচার করে, ও সে দিন চোর ধরিবা কারে

(৩১৬)

আমার মনেরে বলি ডাইনে যেতে, মন যে চলে যায় বামে, পথ থুয়ে অপথে যেয়ে-কুপথে ‘নামে, আমি শোন বলি মন তোরে, কত চিনি ছানা ত্যাজ্য করে তাল তলায় বেড়াও ঘুরে ॥ ডালিম বলে মাকাল ফলকে ভেবেছ সুফল-বেসন ভেবে পারা খেয়ে ভুলে রলি কেন বল, তুমি শোনরে অজ্ঞান নেশাতে ভোর হয়ে গেল তোমার কুলমান, সুখের পালঙ থুয়ে মাসির ঘরে মনের আনন্দে করলে শয়ান ॥ তাই পাগলা কানাই বলে-সভায় বর্তমান, ও তুমি শোনরে অজ্ঞান, তোমার মাথায় উঠেছে বেল গেছোভূত, ভূত ছাড়াও সভার মাঝে, আর মন তোমার ঠিক রাখো ইমান |

(৩১৭)

ও ঘাটে নামবি যদি মনা, আগে গুরু কর ভজনা, আগে শক্তি থাকতে কর সাধনা, থাকতে শক্তি কর ভক্তি কুম্ভীরের ভয় রবে না, ও ঘাটে নামবি যদি মনা ॥ আরো প্রেম পাথরে সাঁতার যে দিছে, ও তার কুম্ভীরের কি ভয় আছে, ওরে কুম্ভীরকে সে জয় করেছে, ঘাটে নামলে মরা মানুষ, কুম্ভীর হয় বেহুশ, সেই কুম্ভীর ধাইয়া কুম্ভীর খাইছে, তার কি জরা মৃত্যু আছে ? তাই পাগল কানাই কয় সেই ঘাটে কুম্ভীর রয়, তাজা দেখলে ধরে খায় মরা দেখলে দৌড়ে পালায়, পাগল কানাই কয় ও মন সাধ, আজ কেনে হলি বুধু, দিন থাকিতে মুর্শীদ ধরে সাধন ভজন করতে হয়, ও তার কিসের কুম্ভীরের ভয় ॥

(৩১৮)

পাগলা কানাই বলে, বলি তোরে মন কেন বুঝেও বোঝ না, এমন অসৎ লোকের সংগে লয়ে হারালি ষোল আনা । মাল আমাল নিল লুটে, ছয় জন মুটে, তাও তুমি জেনে জান না ॥ লাভের ধন পিঁপড়েয় খেয়ে গিয়েছে, বুঝে দেখরে দিন কানা, ভাই বুঝে অবলা মন গুরুর চরণ কর সাধনা, কেন অসৎ লোকের সংগ লয়ে হারালি ষোল আনা লয়ে গুরুর চরণ অমূল্য ধন, সে ধন কেন চিনলে না, ওরে মন কুয়োকারের সংগ লয়ে পরকালের পথ চিনলে না, আদার ব্যপারী হয়ে দিন।

কানা, সোনার মর্ম জানলে না, গুরুর চরণ চিনলে না যে মন কলুর বলদ ঘুরে মল, চোখ থাকতে কানা, মন আমার আখের ফানা, পাগল তোমায় যাবে চেনা । রতি মাশা কম থাকলে তোমায় ছাড়বে না, ওরে মন জুয়াচোর সোনার মর্ম জানলে না, ওরে মন অপার নদী,পারের বিধি, যদি সে পার করে তাই বুঝে কর সাধনা

(৩১৯)

পাগলা কানাই কয়, আমি মনের কথা আর বলিব না, মনকে বুঝালে সে বোঝে না। আমি যে পথে যাই মনের সাথে, সেই পথে মন ঠিক ঠিক চলে না, আমি দেখে হই হারা ওরে মন-চোরা, তোরে ঠিক পালাম না ! একি ঠগের বেচাকেনা, আমি দেখে হত ভাবছি কত, দিন গেল হয়ে গত ঠিক পেলাম না, ভবে আসা যাওয়া হল এক সমান কেবল কাজেরই আনজাম, আমি সুপথ এড়ি, কুপথে বেড়ি, তিন জড়াজড়ি ঝাঝা ও ক্যান, যে দিন আজরাইল আসিবে দুই হস্ত বাধিবে রশি ধরে দিবেন টান,

সে দিন পাবে না আছান ॥ তলব চিঠি করবে দিষ্টি, জমা খরচ আপন মুষ্ঠি, খাটবে না কোনই ফষ্টি ঘটবে তুফান, সাথে সাথে মন যদি থাকে কেউ, উঠিতে বসিতে ভব-সিন্দুতে মনে মেনে ওঠে ঢেউ, ঢেউ লাগলে ভরাডুবি সাতরা সাতরি সার নদীর মধ্যে মধ্যে বালুর চর ॥ কূল ছেড়ে অকূলে গেলে জল-ডুবি হবে নিরন্তর, সংগে তোর ছিল যারা জুয়াচোর তারা, করতেছে ডাংগাদার, সে যে দিবসে আন্ধার মিছা মায়ার কারণ ঘুরিয়া মরণ পারাপার করলি রে মন, কূল পাবি না শেষে হবে, ডিংগা বওয়াই সার ॥

(৩২০)

ও মন কি হোল কি হোল বসে ভাবছি তাই, আমার পথের সম্বল কিছু সাথে নাই, কাল কাটালাম হাসে রসে, সমুখ বাড়িতে রলাম বসে, পাছ বাড়িতে কি হোল তার ঠিকানা নাই । ও মন দুনিয়াদারি এ ঝকমারি মিথ্যা বসত সার, না বুঝে কেন প্রাপ্ত-বন্ধু করলি রসাতল।

পাগলা কানাই বলে, সামাল মন রে রসনা, তোমার পাছবাড়িতে বসত করে রিপু ছয়জনা, তুমি সকুতলে হুঁশিয়ার থাকো, ক্ষতি হবে না মহাজনের ষোল আনা, তোমার পাছবাড়িতে সিধ কাটিছে, প্রাপ্ত বস্তু চুরি যেতেছে, মহাজনের কাছে মন তোমার ঘটবে যন্ত্রণা ।

(৩২১)

শোন ওরে পাগল মন কেবা পর কেবা আপন, পরের জন্য ঝুরে মর তুমি কারণ। সাঁই বিনে নাই গতি, দুঃখে সুখে যে জন হয় সাথী, সকলেরই আহার যোগায় জগৎপতি, মউতকালে যাহার নামে রে মন পাবারে সুমতি। যে তারে না চিনে খুঁজলে পাবানা ত্রিভুবনে, ভক্তির সাথে দেখরে জানে প্রাণে, যে তারে চিনতে পারে আছে তার চোখের কোনে ॥

(৩২২)

ভবে এসে বুলি বসে কাল কাটালি হাসি রসে, রলি মন মায়ার বশে, যেদিন আসবে শমন বাঁধবে কষে, ও মন সেই দিন তোমার কি হবে, তাই দেখ ভেবে, ভাই বন্ধু সূত দারা কেউ সংগে না যাবে।

তিরিশ মতি পঞ্চ মানিক তাই করবে সংগের সাথী, তাতে তোর হবেরে গতি-যে দিন রোজ হাসরের ময়দান পরে হিসাব নিবেন আল্লাজী, ও মন তাই ভাবি, উসুলের জমা খরচ সব রল বাকী, চেয়ে দেখ ও মন ভোলা, ছাড়ো রসের খেলা, দেখ চেয়ে ডুবে যায় বেলা, তোর সংগের সাথী কেউ হবে না, কাঁদবি বসে একেলা ও মন পাগলা-দিনের কাম কিছুই করলি না । ডুবে যায় বেলা ॥

(৩২৩)

পাগলা কানাই বলছে সাধের মন, মুখে বল নিরাঞ্জন, দীনবন্ধু জগৎপতি সে বিনে নাইরে গতি, ভরসা শ্রী গুরুর চরণ, এক নারীর প্রেমে মত্ত হয়ে হারালি অমূল্য ধন, বিফলে গেলরে দিন কেউ হল না আপন পুত্র ছেলে ঘরের পরিবার তারা কেউ হোল না আমার, তারা কেউ হলো না আপন, যেদনি শমন আসবে বাঁধবে কষে ছেড়ে যাবে আপন জন । হবে একেলা গমন । ভবের কামাই ভবে থুয়ে খালি হাতে যেতে হবে, শোনরে পাগল মন ।

যেদিন শমন এসে দুই হস্ততে লাগাবে ডুরী, সেই দিন তোমার ধড়ের মালিক করবে চুরি, আট কুঠারী নয় দরজা আঠার কুঠুরী, সেই দিন তোমার ঘটবে বিষম দায়, আমি ভাবি তাই সদায়, পিঞ্জিরা আধার করে প্রাণ পাখি যাবে ছেড়ে, ছয় ইন্দ্র রহিবে কোথায়, চার চৌকিদার ষোল পহরী, তারা কোন দিন যেন ছেড়ে যায়, আমি ভাবি তাই সদায়, পাগলা কানাই বলে অন্তিমকালে নিরঞ্জন বল মুখে দিন, তো বয়ে যায়॥

(৩২৪)

শোন বলিরে মন পাখি রতন, তোমার সু-পথে আর নাইরে মন, কু-পথে যাও কিসের কারণ পাখি নাই তোর মনে কোন দিনে, আসবেরে বিষম শমন, न হবে তখন পাখি মনের কথা ভেংগে বল না, পাখি বুঝালে তো বোঝ না, ভজন সাধন কিছুই শিখলে না, কোন দিন জানি যাবা ছেড়ে, আমায় করে ছলনা, পাগলকানাই বলে মন পাখি রতন, আমায় ফেলে যেও না 1 পাখি কোন দিন জানি যায়।

উড়াল ছেড়ে, অতি যত্ন করি তোমারে, বল পাখি কি হবে মোরে, সাধের খাঁচা শুনা করে, ফেলে যাবে কেমন করে, পাগলা কানাই বলে মন পাখি: রতন আমি। ছাড়ব না তোরে

(৩২৫)

শোন ভাই বেরাদর-এলে এই ভবের মাঝার, তাই বুঝে কর সদাই কারবার, ইহার নিকাশ দিতে হবে গোরের মাঝার মোনকীর নকীর দুই জনে উঠাইবে যখন, মউতের কোড়া নিয়ে খাড়া হবে সামনে তখন, পুছবেরে তুই বান্দা কার ছিলি কার দিনে, সে দিন কে তরাবে আল্লাহ বিনে ॥ নেকী বান্দা যে হইবে পুছিলে উত্তর দিবে, খোদার বান্দা যে হইবে, পুঁছিলে উত্তর দিবে খোদার বান্দা ছিলাম আমি রসুলের উম্মত। রোজা নামাজ হজ্ব যাকাৎ তাই এনেছি সাথে, কানাই কয় কবরেতে করবি যাপন অনন্ত রাত

(৩২৬)

কানাই কয় ও ভাই সকল চার কালের কোন কাল ভাল, মার উদরে জন্মস্থান, শিশুকালে ওরে অজ্ঞান, যৌবনকাল হাসে রসে, তিনকাল গেল শেষে, সামনে এই নৈরাকার, শুকনোই সাতার, বিষম দায় হল ॥

মেঘনা নদী পার হও যদি, ওরে উড়াও ছেদের পাল, মনমাঝি জোত কষে তা’লে ব’সে, সর্বক্ষণ সামাল সামাল, এসে যদি পার হও নদী, দেখবে ভাই যার যেমন কপাল ॥ দাঁড়ে বৈঠয় শক্ত হও, যোগে যাগে বেয়ে লও, পাপে বোঝাই কি করি কও, মাঝি দড়ায় রেখ টান, উঠেছে বিষম তুফান, হাতে বোঠেই বেয়ে ভাইরে, ও নৌকা লাগাও কিনারায়

(৩২৭)

বাদি মন কর সাধ্য সাধন, হয় যাতে নিরিখ নিরূপণ । তাই বুঝিয়ে ও মন ভোলা, ভজ গুরুর শ্রীচরণ । পিছের দিকে দেখনা চেয়ে, নিকটেতে আইছে কাল শমন ॥ তাই বুঝে আপন কাজে মজে, ঠিক পথে চল মন রসনা, ধন দৌলতে জোয়ারের পানি, ভাটা পলে আর থাকবে না, সংগে তোর ছিল যারা, জুয়াচোর হল তারা, লুটে নিল মহাজনের মাল ষোল আনা ॥

পাগলা কানাই বলে, বাদী মন চল সু- পথে, দুধ বেচে মদ কিনে খেয়ে পড়ছ বিষম কু-প্যাচে, তোমার উষুলে শূন্য পল, জমাতে বাকী রল, কি জবাব দিবা তুমি সে মহাজনের কাছে !

(৩২৮)

করব আমি নতুন বিয়ে সব নতুন, গায়ে দেব নতুন খিলকা চাদর জামা নূতন, ওরে আমার মন, নতুন বাস করবে যে আয়োজন, সাড়ে তিন হাত মাটির বাসর নূতন, আতর গোলাপ সাবান নূতন, গোসল করাইবা মনের মতন ।

সেদিন আত্মীয়গণ বেড়া দিবে মন মতন, পাইবা আল্লাহ রতন, একা আমি করব গমনরে, আমার মন, খাশ কুটুম আসিবে সকল জন, বড় কুটুম মোল্লাহ সাহের তখন, ইমামেতে হবে খাড়া, সাদিবে চার বেহারা তখন সেদিন আত্ম ব্যাবার দিবে মনের মতন, দরজায় দাড়াইবে চলন, বাঁশের ঘরে কেউ যাওনা কি.. কারণ, চার কুল পড়ে বন্দ করে, কানাই কয় বিয়ে হল আমার মন ।

(৩২৯)

উজোল বলে কানাই ভাই ভবে এসে কি লাভ হল, লাভের জন্য দুনিয়ায় এসে আমার লাভে মূলে সব ফুরাল ॥ এক মহাজনের পুঁজি লয়ে দুই ভাই এসে রে, ভবে জুয়া চোরে লুটে নিল আমায় তাহা ফাঁকি দিল ॥ আসল বাকি ফাজিল বাকী নামে নাম মিশাইল, হিসাবের দিন পড়বে ধরা সেদিন কেউ হবে না কারো, জল্লাদ মারবে কোড়া আরো ॥ পাগলা কানাই ওস্তাদ আমার দয়া করে পার করো, তা বিনে আর উপায় নাই, সম্বল আমার কিছুই নাই, পীর মুরশিদের দোয়া নিয়ে। যদি আজাবে আছান পাই ॥

(৩৩০)

শোন বলি ওরে মন, ভাবিস তুই অকারণ, মিছে তোর ভাবনা, তুই ৱলি ভুলে মায়া জালে, বেলা গেল না মন চেনো না। তুই রইলি তাদের বশে, বুঝি ঘটায় কুঘটনা ॥ সংগে তোর ছিল যারা আপন কেউ নয়রে তারা, কথা বললে তো শোন না।

তাদের সংগে রিপু বাদী তারাই ছয় জনা, মন চেন না । কি হবে তোর সেই অন্ধকারে, বুঝি নাই তার ঠিকানা ॥ রোজা আর নামাজ যাতে তোর হবে কাজ করলিনে তা মনে । তোর পুলছুরাত পার ঘোর অন্ধকার,পার হবা কেমনে। সেই কঠিনে পাগলা কানাই ভেবে বলে, গতি নাই সে বেদীনে ॥

(৩৩১)

ও মন রসনা, আছে রিপু ছয় জনা, সময়ের বন্ধু অসময়ে তোর কেউ হবে না । তাই বলছি তোরে রসনারে, আল্লাহ কুরসে ডুবাইও না, দিন গেল বিফলে সাধন হল না । ও ভাই ভেবে দেখরে মন-তোর হল না সাধন । মিছে কাজে গেলরে দিন সকল অকারণ ।

তাই সংসারের নাই কোন সার, ও যে আমার আল্লাহর ত্রিভুবন, মায়াতে বিভোর হয়ে রইলি পরিজন ॥ এ ঘর ছাড়িয়ে যেদিন যাইবা গো রে, ও মন সেই অন্ধকারে, তাই বল আমারে, কোন জনা বাতি দিবে ৱে তোমার । পাগলা কানাই ভেবে বলে নিশ্চয় আল্লাহ কি জানি হয় আমারে, কু পথে যাবি নারে মন বলছি তোমারে ॥

(৩৩২)

কানাই কয় মন মজুরায়, কার জন্যে মজি, রোজা নামাজ তাজ বন্দেগী, এই দুনিয়ার পুঁজি, সার করেছি ডোর কৌপীন, আপনারে না বুঝি, দেখলাম দ’নে জেনে শুনে, মিছে ভোজের বাজী, আধার ঘরে জ্যান্ত মানুষ, তা দেখে হসনে বেহুশ, মনের মানুষ রাখগে রাজী ॥ ভোলা মন নায়েবগীরী করছো যাহার, হাকিম হয়ে রইছ বসে করতেছ বিচার, তোর অষ্টমীর দিন হবে যেদিন, বেধে নিবে জমিদার, তোর উত্তলেতে যত বাকী, কোন কাজ করলিনে তাঁর।

দারুণ এক শমন এসে বাধবে কষে, কাদাবি বসে জারেজার ভুলে রহাল ওরে কানাই, দিনে দিনে দিন ফুরায়, করলিনে তোর দিনের কাজ। মুরশিদ ধরে তৌবা পড়ে, কবুল কর তুই শরিয়ত, ময়দান পরে জামাত হবে, সে দিন তোর হিসাব নিবে, যেদিন হবেরে রোজ কিয়ামত ।

(৩৩৩)

মনকে বলি ডানে যেতে, মন সে বামে চলে, পথ ছাড়া বিপথে নিয়ে ডুবায় গভীর জংগলে, শোন বলি অবোধ মন তোরে, তাল তলায় বেড়াও ঘুরে, না জান সার পদার্থ, না জান গূঢ় অর্থ, নেশাতে হয়ে মত্ত যাও মদের ঘরে ॥ ডালিম বলে মাকাল ফলটি করলিরে তুই খানা, কাশন বলে পারা খেয়ে ভুলে রইলি কোন জনা, শোন বলি ওরে অজ্ঞান, নেশাতে হয়ে ভোর ওরে গাঁজাখোর, গেছেরে তোর কুলমান ।

সোনার খাট পালঙ ছেড়ে তুই রলি ঘোসীর ঘরে, আপন মনের দোষে হলিরে শয়তান ॥ কানাই কয় ঘুমের ঘোরে ছিলাম অচেতন, মালখানোতে যেয়ে চোরা নিলরে সে ধন, পেলাম না চোরের অন্বেষণ। ও সে বিষম চোরা, না যায়। ধরা, তার ভেদ জানে সাধুজন। সে চোরা ধরব বলে করে আছি যোগ আসন । তবু পেলাম না সেই যে চোরের কোন অন্বেষণ ॥

(৩৩৪)

এসে ভবের পর ভাবি নিরন্তর করব ব্যাপার কেমনে, মহাজনের পুঁজি করে দমবাজী, হারালাম এই ভুবনে, ভাবি সদায় তাই মনে মনে, ভগ্ন তরি চালায় কেমনে, ও দাঁড় টানছে ছয়জনে করে কুমন্ত্রণা দিল কুমন্ত্রণা, সেই জনার ভুবনে ।

মাঝি আলা ভোলা, মারে উজান ঠেলা, বাধল ঘোলা ত্রিবিনে ॥ জহর মনি বোঝাই, ব্যাঙা পিতল কাসা, মদন কাকা তার কাণ্ডারী বুক ভরা এ তুফান ভারি, ঢেউ দেখে মরি মরি উপায় কি করি, খোলায় পড়ে সে তরী, রশি যায় কেটে, সে বোঠে ছুটে, লাগল যেয়ে প্রেম বারি ॥ সে তরীর আশা মিছে ভরসা, কার আশায়। তরাও গো এসে না জানি সাঁতার, করে নিবা পার, চরণ দুখানি দেও এসে ।

(৩৩৫)

একদিনে বিয়ের সাজন সাজরে আমার পাগল মন, শাহাদাৎ কলেমা পড় জনমের মতন। মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়, রাছুল উল্লাহর তরিক ধর, ঘুম ভাংগিয়ে হয়ে দেখ চেতন, আছে আতর গোলাপ ফুল সাবান, করবি যদি গংগা স্নান, অহংকারের না ফরমানি কাম ছামনে চেয়ে দেখ গোর কাফন ।

আছে হিন্দু কিংবা মুসলমান, এক মায়ের দুটি সন্তান, মউতকালে তৌবা পড়ে যত মুসলমান, হিন্দু পার হয় বৈতরণী, সকলের এক প্রাণ তো জানি, কাজের বেলায় সকল এর সমান । আছে এই ভবে সবার মরণ, মুসলমানের গোর কাফন, হিন্দু মলি শ্মশানে।

দাহন, হবে এ দেহ চার চিজে মিলন ॥ সুখের ঘর সোনার বাড়ি সবই তোর পড়ে রবে, সাড়ে তিন হাত সাদা কাপড়, তোর অংগেতে পড়াবে । সেদিন কাঁদবে বসে বেরদারে, কেহই না সুধাবে তোরে, বেটা বেটা বলে কাঁদবে মা, আছে তিন কাতারে লোক খাড়া, সেজাদা নাই নামাজ সারা, অবোধ পাগলা কানাই কয় খাটলা কাঁদে তোলে, চার মঞ্জিলে নিয়ে তোরে রাখবে নিরালে ॥

(৩৩৬)

পাগলা কানাই বলে আমার সুখের দিন বয়ে যায়, কোন দিন যেন আসবে কাল শমন রায় । যখন আসবে কাল শমন রায় যখন বসি নিরলে দগ্ধ হই চিন্তা অনলে, পরের ভাবনা ভাবতে আমার দিন যায়, যখন ছিলাম মাতৃগর্ভে গুরু ভজব বলে ছিল মনের বাসনা । সেও আশা নিরাশ হল, কাল যম এসে ধরে নিল । বিধি কি দায় ঠেকাল যন্ত্রণা, তাই ভেবে ও আমার মন পরের ভাবনা ভাব কি কারণ এই পরকি আপন হবে সকলই ছেড়ে যাবে অসময় সাথী কেউ হবে না, তাই বুঝে চলরে মন রসনা

(৩৩৭)

শোন বয়াতি আমি তোমায় জিজ্ঞাসা করি তোমার ঐ দেহের কারখানা তোমার দেহের মাঝে কেবা থাকে, তাই ভেংগে কেন বল না বিজ্ঞ লোকের পুত্র হওতো কুণ্ঠিত হয়ো না, পষ্ট করে বল রাজ সভায়, না বলিলে সভাস্থলে ঘটবে বিষম যন্ত্রণা । চারটি আংগুল দেহের মাঝে বিয়াল্লিশ হাজার দ্বার-এক হাজার মেরুদণ্ড রয় কোন দরজায় কেবা থাকে সেই কথা কও আমায় না বলিলে বয়াতির বাচ্চা।

ছাড়বো না তোমায় নাভীর নীচে কোনজন আছে, বাহাত্তর সেজদা তোমার দেহের মাঝে কোন জায়গায় আট কুঠুরী দেহের মাঝে, তাই বল আমার কাছে, দেহের মধ্যে ছয়জন ঋপু কোন জায়গায় আছে, কোন দরজায় কে বা থাকে, সেও কথ কও শুনি, মূর্খ পাগল কানাই বলে তোর বাপ ছিল সম্মানী, তারই ছেলে কেনৱে তুমি, মাঠের পরে ঘাস খেতেছ, লয়ে পিঠে বাতাসা ও চিনি ।

(৩৩৮)

শোন বয়াতি মায়ের উদরে ছিলে যখন নামটি ছিল কি? কোন পালি তার আসন ছিল নামটি তখন জপছ কি? শুনি চব্বিশ চাঁদ-আদি চন্দ্ৰ কিসে হইল, আলীর বাপের কি নাম, কোন চাঁদে হয় চাঁদের খেলা, কোন চাঁদে হয় কয় মোকাম, দেহে আরো চারটি খান্দান আছে, খান্দানের কি নাম আরো মক্কা মজিদ ঘর, সে ঘরে আজান দেয় কোন পয়গম্বর, তাই পাগল কানাই কয়, সভায় এসে বয়াতি বল তার খবর |

(৩৩৯)

শোন ভাই বয়াতি তোমায় জিজ্ঞাস করি আমি দেহের কারখানা, ৩৬০টি আছে জোড়া, ৩৬০ টি আছে টানা, আদি মূল আর একটি টানা, সেই টানার সংগে ঘটনা, সেই টানাটি কোথায়রে ভাই তাই আমার শুনতে বাসনা ।

আছে ভাগীরথ আর কাল যমুনা, ত্রিবেণীর ঘাট ত্রিকোলার হাট কোথায় ঠিকানা, তোর নাকের নিঃশ্বাস কেবা টানে তাই ভেংগে বল না, মন মণি আর দুইজনা, তারা কি নাম করে জপনা, ঘুম আসিলে দেহ ছেড়ে বাহিরে থাকে কোনজনা ॥ মায়ের উদরে জন্ম নিয়ে ভেসেছিলে দুঃখ সাগরে, তখন আসন ছিল কি, কি খাইয়া জীবন বাঁচালি, শুয়ে ছিলি কোন শিওরী, তাই বল ও ভাই বয়াতি তোমার দেহে ছিল কোন কালি । কোন কালিতে চোখ মাজিলে জন্মের আগে দেখলে কি ॥

পাগলা কানাই এ ধূয়ো বেধেছে, মখদুমুদ্দি তাই বলতেছে দেহের অর্থ আছে বেশি বলবো কি, দুই চার কথা জিজ্ঞাস করি জবাব দে ভাই বয়াতি, আমি অতি মূর্খমতি আগে করি মিনতি, শাস্ত্র মতে জবাব না দিলে শেষে ঘটায় কু-মতি ॥

(৩৪০)

পাগলা কানাই কয় এ দেহের মধ্যে আছে আরেক মহাজন, আমি নিরবধি নদী- স্থিতি পাই না তাহার নিরূপণ। আমি ক্ষণে হেরি ক্ষণে ফিরি, ক্ষণে যোগায়, সাধুজনার মন, ওরে মহাজন সামান্য কথা মর্ম কথা মনে ভাই দূরে তাই, সাধু জনার দয়া হলে ত্রিবেনীতে হয় জোয়ার, আছে লাহুত চন্দ্র ইন্দ্রগুলি সকল তারা একই তারের তার, কালোচন্দ্র আছিল ভাই মণি কুঠার কাছে, তার আজ্ঞাচন্দ্র নষ্ট হলে বিভ্রান্তি হয় শেষে ।

তুমি শাস্ত্ৰ মান দিন গা গোন গুরুর বচন মিথ্যা নয়, আছে চাঁদের কিরণ সূর্যের কিরণ গণকেতে গুণে কয়, পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে আমার জীর্ণ দেহ কি হবে উপায় ॥

(৩৪১)

পাগলা কানাই বসে এসে ধর্মরাজ সভায় অমাবস্যা পূর্ণিমাতে কাম নদীতে। জোয়ার বয়, কাল কুত্তার সব ঘুরিয়া বেড়ায়। নতুন জলে ছান করতে গেলে তারে কাম কুটীর ধরে খায়, তার ভেন জেনেছে সাধুজনা ভবের বাজারে, সে যে মদন রাজার ধারে ধারে আছে অনুরাগ ধরে, কি করিবে তার কাম কৃষ্ণারে নদীতে লাগল ভাটা,

নাই কোন লেঠা, অনায়াসে ডোব সাগরে তাই পাগল কানাই বলে বাছা শোনরে কোরবান শোন আজ মরলে কাল দুই দিন হবে না ভগুলি গুরুত্ব চরণ, কোন দিন যেন আসবে কাল শমন শমন দমন কর বাছা হে ঠিক যেয়ে করা দুই নয়ন

(৩৪২)

নিজে কানাই রং চেনে না, ভুল পড়ে যায় বলি, ভাংগা ডহর হাতড়ে বেড়ায়, বসে না সে রঙের পাড়ায়, মিছে কেবল ভোংগা ঠেলে ফিরি যে জানে গহীন জলের খবর তার কাছে কী ছাপাই আছে, লাল মতি আর জহর, রসিক জানে রসের গিয়ান, অরসিকের জংগল সমান, মিছে কেবল চিনির বলদ চিনি বহা সার। দেহে আছে বিষম নদী, জোয়ার বচ্ছে নিরবধি, সাধু জানে ভাই, পানি নাই সেই নদীতে মানুষ মরে দিনে রাতে, ভয়েতে প্রাণ কাপেরে ভাই

(৩৪৩)

সবে কয় পাগলা কানাই বলছি তোরে, রঙের ধুয়ো গাও ভাল করে, আশ্চর্য কথা বল যারে, ঢাকায় আছে ঢাকেশ্বরী চিন না তারে, সে মানুষ ধরে খায় বারে বারে, তাই বলি তোরে বারংবার, শোন বলি অবোধ মন আমার সিংহের ডাকে লিংগ খসে, সে দেশে কাজ কি রে তোমার কাম নদীতে কামের শরীফ, শুনতে কথা চমৎকার, কেউ নাকি দেখেছে এবার। ফকির বৈষ্ণব দরবেশে বলে কর তার দিশে, সেই না দেশে গেলে পরে মুণ্ডু কাটা যাবেরে তোমার।

যেতে পথে কাম নদীতে কাম কুমিরের ভয়, সেই নদীতে নামলে মানুষ দেখ সে ওমনি ধরে খায়, বারণ করি ও মন তোমায় সেই নদীতে যেয়ে কাজ নাই, সে জাগায় জোয়ারভাটা বয়, কত জাহাজ সুলুক যাচ্ছে মারা, মৃত্তিকা তো নাই, সে নদীর বেগে ধায়, সাধুর তারা, যাচ্ছে মারা, সেও কথা অনেক লোকে কয়, গুরুর নামে ধর পাড়ি সু-বাতাসে বাদাম টান ভাই |

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৪

 

(৩৪৪)

শোনরে ও ভাই সকল কয়ে যায় কানাই পাগল, ঐ পাগলের কথা শুনে, তোরা যেন হুসনে পাগল, বায়ু, পিত্ত, কফ-শ্রেষ্যা চারজনে বাধাইছে গোল ছিল এক পাগল মেয়ে, তাহার তো হয়নি বিয়ে, আর এক পাগল দেখে এলাম, রয়েছে সে মরার ঘাটে, কুমিরে খাচ্ছে কেটে, নবদ্বীপের দক্ষিণ ধারে।

আছে নীলমণি কোঠা, সাড়ে নয় ঝরকা কাটা, তার উপর মোকাম দেখতে ভাল, চৌদিকে হয় রূপের ছটা, করে যায়, মুরশীদ আমার, তিন মোকামে আয়না আটা । দেখ সেই কোঠার ভিতরে, তিনজন নারী বসত করে, তিনজনা হয় গর্ভবর্তী তিন গর্তে হয় একটা ছেলে, সে ছেলে বাপ বলিয়ে বল বয়াতি ডাকবে কারে ।

(৩৪৫)

আজব এক জাহাজ গড়ে দানবন্ধু পাঠাইছেন ভবের পরে, সে জাহাজ পানিতে কখন চলে না শুকনাতে ভেসে ফেরে, দীন-বন্ধু জয় সিন্ধ মন মাঝি হাল ধরে, জাহাজ চলতেছে ভাই দুই দাড়ে । একি আজব কল, শুকনাতে ভেসে ফেরে তার মধ্যে জল, জাহাজের মধ্যে আগুন পানি, বোঝাই তাতে মূল্য মাল। হাল ছেড়ো মা ও ভাই মাঝি ঠিক সামাল সামাল।

তরা কখন যেন হয় না তল | জাহাজের আট কুঠুরী নয় দরজা মালকোঠায় সোনা, যদি দাড়ি মাল্লা ছয়জন রিপু জাহাজ – চালায় না, তবে জাহাজের কি হবে- পাগলা কানাই বসে এখন তাই ভাবে, যেদিন জাহাজ হবে কমজরি ভাই, বান খেয়ে তরী জল নেবে, দাড়ি মাল্লা ছয়জন বিপু সব ছেড়ে যাবে, সেদিন শুকনায় তরী তল হবে |

(৩৪৬)

পাগল কানাই বসে করতেছে ধিয়ান, দুই দাঁড়ে এক জাহাজ চলে, সে জাহাজ পানি ছেড়ে চলে শুকনার পর, ভাইরে সে এক আজব কল, সে জাহাজ শুরুনাতে ভাসে আর তার মধ্যে জল ॥ জাহাজের মধ্যে আগুন পানি বোঝাই মালামাল, ও ভাই মাঝি হাল ছেড়োনা হও সামাল সামাল, যেদিন শমন আসিবে জাহাজে ডুবিবে মধ্য মাঠে হবে হাটু জল, দাড়ি মাল্লা সব ছেড়ে পালাবে সাধের তরী শুকনার পরে হবে রসাতল |

(৩৪৭)

ভবের পর এক জীর্ণ জাহাজ, গড়ে দিছে সাঁই দীন, জাহাজ দেখে হায় কী করি গড়ছে অবিকল । দেখতে শোভা পরিষ্কারী সেই দমের জাহাজ, নিশ্চয় সারেঙ বসা আছে যখন বলে তখন চলে, ও রং-বেরঙের বাতি জ্বলে জাহাজের মাথায়, জাহাজের মধ্যে সিংহাসন, বসা আছে সাঁই মহাজন ॥ ব্যাপার করে আনবে যে ধন করিবে ওজন, বাঁধা আছে কাঁটা দাঁড়ি চৌরাশির ওজন।

নিকাশে মাল কম পড়িলে, ধরবে রে দারুণ আজরাইলে, বেঁধে ছেঁদে নিয়ে যাবে করিয়ে বন্ধন, নিকাশের দায় ঠেকবি তখন, উপায় কি করবিরে মন, পাগলা কানাই কয় ভেবে দেখে, চালাও জাহাজ হুশিয়ার হয়ে। দিন থাকিতে মুর্শিদ ধরে ও মন হওরে চেতন

(৩৪৮)

ধন্য একটি জাহাজ দেখলাম ঝালকাটিতে, তিন তলায় ছুতারী সারেঙ বসা জাহাজে, সেদিক পেরস্ত সাড়ে তিন হস্ত নাই বেশী কমি, সারেঙ বাবু জাহাজ চালায় ধন্য তাহার ছতরী, চুতম্পার্শ্বে খেলা করে পবন পানি, তামার পাতে মালোস করা কিসের মাল কমী।

দুই ধারে দুই থুম্বা করা ধুমা চালায় কামিনী কানাই বলে বেশ গুণমণি, আছে সপ্ত নদী সুমুদ্দুর ওর আছে লোনা পানি, কার কোম্পানীর জাহাজখানি দেখতে চমৎকার, ঊনচল্লিশ খালাসি আছে সে জাহাজের পর, ওদিক এদিক পাতাম মেরে করে রেখেছে দুই দুয়ার, যেদিন আসবে চিঠি জানবা খাঁটি যাবে ইষ্টিমার ।

(৩৪৯)

পাগল কানাই বলে সাধের তরীরে চলছে ধুমাকলে, কখন যেন বাও এসে তারে কাত করে ফেলে । ওরে সামাল সামাল সামাল মাঝি নাও লাগাও সকালে, বিষম পাক সে নদীর ঘাটে, খোকনা দিও ডাংগায় এঁটে, কাছি দড়ি মানবে নারে ভাই শেষে প্যাচ পড়ে ॥

এতই সাধের মালমারী রে গুড়া সারি সারি, কোন ঘাটে লাগাব ডিংগা রে বল ব্যাপারী, যেমন নৌকা তেমন মাঝি তেমনি নায়ের গুণারী, ভুল না মন পরের ফোসে, নষ্ট হবে আপন দোষে, কখন যেন ভাটায় পড়ে রে এ ডুবে মরি ॥ লাভ করিতে আলাম ভবে রে ভরলাম পাপের ভাড়া, দিনে দিনে নৌকা আমার হচ্ছে বাইন এড়া, এখন কি ধন লয়ে ঘরে যাব রে ও মন চোরা

(৩৫০)

তোরা আজব তরী দেখবি যদি আয়, তরী শুকনো দিয়ে বয়ে যায়, মন পাগেলা বসে কল চালায়, সেই তরীখানা গড়ছে ছুতার, করছে সারা কার্য আদি সমুদয়। তরীর তিনশ চৌষট্টি জোড়া, আড়ে পাশ জরীপ সারা, সে তরী ছয়জনা চালায় যে দিন আসবে তরীর খরিদ্দার ব্যাপার, তরী কেঁদে হবে জারেজার, দাড়ী মান্না সব দিবে সাঁতার, ভাই বেরাদার আত্ম বন্ধু কাঁদবে কত বেশুমার,

কেঁদে মরে ঘরের পরিবার, ওজু গোছল করাবে জানাজা নামাজ পড়াবে, সেই দিন হবেরে অন্ধকার ॥ তরী ত্রিবেণীর উজান বাকে রয়, ছয়জনা গুণ টেনে যায়, দুই মুড়া দুইজন মাল্লা বসেছে সদায়, ভব সাগরের তুফান দেখে পাড়ি দেওয়া হল দায়। পাগলা কানাই বলে হায়রে হায়, মন মাঝিকে কাণ্ডারী করে সুবাতাসে বাদাম টেনে, সে তরী পাড়ি দেওয়া যায় ॥

(৩৫১)

পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে কি আজব তরী, এক রংগের মিস্ত্রী তরী গড়লো কোন ফিকিরী, আংগুল আষ্টেক খাইটা এনে গড়াইছে তরী, হলো এক বেটার পর তিন বিটি চড়া, আমি তাই ভেবে মরি ॥ তরীর আগা নৌকায় একজন থাকে, আর একজন উত্তরায়, আর একজন পাছা নৌকায় রয়, আমি ভাবতেছি সদায়, তবে পড়ে বেজো ৰিটি বলছে হায় রে হায়, তাই লাগল কানাই বলে তোর গুণ নানा বিটি, কোন দিন জান পালাইয়া যায় ।

আরো পদ্মা নদী বিষম নদী খেলছে তুফান, মন সুখে দেওনা পাড়ি বসে রইছ কেন? তরীতে সদায় ওঠে জল ও তরী করছেরে টলমল, ত্রিবেণীর ত্রিধারায় উজান বচ্ছে জল, তাই পাগলা কানাই বলে। তোর গুণটানা বিটি, তারে রাখিও সাবধান

(৩৫২)

আজব একখানা তরী দেখলাম সৃষ্ট দ’র মাঝার, হল তিনজন মাঝি নৌকার চড়নদার, আর একটি পুরুষ আছে তরীর মাঝার, আরো সেই বেটাকে ঠেসে ধরে রাখছে নিরন্তর, সে বেটা অদত কুঁড়ে উঠতে চায় নড়েচড়ে, আবার সেই তিন বিটি বলছে তারে, শোন মিনসের রক্ষা নাই এবার সুবাতাস পাইলে তরী শুকনায় বাইচ খেলায়, আরো পানাউল্লা ঠেকছে বিষম দায়, ওসে পবনা বেটা মরে বাইরে একটু আফসোস নাই, হাতাউল্লা বাদাম তোলে হাল ধরে মোনাই ।

ধোনাই উল্লার বুদ্ধি মোটা ও কথা কয় চটাচটা, ও রাগ করে আসল মাল হারায়, সে যে তিন নারীরে ভাই বইছে সদায় আরো কুঁড়ে বেটা সেই রমণীরে কয়-এমন সুখের সময় ছেড়ে দাও হে ধরি তোমার পায় । রমণীকে বলছে কুঁড়ে ছাড়ব না তোমায়, সে বেটা আদত কুঁড়ে কথা কয় ধীরে ধীরে, দাঁতগুলি গেছে পড়ে কানাই কয় ছ্যাপ ছিটে, আসে আমার গায় ।

(৩৫৩)

বলব কিরে ভাই সকলরা কি আজব তরী, বিনে লোহায় গড়ল যারে কোন ফিকিরী, ষোল দাড় বত্রিশ জোড়া গোড়া দুই সারি, গড়ায় কোন মিস্ত্রী ও সে কোন মিস্ত্রী, তরীর মাল খোপেতে বোঝাই আছে, মালেক এক রতন, ও দাড়ি ভাই মন ব্যাপারী থাকিও চেতন । পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে খুব হুঁশিয়ারী মহাজনের ধন 1

(৩৫৪)

তুই কেমন করে যাবিরে পারে, তোর জীর্ণ তরী তুফান ভারি, তরী বুঝি ডুবে যায়রে ॥ তরীর নয় স্থানেতে ছিদ্র ন’টা, ঐ দেখ উঠছে তাতে বারি সদা ভাইরে তরী হয়েছে রে ডুবু ডুবু তা দেখে প্রাণ কাঁদেরে ॥ যে দশজন আছে দাড়ী তারা মনের সুখে গাচ্ছে সারী বসে।

ওরে মহাজনের মাল বলে রে-তাদের তিলেক ভাবনা নাইরে । ওরে বড় বোকা মাঝিটেরে, সে তো জলের গতি বোঝে নারে ভাইরে। আবার হালে পানি মানে নারে, এবার বুঝি প্রাণ যায়রে, পাগলা কানাই বলে নাই তার উপায়, বিনেরে সেই দীন দয়ামায়, ভাবের নাবিক তিনি চিন্তামণি তুই ডাকরে ত্বরায় তারে ॥

(৩৫৫)

ও ভাইরে দুই পারের তরণী বহিতেছে ভাটানী উজানী, সে বড় বিষম নৌকারে শুকনাতে বাচ খেলে রাত্রদিনি । সে নৌকার মান্না ছয় জন্য কলেতে আছে গুণটানা, ফোন দাঁড় বত্রিশ গুণা ব্যাপারী মনা, সে বড় বিষম নৌকারে জনম ভে বোঝাই হল না। পাগলা কানাই তাই ভাবে যে দিন যোগ লাগিবে কলে, সে দিন আচম্বিতে নৌকা পড়বে হেলে, সে দিন খোদার নাম ভুলে যাবে, কি আরে সেদিন শুকনায় ভরী তল হবে।

(৩৫৬)

কি ওরে ভাই তিনজনে দিয়াছে নৌকার পত্তন, সে নৌকা বেঁধে দেখি সিংহাস ভাই সে কেমন, সে নৌকার মাঝি হয়ে বসে আছে মন-পবন ঃ কি ওরে ভাই অসময়ে নৌকা বাঁচায় দুইজনে, বড় জুলমত দেখে সামনে তার ঋণ টানে ডুবলোরে সাধুর ভরা, ভাইরে কাণ্ডারী বিনে । কি ওরে ভাই বড় শূন্য দেখি নৈরাকার, ভোলা মন আমার, নাও যেদিন ডুববে ভরে কানাই ভাবে, কাজরী কাঁদবে বসে ভাবে, পানি সেচবে চড়নদার

(৩৫৭)

কি আজব কথা মেটে তক্তা, হাড়ের গাথা চামের ছাউনী, বিনে জোড়ায় সারি মিলেছে, ছুতার গুণমনি দিন তারিণী। কে তারা ভব তারা মা নৌকা গড়েছে সৌদামিনী। সে নৌকায় বোঝায় আছে হীরা কাথা মানিক আছে অমূল্য রতন, বিচার করেন ভাই সাহেবরা যত মোমিনগণ,

আমি বলি বিবরণ, যেদিন আসবে শমন বাধবে কষে, তোমার আসল বুঝে নিবেরে তখন চারজন মানুষ জোরে টানে, চারখান বৈঠা জোরে পড়ে উজান পানির পর, যেদিন আসবে জোয়ার পড়বে ভাটি, পড়ে রবে চারখানা দাঁড়, সেই নৌকার উপর, মাঝি মাল্লা সব ছেড়ে যাবে, ঠিক রবে শুধু মালেক সদাগর, সেদিনের কথা ভেবে কানাই কয়, মন আমার হোল ভাবান্তর |

(৩৫৮)

করল তরীর গঠন, ওসে নতুন কি পুরাতন, দাড়ি মাল্লা সব পালাল, বাতাসেরই সংগে মিলন । মিস্ত্রী করে মুন্সীগিরি করল তরীর গঠন, নতুন পুরান জানা যাবে, জ্বল উঠিবে যখন ॥ তরী কোন দিনে হয় গড়া, তরী কোন দিনে হয় খাড়া, কোন দিনে হয় তক্তা দুখান, কোন দিনে হয় মাস্তুল গড়া, এই চার কথার মানে বয়াতি তুমি বলবা খাড়া খাড়া, জ্বরা জীর্ণ তকতা দুখান ও সাই কোন দিনে হয় জোড়া ।

তরীতে চড়ে সুখ হল না পাগল কানাই করা, তভা ভাংগা জুয়া তরী কি করি উপায়, যদি ভুতোর নাগাল পেতাম, তরী তালি দিয়ে নিতাম, ষোল জন বর্ষ রেখে চালাও তরী আপন বসে। ঢেউ লাগিয়ে জল উঠিয়ে পলাম বিষম ফেরে, দোষে ডুবল তরী দোষী করব কারে ।

(৩৫৯)

কি মজার গড়লো তরী দীননাথ একমিস্ত্রী, কি কারিগর গড়েছেন তরী, সদা সর্বদা তরীতে থাকে মনাই বেপারী, করে সে ফিকিরী। শুরুনো দিয়ে যাচ্ছে বেয়ে আহা মরি মরি, ঐ গংগা বোঝায় তরীর মাঝার, এক লীলা চমৎকার, দেখে শংকা হয় আমার আমি ভাবছি কেবল মাঝি নৌকার বল, তিন ঠাকুর হয়ে রাজী পুঁজি দিয়ে বসে ঘাটে, ঢাকা দিল্লী মুর্শিদাবাদ সেই আগুন পানির ঘর, বিলাত আর ঐ চীনের মুল্লুক সেই তরার মাঝার, ঐ তিন তারে তিন খবর হয় এবার, আমি বলব কিরে ভাই,

হাওয়ার সংগে যোগ তাহার তরীতে ছয়জন দাঁড়ি-তারা মাঝির সংগে করছে আড়ি. দিন গেল দিন গেল বয়ে তাই ভাবছে বেপারী। বাসাতে না শমন এসে বলছে কানাই চল নিজবাড়ি

(৩৬০)

ভবের হাটে নৌকায় চড়ে আমার কি জ্বালা হল, আমার সংগে ছিল পাঁচ জন দাঁড়ি গুণ থুয়ে সব পালালো। আর ছিল ছয় জুয়াচোর, আমারে করে বিভোর, পাছ দুয়ারে মাল বের করে, আমায় দেনা করিল ॥

তরীর ষোল গিড়ে আর বত্রিশ বাঁধন, ভাংল তরীর চার কোণা, তাই করি আনাগোনা, শোনরে ও দশ জনা, বান চাল মেরে উঠল পানি তরীর প্রবোধ মানে না ॥ মুরশিদ যায় যাবে তোর নামের ভেরম ঝাঁপ দিবে সাগরে, হয় মুরশিদ নেও পার করে না হয় যা ইচ্ছা তাই কর মোরে, পাগলা কানাই উঠবে কূলে তোমার ঐ চরণ ধরে

(৩৬১)

আমার এ দেহ তরীতে দশজন চড়নদার আছে, তারা ডেকে বলতেছে, ভগ্ন তরী বোঝাই ভারি, বড়বান তো ডেকেছে, দেখে শুনে পরান আমার উড়ে যায় হুতাশে ॥ আমার ও ভগ্ন তরী লয়ে ঠেকলাম বিষম দায়, কানাই ডেকে বলতেছে, ভগ্নতরী বোঝাই ভারি, বাচাল হয়ে মারা যায়, জব দেবে কি মহাজনের সেও হয়েছে দায় 1 পাগলা কানাই বলে ভাই, আমি কারবা পানে চাই, জনম ভরে তালি দিয়ে এ নৌকাই জল না মানাই, কোন দিন জানি ডুবে নৌকা পাতাল ধায় ॥

(৩৬২)

ছুতোরের নাম দীননাথ ভালমন্দ তাইরি হাত, এমন ধন্য সুতোর তারে কি আমি চিনি এক বিন্দু, শুধুই যে গান শুনি । পার হইতে ভব সিন্ধু গড়ে ছুতোর নাইক বন্ধু । তার নামে আছে কত মধু পান করে সব যারা সাধু, আমি জানব কি তা উঠেনা এক বিন্দু পানি।

সে ছুতোর সামান্য নয়, ত্রিজগতে মহিমাময়, মহিমা এমন ধন্য ছুতোর, তার কি আমি চিনি। বিষম ঘোর আন্ধকারে, সেই নৌকা তৈরি করে যখন, সৃষ্টি ছাড়া বিষম দাড়া, নৌকা গড়ে তখন। গড়ন পুষ্ট হলি সারা, ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব তারা অনেকজন । দেখি বারে বারে ইন্দ্র-চন্দ্র, সকল ইন্স বোঝ, এসেছ সুখ বিলাসে হাসে বসে, ছুতোরকে না খোজ ।

অবহেলায় পাগলা কানাই, নৌকা চালায় এখন । কেউ বলে এমন দেখি নাই, গুণ টেনে যায় মেয়ে লোকে ছিছি, কেহ বলে বিটির হাতে পুঁজি। কেহ বলে থাক পুঁজি, থাকতে নৌকায় তিনজন মাঝি, বিটি কেন হয়গো রাজী, গুণ টানাতে-ইহার কেহ মারে উঁকি ঝুকি, আমি দেখি ফাঁকি জুকি, যে দিন আসবে সমন, সে দিনে সব পালাবে সার, কোথায় পাব ছুতোর বাবাজী ॥

(৩৬৩)

আরে ওরে ও ভাই শোন মন নায়ে, তুমি কার হুকুমে বোঝায় তরী তুফানেতে যাও বেয়ে। হাল যেন ছেড়োনা মাঝি থেকো হুঁশিয়ার হয়ে ॥ আরে ওরে চেয়ে দেখ তোর ডওরা খোপে লেগেছে নোনা, দিনে দিনে মহাজনের মাল হারালি ষোল আনা, মহাজনের কি জবাব দিব আমার সেও হয়েছে ভাবনা ॥ আরে ওরে নৌকায় চড়ে সুখ হল না, পাগলা কানাই তাই কয়, আমার এ হেন যে সাধের তরী, ডাকাত এসে মেরে লয় ॥

(৩৬৪)

পাগলা কানাই বলে ভাই রথে চড়ে স্বর্গে যাই, রথের চাকা কমজোরী, নিকাশের মধ্যে হাতুর বাটাল রাখছে সুতার মিস্তিরি, পড়লো খসে না পাই দিশে কি দিয়ে সারি । মুগুর দিয়ে কুপ আটাই, লখমা দিয়ে কল আটাই, রথের জোড়ায় জোড়ায় মিল, আমি দেখলাম হালের চূড়া ঢিলে, নড়ে গেছে ধর্ম খিল, জানলাম রথের চাকার গুণে ভাই নড়ে হয়েছে ঢিল ॥

(৩৬৫)

পাগলা কানাই কয় কর্মকার এ রথ গড়াইলি তুই কি ভাবে । চাকায় যারা চাক লাগাইয়া কুঠুরী ভাগে ভাগে । এ চাকা ঘুরছে কি পাকে, উহার এক খোপে কুঠুরী রাখে, আরাক খোপে বাটাল দুইটি এ কত চিজ তাহারই মর্জি, উহার আট কুঠুরী নয় দারজা চড়নদার তার ষোলজন, উহার মাঝখানেতে বসা আছে গিরি আর মহন্তজন, সে টানতেছে পবন ॥

(৩৬৬)

দুই চাকার রথ দেখেছি ধুলার এই ধরায়, কইতে সেই রথের কথা ছাতি ফেটে যায়। রথের চারিদিকে ঘেরাও করা, মধ্যিখানে মাণিক জোড়া, সেপাই সামন্ত তারা রথ চৌকি দেয় ॥ চাকার নীচে দুইখানি তাক দেখতে কি শোভা, রাতদিন সেই রথে করে নতুন ফুলের সেবা।

চারিদিকে চারজন চোপদার, কেউ না কারো হুকুম বরদার, চূড়া পর দুই ফুল আছে রক্তজবার, যেদিন চোরা এসে রথে সিধ কাটবে, পবন আর চৌকিদার তারা বলবে সারসার, রথ থুয়ে তখনি পালাবে, ভাইরে সেদিন সেই রথের পরে ডাকাতি হবে, কানাই কয় দুইখানি চাকা খসে থাকেতে রবে ॥

(৩৬৭)

পাগলা কানাই বলে আমার রথ কি এখন চলে, এ ঘোড়া রথ চলে নারে, চালাইছি। ঈশান কালে, সাবেক বলে কল বিকলে এ ঘোড়া রথ চলে নারে। আমি চালাইতেছি ঠেলেঠুলে যে ঠেলতো সে ঠেলে নারে, ঠেলতে ঠেলতে জীবন গেল ঠেলা আসে না, ঐ রথে ছিল যারা ঐ সব সরে দাড়ায় তারা, ইন্দ্র চন্দ্র ঋতু তার প্রবোধ মানে না । কানাইয়ের রথ চলে না । আমরা ষোলজন একসাথ হয়ে, কতক দিন দিলাম বাহার, পাগলা কানাই বলে এখন টানাটানি সার এ রথ চলবে নারে আর I

(৩৬৮)

কি মজার রথ গড়েছে ভবে তার অংগ মাঝে, ভয়ংকর চাকা দুইখান আছে, রথের সারথী যে জন, ভিতরে সে গোপন, চাকা পবন হেলানে হেলতেছে, টাকু ঘুরতেছে, বিনা তেলে দুইটা বাতি দিবানিশি জ্বলতেছে ॥ রথ খানি দেখে আমি হলাম নামাক কুল, ও সে মাপলে হয় চৌরাশি আংগুল, রথের চৌষট্টি জোড়া তাতে রথ খাড়া, রথের হর দেহে ভাই বিন্দু ভরা এসে দেখ তোরা, পবন ফুরায়ে গেলে রথের খসবে সব জোড়া। পাগলা কানাই মনমরা ॥

(৩৬৯)

পৃথিবীর উপর রথ গড়া পাগল কানাই তাই বলে, অধর চাঁদকে ধরা না গেল, তারে ধরতে গেলে ধরা না দেয়, পাগল কানাই ঠেকেছে দায়, কত ফকির বৈষ্ণব মনি গোসাই দৃষ্টি করে রথ চালায়, এদিক ওদিক ঘুরিয়া বেড়ায় পাড়িয়া ফেলায়,

তিন সখী আর সখীদল, চম্পা দিয়া গড়েছে ডাল, টানতেছে রথ বাহুবলে কাছি, ওরে ষোল সখি সংগে করে তিন ঠাকুরে করে নাচানাচি, বলবো কি আর ভাই সাহেবরা সাধ মিটে যদ্দিন বাঁচি, মধ্যে মধ্যে হাউসের জ্বালায় আমিও নাচি, যাহোক রথের বাহারে আছি । শ্রবণ মণ্ডল এর কুড়া, ভুবন মণ্ডল এর গোড়া, ধন্য সে ধন্য কামিলকার, বাহা মজার রথ গড়েছে নাম হোল তার সৃষ্টিধর, সৃষ্টি দৃষ্টি করেছেন তৈয়ার, ছুতোরের তারিফ করা সাধ্য কি আমার ।

(৩৭০)

ফাল্গুন মাসের ২৪শে তে তারিখ মংগলবার, হাল বাইতে গিয়েছিলাম খ্যামটামার চর, কোন থেকে যেন যুক্তি করে ঠাসে ধরল দারুণ জ্বর, ইচ্ছা হয় হাল ছাড়ি তাড়াতাড়ি যাই বাড়ি, চাকাতে আইট বাধে না রে ওরে রথ হয়েছে লড় বড়ে যখন এ রথ নতুন ছিল চাকা ঘুরাতি, এখন লড়বড়ে হয়েছে রে ভাই বণের সারথি, রথের দ্বার করে খাড়া ছেড়ে গেছে মিস্ত্রী,

মিস্ত্রীকে নাগাল পেতাম যদি ঢাকা নিতাম সারি, আমরা চড়তাম বাহার দিয়ারে লাগায়ে দুই মোমবাতি আগবাত খাগরাত সেই রথেরই পত্তন, মেটে তক্তায় চানকা কটা কি মজারই মিলন, ওরে মুর্শীদে কয় পাগলা কানাই, ঘুরিয়া আইস ত্রিভুবন, বলাই যাবে রথ ছেড়ে গোপাল নিবে চুরি করে, বাতিটা নিভে গেলে রে পথে হবে তোর বিসর্জন । 1

(৩৭১)

কলের রথ গড়ে দিছে দীনবন্ধু করছে কোন কাম, রথের চূড়ার পর লেখা আছে। দীনবন্ধুর নাম । গড়েছে রথে আধার মোকাম। যখন রথ ছিলরে নতুন আরো চলছে দুগুণ, দেখতে পরিপাটি, আজ রথের খসেছে খিল কাঠি, আরো নড়ে গেছে দুই খুঁটি । তাই পাগলা কানাই কয়, দিনে দিনে তৈল ফুরাইয়া ঘোর হইয়া আলো, সেই নবীর রথ দিক ভোলা হইল ॥

(৩৭২)

পাগলা কানাই বলে আমার বুড়ো কাল হলো, ভবে কার লেগে করলাম এত, ভবে এসে প্রেমে মজে আমার পরকাল গেল, আমি লোহা লয়ে ঘুরে বেড়াই কামারের কাছে, আমি শুনেছি লোকের মুখে, রথ খানি গড়ে ছুতার-সে গেছে উপর তালাতে ॥

সেই রথের চৌষট্টি জোড়া, তার কোন তক্তায় নাই পোড়া, বিনা পোড়ায় সার মিলাচে সে ছুতার লা-শরীক আল্লাহ ॥ সে ছুতার এমনি গুণবান সে একলা করে ভবের কাম, যদি তার নাগাল পেতাম, ভাইরে শিখে নিতাম কাম রথ গড়া কামিলকার যদি নাগাল কেহ পেতো, ভবে তার মানব জনম বাঞ্ছা পূর্ণ হোত, সেদিন পবনহীন পালে উড়ে ছুতার বাড়ি যেত, সে রথ দেখতে পরিপাটি তার সর্ব অংগ ঝাঁঝড়া কাটা, খোপে খোপে জ্বলছে বাতি, কোন দিন যেন সেই সাধের রক্ষ ফেলে আমার হবে খাতি

(৩৭৩)

বাহা এক কলের রথ গড়ে দিছে দীননাথ, এমন রথ আর কভু দেখি নাই। সে রথের গড়েছে আনন্দ খুঁটি, দেখতে বড় পরিপাটি দেখতে চমৎকার, এই রকম রথ কভু দেখি নাই । এ রথ গড়া কামিলকারের কেহ যদি নাগাল পেত, তবে তার মানব জনম বাঞ্ছা পূরণ হোত।

ভবে সে রথে চড়ে সুতার বাড়ি চলে যেত, রথের ঢাকা ও চূড়াতে গাধা আছে এক সুতে, না হলে রথ চলতে পারে না। রথের সারবি আর ইচ্ছা-মন, যখন বলে চাকা ঘোর, কোথায় চলে যায়, সেই রখের সংগে দেখি সৃষ্টিধর রথে কথা কয়, এ বড় সে গৌরবের কথা, তাই পাগল কানাই কয়

(৩৭৪)

শোন ভাই আজব একটি রথের কথা বলে যাই, কামিলকার উত্তম ব্যক্তি দীনবন্ধু সাঁই, দিয়ে তিনশ ষাট জোড়া রথ করেছে খাড়া, দুই চাকার পর, এমন রথ কভু দেখি নাই, আছে কোটি চন্দ্র তারা, রথ করেছে খাড়া বাহা মজা তাই, এ রথ গড়েছে দীনবন্ধু সাঁই ।

ও দয়াময়, ও রথে কি কাজ করতেছে, দ্বিদল অষ্টদল শতদল রথে জুটেছে, আরো করছে দুই মশাল, বিনা তেলে জ্বলে রাত্র দিনে বসে, বাহা একি দীনবন্ধুর কাল, সে রথের কতই মনি-গণ ও সে করতেছে ভ্রমণ, রথেই চূড়ার পরে লিখা আছে ঠাকুর মদন-মোহন, রথের মধ্যে যমুনা নদী তার তীরে বৃন্দাবন, অশেষ কোটি দেবতার সনে করতেছে আগমন, আছে মস্তক ললাট লাগবে কপাট-করেছে সেই রথে গঠন, তাই পাগলা কানাই বলে শুনতে পাই শতেক দল, সেই সুতারের সিংহাসন।

(৩৭৫)

শোন ভাই একটি রথের কথা বলে যাই, কামিলকার উত্তম ব্যক্তি দীননাথ গোঁসাই, দিয়ে তিনশত ষাট জোড়া, রথ করেছে খাড়া, দুই চাকার পর, এমন রথ কভু দেখি নাই, আছে কোটি চন্দ্র কত ইন্দ্র, সে রথে বিরাজ করে চৌষট্টি গোঁসাই, দয়াময় সেই রথে কি কাজ করতেছে। দ্বিদল, অষ্ট দল, শতদল এ রথ জুটেছে, আরো শতেকদলের সারথী বসা চুড়োর পরে, সদায় বিরাজ করতেছে ।

কত উত্তম উত্তম ব্যক্তি থাকতে বিন্দু চোরা প্রধান হয়েছে, আরো রথখানি ভাই কম বেশী নাই মাপলে হয় সমান, রথের চূড়ার পরে লেখা আছে, হায়াত মউত রেজেক আর দৌলত, এ রথে বসা শতেক দল আরও মন হেলাল ঘুরছে কাল,বাহবা মজার কল আরো জ্বলে দুই মশাল, আর বিনা তেলে জ্বলে পাগল কানাই বলে, বাহবা এতে দীনবন্ধুর কল ॥

(৩৭৬)

হায় হায় কি হল আর ঘোরে না রথের চাকা রে, এখন উপায় কি করি, পাগলা কানাই কয় রথের চাকা, হয়েছে বাঁকা। দীনবন্ধু কয় ওরে কানাই আজ কেন রথ চলে না, সাধের রথে বসেরে তুই কি করিস ভাবনা। প্রভাবে রথ গড়েছে কামিলকার এমন, দেশ বিদেশে তালাশ করি পাই না তাহার অন্বেষণ, দিয়া তিন শত চৌষট্টি জোড়া রে করেছে সেই রথের পত্তন  ।

(৩৭৭)

ওরে পাগলা কানাই বলে-উবদো গঠন রথখানি ভাই ঢাকায় চলে। রথের মদ্যি রথের গঠন পাগলা কানাই তাই বলে, আর দশ মাসে রথ গড়িয়া সারে সে রথের জোড়ায় জোড়ায় মিল, চানকা কেটে রথ গড়েছে নাইকো কোথাও ঢিল, বানে বানে সুতা ধরে রথখানি করেছে খাড়া, রথের গুছা বাকা একই কথা,

মাঝখানে দিছেন মোড়া, রথের সামনে টানে মন পবন দ্বারা ॥ সেই কথা কই দশের কাছে, ইন্দ্রপুরী সারি সারি কুঠরী কাটতেছে, নীচ কুঠুরিতে বসে মন মনুরায় সদায় বিরাজ করতেছে, আমি তারিপ করি কামিলকারকে কি হেকমতে রথ গড়ে, হাজার সাড়ে তিনহাত রথখানি ॥

(৩৭৮)

তোমরা মিছে কেন কর গোল, গোলমাল করো না মোমিন ভাই সকল, দুই চাকায় এক রথ গড়েছে, এমন রথ আর দেখি নাই, আমি তারিফ করি কামিলকারকে কি হেকমতে রথ গড়ে, সে রথ চলতেছে পবনের ভরে ॥ সে রথের আঠারো মোকাম, আগে চলে বলরাম কানাই বলাই সব ছেড়ে গেলে,

রথের হায়াত মউং রেজেক দৌলৎ, খাটবে না ভাই চীৎ হলে, চাঁদ সূর্য উড়িয়া যাবে কানে লাগিবে তালি, সেদিন রথ খোলায় বেধে হবে বড় গোলমালি ॥ ও সে পাগল কানাই তাই বলে, নতুন এক রথ তৈয়ার হইছে, পুরান রথ ভাই কেবা টানে, সে রথ তৈয়ার হইছে দশ মাস দশ দিনে ॥

(৩৭৯)

দেখ ভাই রথ গড়েছে দীননাথ ছুতর, কত বৃক্ষ আদি তরুলতা সেই রথের উপর। আবার সারথি এর মধ্যে বসে যখন, বলে চাকা ঘোর ওরে ঘোর, ছুতরের কথায় চলে, বিনে দড়াতে চলে চাকার এইছা জোর ॥ রথখানি গড়েছে ভাল, ভাবতে দিন বয়ে গেল, কি জানি হয় শেষকালে রথ ভাংলে, দেশি সুতার তালি দিতে পারবে না ।

তাই বলে পাগলা কানাই রথখানি বাঁকা, আমি নতুন রথে চড়েছি ভাই জোরে চলে চাকা, রথ পুরাণ হলে জ্যাট নড়িবে হবে না এথায় থাকা, রথ ভাংগিলে তখন কি খাটবে তালি, সারথি উড়ে যাবে পড়ে রবে রথ খালি ॥

(৩৮০)

পাগলা কানাই কয় ও ভাই কি করি উপায়, শিশুকাল বাল্যকাল আরো যৌবন কালও যায়, রথের চাকা রথের চুড়ো সকলই হইল গুড়ো ॥ রথ দিয়েছিল মিস্ত্রী এখন আমি কি করি, কোন শান্তি নাই, কোথা মিস্ত্রীকে পাই, ভেন্না কাঠের তক্তা ছিল-মুগুর কেন দিলনা, আমি নড়তাম চড়তাম থাকতাম বসা, লাগাইতাম জোড়ায় দুই চার ঘা, তবু সেই রথ খসতে দিতাম না ।

সেই ছুতার সকল তারই হাত, পাগলা কানাই টেনে বেড়ায় শুধুই খাটের রথ, উহার রথী থাকে উপর যোগে, পাগল কানাই তার দোপে, এখন বসে তাই ভাবে, ষোল চুংগীর বুদ্ধি কানাইর গেল এক চুংগার মধ্যে, পাগলা কানাই বসে ভাবে দেখ ভাই দিনে আর রাতে ।

(৩৮১)

পাগলা কানাই কয় দিন তো বয়ে যায়, সে রথ চলে মাত্র যথাতথা, যে ঠেলবে সে ঠেলে না, ঠেলতে ঠেলতে দিন গেল ভাই, ঠেলা আসে না, কানাইর রথ চলে না, শোন আমার মন রসনা মরার আগেতে মর, শমনকে দমন কর, শমনকে দমন করলে ভবপারে যাবারে, মনে চিন্তা থাকবে না, তুমি জেন্দা দেহ মুর্দা করে মরে কেন দেখ না, মরার সময় বলেরে ভাই কিছুই হবে না, মরার ভাব জান না, শোন পাগল মন রসনা ॥

আমি কানাই মরে দেখেছি, দিবস কয়েক বেঁচে আছি, চোখ বুজিলে সলক দেখি, মেললে পরে আঁধার হয়, পাগল কানাইর নাইরে মরণের ভয়, তোরা মরবি কেবা আয় ।

(৩৮২)

আর একটি কথা রে ভাই বলে যায় খাটি, কোমরের দরদে ভাই বেকা হয়ে হাটি, কত ঔষধ পাতি হদ্দ গেছে খালাম কত ডাক্তার বেটে, তাইতে ব্যারাম না হয়। আরাম, ক্রমে সে ধরে এটে, অনুমানে বুঝতে পারলাম ভাই রথে পড়েছে ভাটি কানাই কয় পুরান রথে আর থাকিবে না, সেইটা মনের বাসনা, দশের কাছে চাঁদ সভাতে করে যায় বর্ণনা, কামিলকার নাগাল পেলে রথে দিতাম নতুন টানা, খিলকাঠি বদলায়ে ফেলে নতুন করতাম রথখানা, চলতো জোরে হাওয়া ভরে ভাই, থাকতো না কোন যন্ত্রণা ॥

(৩৮৩)

এক ঘরের দুই ঘরামি করতেছে টানাটানি, কারবা কতই বল, আর এক ঘরের দ্বার হন্তে ছাদ ঢেকেছে তিরপল । হস্ত পদ নাই ঘরামির বেঁধেছে নির্মল, ঘর নাই তার ছাউনী ভাল, সে ঘরে জগৎ আলো হয়েছে উজ্জ্বল ॥ একজনের পতি দাতা, আর একজনের সংগে কথা পাগল কানাই কয়, দুই জনেতে এক মিলনে সেই ঘরেতে রয়, দুই ঘরামি যুক্তি করে কখন যেন ঘর ভেংগে লয়, দেখে সেই ঘরের গঠন, মন আমার হয় উচাটান, পলকে পালায় ॥

ঘর বাঁধা শূন্যভরে, হস্ততল পদতলে হাওয়াতে মিলন, ঘরের মধ্যে বোঝাই আছে অমূল্য রতন, পাগলা কানাই বলে এই কালে, করগা করগা সাধন, সাধন না করলে পরে পড়বি ফেরে, কি হবে তখন ।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৪

 

(৩৮৪)

শোন বলি ভবের পর, ঘরামি বানাইচে কলের ঘর। ঘরের একটি পাড়েন দুটি খাম্বারে, দেখ নয় দুয়ার যে জন সে ঘরামি, সংগে ফেরে রাত্রদিনি, খ্যানে হয় সে জন্মদাতা খ্যানে জননী, খ্যানে হয় সে পরম গুরুরে সে যে কালের ঘরামি । এতো বড় আজব কথা না খুজিলে পাবা কোথা, ঘরের তিনটি সুরসা, শি ব্রুয়ারে, দেখেছ কোথা ॥ কানাইর মুলে নাই কথা ॥

(৩৮৫)

কি মজার ঘর বেঁধেছে সাধের কামিলকার, ঘরের ভাব দেখে ভাবি নিরন্তর, কামিলকারের ভংগী বোঝা ভার, আড়ে দীঘে একই সমান, সমান সমান বাঁধা ঘর, এক পাড়েমে পাড়েম সারা, বেঁধেছে দুই খুঁটির পর, সেই যে ঘরে বসত করতেছে আমার নবাব মনোহর ॥ চব্বিশ চন্দ্র ঘরেতে আছে, আমার গুরু গোঁসাই কয়েছে, নিঃশ্বাসের কাজ বিশ্বাস হয়েছে, যে জন তারে করে জিজ্ঞাস তার কি বিশ্বাস হয়েছে, করলে ভক্তি পাবে মুক্তি ভক্তি যে জন করেছে, গুরু শিষ্য হয়ে একস্তুর তারা জলে মিশেছে ॥

মনরে, সেই ঘরে অধর ধরা, চিনলি না মনচোরা, কেউ তা চিনলি না, কারো যোগে যাগে হয় সাধ্য সাধনা, কেউ যোগ ছাড়া তাক্ পাবি না, নজরের সাথে কর সাধনা, যে জন মরণকালে উজান ধরে, সেও তো আজব কারখানা, অধম পাগলা কানাই কয় ওরে লালচান, তোর ভাগ্যে তা হল না, মিছে অমূল্য ধন করিসরে যতন, বসে দেখরে দিনকানা॥

 

 

পাগলা কানাই এর গানের পর্ব ৫:

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৫

 

(৩৮৬)

ভেবে যত অবিরত বলছি কথা সমুদয়, ভবের পর এক ঘর বেঁধেছে গারামি ভব- দয়াময়, পবন ভরে চলে সে ঘর তা দেখে কত সাধু লোকের ধন্দ লেগে যায়, রেখে ঘর এক পাড়ের পর দুই খুঁটির পর, মিল করেছে জোড়ায় জোড়ায়, ধন্য বলি দয়াময়-পাগলা কানাই বলছেরে ভাই, সে ঘরে বসতের সুখ হয় । সে ঘরে বসত করে মোহন ব্যাপারী, আট কুঠুরী নয় দরজা, সদর আলার হুকুম ভারি।

ঘরের মধ্যে বহুত আলো দিচ্ছে কত তারা আদি, ঘরের মধ্যে চার দরজা সদর জেলায় হয় কাছারি, ধন্য কামিলকার বলিহারী । ভবের পর এসে মন মিছে কেন করছো তাড়াতাড়ি ॥ ঘরের মধ্যে ঘর বেঁধেছে থেকো হুঁশিয়ার, আঠার নল ঘরের মধ্যে মতি দিছে তিরিশ তার, ঘরের মধ্যে ত্রিবেণীর ঘাট, ঘাটে যাওয়ার সাধ্য কার, আছে কে বালুর চরে কটা কুমির সেও পাহারাদার, ধন্য বলি সমাচার, মানিক রতন পাবে সুজন যদি যাও সেই ঘাটের উপর ।

(৩৮৭)

বাহা মজার ঘর বেঁধেছে কামিলকার, এক ঘরে দুই জন বসত কেমন চমত্কার, ভাবে এসে সুখ হল নারে, আমি গেলাম না ঠিকানা তার, দুনিয়ার ঘরে এসে পাগলা কানাই হলাম ধন্দকার ও সে দুনিয়ার ঘরে দশমাস বসত করে, সেও ঘর ছাড়িয়া আলাম ভবের পরে, ভবে আসা সুখ হোল না, যেতে হবে কব্বরে নিদানে সেই দীনবন্ধু কি জানি করে। সদাই চিন্তা মনে তাই শোন ওরে ভাই, নেকীর কথা শোন আছে মুর্শিদের ঠাই, নেকী করলে যাবে তরে রে পুলসিরাত হয়ে যাবা পার, দোজখে পড়ে কাদে যত গোনাগার ।

(৩৮৮)

অথম পাগলা কানাই বলিয়া দিচ্ছে এই সভার মাঝার, তোমরা দেখ ভবের পর, ওরে আজব রঙের ঘরখানি বেঁধেছেন কামিলকার, তারিফ করি কামিলকারের, দুই খুঁটিতে ধরে রাখছে ঘর, এক পাড়ের উপর ॥

কি হেকমতে এক ঘরের মাঝে, বানছে অনেক ঘর, এসব ক্ষমতা তাহার, ওরে কতই রকম কারিগিদ্দি করছে সেই ঘরের মাঝার, আট কুঠুরী নয় দরজা দেখতে ঘর আচ্ছা মজার, চামের ছাউনি তার ॥ অন্ধকারে ঘরের পত্তন যে জন দিয়াছে, তারে কেউ চিনতে না পারে, কত ফকির বৈষ্ণব আলেম ফাজেল সন্ধান না পাইছে, আমলাগণ সংগে লয়ে, মন বড় সেই যে ঘরে, হামেহাল বসত করতেছে ॥

আমলাগণের মধ্যে ছয়জন আছে বড়ই দাগাবাজ, করে সব দাগীবাজী কাজ, ওরে এমাম রতন অমূল্যধন আছে যে সেই ঘরের মাজ, মন তুমি থাক চেতন, জুয়াচোর সেই যে ছয় জন, জো পেলে করবে। সর্বনাশ ॥

(৩৮৯)

ওরে ভাবতে ভাবতে প্রাণ বাঁচেনা বলতে দশের হুজুরি, সাধের ঘরে বসত করি আমরা লাভের খাতেরী, ঠগ বাজারের চার বোম্বেটে বেটারা বড় কুয়ারী, লাভে মুলে বিনাশ করে বাগে পালে করতে চাই চুরি, তোমরা সব থেকো হুঁশিয়ারী ওরে ছয় খোপেতে নয় দরজা ষোলজন তার প্রহরী রাত ভর করে সরকারের কাছারী, থাকতে প্রহরী দারুণ চোরা সেই না ঘরে করে চুরি ওরে দেশ জুড়ে সব চুরি করলো না হোল গেরেপ্তারী, চোরাতে দেখে পলায় প্রহরী, তোমরা থেকো হুঁশিয়ারী ।

চোরা থাকে কোন দেশে, চোরার কীর্তি দেখে পাগলা কানাই রাতদিন ভাবছে বসে, প্রাপ্য বস্তু সব লুটে নেয়, এমন যে সে সর্বনেশে, দারুণ চোরা থাকে কোন দেশে, ভেবে পাইনে তার দিশে।

(৩৯০)

অধর চাঁদ সাঁই ঘরামি এসে বেঁধেছেন এক ঘর, ওরে ঘরের মধ্যে ঘর তৈয়ার, চৌদ্দ পোয়া বন্দে দিয়ে বেঁধেছেন সেই ঘর। ঘরের রাগের ভাগ সেই বেশি। ভারি, আমি ভাবছি বসে নিরন্তর, কখন জানি পড়বে ধ্বসে যদি আসে ঘরের গেল ছাউনি পঁচে, এ ঘরের আর বিশ্বাস নাই, ঘরামির খোঁজ কোথায় পাই, দীনের দীন নকল দস্ত ভাবছি বসে তাই, পাগল কানাই কয়, ও মনুরায় ঘরের তদবির করে জানা চাই, দুই খুঁটির নীচে মাটির ঘর তোমরা খাটি জান তাই ।

তিন কুঠুরী নয় দরজা আট দ্বারী, করে সে ঘরে চৌকিদারী, সর্বদায় পিছন বাড়ির মাল হতেছে চুরি, মালের মহাজন ঘরে বসে করে সদয় বাড়ির কাছারী ছয়জনা বোম্বেটে জুটে, মাল করতেছে চুরি ॥

(৩৯১)

পাগলা কানাই বলে ভাই, ঘর করে আর বিশ্বাস নাই, কাজলাতে ঘুন লেগেছে করি কি উপায়। ডোয়াতে লেগেছে নোনা উইতে বেড়া খায়, বসে ভাবছে মনুরায়, ঝটকা এসে মটকা ছিড়ে বিসর্জন হয়, তাইতে মনে সন্দ হয় সদায় দেখ, কোন সময় কি হয় ॥ জান মামুদ কেঁদে বলে করি কি এখন, ঘরের মধ্যে যারা ছিল তারাই হল পলায়ন, শোনরে অবোধ মন-তুই যারে বলিস আপন, সে তোর নয় আপন ।

মিছে কাজে কেন কর গমন, এ দেশে নাইক প্রয়োজন, নিজ বাড়ি চল এখন ॥ ঘরের মধ্যে চৌদ্দ ঘর বেঁধেছে সাঁই পরওয়ার বলব কিরে আর। সেই ঘরেতে বসত করে ব্যক্তি বহুতর, যেদিন আসবে শমন, বাঁধবে বাধন, সব হবে সংহার, কিছু থাকবে নারে আর, একে একে সব পালাবে খালি রবে ধড়, নিঃশব্দ নিরালা যেদিন করবে এসে ভর

(৩৯২)

ঘর দেখে আমি আ-মরি রাতদিন ভেবে বাঁচি না । কোন ঘরামি ঘর বেঁধেছে নাই তার ঠিকানা । জনম ভরে বাস করিলাম ঘরামির উদ্দিশ পেলাম না, মনের সন্দ গেল না-আট কুঠুরী নয় দরজা বিধির এ কারখানা, কিছু বুঝতে পারলাম না । মানিক মুক্তা বোঝায় ঘরে, সে ঘরে চোরেরই কারখানা । এই সাধের ঘর সাই পরওয়ার কি কৌশলে বেঁধেছে, ঘরের মধ্যে ঘরের গঠন ঐ ঘরামি সেরেছে।

তিনশ চৌষষ্টি জোড়া দেছে, বাহান্ন গলি তিপ্পান্ন বাজার, ঘরেতে আছে, কি চমৎকার হয়েছে, কানা কালা ল্যাংড়া বোবা বাজারে দোকান পেতেছে ৷ চোরের হাতে তালাচাবি মাল গুদামে আগে যায়, ঘরের লোকজন হল বেহুশ, চোরেরই শংকায়, ইসকাদর আর লোহার বাকস চোরে খোলে ইশারায়, সে দিন করবি রে হায় হায় । অধম পাগলা কানাই কয় চোরের হাতে ঘটবে পরাজয়  ।

(৩৯৩)

পেয়ে মাংনা ঘরামি, ঘরে বেঁধে নিয়েছিলাম আমি, ঘরে বসত করে মজা হল না, ঘরামি বাধে যখন অজ্ঞান তখন আমার জ্ঞান তো কোন ছিল না, করেছে কি কারখানা, খুব গুণপনা, ভাল বেশ বেশ, এইছাভাবে ঘর বেঁধেছে ভবে কি দিব তুলনা।

রায় বরুণ রিপু ইন্দ্র উদয় সাড়ে চব্বিশ চন্দ্র, তবু ঘরের মধ্যে আঁধার কি কারণ, কত ব্রহ্মা আদি দেবগণ, ঘরের মাঝে করে বিচরণ, কত লক্ষ লক্ষ জন খুব সাধারণ ভাল বেশ বেশ, এইছা যুতি ঘর বেঁধেছে ঘরামির নাম শুনি তারণ । ফাকির বৈষ্টম সাধু লোকে, দেখে থাকে দরবেশে, তারে চিনতে পারবা না, যে জন হবা দিন কানা, পাগলা কানাই ধরতে তারে হাত বাড়ায়, পিছলে জাগায় ঠন ঠনায়, কয়েকজন বেজুত কানা কিছু বোঝে না, ভাল বেশ বেশ, বড় মুন্সীগিরী ঘর তৈরি, ঘরামির নাম শুনি তারণ ॥

(৩৯৪)

আজব এক ঘর বেঁধেছে বাহবা কি চমৎকার, এক পাড়েমে পাড়েম সারা তার, আমি তারিফ করি সেই মিস্ত্রীর ওরে ভাই হাজার হাজার। মিস্ত্রী সে ফিকির করে, দেখরে চেয়ে সেই না ঘরে, চাঁদ সুরুজ একে বারে জ্বলতেছে যুগ যুগান্তর, আট কুঠুরী নয় দরজা সেই যে ঘরের ভিতর ॥ আট কুঠুরী নয় দরজা সেই না ঘরে দিয়েছে, চারজনা চার দিকে আছে, চারটা জাতির চারটা ছেলে, দশের কাছে যায় গো বলে, সেই যে চারটা জাতির ছেলে-তিনজন পুরুষ একজন মেয়ে, দেখেক রে সেই ঘরে চেয়ে, তিনি ঘরের কর্তা হয়ে, এই ভাবেতে ঘর রেখেছে, সেই যে ঘরের নাম মোকাম ভাই, চারি ঠাঁই আছে ॥

লাহুত নাত মালকৃত জবরুত এই চারটা নাম মোকাম কয় মুর্শীদ ধরে জানতে হয়। একুনেতে চৌত্রিশ জন সেই ঘরেতে রয়, তারা যেদিন ছেড়ে যাবে সাধের ঘর তোর ধুলায় রবে, তোমার উপায় কিবা হবে, ঘুন লাগলে খেয়ে যাবে তোর ঘরের খুঁটি সব অধম পাগলা কানাই কয় সেদিন কি হবে উপায় ।

(৩৯৫)

পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরা, এক আজব কারখানা, দীননাথ সুতোর এসে, চার রঙের ঘর বেঁধেছে, নয় কড়া ভাগ দিয়েছে। আবার ঘরের আছে বিশ কোণা- পঞ্চরাগে বাঁধা সে ঘর, চৌদ্দ ভুবন আত্মা তাহার, রেখেছে দুই খুঁটির পর বাতাসে ঘর হেলে না-রাত্র দিবস জ্বলছে আগুন, দেখ ভাই ঘর পোড়ে না আজব আজব কারখানা সেই ঘরে রয়েছে, সেথা চার গলি এক বাজার আছে, করতেছে বেচাকেনা,

রাং তামা দস্তা সোনা, কথা কয় না মুখ যে আছে-তারাই মাল কিনিতেছে, দাড়ি ধরে করে ওজন, সেই যে হাটের মহাজন, দু-ধারে দুইজন আছে, তারাই নিলো কষে, আরাক ঠাকুর ঘরের মধ্যে, আহ্নিক করে বসে ঘরের মধ্যে ঘর বাধা ভাই, আছে এক ক্ষীরোদ নদী, আরো একটি খাল, কাম কুম্ভীর খায়রে ধরে, না হয় যে সামাল । ও ভাই, এইতো ঘরের হাল।

(৩৯৬)

আজব দেখলাম ভবের পর, আছে একটি কলের ঘর, আট কুঠুরী নয় দরজা আঠার মোকাম, ষোল পাহারাদার, ঘর বাধা আর সাধ্য কার মুলুক জোড়া ঘর বেধেছে দুই খুঁটির পর, ধন্য ধন্য ধন্য আরে ও মিস্ত্রীর বাহার ॥

সেই যে ঘরে বসত করে, ও তারা চারিটি ভাই, চারজনা চার জাতির ছেলে, একই সাথের ভাই কারো মাতা নাই, কারো পিতা নাই, কারো করে কারো দরদ নাই, এক জনারই হাতের শিংয়ে ইস্রাফিলের হাত, একজন মলেরে তিনজন দায়িক হয় । সেই যে ঘরে বসত করে, না পুরিল মানের আশ, ঘরের ছানচের নীচে চাল লাগিয়ে পাগলা কানাই করত বাস, জনম ভরে ধরে টরে করতে পারলাম না বশ

(৩৯৭)

একজর নূরী বসত করতেছে এই ঘরের ছানচেতে, ছানচের নীচে চালা দিয়ে যোগ আসনে বসেছে, ঢেউয়ের উপর করছে বসত শুনি তারাই দুইজনে ॥ একবার ডোবে একবার ভাসতেছে এই তুফানের মাছে, পানির উপর আগুনের বসত তার উপরে রয়েছে, পাগলা কানাই বলেরে ভাই তার শূন্যে বসত হয়েছে। পারা দিলে আয়নায় দেখা যায়, না দিলেও তো নয়, একজন নূরী সাধ্য করি দেহের খবর নিতে চায়, ইস্রাফিলের হাতের শিং এ কেবল ওসে নূরী ধরতে চায়।

(৩৯৮)

শ্রী কুঞ্জের বাজারে দেখলাম একখান রঙের ঘর, অটল বারি বোঝাই আছে, সাজান অতি মনোহর। আট কুঠুরী নয় দরজা গড়া অতি পরিষ্কার, ওসে জোগালেরা তফাৎ থেকে পেলনা ঘরের সন্ধান, চৌরি কি বাংলা সে ঘর তা উদ্দিশ করা ভার ।

সেই যে ঘরে চুরি করে, মাল গুদামে আগে যায়, ছোড়ান চাবি যত ছিল চোরের ঠাই, ইসকাদর আর লোহার বাকস চোরে খোলে ইশারায়, খুললে তালা মাল জহুরা চোরে বোঝা বেঁধে লয়, খালি ঘরখান দেখে কাঁদে পাগলা মনুরায় ॥ পাগলা কানাই হাতড়ে বেড়ায় অন্ধকারে সেই ঘরে, দেখতে না পায় কোনটা কোথায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে, ঘরের বাইনে আড়া নড়ে।

(৩৯৯)

কোন ঘরামী ঘর বেধেছে এক নজর দেখলাম না তারে, ঘর বেধেছে ঘরামী বন্ধু পার হইতে ভব-সিন্ধু, পালিয়ে যাবার পথ রেখেছে, এক ঘরেতে জগৎ জুড়েছে । দল বেদল হয় দলে দলে শুধু কেবল ঘর খাড়া আছে, ঘর খাড়া শূন্য কলে, বিনা তেলে বাতি জ্বলে, মনিগণে করছে আরাধন বুঝি ঝড়ে ঘর ভেংগে যায় কখন পাগলা কানই ভেবে বলে, ঘর খাড়া এ ভূমণ্ডলে, আমি না গেলাম সেই ঘরামির অন্বেষণ |

(৪০০)

আজব এক গাছের কথা লোক মুখে শুনে, সে গাছ দেখতে এলাম দেখে গেলাম, খুশী হয়ে রলাম মনে মনে, গাছের ভাব ফকির বৈষ্ণব জানে, সংসারে নাইক ভুলা গাছ অমূল্য, ফল ভাল কি মন্দ কোনখানে, কোন ফুলে ফল তা কি সকলে জানে? যখন গাছের মধ্যে স্থিতি হয়, তখন দয়াময়, দিচ্ছে বেটা বিধি নিধি, পরয়ারী গৌরী কোথায় রয়, তবে সে চৌদ্দ পুরুষের জ্বালায়, গাছের সময় হলে শোন বলি, কৃতাগুলি ফল পড়ে পাছ তলায়, তা শুনে কত মন ভোলা, দেখতে এল ভিস্তিয়ালা, কয় পাগলা কানাই এসব বন্দেগীর খেলা ॥

(৪০১)

তোরা দেখবি যদি গাছের যদি নদীর পাশে বিকশি জবা, সরল সে গাছের পাপড়ি পাপড়ির গড়ন ছিল জবা, পুত্র-বদন বংশী বদন, বদন ভরে দেখতে পাবা, সে ফুলের সৌরভে হয় জগৎ আলো বাপরে বাবা, ধন্য বলি সেই জবা ।

থাকে যাহার কপালেতে, একদিন ফুল যোগে ফল পাবা । সুরাসুরীর গন্ধে মদন নড়ে, করে বাঞ্ছা সে ফলে, মাটির উপর লগ্ন যোগে দুই গাছ যদি মেলে, স্বর্ণ বর্ণ আদি স্বর্ণ হয়ে পিপাসা ফুলের মূলে, ঈশ্বর ইচ্ছায় অমূল্য ধন ফুলে ফলে, ওরে থাকে যাহার কপালে, ভাগ্য জনম সফল হবে, যদি ফল একবার লয় সে কোলে ॥

ও সে ফুল ফল যার সৌভাগ্য কপাল, দুঃখ জ্বালা তার দূরে যাবে হবে নিহাল, জীবাত্মা আর পরমাত্মা ছাড়া না ফল, ও তাই পাগলা কানাই বলছেরে ভাই, আছে ফলের ইহকাল আর পরকাল, শিশুকাল যৌবনকাল মধ্যমকাল, শেষকালেতে হয় চারিকাল, কবে হবে জীবনকাল, যেদিন প্রভু ছাড়িয়ে যাবে, সেই দিন পাবারে অন্ধকাল

(৪০২)

আজব এক গাছের কথা ভাই আমি কই দশের কাছে, সে গাছ কোন জাগায় আছে। হাজার বছর এলফাৎ জুড়ে সেই গাছের চার ডাল গেছে, বল গাছ কোন জাগায় আছে, এখান ডালে দুটি পাতা খোদার নাম আছে গাথা, সেই পাতার মাঝে। আর একখান ডালে আছে দেখ ভাই মেওয়া আতি সার, সে মেওয়া দেখতে কি বাহার, সে মেওয়া যদি কেহ খায়, পেটের ক্ষুধা ভেগে যাবে, ছয় মাস থাকবে অক্ষুধায়, মেওয়া আছে কোন জাগায়, কার লাগি সে মেওয়া রেখেছে  তাই আমার কাছে, শুনতে ইচ্ছা হয় ।

আর একটি ডালে আছে ভাই, দেখ কয়টি পাকা, তা জানে মালেক বিধাতা, সেই পাতার মাঝারে আছে, সকলের খড়ের আত্মা। সেই গাছ থাকে যথা কানাই বলে, ওরে আজরাইল তার নীচে থাকে, প্রতিটি যখন পাকে, টান দিয়ে নেয় সে কোথা

(৪০৩)

শুন ভাই গাছের কথা সে গাছের এক ডালে এক পাতা, আসমান দিকে গাছের শিকড় জমিনে তার মাথা । ঠিক যেন ভাই গাছের গোড়া কাটা, তবু ভাই সে গাছ দিব্যি থাকে তাজা, এক জাগাতে গাছ থাকে না সে গাছ নড়েচড়ে, গাছের মধ্যে দম রয়েছে ভরে, দমটি যখন বাহির হবে সাধের গাছ ওমনি যাবে মরে। পাগলা কানই বলছে খাটি, দিনকানা তুই চিনলি নারে, মইলে গাছ ওমনি দিবে মাটি ।

(৪০৪)

দুই জন নারী তারা বসত করে ছানচের নীচে, ওরে তার নীচেতে শলা দিয়া, ঘর বেঁধেছে জোকারে, পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে বসত করি পানির উপরে, ক্ষণে ডোব ক্ষণে ভাসে আছে তুফান মাঝারে। দানের মায়া বড় মায়া পানির ভরা ভরেছ, ইস্রাফিলের হাতে শিংগা সদা সেত তৈরি রেখেছে। গাছের গোড়া ধরে ঝাকি দিলে কি ফল পাওয়া যায়? গাছের ডাল ধরে ঝাকি দিলে অমূল্য ধন পাওয়া যায় । ওরে গাছ বড়, কি ডাল বড় ভাই, সেও কথাটি পাগল কানাই কয়

(৪০৫)

গাছ কাটো ও ভাই গাছি দুই চার কথা তোমায় বলি, হুশ করে চাচ দিও গাছে ঠিক রেখো কপালী, অনুরাগের ছড়ি জ্ঞানের চুরি ভাড় যেন না হয় খালি, যেদিন লাল চমকা লাগাবে গাছে বস্ত্র হবে না রস জ্বাল দিলি, পাগলা কানাই বলে পাৰি সে ধন চেতন গুরুর সংগ নিলি।

অজ্ঞানী গাছী যারা গাছ কাটে তারা চারা, সে গাছ কখন বাঁচে না, টেকা গাছের রস হইলে জাল দিলে ওঠে ফেনা, যোগ চিনে গাছ কাটো ভাই, সে রসে হবে মিছরি দানা, ষোল ফোটা রস আইলে মায়ের চতুর্দলে কর স্থাপন । অনুরাগের অগ্নি দিয়ে কর সে দাহন, তার এগার ফোটা কমে যাবে পঞ্চ ফোটে মিঠাই হবে, চার ফোটে চিনির গোলা, দিন থাকতে মুর্শিদ। ধরে সন্ধান জানরে মন ভোলা ॥

(৪০৬)

বেশ বেশ পাগলা কানই গাছ দেখিয়ে আকুল, সাধ্য কি করি গাছের পরিস্থল । শুনতে পাই গাছের মধ্যি, নীহার নদী নাই আর কূল, এই তরংগে হিংগল বংগে বিকশিত হিংগল ফুল, উহার ফুল যথা নাইক তথা, মূল জানবে কি সে ঈশ্বরালি নিজে বুঝবার ভুল যখন সেই গাছে বসন্ত উদয় হয়, তখনই ফুলের সংগে ঝতু রায়, আন সে ফুল আন বলে আন সে ফুল বিকশিত, সময় অনুযোগে মেঘে, ফুলেতে মাল বর্ষে যায়, তখন এই ফুলের জুত করেন সেই দয়াময়।

বলে কানাই দয়াল বন্ধু, এই ভবের ভবখেলা, ওভাই বসে সাই করছে একেলা ।

গাছে পোক্ত হলে ফল, খোসে পড়ে ভূমিস্থল, হয় সে গাছের ধন্য ধন্য পূর্ণ কপাল তাই বলে কানাই, ফল পলো গাছ তলায়, তখান দূরে যায় শমনজ্বালা, তা জানে জানে সকলে, এক ফলে দুই গাছ উজালা, ফল বিহনে কত সাধু হয়রে বিভোলা ॥

(৪০৭)

কি মজার ফুল ফুটেছে উবদো গাছে, ডাল গিয়েছে পাতালে, চৌদ্দ ভুবন আলো করে চারখানা ডালে, পাছটি গড়া বিধির কলে, ডাল থাকিতে ফোটে ফুল খোলা, সেই ফুলের ফল অমূল্য রতন, ফল পত্তন করে ভবের পর, ফল হইতে চৌদ্দ পুরুষ দেখ ভাই উজালা হয় তার ॥ ও যার ফুল যথা নাইক তাথা মূল, মূল তার চৌদ্দ ভুবন পরে, ফুলেতে ফল ধরে।

সুযোগেতে দুই গাছেতে, গাছটি মিলন করে, বিন্দু মাত্র নূর পড়িলে তখন সে ফুলে মহর আটে ॥ দেবতা আদি নিরবধি সেই ফুলে চতুষ্পার, খাকের পরে আতশ মিশে বেড়ায় ভেসে পানির পর, কথা বলতে শংকা আমার। আর আতশ খাক বাত দিয়ে ফলটি তৈয়ার, সেই ফল আছে কপালে যার, সেই ফুলের ফল অমূল্য রতন ফল পত্তন করে ভবের পর, ফল হইতে চৌদ্দ পুরুষ কানাই কয় উজালা হয় তার ॥

(৪০৮)

এসো এই ভবের হাটে, শুনি বাঁকা নদীর তটে, বার মাস মাস এক রঙের গাছে, বারটি ফুল ফোটে, কোন সময়ে, কোন যোগেতে, মানুষ আসে ঘাটে, কোন সময় ফুলের মহর আটে এসে এই চাঁদের সভায়, একথা কহ অলিরায়, কোন ফুলে হয় মধুখালি, কোন ফুলে হয় শুভংকালি, কোন ফুলে দাও উঠন-বসন, কোন ফুলে দাও গুরুর আসন, কোন ফুলে করহে বিরাজ ॥

এক ফুল তোমার কপালে, আরক ফুল উজান চলে, আরাক ফুল উপুড় জায়তন, কোন ফুল তোর সংগের সাথী, কোন ফুলের কর স্মরণ । আমি কানাই মূর্খমতি কোন তা পারিনে কতি, আবের ফুল চলে উজান |

(৪০৯)

যে জন, বোঝে সে জন, ফুল ছাড়া কি ফল আছে, বিচার কর মিয়া সাহেবরা সত্য চার চিজে এক গাছ পয়দা ফুরাত নদীর ধারে, দু-খান ডাল পাতালে গিয়াছে-সাধু, কি মিছে। লাল, জরদ, ছিয়া, ছফেদ চার রঙের চার ফুল, নাল ফুলে হয় কালা পরদা, লাল ফুলে রাসুল, যে ফুলে হয় দুনিয়ার গঠন, সেই ফুলে হয় মালেকুল, অমাবস্যা লাগলে সেদিন হাওয়ায় থাকে ফুল ফুটেছে ফুল রক্তজবা শীতল নদীর ধারে, দেখ এই দেহের মাঝারে, ফকির বৈষ্টম সেবা করে, পাগলা কানাই।

(৪১০)

দেখ দেখ ভবের পরে, চারটি ফুল ফোটে দ্বারে দ্বারে, বারবার চব্বিশ পক্ষ, ফুল ফোটে যুব নারীর ঘরে। সে ফুল আছে সবারই ঘরে, তাই পাগলা কানাই বলে, ফুল চেনে না দিন কানা, কেন ঘুরে মিছে তা-না-না করে মরে, শক্তি শক্তি বিদ্যাহীন ব্যক্তি থাকিত ফুলের বিম্বাধরে ॥

দেখ দেখ নিরন্তরে আছে ফুল মঞ্জুতের ঘরে, সাড়ে সাড়ে সাড়ে চব্বিশ, বন্দ বন্দ ফুলের দ্বারে, এর কোন ফুলটি কোন রাগে, এক আধ খোল মানে, আধ মূলাধারে বসেছে ফুলের পরে, তারে কেউ না চিনতে পারে ॥ আর, ভাসিল রসে মোহিত রংগে রতি করে টলমল, মূল পদে সে মূলাধার সে বসে মূলের পর, ক্ষীরোদ নতুন ঘটে ফল।

ফুলে ফল মিলন করে, তোর শমন অনুযোগের কালে। ঊর্ধ্বে চারটি ফুল ফোটে চার ভাগে, তাহা আছে রে চার ভাগে । রাধাকান্ত ফুল, কৃষ্ণকান্ত জালি, চার যুগ ধরেছে অনুরাগে

(৪১১)

এক কুসুমে বার বাসা-সাতটি পক্ষ হয়, তার কতক ধলো কতক কালো মুরশিদ দেখে কয়, এই দুহা লয়ে আমি ঠেকলাম বিষম দায়, আবার শিকার পক্ষ আসমানে ডালে জমিনে পাতা, ফকির উদয় চাঁদ কয় পাগলা কানাই ভাংগিসনা কথা, আবার উর্মি লোকে বলে ছল হয়, আসলে ছালের কথা নয়, যোগী মোহন্ত বলে এই যৌবন বৃথা ।

আবার আসমানেতে অমাবস্যা খাকি নিরঞ্জন, ও থাকি হয় চেতন, যুগ যোগান্তি উদাসিনী হয়েছে মিলন, আবার বান্দার দেহের প্রতিপদ হয়। সেও, কথাটি কেউ না কয়, সকল ঠিক পাবা যখন হইবে মরণ ॥

(৪১২)

পাগলা কানাই বলে যদি ভাংগি ফুলের বোটা, সাধু কুলের হয়রে খোটা, ফুলে ফলে ঢেউ খেলেছে পাগলা কানাই তাই বলে, বলে ভাই সকলে, পাগলা কানাই গান করে, তু বুজতে পারলাম না, পাগলা কানাই বলে যদি ভাংগি গুপ্ত কথা, গাছ বাড়িতে আগুন লাগে ।

উত্তরেতে গেরস্ত ঘর পশ্চিমেতে অন্ধকার, শুনছি গুরুর ঠাঁই, দক্ষিণেতে ঢোল সুমুদ্দুর হিসেবেতে পাই, কোন খান্দান ধরে তুমি কার কাছে হইছ মুরিদ? কোন ফুলেতে আদম তৈরি হয়, কোন ফুলেতে হাওয়া তৈরি হয়, হাওয়া আদম কিসে হয়? তোমার নূর ছিল কোথা, যখন মায়ের উদরে ছিলে, তোমার পূর্ব পশ্চিম কোথায় ছিল, বলে দাও বয়াতি।

মাতা-পিতা না থাকিলে কিসে তুমি হলে, তোমার নূর পয়লা কোথায় ছিল? সেই নূরেতে আদম তৈরি। পাগলা কানাই বলে, শুকনা সারা খাপড়ার মত মুখ, দেখে মনে লাগে দঃখ, ওই নাকিরে পাগলা কানাই ধুঁয়ো জারি গায় ॥

(৪১৩)

ফুটেছে ফুল সরোবারে দেখে নাহি তোফিক করে, অমূল্য ফুল নাই তার মূল, সে ফুলের সন্ধান কে করে, ফুলের সৌরভে জগৎ মোহিতং, অলিরাজ ভাই ভেবে ভীত, যোগেযোগে দুই গাছে এক ফল ধরে, কপালং কপালং ফুলের নষ্ট হয় গাছের গোড়ে, ধরতে গেলে না দেয় ধরা যায় সরে, তোরা ধরবি ফুল কেমন করে ফুলের সাধন করছে কতই জনা অন্বেষণ কেউ পাবে না, আসবে যেদিন ভবের পরে সেদিন গোপন থাকবে না, খোলায় পড়ে ঘুরছে কত দিনকানা, ফুলের সাধন করছে দীন দয়াময়, দুই গাছ এনে যোগে মিলায়, যোগ ছাড়া আযোগে ফুল ধরে না, আজ পাবে যে জন অমূল্য ধন, ঘুচবে মনের যন্ত্রণা ।

অধম পাগলা কানাই তাই ভেবে বলে, আছে ফুল যার কপালে, সে বিনে অন্য কেহই পাবে না ফুল সকালে, জগৎপতি লিখেছে যার ললাটে, হাত বাড়ইলে পাবে সে ফুলতার ঘাটে। মানব জীবন সফল হবে যে দিন ফুল নিবে কোলে, কৃতান্ত নিতান্ত শাস্তি সেই ফুলে, আরো অকাল হবে সকালে ॥

(৪১৪)

আজব একটি ফুল ফুটেছে প্রেম সরোবরে, লক্ষ যোজন ফুলের জ্যোতি সেই ফুলেতে বিরাজ করে, যোগীন্দ্র মহেন্দ্র যারা তারা বসে তপজপ করে, ঐ সে তরংগের উপরে, তার উপর মানুষ হোল ডুব খেলে, জলে স্থলে এক সাথ হয়ে সমুদ্রে ঢেউ খেলে, সে মানুষের বসত শূন্যে ঢেউয়ের পরে ।

গুরু শিষ্য এক সাথে হয়ে ঢেউ সইতে পারে, তারে সাধু বলি বটে, যাবে যে প্রেম নদীর ঘাটে, যারা সে ফুল তোলে, ও সে কামিনীর কোলে, গরল আছে তারই পরে, খেলে পরে মানুষ মরে, যে জন গরল খেয়ে জীর্ণ করে, সেই যাবে ভব নদীর ওপারে।

সেই যে নদীর তুফান ভারি কেমন করে ধরবো পাড়ি, পাগলা কানাই বলে আমি ডুবে মরি, সহস্র দল পদ্মগাঁথা সেই ফুলের মধ্যে, আমার মনরে বাদি অনুরাগী, আমি গরল খেয়ে অমনি থাকি, ওহে অলি আর ফুল যদি তুলি, যদি ভাংগি ফুলের বোটা, সাধু কুলে হবে খোটা, সেই জন্যি ঘুরি নদীর কূলিকূলি, দরশন পাব মানুষ ঠিক হলি ॥ ভাইরে বিধাতার কি কল আমি তাই ভেবে হলাম বেহাল, দেৱাক্ত পয়দা করেছে।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৫

 

(৪১৫)

মতিলাল, কোথায় ঋতু ছাতু গগনে মূল ভুবন ডাল, দুইখানা ডাল ইন্দ্ৰ আদি গাছের মধ্যে ধরে চিরকাল, পাতায় পাতায় চন্দ্র উদয় ভাল ছাড়া মাঝখানে ফুল, বেশ তো দেখা যায়। মাসে মাসে ফুল আসে, তিন দিন ছাড়া পূর্বপাশে, কতই ফুল পড়ে যায় বাতাসে, কারো ধর্ম যোগ অনুরাগে, দুই গাছ মিলন হয় এসে, দুই গাছে এক ফলের স্থিতি হবে অনায়াসে।

পাতায় পাতায় চন্দ্র উদয় ভাল ছাড়া, মাঝখানে ফুল পানিতে ভাসে । ফুলের যখন হয় স্থিতি, আমি করি অতি মিনতি দুই গাছে এক ফলের উৎপত্তি, পাগলা কানাই বলছে ভাইরে ফুল ফুটিলে, জমর হয় স্থিতি, দয়া কর মহেশ্বরী অন্তরে ফুটবেরে ফুল, থাকে যার পতি ।

(৪১৬)

এই ভবে এই না ভবে, আজব এক ফুল ফুটে হয় জগৎ আলো, ওরে হিংগুল বরণ ফুলটি ফোটে, দেখতে সে ফুল নীল বরণ আলো, ফুলের ভ্রমরগণ সব পাগল হোল, হিংগুল বরন ফুলটি ফোটে, ফুল গো ফুল ফুলে মোছে জীবনের কালো ।

ফুল সে দেখতে যেমন আকাশের তারা, ফুলের স্পর্শ পেলে দুঃখ ব্যথা সবই হয়। হারা, ওরে ফুলের যখন জোয়ার আসে, এক কালে ফুল ফুটে হয় সারা, ফুলের ভ্রমরগণ সব পাগল পারা, হিংগুল বরণ ফুলটি ফোটে সাধের ফুল গো ফুল, সে ফুলে ধন্য হয় গো জীবনের ধারা ॥

এই ভবে এই না ভবে কানাই ভাবে, আজব এক তরী বিধি গড়েছেন হেথায়, সেই তরী মানব দেহ কানাই বলে যায়, সাধের হিংগুল বরণ ফুলটি তুলে, রাখো যদি সেই তরণীর গোড়ায়, তরী আলো পাবে, দুঃখ ব্যথা দূরে যাবে, চলবে তবে উজানী হাওয়ায়, ধন্য বটে সেই তরী, যেই খানেতে মালেক আল্লাহ, মাঝি হয়ে তুফানে চালায়

(৪১৭)

ফুল ফোটে খাঁটি যোগে, দিবা অন্তে নিশিভাগে, রসিক দেখে অনুরাগে, তির পিনীর তিন ধারে, অরসিক যেতে নারে, তুলতে সে ফুল সব হারায় মূল, কাম কুমীরে খায় তার আগে, আস্ত কিছুই না রাখে ॥

বার মাসে বারটি ফুল, চার যুগ ধরে ফুটতেছে, কোন ফুলে মা-খাকী পয়দা কোন ফুলে রাছুল, কথার মানে কর উল, তারে ধরবে বলে ফকির বৈষ্টম, রাত দিন মাথা কুটতেছে । আমি এই কানাই পাগল, মাথাতে সদায় হয় গোল, তারে ধরব কেমন করে। তারে ধরতে শিব শ্মশানবাসী, কৃষ্ণ পাগল হয় উদাসী, হাতেতে লয়ে বাঁশী, বৃন্দাবনে ফেরে

(৪১৮)

ফুল ফুটেছে বটে দেখে প্রাণ চমকে উঠে আচ্ছা মজার ফুল, ফুল ফুটে হয় জগৎ আলো, দেখে প্রাণটি শীতল হল, আকারে নাই সাকারে মৈথুন ঝরে, কুয়োকারে ফুলের ফল হল, ফল যে পায় সে পায়, অন্যে কি তা পায় বল।

কুয়োকারেতে সেদিন সেই যে ফল, বিধির এমনি কল, আমি ভাবছি মনে মন, ভাবছি তাই এখন, থাকের সংগে আতশ মিশে, পানির মধ্যি বেড়ায় ভেসে, হাওয়া বয় উজান, ফল ভেসে যায় পানির মধ্যে বিধি ছিল তাহারই প্রতি, পানির হাতুর পানির কল, পানির মধ্যে খাটায় কল বিধির কল বুঝায় এমন কার সাধ্যি, জল পানি ভুল পানি ফল ভাসে পানির মাধ্য।

তিনশ চোষট্টিটা দেয়া জোড়া, গাছের মধ্যে গাছটি গড়া, আছে বিনা বোটায় জোড়া, গড়াল ছুতার আপন মনে, অন্যে কি তার সন্ধান জানে, সদায় করে নড়াচড়া, পঞ্চমে পঞ্চ ফুল, অষ্টমে অষ্ট আশি, নরম মাসে যার যতন, দশ মাসে দশ দিন হলে ফল, ভবের পরে হয় পত্তন পাগলা কানাই বলে ভাই-ফুলের সন্ধান কর তাই, দিন থাকিতে মুরশিদ ধরলে, ফুলের সন্ধান পাওয়া যায়

(৪১৯)

সুখ সাগরে সরোবরে ফুল, ফুল ফোটে মহেন্দ্ৰ যোগে, জগতে যত ফুল হয়, তার মতো কোন ফুল নাই। তাই দেখি ফুলেরই বাগে, জলে কমল, স্থলে কমল, রক্ত কমল জাগে, দেখি ফুলেরই বাগে । সে ফুলের সৌরভে জগৎ আকুল, অলিরাজ দেখে সে ফুল, ফিরছে যোগেজাগে ॥ অলি বিনে কেউ না জানে, সেই ফুলের সন্ধান, সাগরেতে সরোবর তার মধ্যে ফুলটি বাহার, অলি থাকে সুখে চমৎকার।

অলির আছে মধুর ফাঁদ, অধর মানুষ অধর চাঁদ, সেই ফুলের সংগে নিহার, অলি বিহার, করে ভাই ফুলে বসে, মহামূল্য মধুর আশে, রসিক জানে তার সন্ধান সাগরেতে ফুলটি ফোটে নগরবাসীগণ, কানাকানি করে সবে দেখতে সদায় মন, সুফুল কি কু-ফুল, তাই জানতে সর্বক্ষণ। সভা হয় শুভ কারণ, গায়েবী সেই ফুলের গঠন, না জানিলে জনম বৃথা হয়, তার সকলই বিসর্জন, ভজন সাধন অকারণ । তাই ভাবে কানাই ভবের পরে, পরমেশ্বর কে না চেন রে, কেবল মুখে তুমি কও বচন ॥

(৪২০)

আমার যে জমি আবাদ হয়না, ছয় বলদে কথা শোনে না, আমি যখন হালে জুড়ি, যাইতে কইলে যাইত মানে না, সদায় লাঙল ছাঁটে, যোয়াল ছাঁটে, চংগে টানে না। দেহ জমি পতিত রইল শস্য ফলে না, গেলি সেই বলদের কাছে রুখে আসে, ধরতে চায় ঠাসে । আবার মদনা এড়ে দুষ্ট ভারি, ওসে ভিটে খুঁচে ধচায় দিছে, পাগল কানাই বলে ওগো মণি কইরে দাও দিশে ॥

(৪২১)

বিষম কালো, হায় কি করি তার, চাঁদে চাঁদে মাসে মাসে, সেই জমিতে আসে বাওহা মজার জমিখানি দেখতে চমৎকার, জমিখানি দেখতে ভাল, মধ্যে আছে জোয়ার, সে যোগের সময় জোয়ার বয়, কত জনের মাল হারায়। বিধির নীলা। বুঝতে পারে সাধ্য কার, সেই সমযোগে অনুরাগে, দৈবী জমির হয় পত্তন । সেই। জমিনেই কতজন হাবুডুবু খায়, অজ্ঞানী হইল যারা, মাথা ধরে কাঁদে তারা, এখন কি করি উপায় ।

এই বলে মুরশিদ ধরে উপায় কর, মদন রাজার দফা সার, হয় বলদ বড়ই পাজি, ভাবে মন কর রাজি, ধার চিনিয়া ধারার খবর ঠিক কর, নইলে পড়বি মারা, সকালে কাজ সার, রসিক যারা জানে তারা, কোন জাগায় সেই কল কল কৌশলে ঠকঠকায়ে ভক্তি রসের জোয়াল এনে, সেই ছয় বলদের ঘাড়ে দাও লাংগল, ছয় বলদে করবে নড়াচড়া, পিষ্ঠে মার ভক্তির কোড়া, কোড়া খেয়ে ঠিক হবে, দীন পাগল কানাই বলে, বিধির ফাড়া কেটে যাবে অনাসে, এবার জমিটারে চাষ করে, টেপা মার চিনে মার ঘাসে ॥

(৪২২)

আমার দেহ জমি আবাদ হইল না, গুরুর বীজ বুনতে পারলাম না, বীজ বুনতে পারলে হোত কামরাংগা ফল, পুষ্ট হোত দানা, গুরুর নিবাদের প্রসাদ ভাই, আমার ভাগ্যেতে হোল না ।

চিরদিন ক্ষেতে মলাম খেটে, বেজোতে লাংগল নাইলাম জুটে, জোয়াল নিয়ে গেলাম স্বর্ণধামের মাঠে, পাগল কানাইর কাচি পাইলি ভাই, বীজের দাম দিতে জীবন ফাটে। চাষার প্রেম ভাংলে না লয় জোড়া, গুরুর প্রেমের এ অঞ্চল হামেরা, আগে জানতে পারলে দিতাম ক্ষেতে, জ্ঞান-প্যারাকের বেড়া, গুরুকে না দিয়ে বস্তু ভাই, খাইতাম সেই গোপন রসের পেড়া |

(৪২৩)

পাঁচ পাঁচ পঁচিশের বন্দ, জমির তো অনেক ছন্দ, সাধুতে করে পছন্দ, জ্ঞানের লাংগল দেয় জুড়ে। ছয় রিপুকে বশ করিয়ে জমি আবাদে ফেলাও সারে, আত্মাকে প্রহরী রেখে, মরি হায়, হায় রে, জমিতে জ্ঞানের লাংগল বাইরে ।

সুরসের রসিক যারা, গুরুর বীজ করে রোপণ, বুনেরে বীজ ক্ষেতে তারা যোগ মতন, বীজের অংকুর হলে বোকা, বলি যে তোমার কাছে, যোগমত বুনলে সে বীজ, জমি পাখাল যাবে কিসে? অধীন পাগলা বিনয় করে, মুরশিদের শ্রী চরণে, শোন বয়াতি ভাই, তোমার সংগে পাল্লা করা, যেমন হাতড়িয়ে মাছ ধরা, অনুমানে বুঝে নিলাম, ও ব্যাটা তুই আসল ভিটের ছাড়া

(৪২৪)

কি মজার গড়েছে হাওয়া গাড়ি, আমি তার হাজার তারিফ করি, গাড়ির মধ্যে গাড়ির গঠন, গড়েছে কোন ফিকিরি, আট কুঠুরী নয় দরজা, ষোলজন রয়েছে প্রহরী, তীর্থ ধাম গাড়ির ভিতরে আছে, শুনেছি মুরশিদের কাছে, আরো বাহান্ন ধাম শাস্ত্রে প্রমাণ কোন ধামে কে আছে ? কোন ধামে কে বিরাজ করে, শুধাইলাম বয়াতির কাছে। কোন ধামে আছে মধুসূধন, কোন ধামে আছে মথুরা বৃন্দাবন, কোন ধামেতে ব্রহ্মার আসন, কোন ধামেতে পঞ্চান্ন, পাগলা কানাই বলে ওরে আমার মন, কোন ধামে লাগে চন্দ্র গ্রহণ ।

(৪২৫)

শোন ভাই সকলরা তোরা শোন গাড়ির খবর, এক গাড়িতে ছত্রিশ জাতি করতেছে সুমংগল, তোরা শোন ভাই সকল । তাই পাগলা কানাই কয় রাস্তায় গাড়ি পত্তন হবে যখন, বাতাসে মিশবে যোগিগণ, আর আছে যত যাত্রিগণ । আর আছে যত যাত্রিগণ, বাতাসে হবে মিলন, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্যগণ, সেদিন তারা সকলেই ছেড়ে যাবে একা বসে রবে মন।

আবার বিলাতে যখন গাড়ি করিবে গমন, ষোল ষোল বত্রিশ জনে চালাও গাড়ি রাত্রদিনে, ও মনের মতন । সে গাড়ির টিকেট মাষ্টার যে জন হয়, ঘাটে ঘাটে টিকিট লয়, তা দেখিয়া ছয় পাগলে করছে গোল, শোনরে ভাই সকল, আল্লাহ হরি কিছুই বলে না সেই নিত্য ধামের পাগল, যখন গাড়ি বিলাত থেকে ফিরে আসবে, অন্ধকারে, ধন্ধকারে, কুয়াকারে, নৈরাকারে, সেদিন ছিল কেমন, আরও দশ মাস দশ দিন সেইখানে থেকে, ভবে এসে হলি চেতন

(৪২৬)

দেখে এলাম ঢাকার শহরে কলের গাড়ি চলতেছে, বাই শিকল আর হাওয়ার গাড়ি, কতই বোল বলতেছে, আমি ধন্য বলি সেই মিস্ত্রীর তাতে বোম পুরে দেছে, গাড়িতে মাল টানিতেছে ॥ বলব কি সেই গাড়ির কথা, ও সে তিন চাকায় চলে, খুজে এলাম সে মিস্ত্রীর যদি পাই নাগালে, যত্ন করে রাখতাম তারে, ধরে গাড়ির মাঝারে, পাগলা কানাই ভাবতেছে তাই, এসে ভবের বাজারে । আঠার জন মাষ্টার দেখ, সেই গাড়ির আছে, একজন পালায়ে গেলে, সব পড়ে রবে, এত সাধের গাড়ি আমার মাটি যে হইবে ॥

(৪২৭)

এই সে দেহ মানুষ ঘুড্ডি, তিনশ ষাট জোড়ার হাড্ডি, সেই ঘুড়ির কামানই, সে দীর্ঘ পাশে সাড়ে তিন হাত, পাখা দুখানি, তিনশ ষাট রগের বন্ধন, তা দেখে লাগে ধন্ধ, আরও চামড়ার ছাউনি । সেই যে ঘুড্ডি তৈরি করে, কামেলা তার ভিতরে, সেই ঊর্ধ্বভাবে সুতা রাখে নীচে উড়াইছে, উড়তেছে হাওয়ার জোরে, কামেলা তার ভিতরে, সেই জোরে ঘুড়ি উড়তেছে, তাই পাগলা কানাই বলে দেখে ঘুড্ডি ছবি সদায় প্রাণ বিদরে, বাতাস যেদিন বন্ধ হবে, ঘুড়ি সেদিন ধাপ্পা খাবে, উড়বে না যুগে যুগান্তরে |

(৪২৮)

পাগলা কানাই কয় শোনরে সুখের পাখি, তোরে হৃদয়ের মাঝে যত্ন করে রাখলাম। বড় সুখি, ওরে কি দোষ দিয়ে যাবা ছেড়ে দিয়ে মোরে ফাঁকি, তুমি রয়ে রয়ে মার ছিল ঝাকি, শোন বলিরে ওরে পাখি তুমি নিগূঢ় কথা ধর, তুমি খাচার পাখি খাচায় থেকে সাধ্য সাধন কর। ওরে পথ ছেড়ে অপথে গেলি ও পথে ডুবে ম সদায় দীন বন্ধুর নাম জপনা কর । পাখির কেমন মায়া বুঝতে পারলাম না, রূপের খাচার সোনার পাখি, প্রেমের পাখি জোরে দুই আখি, মোরে ছেড়ে দেওনা, গেলে দেখাশুনা আর বুঝি হবে না ॥

(৪২৯)

কানাই বলে ও ময়না-ও সুখের পাখি, তোরে যত্ন করে রত্ন ভেবে, খাঁচায় পুরে রাখি, জানি তুমি মোরে যাবা ছেড়ে, আমারে দিয়ে ফাঁকি ॥ তুমি জানি মোরে যাবারে ছেড়ে বন্দী রবে ধড়, কত শালটি সুদর পড়ে রবে সুখের বাসর ঘর, ভাই বেরাদর দরদি বন্ধু, সকল হবেরে পর ॥ দুগ্ধদধিক্ষীর, ননী, খিলাইছি তোরে, গেলে পরে আর আসবি না ময়না সুখের বাসরে, তবে মায়াজালে বন্দী হলি, ময়না কিসের কারণে |

(৪৩০)

পাগলা কাই বলে শোনরে ময়না ও সুখের পাখি । কত রত্ন ভেবে যত্ন করতেছি, জীবন ভরে পালন করতেছি । কোন দিন যেন যাওরে চলে আমায় দিয়ে ফাঁকি । যে দিন ময়না যাবা ছেড়ে সেদিন পড়ে রবে ধড় । সেদিন খাট পালং পড়ে রবে, সুখের বাড়ি ঘর। সেদিন ইস্টি কুটুম দরদ বন্ধু সকল হবে পর ॥ কার তালুঝে বসত কর ময়না হাকিম চেন না, কত রাগ বাগিচা লুটে খালি, ওরে অভাগা ময়না। তুমি মালের খাজনা দিলে না, আখেরে কি জবাব দিবা, মউতের কথা ভাবলে না ॥

(৪৩১)

অধম কানাই বলে, কলিকালে পুষেছি এক টিয়ে, তারে দুগ্ধ কলা রোজ দুবেলা দিবরে মিলাইয়ে । তবু কোন দিন জানি যাবে ছেড়ে, সাধের পিঞ্জিরা থুয়ে ॥ ময়না ধরতে গেলে না দেয় ধরা, কয়না মনের কথা, পাখির ফাঁকি ভেবে আখি, ঝরছে অযথা ।

জোংলা পাখি পোষ মানে না, একথা আগে জানি না, সকল কথা ভেবে চিত্তে মন ভরে হয় বেদনা ॥ ছাড়লে পাখি, ভাই বন্ধু ইস্টি কুটুম, পড়ে মায়ার ফাঁদে, কেউ ঝাড়ের বাঁশ কাটে, কেউবা কবর খোদে । এমন দরদের বাপ মা তারা সামনে বসে কাঁদে ॥ ওরে ধুতি চাদর রাখ খুলে, গলায় দাও থিলকা তুলে, দেও মা থাকীর হাওলা করে, আজকে তোর মায়ের বুকে, দিলিরে পাষাণ তুলে ॥

(৪৩২)

কানাই কর খাচার পাখি খাচায় আছ মন, যে তোরে পুষেছে পাখি, চিনলিনে সে কেমন ধন, পোল যারে সাথের সাথি এসে এই সংসার ভুবন । আমার মন করেছ হিরে পিকে-নামটি হিরেমন, শংকটের পার ঐ হিরের ধার, পারে যেতে হবেরে মন। তাজা কর মন মহিশার, করগে ধর্ম সুসার, কর্ম উপার্জন । ওরে বাছা এই যে খাঁচা, যেদিন গড়বে খসে, শমন বাধবে করে, ছাড়বে নাকো বাধবে বাধন, খোদ মালিকের চর এসে, ভংগ দেও সে রংগ বসে, রয়েছ সুখ বিলাসে, ভাব তোমার হবে কি শেষে

(৪৩৩)

জৈষ্ঠ্য মাসে গ্রীষ্মকালে, শুকনো ডালে, দুই কাক মনের হরষে, পুরুষ কাকে বলে ডেকে, কথা রমণীর তরে শোন গো প্রাণ প্রেয়সী, ও রূপসী, তোমা করে মোর মন্দ আছে, তোমার বাসাতলে মুধর গলে, কোকিলা রব করে বসে ।

রাত দিন আমি ঘুরি ফিরি করি খাদ্য আহরণ, শুধু যোগাই তোমার মন, পরের ছা বাসায় লয়ে, পরম সুখে, দিচ্ছ তারে প্রেমালিংগণ, দুদিন পরে যাবে ছেড়ে ও পাখিরে, ফেলে তোর এ নব যৌবন ॥ কালো রূপ ভাল লাগে না, বলিস কি রূপসী তাতে আমি একা নয় দুষী, কাক কোকিলার এই দৃশ্য, তা জানেন বিশ্ববাসী, যায় না তোর মনের গুমার, প্রাণের বিকার, রাগ কর না ও রূপসী, কানাই কয় আমার চেয়ে পাখি ভাল কোকিলা, তার দুটো চোখ রাঙা বেশি ॥

(৪৩৪)

পড় রাব্বিল আলামিন যত মোমিন মুসলমান, তোমরা ঠিক রাখ ঈমান । সংসারের পর সারিয়া চলো, ঘটবে যেদিন তুফান, ভয় রাখো ভয় রাখো বলে ওরে মন, ডাকতেছে মালেক ছোবহান, অপার মহিমা যাহার, সে বড় করনে আলা কুদরতে বাহার ॥

গেল দিন, শুন মুসলমান মোমিন, পড় রাব্বিল আল আমিন, দিন গেলে কি পাবি ওরে দিন, দীনের মধ্যে প্রধান হোল মোহাম্মদের দীন, সেই দীনের দীন করলে একিন সুখে রবি চিরদিন, নাইকো জ্বালা ও মন ভোলা, পাবিরে পার হাসরের দিন ॥ তুই পুলসিরাৎ যাবি পার, তিরিশ মতি পঞ্চ মানিক সংগে পুঁজি কর, ফকির বৈষ্ণব আলেম ফাজেল, তারা পুঁজি করছেন বহুতর, আমি কানাই সুপথে নাই, কি যেন করেন পরওয়ার, ভোলা মন তাই বুঝে কর কারবার ।

(৪৩৫)

পাগলা কানাই কয় এসে ভবের বাজারে, রোজা নামাজ যে জন না করে, সবারই। একলাহনতা পাবা হিসাবের কালেতে, নামাজ দায় আসবে শমন, বাধবে তোর নিবন্ধের বাঁধন, সেদিন কতই কাদবি আফসোসের কাদন, ভবে আইসে কি কাম করিলি ওরে আমার মন, হেলায় হেলায় গেল জীবন, আমি করলাম না সাধন ভজন হোল কোনদিন দুনিয়া সৃজন, দেহের মধ্যে কোন জাগাতে আমরা আল্লাজীর আসন ।

(৪৩৬)

নামাজ পড়ে হোল না কোন কাজ, কেমনে পড়ব এই নামাজ, ওরে তথবা হাতে টুপি সাথে করেছি মুসল্লির কাজ, আবার কোন তরিকে পড়ব নামাজ ভাই, না জানি ইসলামী কাজ। আবার আকামত ছালাম যে সময় পড়ি, মন আমার বা পড়শি বাড়ি ।

আবার দয়াকরে বল গুরু কি দিয়ে মন ঠিক করি । আমার মন হয়ে চায় দিল্লীর বাদশাহ, মনকে বাধ্য করতে না পারি, পাগলা কানাই বলে সভাব মাঝরে, এই নামাজ ছিল কোথা কারে, এ নামাজ কোথায় ছিল কে আনিল বল দশের হুজুরে, আবার সত্য করে বল গুরুধন কোন নবী কোন ওক্ত পড়ে ।

(৪৩৭)

ওরে আল্লাহ বল পন্থে চল সরল দেলে, লাভ করিবার আশে ভবে আসন খোওয়াইলে, কি জবাব দিবা মহাজনের হিসাবের কালে, যে দিন আজরাইল এসে দোন হস্তে করিবে বন্ধন, চমকে উঠে কাদবিরে মন আফসোসের কাঁদন, সেদিন বেরাদার দরদ বন্ধু কি করবে তখন, তাই বুঝে আমার মন করলে না সাধন আর ভজন, পাগলা কানাই বলছে বৃথা গেলরে জীবন ।

(৪৩৮)

শুনে কোরানের মানে দেখি নয়নে আছে চারটি নাম, তাতে পয়দা চার কালাম, ইঞ্জিল তৌরিত জবুর, কোরান আনল দুনিয়ায় ইসলাম ॥ কোরানের চল্লিশ হরফ দশ হরফ নাই, কোন চোরায় করবে চুরি তার কোনখানে বাড়ি, ধরতে চাই চোরাকে চিনতে না পারি ॥ সেই চোরাকে ধরতে পারতাম, দিতাম অনুপাম, সেই চোরার জন্য রে কানাইয়ের ঝরে দুই নয়ান

(৪৩৯)

অধীন পাগলা কানই কয়, চড়ে পুড়া প্রেমের নায়, রাত্রদিন বসে ভাবি আমি হায়রে হায়, ডুব ডুব ডুব সাধের তরী, কখন যেন ডুবিয়া মরি, কখন যেন হেচকা টানে, আমার প্রাণও যায় । একেত মোর জীর্ণ তরী পাপে বোঝই হইছে ভারি, কেমনে দিব পাড়ি, আমার পারের সম্বল নাই । এই ভাংগা নৌকা বাইতে বাইতে, আমার দিনও যায় । শোন ওরে মন ব্যাপারি, এ ভব নদী দিবি পাড়ি, শ্রীগুরু যার আছে কাণ্ডারী, তার ভব পারের ভয় নাই, অনাসে সে পাড়ি দিয়ে, পারে চলে যায়।

(৪৪০)

ও নামাজ পড়বি যদি মন রসনা, আগে ঠিক কর পাঞ্জেগানা, নবীর তরিক ধরে পড় নামাজ ঠিক হবে ষোল আনা। আরো বরজখ ধরে সেজদা করো ভাই, নয়নে নামাজ হবে না। ইসকে সাদেকে বাজে হে ইমাম, বরজখ ঠিক রাখ নয়ান ।

আহকাম আরকান তের ফরজ, আলেমের ঠাই জান সন্ধান, নবীর তরিক ধরে। পড়া নামাজ, ঠিক রেখে ইসলামী কাজ, হল নামাজের এমনি ধারা, আলেকের মতন হও খাড়া, আরও হে হরফের মধ্যে রুকু, দালের মত সেজদা কর, তাই পাগলা কানাই বলে ভাইরা, হজ, জাকাত কোরবানি সার, হবে তোমার নামাজ ।

(৪৪১)

ধর্মকে সাক্ষী করে আসিলাম রাজ আসরে, জিজ্ঞাসা করিলাম তোরে, আমার ধুয়ার অর্থকথা বল সবার গোচরে, আমি সভাস্থলে যাই প্রকাশ করে, নব্বই হাজার কলমা ছিল গো, নূর নবী খোদার দিদারে ॥

পঞ্চাশ হাজার গুপ্ত রল, বাকি চল্লিশ কোরআন হল, চল্লিশ পারা ছিলগো কোরান, কোরান হাদিসে পাওয়া গেল, ও তার দশ ছেপারা কোন জায়গায় ছিল, পাক পঞ্জাতন হক নিরঞ্জন মিনকুল্লে, কোরান কোন বস্তু হোল ॥ মাঝখানে আদম পয়দা, করেছে আপে খোদা, বেহেস্ত তাহার বসতি ছিল । কোন বা দোষে দোষী হয়ে আদম বেহেস্ত ছাড়িল । বেহেস্তে র দরজার পর কোন বস্তু ছিল। মূর্খ কানাই জিজ্ঞেস করে বেশ-গো বেশ, বয়াতি তার মানে বল ।

(৪৪২)

পাগল কানাই তাই ভাবে, আজ মরিলে কাল দুদিন হবে, হুকুমেতে আইছ ভবে, তলবে যেতে হবে, ভাই বন্ধু ইষ্টি কুটুম কেহ সংগে না যাবে, দুর্লভ জনম আমার মিছে গেলরে ভবে ॥ দারুণ মায়াজাল মায়াতে ঘটাল জঞ্জাল, পুত্র পরিজন মাতা পিতা ভাই বোন, ক্ষণিক কেদে বলবে, জলদি কর মাটির তল, আজ হতে মিটলো।

রে আমার, জীবনের কাঁদা হাসার ছল ॥ পর কালে কাদের গনি করিবেন ছোয়াল, কি জবাব দেব আমি, আমার কাধেতে পাপের জোয়াল, পড়বে পিঠে হাজার কোড়া, খুলবে দেহের সকল জোড়া, দোজখে ফেলবে টেনে, রসিতে করে নাকাল |

(৪৪৩)

পাগলা কানাই বলে, আমি মিছামিছি আসিলাম এই ভবে, আমার আখেরে কি হবে কোন দিন যেন শমন এসে, দুই হস্তে রশি দিবে । সে দিন ইষ্টি কুটুম দরদের ভাই বোন তারা, তফাৎ বসে কাদবে, কেউ খাটের বাঁশ বানবে, কেউ গোর খোদবে, আহারে দারদের বাপ মা, শিওরে বসে কাঁদবে । সেদিন কাপড় চাদর ফেলে রেখে, খেলকা দিবে গলে, সেদিন ডোর কোপনী পরাবে, পড়তে হবে দুখের অনলে, গগনের চাঁদ পড়বে খসে পাতালে ।

(৪৪৪)

আল্লাহর এই আলম নিরমিল খোদার কলম, কলমে যা লিখেছে সাঁই, কোন দিন যাবে দুনিয়া ছেড়ে, সেই ভাবনা তোর মনে নাই ॥ কানাই বসে কালে ভাই, মহাজনের পুজি লয়ে, সব গেলাম খোয়ইয়ে, সে কথা তোর কিছুই মনে নাই, তোর গলায় দেবে প্রেমের ফাঁসি, সদায় বসে টানবি তাই সেদিন থাকবে না তোর পারাপারি, দুই হস্তে লাগাবে দড়ি, দাখিল করবেন হুজুরে, হাতে দিবে তাহ কড়া, পায় লায়াবে জিন বেড়ী ॥

(৪৪৫)

দেহ ছেড়ে মহা আত্মা যখনেতে যায় । সেদিন দেহ কেঁদে হয়, বল দেখিরে প্রাণ সখা চলে যাও কোথায়, আমি দিবা রজনী হেরে গুণমণি, লালন পালন করেছি। কোথায়, এখন কি দোষ দিয়া যাব গো ছেড়ে, তাই বল আমায় ॥

ধড় তোর আশায় আশায়, বড় প্রেম করেছিলাম, বড় যত্নেতে ছিলাম, ধরবে প্রেমের ফল খাব চিরকাল, সাধ করেছিলাম, সে আশা নৈরাশা হোল, কাল শমনে নেয় ধরে, ও ধড় তুমি থাকো মা খাকীর জিম্মায়, আমি চলিলাম সরকারে শোনরে বলি তার লীলা বহু রূপেতে, কারো দশে পাঁচেতে, কারো হয় সর্বনাশ গর্ভেতে বিনাশ, কারো পঞ্চাশেতে শও পুরিলে যাবাগো চলে, আল্লাহর ধ্বনি বলি মুখেতে, অধম কানাই বলে দেখা হবে তাই পরকালেতে

(৪৪৬)

মহা আত্মা বলে দেহ ভাই, তোর তুল্য বন্ধু কেহ নাই, আমি ফকির বেশে পরবাসে, ছিলাম রে এক ঠাঁই, যেদিন আসবে হুজুরের চিঠি, বাঁচার তো আর সাধ্য নাই, চেয়ে শমন আলো আমায় বেধে নিল, আর বাঁচার আশা নাই ।

মনের আসবার বেলায় এলে এক সাথে, এখন যাবার বেলায় চলে, আমায় রেখে মাঝ পথে, জন্মের তম দেখাশোনা, মিটলরে তোমার সাথে, আহারে প্রাণ সখা, ফিরে কি হবে দেখা, এই ছিল কর্মের লেখা মোর ভাগ্যেতে ॥ ঘৃত মাখন দথি দানা, তাও খাওয়ালাম কতই রকম দুখের ছানা, মন তোমায় যেতে দেব না, আট কুঠুরী নয় দরজা দশে দশে বালাখানা, ঘরে ঘরে কপাট পলো, দরজা বন্ধ হল, কানাই বলে সাধের খেলা ভেংগে গেল, আর হবে না

(৪৪৭)

দিন গেলরে খোদার বান্দা, বসে ভাবলে হবে কি, যেদিন আসবে শমন করবে দমন, হস্তে দিবে প্রেম ডুরা, কোথায় রবে দয়ার বাপ মা, কোথায় রবে ঘর বাড়ি ।

একম ঘর ভাই বাপের মস্তক, দুয়োম ঘর ভাই মার উদর, ত্রিয়ন ঘরে দুনিয়ায় বসত, থাকির তলে চারম ঘর, শিশুকালে মায়ের কোলে, স্তন ধরিয়া বালককালে ধুলায় পড়ে, হাসতে খেলতে দিন যায়, বয়সকালে করায় বিয়া রঙের খেলা খেলতে হয়, শেষকালে মাথায় করে, দুঃখের ডালি বয়, বুধ বৃহ শনি, রবি সোম আর মংগলবার, কানাই বলে এর কোনদিন ভাল জানেন আল্লাহ পরোয়ার |

(৪৪৮)

মোমিন ভাই সিলাম আলেকম, চুন্নত ফরজ দুটি কাজ, আদায় কর খোদার বান্দা, পড় হে নামাজ।

যাতে খুশী আল্লাহ নুরী, জায়গা হবে ভেস্ত পুরি, খুশী আলাহে সালাম, ঐ দেখ তোর ডুবলো বেলা, দিবা হল অবসান, আখেরে কি জবাব দিবি, আর কী দিন খুঁজলে পাবি, বদনে বল আল্লাহর নাম : আজরাইল এসে তবে, বাধবে কসে সে সময়, খালি খাচা পড়ে রবে, এ ভব সিছু মাঝারে, যার বিষয় সে লয়ে যাবে, খালি দেহ পড়ে রবে, মাল খাজনাটির কি হবে উপায়, সদরের নিকাশ দিতে ঠেকবি বিষম দায়, ভেবে কয় পাগলা কানাই, আখেরে আল্লাহ হাদি, মগরেবে আজাজীল শয়তান হবে বাদি ।

ইসাফিলের শিংগার পানি হইবে বেশুমার, সেদিন সদায় পানি ঢেউ খেলিবে, ঝলকে ঝলমল করিবে, কাজী হয়ে মালিক ছোবহান-নেকী বদী ধরে এনে, ওজন করবে জান, কোরানে তা শুনতে পাই, কালি সন্ধ্যাকালে, জুলমৎ ঘর পাইছেন দায়াময়

(৪৪৯)

ও মন দিন থাকিতে দীনের কর্ম কর, পঞ্চ তত্ত্বের তরী গড়, যাতে হৰি ভবনদী পার, যার যার বৈঠা সেই সেই টেনে, লাগাইতে হয় কিনার, বাইন গলা হইলে তরী, ডুববে দরিয়ার মাঝার, এগার নল আটত্রিশ মতি, দিন থাকতে নৌকা বোঝায় কর । আসমানে তার আবেছায়া দেয়, পলকে তার মৃত্যু হয়, ঐ রকম তার দুনের পরিচয়।

আবার সামনেতে চপট ভারি, রোজ কিয়ামত যখন হয়, হায় উম্মত হায় উম্মত বলে, রাছুল কাঁদছে অসহায়, বদি লোক সব কাঁদছে দেখ ভাই, দাড়ায়ে খোরমার গাছ তলায় ও মন পড় আল্লাহর আল কোরান, পড় চুরা আর রহমান, ইন্নাকা আর খালাকা ইনছান, আছে ভাব লাভ আর রব্বোকা, ভজমি হা আর তাজমি হা, পাগলা কানাই বলে আল্লাহ, গগণে থাকিতে বেলা, দিন থাকতে তাই সকলা, আপন কর্ম সার না

(৪৫০)

তুমি শোন ওগো শোন, ওগো খোনকার জী, তুমি শোন ওগো মক্কার হা একটি কথা তোমায় জিজ্ঞাসি, তুমি যখন ছিলে মার উপরে, সংগে ছিল আরাজী, কোন মোকামে সেজদা দিলে, ও ভাই বল খোনকার আজাজিল এক ফেরেস্তা ছিল, সেও তো বড় নামাজী, ছত্রিশ হাজার বছরের বন্দেগী তার উপায় হল কি? সেই ফারাজীর গলায় আনার, তখতি লানতের দেখি ।

একজন হাতেম তাই ছিল, সেও তো বড় নামাজী, কানাই কয় দেলে ধোকা, আমি বোকা, হয়েছি বিষম পাজী, বে-নামাজী ইমামতি করে বেড়াই এই যে দুনিয়ায়, দোজ আগুন আমার লাগি হালাল হয়ে যায় ॥

(৪৫১)

একজন নাড়ায় সে নামাজকে দুষেছে, নামাজের কি কি দোষ পেয়েছে, বারিতালা পাক নিরঞ্জন, সেও তো নামাজ পড়েছে, গোর আজাবে কষ্ট পাবে, যে জন নামাজ দুষেছে ॥

নামাজ আর রোজা কর কর আখেরের কাজ, উঠবা যদি চুলের সাকো নীচেই হীরের ধার, লা-ইলাহা কলমা পড়, পুল ছুরাত হইবে পার, দুগ্ধ চিনি খেলাও যারে গো, তারা সকলই হবে পর ॥ নামাজের করুণাতে ফুরফুরা রব্বানা, আলেম ফাজেল ভেবে দেখনা, যে ভজেছে তুলোধুনা, মারবে মুর করবে খানচুর, বিরাশী দশ আনা, কোপে পড়ে পাগলা কানাই হবে তানা, তানা |

(৪৫২)

ইসমাইল কেঁদে বলে ওরে বাপজান, বলি তোমারে তুমি জলদি করে দাও কোরবানী, আল্লাজীর রাহের পরে, কেন তুমি কর দেরি, বেজার হবে আপে বারী, দেও কোরবানী যাই দনে ছাড়ি, এই দুনিয়াদারি সব নৈরাকার, কেবল অকারণ, আজ মরিলে কাল মরিলে, মরণ হবে এক দিনই, এই মরণে মরণ ভালা, রবে না আর কোন জ্বালা, এই মরণে না রবে শমন ।

জলিল ও জব্বার নাম তোর, কোরানে তাই শুনি, আমার আল্লাজী দিয়াছে হুকুম, দিতে বলেছে কোরবানী, হস্ত- পদ বন্ধন কর, গরদান ধরে জবাই কর, পাগলা কানাই বলে রহমত করবে আপে রব্বানী ॥

(৪৫৩)

বুঝে সুজে কোরবানী কর, পরকালে তোর হবে ভালা, ভেস্তে যাবি সুখে থাকবি, রবে না তোর কোন জ্বালা, তোর হাউজ-কাউসার আছে তোলা, মিছে ঘুরে মরিস ও মন ভোলা, দিন থাকতে দ্বীনের কর্ম করে নে এখন, শেষে কাদলে তো শোনবে না শমন ।

মুসার সময় কোরবানী হয়, চল্লিশ বছর ঘুরে বেড়ায়, কেবল গরুর সন্ধানে। অবনি মতো কর সন্ধান, তোমার মনের গরুকে, ছয় ধারে ছরি দিয়ে, কোরবানি দেও তাকে, যদি তোর এই কপালে থাকে । না বুঝে গরু ছাগ কোরবানি দেয় যারা পাগল, মাথার মধ্যে পাকায় তাল গোল । হ্যামড়ারা কানাই পাগল, আল্লাহ রাসুল নামটি লয়, গান করতে আসরে এসে, কি বলিতে কিবা কয়, কথার কি মাথা মুণ্ডু হয় ॥

(৪৫৪)

হিন্দু ভায়ে দেয় বলিদান, মোসলমানের কোরবানি, জগত জুড়ে দেখছি ঘুরে, একি আজব কাণ্ডখান, ধর্ম হবে একজনার ভাই, আর একজন দেবে জান, শুনে কথা ঘুরে মাথা, গাওনা গাওয়া হয়না আর, কেমন করে যাবো আল্লাহ ভবপার । পুলসিরাতে হিরার ধারে, গরু ছাগল কি নিবে পারে? ও বয়াতি এই কথাটি শুধাই তোমারে ।

সত্য করে এই আসরে বল কথা আমারে, নইলে তোমায় ছাড়বো না, লোকে বয়াতি বলে মানবে না, সোয়া পাচ টাকা বায়না দিয়ে, গাওনা গাতি আনবে না, কানাইয়ের কাছে এই ভাবনা, আর এক কথা কই তোরে, কথা সত্যি করে ক’মোরে, ইব্রাহীম নবী কোরবানি দেয়, উট বকরী ভেড়া ধরে, কোরবানি তাও হল না, ছেলে দিল তাও মলো না। এসব কথা ভেঙ্গে বল, নইলে এ আসরে গান গাওয়া, আর হলো না ।

(৪৫৫)

কানাই কয় কি উপায় হবে আখেরে, কতোবার মলো কানাই, কোরবানি না হলোরে, সাদা বগা বিলির ধারে, বসে থাকে চুপ করে, ছোট একটা মাছ পালি ভাই, খেয়ে ফেলায় টুক করে, ওমনি মতো ধর্ম করা আমার হলো রে ॥

গরু মারি ভেড়া মারি নিজে মরি নারে ভাই, এ সব করি জিবের স্বাদে খাওয়ার মজা পাইরে তাই, ও আমার কোরবানী না ছাই, তোর মনে এক পশু আছে ছুরি নিয়ে যা তাইরি কাছে, জবাই করে খোদারে দেখা, তবেই যদি ভেস্তে পাস জাগা কোরবানী যেদিন হয়ে যাবে, আনাল হক দেলে কবে, ফানাফিল্লা বাকা বিল্লা তোর এই দেহেতে হবে, পাগলা কানাই করে হায় হায়, ঘটবে কি আর এই কপালে, কি জানি হয় কালাকালে ॥

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৫

 

(৪৫৬)

সভায় এস একটা কথা তোমায় বলি, যেদনি কিছু নাহি ছিল, আসমান জমিন পবন পানি সেদিন একা ছিলেন রব্বনী, কিভাবে সেই আপ্ত বশে ছোয়াইল নূরের পানি ॥ সেই নূর থেকে দ্বীনের নবী, পয়দা হোলেন সেই ঘড়ি, কি প্রকারে এ সব হোল, বল আমায় বিচার করি, সেই নূর আজো আছে, এই দেহেতে শুনি সাধু ফকির লোকে বলে ।

সময় অন্তে মহাযোগে ত্রিবেণী যায় বেগ বলে ॥ পাগলা কানাই শুনতে চায় এসব কারখানা, বিধাতার লীলা খেলার নাই সীমা, নূর তাজিন্না কি বস্তু ছিল, বল বয়াতি বিচার করে দশ জনাতে শুনবে কথা আসরে |

(৪৫৭)

সন ১২৮০ সনে বাধেছে বিষম খরা, ক্ষেতে শস্য যায় শুকিয়ে, ধানপাটের কর্ম সারা, ছাড়লাম রে ভাই কাজ কর্ম করা, এবার পাট লেগেছে গরম, এই ইস্তক লেগেছে সরম, মরব বলে খাই পচা ঝরা ॥

আমার পরিবারে কেদে বলে, হায়রে আল্লাহ কি করি, আমি সারারাত শিয়রে বসে, কার মাথায় ঢালি বারি, বাচাও আল্লাহ আমার স্বোয়ামী, বারে বারে করি মানা, বেশী পাট আর বুনো না, বৃষ্টি নামলে উঠে চুলকানী ॥ দেখতে এসে কতজন দিলরে খুব সাহস বল, আবার কবিরাজে বড়ি খাওয়ায়, মাথায় লাগায় জলপট্টি, বলে খাতিনাতি হবে রে তোর বল, পাগল কানাই ভেবে বলে, উপকার করল জলে, দাস্ত দিয়ে বার করে দাও

(৪৫৮)

জ্যৈষ্ঠ মাসের পাচই রে ভাই তারিখ বুধবার, আমি পাবনা জেলার গ্রামে গেলাম, নতুন হাট উঠাইবার, আবার ফিরবার সময় চোরা কাটা ঢুকল আমার পা’র ভিতর, আমার সংগে ছিল চইদর মাংগন, আমি পলাম জমির পর, ও কাটা টান দিয়া খসায় আর, চার আংগুল ঢুকেছে কাটা, ও ভাই সকল, ও আমার প্রাণে বাচা ভার, আবার কত কষ্ট পালাম রে ভাই জানে আল্লাজী, যে না জানে ঝাড়া ফোকা, পায়ের ফুলাটা কমাইছে, আমি সাত রোজ ছিলাম কাথার তলে, পায় দিল মোর চিলিক্কার, আমি ঘরে শুয়ে ডাকি আল্লারে, হায়রে আল্লাহ পরওয়ার, ও আমার প্রাণে বাচা ভার ।

ইষ্টি কুটুম দরদ বন্ধু কেহরে দেখলাম নারে আর, দুই মুড়া দুই মুখ নিয়া ঘাও প্যাকে বার হইল, আরো ছেলেমেয়ে পরিবার তারা, আম দুধ খাইবার সখ গেল । জ্যৈষ্ঠ মাসে আম দুধ যেন ভাই সকল, আমার পা দিয়া বাহির হইল ।

পথে কাটা যে জন গাড়ে আদত ডাকাত সে, আমি নালিশ করি আল্লার কাছে, আরো দোওয়া মাগি হুজুরে, তার মস্তক দিয়ে ঠাটা পড়ে, মারগ দিয়ে বার করে, ও তার ডালে পাতে নিপাত হবে, তবে তাহার ইনসাফ হবে, কাটা যে জন গাড়ে, পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে, বসত বাড়ি পুড়ে যাবে, এবারকার হায়তার আগুনে

(৪৫৯)

সান ১২৮৪ সালে জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে, পাবনায় হচ্ছে বারোয়ারী শোন ভাই বলি, কতই লোকে দিচ্ছে বাহার এসে, আমি ভাবি তাই মনে, দেখি স্বপনে, ডাকি আল্লাহ নিরঞ্জনে ॥ নামটি আমার পাগলা কানাই, শব্দ গেল দূরে, কত আওরত মরদ হইছে জড়, আর কত ছেলে বুড়ো, থাক পড়ে মোর গায়ান শোনা, পাগলা কানাইকে দেখব এক নজরে, তারা এই আশায় বেড়ায় ঘুরে ॥

ওমরচন্দ্র রায় করেছে বাহার, নাগর দোলা ঘুরাই কলে, দশ পাক দিব একপাই নিব, ডাকতেছে আয় আয় বলে, কত কাটা মুণ্ডু মাছের খণ্ড মষ গুরু সব যাচ্ছে তাড়াতাড়ি, আবার ঐ বেলা ঘন্টায় দেয় বাড়ি ।

লাট সাহেবের হাতী দরজা টানতেছে সদলে, নীচের তলায় উপর তলায়, ঢোল বাশী বাজছে তালে তালে, পূর্ব দিকে ঢপ যাত্রা কবি গান গাচ্ছি নতুন রসের, আমরা এই কালাচাদ কুঞ্জে বসে ।

(৪৬০)

সন ১২৭৮ সালে ৫ই আশ্বিন উঠলো উদগতি, দালান কোঠা ইমারত, ভেংগে হোল মাটি, কত নৌকা জাহাজ গেছে মারা, যুবতীর পতি, ও গেল গদীয়ালের গদি । সুন্দর বনে বাদার কাষ্ঠ গুয়া নারিকেল নাই, ঘর দরজা রেলের গাড়ি, রল ঠাঁই ঠাঁই, কারো মলো প্রাণের ব্যাটা, কারো মলো ভাই, এমন তুফান কভু দেখি নাই । শুক্রবারের দিন চলে যায়, শনিবার আসে, সে দিনের দিন পাগলা কানাই, জলেতে ভাসে, আসার কালে গুরুর মানা, না শুনিলাম কানে, এসে পলাম তুফানে

(৪৬১)

পাগলা কানাই ডুবিয়া মল, কোন শত্রু খবর দিল, ঘরের পরিবার কানতেছে, আপনারই পায়, সিথার সিদুর তেজ্য করে কাঁদছে যেমন বিধবায়, কোন দোষেরে আমার পতিকে, ভোজন করছে গংগা মা, ফিরে আর তো এলো না, কেউ কাঁদে ভাই হারা, কোথায়রে জোড়ের পায়রা, সবাই কাঁদছে ভাই বলে, কেউ দিচ্ছে অভিশাপ, কুড়ে কানাইয়ের মাথা খেয়ে, ঐ কানাই কেন মলো না, ফাঁকি দিয়ে রে ও আমার ছেলে নিল,

আর তাকে ফিরে পালাম না, আমায় মা বোল বলে ডাকল না, পাল দোহার লাকেশ্বর, কাঞ্চাসনী মা তাহার, কোন গাঙে ডুবলো রে অপমৃত্যু হল, না হোল কোনরে গতি, মরলো সে আঠার বছর ॥

(৪৬২)

উল্লা পাড়ার ঘাটেতে ব্যাতের লা’র মাঝি হয়ে, গিয়াছিলাম সুপারী বেচতে, কানাই বেটা তো মাজি কানা, সাথীরা চরে বাজায় ঢোল । কি আরে ওরে ভাই সকল, গুণ ব্যারা কাধে লয়ে, করে হেইও হেইও বোল ॥ পাগলা কানাই নিজে কুঁড়ে সামনের দুই দন্ত পড়ে বোকরা হয়েছে, বাকেরগঞ্জ জেলার মত হা করে বসে আছে, কি আরে ভাই সকল, বুড়া বাঘের মতো বেটা ভেলকি দেয় কেবল॥

পাগল কানাই সাচে গড়া, মানুষ তো ছন্দ ছাড়া লম্বা মন্দ নয়, আটচালা ঘরে লাগালে মধ্যের খামটি হয়, তেমনি ভাব দেখ যায়, যেমন দাড়ি তেমন বাবরী তেমন চাদ্দর গায়, কি আরে ও ভাই সকল, চুল দাড়ি তার বাড়িয়া গেছে, নাক মুখ বুজে দেখা নাহি যায়

(৪৬৩)

ছিলাম ব্যাতের নৌকাতে, নলকার বন্দরেতে, মগাই সুপারী বোঝাই তাতে, ছিলাম বিধির বাদী হলাম মাঝি, তিন চার জন ছিল সাথে, সবে বলে হেইও হেইও, ছেঁড়া এক কাল টুপি, ছিল আমার সাথে রকম রকম কি বল তুমি আসরে বাধাও কল, বারে বারে বোকরা কেনে বল, আমার মত কত শত বোকরা বুড়ো, তোদের বাপ ছিল, মানুষ হয়ে মানুষ দোষ,

বদ চিন্তা পরাণে পোষ, কানাই সাচে গড়া, মানুষতো ছন্ন ছাড়া লম্বা মন্দ নয়, আটচালা ঘরে লাগাে মধ্যের নামটি হয়, তেমনি ভাব দেখা যায়, যেমন দাড়ি তেমনি বাবারী, তেমনি চাদ্দর গায়, কি আরে ও ভাই সকল, চুল দাড়ি তার বাড়িয়া গেছে, নাক মুখ বুজে দেখা নাহি যায় ।

(৪৬৪)

চুপ চুপ চুপ করে থ ক ভাই সকলে, গাইতে এলাম ধূয়াজারী, হাতে নিয়া জোর যুঞ্জরী, একখানা রঙের ধুয়া গাই, ও রঙ বলতেছে পাগলা কানাই, আর তাল দিতেছে ইদু ভাই, নতুন রং ছাবের বিশ্বাস কয় মন্দ নয়, কা’ল্যা গ্রামের জহিরদী সেও তো, রঙের বাহার দেয় ॥ পাগল করলো সাধের থুঞ্জরী, ধাপর দিলে খসলো তালা, ঘটলো ভাই বিষম জ্বালা, আমি উপায় কি করি।

ছোকড়াগরে সংগে করে ব্যাতের আরা লই ঘিরি, লাঠি দিয়া দেই ঠেলা, বার করি এক গুইশালা, ল্যাঞ্জ ধরে টেনে শালাক বার করি, পিঠেরই চামড়া খুলে তাই দিয়ে বানাই খুঞ্জরী সঙ্কুই সব যুক্তি করে আর যাবো না দৌলতপুরে, আমরা যাব দেশ ছেড়ে, দৌলতপুর গেলে পরে ব্যাঙের আরা লয় ঘিরে, ছোকড়ারা সব ছুটে এসে, পাটের ফাঁসি গলে ফাসে, বাম মাছের মত ছুলে বার করে, একি জ্বালা প্রাণ বাঁচে না, যাবো না আর দৌলতপুরে ॥

(৪৬৫)

নামটি আমার পাগলা কানাই জাতে মুসলমান, হিন্দু লোকের বাড়ি আমরা করিতাম গাহান, ব্রাহ্মণ পেলে আমরা করি কোটি কোটি প্রণাম, সে নাম নারায়ণের সমান ॥ কি হিন্দু কি মসলমান এই ভবের পরে, বিষ্ণু হরি দশের জন্য মুসলমানের ঘরে, একথা লেখা শাস্তরে, সেই শাস্ত্র আছে জমা পণ্ডিতের ঘরে, এ কথার নিন্দা যে করে, ভবে শাস্তি হয় গো তার তরে ॥

মোহনপুরের কেশব লাহিড়ীর কি দশা হইল, বিষ্ণু কইতে বিছমিল্লাহ তার মুখেতে এলো, ও সে যে কুল মজালো, ব্রাহ্মণ হয়ে মুসলমানের নিন্দা যে করিল, ও বেটার জন্মের দোষ ছিল |

(৪৬৬)

বৃহস্পতিবার বৈকাল বেলা বসে রলাম আম গাছ তলা, কাজলী আতরের বাড়ি, ভাই সকলরে ধুয়া গায় তাড়াতাড়ি, ঠাকুর যেদিন বাজাইল তুফান যে হোল ভারী, শিলের ঠেলা সে বড় শক্ত ঠেলা, কুমীর গংগায় মুখ খুশে মরি, কানাইর ভিজে গেল কটা দাড়ি ছোকরারা কয় ওস্তাদজী তোমার গায়ে দেখি কি, জ্বরেতে ধরেছে মরি, তখন পাগলা ইদু উঠে বলে, আগুন পাব কার বাড়ি, আর যাব কোনে কথা উঠলো মনে,

মেঘ বড় লাগায় পশ্চিমে, তখন কানাইক নিয়া টানাটানি চন্দ্ররায়ের চালায় এসে বসে রলাম স্তব্ধ ধরে, সে চালায় ভাংগা ঘর পাতা, ভাই সকলরে আমি কই দুঃখের কথা, ঘরের বাঁধন ছিড়ে রুয়া পড়ে, হাটুতে পেলাম ব্যথা, পাও হোল খোঁড়া, ধুয়ার দিলাম জোড়া, গায় ছিল ছেঁড়া এক কাঁথা, তখন লা ইলাহা কলেমা পড়ে ঝাড়ি মাথা |

(৪৬৭)

সবে বলে পাগলা কানাই আনকা ধূয়া বলো, নতুন ধূয়া শুনব বলে বাসনা হোল, ভাবনাতে গান মিল জোটে না, কেমনে ধূয়া বলবো বলো, এবারকার দুরন্ত বর্ষায় ধান পাট সব তলাইয়া গেল, ভেবে আর কূল পাইনা সাকুল্যে, মনের সখ মাটি হোল । রাজার খাজনা মহাজনের দেনা কি দিয়ে আদায় করি, ভাবছি বসে অবিরত মনে সেই চিন্তা ভারি, লোকের উৎপাৎ আমি সহ্য করতে না পারি, সবে বলে পাগলা কানাই গাও দেখি কিঞ্চিৎ জারী, শুনবো বলে আমরা দশজনে মনে সেই আশা করি ॥

(৪৬৮)

সবে বলে পাগলা কানাই আনকা ধুয়া বল, ওরে আমার ডাকু জ্বর হয়েছিল, ছয় মাস ছিলাম শয্যায় শুয়ে কাহিল হয়ে, আমার নাড়ি জ্বলে গেছে ওষুধু খেয়ে ইষ্টি কুটুম ভাই বেরাদর ছিল দ্যাশে দ্যাশে, খবর শুনে নৌকা বয়ে আসতেছে সবে, যারা আছে তারা কানছে রে বসে ॥ চারজনাতে পরামর্শে ঘরের বাহির করিল, কেউ মানুষ ডাকতে গিয়াছিল, তখন বর্ষাকাল ছিল, কেউ বলে গোর কাফন করে মাটি দেও ঘরে, তিন কবিরাজ পরামর্শে তখন বিষবড়ি খাওয়াল ॥

(৪৬৯)

শোন গো মিত্তির বাবু দরখস্ত আমার আমি পুত্র শোকে অনাথিনী, কেঁদে ফিরি রাত্রদিনি, আমার গান করা ভার, এসেছি এবার চরণ দেখিবার । ইদু বিশ্বেস বয়াতি ভাল, কথায় কাজে জানা গেল, তাদের হয়েছে এখন নয়া ধার, আমি নিৰ্গুণে কানাই, শক্তি নাই আমার ॥

চন্ডীবাবু, নাজির বাবু, আর হরি সরকার, তারণ চৌধুরী মরে গেছে, হালদার বাবু বরজায় আছে, বাবু অমৃতলাল, ময়াশ মজুমদার, মাইজদ্দীন জোদ্দার, পব হাটির হরি মল্লিক, বসতবাটির তিনিই মালিক, মিয়া ভুটের গাদীর জসীম জদ্দার, তিনারা ভালবাসে খুব আমার ॥

শোন গো হেড বাবু, কোট বাবু মহাশয়, মাশকুল বাবুর চাকরী ভারি, করে থাকেন ফৌজদারী, মৌলভী সাহেবরে কথা বলি এ সভায়, হাজার হাজার সেলাম করি কেলার বাবুর পায়, ওরে মহাফেজের পায়, বাবু দারোগা মহাশয়-সে সব কথা। কইতে গেলে, পাগলা কানাইর লাগে ভয়, বড় দারোগার নাম না জানি, হাজার হাজার সেলাম করি তাই, সকলেই রাখবেন মোরে রাঙা পায়, সর্বচরণে কানাইর মুক্তি হয় ।

(৪৭০)

ভাদ্র মাসের দশ তারিখে বেলা বারোটার সময়, কল দেখিতে গিয়াছিলাম কুঠি তাল তলায়, সেখান থেকে শব্দ শুনি, শপ শপাতন শব্দ যে হয়, হাড় ভাংগার মতন একখান, চামের তোয়াল তাহার গায়, তার ভিতরে কতই কল আছে, কত চাকা তাহার গায় | ধন্য ইংরেজ শরীফ সাহেব, কি কল তৈয়ার করতেছে, সেই জাগাতে একজন দাঁড়ায়ে আছে।

সেই জনার গায় হাত লাগালি, সকলে উঠে নেচে, তাহার লীলা কে বুঝতে পারে, ভেবে না পাই দিশে বিড়াল মলো আইশ ব্যাগোরে, বাদুর ম’লো সুপারী খেয়ে, চামচিকেতে করে গান, বাঁদর এসে বাজায় খুঞ্জরী, নেচে বেড়ায় হনুমান, কানাই তাই করছে অনুমান

(৪৭১)

ছুঁয়ো গানের হবে পাল্লা, মুখে সবে বল আল্লাহ, এই আমার যশোর জেলা, হরিণাকুণ্ডু থানাতে, গ্রামের নাম হরিশপুরী, খাটবেনা জারিজুরি, বহু লোকের মাতব্বরী, আসরে আইছি কথা জানাতে ॥ হরিশপুর তার জন্ম মাটি, লালন শাহ ফকির খাঁটি, জানালেম সেও কথাটি, হাজার ছালাম চরণে তার। তার গুরু সিরাজ কাহার, ছালাম জানাই তাহার, জসীম বিশ্বাস নসীম বিশ্বাস, তুফন সর্দার, বেল তলার নৈমদ্দি বিশ্বাস কত কি বলব আর ।

আমি নির্গুণে কানাই, ছালাম আলেকম জানাই, ছোট বড় দশ জনার পায়, ঠাকুর তলার এই আসরে, বট বৃক্ষ সাক্ষী থেকো, আল্লাহ রাছুল ফেল নাক, ইদু বিশ্বাসকে ডাক, কথা জিজ্ঞাসি ভাল করে

(৪৭২)

বার বাজারে এসে পাগলা কানাই কয়, কি কুদরতি গড়লেন অটলময়, ঢাকা দিল্লী মুর্শিদাবাদ, বসে দেখি এক জাগায় । ষোল বাজার বত্রিশ গলি, এর গলির সীমা নাই বলি ॥ দেখে মানুষ লীলে হলেম চমৎকার, পাঁচ প্যাচে মিলাইছেন বাজার।

বড় মানুষ যত ছিল, রাজার রাজ্য জমিদার, উজির নাজির ব্রাহ্মণ বাড়ি হে, ছিল কাতারে কাতারে, এল কামার, কুমার, নাপতে, ছুতোর, ফেলে এল বাড়ি ঘর, তেলী, মালী তামাম একাকার, এল বিন্নে শুড়ী ময়রা হাড়ী, জোলা জগী বাজন্দার, গোয়ালা, কাপেলা, কালু, দাস, তারা দিয়েছে বাহার ॥ এল কানা, খোড়া, ভেকড়ো চিত্রপায়, মাজা বেকা গণ্ডগোল গলা, তারা ছেড়েছে দেশ, সন্ন্যাসী বেশ, ভগ্ন মাখা সকল গায় ।

কয়েকজন বয়াতি এল ভাই, তাদের টাক পড়া মাথায়, তারা বলে গেছে দ্বীনের কথা, জমিনে ঠুকতেছে মাথা, ধুলো মাটি মেখে সর্বগায়। তাদের বুড়া বলে প্যাচ প্যাচারে, মানত আমার করে যায়, দুধ কলা চিনির ভোগ দিব, যদি বুড়ো জোয়ান হয় ।

(৪৭৩)

শোনরে মোমিন ভাই, একখান ধুয়ো বলে যাই। একদিন হজরত বসে কুরছি পরে, ইয়ার আছহাব সংগে করে, দেখছে কথা হাদিস মাঝে শুন হে সমাচার, মারিয়ার ঘরে জন্ম হবে এজিদ নামদার, জুলুম করবে বড় ইমাম হোসেনের উপর। ইহাই শুনে মারিয়া না করে শাদী বিয়া, বেটা পুত্ৰ নাহি গো চার, হাসে রসে কাল কাটাব, আল্লাহর নামটি মুখে নেব, নিয়েত করি বার বার। প্রস্রাব করতে কুলুপের ।

ঢিল, উঠায় হাতের পর, চিলেতে ছিল বিচ্ছু কামড় দিল মাবিয়ায়। ডাক্তার কবিরাজ আনে কত আরাম নারে হয়, হজরত নবী বলেন শেষে, শাদী দাও মারিয়ায় ॥ ইহাই শুনে হায় কি করি টেনে আনে এক বুড়ি, তাড়াতাড়ি কলেমা পড়ায়। কাল রাত্রি পোহাইল, মাবিয়া আছান পেল এজিদ জন্ম হয়। পাগলা কানাই বলে গেছে, এ কথা হাদিছেতে রয় |

(৪৭৪)

বলতে বিদরে প্রাণ, দয়াল বন্ধু ছোবাহান, কখন কি করে কারো না জানি সন্ধান, যত সব প্রধান প্রাধান, বলে ভাল পাগলা কানাই গান। এবার তার তলব হয়ে, সরকারী শমন পেয়ে, এল এই স্থান ॥ চমকে উঠি বলি এখন, কেমন কথা কও, দেরীতে কাল নাই, পুরিতে কাল, ফের না কও অমন কথা, চুপে চুপে ফিরে যাও। বায়না বুঝি মাংনা মাংনা, ফাঁকি দিয়ে নিতে চাও, বায়না বিনে আমি যাইনে, ফিরে যেয়ে বলে দাও।

ভাদ্র মাসে অবেশেষে পাগলা কানাই দল বেধেছে, দল বেঁধে চলে যায় সে উত্তর দেশে, ও তার ডানে দোহার ওমেদ আলি সে যে মৃত হয়েছে, বাপ কাঁদে রয়ে রয়ে মায়ে কাঁদে আছাড় খেয়ে, ঘরের রমনী কাঁদে ও পতি দেখলাম নারে, আমি কাঞ্চা বয়সে হলাম রাড়ি আমার এই ছিল কপালে ॥

যদি মোরে নিতে চাও, সহস্ত পত্র দেখাও, ঠিক কথা কও-আমাদের হবে মজা, দেকবে বসে ধর্ম রাজা, সই চিঠিখানা দাও ॥ ১২৯৬ সাল-আটই আষাঢ় বৃহস্পতিবার, গান হল ভাই কাল বিকাল, আমারে নয়, করে ছয়, এনেছি পাগলের দল, কি আর হবে বল, ধর্ম রাজ গান শুনিবে, ইঁদুর সংগে পাল্লা হবে, পাগলা কানাই চল ॥

(৪৭৫)

যাব যাব যমুনারই পার, মনের বাসনা ছিল আমার, সামনে দেখি ধুলায় অন্ধকার, ওরে পার হব পার হব বলে, ভাবছি বসে পরওয়ার, তুফান দেখে হলাম চমৎকার, লাংগল মুড়োর পড়ান ব্যাপারী, তার নৌকায় চড়ে হলাম পার । সাতানী চরের নিয়ান ব্যাপারী, আবার তার কথা প্রকাশ করি, ওরে পাঁচশ বিঘা আবাদ করে, লাংগল জোড়ে খান কুড়ি, ঘোড়া বান্ধা আছে গোটা চারি, আওলার উপর বাহার কাছারী, আওলার শোভা হয় ভারী ।

ওরে হাল্যাগরে হালের সময় হয়, আবার বলদগুলো ছেড়ে দেয়, ধলা বলদটা হোৱা হোকা কয়, ওরে ধলা বলদের খাড়া শিংগা, দেখে প্রাণে লাগে ভয়, ভেড়া বকরী গোটা পঞ্চাশক রয়, পাঁচ চল্লিশটা দুগ্ধের গাভী, পাঁচ চল্লিশ বাচ্চুর দেখা যায় ॥ পাগলা কানাই করতেছে মানা, আমি নিষেধ করি শোন না, দ্যাশ ছেড়ে বিদ্যাশে যেও না, দ্যাশ ছেড়ে বিদ্যাশে গেলে, ঘিন্নাতে কেউ ছোবে না, আস্ত বন্ধু কর সাধনা, মাছি পোকায় ঢোর করে খেলে, তোমাকে কেউ তো পুছবে না।

(৪৭৬)

আর কি কানাইর সেদিন আছে, তিরিক্ষে জ্বরে কানাইর বলবুদ্ধি গেছে, আবার দুদিন একদিন আসে, বাঘ মোর খাইতেছে, শুকিয়ে পোড়া খড়ি সার, কেবল কটা দাড়ি নাড়িচাড়ি, প্রাণতো বাঁচে না।

আবার ১১ই ভাদ্র মাসে পালা করল এসে জ্বরে, সাতখান খেতা গায়ে দিয়াছিলাম, গোয়াল দুয়ারে, যেমনি কাপান কলুর ভারা, তেমনি কাঁপায় আমারে, আমি বলি দেরে ছেড়ে, আর কতকাল থাকবরে পড়ে, জ্বরে বলে পাগলা কানাই, বস্তু দেখায় তোরে, আবার ভাই আশ্বিন কার্তিক এল শীতের আমল, লোক বলে পাগলা কানাই এই বেলা মলো, ওরে হাতে পায়ে দেখি রস নেমেছে, বলি ভাই দশের কাছে, নলি শুকায়ে গেছে, মাথাটা ফুলে হোল ধান সিন্ধ তোলো ॥

(৪৭৭)

পাগলা কানাই বলে ভাইরে, দুষ্কের সমাচার, জারী গাইবার গিয়েছিলাম আমরা, উত্তর দেশে চড়ে নৌকার পার, কত ঝড় বৃষ্টি অন্ধিকারী, তুলে দিলরে আল্লাহ আজগুবি তুফান, একেত সন্ধ্যা বেলা, ও বেলীর আড়াই প্রহর, কত বটবৃক্ষ তরুলতা, আল্লাহ ভেংগে নিলরে গাছের ডাল, কত ঘর দরজা উড়াইয়া নিল, এই বোঝাই নৌকারে আল্লাহ হইল রসাতল । আবার পাইল দুহারী কেঁদে বলে, ও আল্লাহ রসুল, আর বুঝি গেলাম না গোরে চলে, না দেখলাম আল্লাহ মা বাপের মুখ, বুঝি সব সরলাম গোলমালে |

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৫

 

(৪৭৮)

পাগলা কানাই বলে, গিয়েছিলাম ভাটিনা জেলা পটুয়াখালিতে, নিবারণ যে স্বপ্ন দেখলো সেই সাপ ধরিতে, ধলা একটি পাঠা লাগবেরে, ওরে ভাইরে সেই সাপ ধরিতে । যখন কয়রে সাপের কথা, যাতায় থেকে উঠায় মাথা, বলে হায়রে হায়, এক মুষ্ঠি ধুলা পড়ে দিল সেই সাপের মাথায়, ধুলা পড়া লয় না সাপরে, ওরে ভাইরে প্যাচ দিল গলায় গলাতে প্যাচ দিয়া সাপরে হাড়ে মাংসে, এক ঠাই করে চলে বাও ভরে, ষোলটা বাশের সংগে আইটা মোড়ন দেয় কষে, ঝলকে ফলকে পড়ে রক্ত, ওরে ভাইরে সেই বাঁশের গোৱে।

পটুয়াখালির তামিজ উদ্ ও তার ভাই ছিল মফিজ উদ্দীন, সেই বাঁশ কাটতে যায়, এক ফোঁটা রক্ত এসে পড়লো মফিজ উদ্দির গায়, উড়া লাফে দিল খবর রে ওরে ভাইরে নিবারণের নায় : কোন বেটা সাপুড়েকে যেন সাপ ধরে খায়, আমতলির বন্দরে যেয়ে ধূয়া বেধে গায়, পয়তাল্লিশ হাত লম্বা সাপরে, ওরে ভাইরে নাম রা

(৪৭৯)

আনকা সুরের ধুয়ো বেঁধে হারে ও গাওয়ার শক্তি নাই, চুল পেকে দাঁত পড়ে গেছে কোন দিন বুঝি মরে যাই। বলি হায়রে হায় কি করি উপায় বসে ভাবছি তাই । চৈতের শেষে বৈশাখ মাসে ম’ল জোড়ের ভাই, ভাই ভাই বলিতে হারে, ও তবে লক্ষ্য নাই ॥ ভাইয়ের কথা হৃদে গাথা, হারে ও সদা হয় মনে, আমি দিবানিশি জ্বলে মরি বিচ্ছেদ আগুনে, ইচছা হয় মনে যাই বনে, ভায়ের অন্বেষণে, যার মরেছে জোড়ের ভাই, সেই কেবল জানে, অন্য লোক হারে ও জানবে কেমনে ।

পাছে এসে আগে গেলি হারে ও আমায় ফেলে, দিবানিশি কেঁদে মরে তোর শিশু ছেলে, বাঁচে কেমনে তোরে না দেখে, কাঁদে বাপ বলে, দেখে জীবন যায় জ্বলে, ভাই মরিয়া এত দুঃখ আমার কপালে, উঠে আয়, আয় ও মিয়া ভাই বলে ॥ যায় মরে প্রাণপতি, কাঁদে বসে দিবা রাতি, যুবতীর মনের আবেশে, সমুদ্দুরে পড়ে যেমন ত্রিলোক ভাসে ॥

(৪৮০)

এই কি সে ইদু বিশ্বাস শুনে থাকি নাম, শুনে লোকে দেখতে এল, এসে কলো বাধাইল ভোড়ো বাংগাল কনতে এল, সে বা কোন দেশে ছিল, ওর মাথায় ফেটা হুতুম বেটা, ওরে কে যেয়ে বায়না দিল, কে যেয়ে ওর আনিল, মুজুর মুটে দোহার সাথে, নেল বুড়োর হাত ঘষাতে, উহার মাথায় টাক পড়েছে, দেখ না ভাই কাকে ঠোকরাল ॥

ঐ না সেই ইদু বিশ্বাস শুনে থাকি নাম দেখে এলাম বেটা বালু ঘাটে, পার ঘাটায় খেয়া দিতে, বেড়ায় বেয়ে পরের ডিংগে, ভাড়া রয়েছে, বেটা নৌকা বেঁচে বাড়ি যেয়ে, আচ্ছা মানান মানিয়েছে, ওরে জারীর দল করে নেছে, কেটে একটি লাউয়ের গলা, লাগায়েছে মুরগীর তালা, বাহাতেতে ফুটো মালা, গাওনা শুনে বিড়াল কাঁদতেছে । ওরে ঝাপ দিয়ে এক কোলা ব্যাঙ উঠে, পাগলা কানাইর কোন বুদ্ধি নাই, ধার ভারি তার ঠোটে, ইদু বিশ্বাসকে পেয়েছি আজ কোটে, খাটিয়ে নেব আচ্ছা মত মোটে।

 

 

 

পাগলা কানাই এর গানের পর্ব ৬:

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৬

 

(৪৮১)

ছুঁয়ো বেঁধে কানাই বলে, পাইল বয়াতি যত জন, দোওয়া কর বিলক্ষণ। বেঁচে থাকুক ওৱাই সকলে তানা নানা এক যে ব্যাটা মাংনারে, ও তার ঢ্যামনা বলে, ওসে উস্তাদের নাম কেটে ফেলে-নিজ নামে ধূয়ো বলে, সেই যে ব্যাটা, ভারি ঠ্যাটা, সে হয় জ্যারো ছেলে, ওর তো বাপের ঠিকানা নাই কোন কালে ॥

তারাও, তরাও, তারাও দীননাথ, এমন কর্ম যে করে তার মাথায় বজ্রাঘাত, ও সে শিক্ষা লয়ে বেড়ায় ঢোলে, মানে না উস্তাদ বলে, পাগলা কানাইর হিরাজ ভুল্যা হয় ধর্ম ছেলে, সে মান্য রেখে সর্বদা চলে ৷ নিজ নামে যে গায় ধরো, সেই তো হবে ধুচ মেয়ো, ভুর ম্যাও ম্যাও সাইডো হবে সে, দেশের লোকে শুনতে পারলে রে, হামে হাল ক্ষেপাবে-আমি নালিশ করি হুজুরে, দিবসে তার জাত যাবে-পণ্ডিত যে জন বোঝ সে জন বিচার করে, পাগলা কানাই হিরাজ তুল্যার কি বলবে কারে ।

(৪৮২)

কলিকালে কানাই বলে বেশ, আমি দেখলাম নয়নে, আগে ছিল বাদশার আমল, চলাফেরা লোকের বদহাল, মহারানী পেল রাজ্যভার, ডেংগায় চলে রেলের গাড়ি, জলে চলে ইষ্টিমার, দেখতে কি বাহার ॥ ছোট ঠাকুর কলকাতায় গেছিল, সেই এসে মোরে ক’ল, বিনে তেলে জ্বালায় বাতি, শহর হয় যে আলো, দুই ধারে গংগার উপর কি শোভা হল, সেই যে দেশে যতই যুবতী-ঘরে বসে স্নান করে, তারা যায় না বাহিরে ।

টিপ দিয়ে কল নীচেই বসে, অমনি জল চলে আসে, গায় পড়ে সু ধারে ॥ যত সব যুবতী নারী-যায় তারা সারি সারি, চলে যায় গংগার ঘাটে । দেখ সে দিদি কতই যুবতী, ইষ্টিমারে যায় বাহার দিয়ে, দূর দেশ মোর হোত বিয়ে, ইষ্টিমারে চড়তাম গিয়ে বটে ॥

(৪৮৩)

জীবনে মিছা চিন্তা করা সব দেশে সমানে কলেরা, আমি রাত ভরে জ্বালায় বাতি, কোন সময় যায় মারা, দারুণ রোগ দিয়াছে খোদা ভাই, তিন দাস্ত এক বসিতে মারা, যদি কেউ পাতলা বাহ্যি করে, তা দেখে প্রাণ বাচে না ডরে। তোমরা সদায় থাক সচেতন থাকো না আন্দারে, পাগলা কানাই ভেবে বলে ভাই, হরদমে ডাকো সেই আল্লাহরে

(৪৮৪)

পহেলা দুনিয়া সৃষ্টি কে করিল-তাই শুন ওরে ভাই, কথা চাঁদ সভায় জানাই । লোক বলে পাগলা কানাই বুদ্ধি জ্ঞান তো নাই, ঐ মক্কায় ঘরটা কে বানাল, সেই মিস্ত্রীর নাম চাই৷ হাওয়া আদম যখন এই ভবে এল, কোথায় লাংগল কোথায়। জোয়াল পেল, কোথায় পেল লাংগলের ফাল, কামার কে ছিল, বয়াতি এই সব কথা বল।

কোরবান, ইদু, বিন্দু, যাদু এরাই চারজনা, কথা সভায় বল না, সভায় না বললে গোনা, লেখবেন রব্বানা পাগলা কানাই কয় পুত্র শোকে হলেম অজ্ঞান, কাদে মায়ে বাহু তুলে, বেটার কাগামী হয়ে, হায়রে দারুণ বিধি কোন দোষে বৈমুখ হলি, দিয়ে ধন কেড়ে নিশি, সইবে কত প্রাণ, তোর শোকে কাদতে কাদতে গেল দুই নন, সার করলাম ধরাতে শমন, রয়েছে পুড়া জীবন যেমন শক্তি শেলে লক্ষণ মলো,

সেই দশা আজ আমার হলো, যেমন রাবণের চিতার মতন পরান সদায় জ্বলতেছে, পুত্র শোকে এ মন আমার, কতই কথা বলতেছে। বিদেশে যদি থাকত, মনে পলে বাড়ি আসত, আমার ঠাণ্ডা হোত প্রাণ, যখন রই সোনার খাটে তাতেই কি ঐ শোক মেটে, ঐ শোকে প্রাণ বাঁচে না বলব কার কাছে।

(৪৮৬)

পাবনা জেলার সাপটের সন এই দ্যাশে আইলাম, আইসে জনম ভরে ঘুরে ফিরে, বাড়ি গেলাম, বড় বেয়াক্কেল হলাম । কেউ বলে পাগলা কানাই, কেউ বলে নাই সে নাই, লোকের বিশ্বাস হোল না । তোমাকে বলি ওহে লালচাঁদ তুমি যাইও না, তুমি যাইবা উত্তর দ্যাশে আমি যাইব না, কেউ বলে পাগলা কানাই, লোকের ভারটি বোঝে নাই, লোকের বিশ্বাস হোল না ॥

(৪৮৭)

কয়ে যায় দশের প্রতি, বুড়োকালে রঙের ছুঁয়ো বাঁধব কী, কথা কইতে ভাই সকলরা লালা পড়ে আমার বুকি, হাটতে ধরে হাটুর মালা, যে হালে আমি থাকি, শুয়ে থাকলে ঘুম আসেনা, ভনভনায় মাছি, কেতর গলে চোখি ॥ কয়ে যায় শোন ভাই-ভোজনের আর সুখ সুবিধা নাই, সন্ধ্যা বেলা খেতে পারি জাউ ফ্যান যদি কিছু হয়, ওরে মাষ কালাইর ডাল বোরোই খাটা, পেলে কিছু ভাল হয়।

কোন দিকে বাধে না পঁচপচিয়ে যায়, কোন চিজের মজা নাই ॥ হইছি বুড়ো হেলন চূড়ো, সবে বলে বাঞ্ছ কুড়ো, নাচে যেমন তাড়াকড়ো, আর দন্ত গালে নাই । আমি শুয়ে থাকি হা করে-সবে বড় পাগল কানাই ফডুম খায় ধরে, তাও ফস করে যায় সরে ।

(৪৮৮)

ও ভাই বাঁচিনে জ্বরে ছ্যামড়ারা সব লিখন লিখে পাঠায় বারে বারে, অকালে যার রাত দিন মাথা ধরে, ও বাঁচিনে, বাঁচিনে মেয়া ভাই, কই তোমারে ॥ শোন ভাই, জ্বরের কথা বলি-উজোল বলে ও মেয়া ভাই, গেলি ? একবার কথা ক একবার কথা ক, বুঝি বেহুশ হলি ॥ ঈশ্বরচন্দ্র কবিরাজ গয়াশপুর তার বাড়ি, এসে খাওয়াইল বিষবড়ি, তিনদিন পরে ধিক ধিকায়ে উঠল কানাইর নাড়ি, একবার ডালিম আন, একবার কুশোল আন, কানাইর সত্যেক করি ৷

(৪৮৯)

লেখা পড়া শেখবো বলে, পড়তে গেলাম মক্তবে, পাগলা ছ্যাড়ার হবে না কিছু, ঠাট্টা করে কয় সবে, ছ্যাড়া চলে ফেরে তাড়ম তাওম, তারে মারে সদায় গাড়ুম। গুড়ম, বাপ এক গরীব চাষা, ছাওয়াল তার সর্বনাশা, সে আবার পড়তে আসে, কেতাব কোরান ফেকা, পাগলা কানাই কয় ভাইরে, পড়া হোল না শেখা

(৪৯০)

শোন ভাই আমি দুঃখের কথা কই, দুষ্ট রোগের যোগাযোগে যে অবস্থা হই, গরমী জ্বরে ঠেসে ধরে, করল আমায় দিগ্বিজয়, আমি বলি জ্বর হয়েছে, কত দিন বাদে আরাম বুঝি হই, জ্বর হলে তোকে ছাড়ব না রে, বার কর পুরানা দই ॥

বিধি মোরে একই কালে হরেছে বদডিল, হাত পা বেধে বসে থাকি, যেমন ঝড়ো চিল, লোক দেখে ডরিয়ে চলে, পেত্নির মত দেখা যায়, কানাইয়ের এই হল ডিল, ডিল দেখে কেউ ডরাও না, শুনে নেও ধুয়ার মিল, বদডিল করেছেন আমায় আলামিন রাব্বিল ॥ আফসোস যত পেয়েছি ছাড়ব না, গাচ্ছো জারী বাবুগিরি এবার খাটবে না, কত মিষ্টি অন্ন চিনির পানা, খেয়েছ কত মাখন ছানা, বিলাতী আলু কাঁচকলা খেলে, পুরানা রোগ কিছুই থাকবে না, শোন ভাইরে আমি খাওয়ার কষ্টে, বেঁচে রইলাম প্রাণে মলাম না

(৪৯১)

পূব দেশে এসে পাগল কানাই বেড়াচ্ছে ঘুরে, ও তার রূপ দেখে সব লোক হাসে । কেহ কেহ বলে ও ভেদু তুমি ছিলে কোন দেশে, আমি বলব কিরে ভাই সকলরা, বিধি এই রকম গড়েছে, ও তোমরা দোওয়া দাও সকলে মিলে, থাক্ থাক্ প্রাণে বাঁচে ॥

পাগল কানাই সাকের ঘোড়া সর্বলোকে কয়, মাজামরা শুকনা যারা খাপরার মত মুখ, ওরে দেখা যায় সেই টেংরু ভেংক, কেউ বলে এক কর্মেতে লাগে, হয় লাংগলের মুড়ো, কেউ বলে বুড়ো বুড়ো, কেউ বলে রথের চূড়ো, তোমরা পুরুষকে নিন্দা কর, বেশ বেশ জগা খুড়ো, তোমারা এত প্যাচাল জান, গুড়ায় বুড়ায় পেচে কথা কও কেন আমি গাই ফালগুন তুমি চৈতবুলে টান, হাওড়া হাওড়ী হবি গো শেষে, তুমি আমার মুখে শোন, তোমরা এত জান এচাল প্যাচাল, আরো বিধবা নারী তা জানো, গোলমাল সব ছাড়ান দিয়ে, তাই পাগলা কানাই কয়, চুপ চুপ চুপ করে শোন |

(৪৯২)

বলব কিরে ভাই সকলরা দুঃখে আছি, বড় বেকুব হইয়াছি। আমার মাথায় ছিল চুলগাছি। এমনি সাধের বাবরী আমার এবার ফেলে দিয়েছি। ও দিকে ছেমড়াৱা কয় ওস্তাদজীকে, নেড়ামুড়া দেখা যায়, ঐ কি আমার প্রাণে সয়, ও আমি বাঁচিনা লজ্জায় আমার কতই মনে উদয় হয়, ও ছেমড়ারা যে বাবরী নাড়ে ঐ কি আমার প্রাণে সয়।

রসুল উল্লাহ বাতাইছেন কালাম উল্লাহ কোরানের মাঝ। আসল রোজা আর নামাজ, আপন আপন লাভের কাজ, তাই পাগল কানাইর নূতন সাজ, বাবরী ফেলে এখন মাথায় দিচ্ছে তাজ |

(৪৯৩)

পাগল কানাই বলছে ভাই, ছোট কালে দিন আমার নাই, এখন হয়েছি ভাটি, জোয়ানকালে বল ছিল মোট অটুটি, ষোল চুংগার বুদ্ধিরে ভাই, গেল এক চুংগার মধ্য রাত্রি দিন আমি বসে তাই ভাবি ॥ যখন যৌবন ছিল দেহের সাথ, কোঁচা মেরেছি তিন চার হাত, গিয়াছি চলে দেমাকের সাথ, এখন হয়েছি বেজুত সে জুত কাল, শেষ কালে কি এই বদ হাল, হাল দেখ ভাই পোশাক সব ছেঁড়া, কেবল হাটে যেতে উপড়া পড়া, কত কি করা, আমি দাঁত পড়ে হয়েছি বুড়া ॥

তখন কতই জনা করত আদর, বলত কানাই কাছে বয়, এখন দেখলে পথে ঘেন্না করে, সকলে মুখ ঘুরায়ে রয়, নতুন কালে আদর কত, পুরান কালে ঢেলার মত, অনাদরে থাকতে হয় ॥

(৪৯৪)

পাগলা কানাইয়ের বয়স গিয়াছে, হয়েছে লড়বড়ে, আমার দাতগুলো সব গিয়েছে পড়ে, ছুঁয়ো বাধব কেমন করে, কথায় আমার রস বাধে না, ফস করে কথা যায় সরে, সবে বলে পাগলা কানাই ফরুম খায় ধরে আরে ওরে জোয়ান কি বাহারে সবে, কতই রং দেখায়, এখন সবে বলে সরে বস, ছ্যাপ পড়ে মোর গায়, আফসোসে ছাতি ফেটে যায়, মাটি নাই গাছের গোড়ায়, হেটে যেতে উচাট খেয়ে উপড়া পড়ি গাছ তলায় ॥

আরে ওরে একলা ঘরে শুয়ে থাকি, ভিন ভিনায় মাছি, বল দেখি ভাই কোন ধূয়ো গোছি, আমি যে ভাবেতে আছি, রাতদিন আমার হাত আজুর নাই, চোখের ক্যাতর মুছি !!

(৪৯৫)

আমি পাগলামো করে গাই জারী, কিসের আমার ঘরবাড়ি, আমি হই দেশান্তরী, পাগল কানাইয়ের কথা কিছু শোন বাপু সকলে, একদলে সোনা বর্তেছে, আরেক দল সরল আছে, ঘোলা জল বয় রাত্রদিনে ॥ সেই মানিক যায় যার ঘরে, অন্ধ পুরুষ না পারে চিনতে তারে, কেউ চেনে তা কপালের ফেরে, কপালগুণে ভবের পরে, সেই মানিক যায় কভু খোয়ারে, বিধি যার সখা আছে, তার দিন সুখে যেতেছে, সেই বিধিক স্মরে পাগল কানাই ধুয়ো গাতেছে |

(৪৯৬)

গেছিলাম উত্তর দ্যাশে, ঘাড় ধরে ঘুমে ঠাসে, চোখ আমার ছাড়িয়া ছাড়ে না, ভাই সকলরে, আমার হয়েছে ভাবনা, লোকে বলে পাগলা কানাই এবার বৃদ্ধি বাঁচে না, এ বড় আজব কারখানা, যেমন মুখ ফুলেছে পেটে না যায় দানা, চো মিটিমিটায় ভোমা নাড়ে ঐ তো কানাই জারী গায়, বাগানের তরু যেমন দাড়ায়, লোকে বলে আজগুবি বল রাখে কানাই, যেমন মদে মাতাল ঘুরিয়া বেড়াই ॥

(৪৯৭)

পাগলা কানাই বলে, আমার এই শেষকালে, সুখ দুখ লেখেছে বিধি, আমার এই কপালে, আমার দিন গেছে, শেষকাল বাকি আছে, মন মনরায় সদায় বায়রাম বায়রাম করতেছে। ছিল শিশু যৌবন, সুখের নাই নিরূপণ, বৃদ্ধ বয়সে দেখ, আমার দুক্ষের তুফান । আমারে সেও দিন নাই, শোন মোমিন ভাই, খালি খাঁচা পড়ে রবে, বান্দার খাকির পর, যখন ছিল যৌবনের বাহার, সকলই করেছি।

আমার আমার, ভেবে দেখো মন কেউ তো নয় আমার, এ দেহের জাগায় জাগায়, পড়ে রবে শুধু বালির চর, ও পাখি যাবে উড়ে এ ভব সাগর ছেড়ে, ওরে মন মনুরায় সদায় বায়রাম বায়রাম করতেছে ।

(৪৯৮)

একখান রঙের ছুঁয়ো সভায় বিদ্যমান, কলির ভাব দেখে বাঁচে না প্রাণ, যুব নারীর গালে গুয়ো পান, তারা আংটির ঠারে কথা বলে, পতিকে মারে নয়ন বাণ, দাঁতে মিশি চোখে কাজল, তা দেখে জুড়ায়রে জীবন ॥

বাড়ি যেয়ে কয় স্বোয়ামীর ঠাই, আমার ভাগ্যে কিছুই নাই, গওনা চাইলে টাকা পয়না নাই, রোজগারেতে ছাই পড়েছে, গহনা কিনে দিলে না, আমার মনের বাঞ্ছা পূর্ণ করলে না, কুড়ের কুড়ে মাজনে কুড়ে সই, বিধি কেনে মল না ॥ ঘরে যেয়ে কয় স্বোয়ামীর আগে, আমার নতুন এক ফরমাশ আছে, রূপ দস্তায় ঐ চুরি উঠেছে, আরো মন পাগলা শাড়ী, উঠেছে, তাহার মাঝে পাইড় আছে, কানাই কয় ছোট মিয়ার বউ, সেই শাড়ী কিনে রেখেছে ॥

(৪৯৯)

এখনকার কলিকালে, বিয়ে দেয় চ্যাংড়া ছেলে, তারা সব রঙের বাহার দেয়, সাতদিন পরে রং চটে পড়ে, কত রং উপর দিয়ে ভেসে যায়, পাগলা কানাই কয়- আর কি রঙের বাহার আছে, তাল ধরে খেজুর গাছে, হায় কি মরি হায় শালী বলে বৌমা কাজ করে না কাম করে না, খাবার বেলা খেতে চায়, আঁচল টেনে ঘোমটা দেয়, কাল সকালে ধরেছে মাথা, আহলাদে বউ কয় মাকারের জ্বালায় ঠ্যাকার দেখে গা জ্বলে যায়, ননদী কয় আর বাঁচিনে, এমন বউ এল বাড়ি করে আড়ি দোষ হয় বলে হাঁচিনে ।

(৫০০)

চ্যাংড়া ছোঁড়া তার বউকে ডাকে, ঘরের থেকে বাইরে এসে প্রাণ, তুমি কথা কউ না কেন? কি কথা কব আমি কি গুণের স্বামী তুমি, একখানা গওনা দেও না। কেন? বিছে বিনে মোর মানজা খালি, ঝুমকো বিনে খালি কান। আজকে নিশি থাক শুয়ে, কাল দেব গওনা কিনে, বেচে ডোলের ধান । ঠিক যদি কও তবেই। হবে পীরিত বাখান, নইলে মারবো মুড়ো ঝাটা, ফুটাবো হুলো কাঁটা, ছুটাৰ সৰ ডান, কানাই বলে হায় আল্লাহ ছোবহান ॥

(৫০১)

কানাই কয় বিল শুকে নাচে মাছরাঙা তার ধারে, দাদো বলে, তেল দিলে গা চুয়ায়ে পড়ে, টেকো বলে, আমার মাথায় এক কেড়ে তেল লাগে, ল্যাংড়া কয় হেল্লাবেল্লা, খোড়া দেয় দাড়িয়ে পাল্লা, বেঁধে এক নাড়ার গল্লারে খোঁড়ার পায় ফুটেছে তুলো ॥ স’দো বলে, তোর গল্পে আমার মাথা গেল, নল বাগানে হেড়ে দিয়ে সতী কওলাইল, এক বাড়ির জামলা বুড়ো, আর এক ভদো বুড়ো, তিন বাড়ির নলো খুড়োরে খোড়ার চোখে হেনেছে মুলো।

সদো বলে তোর গল্পে আমার মাথা গেছে, নিজে পেদে আরাক জনার আচ্ছা কসে নেছে, কানা কয় মেঘ হয়েছে, হাদে দেখ বক উড়েছে, আকাশ সব জুড়ে নেছেরে, এখন উড়ছে যত তুলো

(৫০২)

ভাইরে ভাই বিধির লেখন বুঝা দায়, কি যেন লিখেছে বিধি, কপালে আমায় । বাপ ভায়ে টাকা খেয়ে দূর দেশে দিছিল বিয়ে, না দেখিল ঘর বর । আমার মনের আগুন, জ্বলে ত্রিগুণ, কোকিল ডাকে অনুপায়, আমার মনে বলে যাই গো চলে, মধুপুরে হাওয়া খাই ॥ শোন হে পতি এ দুর্গতি হয়েছে তোমার কিসের দায়, আ- ধোওয়া পায় শুতে চাও কেন আজ ফুলের বিছানায়, ধোপায় কাচা কাপড় আছে, চেয়ে দেখ না আমার কাছে, তোর গা কেনে গন্ধ কয়, তোর দেখলে পরে শরীর।

জ্বলে, গা কাটা রোগ দেখা যায়, মনে বলে যাই গো চলে, চূর্ণ করে বাসর ঘর । নামিলাম সুখ সাগরে দুখ সাগরে হারায় জান, কি দিয়ে রক্ষা করি, নব যৌবনের তুফান ফুটিল যৌবনের তুফান ফুটিল যৌবনের কলি, মনের মত পাইনে অলি, কারে করি মধু দান, পাগলা কানাই বলে, আয়রে কোলে ওরে আমার জানের জান ।

(৫০৩)

আরে ও আমার নতুন ফুলের বাগ, তাতে এই বসন্তকাল, উড়ে আয়রে ভ্রমর বস বাগে, মধু করছে টলমল । আরে ও ভ্রমর গেলি কোন দেশে ভুলে বলি কার আশে, সারা রাত জেগে পোহাই, আমার মনের আবেশে ॥ ওরে আমার এহেন কপাল, গাছে মেলে পঞ্চভাল, যদি থাকতে পতি খেলতাম পাশা, আমার গাছে ধরত ফল ॥ পাগলা কানাই বলে, ধন মিলে না কপালে, ফুলভরা বাগ কায় যোগে ফুল নাহি মিলে |

(৫০৪)

কলিকালকো মেয়ে লোকে রঙের স্বামীকে বলে, মনের আশা পূরণ হল না। গিয়েছিলাম পড়শী বাড়ি, তারাই পরে হাওয়ার চুড়ি, তাই দেখে আবিষ্কার করি, ঐ চুড়ি কেন দিলে না ॥ ছোট বউলো হর সুন্দরী, নথ গড়াইছে বেনে জুড়ী, ঐ মত তোরে দেখা যায়, মুখে দিয়ে ছাঁচি পান, থোমকায় থোমকায় ফেলায় পাও, চলে যেমন বাচির নাও, কঙ্কে কলস, যায় যমুনায়, উড়ে চলে গাড়ি হাওয়ায় ।

চাচী বড় রাঁধুনি, আমি তার খবর জানি, চাচী বড় ভাল পাক করে । এক পোয়া কেরোসিন আর ঘৃত মাথায় সম্ভারা, এই তো চাচীর মজার কথা, যা খেলে বেদের ভয় ধরে ॥ চাচী বড় ভাগ্যবান ষোল গরু, গোলায় ধান, তিনটি আবাল বাঁধা হালটে, কানা গরু ভোলে পথ, ল্যাংড়া ঘোড়ার দাপটে, পাগলা কানাই কয় ভাই সকলরা, কুয়োর ব্যাঙ পল সাগরে বটে |

(৫০৫)

বলি বসন্তরে আমায় বধ করিসনারে, আমি বিনয় করে কাই তোরে । তুই হানিস পঞ্চবাণ, কাঁদে সব যুবতীর প্রাণ, আমি কাঁপি সদায় মদন রাজার ভরে, মনের কথা খুলে কই তোরে, তুই এলি ও বসন্ত-তোর মিতে কোথায় রে ।

মনে বিচ্ছেদ উৎপত্তি, মোর ঘরে নাই পতি, আমি পীরিত রাজার অধিকারী, কেমনে ধৈর্য ধরি, আমি নারী যুবতি, অকালে কেন এলি বসন্ত-আমায় জ্বালাতি, শীত গিয়েছে নিদ হয়েছে, আমি করব কি ॥ তোরে শোন বলিরে ও বসন্ত, পাইনে মনের আদি অন্ত, আমি কেমন করে ধৈর্য ধরে, একেলা থাকি এই ঘরে, পাগলা কানাই বলে-কাল বসন্তে সকলেই মরে |

(৫০৬)

সভায় এসে ভাই, আমি ঠেকলাম বিষম দায়, যখন ছিলে মার উদরে-সেজদা দাও কোথায় কোন জাগায় তোর মাথা ছিল, কোন জাগায় তোর ধড় ছিল, এই কথাটির মানে বয়াতি, আজ আমারে ভাল করে বল তোমার জায়নামাজ ঘুরে কোথায়, তাই বল বয়াতি ভাই, তোমার মাথার তাজ ঘুতে কোথায়, তাই বল আমায়।

অন্ধকারে, ধন্দকারে, পড়তে ঘরে যে নামাজ, কোন ফেরেস্তা ইমাম হয়ে, পড়াইছিল সেই নামাজ ॥ পঞ্চ ও আছে নামাজ, মুরশিদ ধরে জানতে হয়, কোন সময় কোন শুক্ত হয়, পাগলা কানাই কনা, পড়তে কখন জুরা ইয়াছি আল হামদা লিল্লাহ, অন্ধকারে মার উদরে কে শিখায় বিছমিল্লাহ

(৫০৭)

কানাই কয় শোনরে বসন্ত তোরে কই মনের মত । ও সে ফাঁকি দিয়ে বিয়ে করে। মোরে গেছেরে ছেড়ে, কেন করল বিয়ে রসিক নাগর হয়ে, আজ খুন করে থাক প্রাণের পতি, গলায় ছুরি মেরে ও পতি যাবারে ছেড়ে আমার কি কসুর পেয়ে, গেলে পরে আর আসবে না তোমায় না পাব চেয়ে । আমি তোর আশাতে ঘুরি খুন করে যা প্রাণের পতি গলায় দিয়ে ছুরি ॥ পতি ধর নেও ছুরি, আমি মিনতি করি, গলা কাইটে মার ছুরি কেন কর দেরী, আমি অবলা নারী |

(৫০৮)

সবে বলে পীরিত ভাল, প্রেম করা সামান্য দায়, দিয়ে গাঠির কড়ি, পরের বাড়ি, হাটু গড়ি হাটতে হয়, সারাটা দিন কাড়াই তানা, তবু মন পোরে না সায়, মন বলে কোন ছলে, এক নজর না দেখলে তোর নয়।

মনে প্রাণে ঐক্য হয়ে যার মনে যে লেগেছে, কাজ কিরে তার জাতি কুলে, সকল ভুলে গিয়েছে, কয় অবোধ পাগলা কানাই, সে চলে প্রেমের বাতাসে ॥ উধো ঝুটি পরিপাটি, বসে থাকে তিনটি বিটি, আবডালে আবাসে হাতেতে ঠুলা কাধেতে ঝুলা, ডান হাতে যন্ত্র গোপী, দু-জনা এক সাথে হয়ে চলেছে বৃন্দাবন কাশী

(৫০৯)

হাউশ করে দিলেন বিয়ে পূর্ণিমার চাঁদে, শ্বশুর বাড়িতে যেয়ে বউ, পড়েছে গো ফাঁদে, কাঁদলে আর কি হবে, সুখের দিন দুঃখে যাবে, না যাবে দিন আনন্দে ॥ কত দিনের পরে সে বউ, যোগ্যমান হল, শাশুড়ী তখন হাড়ি থুয়ে, তফাতে সরে গেল দূরে বসিয়ে রহিল । বিধি বুঝি বউয়ের দুঃখ খণ্ডাইল ॥ যখন হবে তখন দিব, যখন হবে আমার মন, যেমন জ্বালান জ্বালিয়েছে, অমনি মত করব জ্বালাতন, বসে তুমি থাক মা-ধন । কানাই কয় পালা বদল শুরু সুযোগ আসল তার যখন ॥

(৫১০)

কোকিল প্রভাতকালে, বসে ডালে বসন্তের স্বরে, তুই জ্বালাস কেন আমারে, আমি নারী কেমন করি চাইছিলাম রে, আমার প্রাণপতি নাইরে ঘরে। কোকিল প্রভাত, হল কি বোল বল, আগে আয় শুনি, যেমন জ্বলন্ত অগ্নি, বিচ্ছেদ অনল হয় কেন এমন জ্বলন্ত, আগুন হয় না কেন পানি যেমন কাল সাপে দংশিল লহু বিষেতে করে ভক্ষণ, পতি বিনে নারীর হয় মরণ, পাগলা কানাই বলে, যৌবনকালে পতি নারীর অঞ্চলের নিধি পরাণের জান পরাণ |

(৫১১)

কাঁদে যুবতী নারী-কোকিল পাখি করি মিনতি, অবলা পেয়ে মজাও আমারে, আমি কি করেছি ক্ষতি, এই বসন্তকালে, আমার কপালে, লাগিয়ে আগুন, ছেড়ে গেছে প্রাণপতি॥ প্রভাতকালে, বসে তমালে, ডাকে কুহু স্বরে, আর কত জ্বালাবি মোরে নিঠুর পাখি, শেল হানে যেন আমার বুকি, যদি থাকত পতি, তবে কি ক্ষতি বিচ্ছেদ অনলে, এ পরাণ জ্বলে, মিছে পরি হীরে মতি ॥

তুই শোনরে কোকিলা একে মরি পতির জ্বালায়, আমি নিদ্রায় ছিলাম জেগে দেখি, প্রাণপতি পাশে নাই, কানাই বলে, কাল বসন্তে, পতি নইলে পাশে, দুই চোখ জল আসে ॥

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৬

 

(৫১২)

নতুন এক সুর ধরে রঙের ছুঁয়া গাইতে চাই ভাল করে, কথায় আমার জোর বাধে না, ফস করে জবান যায় সরে লোকে বলে পাগলা কানাই, ফড়ং খায় ধরে আমি কাজে কুঁড়ে ভোজনে গুণ শত, আমি আশা করে পাত পাড়ি ভাই হাভাতের মত।

পল সব দত্ত, খাওয়ার মজা সব খ্যান্ত, আমি ডলে মলে দেয় গলে, ডট করে ফালাই গিলে, মুখ নাড়ি যেন কাতল মাছের মত, খাওয়ার যে মজা সকলই খ্যাও, তবে মাসকোলের ডাল বরইর খাটা, তা হলে তো মজা হয়, কোনখানে বাজে না ভাই, সরস রাখ্যা খায়। বুড়ো মজা ছ্যামড়ারা তোরা বুঝবি কি, স সময়ই বেজুত ঠেকে জুত লাগে না এই মুখী, দুধেও যেন ঝাল লাগে, ভাল কথায়, গা জ্বলে যায় রাগে, শেষকালে মানুষ হয় দুখী |

(৫১৩)

শোন ভাই, একটা নতুন ধুঁয়া গাই, চেংড়া প্যাংড়া গাচ্ছে ধুয়া আমার তো সব নাই, চুল দাড়ি সব পাকিয়া গেছে দত্তগুলা নাই, লোকে ছাড়ে নারে ভাই, ওরে, দায় ঠেকিয়া বাধলাম ধুয়া, বেদ পুরাণে যাহা দেখতে পাই ॥

সাত আসমান, তার জমিন সাতখান, আকাশের তারা পাতালের বালু, এ হারে জাহান, ওরে চৌদ ভূবন পয়দা করছেন, মালেক ছোবহান, আরেকটা দিয়ে যাই চাপান, ওরে কোন বস্তু দেখে নাই আল্লাহ, সে কথার করে দাও বিধান গান শুনে লোকে ভাবে মনে মনে, মিথ্যা কথা বলছে কানাই, ঠকাবার জন্য, আমি শাস্ত্র ছাড়া ধুয়া বাধি নাই কোন দিনে, বলি সভার বিদ্যমানে, যদি না পার তো শুনে নিও, পাগলা কা করে দিবে মানে ।

(৫১৪)

গগনে উঠলো রবি আড়াই প্রহর বেলা, আমার বিধির হয় খেলা ইমামের সামনে যেমন রে আজগুবি জহরের পেয়ালা । জহর খেয়ে আকুল হইছে ব্যাকুল ইমাম শাহাজন, ধীরে ধীরে তার আখি হোল ঘোর, জায়েদা ভানুকে ডাক দিয়ে বলে রে ও বিধি আমি দুষমন ছিলাম তোর আপন হাতে খাওয়ালে জহর কোন দোষ পেয়ে, এ দুনিয়া কয় দিনের তরে, যার মাল সে করছে তলৰ ৱে,

ও বিধি তোর কপালের দোষে পিতার কথা আজকে বুঝলাম সত্য হয়েছে, ও হোসেন সত্য হয়েছে, সখিনাকে দিও বিয়ে রে, ও হোসেন কাসেমের সাথে মায়ের সত্য পাইরে হোসেন যাইও না রণে, ও হোসেন যাইও না রণে, তোমার যে মরণ। এজিদের হাতে রে, সে কথা লেখা কোরানে, কানাই কর ইমাম মল বিষের বাণে, কার কপালে কি আছে তা আল্লাহ্ বিনে কেহ না জানে |

(৫১৫)

ইমাম আলো শিকার ফেলে পানি চাইলো বিবির হুজুরে, ও না জানিয়ে জহর গুলে বিবি খায়ালো তারে । ইমাম যখন জহর খাইল বিষে অংগ জাল হইল, কোন দোষে সে জহর গুলে বিবি খাওয়াইল মোরে, ইমাম বলে ও হোসেন ভাই, এস আমি কয়ে বুলে যাই, ও পাগল কানাই তাই বলে, বিধির লিখন খণ্ডন না যায় ।

(৫১৬)

ওরে ইমাম হোসেন দোন ভাই, রাছুলের নাতি শুনতে পাই, বেহেস্তের নিশানা দোন ভাই, ও সে ফাঁকি দিয়ে এজিদ গোলাম, কারবালাতে নিয়ে যাই। কারবালাতে আমার মউত শুনেছি নানাজীর ঠাঁই ॥ ও নানজীর কথা, ও সে কথা মিথ্যা নারে ভাই, ও হে শোন দুল দুলি আমি উপায় এখন কি করি। কারবালাতে এসেছি আমি, এই কারবালাতে, রণ খেলিতে শুনেছি নানাজীর ঠাঁই ।

শুকনা মাটি পা দেবে যায়, চিহ্ন পাওয়া যায়, মড়া কাষ্ঠে লহু বারায়, এমন সময় গুণের ভাই হাসান রহিল কোথায় । আরে পুত্র, লইয়া পুত্র কোলে যায়, দরিয়ার কেনারে, এজিদ গোলাম তীর মারে বুকে, মরা পুত্র নিয়ে দিল কদভানু বিবির কোলে, পুত্র দেখিয়া বিবিরা সব টলিয়া পড়ে, আহা দুখিনীর ধন মারলি কে? দুখিনীর ধন মারলি এজিদ তীর মারে বুকে, কানাই মনমরা দুখে !!

(৫১৭)

গগনেতে যখনেতে আড়াই প্রহর বেলা, হায় কি বিধির খেলা, ইমাম হাসান পানি পিয়াসে, জায়দা বিবিকে বলে, বিবি পানি দাও, এই বেলা, শুনিয়ে জায়দা বিবি, এনে দিলেন সিতাবী, জহরের পিয়ালা । এনে দিলেন পিয়ালা, চুমুক দিয়ে খেল বাছা, তনু হল কালা-খেয়ে পিয়ালা উঠে যায় জ্বালা, করে হেলাদোলা। কোথায় রে হোসেন আলী কোথায় বুলি-দেখা না হল নিদান বেলা, কাসেম দিয়ে আন তোমার কাকারে, নিদানকালে ধরি ভাইয়ের গলা ।

হোসেন আলীর হাত ধরিয়ে ইমাম বসায় কোলের পর, তুমি আর কেদনা মিয়া ভাই বলে, হোসেনরে আমার, রণে যেও না, ও ভাই হোসেন, বারণ করি বারংবার, কানাই বলে, অন্তিম কালে, চরণ তরী হয় যেন সার |

(৫১৮)

মহরমের দশই তারিখ হোসেন হয় বিদায়, বসে সেই দত্ত কারবালায় । হোসেন বলে আল্লাহতালা কি হবে উপায় । মদিনাতে যত ছিল ইয়ার বন্ধুগণ, তারা সব ডেকে কয় তখন, আরজ করি, মদিনাতে, ফিরে চল যাই এখন ॥ মদিনাতে যাইতে হোসেন, হলেন তখন রওয়ানা, তখন ঘোড়া এগোই না, এন্ড কথাটিও বয়াতি খুলে বল না, না বললে তো তোমায় ছাড়ব না, শাস্ত্র মত বলতে কসুর কর না ॥

জোরছে মারে কড়া চাবুক দুলদুল ঘোড়ার পৃষ্ঠেতে, ঘোড়ার পা দেবে যায়, চলতে নারে, কাতর ক্ষুধা তৃষ্টাতে, এই কি ছিল মোর কপালে ইমাম কাতর দেলে বলে, পাগল কানাই করে হায়, হায়, এই কি ছিল কপালে ॥

(৫১৯)

ইমাম হোসেন দোন ভাই, রাসুলের নাতি শুনতে পাই, ভেস্তের চেরাগ হবে তারাই । এজিদ গোলাম কারবালাতে লয়ে যায়, হোসেন কয়, কারবালাতে আমার মরণ, নানাজীর ঠাই শুনতে পাই, নানাজীর কথা কভু মিথ্যা হবার নয়। তুমি শোন দুলদুলি উপায় এখন কি করি, কারবালাতে আমি এসেছি, কারবালাতে আমার মরণ নানাজীর ঠাই শুনেছি, শুকনো ভরে পাও দেবে যায়, এই চিহ্ন আমি পেয়েছি।

আবার মরা কাষ্ঠে লহু বাহির হয়, এমন সময় প্রাণের ভাই বইল কোথায় ॥ হোসেন পুত্র লয়ে কোলে, যায় দরিয়ার কিনারে, কাফেরেতে বুকে তাঁর মারে, মরা সন্তান লয়ে হোসেন, ছর বানু বিবির কোলে দ্যায়, মরা ছাওয়াল দেখে বানু, ঢলিয়ে পরেন জমিনায়, দুগ্ধের বালক মারলি এজিদ, এ তীর কিয়ামতে লাগাবে তোর গায়, পাগলা কানাই বলে, কাতর হালে, ওগো আল্লাহ, তোমার লীলা বুঝা দায় ॥

(৫২০)

হোসেন কয় মা জননী বলি তোমারে, ও পানি দিল না মোরে, ওরে পানির জ্বালায় জান ছেড়ে যায়, ওমা, দেখলে না নজর করে, আজ আমি শহীদ হলাম কারবালার জমিনে। ওরে পানি খাবার গিয়েছিলাম পাত কুয়ার মাঝার, তাতে বাম হল বিধি পরওয়ার । তুই যারে ঘোড়া তাড়াতাড়ি রে, আমার মায়ের আগে কইত সমাচার । তোমার বেটা হোসেন আলী সে যে ফিরে না আসিবে আর।

পিছে কাল যম আসে টানতেছে রে, উঠবার শক্তি নাই । আমি জানলাম রে তোর বিচার নাই, ওরে আমার মাকে মা বলতে রে, এই দুনিয়ার পর আর কেই নাই। মউতের সময় হলে পাগল কানাই কয়, কাফেরের হাতে বাঁচা নাই।

(৫২১)

ও পানি, পানি পাইলো ও নারে হোসেন, করছ কেন তুমি বেদনা, তোমারে দিতে পানি, আমার আল্লাহজী করেছে মানা। পানির কারণ হচ্ছেরে মরণ, ফেরে কোহরে দরিয়ার কিনারে, ওরে পিয়াসে মোর ছাতিরে ফাটে, কিছু পানি দেওনা আমারে, কত মৎস্য আদি ঘড়েল কুমার আল্লাহ তারা মনো হুতাশে, খাচ্ছে গড়াগড়ি, পাগল কানাই বলে, দরিয়ার পানি না বলে।

পানির ভিতর জহর গুলে, খাওয়াইল কদভানু সেই ইমামেরে, জহর খেয়ে ইমাম শাহদাৎ ওসে অমনি পড়লো চলেরে, বিবিরা সব কাদছে বসে, ওসে ইমামের লাগিরে, কেউ বলে দেওগে খবর রে, যেয়ে সেই হেসেনেরে খবর দিতে গেল চলে, কদভানু সেই হোসেনেরে, শোন বলি ছোট দেওরারে তোমার ভাইতো মরেছে, নবীর পুরি আঁধার করে ।

আমাদের অনাথ করে থুয়ে, যাই চল তাই দেখি গিয়ে ॥ তখন, খবর পেয়ে এল চলে, হোসেন মহামতি, কাঁদছে ভাইয়ের গলা ধরে মোদের হবে কোন গতি, এজিদ গোলাম, ভাই মারলিরে, তোর মনে কি ইহাই ছিল? কানাই কয় বাঁদির বাচ্চা, বুঝি দুনিয়ার বাদশাহী পেল

(৫২২)

আপন হাতে দস্তখতে লিখছিলাম লিখন, কাছে দেকে পাঠাইয়া দিলাম আলোব্বের শহর, চাচা আলে দুঃখের কথারে আমি কহিতাম সকল, ও এজিদরে এই ছিল মনে, যেমন ভরতকে রাজ্য দিয়ে সোনার রাম গিয়েছে বনে, ওমনি দশা আমার হল রে, এজিদ কারবালার রণে । পাগলা কানাই বলে, নবীর বংশে, বাতি দিতে এই সইতে সারা, ঐ দেখা যায় কারবালাতে কাফেরের লস্কর আলখানা ঘিরা, ছুরাত জামাল চাচীর জন্য, এজিদ এই বরলি তোরা ।

(৫২৩)

হাল সনেতে উঠলো সূর্য আলো হোল জগত্ময়, তাই বিবি ভানু কয়, কেঁদে সে হোসেন আলীর পায়, আঠারদিন উপবাসী কেমন করে জীবন বয়, করি কোন উপায়, ফুরাত নদীতে আছে পানি-কাফেরে রাখল ঘিরে, কেমন করে আনি 1 এও কথাটি নদীর শুনে হোসেন ছাওয়াল কোলে নেয়, ও হায়! ছাওয়াল কোলে নেয়, ফুরাত কূলে হোসেন পানির জন্য যায়, চতুর্দিকে কাফেরে ঘেরা, ডেকে কয় ও ব্যাটারা, এক বিন্দু পানি দেও আমায়, কানাই বলে দেখি না উপায় ।

(৫২৪)

এক বিন্দু পানির জন্য দুগ্ধের বালক মারা যায়, করি কি রে হায়। কাফেরতে তীর ছাড়িল, ছাওয়ালের বুকে লেগে রক্ত বাহির হয় মরা ছাওয়াল নি ছরভানু বিবির কোলে দেয়, বিবি অচেতন হয়, কিঞ্চিৎ পরে জ্ঞান যে ফিরে, বলে সে হয়, আল্লাহ হায়, তোমার কি দয়ামায়া নাই, দুগ্ধের বালক কাঁচাসোনা, কোন পাপ তো করে নাই, পাগলা কানাই ভেবে বলে, যা ছিল ছেলের কপালে, বা জো নাই |

(৫২৫)

নিশি প্রভাত কালে কাঁদে ফাতেমা, কুল শূন্য মদিনা খানি সোনার বালাখানা। তাই পাগল কানাই কয়, সাত রোজের অনাহারী কেও না কয় মা, হায়রে ইমাম যদি মরত কোলে, গোর দিতাম ছামনে, দেখতাম বেয়ান বৈকালে ॥ সমুদ্দুরের বিষম তুফান উঠে মায়ের মনে, বেটার শোক রয়ে রয়ে পড়ে মায়ের মনে, হায়রে দুঃখীর ধন ওরে বাছা নীল রতন, এই ধুলায় লুকাইয়া কাঁদে মায়ের সোনার চাঁদবদন, হায় বেটা বেটা বলে মায়ে করছে রোদন

(৫২৬)

মোহাম্মদ হানিফা যখন পাইল জয়নালের লেখন, পাইয়া কাছেদের হাতে খুশী। হইল মন, লেখন পড়ে ঢলে পল ভাইয়ের কারণ, আহারে জোড়ের ডাইরে গেলিরে ছেড়ে। আগে যদি জানতাম রে ভাই তোরে মারবে কাফেরে, কাফেরকে না রাখতাম আমি এই দুনিয়ার পরে, ভাইয়ের শোকে কালিজা জ্বলে ও ভাই গেলিরে ছেড়ে, আমি জন্মের মত ডাকি তোরে, ভাই ভাই বলে, ভাইয়ের শোক বিষম শোক রে, পাগল কানাই বলে যার অন্তরে |

(৫২৭)

হায়রে কোকিল ডাকিস নারে, ডাকিস নারে কুহু কুহ বলিস নারে, আমি কই তোরে, যেমন কুল স্বর্গ আখের স্বর, কে ‘মা’ বলবে আর, সারারাত বসে কাঁদি আমি এই ঘরে, কোকিল তুই ডাকিস কেন বনে, পুত্র শোক উঠে মনে, কত সং মায়ের প্রাণে, ওরে কোকিলারে ।

যেমন দৈবকিনীর কৃষ্ণহারা, দুঃখে মায় পাগল পারা, ও চক্ষে না রয় ধারা, ও গোপাল উদরে রাখলাম, চন্দ্রমুখ না দেখিলাম, প্রাণ থাকতে থাকতে পাষাণের গায় জ্যান্ত মরা, বুঝি সেই দশা আমার হলো, কেন ইমাম ছেড়ে গেল, ইমাম শোক! আগুন রল মায়ের বুকের পোড়া।

কোকিল রে ও বনের পাখি বনে থাকিস ও পুত্র শোক জানিস নারে, পাগল কানাই বলে যার মরেছে কোলের ছেলে, সেই সে জানে, ও কোকিল তুই ডাকিস কেন বনে, পুত্রশোক উঠে মনে, কত সয় মায়ের প্রাণে, ওরে কোকিল রে ।

(৫২৮)

ভ্রমরা গুণাগুণ কৃষ্ণ – আগুন আগুন বনে ফেলে দিয়ে পায়, আবার নবদ্বীপ শূন্য হল হায় ও মরি হায়, ও মায়ের কাপন শুনে নবী কেঁদে কা, কেঁদোনা কেঁদোনা মা গো বলি তোমায় পাগল কানাই বলে, এই ভবে আর কেও রবে না, এসব মিছে মায়াময় ॥ ও মিছে অনাহারী বলে কি কারণ? আইছো একা যাইবা একা-সব অকারণ বেটা পুত্র কেউ কারো না, ও সবেরি স্মরণ-ওমা জানো মা কেন করছো রোদন। এই নবীর উম্মত যত ও তোমায় সবায় বলবে মা, তাইতে কি তোমার জীবনও শান্তি হয় না?

(৫২৯)

হোসেন আলী বসে কাদে, ফাল্গুন নদীর কিনারে, পিপাসায় ছাতি ফাটে, আল্লাহ পানি দাও আজ আমারে । শুনে ফাল্গুন নদী উঠে বলে, হোসেন কাঁদছ কেন রহনা, তোমাকে দিতেরে পানি, আমার আল্লাহজী করেছে মানা ॥ জলের মৎস্য মাগুর ধোড়েল কুমীর মল শুকায়ে, যাচ্ছে সব গড়াগড়ি, আল্লাহ দরের পানি পেয়ে । বেটার আগুন জ্বলে দ্বিগুণ, যখন উদয় হয় মনে, পুত্র শোকে কাঁদছে মা দুখিনী, পাগল কানাই তাই ভনে

(৫৩০)

হোসেন বলে সীমাররে খুনী, আজ তোরে মিনতি করি, এই হলকম ছেড়ে দেরে, সীমার ‘মা’ বলে ডাকি ওরে শেষে দিও কোরবানী। ও তোমার হাতে আমার মউত, বলে গেছেন নানাজী, আজ লানতের ততী সীমার দেখ তোর বুকি, পাগল কানাই বলে নিমা খোল তাই দেখি, ও আজ কার বুকে নিমারে থুইলে, হোসেন বলে গাও কাঁপে ডরে, হোসেন বলে আজরাইল আইলরে, ও আল্লাহ আর বাঁচিব না, ও ঘোড়া দুলদুল রে তুই ফিরে যা ॥

(৫৩১)

সখিনা কাদে কারবালায়, এজিদ মারোয়ানকে দিয়া পাঠায়, মারোয়ানের ফেকাম দেখে সখিনা অচেতন হয়, খানিক পরে চেতন পেয়ে, কোমরের খঞ্জর খুলে নিজের জীবন বের করে সখিনা জীবন বাহির করে মারোয়ান তাড়াতাড়ি গিয়ে বিবিদের ধরে, বিবিদের সংগে নিয়ে দামেস্কেতে যায় চলে,

এজিদ গোলাম দেখিয়া বলে, তাড়াতাড়ি নিয়ে যেয়ে থোও বন্দী ঘরে, নিয়া থুলো বন্দী ঘরেতে জয়নাল কেঁদে বলে তার মার কাছে, মৃত্যু বুঝি হল এই ভবে, শাহারবানু কেঁদে বলে শোন বাবা আমার কাছে, এজিদ গোলাম যা কহিবে তাই শুনিলেন তোমার মউত না আছে ।

বৃহস্পতিবার চলিয়া গেল শুক্রবারের দিন ভাল, এজিদ জয়নালকে ডাক দিয়া নিল, ফাঁকি দিয়া ডেকে নিয়া ঘর, পড়িবার সময় এজিদের নামে যুবা জারি করিবার ক করে ইমাম হোসেনের নামে, এজিদ কাফের এই নিজ কানে, জয়নালকে ধরে এনে দাও আমার হুজুরে, ঐ ব্যাটারে ছের কেটে যাই নইলে আমার এ জীবন দেখাব না কারে, কানাই কয় খোদায় না মারলে কেউ কি মারতে পারে ।

(৫৩২)

দুল দুল কয় হোসেন আলী সাত রোজ খাইনে দানা পানি, যাদু কোন প্রাণ ধরে, ঐ কাফেরে, দিল তোর গলায় ছুরিখানি। সহেনা হোসেন আলীর শোক, আর কতকাল পোহাৰ এ ভোগ, কাফেরে মেরেছে খঞ্জর, আল্লাহ, ঐ না গলার পর দুল দুলি খবর দিল ঢুলে পল, শুনে বিবি সাহার বানু, মা তোর কোলের ছেলে, দিল ফেলে, দুগ্ধ আর তো দিল না, কপালে লাগল কালি, যাবে না আর তো ধুলি, এনে দাও সেই জহরি, আমি খেয়ে মরি ॥

দিবসে রাত হইল, চন্দ্র সূর্য না উদিল, 1 ইমামপুরি আঁধার হল, চোখে দেখতে পেলাম না, পাগল কানাই বলে, নয়ন জলে, ভাসি নিরন্তর, যেমন আসমান ভাংগিয়া পল মস্তকের উপর।

(৫৩৩)

হোসেন মরে ছের কাটিয়ে শোকে কাঁদে কারলালা, পাথর ফেটে চৌচির হয়, সহ্য নাহি হয় জ্বালা। পশু পক্ষী দেখ সাক্ষী কেদে হয় জারেজার, কাঁদে আরশ আল্লাহর কাঁদে আরো আসমান জমীন, আরো পবন পানি, মা থাকী কেঁদে আঁখি অন্ধ করে অকারণ, নবীর বংশ করলি বিনাশ। হোসেন মেরে ছের কাটিয়ে কাফেরগণ সব চলে যায়, ব্রাহ্মণের সংগে দেখা হয়, আমার আশা ছিল মনে, আমি মুরিদ হব হেসেনের দাউনে।

আল্লাহ বাম হল তাতে ব্রাহ্মণের মন সয় না। তাতে, শেষে হোসেন আলী গায়েবী হালে করল মুরিদ ব্রাহ্মণে, শেষে গেল ভেস্ত তার সনে ॥ হোসেন মেরে ছের কাটিয়ে সীমার খুশী অন্তরে, রাখল মাথা আজর কাফেরের অন্দরে। রাত পোহালে আজর মেরে, আরও মেরে তিন ছেলে, তবেই সীমার শির লয়ে যায়, এজিদ মোকাম মঞ্জিলে, পাগলা কানাই করে হায় হায়, বিধির এ বিষম লীলে |

(৫৩৪)

কেঁদে বলে ফাতেমা-কি দোষে, ওরে হোসেন রলি কারবালা, তোর নামাজের ওক্ত হল, ডাকি শোন না, ওজু হয়ে পড় নামাজ, বল আল্লাহর নাম ॥ তুই হলিরে বেহাল, ওরে নীলমাণি, তোরে কে মেরেছে, কে ধরেছে, গলায় দিয়ে ছুরি, আজগার জয়নাল কাঁদছে সবে ঘোড়া দুলদুলি ॥ আর ডেকো না কোকিলা, সোনার চাঁদ মোর ইমাম হোসেন হারা হয়েছি, পুত্র শোকের কি যন্ত্রণা তুমি জান না, বেটার শোকে ওরে কোকিল, আমি হয়েছি পাগেলা ।

জয়নালের খত লয়ে কাসেন আলী যায়, তোমারে যে করব শাদী এমন সময় নাই, কি দোষেতে এজিদ জহর যাওয়ায় । ধন্য ধন্য কাসেদ আলী, কেও খবর আগে, যদি দিত মিয়া ভাই, আমার কাছে লিখত খত, তবে কি এজিদ গোলাম থাক দামেস্কায়, তাড়াইয়া দিতাম তাও তো লোকে দেখত তাই কানাইয়ের বেদনার শেষ নাই |

(৫৩৫)

কাসেদ কাদে জারেজার আমি সাগর হলাম পার, এ বন ছাড়িয়া করবো জয়নালকে উদ্ধার, এইছা বন করেছ পয়দা হে আল্লাহ, নাই কূল কিনারা তার, কেমনে করিব আমি জয়নালকে উদ্ধার ॥

কাসেদ মেলা দিল পথে, আল্লাহ কেহই নাই সাথে, আল্লাহ নবীর এই দুটি নাম কেবলই সাথে, আমি যদি মরি আল্লাহরে, আমার জয়নাল মরবে কারাগারে, বাদীর বেটা বাদশাহী করবে দামেস্ক শহরে এই বলিয়া কাসেদ যখন কাঁদিতেছিল, হেন কালে খোদার জিব্রিল সম্মুখে এলো, বুঝিতে কাসেদের মন জিব্রিল আচম্বিতে বাঘ হোল, লক্ষ দিয়া কাসেদের সম্মুখে পল ॥

তখন কাসেদ কেঁদে কয় শোন বাঘ বলি হে তোমায়, জয়নালের লেখন পত্র আছে মোর মাথায়, আমায় যদি খাও হে বাঘা তাতে তো নাই কোন দায়, জয়নালের পত্র যেন হানিফ শাহা পায় ॥ সে কথা ভেবে কানাই পড়েছে বিষম চিন্তায় |

(৫৩৬)

কাসেদ বলেরে আল্লাহ ঠেকলাম বিষম দায়, এ বড় দারুণ জংগলময়, চৌদিকেতে দারুণ যম আজ বুঝি প্রাণ যায়, দুঃখের কথা বলবো কোথা কে শুনিতে চায়, হায় আল্লাহ, হায়, দীনহীন কাংগাল আমি ডাকছি দয়াময় ॥ ওঠো বাঘ ছাড়রে রাস্তা নিবেদন বচন, এ বড় দুঃখের বিবরণ, নবীর বংশ করলো ধ্বংস এজিদ মালাউন, কাসেদ হয়ে চিঠি নিয়ে যাই হানিফার ভবন, শোন দুঃখের বিবরণ, পথ ছাড় রে বাঘা দিও না আর জ্বালাতন, কানাই কয় বিপদে সত্য বুদ্ধি ভুল নারে মন |

(৫৩৭)

ওরে চেতন পেয়ে হানিফ শাহা মুখে বলে আহা আহা, হায় কি করলিরে নিদান, ওরে বেহুশে পড়িয়া রল হানিফ পালোয়ান, কেহই না রল ভবে আজকে দেহ ছেড়ে বুঝি চলিল পরাণ চেতন পেয়ে হানিফ মর্দ দেলেতে লাগিল ধন্দ, হাকিয়া লক্ষরের কয়, কোথায় আমার ঢাল তলোয়ার এনে দাও আমায়, কোথায় আমার দুলদুল ঘোড়া, সেজে এনে দাও হেথায়, আমার জয়নাল মল বুঝি,

এজিদের কয়েদখানায় সে কথা হানিফা বলে, জোরেতে বাহু তোলে, বেহুশে দৌড়ে যায়, মাটি বলে ওহে হানিফ ধীরে ফেলো পা, তোমার পায়ের ভরেতে আমার কাপে। সর্ব গা, গাছ বৃক্ষ তরুলতা তারা কেদে বলে, হানিফ পা ধীরেতে ফেলাও।

দামেস্কের নিকটে গিয়ে মার মার বলে হাকে, হাক শুনে কাফেরে পালায়, ওরে জমীনের ধুলা যেমন আসমানে লাগায়, ঘোর অন্ধকার হয়ে গেল ভূমিকম্পের দায়, এইছা জোরে তেগ মেরেছিল, ছাগলের পালে যেমন বাঘ যেয়ে সাধায় কখনও কাটে ডানে কখনও কাটে বায়, কাহাকেও শূন্যেতে উড়ায়, অধম কানাই। বলে ওরে এজিদ ঠেকলে বিষম দায়, মোহাম্মদ হানিফা এল বলি যে তোমায়, তাহা শুনে এজিদ গোলাম দৌড়ে যেয়ে কুয়াতে সাধায়

(৫৩৮)

কারবালার জারী গাইতে আমার নয়ন ঝরে অবিরাম, ব্যাথায় আমার পরাণ ফাটে ওগো আল্লাহ কেন বাম, নয়ন মনি রাছুল উল্লাহর, কেন হেন দশা যে তার, বলতে নারি সেও কথাটি বিচার করে বল ভাই, নইলে ছাড়া নাই ॥

জহর থেকে কেন মলো বড় ইমাম মেয়া ভাই, সীমার কেন নিঠুর হয়ে ছোট ইমামকে খপ্পর চালায়, মা ফাতেমা ভেস্তের কাণ্ডার, তার সন্তানের কেন এ ব্যাপার, কও কথা ভাল করে বয়াতি সভায় নইলে রক্ষা নাই ॥ পাগলা কানাই বাজে কথা কইতে জানে না, শাস্ত্র মত না কইলে সে তো মানে না ॥

(৫৩৯)

কথা কইতে নয়ন ঝরে কথা বলা আরবা কারে, তুই যেন কানা বয়াতি, শাস্ত্র দেখিস নারে, শাস্ত্রে বলে ফাতেমার গাল জহরে কহরে মরবে তার দুলাল, এই কথাটা বোঝে নারে ওরে ও ভোড়ো বাংগাল ॥ কথা কই শোন খাঁটি কেন যাও উজান ভাটি তোমার সব হবে মাটি, কেবল বাজবে বাঁশের লাঠি তুমি খাও আদাড়ে কচুর আটি ॥ কানাই দুঃখে এলামেলো, তারে আল্লাহ করেছে, ধূয়ো গানের দিতে পাল্লা আসরে খুশুরী ধরেছে ॥

(৫৪০)

হোসেন আলীর ব্যাথায় কাঁদে ফুরাত নদীর পানি, খোদার দোস্ত তাহার নাতি কেন এত পেরশানি, আল্লাহ মেহেরবান, বিপদ কর আছান, ইমামকে রাখ ভেত পুরি আনি ॥ হারে কাফের! অর্থলোভে করলি কী বদকাম, রোজ হাসরে কি উপায়ে ত্যাজিবি বদনাম, দোজখ আগুনে যাবি, মহাজ্বালায় দগ্ধ হবি, বদ কর্মের ফলে আল্লাহ হবেরে তোর বাম : পাগলা কানাই ক্ষমা চাই, খোদার দরবারে আল্লাহগণি মেহের হইও এই না গোনাগারে |

(৫৪১)

হোসেনের ছের কাটিয়ে, সামার চলে দামেস্ক নগরে, প্রবল বেগে ধেয়ে যায় সে, গতি তাহার কে রোধ করে। বর্ণায় গাথা ইমামের শির, লক্ষ টাকা মূল্য এর, আকাশ কাদে বাতাস কাদে, দেখে কাফেরের কাজ, হায়রে পাষাণ নাইরে মায়া, চোখে নাইরে লাজ । পথের মাঝে রাত হয়ে যায়, সীমার হোল অতিথি, আজর নামে সবাই চেনে সে মদিনার ইহুদি, বলে তারে শোন কাফের, সিপাই আমি এজিদের এই ছের নিয়ে রাখ গিয়ে, ঘরে তুলে যতনে, ভোরের বেলা দিবা ফেরত কথা যেন থাকে মনে ।

রাত পোহালো ফরসা হোল, সীমার ডাকে আজরকে, শোনরে কাফের এনে দে ছের, যাই চলে যাই দামেস্কে, আজর বলে তাই সীমার, এই নাও ছের দেহ তোমার, এইনা কথা বলে আজর, আনলো আপন ছেলের ছের, সীমার বলে হায়রে হায়, এই ছেরে মোর কার্য নাই, ছের এনে দাও যাব চলে এজিদের আলয় ॥

আজর তখন ছের আনিল আর এক ছেলে ছিল তার, রক্তে গেল ঘর বাড়ি ভেসে, হোল একাকার, দেখে সীমার হুংকারে, লক্ষ টাকার অহংকারে, আপন দুটি পুত্র মেরে, হোসেনের ছের রাখ সেরে, শীঘ্র করে আন ছের, আর তো আমার সময় নাই, তাড়াতাড়ি যাবার চাই ॥

আজর তখন আনল না ছের, সীমার তারে বধ করে, আজরের বউ ঘরের মাঝে, হোসেনের ছের রাখে ঘিরে, ঘরের মধ্যে গিয়ে সীমার জোর করে নেই ছের এবার, চলে যায় কাফের তখন পাগল কানাই কেঁদে জারেজার।

(৫৪২)

যত লেখিয়ে শোক ছড়িয়ে কাঁদে ইমাম পুরি, কাসেদের ডেকে এনে বলছে বিনয় করি, বলছে কত কাতর হয়ে এতো বড় দারুণ খত ও বাপ কাসেদরে-লয়ে যাও হানিফার বাড়ি ॥ বিছমিল্লাহ বলিয়ে কাসেদ, খখানা নিল সাথে, রওয়ানা হইল কাসেদ, আলুফা নগরে যেতে, সামনে ফাল্গুন নদী, তুফান ভারি, কাদে কাছেদ নদীর কূলেতে ।

কেমনে পার হব আমি, ওগো স্বামী, খেয়া নাই ফাল্গুন নদীতে ফাল্গুন নদী চর পড়িল, খোদার কুদরতে, ওপারে যেয়ে কাসেদ মিয়ে, পথ গেল ভুলে, আজাজিল বাঘ রূপ হয়ে, লক্ষ দিয়ে, পল কাসেদের পদমূলে, কানাই বলে, খেয়ো নারে, জয়নালের খত দেখ খুলে |

(৫৪৩)

ধরি, খানিকক্ষণ কর দেরী, বনের বাঘ খেয়োনা আমারে ওরে, ফাতেমার বেটা, ওরে বাঘ-দাড়া ও খানিক দাড়া, ও বাঘ নিষেধ করি তোরে, বাঘরে তোর পায়ে গেছেরে কাটা, কারবালা এজিদের রণে, তার বেটা জয়নাল মীরে, কাফেরে রাখল ঘিরে আছে সে বন্ধ থানা ঘরে ॥ বড় কষ্টে পড়ে লিখেছে লিখন, সে লিখন ভেজেছে আমারে। লিখন খানা পড়ে দেখে বনের বাঘ খাও আমারে । আমার কি মউতে ভয় আছে। কানাই বলে, কাতর দেলে, খত্ পৌঁছিলে, নবীর বংশ বাঁচে |

(৫৪৪)

কাসেদ বলে, কাতার হালে, ধর পত্র পানিফা, না ধরিলে প্রাণ তো বাচে না, মাস হেটেছি, নাহি খেয়েছি, পেয়েছি যন্ত্রণা, আমার প্রাণ তো বাচে না, জা খত মাদিনার সংবাদ, পড়ে দেখ না, কারাগারে আছে জয়নাল আলা, হানে, সকল খবর রাখ না । দামেস্কের ঐ এজিদ গোলাম নতুন বাদশা হয়েছে, ইমামের পুরি সব বিনাশ করেছে, ময়মুনা ছিল কুটনী শহরে জহর তো দিয়েছে বড় ইমামকে মেরেছে ।

ছোট ইমাম ছিল, কারবালায় মরিল, পানি তো না পেয়ে, জীবন দগ্ধ হয়েছে-জোড়ের পায়রা ছিল আজগার আলী, কাসেম রণে শহীদ হয়েছে ॥ বলব কি সেই দুঃখের কথা বলতে জবান সরে না, ফুরাতে ছিল বন্ধ করিল, পানি সকলেই মরিল, পানিতো না পেয়ে, পাগলা কানাই বলে, নয়ন জলে, ভাসি আমি সর্বদা, কারাগারে আছে জয়নাল হানেফ সকল খবর রাখ না |

(৫৪৫)

জয়নাল কেদে কয় ওহে মালেক রব্বানা, অসময়ে কোথায় রলো, চাচা মুহম্মদ হানিফা। একবার নয়নে দেখল না-নবীর পুরি আঁধার করি, আমায় রাখলে কয়েদখানায়, আমি একেলা রইলাম চাচা গো শহর মদিনায়। দুঃখের কপাল-এই লেখা ছিল-বাপজান মলো কারবালাতে, জহর খেয়ে চাচা মল। বাদশাহী বুঝি গোলামে নিল, জোড়ের ভাই সে আজগার আলী, পানি পানি বলে মল, জনম দুখী মা জননীর কাঁদিতে দিন গেল ।

চাচাজির আগে লিখলাম লিখন-পথে পেয়ে এজিদ গোলাম, কেড়ে নিল সেই লিখন, আমার চাচা বুঝি সে খত না পা’ল, বলি হায় গো হায়, আল্লাহ পাক ছোবাহান, প্রাণে সয়না জ্বালাতন, কাছেদের ভেজে দাও আলুপার শহর কানাই কয় বলো গিয়ে কঠিন দুঃখের খবর |

(৫৪৬)

হানেফ যখন ঘোড় সোয়ারে জয়নালের ধরে, জয়নাল কেঁদে বলে, পাষাণল পড়ে, আমার বুকের পরে । ধড় ছেড়ে উড়ে যায় পরাণ চুরি দিসনে গলে, ওঠ কাফের দুনিয়া দেখি, একবার মা বলে ডাকি, মউতের কালে ॥ রণে যাবার সময়েতে মা করেছিল মানা, মায়ের কথা শুনে আমি থাকতাম যদি ঘরে, আমার বাপ চাচা গিয়েছে মরে । পরিচয় দিয়ে যাই তোরে । তুই আমায় খুন করিসনে শোন বলি ও কাফের আমার মা কেমনে রবে ঘরে ।

পূর্ব কালের করার ছিল কাফের-ছ-মাস আগে লিখেছি লিখন, চাচাজি এলনা এখন, না হইল দেখা । মউত ছিল কাফেরের হাতে, এই ছিল মোর কপালে, ওহে দারুণ বিধাতা। পাগলা কানাই বলে, যার কপালে, যা লিখেছে খোদা

(৫৪৭)

জয়নালের করুণা শুনে, কয় আলীর বাচা, ও বাচা ধরলে কত তরবারি, তাইতে গলায় ধরেছি ছুরি, পাষাণ দিয়ে বুকি, এখন ভয় নাই, ভয় নাইরে বাচা, কোলে আয়রে ও নীলমনি, আমি রে তোর চাচা রণে এসে দিলে দেখা, হয়ে বুকোবুকি, নামটি তোমার জয়নাল আলী, আগে না পরিচয় দিলি, হোসেনের বেটা, তোর জীবনে এ দুর্দশা, আমি কি বলিব কথা, বড় বেদনায় নিরাশা কোলে আয় কোলে আয়রে ওরে বাচাধন, আমার জুড়াক জীবন, বাচা কও দেখি।

আলখানার খবর, কদভানু ছরভানু কেমন, কোথায় শাহাদৎ, কোথায় রে মোর ইমাম হোসেন, কোথায়রে আজগার কাছেম, সাকিনা আছে কেমন, পাগল কানাই কেঁদে কয়, বিধি রেখেছে যেমন |

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৬

 

(৫৪৮)

জয়নাল কয় হানেফ চাচা, তুমি আমায় কোলে করে, পুরাও মনের আশা, বাপ চাচা গেছে মরে, পুরিতো আঁধার করে, কেবল জীবিত আছে তোমার বাছা এজিদ যদি নাগাল পেত, হাত পায় মোর বেড়ী দিত, কয়াদ করে থুতো, আমি থাকতাম কারাগারে ।

তুমি চাচা দেখতে কারে, আমার জান দানার জ্বালায় যেত আমার মা পাগলিনী, তাহার সুখের পায়রা আজগার, মলো বলে পানি পানি। দুঃখের হার গলায় নিয়ে, মা বেড়ায় পাগল হয়ে, কোলে করে সোনার যাদু, এই জয়নাল নীলমনি, কানাই কয় কারবালায় কেবল কান্না শুনি ॥

(৫৪৯)

হানেফ ভাই ভাই বলে, পড়েছে চলে, ওরে, আজ বুঝি প্রাণের ভাই বাম হল, দেখা না দিল, আহা, প্রাণের ভাই কোথা রল । আমার ফাটে ছাতি, শুকায়রে নদী, দুই নয়ন ঝরে আমার ঐ দিবা রাতি, সদায় যায় যায় বলে আমার মন পাখি ॥ ওগো আল্লাহ এই সাদুয়ান, বাম হয়েছে যার, সদায় অন্ধকার তাহার, স্তরে এককালে ডুবে গেল, ও তোর বাপ দাদার নাম, কানাই বলে ঐ দশা ঘটেছে কারবালা তামাম |

(৫৫০)

হানেফ কাঁদে ভাই ভাই বলে, এ দেহ উঠল জ্বলে, হায়রে দারুণ বিধি, না দেখিয়ে প্রাণের ভাইকে, ফেটে যায় মোর ছাতি, ও রব্বানা, কেন রাখলে না, মোর বংশে দিতে বাতি । আমি গিয়েছিলাম ফুলের বাগে, ভ্রমর সব লাখে লাখে পড়ে রয়েছে, ময়না তোতা, কয়না কথা, বাদামের গাছে, ও রব্বানা ভাইকে বিনা, কে আমার আছে । কনে যাব ভাইকে পাৰ, পাব জোড়ের পায়রা ভাই, চলে যায় পুরীর মধ্যি খুঁজতে তারে হায়। ওরে সোনার চাদ জানালের নাগাল পাই এই না বলে, হানেফ কাঁদে শোকে কাদে পাগল কানাই |

(৫৫১)

জয়নাল কয় চাচা তোমার কপালের এ দশা, আমারে কোলে করে পুরাও মনে আশা, চাচা, তুমি গেছিলে ডিয়াবন, কেঁদে ফেরে আমার মন, আমার কেউ নাইরে চাচা আমি কার কাছে করি গোসা চাচা, তুমি দরদ-বন্ধু ছিলে, কেন আমারে ফেলে, গেছিলে বিদেশ, দুই নয়ন যায় ভেসে চাচা আইছ কার ডালাসে তোর নবীজীর পুরী, তুফান মাঝে ভাসে। নবীজীর আল থানায় বাতি দিতে কেউ নাই ।

এই আধেলার নাড়ি- আমি একলা থাকি বাড়ি, যেমন কয়ানী থাকে পায়ে লাগায়ে বেড়ী, চাচা পথে চলতে পারিনে, ঘর দরজা ছাড়িনে, মা’র কোলে বসে কাঁদি, ধুলায় যায় গড়াগড়ি, কানাই কয়, ও হানিফ, কাজ কর তাড়াতাড়ি ।

(৫৫২)

হানেফ কয় ভাইর শোকেতে রে-ও আল্লা শোকে শরীর জ্বলে, বিদেশে লড়াই করি, বাঁচি মরি,আমার নাম হানেফ নূরী, আমি হজরত আলীর ছেলে । কারবালার হোসেন আলী, তোরা তাকে জবাই করেছিলি, আশি হাজার পীর ফেরেস্তা, কাঁদছে রে সকলি । আর কাঁদে আসমান জমিন পবন পানি, হায় আল্লাহ ফাতেমার কোলে রে, তোরা কেন করলি খালি ॥ হোসেনের মা কাঁদেরে, ও আল্লাহ হালছে বেহাল হয়ে, সেই দরদী মা জননী, খায় না দানা পানি, ফিরছে বানিবানি, ও আল্লাহ শোকে কাতর হয়ে, কানাই কয় কি হবে উপায়, আল্লাহ দিনতো গেল বয়ে |

(৫৫৩)

হানেফ বলে শোনরে সোনাভান, তুমি কিসে কর অভিমান, মান করলে হবা অপমান, তুমি শেরেকী ছাড়া, কলমা পড়, তৌবা করে হও মুসলমান, হরি বলা ক্ষান্ত কর গো, মুখেতে বল আল্লাহর নাম শাখা ভাংগ হাতে নেও চুড়ি, জলদি চল আমার বাড়ি, আশোক আগুনে জ্বলে পুড়ে মরি, তুমি স্বপ্ন যোগে দিয়েছ।

দেখা, মন প্রাণ করলে চুরি, কেন ঘটকের করলে অপমান, তা তুমি বল সোনাভান । তোমার বয়স হয়েছে বছর দশ কুড়ি, তুমি না ভজ কেন স্বোয়ামী, কিসে তোমার পরকাল হবে ভেবে না পাই তাও আমি পাগলা কানাই বলে, ওহে বিবি, হানেফ তোমার জানের জান, কেন তুমি করবে না বিয়ে গো তা তুমি কল সোনাবান

(৫৫৪)

তুই শোন ও সোনাবান, তোর কাটব দুটো কান, আজ মোরে দিতেছো বালে আমায় নেড়ে সন্তান, তোমারে করব বিয়ে, পূর্ণ হবে মনপ্রাণ, জেনে জাননা তুমি, এসেছে, তোমার পতি হানেফ পালোয়ান ।

তুমি হচ্ছ রাজার মেয়ে, এবার ফিরছ বনে বনে, কুল যাবে কলঙ্ক হবে, দেখে লোকে হেসে মরবে, আইবুড় সোমার মেয়ে, রেখেছে ঘরে পুষে, তোমাকে করব বিয়ে, তেল কাজল চোখে দিয়ে, ঐ মিসে মিসে তোমার দুইটা কানে দুল, খোপায় লাগাব দুই ফুল, তোমার গায়ে দিব অষ্ট অলংকার, পায়ে দিব চড়া জুতো, সিতায় দিব সীথে পাটি, গলায় দিব কামারাঙা বাহার, সরলে কর বিয়ে না করলে, অবশেষে করব তানা নানা, কানাই কয় ও সোনাভান আর করো না মানা |

(৫৫৫)

হানেফ কয় বারে বারে, শোন বিবি কই তোমারে, ফের আপন জোরে, পতি তুমি চেন নারে । খুশী মনে পড় কালমা, গোলমাল আর ক’রো না, দেখতে পাই চাঁদের কণা, গলে তোমার চিননী দানা, খেলাবো মক্কার খানা, ছেড়ে তোমায় যাব না ॥ নিতান্ত করবো বিয়ে, তেল হলুদ মাখো গিয়ে, দুই চোখে কাজল দিয়ে, এস গো শিগগীর করে, তেড়িবেড়ি কর যদি, তোমায় নেবরে চুল ধরে।

চুল ধরে বায় বসারে, শেষে কলমা পড়াব, তোমারে লয়ে যাব, ঐ মক্কার শহরে । হানেফের তালাশে, তিন বিবি পৌঁছিলেন গো, মল্লিকে আকর জয়গুণ আর সমেত্তভান, লন্ডভন্ড হলেন বিবি- পড়ল বুকের বসন খানা । হানেফ কয় দেখাও দেখি, বিয়ের কি আছে বাকী, তবু মারিল ঝাকি যবুতী প্রধান। কানাই কয় করলো বিয়ে, হানেফ পালোয়ান |

(৫৫৬)

বিয়ের মাজন তোমার বিয়ের আকিঞ্চল ॥ বিদায় কর ও সকিনা আমি এখন যাই, বেহেস্তের দরজা দেখতে পাই, বাপ চাচা সব দাড়িয়ে বলে, আয়রে কাসেম পানি পিলাই, প্রাণ বাঁচেনা পানি পিপাসায় কি করি উপায়। বেহেস্তের ময়দান পরে, বিবিরে তোমায় দেখতে পাই ॥ প্ৰাণ পাখি দিয়ে ফাঁকি হাওয়ায় মিশিল, সকিনা বেহুশ হইল, পতিরে করিয়া ধারণ জমিনে পড়িল ।

কাসেমের প্রিয় ঘোড়া প্রভুর সংগে প্রাণ হারাইল, কাসেমের সংগে ঘোড়া বেহেস্তে গেল । তুমি কেন গেলে না, ও সকিনা, বিবি রে, তোমার সময় বয়ে গেল ॥ ইমাম বংশ ধ্বংস হল দস্ত কারবালায়, কাফেরগণ পৌঁছিল ক্ষিমায়, সকিনার বস্ত্র হরণ করিবার আশায়, নিদ্রাগত ছিল বিবি কে যেন তার ঘুম ভায়গায়।

বেহেস্তে দাড়িয়ে কাসেম সকিনারে কয়-তোমার সতীত্ব নাম ঘুচল বিবিরে এখন কর উপায় । অচেতন ছিল বিবি হইল চেতন, দেখিল ঘিরেছে কাফেরগণ, পতির অস্ত্র করিল ধারণ। ছেড়ে গেছে হে প্রাণ নাথ, তেজ বুঝিব খপ্পরের বুকেতে আপন । পাগলা কানাই বলে মান্নাহরে এ সব তোমারই লিখন ।

(৫৫৭)

ছকিনা বলে আমার দিন গেল বিফলে। কেন মা দিছ বিয়ে আমায় শিশুকালে, এল বসন্ত কাল, উদয় হল শতকদল, ও যেদিন কাল ভ্রমর বসবে ভালে মধু খাবে কেমনে। ও বনের পাখি, তোরে আমি জোড়ায় জোড়ায় দেখি- আহারে দারুণ বিধি আমায় দিলা ফাঁকি। আমি কার সংগে দাড়াইব, কার সংগে কথা কর সারারাত জাগে থাকি ঘুম আসেনা দুই চোখি, কানাই কয় এসব কপালের ল্যাখি |

(৫৫৮)

নিশি প্রভাতকালে, ওরে বিনয় করে কাদে বিবি ছকিনা, ও তোরা নিষ্ঠুর পাষাণ, এই কালে ডুবে এল সোনার মদিনা। আমি ছিলাম নারী অবলা, তাতেও না দিছরে আল্লাহ, পাথর শোক জ্বালা, হায় আল্লাহতালা, এ নবীন বয়সের কালে আর কত সয় জ্বালা, আমি ছিলাম নারী অকুমারী, তখন না ছিলাম রে আমি ও কার প্রাণের বারি, পাগলা কানাই বলে, এ নবীন বয়সের কালে, স্বামী যায় ছাড়ি |

(৫৫৯)

ছাকিনা, ছাকিনা বলে-ও আমি তোরে ডাকি মা, ওগো মা ডাকলে শোন না, গগনেতে অধিক বেলা, তুমি কপাট খোল না, তোমার ডানের কপাল বামে হেলে, গেছে ছকিনা । চেয়ে দেখ সোনার মদিনা, খালি দুল দুল আ’লো ফিরে, ও কাশেম দেখি না । মা তোর নছিবেতে, এই না দুঃখ লেখেছে খোদায়, আর তুমি দাড়াবা কোথায়-পাগলা কানাই বলে-এক জ্বালাতে জ্বলে মরি, আর এক জ্বালা ছেমায় |

(৫৬০)

ও ছকিনা ডাক শোন না, ডাকি বারে বারে, তুমি যাও নিদ্রাগত, আমি জনমের মত, ছকিনা খুঁজলে নাগাল পাবানা আমারে । ও ছকিনা, পুরুষ থুয়ে মায়া যায় দরবারে, তিন দিন কার মায়া নাচে বাপের কাছে ঘুরে ঘুরে, বাপজান বিয়া দাও আমারে, ছকিনা সিতির সিদুর মোছ, নাকের বেসর খোল, যেন বাপজান মলো জহর খেয়ে, কারবালাতে রণে যায়ে পাগল কানাই বলে ও ছকিনা, সেই দশা তোমার হল ।

(৫৬১)

ছকিনা কয় ওগো আল্লা বাম হলি কেনে, আমার বিয়ের রাতে মল পতি এই ছিল কমে, কাল সকালে বরণ করে গয়না দিছ গায়, আজ কেন মোর সীতার সিদুর গয়না খোলা যায় । তোমার পতি গেছে মারা কারবালার রণে, সেই জন্যে তো গীতার সিদুর খুলে থুই ঘরে। কি কথা শুনাইলি মাধন আবার বল শুনি, ভিজান, কাঠে অগ্নি আমার জ্বালাইলি, আগে যদি জানতাম পতি সেই রণের খবর, যেন হবি কালি পরী ঘোড়া করিতাম সাধন

(৫৬২)

ডেকে বলে সাহার বানু ওঠ, ওঠ ওমা ছকিনা, মাই ঝির হোল এই দশা, কার সংগে খেলবারে পাশা, বুঝি তোমার প্রতি বাম হয়েছে, আল্লাহ পাক রব্বানা ফুল বিছানা বাসর ঘর, কাল ঘুমেতে একাবার, কোন চিজে তার এমনিরে আড়ি বাসর ঘরে হলিরে নাড়ি, তোমার প্রতি বাম হয়েছে সেই আল্লাহ পাক বারি বেউলার দশা তোমার হোল, নাকের বেসর খুলে প’ল, সীতির সিদুর মুছেরে ফেল, গায়ের গয়না খুলতে হোল, বিধির কলমে বুঝি, আর কালি ছিল না, পাগল কানাইর চোখের পানি, বাধ দিলেও তো মানে না ॥

(৫৬৩)

ছকিনা কেদে বলে মা, আমি ডাকি শোন না, আমার কপাল হয়েছে পোড়া, মোর অষ্ট অলংকার, সোনার হার, জলদি খোল বিছে তোড়া ॥ এক মাস বলতে দুই মাস হল, পতি না ফিরে এল, ফুলে ভারেতে গাছের ডাল, দুঃখে শোকে হেলে পল, পতি এসে ফুল তোল, বুঝি আমার দিন গেল ॥ বিচ্ছেদ জ্বালা সয়না প্রাণে, আমি উপায় কি করি, প্রাণের পতি এস তরায়, আমার গলায় দেও ছুরি, কানাই বলে, অসম কালে, শূন্য ইমাম পুরি ॥

(৫৬৪)

ছকিনা বলে ওগো মা, আমার প্রাণ আর বাচে না, দুঃখ সইতে না পারি, দুঃখের ঘরে বসে বসে, সুখের হার গাথি, ঐ দ্যাখ তেল থাকতে মোর, নিভে যায় বাতি, দিন থাকতে ডুবে যায় বেলা, আমার ঘরে নাই পতি ॥ বল মা এমন দশা কার- এই ভবের উপর, আমায় দিয়েছিলে বিয়ে, আমি নিদ্রায় ছিলাম, সোনার পালঙের পর শুয়ে, প্রাণাপতি মোর গেছে চলে, আমায় নারে কয়ে, এ নালিশ করি কার কাছে, আমার কপাল বাঁয় গেছে ।

বিয়ের রাতে নইজার গাট্টা, দিয়েছিলে মোর গায়, বসে ফুলের বিছানায়। অবিচারী রাজা এসে, মিথ্যে কুয়োপ দেয়, এমনি বিয়ে দিয়েছিলে, আপন বাপ ও মায়, মা তুমি ফিরে যাও, বনবাস দিয়ে আমায়, পাগলা কানাই বলে, এত দুঃখ কার বা প্রাণে সয় ॥

(৫৬৫)

সকিনা বলছে, বসন্ত ও আল্লাহ মোর মনের দুঃখ, আর বলব কত । জ্বালার উপর । জ্বালা, আর জ্বালাসনারে বসন্ত ॥ সয়না প্রাণ পতির জ্বালায় জ্বলতে আমার, শরীর হয় কালা, জ্বালার পর আর জ্বালাস নারে-ওরে কোকিলা । আমার প্রাণ পতি গেছিল রণে যেমন জলের টোপা পানা, আমি ঐ মত ভাসি, কানাই কয় বিয়ের শাড়ী, ফুল বিছানা সব হল বাসি ॥

(৫৬৬)

ওই ছকিনা কেঁদে বলে, ইহই কি ছিল কপালে, কার মোরে দিয়েছিলে বিয়ে, তোমরা সকলে, কার হয়েছে দুর্দশা এমন কালে ॥ ছেরেতে ছিহারা রল, প্রাণ পতি বিদেশে গেল, দুরন্ত কার বসন্ত সামনে এল, কি দিয়ে প্রাণ রাখিব তাই বল ॥ নারীকুলে জন্মরে আমার, কপাল গেছে বায়, না হল মোর বাণিজ্য সদায়, ঘাটের নৌকা ঘটে রল, আমার মন কাদে বৃথায়, পাগলা কানাই দুঃখ জানায়, পড়ে অকূল দরিয়ায় ॥

(৫৬৭)

ছখিনা কেদে বলে-আমার দিন গেল বিফলে, কি শোভা হয়েছিল, আমার বিয়ের দিনে, কাল ভ্রমর ফুলের শোভা, মধু খেত কমলে ॥ বনের যত পাখি, ফেরে জোড়ায় জোড়ায় দেখি, আমার এ সাধের জোড়া, কেন ভাংগিল বিধি, আমি কার হিল্লায় দাড়াব, কার সংগে কথা কব, এমন তো আর দেখি নাইরে, মা-ই ঝির হল এক সাথী ॥

আর যার পতি আছে রাজী, তার আখেরাতের পুজি, তার নৌকা যায় না মারা, হাল ছেড় না মাঝি, সেই ঘরে ডাকাত পড়ে, মালামাল সব নিল লুটে, আমার আশা নৈরাশা হ’ল, পালাল কেন কান্ডারী, পাগলা কানাই বলে, মনের দুঃখ, সইতে আর না পারি |

(৫৬৮)

শিশুকালে দিয়েছিলে বিয়ে ওমা জননী, এখন কেন খোল গার গহনা, তাই বল শুনি ॥ তোমার পতি গেছে মা মারা কারবালা রণে, সেই কারণে খুলি গার গহনা খুলে থুই ঘরে॥ আগে যদি জানতাম মা আমি, ঐ রণের খবর, হরিতালী পৌরন্দের ঘোড়া করিতাম সাজন, কাফের কেটে করিতাম বিনাশ, হাজার হাজার ॥ পতির আত্মা আমার আত্মা, এ সুতোয় গাথা, এখন কেন বলে না পতি, চাঁদ মুখের কথা ॥

মাখাল মাখাল বল মা তোমরা, ঐ মাখাল ভাল, নিজ হতে ভেংগেরে দেখ মাখাল অন্তরে কাল ॥ শোলা ডোবে পাথর ভাসে, এই কলিকালে, কানাই কয় ফুলের সৌরভ যায় মাখাল ফলে ॥

(৫৬৯)

কাসেম গেল ঘোড়ায় চড়ে বিবি ছকিনার ঠাই, বিদায় কর ও ছকিনা, আমি লড়াই করতে যাই। তোমর না দেখে মুখ, ফেটে যায় বুক, কেমন করে রণে যাই। যাব এজিদরে রণে বিবি ছাকিনা, এসে যেন পাই তোমায় তোমায় বিয়ে করেছিলাম – অতি যতনে, এখন এই ঘটল বিপদ তার প্রতিফল দিলাম বলে ।

ঐ পানির কারণ, সবাই মরণ, মারা গেছে সকলে, চাচাজি মোর হুকুম দেছে যেতে কারবালা ময়দানে । কাসেম কাদে কাতর হয়ে ধরে বিবির গলা, তোমার ঐ মুখের হাসি সর্বনাশী, বাসর ঘর করল উজালা, মনের সাধা না মিটিল, কানাই কয় সামনে মউত পেয়ালা ॥

(৫৭০)

ছকিনা বলে আমি, প্রাণ পতি দেখিনে, কি শোভা হয়েছিল রে-আমার বিয়ের দিনে । সেদিন আমার বয়ে যায়, প্রাণ পতি তুই ফিরে আয়, মনের সাধ মিটাই আমি, চাঁদ মুখের কথা শুনে ॥ শাহ্ নজর করে, পতি আর না চাইল ফিরে, পরের আশায় বেধে ঘর, সেই ঘর হল খালি, সেই ঘরে ডাকত পড়ে, নিয়েছে সব মার লুটে, আমার আশা নৈরাশ করি, পালালি কেন কান্ডারী ॥ বনের সকল পাখি, জোড়ায় জোড়ায় দেখি, জোড় ভেংগে দিয়েছে আমার, ওরে ও দারুণ বিধি, একলা ঘরে শুয়ে থাকি, ঘুম আসেনা দুই চোখী, কানাই কয় পতি বিনে, হবে তোমার কোন গতি |”

(৫৭১)

যাত্রা কালে কাসেম বলে, জন্মের মত তোমার কাছে, বিদায় বিবি ছকিনা, যদি বাচি এই রণে আসব মদিনা, খাব খানা দুই জনা ॥ ধরিয়ে কাসেমের পদ, ছকিনা করছে রোদন, পতি রণে যেও না, আমি করলাম কি গোনা, হায় গো রব্বানা, কোন হিল্লায় দাড়াবে বিবি ছকিনা । না শুনে সকিনার মানা, কাসেম রণে হয় রোয়ানা, কাসেম রণে মারা গেল, দুলদুলি এল মদিনা, কানাই বলে মোর হয়, তোমার কাসেম ঐ রণে মারা গেল ॥

(৫৭২)

কি কথা শোনালি ঘোড়া, খসে প’ল আমার জোড়া, আহাঃ পতি কর সাথী, থাকি যেয়ে একগোরে, আমি করলাম কি গোনা, হায় গো রব্বানা, কোন হিল্লায় দাড়াবে অভাগিনী ছকিনা ॥ দুলদুলি কয় ও ছকিনা, মিছে রোদন করো না, পতি ফিরে পাবানা, খোল বিবি তোমার গায়ের গহনা, কানাই বলে, কাতর হালে, ছকিনার দুঃখ সহেনা ॥

(৫৭৩)

শোনরে দুলদুলি, পৃষ্ঠে সোয়ার লয়ে গেলি, তুই খালি পৃষ্ঠে এলি, প্রাণের সখা হয় না দেখা, কোথায় কাসেম আলী ॥ বিধির একি বিবেচনা, আমার কোন সাধ মিটল না, মনের দুঃখ মনে বল, আরো রইল মনের বেদনা, প্রাণের পতি যুদ্ধে গেল, ফিরে তো আর এল না। বিয়ে হল আজকের নিশি, ছেড়ে গেল কাল শি গীতির সিন্দুর সীতেয় রল, না হইল বাসি, পাগলা কানাই বলে, যুদ্ধে গেলে, ছেড়ে তব প্রিয় দাসী |

(৫৭৪)

গা তোল দুখিনীর ম-খবর কতি আইছি আমার বনের কোকিলা। কাসেমের আপসোসে প্রাণ আর বাচে না ॥ কাল ঘুমে হয় চোখ অন্ধ, আখি মেলে কর নজর, রাত হয়ে যান ফজর, বাসার পাখি বাসায় গেল, ঐ দেখ তোরে করে খবর ॥ রাহু চণ্ডালে চন্দ্রগ্রহণ হয়, রমণীর ঐ শমনের খড়গ, গলায় তুলে দেয়। নীলমনি চাঁদ হইছি হারা, পাগল পারা হায়রে হায়, মনের ব্যথা যায় না বলা, পাগল কানাই কয়ে যায় ।

(৫৭৫)

ও কাদে নারী যুবতী, সুখের সময় ও বসন্ত ঘরে নাই পতি, অবলা নারীর প্রাণে এতই দুর্গতি, কেন এলিয়ে ও বসন্ত মোরে জ্বালাতি । একে মদনের জ্বালা, মাসে মাসে ঋতু বায়ু ঘটায় জ্বালা, ঐ দেখ বাসর ঘরে বসে কাদে, নারী অবলা, প্রাণ পতির তালাশে যাব শোনরে কোকিলা।

আমি মরি বিষ খেয়ে, ফাঁকি দিয়ে বিষ খেয়ে গেছেরে ছেড়ে, কাল আসি বলে গেছে ছেড়ে না এল ফিরে, চাতকিনীর মত রইলাম পথ পানে চেয়ে পাগলা কানাই বিচ্ছেদ জ্বালায়, জ্বলে দিবা নিশি, চোখের জলে ভাসি। আর কি পতি আসবে ফিরে, আমার বাসর ঘরে, জনম দুখিনী আমি, শুধু কাদব জনম ভরে |

(৫৭৬)

আরে ও এল বসন্ত, বসন্তের আমল ভারি, কোকিলার তহশীলদারী, মদনের জমিদারী, আরো হাকিম দুরন্ত, ঐ জ্বালাতে জ্বলে মরি, আমার প্রাণে সয় কত আরে ও পতি আয় ফিরে, আমারে করে বিয়ে, বিদেশে গেলি থুয়ে, বারেক না চাইলি ফিরে, পতি কি হবে গতি, সোতের শেওলা যেমন রে, পড়ে ভাসতেছে । আর সবে খেলে সুখের পাশা, পুরায়ে মনের আশা, আমার কি এমনি দশা, ঐ পতি বিনে, মনের দুঃখ বলব কারে, আল্লাহতালা সেই জানে, পাগলা কানাই তা বুঝবে কেমনে ।

(৫৭৭)

কাদে নারী যুবতী, সুখের সময় ও বসন্ত ঘরে নাই পতি, অবলা নারীর প্রাণে এতই দুর্গতি, কেন এলিরে ও বসন্ত মোরে জ্বালাতি । একেতো মদনে জ্বালায়ে- মাসে মাসে ঋতু বায়ু, আরো জ্বালা ঘটায়, বাসর ঘরে বসে কাদে, নারী অবলা প্রাণ পতির তালাশে যাব, শোনরে কোকিলা । আমি মরব বিষ খেয়ে, ফাকি দিয়ে করে বিয়ে, পাত গেছেরে ছেড়ে, কাল আসি বলে গেছে চলে, আর না এ ফিরে, চাতকিনীর মত আমি, রইলাম পথে পড়ে, পাগলা কানাই বলে, চাতকী যাসনে তুই উড়ে ।

(৫৭৮)

নিশি রাতে কোকিল কাদে, কাদে বিবি ছকিনা, কোথায় রইলে প্রাণের পতি, জানে বাচে আছ কিনা, মনের আগুন জ্বলে মনে, তারে নিভাই কেমনে, আজ বুঝি বিধি আমার বাম হয়েছে, আল্লাহ, কপালে কি আছে।

বাসর ঘরে এসে পতি, কথা কইল মেলা, থাক সতী আসব আমি, খেলব পাশা খেলা, সে কথা সব মিছে হল, বিয়ের রাতে পতি মোল, এমন দশা এ জগতে কার হয়েছে বল, ওমা, সতী নারীর একি দশা হোল ॥ কারে দেব এরূপ যৌবন, কারে নেব বুকে, চোখ ফাটে মোর পানি আসে, কথা নাইরে মুখে, আমার মত আর দুখিনী, কে আছে তাই বল শুনি, বিধির কলমে ওমা, কালি ছিল না, কানাই কয় কাসেমের আয়ু, আল্লাহ কেন দিল না ।

(৫৭৯)

দুলদুল এলো খালি পিঠে, চোখে ঝরে পানি, কাওয়া ডাকে কা-কা করে, খবর নাহি জানি, ছকিনা কয় মা-জননী, আমার দিনে হোল রজনী, সীতির সিদুর আমার মুছে গেল, প্রাণ পতি ছেড়ে গেল ॥ কত জনম পাপ করেছি, না জানি তার ঠিকানা, তা-না হলে পতি মরে, আমায় করে দিন-কানা, ভরা যৌবন কারে দেব, বুকের মাঝে কারে নেব, এমন বসন্তকালে পতি নাই ঘরে, বেচে না থেকে সে ক্যান্ মরে ॥ পাগলা কানাই পাগল হোল, প্রাণ বন্ধু বিনে, পাপের ফলে অসম্ কালে কেউ না তারে চিনে ।

(৫৮০)

পীরিত পীরিত সবে বলে, কানাই পীরিত জানে না, সখিনা করেছে পীরিত, বিচ্ছেদ জ্বালায় বাঁচে না, সতী নারী খাটি ছিল, কাচা চুলে পাক ধরিল, তবু সতী থেকে সতী মোল, অন্য পুরুষ নিল না ! আল্লাহ তারে পরখ করে দানের পরে আনে, দেয় মসিবত কত হরকত, কাটা বনে টানে, তবু নারী রল খাটি, বেটী নয়তো নরম মাটি, কারবালা কাহিনী যারে মানে ॥ ইহকালে না পা’লে স্বামী, মলে পাবে জগৎ-স্বামী, বুঝে দেখ কথা দামী, কানাই ভেবে কয় আরে ও হায় ।

(৫৮১)

ওরে শোন বলি বসন্ত, তোরে কই মনের মত, জ্বালার পর জ্বালা দিতেরে, ওরে করিরে মানা, আমার আশায় ছাই দিয়ে, ওরে কাল বসন্ত, ছেড়ে গেছে প্রাণ প্রিয়ে এর বিচার কে করে-এমন ডাকাতির সাথে রে, ওরে কেন দিল বিয়ে আমি বিয়ের সাজ পরিয়ে, ফুল বিছানায় অতি সুখে, আমি ছিলাম ঘুমায়ে, কাল হয়েছে নতুন বিয়ে রে-ওরে মোর পতি কেন মরে পাগলা কানাই বলে, অসম কালে, মোর দুঃখে নয়ন ঝরে |

(৫৮২)

যেদিন মোর বিয়া হোল, বিয়ার রাতে প্রাণ পতি বাসর ঘরে মল, কাল ঘুমে ধরল ঠেসে, দেখে না দেখলাম তারে ভালবেসে, মন আমার পাষাণ হয়ে রল ॥ দুই কাঠের যন্ত্রখানি, কোলে বসে বাজাও তুমি, বল খোদার ধ্বনি, যারে দিয়া জগৎ আলো, ঘুচে যায় মনের কালো, জলেতে আগুন হয় যেন পানি ॥ যেদিন চোর এলো ঘরে, পাড়ার লোক সব জেগে থেকে, কাপছে থরে থর, তবু রাত এক পহরা, সেও চোর তো না দেয় ধরা, সিঁধ কাটে আনন্দনগর পুরে, কানাইয়ের ব্যথা বুক জুড়ে |”

(৫৮৩)

আদম হতে দুনিয়া পয়দা করলেন মালেক সাঁই, একথা না বললে তো নয়, কথা বলে যাই সভায়, লোকে বলে পাগলা কানাইর বুদ্ধির নামায় ছাই । মক্কা শরীফ কে তৈয়ার করে বয়াতি মিস্ত্রীর নাম চাই ।

আদমকে বেহেস্তে রেখে, গন্ধম খাওয়াইল, বয়াতি তার মানে বল, কোথায় ছিল লাংগলের ফাল, তার কামার কে ছিল, গুরু হয়ে লাংগল কেবা টানে, বয়াতি তার মানে বল । কোরানেতে জেন্দা সাধু নাম আছে চার জনা, তোমরা সব কথা বলো না, আমি তাই করতেছি মানা, ফকির বৈষ্টম কেদে বলে, বয়াতি তার মানে কর না ।

(৫৮৪)

শোন বয়াতি একটি কথা শুধাই তোমারে, এক মৃতা নারীর গর্ভ হোল লেখা আছে শাস্ত্ররে, ওরে মৃতা মল মাটি দিল ছেলে হয় তার কব্বরে, শুনে দুরন্ত কথা প্রাণ কাপে ডরে, পাগলা কানাই বলে জহিরুদ্দী একথা পালি কোন দ্যাশে তিনটি ছেলে জন্ম নিয়ে গেল তিন দ্যাশে, দিবস কয়েক বাদে উহার মায়ের শরীর যায় পঁচে, সংবাদ পেয়ে আসল ধেয়ে বসল তার মার পাশে, পঁচা মাংস দেখে ওরা তিন জনা হাসে, কানাই বলে জহিরুদ্দী কথাটা বলছি প্রকাশে ॥

(৫৮৫)

ভবের পর এক সতী কন্যা পয়দা হয়েছে, চার দশকে চল্লিশ দিনে বিয়ে হয় তার সত্তুরে, তিন মাসে গর্ভ ধরে সেই না নারীর উদরে, তবু তো সে সতী কন্যা সতী নাম ধরে, উহার গতিকে নিয়া গর্ত হল, অসতী কে বলে তারে । এই যে সতী কন্যার পতি সে যে পুরুষ মন্দ নয়, পাগলা কানাই বলছে বেটা পণ্ডিতি করেন সভায়, দিনে খাটে ভূতের বেগার রাত্রিযোগে ছেলে হয়, মায়ের কোলে কাঞ্চা ছেলে যেমন দুগ্ধ খায়, ঐ রকম আওরতের কোলে পুরুষ সে রজনী পোহয় ।

তাতে যদি না বোঝারে যত অদভূত, স্বামী হয়ে গেল পেটে ভবে এসে খেলো দুধ, হারে নির্বুদ্ধি উল্টা চাষা তারাই বোঝে উল্টা বুঝ, নারীর জন্য খাটতে খাটতে পিট দিয়া বের হয় সূত, মায়াজালে মত্ত হয়ে পরকাল হারালী অবদ ।

(৫৮৬)

প্রথম পাগলের মনে কত কথা কয়, কথা উল্টে শোনা যায়, শোলা ডোবে পাথর ভাসেরে, পূর্ণিমার দিন অমাবস্যা হয়। পূর্ণিমার আলোক দেখে চক্ষু হয় কানা, আমি না পালাম সেই আলোর ঠিকানা, আমি কানার মত ঘুরিয়া বেড়াই বে, না জানলাম সেই পথের নিশানা ! পাঁচ ভক্ত নামাজের কথা বানদা লোকে কয়, হুকুম করেছেন খোদায়, ফজর, যোহর, আছর, মগরব, এশারে কোন ওক্ত তার আগে পয়দা হয় ॥

এই ধূয়ার অর্থ জিজ্ঞাস করলে, কথা না বললে তো নয়, ওরে মার বিয়ার দিন বাপের জন্মরে, সেই কথাটি সভায় বলতে হয় ॥

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৬

 

(৫৮৭)

ছিদামপুর গেরামে ছিলাম নীল দরিয়ার পরে, নীল দরিয়ার তুফান দেখে বাপের মস্তকে বলে, কৃষ্ণ কলি ছেদ করিয়ে রক্ত জরায় পড়ে, মায়ের গর্ভে ছিলে মায়ের গর্ভ যন্ত্রণা বিষম যন্ত্রণা, ভবে এসে রে মন সব গিয়াছ ভুলে, ভাইয়ের সুবাদে পিতারে মন করবে কার কাছে, বাপের শরীরের রামনা লোচন মার শরীরে আছে, স্ত্রীর গর্ভে পতির জন্য মা বলে ডাকতেছে, কোলে দুধ খাতেছে ॥

স্ত্রী যদি স্বামীকে বলে রে বাবা, এসে আমার দুগ্ধ খাবা, কানাই চাঁদ তাই বসে ভাবতেছে ॥ বিন্দু বাড়ির রাজ মিস্ত্রী মঠ তৈরি করেছে, বাতাসের সে বন্দী করে যে ভাবে রেখেছে, কথা কব কার কাছে, বিধির সব কাণ্ড দেখি অতি সুন্দর, কানাই তাই বসে ভাবতেছে ।

(৫৮৮)

কোন দিবসে রাত্র পয়দা কোন দিবসে দিনবাসী, কোন দিবসে চন্দ্র সূর্য কোন দিবসে মা খাকী, আবার পানির তলে আছে মানুষ সেই মানুষের আহার কি ? সেই পানি শুকাইয়া গেলে সেই মানুষের উপায় কি? দুইটি ডিম্বু ছয়টি কুসুম বার বাচ্চা শুনেছি, তাই পাগলা কানাই বলে বারে বারে ধূয়ার মানে কর বয়াতি।

(৫৮৯)

আমি বলবো কিরে একটি সাধুর কথা বলে যাই সভাতে, হেটে যেতে কত সাধু কোপিন নড়ে চড়ে, উজোল্যা মারে কৌপিন ছিড়ে মদনা পরা যায় মাঠেলে, কত এটকো সাধু পেটকো সাধু, পেটের জ্বালায় কত সাধু, পেটের জ্বালায় কলাল করে। আবার ক্ষিদে লাগলে খেতে বসে খাবার দ্রব্য কত আছে, লাল ম বলে লটক চোষে খাওয়াইয়া মন্দনা, তা থুয়ে মদন তো খায় নাইটানা, চিরদিন মদনা চোরার স্বভাব জানি, চুপে চুপে চুপ করে যায় কাম নদীর পানি, কাম।

নদীর ও কুষ্ঠ পানি মদনা খাইয়া করে বমি, শেষটায় হয় কলেরার বেরানী, পাগলা কানাই কয় কয়জন সাধু ভবের পরে আছে ? মদন তো নদার জলে ছ্যান করে না, ডুব পাড়ে মেঠেলে, আবার কত সাধু ফোটা তিলক করে, উপরে করে। তিলক মালা কাম জ্বালায় মদের মদেলা, সদায় হাট বাজারে ফেরে ॥

 

 

 

পাগলা কানাই এর গানের পর্ব ৭:

 

পাগলা কানাই এর গান

 

(৫৯০)

মুক্তি কিসে হবে গো জীবের ভক্তি বিহনে, ভক্তি হইছে অমূল্য ধন গুরুর কাছে লও গো জেনে, শুরু হয় জ্ঞানের দাতা, সে জানে মর্ম ব্যথা, গুরু বিনে আর কে জানে ? দেহ মন সপিলে, আমার মন পাইবে সেই দিনে, আরো তিন মনরে এক মন করা সামান্য নয়, সে বিষম লেঠা, এক মনের ফের ছয় পাহারি কেওড়া বাধায় মদন বেটা, তসুলদার হচ্ছে মদন অমূল্য ধন, হারে নিছে মালের কোঠা, মদনকে না চিনলে ঘুরবে না ফেরের কাটা, তাই পাগলা কানাই কয় ভবে এসে ওকি কাম করলি মন, তোমার এইভাবে দিন যাবে না, দিন থাকতে ভজরে গুরুত্ব চরণ |

(৫৯১)

আরও গুপ্ত কথা ভেংগে দিল সভায় এসে বয়াতি, এক জনের পাঁচটি মুণ্ডু কথার মানে কি ? আমি সে কথাটি তোমায় জিজ্ঞাসি। আরাক জনার ষোল মুণ্ডু সভায় ধুয়া গাও, না হলে পর দেশে চলে যাও । কত এলম ফাজেল ফকির দরবেশ বসে বসে ভাবছে তাই, কত কিতাব কোরান ভারত পুরাণ কথা মিথ্যা নয়। পাগলা কানাই বলছে কথার মানে চাই, না হলে ছাড়ব না তোমায় ॥

(৫৯২)

শোনরে মন তোরে বলি বাপের মস্তকে ছিলি, কাল রূপেতে রতি হয়ে মায়ের উদরে আসিনি, যখন ছিলি রক্তবরণ, সে সব কথা নাইরে স্মরণ, দেহ পয়দা করছে আল্লাহ ফিকিরে, ও মন শুয়ে ছিলি কোন শিওরে, সত্য করে বল দেশের হুজুরে । দেহ পয়দা মন বেদনা দেহ জরীপ করে ছয় জনা, এক বেটা কুয়ারী এসে সদায় বলে তাইরে না, আরাক তার কাছে বসে, সদায় বলে তাইরে এস, জেনে কি তা জান না ।

ঘুমালে বাহিরে জাগে কোন জনা, বয়াতি তাই কেন ভেংগে বল না, ঘুমালে বাহিরে জাগে কোন জনা ॥ পাও নাই সে দৌড়ে ফেরে, পাখা নাই উড়াল ছাড়ে, মুখ নাই সে আহার করে, শুনলাম কথা সন্ধানে, পাগল কানাই ভাই ভেবে বলে, মা যখন নানীর পেটে, আমি তখন ভাবের হাটে, কথা কালে পরে লাগে ধাধা, বুঝে দেখ অন্তরে, সে সব কথা লেখা আছে শাস্তরে |

(৫৯৩)

আশ্চর্য এক কথা শুনে বাঁচি না প্রাণে, আমি ভাবি রাতদিনে, তোমরা বিচার কর ভাই সাহেবরা বল তার মানে, তবে এক জনার জন্ম বুঝি না তারই মর্ম, আমার এক কর্ম দোষ গুণে রাত্রিদিনে দুইখানি পা আছে তার খাড়া, তারে ডাকলে নাই।

সাড়া, সে অপরের পায়ে করে যুদ্ধ ভেবে হই সারা, ছাড়েনা আপন জায়গা করে সে হেলাদোলা, দেখ ভাই এ কেমন ধারা তুমুল যুদ্ধের কালে তারে করায় পানাহার, দুই পায়ে একটি লোক তাহার, লম্বায় দেবী কাটার সেবী চারটি কান তার, রাত্রদিন ভাবছি বসে, না পেলাম তারই দিশে, চার পাশে বদনখানি তার ॥

যার সাথে করে যুদ্ধ নাই তার চেতন, কানাই কয় সে কথা কেমন, মরার সাথে করে যুদ্ধ বলছে পাগল অভাজন, একি বিপরীত কথা, অন্তরে লাগে ব্যথা, কার কাছে করি জিজ্ঞাসন ॥ চার যুগেতে সেই যে বীর এক নামে আসে রণে, তারে পূজা দেয় সর্বজনে, নাক আর চক্ষু কর্ণ বিধি তাকে দিলেন না কেনে, কে দিল তারই জন্ম, পেলাম না তারই মর্ম, আমার সেই কর্ম দোষগুণে ॥

(৫৯৪)

আজব এক শকশোর কথা ভাই, আমি সভায় বলে যাই, হস্ত পদ কর্ণমূল তার কিছুই নাই, শূন্যভরে হাওয়ায় লড়ে পবনে সে চলে যায়, ও তার বাতাস বিনে কোনই গতি নাই, মূর্খমতি আমি কানাই জিজ্ঞাসা করি তাই, তাই বলি সভায় খোদায় পয়দা না করে তাই ভবের পরে, ভারতে লেখে তারে, মস্তকে দুই শিংগা গাড়া দেখে ভয় করে, অংগে চারখানা বসন পরা সর্বদা থাকে, বিনে মুখে বাজায় বাশী,

ও তার বাশী বাজে কোন তারে ॥ শোন ওরে পালি দোহারগণ কথা করি জিজ্ঞাসন, সেই শকশো চলে যখন, শূন্যভরে হাওয়ায় নড়ে বাউলি পাড়ে কি কারণ, বয়াতি বল তাই এখন |

(৫৯৫)

আজব এক শকশো পয়দা দেখি ভবের পরে, উবদা ভাবে জন্ম বেটার শুনি কথা শান্তরে, সোয়া দুই চোখ পৌনে তিন কান বিধি দিলেন তারে, পাঁচ মাথা তার ঠ্যাং আড়াই খান, চার লেংগুর একই সমান দেখে ভয় করে ॥ ঠেলে তাকে নড়ান যায় না উড়ে যায় বাতাসে, খুঁজলে নাগাল পাওয়া যায় না, আপন মনে আসে মনির কুলে জন্ম বেটার, আপন মনির ঔরসে, কত যোগী লোকের যোগ ভংগ হয়, শুনে ভয় পাইবে তরাশে ।

এক মাসে তিনবার মরে ফিরে সে জেন্দা হয়, মনির জোরে বেঁচে আসে, ফিরে রাজ সভায়, সবে বলে পাগলা কানাই, সভায় এসে মিথ্যা কয়, কত মানুষ দেখে ভয় করে না, রাত্রিদিন সে সদরেতে রয় |

(৫৯৬)

নতুন এক ধূয়ার কথা কি বলিব আর, পাগলা কানাই বাধছে ধুয়া, মানে করে? লেও তাহার, আধ হাত ছেলের দেড়হাত দাড়ি, কে দেখেছে ভবের পর, শাস্ত্রে তাকে পাওয়া যায় না, কেবল তার গল্প করা সার ।

আর একটা দেবতারে ভাই, এই ভব মাঝে, ছেলে হয়ে মাতা মরে শুনেছি গুরুর কাছে, আর একটা শকশ্যে রে ভাই, সোয়াশ পা তার আছে, মাথার উপর শিং দুটি তার বিধি দিয়াছে, গা দিয়া তার চেংটা গন্ধ, জন্ম তার উড়া বাতাসে ॥ আর একটা শকশোরে ভাই দশ হস্ত তশ, আগা পাছার নাই ঠিকানা পাগড়ি বাঁধা মাথার পর, মধ্যে নায়ে কপাটি মেরে বসে আছে সদাগর, নীচে কুঠুরী কাটা দেখতে কি বাহার, কোন শকশো সেও কথা কও বয়াতি, বল তাই সভারই মাঝার ।

(৫৯৭)

ভবের পর এক শকশো পয়দা খোদার পয়দা নয়কো সে, আসমান আর জমিন না ছিল পবন পানি, ত্রিভুবন জুড়ে রয়েছে, পাগলা কানাইর বাড়ি তার কাছে। মহম্মদের নয়কো উম্মত, আদমের নয়কো বুনিয়াদ, ভবের পরে ঝুট মুট খেলায় সে। ওরে ভাই সকলরে পাগলা কানাই কয়ে যায়, কত ফকির বৈষ্ণব আলেম ফাজেল, পড়ে গেছে তার ঠেলায়-গেল চারিটা কাল, হয়ে গেল সে বেহাল, কারো পরকাল হল না, পাগলা কানাই মিথ্যা কয় না ।

শোন ভাই আমার তো বুদ্ধি জ্ঞান কিছুই নাই। দশ দুনিয়া যেদিন পয়দা, সেই শকশো সেই দিন পয়দা, বেদ পুরাণে খুঁজলে পাবা না, ওরে ভাই সকলরে তার সন্ধান করলে না, অনুসন্ধানে থাকলের পরে সেতো কারো ছাড়বে না। যাবে বুদ্ধি, হবে সব রসাতল, এক শকশো বসে আছে গাছের তল ॥

(৫৯৮)

শুনে আজব কথা প্রাণে ব্যথা ভেবে আমি হই অবাক, এই ভবের পর এক শকশো পয়দা হয়েছে তার গাধার মত ডাক, হরিণের মত চলে, বাঘের মত মারে লাফ। নাই জমিনে নাই পাতালে, যেদাকে যায় সেই দিক চলে, তাই পাগলা কানাই বলে ॥ ভাইরে তোরা মাস পাঁচ ছয়গে থাক, এক ফারসী কথার মানে করে বলে দাও আমারে, কেউ বলে ও ঝুটা কথা আমি ভেবে মরি সেই গোলে, সে কি পরকাল পাবে পাগল কানাই তাই বলে ॥

শোন ওরে ভাই সকলরা আলেমের গুণ কই কারে, চারি রঙের এক জানোয়ার রয়েছে ভবের পরে। ত্রিভুবন করতেছে অসার আসি ছয় মাস অন্তর, আমি উম্মি হয়ে কয়ে গেলাম বুঝে দেখ তাই। সকলে, দলিল কি মিথ্যা হবে ঈমান তার বৃথা যাবে, পাগলা কানাই তাই বলে ।

(৫৯৯)

শোন ভাই সকলরে একটি মজার কথা পড়েছে মনে, আবার এক বেটাকে ঠেসে ধরে তার উপরে তিন বিটি বসে, এই কাল কাটাইল হাসে রসে ঐ চারজন ভবেতে আইসে, তিন বিটি জগৎ মজাল, তাদের চারজন কেউ কম না, তার একজন মলি শোন বলি, এই দেহ খাড়া রবে না,

সে মনুষ্য ভাই যে তলে পড়ে গোড়গুড় পেড়ে উঠতে পারল না, উঠতে পারলি শোন বলি ঐ তিন বিটির প্রাণ বাঁচত না, চিরদিন বিবাদ করে সেই যে চারজনা, তবু তার উপিত গেল না । যেদিন ভাংবে পীরিত হইবে বিপরীত, সুখ সাগরে সরত বকে না, পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে, কাল কাটাল হাসে রসে সেই চারজন এসে।

(৬০০)

পাগলা কানাই বাধায় লড়াই ছোয়াল করে আসরে, কথা বোঝ বেশ করে, অবিয়েত্ব কেবা বল ভাবের পরে ছিল, কন্যার বিয়ে নারে হল, খোদা তালায় কি মোহিমা, পুত্র পেটে এল ॥ জন্মালো কারবা নাতি ছেলে, ও বয়াতি সভায় বল, তা নইলে বিপদ হবে বাড়বে কত গোল, কারবালাতে বিয়ের রাতে, কেবা রণ করিতে গেল !

তুই শোনরে কালাচান, মুর্শীদের ঠাই জান, কোন রোজেতে দীনের নবী, বয়েত হয়ে গেল, ছালাম কার কাছে জানাল, এই দেহে সেই মিছরী উলা, দানা যে বসিল, আর ভিয়ান কে করিল, কোন যোগ করল বরণ, কোন যোগে ফুল ফুটিল ॥

(৬০১)

এক মহলায় চারজন বসে সদাই করে পরামিশে, তারা প্রীতিতে মজে শুনতে পাই মুর্শীদের মুখে, সদাই হয় ঝগড়া কেজে, শুনতে পাই অসম্ভব কথা, অংগে কারো নাইকো ব্যথা, চারজন তারা নবীন যুবতী, ভাইরে আমার ভয় করে কতি ॥

তিন জন মেয়ে একজন পুরুষ, জনম ভরে আছে শুয়ে প্রীতিতে মজে, আবার ধরে ঠেসে কাদে বসে, মিনষেরে মেরে ফেলতে চায়, কয়ে যায় কানাই পাগল, বিচার কর ও ভাই সকল, কতজন হাসতেছে সভায় ভাইরে সেত ভণ্ড কথা নয় ॥ ড খণ্ড আছে জুড়ে, মাগী ভাল মিনষে কুড়ে, শাস্ত্রেতে কয়, ওরে শাস্ত্রেতে কয়, মাগীর ওতে মিনষে থাকে, কইতে কথা ভয় যে লাগে, কথা ভেংগে বল, অর্থ যেন হয় ।

(৬০২)

পাগলা কানাই বলে যার কপালে, যা লিখেছে বিধাতা, ব্যোমে আলো, নারোদ কালো, কাদলে কি কভু মিটবে তা, সকলই ললাট-লেখা যার ভাগ্যেতে যা ॥ তার সাক্ষী দেখ শ্রীরাম লক্ষণ, ওরে ঠাকুর ত্রৈলক্ষের ঐ নাথ, রাজা হবে রাজ্য পাবে, পুরাইবে সব মানরে আশ, রাণী কৈ কেয়ীর ঐ পুড়া মনে, তাদের করল সর্বনাশ,

দেখরে মা হয়ে পরাল বাকল, তাদের পাঠাইল বনবাস | চেয়ে দেখ মমিন ভাই, এ ভবে আর কেউ কারো নয়, তুমি জোড়ের ভাইকে নিন্দা কর, মন্দ ছন্দ কতই কও, শেষ কালেতে বিধির হাতে, নিদান কালে যেতে হয় ।

(৬০৩)

এসে এই পূর্ব দেশে কানাই তাই ভাবছে বসে, কতজন আমার সংগে দিতে চায় পাল্লা, ছটাক খানেক জারি লিখে তাল জানে না এক জাল্লা । একান্ত না ছাড়িলে শোন বলি-বেশ, বেশ, গুয়োর খোলা হাতে করে বলে, একখান খুঞ্জরীর তালা কয় ধানেতে দেহের গঠন সেই কথাটি আমায় বল, কয় ধানে হোল রতি, কয় খানে দেহ স্থিতি, কয় ধানে দীন বন্ধু গড়েছেন চক্ষু তুই বলে দিবি ॥ কয় ধানেতে কানাই বলে, বেশ-বেশ, আমার ধূয়োর উত্তর না দিয়ে যদি যাও, অপমান হবিরে তুই বলছি এখন তাও

(৬০৪)

কানাই ভাই বলে গেছে, পড়েছি কঠিন এক বিচারে, ভাবছি বসে মনে মনে, ইহার অর্থ কে বইতে পারে, স্বোয়ামী রইল ঘরে স্ত্রী ঐ সে উদরে মেয়ে কি এমনি সতী, নাইক পতি, মান্য তার করে বসুমতি, রূপে করে জগৎ আলো, পুরুষের পেটে গর্ভ হল, কেবা তার গর্ভে ছিল, তা হবে তোমার ক্ষতি ॥

কালিদাস পণ্ডিতে কয়, কথা শুনে লাগে ভয়, প্রাণ কাদে ডরে, এই কথার মানে কইতে পারলে, আমি উস্তাদ বলি তারে, অসম্ভব এই কথা শুনে বেড়াচ্ছি আকাশ পাতাল ঘুরে, তুমি যেমন সর্বগুণি ইহার অর্থ কও দিকি শুনি, বলব কি এর অর্থ নাহি জানি, কথা কয়ে যায় বালুক মুনি ॥

(৬০৫)

এক মহলে চারজন বসে সদায় করে পরামিশে, পীরিতি মজে, ওসে ধর্ম পীরিতি- শুনতে পাই মুর্শীদের মুখে, ভবে কারো নাই পতি । কেউ কারো নয় ছাড়াছাড়ি, চারজন তারা একই বাড়ি, আগাগোড়া ঠিক পাইনে খুজে, ওরে ভাইরে তোমরা তাই দেখ বুঝে ॥

শুনতে পাই অসম্ভব কথা, অংগে কারো নাইক ব্যথা, চারজন তারা নবীন যুবতী, ওরে ভাইরে-আমার ভয় করে কতি ॥ ভণ্ডখণ্ড আছে জুড়ে, মাগী ভাল মিনসে কুড়ে, শাস্ত্রেতে কয়। ধরে ঠেসে কাদে বসে, মিনশেরে মেরে ফেলতে চায়, কয়ে যায় কানাই পাগল, বিচার কর ও ভাই সকল, কতজন হাসতেছে সভায়, ওরে ভাইরে এতো ভন্ড কথা নয় ॥

(৬০৬)

হাসতে হাসতে সভায় এসে ভাই, আমি ঠেকলাম বিষম দায়, এক নারী ভবের পরে রাত্র দিন বিরাজ করে, সে কথা শুনবা নাকি তাই, বার চক্ষু তিরিশ হস্ত-তার পৃষ্ঠে ষাট মাথা, বর্তমান কথা, দিন গেলি হয় দুই দুই ছেলে, ডাকতেছে মা বোল বলে, বিধাতার ক্ষমতা ॥

সেই যে নারীর ছয়জন পতি ভাই, তারা আছে ভবের পর, আমি বলি এই সভায়, এক জনার চক্ষু কানা, একজন কানে শোনে না, আর একজন বোবারই মতন, কেহই ল্যাংড়া কেহই খোড়া, আরাক জন কালেরই মতন, এই রকম ছয়জন, ছয় জনারই ছয় নাম আছে, বলি এই দশের কাছে, শুনতে চাই এখন ॥

সেই যে নারীর ছেলে হল ভাই, এসে ভবের পর আমি বলি এই সভায়, ছেলের নাম কাচা সোনা কি দিব ছেলের তুলনা, সে ছেলে জগৎ মহিমান, কানাই কয় ওছিরদ্দি, তোর যেমন কাঁচা বুদ্দি, ভাংগিস নে লোকের কাছে, তুই অনেক দিন যাবি বেচে ॥

(৬০৭)

আরজ করি দশের কাছে, বলতে মোর ভয় করে, না বললে লোকে শোনে না । সেই ভয়ে মরি । দৈবযোগে অনুরাগে ঢেকীর বাগে আজমতপুরী, দেখলাম ফিরে খালের ধারে, তিন নাগর এক নাগরী, বলব কি তার গুণের কথা আমি বলতে না।

পারি ॥ সেই যুবতী উপপতি রাখে পতি ষোলজন, কারো রাখে মুখের কথায়, কারো দিয়ে থাকে মন, বলব কি ভাই তাদের দাড়া ভারত ছাড়া ষোলজন, তাদের নাই হস্তপদ চক্ষু কর্ণ, নাইক তাদের চাদ বদন, পাগলা কানাই মিথ্যা না কয়, সত্য মুর্শীদের বচন ॥ মাগী থাকে পরম সুখে মিনষের পেটে বাচ্চা হয়, বাচ্চা হলি শোন বলি বিটিরা তাই খায়, সেই যে বাচ্চা খেয়ে ফেলে তিন বিটি তিন দেশে যায়, মিনষে কুড়ে ভিটে জুড়ে, পড়ে থাকে সর্বদায়, এমন ঠ্যাকর উল্টো কথা তোমরা শুনেছ কোথায় ॥

(৬০৮)

গান করতে গেছিলাম ভাই, পাবনা জেলাতে, পূর্বে এক ভোড়ো বাংগাল, বাধাল ভারি গোলমাল, অস্থির হলাম আমি তাহার ছলের ঠেলাতে, ভাইরে যা জিজ্ঞাসে, আমি কয়ে যায় সব হেলাতে ॥ অবশেষে আমি ধরি, বল বয়াতি জিজ্ঞাস করি, খোদার ছোট নবীর বড় কে এই দুনিয়ায় সবার কাছে, মূল্যবান সে, তুমি আমি তার বিহনে আধার দেখি দিবসে, ভাইরে আমার কইতে ভয় আসে ।

আঠার হাজার আল্লাহর আলম পয়দা করে মালেক সাই, শুনি তখন কিছুই নাই । পয়দাকারী কোথায় ছিল, কারে সে সাথে নিল, পাগলা কানাই জানতে চায়, কথা না বললেও তো নয়, কথা শুনে ভড়ো বাংগাল কয়ে যায় আথাল পাথাল, তাতে কি ছলের জবাব হয় |

(৬০৯)

আদমে হাওয়া পয়দা গঠেছে আপিনি খোদা, সে কথা হাদিছে জান, মেটে ছবি দেখতে খুব বল তার জোড়া হল কেমন, পার ধরে তাই শোন, জানলে শুনলে যোগ সাধনে পাবি রত্ন ধন, যদি থাকে তোর মন আঠার চিজে ওজুদ পয়দা, কোরানে শুনতে পাই, মাতা পিতার আট চিজ আছে, শুনি মুর্শীদের ঠাই সে চিজের তুলনা না হয়, সরকারীতে দশ চিজ আছে-নাম জানিনে শুনতে পাই, চিনেনে মন তাই, কোন চিজেতে কি কাম করে শুনি এই ওজুদ মাঝারে, তাই শুনলে হবা পার ॥

নাম কাম দুটি কথা দরবেশ লোকে কয়, বারাম খানায় আরাম করে মহা মন্ত্রণায়, রাছুল তাহার নামটি আবার চেনা বড় দায়, তাই চিনবে বলে দলে মন-কেউ হতেছে ফকির, কতজন করতেছে ফিকির, ছেতারাতে তার লাগায়ে দম কষে ছাড়ে জিকির, মনটা করে স্থির, তাই ভাবে কানাই ভবের পরে ঠিক বুঝে মার তীর ॥

(৬১০)

শুনে বয়াতির কথা, ঘোরে মাথা, এ কথা কই বা কারে, বুঝলে তো বোঝে নারে, কোন দেবতার বাইশ মাথা, জিজ্ঞাসি সামান্য কথা, সব দেবতা বড় বলে, চার যুগেই মানে তারে, আগুনে পয়দা নয় সে বেচে থাকে অঙ্গারে ॥ সেই দেবতা ধরায় এসে করলরে ভাই প্রেম প্রকাশ, যুগোল পীরিত করে মিটে না আশা, বলি সে কৃষ্ণ নহে, ভোলা মহেশ্বর নহে, দুর্গাকালী কিছুই নয়।

সে যে কারো ভাই কারো পিতা, কারো হয় বন্ধু মিতা, সে কারো করে ভাল কারো করে সর্বনাশ সেই দেবতা না থাকিলে দুনিয়া পয়দা হোত না, মোদের দুঃখ কষ্ট রত না, কয়ে যায় কানাই পাগল, বিচার কর বয়াতি সকল, না পারলে মারব শাবল দাতগুলো আর রাখব না ॥

(৬১১)

গুরুজীর অসম্ভব লীলে সে কথা আছে দলিলে, এক বেজো নারীর নাইক স্বামী সাড়ে অষ্ট গুণ্ডা ছেলে, দিয়ে ছাফাই গুরু মহাশয় সেই কথা সভায় যাও বলে সে কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়, তাইতো বলি এই সভায়, দাদা যখন ছিল মার পেটে, বাপজান তথা কথা কয় । আমার বয়স হল দেখ গুরুজী বৎসর আষ্টেক নয় । সে কথা বিশ্বাযোগ্য নয়, সে কমা পাগলা কানাই কয়, কয় রতিতে আসমান জমিন, কয় রতিতে রাত-দিন হয়, কয় রতিতে দুনিয়ার গঠন, তিনি বসে গঠলেন কোন জাগায় |

(৬১২)

প্রেম বাজারে প্রেমের হাটে মন চল চল, সাধ্য সাধন কর শুরুর চরণ ধ জুয়াচোরের সংগ লয়ে কেন ঘুরে মর, এই মানুষে আছে মানুষ গো-ভাৱে সাধন বলে ধর । অনুরাগে রাগের ঘরে রাগে করে ভর, ওসে একলা একেশ্বর, রাগের উপর, রাগ হইতে পাক হইল, হইল চার কাল, পাগল কানাই বলে রে ভাই হও সামাল । বার মাসে বার চন্দ্রের অমাবশ্যা হয়, তা পণ্ডিত লোকে কয়, কোরানে শুনতে পাই, গুণে পড়ে আলেম লোক সব, ব্যক্ত হয়ে যায়, সূর্যের অমাবশ্যা বল কোন দিবসে হয় ॥

(৬১৩)

আজব কথা আমি শুনি শুরু মলে ধড়া পরি, স্ত্রী মরলে গৃহ শূন্য দলিলেতে তাই শুনি, বুঝাইলে বুঝতে পারি, না বললে অজ্ঞান আছি ॥ এক নারীর ছেলে কোলে, বোবা ছেলে কথা বলে, মৃত হয়ে দুলছে কোলে। ছয় সতীনের সেই ছেলে, চোষট্টি দিন ছিল সেই ছেলে, সেই যে ছেলে ভবে এসে, বাবা বলে ডাকবে কারে 1 পৌষ মাসে হয় পৌষ শশী, মাঘ মাসে হয় একাদশী, সেই যে ছেলে সর্বনাশী, কানাই বলে হাসিখুশী, সেই যে ছেলে ভালবাসি, আমি অতি বুড়ো বয়াতি, আর তো নাই স্মরণ শক্তি

(৬১৪)

ইদু মোল্লা করি পাল্লা তোমার সংগেতে, এক তারিখে গাওনা করতে যাই তোর গাঁয়েতে, আজব কথা শুনি হেথা, শুনি লোকের মুখেতে। কথা কই দশের কাছে মোটা দশটি গান লয়েছে, বলে যায় দেশের কাছে শুনতে মনের বাসনা আছে এক চন্ডাল বেটা শুয়ার রাখে হন্নের বিলেতে, আচম্বিতে চব্বিশ শুয়োর মরে প্রত্যেক দিনেতে, একিৎ মনে মানৎ করে যেয়ে খোদার শরেতে, শুক্রবারের দিনেতে, ব্যাধি হল সবই ভাল খোদার হুকুম মতে ॥

বড় একটা শুয়োর ধরে খোদার ঘরে আনিল, খাবা কিংবা ফেলে দিবা সেও কথাটি আমায় বল, নইলে বাধবে কল, হাজত মান্য যত আসে, মোল্লারা খায় সবি সে, পাগলা কানাই ধানাই পানাই কেবল চোখে দেখতেছে ৷

 

পাগলা কানাই এর গান

 

(৬১৫)

কয়ে যায় পাগলা কানাই, বয়াতি বলি তোমায়, দ্রেপাড়া ছাড়িয়ে আমি আজ এসেছি হেথায়, এসে হাউলে গ্রামে রইলাম বসে, ভোলাই শেখের বারান্দায়, আমি এক ছোয়াল বেড়ে যাই, প্রিয় সে ছওয়ালের জবাব চাই ॥

পুরুষের স্তনে কেন দুগ্ধ জমায় না, কোন পুরুষের তিনটি ছেলে, তাহাও বলিবা, তিন ছেলে সংগে লয়ে ভবের পরে, এক মহাপুরুষ বেড়াই ঘুরে, কি নাম তাহার কোথায় রে ঘর-জানিনে বয়াতি বল আমারে । আওরতের মুখে কেন দাড়ি জন্মায় না, সেও কথাটি শুনবো ভাল মনের বাসনা, বল তাই রাজ আসরে প্রকাশ করে, করে একটা বর্ণনা । ভাই তোমায় অল্পে ছাড়বা না

(৬১৬)

ভাইরে এক আশ্চর্য কথা শুনে সদায় আমি ভাবিতেছি, ভাবছি বসে যোগ সাধনে ঘুম আসেনা দুই চোখী, বসে বসে ভাবি, চার মাসে মেয়ে অষ্ট মাস হয় গর্ভবতী, তার কি প্রকারে হয় সন্তানাদি ॥

ভাইরে ভাই আর একটা কথা, তোমায় বলে যাই, গানের সন্ধান জেনে সব করিবা, বিচার করবে দশজনা, তোমায় আমি তাই বলি, পারব না এর জব দিতি, হার মেনে ভাই গান গাওয়াতে দাও ইতি ॥ কোন দেবতা পেটে খায় পিঠে হাগে, চলে ভারি অনুরাগে, দুদিন পরে কাজ থাকে না, আখাতে জ্বলে সে না, পাগলা কানাই সভায় জানাই ভাইরে, বয়াতির কাছে শুনে নেনা

(৬১৭)

আজব এক কথা আমি বলি সবাকারে, মাতা ছাড়া ছেলে হল এই ভব সংসারে, জন্মায়ে পয়গম্বারী করে, বাপের ফরজন্দে ছেলে মায়ের উদরে নয় সে, জন্মায় কি প্রকারে ॥

একশত চল্লিশ দিনে সেই ছেলে পয়দা হলো, ছেলের পিতা ছেলের নামটি কিবা রেখে ছিল, কে বা তার বিয়ে দিয়েছিল, কে বা তার কলমা পড়িয়েছিল, পাগলা কানাই ভেবে হত পেলাম না অর্থ, তবু কথা তো যথার্থ দিনে দিনে সেই যে ছেলে প্রতিপালন হল, সাড়ে চার মাসে দেহের গঠন শুরুর কৃপায় হল, শাস্ত্র মত বলবা কথা, শুনবে সকল লোকে, ধন্য ধন্য করবে বয়াতিকে ।

(৬১৮)

আজব এক কথা আমি শুনলাম এই আসরে এসে, মাতা ছাড়া ছেলে পয়দা শুনি নাইরে কারো কাছে, সে কথার জবাব দিব, প্রাণ জুড়াব অর্থ খুলে বলব দশের কাছে । হাওয়া বিবির গোস্বা দেখে আদমের বীজ টলে গেল, দর্প করে হাওয়া শিশির মধ্যে পুরে থুল, একশত চল্লিশ দিনে শিশির মধ্যে ছেলে হল, আজাজিল এসে ভবে বিয়ে দিয়ে, শিশ পয়গম্বর নাম রাখিল।

হাবিল কাবিল দুটি সন্তান হাওয়া বিবির উদরে হল দর্প করে হাওয়া বিবি আদমকে সে জানাইল, আবার এই সেকম ছাড়া ছেলে পয়দা, কোথায় হইতে পারে বল, পাগলা কানাই বলে ছুঁয়োর উত্তর এইতো হয়ে গেল |

(৬১৯)

শোন শোন ভাই সকলরা সভার মাঝে ব’লে যাই ঐ বয়াতি কয় ওর ছলের জবাব করা কোন কষ্ট নয়, ওরে বিনা পতি গৰ্ভস্থিতি কোন যে নারী হ জানরে নিশ্চয়, মৌলানা সাহেবের বেটী তিনার কন্যা হয়।

আমি জানাই এই সভায় ॥ মনসুর উল্লা ফকির ছিল, তারে পুড়িয়ে করল চাই, আবার দরিয়ায় ভাসায়, মৌলানা হিসাবের দিনে শিশেই পুরে লয়, মৌলানা সাহেবের বেটি, নামাজ পড়তে যায়, ঘরে আওয়াজ শুনতে পায়, আনাল হক নামটি শিশেই করতেছে সদাই, সেই যে শিশির ছবক খুলে দেয়, নারী গর্ভস্থিতি হয়, ও তা পাগলা কানাই কয় ॥

সেই যে দেশে খবর গেল, মৌলানা খবর  পেল, মহালে এল, ছেলে  পেলে যত ছিল জংগলে দিল, শামস্  উদ্দীন নামটি ছেলে জগতে রাখিল, তারে দুগ্ধ না দিল, ওসে ছওয়ালে হল ॥

(৬২০)

ভবের পর একি রে ভাই আজব ঘটনা, পানির তলে এক দেবতা থাকে, কানাই কয় তারে কেউ চিনে কেউ চিনে না, মরা হয়ে তাজা আহার ধ’রে খাচ্ছে সেই জনা, মার্গ দিয়া বাহ্য ফেরে চলতে পারে না, সে বাহ্য খাচ্ছে লোকে তাতে কেউ ঘিন্না করে না, সমস্ত শরীর রে ভাই ঝাকড়া কাটা তার, রাত দিনে সে আহার করে পেট ভরে না সে বা কার ॥ আর একটি শকশোরে ভাই শিং দুটি তার মাথার পর, হাত পা না নড়ে চড়ে দেখতে ভয়ংকর যোগী সাধু হয়ে ভীতু তারা সব ভাবছে নিরন্তর । পানির তলে দিনদেবতা থাকে যে সদাই, কোন দেবতার কি নামটি হয়, বয়াতি বল চাঁদ সভায় ॥

(৬২১)

সভায় এসে ভাই বন্দনা তাহার শুনতে কথা চমৎকার, সভায় যে জন পন্ডিত থাক বিচার কর এই কথার, চার পিঠ হাজার মাথা কয়ে যাই তাহার কথা, হস্ত আর পদ নাইরে কেবল তার পেটটি সার । দেখলাম ভবের পার ভরে উল্টো গঠন তার, শুনতে কথা ভয়ংকর-পেটে নাই তার নাড়িভুঁড়ি, এক নাড়ী তার মাথার পর, মুখ থাকতে চোখ দিয়ে খায়, সবে অন্ন তুলে দেয়, মুখ দিয়ে পায়খানা করে, তিনশত শ্রীচরণ তার ।

বাতাসে সে জন্ম পায় বলে পাগলা কানাই, নব সমুদ্রের পারে বার মাস বসত করে, চার অক্ষরে নামটি তার লোকে করে উপহাস, হেঁটে যায় ডানে বাঁয় ছালাম জানাই তিনার পায়

(৬২২)

বুড়ো বয়সে ভবে এসে শুনলাম এক মজার কথা, শুনে আমার লেগেছে ধাঁধা, মরাকে ভাই জেন্দা করে বেশ বেটা বাহবা ক্ষমতা, মাকে ভাই জেন্দা করে জীব জানোয়ার খায় সে ধরে, দেখে প্রাণ কাঁপে ডরে। ও তার সত্তর হাজার মাথা- খানিক সে ভাসে এসে খানিক হয় জেন্দা গোল ক’রো না ভাই সকলরা আর এক কথা মনে হল, হস্ত নাই সত্তর পদ তার ছিল, ষাট শ ছিল দত্ত, আমি পাইনে তাহার অন্ত।

কি কর সে ছলের কথা সত্তর হাজার ছিল মাথা, এক এক মার সংগে আবার সত্তর হাজার মুখ ছিল, চার শো নব্বই কোটি মুখ কোন শকশের ছিল ॥ কোরানেতে আছে লেখা মিথ্যা কথা নয়, বিচার করে দেখলে পরে অর্থ পাওয়া যায়, আমি বলে গেলাম তোমারে ধূয়োর মানে বল আমারে, খলসে কুন্তু নামটি ভারি আজ তোমার যাবে জানা, পাগলা কানাই মূর্খ বেটা সব কাজে তানা নানা

(৬২৩)

শুনে দুরন্ত কথা মর্মে ব্যথা, এ কথা কই কার কাছে, লোকের বিশ্বাসযোগ্য হবে না তাতে, পঞ্চ জনার একই আত্মা, আছে তারা এক সাথে তারা চারজনা চার দেশে থেকে সদায় করে কলরব, তাদের আশা পূর্ণ হ’ল না সব, তাদের কেহ মাতা, কেহ পিতা, কেহ হয় ভগ্নীর সুবাদ, কেউ ভাইকে ডাকে বাবা ব’লে হায়রে অপবাদ, কেউ বাপের সাথে পাতায় যেয়ে জোড়ের ভাই সুবাদ ॥

তাদের একি রীতি বিপরীত, রীতি সকল শুনতে পাই, কেউ গুরু মেরে স্বর্গবাসী হয়। কেউ ব্রাহ্মণ মেরে করে ধর্ম একি কর্ম জানতে পাই, আমি কানাই অবুদ্ধেন্ত বসে ভাবি হায় । কানা, খোড়া, ল্যাংড়া, বোবা এই চারজন বিচার করেন তাই ॥ (উত্তর পদ নংঃ-৬২৪ )

(৬২৪)

পঞ্চ জনার একই আত্মা আছে ভারতে গাথা, এক ইন্দ্র সে পঞ্চ অংশে জন্ম নিল পান্ডব বংশে, সেই কারণে একই নারী, পঞ্চ জনার হয় মাতা, দুর্বাশার মন্ত্রগুণে মণি ঠাকুরের এই কথা । যারে ইচ্ছা কর ধনী সেই এসে পুরাবে আশা ॥ পরীক্ষার কারণ করলেন স্মরণ, সূর্যদেব আইলেন তখন, এসে সূর্য মৃদু হেসে, বসল যেয়ে কুস্তির পাশে, দেও ধনী, দেও তুমি, আজ আমার আলিংগন, সূর্যের বীর্যে সেই যে কর্ণ, ধর্মের হয় পুত্র নন্দন, ধর্মের পুত্র রাজা যুধিষ্ঠির ভাই বাবা হয় এই কারণ ॥

গুরু ফুলে, শুরু হয় দ্রোনাচার্য মহাশয়, অর্জুনের বাণে তাহার মৃত্যু হয়, সত্তার বাণে ম’লো ভীষ্ম ব্যাস মুনি ভারতে কয়, পাণ্ডব রাজা শ্যামকে লয়ে শুরু মেরে স্বর্গে যায়। শাস্ত্রমতে পাগলা কানাই, সভার মাঝে বলে যায়

(প্রশ্ন পদ নঃ-৬২৩)

(৬২৫)

শুনে এক আজব কথা, অসম্ভব এক নীলে, কোন নারীর, পেটের মধ্যে আইবুড়া কন্যা ছিল, সে কন্যা পতি বিনা, কি প্রকারে অস্ত্রাশক্তি হ’ল । সে কণ্যার পেটের মধ্যে তিনজন পুরুষ বসে ছিল, তার কেবা আগে, কেবা পাছে, বল, কেমন করে দানেই এল, আবার তিন বাপ পো এক সাথ হয়ে সেই মায়ের কোলে বসে, মা বোল বলে, স্তোন ধরে দুধ খেল ।

সেই কথা শুনে মিলে কয়েকজন বেকুব হয়ে গেল, তাই বুঝে দেখে সাধু লোকে, হাড়ের মালা গলে নিল, ডোর কৌপিন সার করিয়ে তারা সব বনে মাথা দিল, এই না কথা শুনে কানাই বেকুব হয়ে গেল ।

(৬২৬)

শিশু বাল্লুক নামটি ধরে দিলাম পরিচয়, দৈবযোগে রাজ সভাতে এসে হইলাম, উদয়, বিশেষ কথা, ও মহাশয়, আমি জিজ্ঞাসি তোমায় রাজা যুধিষ্টির যজ্ঞ করে, ধর্মেরই রাজ সভায়, যজ্ঞের মধ্যে চার জন লোকের হস্তপদ বাঁধা রয়, খাবে দ্বারে বেড়ায় ঘুরে, কান্ডারী দেয় না দ্বার ছেড়ে কার গর্ভে কার ঔরষে তোমার জনম হয়, কৃষ্ণ একজন যজ্ঞের কর্তা সে কেন বাইরে রয়, সেই কথাটি বল বয়াতি পাগলা কানাই শুনতে চায় ॥

(৬২৭)

ধনঞ্জয় নামটি ধরে উদয় হলেন স্বরসতীর তীরে, তুমি কার ভয়ে রথ চালালে যাচ্ছ পলায়ন করে, সেও কথাটি করে খাটি ধনঞ্জয় বল আমারে ॥ রথ ধাওয়ায়ে চলছো মশায় রথের পিছে বহু সৈন্য ধায়, রথের মধ্যি একজন ব্যক্তি হস্ত পদ বাধা রয়, কার অমূল্য ধন করে চুরি আজ মশায় চলেছ কোথায় চোরের মতো ভাব তোমার বল কিছু বিষয় সমাচার, কার গর্ভেতে কার ঔরষে তোমার জন্ম হয় কিসে, সে কথাটি করে খাটি ধনঞ্জয় বল রাজসভায়, পাগলা কানাই শুনতে চায় ॥

(৬২৮)

আরে ওরে, ভবের পর এক কুণ্ড্রনারী, তার পতি নাই ঘরে, বিনা পতি গর্ভস্থিতি, উপপতি না করে । সেই যে নারীর ছেলে হল, বল কেমন প্রকারে । সেই যে নারীর ছেলে হল দুগ্ধ খেল না, দুগ্ধ বিনা বেঁচে আছে, আহার করে না দানা, মারে ডাকে না, ‘মা’ বোল বলে, ভবের পর আছে তার মানা : আমি অধম পাগল কানাই পাগল আমার মন, আসরে এসে ডাকতেছি মা-চরণ দাও না কোন কারণ, তোমার গাওনা তুমি গাও মা আমার ধূয়োয় দাও মিলন |

৬২৯)

ভবে এসে কই দশের কাছে এক মজার কথা মনে হয়েছে, চার যুগ ধরে যুব নারী ভবের পরে পয়দা হয়েছে, কই কথা দশের কাছে, শাস্ত্রে প্রমাণ আছে, কানাই জিজ্ঞাসে বয়াতির কাছে আর একজন এসে পয়দা হোল তার না হোল হাত পা, আজায় তারে জন্ম দিল, ভগ্নী বুঝি তার হল মা, ভগ্নীপতি হলো পিতে, এ সবই বিধাতারে কীতে, নারী, জামাই তাহার হরণ করেছে ॥ শ্বশুরের সংগে মজিয়ে রংগ, বল, সেই নারীর গর্ভ হয়েছে, পতি এসে কোলে বসে মা-বোল বলে ডাকতেছে, স্বোয়ামীরে বলেছে বাবা, আমার এই দুগ্ধ খাবা, জামাই শাশুড়ির সংগে ধরা পড়েছে, পাগলা কানাই বলতেছে ।

(৬৩০)

শ্বশুরের সংগে মজিয়া রংগে এক নারীর দেখ গর্ভ হয়েছে। তার পতি এসে কোলে বলে মা বোল বলে ডাকতেছে, স্বামীকে বলছে বাবা, আমার এই দুগ্ধ খাবা, স্বামী তারে হরণ করতেছে। সেই সতী নারী ভবের পরে কার ফুলে পয়দা হয়েছে, বলে যাই দশের কাছে শাস্ত্রে প্রমাণ আছে, ও তার জিজ্ঞাসা নাও পন্ডিতের কাছে ।

আর সেই যে নারী দীন বন্ধু পয়দা করেছে কত ফকির বৈষ্ঠম আলেম ফাজেল রাতদিন ঘুরতেছে, সেই নারী ভবের পারে কেউ চেনে কেউ তো চেনে না । তাই বুঝে আপন মজে ঠিক রাখ ষোল আনা, পাগলা কানাই বলে নারীর চরণ তালাশ করে পালাম না, যদি নারীর চরণ পেতাম ভবের কাম সেরে নিতাম, ভবে আমার বিপদ থাকত না ॥

(৬৩১)

বেশ বেশ দ্রৌপদি, পঞ্চপতি বললে বেজার হবা, একা নারী পঞ্চপতি তুমি সাধিবা । কোন পতিটা মরলে পরে দ্রৌপদি তুমি বিধবা হবা, কোন পতিটা মরলে পরে হব্যাস করিবা, কোন পতিটা মরলে পরে মালসা পুড়াইবা, কোন পতিটা মলে পরে কাঁচ কলা খাবা ॥

বেশ, বেশ, দ্রৌপদি আর এক কথা, শুধাই তোমার কাছে, জিজ্ঞাসা করি তোমার শ্বশুর ঠাকুর কে? তোমার যে শ্বশুর ঠাকুর, তাহারি ঠাকুর হয়েছিল কে? তোমার বাপ রাবণ রাজা মলো তার পিছে, ভাসুর হয়ে জন্ম • দিল তোমার শ্বশুরকে তোমার দুই শাশুড়ী, সাতটা শ্বশুর পাঁচজনা স্বামী, আরো বল, বড় সতী আমি-আপনারই ইচ্ছামত চেয়ে নিলে তিনটি স্বামী, কানাই বলে- তিন জনাতে শৃংগার করে জানি, ও তাই জুড়াই মনস্কামি, নকলগুলো দেব হয়েছে পুরাণে তাই শুনি ॥

(৬৩২)

রে রে রে পতি-কিসে হলাম অসতী, এক গাভীর পিছে পিছে, ঘোরে পঞ্চনাগর, আমি তাই দেখে হেসেছিলাম, আপন মাথা আপনি খেলাম, আমার পরে বাম হল দারুণ বিধি, সেই কারণে শাপ দিয়েছে, মহাদেব ভগবতী। তাইতো আমার হয়েছিল পঞ্চ পতি, পতি বিনে সতীর নাই কোন গতি ॥ একা কৃষ্ণ জগৎময় কৃষ্ণ বিনা গতি নাই, এক দেহেতে পঞ্চ দেহ ঘটায়েছেন দয়াময় ।

আমি গিয়েছিলাম বিজন বনে, পঞ্চ ভায়ে আমার সনে, সেখান থেকে নিয়ে এল, গোকুল নগরে । ও তাই মাতৃজনে প্রধান পক্ষে ভয় রাখে না যমুনা, রে রে রে পতি ভয় রাখে না যমুনা ॥ তোরা দেখ দেখ-দ্রৌপদির বস্ত্র হরণ, কৃষ্ণ তাহার মুক্তারণ, ধর্ম, ধর্ম, ধর্ম লক্ষী বিসর্জন, অনেক দিনের পরে কুন্তী দেবতার সংগে আলিংগন, কানাই কয় কর্ণের জন্ম সেই কারণ, সহবাস করলে বিধি আপনি নারায়ণ ॥

(৬৩৩)

আশ্চর্য একটি কথা করি রচনা আমি ভেবে পাই না ঠিকানা, চাপানের জবাব সভায় বল না, আজব একটি শকশো পয়দা কে বটে তা জানে না, এক পদ তার হাত হাজারখানা, খোদা তারে সৃষ্টি করে মানুষে মেরে ফেলে, ফের তো জীবন পেল সেই জনা ॥ তার সর্ব অংগ কাষ্টেরই আকার দুই মুড়া দুই মুখ তাহার, লেজ একটা তার আছে পিঠের পর, সুমারে খায় দশ সের জিনিস দেখে হলাম চমৎকার, দুই মুখেতে আটখানি পা তার, পাগলা কানাই বলে চমৎকার ॥

(৬৩৪)

শত শত মন খেতে পারে বলি ভাই দশের কাছে, না দিলে থাকে বার মাস ॥ যে দিনে সে করবে রে আহার, তা দেখে কানাই হলো চমৎকার, যত দিবে ততই খাবে পেট ভরে না তার, বিধির লীলা বোঝা বিষম ভার, হাদিস দলিল কেতাব কোরান বলি ভাই তাহার বয়ান। সব জায়গায় প্রমাণ আছে তার ॥ যে দিন বান্দার মউত হবে সেই দিন যাইবা তার কাছে, কিয়ামত পর রোজ হাসরে ময়দান পরে, একে একে বুঝে নিবে, মুখের কথা কয় না সে ইশারাতে বুঝবে সকলে, দিন গেল ভাই বৃথা কাজে, কখন বা যাব তার কাছে ॥

(৬৩৫)

একটি মানুষ দেখলাম ত্রিবেণীর ঘাটে, আমি বলি দশের নিকটে, মাটি ছাড়া শূন্যে সে হাঁটে, তার শিরে জটা বড় লেঠা সিঁদুর ফোটা ললাটে-তিনটি সন্তান আছে তার পেটে, সে নিজের দুগ্ধ নিজে পান করে, দুগ্ধ নাই হস্তিনীর বাটে । গো মাংস করতেছে আহার, তার জাতি কুলের নাই বিচার, সর্ব দেবতার পূর্বে পূজা তার। সে অনুরাগী সর্বত্যাগী বক্ষস্থলে জুনের দ্বার, আহা মরি রুপেরই কারবার, তাই পাগলা কানাই বলে ভেবে দেখো, লীলার নাইরে পারাপার |

(৬৩৬)

একমান গানের কথা মনে হয়েছে- বয়াতি জিজ্ঞাসি তোমার কাছে, কার হয়েছে তিনটি ছেলে— বিনা বীজে সন্তান হলো বল বয়াতি কার উদরে, তিনটি সন্তান জন্যে ওরে ভাই, তারা সব জংগলে গেছে।

ছেলের মা জননী পাগল হয়েছে, ও পুত বিয়ে কর আজ আমারে, নইলে আমার শরীর যায় জ্বলে, তুমি হলে মা জননী, বিয়ে করি কোন শাস্ত্ররে মা গো তুমি তাই বল মোরে, আমি অগ্নিকুন্ডে পুড়ে হব ছাই মা তোমার কিছুই মনে নাই॥ পাগলা কানাই কয়, শোন ভাই বয়াতি, আমার ধূয়োর মানে হয় কিসে, নাম শুনেছি বাহাদুর বয়াতি ধুয়োর মানে না হলে নাই ছাড়াছাড়ি কোন শান্তরে শুনেছেরে ভাই, মা জননীর ছেলে করেছেন। সাদী ॥ (উত্তর পদ নংঃ-৬৩৭)

(৬৩৭)

চমৎকার এক কথা শুনলাম ভাই, বল এখন আমি যাই কোথায়, কাতর দেলে পাগলা কানাই কয়। আমি উস্তাদের পায় ছালার রেখে সবার মাঝে বলে যাই, তিনটি সন্তান দুর্গার হয়েছে ভাই- ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব জন্ম নিয়ে তারা সব জংগলেতে যায়।

দুর্গার পেটে শিব জন্মেছিল তখন শিবে বলিল-জননী হয়ে এমন কথা বল, আমি গিয়েছিলাম ভ্রমণ করতে এক মুনি মোরে কহিল, শিব তখন কৈলাসে এল, শিব তখন জন্ম পাইল ৷ দুর্গা তখন কি কাজ করিল অন্তরে প্রকাশ হোল, মেঘলাল ভুবন চরিয়ে এর, সহস্রবার জন্ম নিয়ে শংকরের ঘরে এল, শংকরের ঘর ভ্রমণ করা হল, শিব দুর্গায় বিয়ে করিল । (উত্তর পদ নংঃ-৬৩৬)

(৬৩৮)

দিগ্বিজয় করতে রাবণ রাজা গিয়েছিলেন কৈলাশ ভুবন । বিধির লিখন লম্বাপতি দিল দরশন । লম্বাকে ধরে জোরে রাবণ তাহায় হরণ করে, সেই কথাটাই কয় শোনে সর্বজন। লম্বাপতি আর ভগবতী তারা শাস্ত্রেতে এক অংশ ছিল, কার সুখেতে আদ্যশক্তি বহুবিধ হইল ।

মহাদেব বিষপানে বড় কষ্ট পাইয়া মল, দুগ্ধ খাইয়া জীবন দান পাইল। সেই যে নারী শোন সব প্রীতি-কথা মিথ্যা, জগতের পতির সংগে জগতের কন্যা বিবাহ হয়, সম্পর্কে বসুমতি দেখ সে রামের শাশুড়ী হয়, সে কথাটি বিচার করে পাগলা কানাই কয়ে যায়, বলে যায় দশের কাছে শাস্ত্রে প্রমাণ আছে । রাম শাশুড়ী মিথ্যা কথা নয় |

(৬৩৯)

দশের চরণ করে স্মরণ পাগল কানাই কয়, ওস্তাদ আমার ফকির নয়ান সভা দিলাম পরিচয়, সালাম জানাই দশ জনার পায়, দয়া করে দিবেন পদাশ্রয়, রাম রাবণের পালা করলাম শুরু, রাবণ, রহিলে কোথায়, হেমচন্দ্র ডাকিছেন তোমায়, সীতাকে নিল চুরি করে, গেল সে লঙ্কাপুরে, হনুমান সীতাকে খুঁজতে যায় ॥

কদ্দুর কদ্দুর যায় হনুমান খোকসার গোটা খায়, আর কতদূর যায়ে হনু মধু ফুলের বাগান পায়, বাগানী দেৱে ডাক দিয়া কয়, এত লোক কি কর হেথায়, একলা দেব বাগান পাহারা তোরা সব বাড়িতে চলে যা, বাড়িতে যেয়ে দেখা শোনা কর দিন চারেক পাঁচ বাদে আসিস একবার, বাগানী সব ইলে গেল, হনু তখন কি করিল, বাগানের ফল খাইলরে সমুদয় । বাগানের ফল খেয়ে হনু সুখে নিদ্রা যায়।

বাগানীরা এসে উহার লাংগুলেতে পাট জড়ায়, পাট জড়িয়ে আগুন দিল মরিবার আশায়, হনু তখন লঞ্চে লক্ষে যায়, একা হনু সারা লঙ্কা পোড়ায়, উহার স্বার্গেত যখন তাও লাগিল, সীতার কাছে বুদ্ধি নিল, আগুন নিভাতে মুখ পুড়ে ওর যায় । *৬৩৯ নং পদে কবি পাগলা কানাই ওস্তাদ আমার নয়ান ফকির বলে উল্লোখ করেছেন। কিন্তু বেতার শিল্পী জনাব মোঃ আব্দুর রশিদ সাহেব একটা কবিতা আমাকে সরবরাহ করেছেন। তাতে নয়ানকে পাগলা কানাইয়ের শিষ্য বলেই মনে হয়।

(৬৪০)

শোন বলিরে লংকারই রাবণ, তোরা তো রাক্ষস বংশী গণ, তোমার ভগ্নী সুর্পনখা (তার) বিয়ে দাও না কোন কারণ, রসে অংগ টলমল ছেড়ির তো বুক ভরা যৌবন I কতজন আশায় করে, সুর্পনখায় করবে বিয়ে, বিশ্বামিত্র মুনির বমে ভোগে তার হীরের ধার, আশা করে গেল পরে, ছেড়ি তো অমনি কেটে নেয় ॥ ভেবে পাগলা কানাই কয় সুর্পনাখার করি গো ভয়, ঐ রকম ভাব সুন্দরী, আজ তোমারে দেখতে পাই, বনে বনে বেড়িয়ে বেড়ায়, ধোছ মনায় চালায় ।

(৬৪১)

রাম লক্ষণ সীতা যখন হইল বনবাস, সে ছাড়ে দেশ নিজ বাস, বনে বনে সীতা করছে গৃহবাস, বনফল আর গংগার জল, দুঃখে দুঃখে সীতার গেল চিরকাল । সীতারে কুন্ডলী দিয়ে রাম গেছে শিকারে, আবার কোথায় থেকে এলো যোগী, লঙ্কারই রাবণ, সে কি যোগী যেমন তেমন, ভিক্ষা ভিক্ষা বলে করতেছে রোদন ॥

ঘরে কে আছ ওরে ভিক্ষা দাও, সীতা বলে ধরো ভিক্ষা লয়ে যাও। তাই পাগল কানাই কয়, তাও নিব না কুন্ডলীল বাহিরে এসে দাও । কত সন্ধানে আরো দিয়োনে, কত লোকের অপমান সে করতেছে, সীতা পেয়ে রাবণ রাজা, রামের সর্বনাশ করতেছে ।

(৬৪২)

শিষা হয়ে চাচ্ছি পরিচয়, গুরু গো তোমারই কাছে । কেমনে যাব ভব পারে, সেও কথাটি বল মোরে। চারিটি মোজহাব আছে, কও খুলে আমার কাছে, তাইতো জিজ্ঞেস করি ওগো দয়াময় ।

শরিয়ত সে কেমন বস্তু হয়, গুরু গো, তাই বল আমায়, কোন জাগাতে সেজদা দিলে শরিয়তে দাখেল হয়, তোমার নাম দয়াল হরি, তোমার নাম ব্রহ্মচারি, তাইতো জিজ্ঞাস করি ওগো দয়াময় ॥ পাগলা কানাই কয়, শোন বয়াতি ভাই, আমার তো বিদ্যাবুদ্ধি নাই, কেমনে যাব ভবপরে, সেও কথাটি বল মোরে, জানিনে আত্মতত্ত্ব নেশাতে হয়ে মত্ত, প্রাণ খুলে কর শান্ত ওগো দয়াময় ॥

(৬৪৩)

গুরু নিন্দা অধঃগতি করলে সভাস্থিতি, তাইতে এ দুর্গতি, ভেড়া হয়ে ধরতে চাও তুমি ঘোড়ার আকৃতি : গুরুর পাছায় চামড়া নিয়ে কোন তালায় লাগাব, আর ডগর বাজাবা, তাই গুড়গুড় নাকুড় ধিনা, কোন তালে বাজাবা, এই কথাটি করে খাঁটি শিষ্যধন আজ করা আসমানের চাঁদ ধরবা বলে, মই লাগালে চালে সেই চাদটি ধরবা বলে পাছার কাপড় তুলে, পাগলা কানাই বলে বাঁদরের কি যোগ্য ফোটা মেলে ।

(৬৪৪)

আয় রব্বানী কাদের গনি দিয়া এক বিন্দু পানি, এই ভবের মাঝার, আব আতশ খাক বাত দিয়া, গড়ন সারা করলেন তার, দুইজনে পীরিত করে দশটি মাথা হয়। তাহার, আঠার মোকামে ঘর ভাই কেবল নয় দুয়ার, ঘরের মধ্যে আসে আমি কেবল ভাবি বারেবার।

সোর সার পবন পানি কি চমৎকার আমি দেখলাম এসে  ভবের পর পাগল কানাই চিনল না সে ঘর, আউয়াল ঘর সে বাপের মস্তক, দুয়োম ঘর ভাই মার উদর, মায়ের তুল্য কে আছে আর, কি সংকটে রাখল পেটে না হোল তার ভার, সন্তান প্রসব হওয়ার কালে মা শুকনাতে দিলেন সাঁতার কেতাব আরো প্রমাণ দেয় মায়ের একধার দুধের মূল্য দেওয়া হোল বিষম দায়, সন্তান প্রসব কালে মা’র দেহ ছেড়ে যেন প্রাণটি যায়, মা পেয়ে এত দুঃখ, দেখে বেটার মুখ, কি সুখ পায়, যদি কোলে তুলে নেয়, বনের পশু আহার তুলে সত্ত ানকে খাওয়ায়, মাতাপিতা অমূল্য ধন কেতাবের কথা মিথ্যা নয় ॥

(৬৪৫)

মায়ের নিন্দা করলে বয়াতি হবে না তোর ভাল, হায়রে হায় এক দিবস চাঁদ সওদাগর, মায়ের নিন্দা করেছিল, তাইতে তার বংশ গেল, আজ বয়াতি তেমনি দশা তোমার হোল, এক মায়া জগৎ জননী আবার মায়া তোর ঘরে, তুই সত্য বল বয়াতি ‘মা’ বলেছ কোন নারীরে, তুমি চেন না তারে-সে মায়া জগৎ ভ্রমণ করে, মায়ার চরণ অমূল্য ধন এ সংসারে, হায়রে তোর বাবা তোর বাবা সেও দেখ মায়ার পাও ধরে, আছে সে জগৎ জুড়ে, তাই পাগলা কানাই কয়-এ জগতে মা বলে সকলে ।

(৬৪৬)

এ “মা” বারে বারে ডাকি তোরে কোথায় রলি মা আমার, আজ বিষম দৈরার তুফান দেখে প্রাণ কাঁদে আমার, এ ‘মা’ যারে দিছ পদছায়া সেই সেই ধর্ম জেনেছে, সে পেয়ে রতন, করে যতন, ও বসে রইয়াছে, এই ‘মা’ যা করো তাই করতে পার, আপনারও করি গান, তাই পাগলা কানাই কয়, অনন্ত মহিমা তোর কোরানে বয়ান

(৬৪৭)

পুরুষ পুরুষ মহা পুরুষ পুরুষ ভাল হয়, পুরুষে সকল কাজ চালায়, পুরুষ হইতে নতুন নতুন কল-কারখানা সৃষ্টি হয়। এরোপেলেন মোটরগাড়ি পুরুষে সেলাইর কল চালায়। রেল ইস্টিমার ট্রাম গাড়িতে হয় ড্রাইভার, পুরুষ হয় ইস্কুলের মাষ্টার।

নায়েব মহুরী পুরুষ হয়, হাকিম হয় বিচার করে, উকিলে জেল বাঁচায়ে দেয় সুপারি কাটা হলুদ বাটা তোর মায়েরা করে, পেঁয়াজ রসুন পচা বেগুন কুটিতে পারে । তোর আর এক মা ছিল সীতা দেবী, রাবণ তারে হরণ করে। তোর বাবা খেয়ে রক্ষা করে, কানাই তার কয় বিনয় করে ।

(৬৪৮)

ওরে ‘মা’ ‘মা’ বলে রোদন করো না, তুমি সাধন ভজন জানো না, ওরে বাপ ঘুরে কর মায়ের সাধনা, বাপ হচ্ছে জন্মদাতা তারে তুমি চেন না, আবার বাবা বলে ডাক দেও ভেড়রে, শুধালাম ওরে দিনকানা।

হলো মাতা পিতার এক জাগাতে স্থান, তুই একজনকে রাখলি সম্মান, আরাক জনকে করলি অপমান, তোর বাবার নামটি জিজ্ঞাস করলি, বলিস না তোর বাবার নাম, আবার বাবার নামটি গোপন রাখলি, এই কিরে লায়েক বেটার কাম, তাই পাগলা কানাই কয় দশের হুজুরে এই পিতাই বড় সংসারে, তুই বোকা চিনিস না তারে, আমার পিতা পাগল হয়ে জন্ম দিল তোমারে, আমি বারে বারে বলতেছি তোরে, ও তোর মা ছিল কোথাকারে

(৬৪৯)

ধরে তোর কালী মা তার গুণপনা তাল, সে স্বামীর বুকে পা দিল, সেই কথাটি সভাতে বল। আমার মা বরকত যিনি, আলির বুকে কি পা দিছিল? এমন মা তোর কোন দেশে ছিল ।

আরো নবীর বেটি বেহেস্তের দাওন, ভারে মা বলেছে দোস্তে ছোবহান, সে যে পার করবে উম্মতের ভরা, তুই তারে চিনলি না কেন? তোর ঘাড়ে আছে আসল শয়তান, শোনরে বেটা অজ্ঞান, তোরে নাগাল পাইছে বেল গেছো ভূতে, ঠিক রেখো ঈমান, মণি এই হলো বিপথ কাছারী, তুমি পন্ডিত হইছো ভারি, অনুমানে তাই বুঝতে পারি, পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরা, বাজারে বিরোল ব্যপারী, নিরাকারে আকার দিয়ে পয়দা হইল কাদের গনি, নয়কে বরকত ভবানী তা বলিস কিসের জন্যি । পেটে নাই মানুষের চিহ্নি মিছে জাগজারী ।

(৬৫০)

পাগলা কানাই কয় বয়াতি তুমি বুঝে বোঝ না, ক্রমাগত বলব কত তোমার মায়ের গুণপনা। তবে তাও আছে জানা-ওরে ল্যাংটা মা তোর দাঁড়িয়ে আছে, বাবার বুকে পা দিয়েছে কি জন্য সে বসন পরে না ॥

চিরদিন সে দক্ষিণ মুখো আছে কি কারণ, ডান বামে পিছের দিকে ত্যাজ্য করে আছে তিনটি কোণ, কোন দিক চায় না ফিরে দক্ষিণে তার নিরূপণ, তাই বল, বল ও বয়াতি এই ধূয়োর মানে কতি, আমার কাছে রেখনা গোপন ॥ গোকুলেতে নারী নিন্দা ত্যাজিল জীবন, তোর মা করে সে মুখ মণ্ডলী গৃহী ঘরে নেয় জীবন । অনুরাগ পাগলের সংগে অংগে অংগে মিশাইয়ে, করে সে কৈলাশে গমন। পাগলা কানাই বলে, প্রশ্নে চলে করি নিবেদন (উত্তর পদ নম্বরঃ-৬৫১)

(৬৫১)

শোন শোন ও বয়াতি তোমার ধূয়োর মানে, প্রথমে মা যুদ্ধ করলেন অসুরের সনে, সেই যুদ্ধতে বেকুব হয়ে মা কালীর বসন নাই বুকে ॥ সেই যুদ্ধেতে মা কালী বড় প্রবল হয়েছিল, শত অসুরের মুণ্ডু কেটে হার গেঁথে গলে দিল, হস্তগুলো সব মাজায় বাঁধিল, ডানে বামে পিছের দিকে চেয়ে, জিহবায় কামড় খেয়ে, ও সে দক্ষিণ মুখো নিহার করে ছিল দেশের লোকে বলছেরে তোর ভোলানাথ কনে, ভোলানাথ না হলে কালী জগৎ থোবে নানে। এসে ভোলানাথ মায়ের কোলে, বসল শিব সে আসনে, পাগলা কানাই কই বয়াতি শোন ধূয়োর মানে ॥

(প্রশ্ন পদ নম্বরঃ-৬৫০)

 

পাগলা কানাই এর গান

 

(৬৫২)

সভায় এসে রমজান চাঁদ, মায়ের নিন্দা কর কেন, তোর আদ্যশক্তি জগৎমাতা, তারে তুমি চেন না, শোন বলি ওরে বেদ্ভূত দুশুনা, সেই মায়ের উদরে জন্ম গো, মায়ের নিন্দা করো না ।

শিশুকালে মায়ের দুগ্ধ খেয়ে তুমি হে করেছিলে খেলা, অভি কিঞ্চিৎ কম থাকিলে, কেঁদে হতিস বেভোলা, তোর বুদ্ধির নামায় কেবল কাঁচকলা, মায়ের বুকপানে চেয়ে দেখরে দুটো মধুর রসের গোলা নিরাকারে ভাই সকলা আমার মা জন্মেছিল, মা বিনে এই ভব সংসারে তোকে কে তরাবে তাই বল, আপনি আল্লাহ মা বলেছিল-সেই মায়ের উদরে জন্মে গো, মায়ের নিন্দা কেন কর, পাগলা কানাই রমজানকে কয় দিন থাকিতে মায়ের চরণ ধর ॥

(৬৫৩)

আহারে জয়নাল তুমি বুঝে বোঝ না, তোমার বাবার নামটি গোপন করে করছ মায়ের বন্দনা । আমি ক্রমাগত বলব কত তোমার মায়ের গুণপনা, তবে তাও আছে জানা, তোর ল্যাংটা মা কেন দাঁড়িয়ে আছে, শিবের বুকে পা দিয়েছে, জিহবায় কামড় খেয়েছে কি ভাবেতে বসন পরে না । তোমার মা এমন সতী, সে করিল আপন ক্ষতি-কথা কই দশের কাছে ।

শিবের বুকে পদ দিয়ে, ঠেসে ধরে রেখেছে, এমনি ঠাসা ঠেসেছে তার উঠবার শক্তি না আছে, ঊর্ধ্ব নয়নে চেয়ে আছে-দেখ তোর মার লজ্জা কি আছে ॥ চিরদিন দক্ষিণ মুখো আছে কি কারণ- ডানে বামে পিছে দিয়ে ত্যাজ্য করে তিনজন, কেউ কারো দিকে চায় না ফিরে, দক্ষিণে তার নিরূপণ, ভবে আছে কি কারণ, সেই কথাটি করে খাঁটি ও বয়াতি কও তুমি কানাই বলে গোপন করলে শুনব নাক আমি

(৬৫৪)

শোন বলিরে মায়ের সৃষ্টি ধর, যার জন্য পাগল হ’ল, তোমার বাপ মহেশ্বর, মায়ের সংগে সদয় হয়ে, তাইতে রাম পেল নিস্তার, বধ করলো রাবণ রাজা ॥ খড়গ হাতে লয়ে মাগো জগৎ কেটে যায়, কত দেবগণ সারথী নাই, মায়ের সামনে খাড়া রয়, সেই দিন আমার বাবা এসে, মায়ের পদ তলেতে রয়, তবে জগৎ রক্ষা হয় ॥ এই ভবেতে পুরুষ অপমান, বৃন্দাবনে কৃষ্ণ ঠাকুর, শ্রী রাধের পায় ধরল কেন, তাইতে বলি ও দিনকানা, মা হল জগতের প্রধান, পাগলা কানাই বলে রাখরে ভাই মায়ের সম্মান

(৬৫৫)

ও বয়াতির কথা শুনে, মাথা আমার উঠলো জ্বলে, আমি মাথা ঠান্ডা করব বলে, এসেছি এই সভাস্থলে, মূর্খ অতি ঐ বয়াতি তিনার তো নাই স্মরণ শক্তি, প্রশ্ন করে আবার ফিরে দিতে হ’ল উত্তর উক্তি জ্যারো বলে গাল দিলি আমরা তো সে জ্যারো নইরে, জ্যারো হলো তোমার বাবা, তুই হলি হারামজাদা, ছোটকালে ছিলি পাজী আর গাঁধা, তোর বাবার বাবা চৌদ্দ পুরুষ নারীর পদে করে সাবা ॥

মা আমার উবলো বিলাসী মায়ের গলে প্রেম হাসুলী, মায়ের নাকে দেখি সোনার নতনী, পরনে বসন নেই, সেই কারণে মা জননী গো যেন জিহবায় কামড় খায় । পাগলা কানাই বলছে যে ভাই, মা ছাড়া আর গতি নাই |

(৬৫৬)

দিনে দিন বয়ে গেল দীন নাথের নাম, ঐ নাম নিলে পরকালে তোরা পারিবে আসান, ভুলেছ মোমিন মুসলমান । তুমি সদায় ডাক মা মা বলে, একদিন লইলে না সেই বাবার নাম, তোরে সেই বাবাই কি অল্পে ছাড়িবে, যেদিন তোর মা’র শুল্ক ধরে কুতাবে তামাম ॥

যার বীজেতে পয়দা হয়ে, এলি এই ভবে, তোর সেই বাবা কি অল্পে ছাড়িবে, যে দিনকে ওজন হইবে, সেদিন কানাই বলে-ও বারি তালা, কি জানি লিখেছ সাঁই কপালে। যেদিন তোরে ফেলে দিবে হাবিয়া দোজখে, সেদিন তোর বাবা বিনে-কে করিবে কোলে ॥

(৬৫৭)

দেখ দেখি ভবে আজব কারখানা, আমার মনের শংকা গেল না, দেখে শুনে প্রাণতো বাঁচে না, পুরুষ প্রকৃতি নারী, নারী তখন ছিল না, বিষ্ণু হতে আদ্যশক্তি, তাও কি তুমি জান না, সদায় ডাক মা মা বলে, মনি তুমি বাবা চেন না ॥

সত্য যুগে তোমার মা দেখ, ঠেকে ছিল দায়, আমি সেও কথা বলি যাই, দৈত্যকুলে তোমার জন্ম হয়, চলল ভোলা লয়ে আঁচলা ঝোলা, পিটেন তারি করে বাক্‌ছালা, তোমার মা তিনি প্রায় পাগলিনী, সদায় করতেছে হায় রে হায়, তোমার মা সে তোর জননী হয়, সদায় করতেছে হায় হায় ॥ বিষ্ণু এসে মন্ত্র যে দিল, শিব এখন কেনে চল না, তুমি না গেলে কালী বাঁচল না, সত্তর বৎসর আউলিয়ে কেশ, মেঘেতে মনি ঘুরায়, পাগলা কানাই করে বিনয় সেই কথাটি কয়ে যায় ॥

(৬৫৮)

কানাই কয় ও ভাই-বয়াতি বাবা বাবা বলে ডাক, তোমার বাবার নামটি কি? সেও কথা শুনতে চাই আমি, তোমার আসল বাবা কি ঢ্যামলা বাবা, ঠিক্ ঠিক্ পরিচয় দিবা, না বললে ছাড়ব না তোমায় ॥

শিব কি তোর বাবা হয়, শিবের মত কতই দেবতা এই ভবের পর পয়দা হয়, সকলেই কি তোমার বাবা হয়, শিবকে বাবা বলিয়ে রাজ সভায় দিচ্ছ পরিচয় ॥ মা’র বড় আর কে আছে, তারাই তিনজন এক সাথ হয়ে, তোমার জন্ম দিয়েছে, সে কথা বলি সভায় এসে। সেই তিনজনার কোন জন বাবা, ঠিক ঠিক পরিচয় দিবা, না বললে জ্যারো বলবে তোরে

(৬৫৯)

গোপাল মা মা বলে ডাকতেছে- ছন্নছাড়া উনপাঁজুড়ে-বুদ্ধির মাথা খেয়েছে, বাবা না হ’লে মা তোরে কোথায় পেয়েছে, একে কালে কথা শোনে না, বললে তা মানবে না, ওরে শয়তানে ধরেছে । বাবা বড় না হ’লে-ছিলি বাবার মস্তকেতে, কেমনে এলি মার গর্ভেতে, সেও কথা বল সভাতে। বাবা যদি না থাকিত, চক্ষুদান কিসে হতো, বুঝে সুজে কও কথা সভাতে ভেবে পাগল কানাই কা বাবা যদি দয়া করে মণি, তারে যাবা পারঘাটায়, থাকবে না তোর কালের ভয়, তা-না হ’লে পড়বা ফেরে, আখেরে বাঁচা হবে দায়

(৬৬০)

তবে নারী নিন্দা করো না, নারীর গর্ভে লয়ে জন্ম, নারীর মর্ম পেল না। শোন বলি মূর্খ দিনকানা-নারী হয় জগৎ মাতা-নারীর গোলাম তোমার পিতা, নারী নিন্দা প্রাণে সহে না ॥ ভবে রাজা বাদশা যে আছে-নারী পুরা রসের গোলা, সেই রসে সে মজেছে।

তবু নারীর সন্ধান না আছে-বাবা যদি বড় হোত, তবে তার জান থাকিত, সে কেমনে মা’র পার তলে র’ত ॥ মার বড় আর কে আছে মায়ের সাক্ষী মা ভবানী ব্রহ্মময়ী সে হয়্যাছে, কত পুরুষ গোলাম খাটতেছে, কানাই বলে, নারীর চরণ যে জন স্মরণ করেতেছে, তার কি আর কালের ভয় আছে ॥

(৬৬১)

পীরিত পীরিত বলে লোকে সর্বদায়, চন্ডীদাস আর রজকিনী জানেন তায়, পীরিত তো শুধু মুখের কথা নয়, পীরিতের মর্ম কি জাননা? এক পীরিতে দু’জনার মরণ হয়, পীরিত ক’রে কেউ শমনে যায়, পীরিত তো সামান্য বস্তু নয় ॥ এক পীরিত করে ইন্দ্র দেবতা, স্বর্গ মর্ত্য পাতাল ভুবন কেবল এই কথা, ওরে ইন্দ্র তোর ঘটলোরে দুর্দশা, মাতৃহরণ করল ধর্ম রাজা, হোল না তার কোন কার্য, কয়ে যায় ধর্ম রাজ বিধাতা ॥

এক পীরিত করেছিল শ্রী রাধে, কৃষ্ণের চরণের দাগ তাহার মস্তকে, ঐ মত কর পীরিতরে এই জগতে, নয় তোরে ঘিরিবে আপদে, দশ ইন্দ্ৰ রিপু ছয় জন তোর নিকটে । কামিনীর কোমলে ফুল ফোটে, পাগল কানাই বলে কর পীরিত, তোমার আপন মায়ের সাথে, যেমন নিরঞ্জন করেছে পীরিত আমার হযরত নবীর সাথে ॥

(৬৬২)

হয় কি মজার দোকান পেতেছে নিতাই, তোরা কেউ দেখতে যাবি ভাই, প্রেমরসে ভেজেছে ঝুরি কানাই কয় যে খেয়েছে সে ঝুরছে তাই ॥ কানে কানে দোকান ভরা হরিনাম মনোহরা, তাপিত প্রাণ শীতল করা সুধা পাবা যত খাই, যাতায়াত সহজ সোজা খাজা গজার মুখে ছাই ॥ ভাব রসের কারবারী, না জামে দোকানদারী, সে খায় এস্তার তারি প্রেমের বলিহারি যাই, সম্মুখে সাজান মাল ধরতে ছুঁতে নাই বমাল, দোকানী এমনি সামাল খুঁজলে হাতে হাতে পাই।

(৬৬৩)

রত্নাকর প্রেমের যোগে সৃষ্টি হল দস্যু হতে, জ্ঞাত মাত্র ভবে। রাম রাম হিতপদে রাম শিবরাম রাম, বললি কি রাম ভবে । রাম লক্ষণ শ্রী বিভীষণ লঙ্কায় ছিল সবে, প্রেমের ঘরে আঘাত করে রাবণের বংশ গেল তবে, পীরিত যেমন তুল্য রতন অমূল্য ধন ভবে, ধরায় আর কি এমন হবে ।

পীরিত সুহৃদ বটে সর্বস্বাদে ঘৃতং, প্রেম ভিন্ন মান্যগণ্য ভিন্ন কোথা জিতং, পীরিতং পীরিতং পীরিতং,ধন্য প্রেম মান্য করি ব্রহ্ম স্বরূপ হিতং, যে জন করে অমান্য এই সৃষ্টি, হেতু প্রীতং তার বংশ নিপাতিতং, পাগলা কানাই বলে ভাই পীরিত বিনে সুহৃদ নাই, আছে সে যামিনী যোগে কর্ম ভোগে, রত্নাকর প্রেমের যোগে, স্রষ্টা হ’ল দস্যু হতে জ্ঞাত মাত্র ভবে, প্রেম আর কি এমন হবে ॥

(৬৬৪)

পাগলা কানাই বলে ভাই সকলের প্রেম কেউ ছেড় না, কৃষ্ণ প্রেমের পদ বিনে কিছু হবে না, এই সংসারে থাকতে মর্ম, এই সংসারে থাকতে ধর্ম, প্রেম ছাড়া সাধন-ভজন কিছুই হবে না ॥ শ্রী রাধিকা করল পীরিত পরের ফোঁসে করল মান, কৃষ্ণ তারে ছাড়ল যখন বিচ্ছেদ জ্বালায় যায় গো প্রাণ, ডেকে বলে বৃন্দে সখী, কৃষ্ণ এনে দেখাও দেখি, মুখ দেখে দুখ বোঝ না ক্যান ॥ কৃষ্ণ প্রেমের কি মহিমা তামাম দ’নেই নাইরে সীমা, তাই বলছে কানাই মিছে হায় হায়, চিনলে না মন সে মহিমা

(৬৬৫)

পীরিত পীরিত পীরিত কেমন জন, পীরিত তুই চিনলি নারে মন, নারীর প্রেমে মত্ত হয়ে, আবার হারালি অমূল্য ধন, ভেবে দেখরে মন প্রেমের চাবি হাতে করে, বসে আছে মালেক মহাজন পীরিতের আলোতে রসুল উল্লাহ, করে গেছে জগৎ উজালা, সে পীরিত জানেন বারেক আল্লাহ, আমি যে মূর্খ মতি সে পীরিতি, বুঝতে নারী সীমা তার, তাই এ ভবে এসে তাঁর চরণ করেছি সার, ভব দরিয়ার রসুল হইবেন কান্ডার, পাগলা কানাই বলছে শোন, তত্ত্ব লও আমার এই কথার

(৬৬৬)

অষ্ট সখী ডেকে বলে, পার কর হে প্রেম পাটুনি, ও তোর পাটনী জাতির স্বভাবের দোষ, সেরে সুরে কেন বাসনে তরী । এ দেখি ভাংগা তরী পার হব কি পা মোব তাই ভয়েতে মরি, নোনা লেগে গেছে খেয়ে দেখনা চেয়ে, ঝুলমুলে হয়েছে তোর তরী ॥ সর্বসখীরে পার করিতে চাচ্ছ তুমি আনা আনা, শ্রীরাধিকের পার করিতে চাচ্ছে তুমি নাকের সোনা, ঐ দেখ মতি সোনা ও দিন কানা, অংগেতে পরতে পারবানা। অংগেতে পরলে পরে কানাই কয় পড়বা ফেরে, খেলাপ হবে কোম্পানীর ঘরে ।

(৬৬৭)

পার কর হে প্রেম পাটুনী, মথুরাতে যাব, দৈ-দুগ্ধ বেচে তোমার উচিৎ মাশুল দেব, দৈ-দুগ্ধ দেখে তুমি করছ কেন আনাগোনা, পাটনী জাতির স্বভাবের দোষ, দৈ- দুগ্ধ খেতে জানে না, ঘৃত আর মাখন ছানা, খেলে পরে হজম হয় না, চাঁটে গুড় পচা মিঠাই, যাও হে সদায়, দৈ-দুগ্ধের দর কিছু জান না, পাগলা কানাই যুগল চরণ, মেনেও মান না

(৬৬৮)

এই ঘাটেতে দিচ্ছি খেয়া, আমি কালাচাঁদ পাটুনী, আমার এ ভাংগা তরী, হেসে হেসে নিন্দা কেন করছো ধনী, পার হবা ভবনদী, নাই তার বাদী, জল উঠেনা কোন দিনই, গুরোর পর অঞ্চল পেতে বস এঁটে, অনায়াসে পার করিব আমি আমি বললাম খুলে ডোমের ছেলে, খেয়া দেই কদম তলার ঘাটে, কত দুগ্ধ দৈ আর ছানা মাখন, হজম হয় আমার পেটে, নিত্য যাও ফাঁকি দিয়ে পার হইয়ে, খাটবে না আজ কোন মতে, আগে দেও পারের কড়ি, ও রায় ধনী, পড়েছ প্রেম পাটুনীর হাতে ॥

দৈ-দুগ্ধ লয়ে তোমরা চলেছ মথুরার হাটে, আবার তুইলো প্যারি ও রায় ধনী, আয়ান ঘোষের ঘরে থেকে, তোমরা তো রসিকা নারী চাঁদ বদনী, আমরা তেমন রসিক নায়ে, পার হবা প্রেম নদীতে লাল ডিংগাতে, হবে নাকের সোনা খুলে দিতে, পাগলা কানাই বলে ফাঁকি দিতে, পারবিনে এই প্রেম নদীতে ॥

(৬৬৯)

ল্যাংটা হয়ে যত সখিগণ স্নান করিতে যায়, তাদের বসন নাইক গায়, তারা করছে রে হায় হায়, এদিক ওদিক চৌদিক তারা ঘুরিয়ে বেড়ায়, কে নিলে গো বসনখানী, আমরা তো সেই ব্রজনারী, গৃহে রব সর্বদায়, গগনে বেলা ঐ দেখ হয়েছে উদয় ॥

দেহের অংগে দেহে যাবে রংগ সহে না, মিছে ভাল লাগে না, কোন সাহসে বলছ হেসে বসন দেব না, আমি নালিশ করব পুলিশ আনব, হাতে হাত কড়া দেব, ঘানি গাছে জুড়ে নেব, আচ্ছামত তেল ভাংগাব, প্রমাণ দিব খুব ঠেসে, মাথুরায় চালান দিব হাজতে রেখ ॥ ভাবছ কি হে মগের মুলুক, রাজা নাই দেশে, কোন সাহসে কদমের মূলে, নারীর পৃষ্ঠে করলে ডাকাত কোন দিবসে, পাগলা কানাই বলে, বসন চুরি হয় প্রেম রসে

(৬৭০)

কু-বাক্য বলছ তোমরা যত সখিগণ, তাই শোন রে সখী শোন, তাই বলতেছি এখন কেবা তোদের মাতা পিতা, পতি কোন বা জন । তোদের এই কাণ্ড দেখে আমি ভাবছি মনে মন ।

সখীদের বাক্য শুনে বলছে সেই মোদন মোহন, ডাংগায় ঘুয়ে বসন কত উল্লেসিত মন, তোদের মত বেহায়া নারী, না দেখি কখন জলের মধ্যে নেমে কর ভৎসনা, কূলের দিকে চেয়ে কেন দেখ না, এইবার কূলে এস কাছে বস, ধরে লয়ে পুরায় মনের বাসনা, পাগলা কানাই বলে, প্রেমের ছলে, কাছে কেন আস না

(৬৭১)

যখন আমি এসেছিলাম নন্দালয়, পালন করলো মা যশোদায়, সে সব দুঃখের কথা বলি এই সভায়, পাটনী হয়ে দিচ্ছি খেয়া এই না যমুনায়, সখীরা সব ও পারে যায়, আমার নৌকা জুড়ে, কংশ রাজার নোনী যোগায় তারা যায় মধুপুরে ।

মা যশোদা যখন ঘাটে যায়, ক্ষুধার জ্বালায় প্রাণটি বাহির হয়, ভান্ডার পুরা ছিল ননী চুরি করে খেয়েছি, ও মন অগোচরে খেয়েছি । তাইতে আমার মা যশোধা মোরে বেঁধেছে তথায় ॥ ময়ূর পঙ্খী নৌকাতে আমি খেয়া দেই, ঘাটেতে বসে থাকি সখিগণের পার করতে আনা আনা নেই। শ্রী রাধিকের পার করিতে নাকের সোনা রেখেছিল, দুগ্ধের পসরা মাথায় লয়ে মথুরা যেতে দেখেছি, কানাই বলে চরণ ধূলি পাপ দেহেতে মেখেছি ॥

(৬৭২)

কৃষ্ণ বলে সব সখিগণ যাতনা সয় না শরীরে, প্রতি দিবস বাগে এসে ভাংগ ফুলের কলি, আমরা তো বাগের মালি, ধরেছি হাতের চুলি, তোরা বন্দী হলি সকলি কার হুকুমে কুসুম ছিঁড়িলি ॥ তোরা তো নবীন যুবতী, কেন এলি, ফুল তুলিতে হুকুম কে দিল, বাগিচার মালিকানা মদন রাজার ছিল।

মদন রাজার দুর্জয় ভারি, খাটবে না ছল চাতুরী, কর আদায় করবো ফিকিরি, বেঁধে দিব তিনার হুজুরী ॥ যেমন কাজ তেমনি সাজা, আজ আমি তোমাকে দেব, জনে জনে নাকের সোনা আর বসন কেড়ে নেব, নাক চুকরা কেটে দেব করে কর বেঁধে নেব, মেটে কলকে পুড়িয়ে তোদের সবার পাছায় ছাপ মারিব, এসে ঐ কানাই পাগল, ও ভাই সকল, বেকুব করে দিব ।

(৬৭৩)

কৃষ্ণ কয় শোন রাধিকে আমারে কর নিন্দে, চিরদিন দেখো ভেবে চিন্তে, গরবিনী গরবে রয়, মান করে প্রাণ কেড়ে লয়, এমনি তোর লীলে । যার জন্য এ বৃন্দাবন, ছেড়ে যাই এখন, থাক তোমার মান লয়ে ।

থাকব না তোমার সনে যাব যমুনার কূলে, কত কষ্ট দিয়েছ মনে, আরো কত কাঁদাইলে, ঐ মত কাঁদতে হবে একেলা, এই কথাটি মনে ভাব-গুরুকৃপা চিত্রফণী, তোর মাথায় দিয়ে মণি, মনের সাধ মিটার ॥ বৃন্দাবন করে শূন্য কৃবাজারে দিলাম মন, মধুপুরে করলাম আগমন, কংসের বংশ ধ্বংস করে আমি রাজা হব সে কারণ, পাগলা কানাই বলে ও শ্যাম অন্তিমে যেন পাই চরণ ।

(৬৭৪)

কোথায় গেল বংশীধারী-কথা নেও মোর মাথা খাও, ত্বরায় চলে যাও, এনে দাও সাধের বংশীধারী ॥ প্রতিজ্ঞা করেছি সই-সামান্য প্রেম আর করব না, তোর মানের মুখে ছাই, দিয়ে গুলো রাই, অমন কার্য আর করব না, শ্যাম চাঁদের চরণ নিব, দাসী হন, যুগল চরণ আর ছাড়ব না প্রেম ডুরী বেঁধে তারে, যুগল করে, জীবন থাকতে আর ছেড়ে দিব না।

যা চলে যা বৃন্দে দৃতি শীঘ্র যা তুই চলে, প্রেম নদীর ঐ জোয়ার দিদি উঠছে ঠেলে ঠেলে, যা যা বৃন্দের দৃতি শীঘ্র যা তুই চলে, বন্ধুরে কও মনের কথা, তারে না দেখিলে প্রাণে মরি, কখন এসে দেবেন দেখা । কুসুম বাগেতে ছিলাম, ফুল তুলিতাম, দেখছে হাতে মালা গাঁথা, বন্ধুর গলেতে দিব প্রাণ জুড়াব, দেখে শুনে ঘুচবে মনের ব্যথা, পাগলা কানাই প্রাণ সঁপেছে, বন্ধুর কাছে আর কি আছে কথা ।

(৬৭৫)

গাল দিতেছ রাধিকা সুন্দরী, আদা’ড়ে কচুর মত, আমি যেন ঠিক বাগাড়ে তেঁতুল। মদন মোহন বলে রাস্তা পাশে দাড়িয়ে আছে কি কারণ, ছ্যাচা বুচা বিড়ালের মতন, রাধে তোমার লজ্জা হল না কখন তুমি সদায় হতে চাও কাঁচা সোনা, তোমায় বুঝালে তো বোঝ না, কালো লোহায় জব্দ হয় সোনা, কালো জ পান না করিলে জীবন রক্ষা পাবানা, তোমার বদন চুয়ায়ে পড়ে ঘাম, কালো ছায়ায় জুড়ায় তাপিত প্রাণ ॥

কালো বলে গালি দিতেছ, কালোর হার গেঁথে গলে নিয়েছ, কালো কাজল নয়নে দেছ, তবু কাল বানর বলে সদায় গালি দিতেছ । কালো রঙে তোমরা মিশেছ, রাধে ঢোক গিয়ে কেন থুড়ি ফেলতেছ, বন্ধুর কাছে পাগলা কানাই ফুচকি খেলতেছে

(৬৭৬)

বৃন্দে বল রাই কিশোরী মিছে কেন কর ছলচাতুরী, মদন রাজার দুর্জয় ভারী, কর যাহার রায়তগীরি, যেন রাবণের জমিদারী, তোরে বলি, কি দিয়ে প্রাণ রক্ষা করি, পরের নারীর বসন ধর, অপমান কর, তোমার মুখে মারব ঝাঁটার বাড়ি ।

রাণীর ভরে কংস রাজা যুগল করে তারই তরে, কোন শাস্ত্রে শুনেছ ভাই, মেয়ে লোকে চুরি করে, এই কথা কই কাহারে, সই তোমারে, চোরে আজ চোর বলে যায় মোরে ॥ মহাজনের ফুল বাগিচায় বন্ধু এসে রবা খাবা, উচিত মত দলিল দিবা, আদালতে ডিগ্রী পাবা, সেই দায়মালী হবা, ফাটকে যাবা, বলদের মত ঘান ঘুরাবা মহাজনে দেবে সাজা, পাবা মজা, কাছা খুলে মারবে বেতের কঁচা, কানাই বলে, প্রেম করো না পচা |

(৬৭৭)

সখিরে প্রাণ তো বাঁচে না, আসি বলে মথুরায় গেল সে তো ফিরে এলো না, মনে আমার প্রবোধ মানে না । আর কত দিন সইব জ্বালা, নাগর আর তো এল না। সখীরে সব করতে পার ভাংগা প্রেমে জোড়া দিয়ে, সে প্রেম নতুন করতে পার? ঘাটে পথে কেঁদে ফিরি গো তোমার এই জনম দুখিনী ॥ সখীরে মান করিলে কেন-তুই মান করে শ্যাম হারাইলি, এই কথাটি জেন। তোর মানের গোড়ায় ছাই, কথা বলছে পাগলা কানাই। তার আসার আশে, রইলি বসে, এখন কেন রাই

(৬৭৮)

চোর ধরিতে বৃন্দের দৃতি এল মথুরায়, চুরি করেছে যে জন শ্রী বৃন্দাবন সে এখানে আসে নাই, মানুষের মত মানুষ আছে কতজন, তাইতি কি সে অপরাধী হয় । তোমার দেশের রাজা দেখে মনে সন্দ হয়, আমার দেশের চোরার মত, নয়ন দুটি দেখা যায়।

শোন বলি মাখন চোরা, এবার পড়েছ ধরা, বড় শক্ত করে বেঁধে দেব তোমায় । আমি নালিশ করব আদালতে করব ডিগ্রী জারী, তোর মথুরাবাটী বেচে নেব, বন্ধু হে। কাজ করব আইন অনুসারি, তোরে বেচে নেব রাজার তোরে, ফাটকে ফটকায় কয়েদ দেব তোরে, পাগলা কানাই বলে, বিনয় করে ।

(৬৭৯)

কৃষ্ণ বলে বৃন্দে দূতি এসেছ আমায় নিতে, পাইনে তোর মতিগতি, বরের মাসী কন্যার পিসি, আবার তুমি হও সতী, নারী প্রেমের এ দুর্গতি, হে বৃন্দে আমি পারিনে সতি ॥ লোকে বলে নারী ভাল, ভাল ভাল আর কই ভাল, ভাল ভাল বলতে বলতে কৃষ্ণের দিন বয়ে গেল, যেমন দরের মাঝে বরশী ফেলে, জোর দিয়ে ডাংগায় তোলে, ওমনি মত নারীর প্রেম কৃষ্ণের জীবন গেল ॥ ব্রজ ধামেতে যখন ছিলাম, পায় ধরে অপমান হলাম, একই নারীর মন্ত্রনাতে, বহুত নারীর মন পেলাম, দেখে শুনে কানাই বলে, হে দেখ, ছাড়ান দিলাম ॥

(৬৮০)

তোরা শোনেক শোনেক ওরে সখিগণ, কেন কর জ্বালাতন, কাতর হয়ে বলছি কথা, ওরে সখী শোন, আমি নিত্যি এসে কদম মূলে, বাঁশী করে থাকি আলাপন, বসনচোরা বলে কটু বল কুবচন ॥ জলের মধ্যে নেমে কর ভর্ৎসনা, কূলের দিকে চেয়ে কেন দেখ না, বাও-বরণ নিয়েছে বসন, আমায় দোষী করোনা, তোদের কমলকান্ত শান্ত হল, উদাস হল তিন কোনা, কূলে এসে কাছে বস, পুরাও মনের বাসনা ।

ঘানির গাছে জুড়বা মোরে, তাতে ভাবনা নাই আমার, নতুন আঁটি ভাংব ধান, যেন বেজার হয়ো না। তেল নেবার বাসনা থাকে, তবে পেঁচী লয়ে এস না, এমনি পুরা পুরে দেব তেল, কানাই কয় তাতে যেন বেজার হয়ো না |

(৬৮১)

নিলে ছলে বৃন্দে বলে, কই ওহে শ্যাম, হায় কি মজা, হয়েছ নতুন রাজা, পেয়ে মথুরাধাম, তুমি মদন মোহন, তুলে বদন, কও হে কথা থাকা শ্যাম, ওহে বৃন্দাবনের গুণধাম, তোমার কাছে বিশেষ কাম, চিন না চিন হরি আমার বৃন্দে দূতি নাম ॥ ব্রজের সময় করতাম আদর, যতই আমি হই কাংগাল, আপন রাজ্য ত্যাজ্য করে এসেছ এই মধুপুরে, পেয়েছ সুন্দরী নারী, তুমি ছিলে চুটাল হলে গোপাল, কি কপাল মরি মরি, ওহে নন্দের শ্রীহরি, আমায় পাঠিয়েছেন কিশোরী, কানাই কয় করেছিলে যাহার পায় ধরাধরি ॥

তোমায় নিতে পাঠিয়েছেন কিশোরী, এখন আমায় চিন না হে হরি, তোমায় কিন্তু চিনি, আমি জানি চিরকাল, তুমি দৈবকিনীর মন মজায়ে, হলে যশোদার গোপাল, ওহে নন্দেরই রাখাল, তুমি রাখতে বনে ধেনুর পাল, এখন মথুরায় এসে হয়েছে দুর্জয় গোপাল ।

(৬৮২)

কৃষ্ণ কয় বৃন্দে দূতি, বলি সম্প্রতি, ব্রজধামে শ্রীমতীকে সাপে দংশাইছে। বলি- বাপ পেয়েছি মা পেয়েছি, আমি পেয়েছি কুব্জা সতী, দেখব রাধের কি হয় গতি ॥ তোমরা যাই কেন বল না, ওসব বিধির ঘটনা, কপাল দোষে পায় কষ্ট কিছুই বোঝা যায় না, সত্যভাবে বলে যাবরে নাইক কোন ছলনা, তোমরা সরে যাও গো চলে, আমি যাব না ॥

ওসব দুঃখের বিবরণ, করিলাম বর্ণনা, মানের দায়ে বাধা আমায়, ধরায় দুই চরণ, অতি যতনেরই ধন, কেন আনিলে বৃন্দাবন, বৃন্দাবনে এনে আমায় করলে জ্বালাতন, পাগলা কানাই বলে, যুগল পদে করি আমি নিবেদন

(৬৮৩)

শ্রীমতি বলে বৃন্দে সই, দুটো মনের কথা কই, মনের দুঃখ মনে আছে, বলিনে কারোর কাছে, না বললে কেমনে ঘরে রই । এ গো বৃন্দে সে গো বৃন্দে, আমার নিন্দে করা উচিত নয়, তবু কিঞ্চিৎ কইতে হয়, কালা নয় সে কুল মজানে কালার জ্বালায় সদা জ্বলি, জ্বলে মলাম ওলো সই ॥ জানতাম যদি নিরবধি সই-কালার অন্তরে কালি, তবে কি প্রাণ সঁপিতাম, যৌবন দিতাম, খেলতাম রসের খেলা।

কালা নয় সে চিকন কালা, ঘটালো দ্বিগুণ জ্বালা, আর না এলো গুলো সই ॥ শোন বলি আদি অন্ত, আশা সেই প্রাণ কান্ত, কানাই বলে, সুমিষ্ট করিলাম বর্ণন, বৃন্দাবনে গেলে পরে রানী যশোদা করবে বন্ধন, বৃন্দ শ্রীনন্দের নন্দন, সে যে আসে গোবিন্দ প্রাণ গোবিন্দ, যদি পাই হারাধন |

(৬৮৪)

গুলো রাই ঝগড়াঝাটি করিসনে, তোর এখন কূদশা, আমার দিক লেগে যায়। কতি, চুপ করে থাক হারামজাদি, তোরে দেখায় রং তামাশা। আমার দাদারে লয়ে কুঞ্জে যেয়ে, পুরাও মনের আশা, দাদা একদিন না এলে, তুমি ক’রে থাক গোসা  তোর কুটনী আছে বৃন্দে দূতি, হাত উলস দেয় পথে যাতি, আমার লেগেছে কালি, কখন যাবে না ধুলি, তুইতো বেহায়া নারী, পীরিত করার হাড়ি, আমার ভাইর মাথা খালি, মরি! ওলো ছাই কপালি ॥

বিকেল বেলা ঘাটে যেতে নিষেধ করে দিছি, তবু সময় হ’লে ছটফটানি তরুণ জ্বরে বিষি, ওলো ও রং বিলাসী সদায় তোর ঘাসিঘুসি, যার সাথে বিবাদ করে দাদা, তার সাথে তোর প্রেমের গাতা, তুই তো রসিকা মেয়ে হাত বাড়িয়ে আকাশের চাঁদ ধর যেয়ে, পাগল কানাই করে হায় হায়, প্রেম জানে না সুজাতা ॥

(৬৮৫)

শ্রীমতি কয় বৃন্দে দূতি বল বল উপায় কি করি, মান করে প্রাণ হারাইলাম নয়নে মোর বচ্ছে বারি, না দেখলে প্রাণে মরি উপায় বল কি করি বন্ধু বিনে এ জীবনে থাকতে ঘরে না পারি, যমুনার জলে প্রাণ ত্যাজিব যদি না আসে শ্রীহরি, এ দেহ প্রাণ সব দিয়েছি কিছুই আমার নাই বাকি, একটুখানি মান করিয়ে আমার সব হল ফাঁকিজুকি ॥ পায় ধরি মিনতি করি বন্ধু আমায় দাও এনে, এবার পেলে কেলে সোনা অঞ্চলে বাঁধিব যতনে, পাগলা কানাই বলে-শ্যাম পীরিত যে জন করেছে, তার ভয় ভাবনা লোক লজ্জা সব দূর হয়ে গেছে।

(৬৮৬)

সখীরে প্রাণ তো বাঁচে না, আসি বলে মথুরায় গেল, আর ত ফিরে এল না, আমার মনে আর প্রবোধ মানে না, আর কতকাল সইব জ্বালা নাগর তো আর এল না ॥ সখীরে সব করিতে পার, ভাংগা প্রেমে জোড়া দিয়ে আরো, সে প্রেম নতুন করতে পার। আমি ঘাটে পথে কেঁদে ফিরি, সোনার দেহের গেল ছিরি, কংকাল শুধু হল সার ॥ সখীরে মান করিলে কেন, তুই মান করে শ্যাম হারাইলি, কাঁচা চুলে হেন, তোর মানের গোড়ায় দিব এনে, বাসী চুলোর ছাই, নাগর আসবে নাক করবিরে হাই পাই, বলছে কথা পাগলা কানাই

(৬৮৭)

বৃন্দে বলে নন্দের ই কালা, তুমি দিও না হে আর জ্বালা, ব্রজপুরে চল এই বেলা। ব্রজপুরের গোপীগণে কাদছে বসে দুই বেলা, প্রেম বিচ্ছেদে হয়ে উতলা, রাস্তা পানে চেয়ে আছে শ্যাম, হাতে লয়ে ফুলের মালা ॥ চল চল ও বংশীধারী তোমায় লয়ে যাব কাছারী, রায় রাজা শ্যাম করে ডিগ্রী জারী, আমি দাস খতে চাপড়াসী।

হয়ে, আইছি এবার তোমায় নিতে, দুই হস্তে লাগায়ে প্রেম ডুরি, তোমায় বন্ধন করে লয়ে যাব শ্যাম, মথুরায় কারে ভয় রাখি। রাধের সনে করে পীরিতি, ও কাজ হয়েছিল জুতিজাতি, এখন কেন কর কু-রীতি, তুমি চল চল বংশীধারী, কানছে বসে রাই কিশোরী, পদ্মমধু ত্যাজ্য কারে শ্যাম, কানাই কয় শিমুলের মধু এলে খাতি ।

 

পাগলা কানাই এর গান

 

(৬৮৮)

বৃন্দে দূতি বলি সম্প্রতি মোরে কটু বচন বল না, ছিলাম কি সুখেতে বৃন্দাবনে তা কি তুমি জান না? বড় কষ্টে পড়ে বৃন্দে দূতি, এসেছি এই মথুরায় ॥ যাও, যাও, যাও বৃন্দের দৃতি, আর এস না মথুরায়, রাধার কথা শুনলে পরে আমার জীবন দক্ষ হয়। আমি মানে হত হলাম কত, তবু রাধার মন পেলাম না । অমন অবিচারী ব্রজপুরী বৃন্দে, আমি আর যাব না। কুটিলার কু-মন্ত্র পেয়ে আয়ান গেল নিধুবনে, নিধুবনে তখন আমি দুর্জয় কালি হই সেখানে, কানাই কয় ও কালা সাধিক দেখিনি তোৱে বৃন্দাবনে

(৬৮৯)

বৃন্দে তুমি নিন্দে করো না আমি পুরায়ে ভক্তের বাসনা, রাধার কুঞ্জে বদ্ধ থেকে একদিন আসতে পারলাম না । এক নিশি তুই একলা ছিলি লো-বৃন্দে তাইতে বাচ না ! আমি জানলাম বৃন্দে তুমি অসতী, তুমি কখন ঘটাবা কুমতি, প্রাণ বাধিবা নিশিভাগ রাতি, যেমন রামের সংগে রাবণের বিবাদ, আমায় করলে ঐ গতি, হাজার হাজার প্রণাম করি লো-বৃন্দে তোমার পীরিতি ॥

ও বেশে আর কুঞ্জে যেও না, তোমায় বারণ করেলে শোন না, বললে কথা গণ্য কর না, তুমি যমুনায় স্নান করে এস, নইলে আছান পাবা না, চন্দ্রবদন দুটো আখি হে, তোমার দেখছি টানাটানা ॥ কানাই বলে কৃষ্ণ প্রেম-অল্পে না যায় জানা।

 

 

 

পাগলা কানাই এর গানের পর্ব ৮:

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৮

 

(৬৯০)

ভাল ভাল বন্ধু জোরের কপাল, বন্ধু ভালই সাজিল, কিছু বাকি না রাখিল । আমরা যত বিধবা নারী, হব একাকারী, ওরে এরাদা ছিল, ওরে সেও আশা ছিল, প্রাণপতির আগুনে জ্বলি রাতদিন, পতি বিনে আমার জনম বিফল গেল ॥

আমায় কেন দিলে বিয়ে, পরের হয়ে রইলাম বার মাস, হলাম কাচা চুলে নারী, রইলাম পরের বাড়ি, মনে মনে মন যাতনা, হয়ে পতির সুখ বিলাস, ও পতি, আর না পাবি সতি, মোরে কর সাথী, মরে যেয়ে হব তোমার দাসের দাস ॥ ফুল দেব বন্ধুর পায়, যদি মানোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়, কথা মনে মনে আছে, আমি হাতের শাখা ছাড়ি, হলাম বেওয়া নাড়ি, যেমন বেহুলা সতী, বাচাতে আপন পতি, বেড়ায় ঘাটে ঘাটে, ওমনি হল মোর ললাটে, পাগল কানাই বলে, জনম ভরে, হলাম আমি নটপটে ।

(৬৯১)

গুলো বৃন্দে সই, মজার কথা কই, রাধের দৃতি তুমি হয়েছ, দূতিগিরি ব্যবসা ভারি, ভাল কাজটি পেয়েছ, যেমন চমক তেমন ঠমক লো, ভবে বাহার দিতেছ । একটা কথা তাই, তোমারে সুধাই, বল বল বৃন্দে দূতি, ভবের পরে কয় দৃতি রয় তুমি রাধার কোন দৃতি, সেই কথাটি করে খাটি গো, কথা কও দশের প্রতি । কোন দৃতি হয়ে তমি মথুরায় গিয়েছিলে, সেও কথাটি বলবা খুলে, জ্ঞান ভেদে কয় দূতি হয় শুনবে বসে সকলে, মূর্খ মতি পাগলা কানাই গে বৃন্দে পড়েছ কলে ।

(৬৯২)

শোন বৃন্দে তোমারে সুধাই, এক কাণ্ড দেখে মনে শংকা হয়, বৃন্দাবনে আসতে আমি পথের মধ্যে দেখতে পাই, এক রমণী মাথায় ফনি, জটা আছে তাহারই মাথায় ॥ অর্ধচন্দ্র শিবের কপালে, সেই কাথাটি শুনি শাস্ত্রে, সেই রমণীর অর্ধচন্দ্র পাচটা আছে কপালে, দেখে শুনে হলাম হত, মোর মাথায় বুদ্ধি না খেলে ॥ এক কাণ্ড দেখে শংকা হয়, বাঘছালে তাহার পরনেতে রয়, মহাদেবের বাঘছাল আছে, কিন্তু সে মহাদেব নয়, পাগলা কানাই বলে, সেই রমণীর, হাতেতে রক্তের ধারা বয়

(৬৯৩)

হরিপ্রিয় বৃন্দে তুমি, শুনেছি শাস্ত্ৰ বাণী, শাস্ত্র জ্ঞানে তুমি ভারি শুনি, দেখলাম এক কাণ্ড বৃন্দাবনী ॥ সোনার বরণ এক রমণী বসে সিংহাসনে, সোনার বরণ তাহার বসন, হাসি ভরা বদনে, অষ্ট অলং কত ভড়ং তাহার পরিধানে। একটি অসুর সেই রমণীর সামনেতে রয়েছে, সেই অসুরের জিহবা নারী এক হাতে ধরেছ, আর এক হাতে মুগুর দেখি, কানাই কয় সে কোন জনা, বল বয়াতি শুনতে বাসনা ॥

(৬৯৪)

দূতি আমি সুধাই সম্প্ৰতি-কাল যখন তোর কুঞ্জে আসি, দেখলাম বিপরীতি, একজন নারী একজন পুরুষ, করে তারা বিপরীত রীতি । পুরুষ থাকে রমণীর নীচে, হায়, কিরে কলির এই রীতি ॥

খড়গ আছে তাহার হাতেতে, নিজের মু ছেদন করলে সেই খড়গতে, তার গাল হতে রক্ত ওঠে, তিন ধার হয়ে, একধার খায় নিজের মুখেতে, ডানি বামে দুইজন সখী দুই ধার তাদের মুখেতে মরায় তারা দাড়ায়ে আছে, তিন ধার রক্ত তিন জনাতে, পান যে করতেছে । কপালেতে তিনটি চক্ষু সেই রমণীর, তিন চোখে তিন দেবতা আছে, পাগল কানাই বলে, চন্দ্র, সূর্য, অগ্নিদেব, এই তিনজনা তার সাথে রয়েছে |

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৮

 

(৬৯৫)

বৃন্দে সখী রাগ করো না দিও না ফাঁকি, ছোয়াল করি এই আসরে জবাব দিয়ে যাও দেখি, বুঝেছি শাস্ত্র পুরাণে জেনে শুনে, রাধার তো আছে আর্ট সখী, তুমি তাদের সবার বড় লো, কথা কও চন্দ্ৰমুখী কত প্রকার সখী আছে জগতে, রকম রকম করে কথা বল সভাতে, সখীদের শ্রেণির কথা, বল হেথা, শুনতে মোদের আশা মনেতে, তুমিই বা কোন সখী হয়ে ছিলে সেই রাধারই সাথে ॥

আরো এক কথা বলি সত্য দিবা পরিচয়, চণ্ডী নারী কারে বলে কথা বল এই সভায়, তুমি বলো না মা চণ্ডীর কথা, দরকার নেই তার কথায়, কোন দোষগুণ সেই নারী ধরে, অবোধ পাগলা কানাই কয়

(৬৯৬)

তুমি বৃন্দে দূতি নাম ধরেছ এই সভার মাঝারে, একটি কথা বৃন্দে দৃতি সুধাই আজ তোমারে, এই রাজ আসরে ॥ কাল যখন আসতেছিলাম তোদের বৃন্দাবনে, পথের মাঝে এক ঘটনা দেখে সদায় আজ তাই পড়ে মনে ॥ এক রমণী ত্রিনয়নী দেখা হল মোর সাথে, রক্তবর্ণ তাহার অংগ ধনুক বাণ হাতে, কানাই বলে, সেই যে নারী আসীন আছে, পাঁচজন লোক তার আসনের নীচে ॥

(৬৯৭)

কত জনার কৃদশা হইছে-তা আমি বইলে যাই দশের কাছে, তারা রোজা নামাজ ছেড়ে দিছে, সুদের টাকা বড় হইছে, রাত হলে মন কতই বুঝে, দিন হলে শরাই বলে-কাছা ছেড়ে দিয়া তারা মুসলমান হইছে । যখনই যায় মেজমান বাড়ি অজু করি তাড়াতাড়ি।

লোকের কাছে চালাকি করে নামাজ আদায় করি, আবার তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ি, হাত ধরিয়া দরূদ পড়ি, গোস্ত খাবার যোগাড় করি । তাই পাগলা কানাই বলে, দশের হুজুরী, বিধাতার কাছে খাটবে না এসব জারিজুরি, আবার যখন সেই রমজান শরীফ হয়, ওজু করে কেউ তামাক খায়, সে সব খায় বলি আমি ধর্মরাজ সভায়, আবার জিজ্ঞাসে করিলাম কাছে হুক্কাটা তাই কেমন আছে, হুক্কাটা দুয়ারের মাঝে, চাপে চুপে খাওয়ান যায়, সেই কথা সভায় এসে বললাম সমুদয়

(৬৯৮)

সাধের যৌবন বৃথা গেল, ফুলমালা যুবতী, আয়না হাতে মিশি দাতে, কলা বড় সতী। জেলার লোকে বলছে, মালা-তুই বড় যুবতী,(তোর) মামলা গেল ফৌজদারিতি । জেলার হাকিম খান বাহাদুর মেদনীপুর বসতী তিনার হুজুরে বলছে কথা, ঐ ফুল মালা যুবতী, পায় ধরি মিনতি করি আর দিওনা বেভি, আমি আর করব না পীরিতি ॥

আরমানুল্লা ফরমানুল্লা, সলিম বেটা ঘষায়, তোর ভাই- বেটার বউ পড়ল যেন, আওলাকেশীর দশায়, নবীন বাবু মশায় তারে দিয়েছিলেন খুব সাজা, কানাই বয়ে, টের পাবি তুই, ঘানি টানার মজা ।

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৮

 

(৬৯৯)

পাগলা কানাই বলে রে ভাই, ইংরেজের কারখানা, বাংলাতে পাঠায়ে দিল, আহারে ঠিকদানা । ঠিকদানা সংসারে এসে সোনার মান থাকল না, ভাইরে, মানি লোকের মান রল না ॥ এক যুবতী কেদে আগে পতি জনার বলে, ভাল মালা দেখে এলাম কিনে দাও মোর গলে ।

ও মালা গলে দিয়ে স্নান করিব, যমুনার ঐ ঘাটে, মালা দেখতে ভাল দিদির গলে ॥ মনোহারী দোকানের মালা পয়সায় ছয়খান দরে, আর এক যুবতী কিনে মালা লয়ে গেল তার ঘরে। ঘরে যেয়ে সেই যুবতী আয়না তালাশ করে, বল, কেমন দেখায় মোরে ॥

(৭০০)

শোন ভাই আমি দুঃখে মরে যাই, একখানা মশার ধূয়ো সভাতে জানাই, কত ধন্য গেরাম বাওডাংগা, কারোর ঘরে মশারী নাই, চোখে দেখলাম তাই। মশার জ্বালায় সারা রাত অস্থির হয়ে, আসরে ঘুরিয়া বেড়াই ॥

মশা কানের গোড়ায় ভন ভন করে, আমি ভয়ে পালাই কাথার ভিতরে, কাথা গরম বেধে দম আটকায়ে, অমনি কাথা দেই ফেলে, বাশ বাগানের কটা মশা, ফাঁক পেলে হুল ফুটায় ধরে কলে বলে কৌশলতে একটি মশার দিলাম ঘাড় ছিড়ে, অন্য মশা রাগ করিয়ে বনে গেল চলে, এল সব জুটে, বাশ বাগানের কটা মশা এল ভাই ঢাল সড়কী লয়ে ॥ মশা বলে পাগলা কানাই আছে কি হালে, তোরে ধরতে পারলে শড়কীর আগায়, মারব জানে মালে, আমি ভয়তে পালাই, কালু মিয়ার বেগুন পাছের তলে ।

(৭০১)

এক কলের ঘরে, বিরাজ করে চার রাজা, বসে চার খোপে, আট কুঠুরীর নয় মহস্ত বসেছেন রূপে । ঘরের দ্বারে দ্বারে চৌকি ফেরে, দেখরে আজব ঘর বেধেছে কিভাবে, ঘরের দীন বন্ধু কারীগর, আট কুঠুরী নবদ্বার, এক সোনার মানুষ ঘরে বন্ধ হয়েছে, তার রূপে ও ঘর করতেছে ভর, দুই খুঁটির পর, এক পাড়ের পর করে জোর, থরে থরে মিছিল করে রাত দিনে হয় শোর।

ঘরের আদালত ফৌজদারী, কৌশলের মাল-কোঠা ঘর ফাঁসি ডোর। করেন জমা খরচ গভর্নর হুজুর চার তালায় বাহাদুর, নীচ তলায় বালাম খানা উপর তলা আপীল সদর ॥

আমি তারিফ করি কামিল করের যে বেধেছে ঘর খানা, অধম পাগল কানাই কয় ঘরের বশত মজার হলনা যেদিন মেয়াদ ফুরাবে ছুটি হবে সোবার মানুষ যে জন্য, জজ ম্যাজিষ্টেট গভর্নমেন্ট, কেউতো থাকবে না । যে দিন আসবে সে হুকুম জারী, ঘরে ঘরে বেধে নেবে, আছে ঘরের যতজনা, সেই সদরালার হুকুম ভারী, দনই হাতে লাগায় ডুরি, জজ ব্যারিষ্টার চলে যাবে, পড়ে রবে শুধু জেলখানা |

 

পাগলা কানাইরে গান পর্ব ৬

 

(৭০২)

পাগল কানাই বলে ভাই সকলে, কেমনে দেই পাড়ি, যদি ডুবে মরি, সহস্রদল পদ্ম আছে নীল দারের কূলি, আবার শোন তাই বলি, আমরা ফুল যদি তুলি, ভাঙতো যদি ফুলের বোটা, সাধু কূলে রইতো খোটা, বেড়াতাম কূলে কূলে, সে মানুষের বসত হল ঢেউর পরেই ।

গুরু শিষ্য বসে ফুল যদি তোলে, তারে বলি সাধু বটে, যাই সেই নদীর ঘাটে, বসে তপজপ করে । এহি কামিনীর কোলে, কত শিশু দোল দোলে, জলে স্থলে একসাথ হয়ে, বাতাসেরই সংগে মিশে, সে মানুষ সমুদ্দুরে ঢেউ খেলে, সে মানুষের বসত হল ঢেউর পরে।

(৭০৩)

এক কলের তরী ব’য়ে বেড়ায় দোকানদার, পিছে তার এক নৌকাতে চার ব্যাপারী, ছয় জন মুটে, ওরা ফিরতেছে এক জোটে, কোমার নৌকা করবে থল । ঠকের দেশে, কুবাতাসে, কেন খাটাও কল । অধম পাগল কানাই কয় লোভী মন আমার রে, তোমার দাড়ি মাল্লা সব কোটিনার দল, ঠক বাজারের মানুষ যারা রে কোটনার গোলায় মরবে তারা, পাড়ি দেওয়া বিরাট দারারে, সাধু চেতন যারা ।

(৭০৪)

কোন সুতোরে গড়েছে তরী, নামটি কি তারে (রে- ভালো), যেজন তরীর গড়ন করেছে। (রে- ভালো) যেজন তরীর…। আর সুতোরের ঐ নাগাল পালি, নিতাম তরী সারে, রে ভাই নিতাম তরী সা’রে । ওতোর আপন দোষে ডুবলো তরী, দোষ দিবি তুই কারে, (রে- ভালো)। ওরে বা’ন চুয়ায়ে উঠলে পানি, পড়বি সেদিন ফ্যারে, রে ভাই পড়বি সেদিন ফ্যারে। পাগলা কানাই বলে এই দুনিয়া, সব সমান হয়েছে, রে ভাই।

 

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment