আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পাগলা কানাই পরিশিষ্ট।
Table of Contents
পাগলা কানাই পরিশিষ্ট

ইদু বিশ্বাস ঘোড়ামারা, ঝিনাইদাহ
(৭০৫)
নামটি আমার ইদু বিশ্বাস ঘোড়ামারা বাড়ি । চুল পা’কে হয়েছে হুড়ো, দেখে সব যোয়ান বুড়ো, করে দ’ড়োদড়ি । আমার হাসি মুখে পাকা দাড়ি । ছিল তুলনা রসুন খাঁ, পাঁচড়ে গাঁ তার বাড়ি। আবালপুরের পাগলা কোরেশ, বেশ ছিল বয়াতি ।
একবার বয়াতি, আখড়ার বিনোদ, তিলক হোসেন- আড়ংঘাটার, নেওয়াজ হোসেন পুটের বসতি ॥ আড়োর নৈমদ্দি, বুদ্ধির নাগর বিদ্যার সাগর: মৌলভি সম্প্রীতি। জাহের আলী, তাহের আলি-ঘুনি—তি ॥ বড় এনাতুল্য, ছোট এনাতুল্য, লক্ষিপুরের তরীবুল্য; আরে ও দেখ, পাগলা কানাই বেড়বাড়িতি (অসম্পূর্ণ)
(৭০৬)
আর নামাজকে পড়ো পড়ো-শোনরে বাউল, ভজো মনকির নকির তারা। ওরে জিহবা টানে শিক লাগাবে, মারবে জুলমাতের কোড়া। নামাজ কি ধন চিনলি না তোরা, তোরা তো শয়তানের গুড়া আর নামাজকে পড়িতে কে নিষেধ করেছে, খাম-পারা বসন তোর কেবা দেছে, ওরে চিমটে হাতে, মালই সাথে, কোপনী নিস পিছেতে।
ইদু বিশ্বাস কয়, শোনরে হারামখোর মচ্ছপ খাস মুচি বাড়িতে ॥ আর যখন তুই শিশু ছিলি, শোনরে হারামজাদা পাজি হারাম খোর। সে সব কথা কিছুই নাই মনে, চোখির পর্দা নাইরে তোর। ওরে নন্দার বিটি মনষা” গো, তারা তো নিতান্ত শুয়োর ॥
১-সাদা থান কাপড় লাল/হলুদ রং করে বাউল/ বৈরাগীরা ব্যবহার করে। ২-তিন বয়লা সহ লোহার তৈরি দু-ফলা বিশিষ্ট বড় শন্নার মত । ৩-বিচিত্র রংয়ের তিন কোনা ঝোলা । ৪-তিন কোনা বিশিষ্ট লেংটি। ৫-মাছ (উলেখ্য যে বাউল ফকিরদের মাছ-মাংস নিষিদ্ধ)। ৬-দূর্গা । ৭-সর্পের রাণী ।
(৭০৭)
মেস্তেরীর নাম দীন নাথ শুনি, ধন্য সুতোর তার কি আমি চিনি । তার নামে আছে কত মধু, পান করে সব যত সাধু, জানবে কি তাই মরা ইদু, জ্ঞান শন্যি । আছে যত লোক’ ভব সিন্ধু, গড়েছে সুতোর বন্ধু, দিয়ে জারা বিন্দু পানি ।
বিষম ঘোর অন্ধকারে, সে নৌকা তৈয়ার করে যখন, তার শক্তি ছাড়া দাড়া গড়া তখন। তার গড়ন প্রস্তুত হলে সারা আসল শক্তি মুক্তি যারা আনেক জন। আছে বরুণ-বায়ু-ইন্দ্ৰ-চন্দ্ৰ-ফনিন্দ্র মহিন্দ্ৰত অনেক জন । আসে তারা সুখ বিলাসে, যার যার জাগায় সেই সেই বসে, ক’রো না হে ভয়, চালাও নৌকা যখন ॥
চলে নৌকা শুকনো দিয়ে হয়ে অতি খুশী। তার চতুক পাশে দেখতে আসে যত প্রতিবাসী। কেউ বলে এমন দেখি না, মেয়ে লোকে গুণ টানে ছি, ছি। কেউ বলে ঐ বিটির হাতে কুঁজি” । তিনজন মাঝি থাকতে নৌকায়, গুণ টানিতে কেন বিটি হয় রাজী। আবার ইঁদু দেখি ফাঁকিজুকি, মিথ্যা ভোজবাজী । যে দিন আসবে শমন, করবে সব পলায়ন, তখন সার সেই সুতোর বাবাজী (উত্তর পদ পাঃ কাঃ-৯৫ নং পদ) ১-এখানে অর্থ সর্বপ্রকার সৃষ্টি । ২-আসল বস্তু/আত্মা । ৩-ষড়রিপু । ৪-চাবি। ৫- ভরসা স্থল ।
(৭০৮)
আনে এক পরের ছেলে, ঘিন্না পিত্তি সকল ফেলে, দাঁতে মাজন চাক্ষে কাজল, পুরাই মনের আঁশ । শিক্ষা নিতে আসে যখন, বাবা বলে ডাকে তখন, শিক্ষা যখন সারা হয়, লোকের কাছে গল্প কয়, স্বপ্নে পাইছি গান, কারও কাছে শিক্ষা নাই । পথে ঘাটে দেখা হলি বলে যে, কেমন আছ ভাই। ভেবে ইদু বিশ্বাস কয়, সে যে জারো ছেলে হয়
(৭০৯)
আমার বলতে ও বিদরে প্রাণ, দয়াল বন্ধু ছব্বুহান। কখন কি করে বিধি, না জানি তার সন্ধান । পাগলা কানাই ছিল ভাল, করতো চোটে গান । যত লোক প্রধান প্রধান, বলে পাগলা কানাইর আন, শোন পাগলার গান। এবারকার তলব হয়ে, সরকারী শমন পেয়ে, ও সে গেছে নিজস্থান ১২৯৯ সালের ২৮শে আষাঢ় ছিল অশান্তে কাল’ । বৃহস্পতি গত বিধি হ’রে নিচ্ছে কাল ।
দেখে এলাম পাগলের দল, কি হবে বল, কানাইর সঙ্গে পাল্লাহ হবে, ধর্ম রাজা গান শুনিবে, ইদু বিশ্বাস তুই চল ॥ ইদু বিশ্বাস বলে ও মন, তুমি কেমন কথা কও । ও মন কথা ফের না কও, চুপি চুপি ফিরে যাও। বায়না বিনে যায়না ইদু বিশ্বাস ভেবে রুও । আমাদের নিতে চাও, সাইজীর পত্র দেখাও, ঠিক কথা কও। আমার হবে মজা দেখব ভাল, ধর্ম রাজার’ হাত চিঠি খান দাও ১-বিদির্ণ । ২-শ্রেষ্ঠ অর্থে । ৩-মৃতপুরী/কবর । ৪-সময় । ৫-জীবন। ৬-ওস্তাদ । ৭- আসর আয়োজক ।
(৭১০)
চমৎকার শূন্যের পার, এক গাছ রয়েছে। ধণ্য সে গাছের মূল, আকাশে গিয়েছে। দেখে দেখে গাছ ইদু বিশ্বাসের, অবিশ্বাস হয়েছে। গাছের গোড়ায় মাটি নেই, তবুও গাছটি তাজা আছে। কত বৈষ্টম-সাধু-ভক্ত গণে, সন্ধান কেউ কেউ পেয়েছে। আছে সে, যে ক্ষমতা গাছে দিয়েছে ॥ সাধ্য কি গাছের সন্ধান করি, হাদে তার চতুক পাশে ঘুরি, তার পাইনে কোনই গতি । আবার চতুক লালন চতুক পালন, হলেন জগৎ পতি । সংবৃত সংহার” করিয়ে গাছের এমন রীতি।
মহিন্দ্র যোগ” লাগলে পরে, দুই গাছে এক ফল ধরে, ফল ধ’রে জেন্দেগী শোভা হয় । কয় ইঁদু, দয়াল বন্ধু, কামিল কারের জয় ॥ চিরকাল সেই যে ফল, এই ভবে হয় উৎপত্তি । একটা গাছ হয় পুরুষ, ও তার একটা গাছ প্রকৃতি । দুই গাছে মিলন হয়ে, ফল ধরে তাইতি। ওর শিকড়েতে ফল ধরেছে, হয়রে তমাগিরী * । ডাল ছাড়া তার মূল রয়েছে, সর্ব গাছ উপরি । সে ফল খায় না, সংবৃতি। মধু মিষ্ট বাক্য সে ফল, সাধ করে দেখতি ॥ ১-নির্বোধ। ২-গোপন । ৩-সংগ্রহ। ৪-মহা যোগ। ৫-তমঃ গুন । ৬-গোপন ।
(৭১১)
বাহা মজার উদ্ব্দো গাছে ফুল ফোটে মাসে মাসে গাছের গোড়ায় নেই মাটি, তবু গাছটি তাজা আছে । ইঁদু বিশ্বাস কয় গাছের কথা, ফি ডালে হয় পাঁচটি পাতা, ধন্য গাছের শিকড় আসমানে গেছে ॥ ও তার ফল ধরেছে খোলের মাধ্য, সন্ধান করে কার বা সাদ্ধি; ওরে দুই গাছে এক মিলন হয়ে, মইতনে ফল ধরে তাইতি ।
নীরপুরে মোহরাতে, ফুলের মূলে বাধ্য জগৎপতি ॥ ওয়ার কপাল ভাল, সে পেয়ে গেল; সাধু বলে হায় কি হলো হায় কি হলো- আমি ইদু হলাম চুদু, ফল পেয়ে হারায়ছি। ফল খসে পড়ে যখন, খুশি হয় সকলের মন; বিধাতার ফল পলি খসে, সব জ্বালা হবে নিবারণ । তুল্য নাইরে সে ফল ইদু, তা অমূল্য রতন।
(৭১২)
দেখবি যদি গাছের যদি, বৃক-শ্বেত জবা । বিরণচিমান’ চিত্ত সরোজ”, গরল থাকে জবা । এই বংশী বাদন-পুত্র মদন, বদন ভরে দেখতে পাবা । যে ফুলের সৌরভে জগৎ পতি, বাপরে বাবা। ধন্য ধন্য স্বর্ণ বর্ণ, ধন্য বটে সেই জবা। থাকে যার সুভাগ্যেতে সে ফুলের লগ্ন যোগে ফল পাবা ॥ সেই যে ফুলের ফল, ও যার সুভাগ্যের কপাল, যে পাবে সেই ফল । দুঃখ জ্বালা সব দূরে যাবে, হবে না নি-হাল” । এর ব্রহ্মা ফুলের সঙ্গে রঙ্গে, আছে চিরকাল ।
এই বিষ্ণু ছাড়া নাই সে ফল । এই ত্রৈ-লক্ষ” তোমারে সৃষ্টি, তব চিরকাল । দেবের দেব মহাদেব কালীর কালী, রক্ষা করো জীবন কাল । সকল প্রভু ছাড়ে যাবে ইঁদুর হলি অন্তিম কাল ১-সাদা নির্যাস। ২-ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব/মহাদেব । ৩-মন/হৃদয় । ৪-পদ্মফুল/লক্ষী । ৫-বিষ । ৬-কৃষ্ণ । ৭-খারাপ অবস্থা। ৮-স্বর্গ-মর্ত-পাতাল ।

(৭১৩)
মন তুমি পড়বা ফেরে-যন ঢোকে ভাঙ্গা চোরের মত, অমনি বেড়ায় ঘুরে। মায়া জালে রাখেছ সা’রে। কাল শমন ডাকাতি আসে ঘটাবে তোরে। পারবিনা। সেদিন, পড়বা পাথারে ছাড়ো ছাড়ো প্রেম রসের খেলা, তুই চেতন হয়ে দেখনা চায়ে, ইলিরে তুই বে-ভুলা। ভোর পিছের দিকে ডুবে যায় বেলা। কাল শমন। ডাকাতি আসে ঘটাবে জ্বালা। কোথায় রবে ডোর-কৌপীন, কোথায় রবে আঁচলা ঝোলা।
তাই বুঝিয়ে চলো ফেরো, ও মন ভোলা। সে দিন তুমি একলা ঘরে থাকবা একেলা ॥ স্তরে অবুঝ মন, গুরু বা’নত দিয়ে রাগে এখন। আবার মনের যদি মন, বিছিয়ে করিও ওজন। জাগায় মাধায় উদ্ধার পেয়ে হল, শ্রীরূপ সাঁই-তোন” । আয়রে সাধু, হারা ইদু, সাধন করি এখন ১-তিন কোনা বিশিষ্ট ল্যাংট। ২-মারফতের ফকিরগণ শিষ্যত্ব গ্রহণ কালে শুরু মন্ত্র নিলে গুরু কর্তৃক তিন কোনা বিশিষ্ট বিচিত্র রং-এর তৈরি যে ঝোলা। ৩- ভক্তি/ দোহায় দেয়া ।৪-দেহ, এখানে সৃষ্টিকর্তা।
(৭১৪)
চার পোতায় এক ঘর বেঁধেছে, ঘরামীর নাম সৃষ্টিধর। তার আছে দীঘি একই প্রমাণ, ঠিক সমান সে ঘর মধ্যস্থলে ঢাকা ঘর, মুর্শিদাবাদ উদয় সদর। কত অলী শোন বলি, ৬৪-গলি’ চার বাজার কানা কালা, বোবারই কারবার। দেখে শংকা হয় আমার চার বাজারে চার দোকানদার, করতেছে কারবার এসে। দোকান মাথায় নিয়ে চলে, কানা দেখে হাসে। বোবার জিনিস কেনে কালা, ডাক দিয়ে কয় মূল্য নিসে। কানা কালা খেলছে খেলা, খেলছে নিশি দিবসে।
সংসারের লোক তিনাদের বশে, আমি ভেবে পাই না দিশে। সেই যে ঘরে বসত করে দেখি, জনম ভরে একজনা। তার কান নেই মুখ নেই চক্ষু দুটি কানা। হাতে না লেখে চোখে না দেখে, নাকে শোকে ক্ষমতা। আমি যে অবিশ্বাস ইদু, সাধু জানে তা। আবার দিনে ব্রহ্মচারি কভু নারী হরে মাথা। ভাল মন্দ লাগে ধন্দ, গন্ধ মালুম হয় তথা । মাতওয়ালে জানতে পারে তা। অপর মুখে কয় কথা ১-কলা বিভাগের ৬৪ প্রকারের ভেন/দেহ গলি। ২-ধর্ম, লক্ষি, বৃদ্ধি ও জ্ঞান।
(৭১৫)
ঘরে বশত করে কত জন, মূল্য ঘরের তুল্য নাই এ তিলা-ভুবন । ধৰ্ম, লক্ষ্ম বৃদ্ধি ও জ্ঞান প্রধান চারজন। একই ঘরে বশত করে নাই কারও দরশন। ঘরের বাঙ’ বরণ ঋপু ইন্দ্র, যোগী মনি-ঋষি মনে ক’রে সাধন। ভিলায়ন” এক তিলাচন”, শত-দলেতে হয় আসন । ক’রে ঘর রক্ষারই কারণ । পরে ভাল কিভা সকল বিটা খল । ঘরে বাসে ধরে নানান বুদ্ধি হল। সর্ব অঙ্গে অগ্নি জ্বলে, অঙ্গ শীতল। সে বিটা জুড়ে আছে স্বর্গ মর্ত পাতাল ।
ও সে আছে যে চার কাল “ও তাই দেখে সাধু, ডরায় ইসু, হারায় সকল বৃদ্ধি বল। ভেবে মন এই তনু ক্ষীণ, আর কি মনে হবে-যে দিন করবে রসাতল দেখে শুনে শংকা মনে, পাইনে কোন দিশে।
আমার দিবা নিশি নিদ্রা নাশি, সেই বিটা তরাই সে। কোন এক মহাপুরুষ নাই তাহার বশে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব তিন জনা বদ্ধ তার পাশে । অন্যায় কোন কাজ করেনা তার তরাসে। ভাল মন্দ বিচার পতি প্রকৃত পুরুষে, এই সর্ব দেশে । সৃষ্টিধর সৃষ্টি করে, কেবল তার আশ্বাসে, শুনে আর বাঁচি না, ভাবে আর কি হবে ইদু বিশ্বাসে ।।
১-ত্রি-ভুবন/স্বর্গ-মর্ত-পাতাল। ২-বাতাস। ৩-পতি রূপ মতো । ৪-কপাল । ৫- কপালে তিলক পরা। ৬-বহু দল বিশিষ্ঠ পদ্ম/ লক্ষ্মী । ৭-সত্য, দ্বাপর, ত্রেতা,
কলি । ৮-পার করে । ৯-ভয়ে।
(৭১৬)
ওরে ভাই সকলরা, ঠিক নাই ঠিক নাই আপন আপন । আবার আপন খবর না জেনে সে, পরকে করে অন্বেষণ । ও সে মনে মনে খোস বদনে কয়, আমি হয়ছি একজন । কচু বাগান দেখিয়ে বলে এইতো বৃন্দাবন ॥ বৃন্দা চিনা, দ্বীন কানা লোকের কর্ম নয় । আবার কয় রতিতে দেহের গঠন, সেও কথাটি জানতে হয়। আবার অস্ত্রে ধার না থাকিলে, কোপ দিলে কোপ সরে যায়।
মুর্শিদ ধরে ভজনা করে জানতে শুনতে হয় ॥ আবার মাল-নদী’ দিয়ে পদ্মা বা’য়ে, দ্বিদল-পদ্মত উৎরায়ে, তুমি কোন দেশে ছিলে । কও অষ্টদল ও ধনি, কনতে ফিরে এলে । দশোম-দশোম-দল’, নির্ণয় শত-দল, কোন দরিয়ার মাটি এনে ধড়ের পত্তন হল । তাই বলে ইঁদু জগৎ বন্ধু, কোথায় চক্ষু দান হল । শিয়াল খেদাতি নাই। কুকুর, তার হুলে লে লে লোঃ ॥
১-শিব। ২-সরস্বতী। ৩-লক্ষ্মী । ৪-ব্রহ্মার অক্ষ, বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, ইন্দ্রের বজ্র, বরুণের পাশ, যমের দন্ড, কার্তিকের শক্তি, কালীর খড়গ কে বলা হয় অষ্ট দল/অষ্ট শক্তি । ৫-শিবের স্থান । ৬-লক্ষ্মী ।
(৭১৭)
ইদু বিশ্বাস বলে ভাইরে ভাই, ফিঙ্গে হল পাখির রাজা, একি হল দায় । আর কুল্লো হল পরশমণি, ঝোড় জঙ্গল মা’রে বেড়ায়। ওরে ঘুঘু ডাকে ভাগাড়ে, চেগা তো চিকরিয়ে বেড়ায়। চালের বাতার চড়ুই বলে, আমি আর হা’সে বাঁচি নাই ॥ আর গড়ই’ হল পাখির বারী, বৈ হল তার বিদ্যাধারী, আবার কাগা হল দিন কানা । ওরে দিন হলে সেই হুতুমতুম, কারও কাছে ভেড়ে না ।
ওরে বাদুর ভাই ঝুল খেলে গাছের গোড়ায়, তাই ইদু বিশ্বাস কয় । আর শালিক থাকে গাঙ্গের দিয়াড়ে, ওর কুঁচ বগীতে ছিগনী ধরে, চখা পাখি তায় কয় । লম্বা জোড়-মানিক, ডেনা, টিয়ে তো ব’সে খাচায় । ওর ময়না কথা বলতেছে। ওরে এত পাখি থাকতে কেন, ফিঙ্গে রাজা হয়েছে ॥ ১-গড়ড় গড়ই পাখি । ২-নিবারণ/প্রতিরোধকারী । ৩-চুপ চাপ থাকা ।
(৭১৮)
আহা শুরু কল্প-তরু দয়াময়-দোকান করতে আলাম ভবে দুই জনায়। তুমি ময়রার ছেলে, আমার জন্ম দিবা কুলে, মাছের ডালি লয়ে মাথায়। কত মিষ্টি মধু আছে আমার ডালায় ॥ চারটা উল্কো পাঁচটা শৈল দশটা আছে গজাড়েতে। পরে দামে ঠিক হইলে দিব গুরুর ধামাতে। যে কয় পয়সা হয় মাছেতে, পয়সা। দিবা হাতেতে, পয়সা নিয়ে যাব আমরা দোকানের পাশেতে বেচা কেনা করব আমি হয়ে নানান রূপী ।
ইদু বিশ্বাস কয়, একা খাব ৩৮-৫ খানা জিলাপী । । তা না হলি মনটা আমার, করবে দাপা দাপি ॥ ১-সৃষ্টিকর্তা/বুদ্ধিমান/মিষ্টি প্রস্তুতকারী। ২-সৃষ্টির চার উপাদান/আগুন-পানি- বাতাস-মাটি । ৩-পঞ্চ ইন্দ্রিয় । ৪-সৃষ্টির দশ চীজ। ৫-সৃষ্টির ৩৮ চীজ। (দেহ গঠন ১৮, ইন্দ্র ১০, ঋপু ৬, চীজ ৪, মোট ৩৮) ।
(৭১৯)
সিলামালেকম বয়াতি ভাই, একটা তত্ত্ব কথা জিজ্ঞাসী। দেখে আলাম একটা সতী, আয়বড় সে গর্ভবতী। কে হয় বল তাহার পতি, কি করে হয় যৌবনবতী । নিজে মূর্খ তাইতি দুঃখ, না পালাম কতি ॥ শাস্ত্রে তাই লিখিল, মস্তক তাহার পেটের ভিতর, পদ বাহির হল । কেবা তাহার জন্ম দিল, কেবা তাহার নাম।
সে কথা সভায় বল, ছেলে সভায় এসে মুছল্লী হল ॥ গিয়েছিলাম পীর তলাতে, তাজ মাথার তছবী হাতে, গলায় প’তে ভেমেলা, সে ছেলে নামাজ পড়ে না। ইদু বিশ্বাস বলে ভেবে, বেহেস্ত জাগা পাবে, হুর পাবে পাঁচজনা ॥

(৭২০)
বুড়ো কালে শুনে আলাম, আজগুবি এক নতুন কথা। শুনে মনে লাগে ধাঁ ধাঁ । মৃতকে জীবিত করতে পারে, বাহা কিবা ক্ষমতা। ও সে জিন্দা হয়ে আহার করে, তা দেখে প্রাণ কাঁপে ডরে, ৭০ হাজার মাথা।
ওসে খানিক রয় জীন্দা হয়ে, খানিক রয় মৃতা ॥ চুপ কর ভাই সকলরা, আর একটি কথা বলো । ও তার এক এক মাথার শব্দে দেখি, ৭০ হাজার মুখ হলো। চারশো নব্বই কোটি মুখ কোন শকশের ছিল । কোরানেতে আছে লিখা, কথা মিথ্যা না। আয়ছি তোমার শব্দ শুনে, কও দেখি ধুয়োর মানে, মূর্খ মতি ইদু বিশ্বাস বলে, কিছুই বুঝতে পারলাম না।
(উত্তর পদ : পাঃ কাঃ ১৬ নম্বর পদ)
(৭২১)
ধন্য কলির অবতার, দেখি এবার ভয়ংকার; তাই ভাবছি মনে মনে, হাস আসে আমার । আবার মরার পেটে জ্যান্ত সন্তান, তায় দেখি এবার। আজব রং ভবের পার, কি কর আর । শুনি তার জীবন কথা, আজা হয় জন্ম দাতা। একি দেখি অবিচার ॥ বলতে আমার ডরে বুক, মা না দেখে পুত্রের মুখ, আজি হল নাতনী, তার অতি সুখ । সন্তান হয়ে মাথা মোড়ে, ঐ বিটা বেকুফ। বে-দাতা মাতা হল। বৈমুখ । মা না দেখে সন্তানের মুখ, ঐ বড় দুঃখ
(৭২২)
একই কথা বলবো কোথা, পিতার পেটে মাতা যে রলো । তুমি বাহির হয়ে এসো জননী গো, ক্ষুধার জ্বালায় পুত্র মলো । যার পেটে রয়েছে কন্যে, ধন্য গর্ভ সেই গর্ভের হলো ॥ সত্য বটে, শাস্ত্র মতে আছে আছে । তাই জিজ্ঞাসিলে লোকে বলে, ইদু বিশ্বাস কেমন কয়েছে। যে জানে সে নাচে, অজ্ঞানে শুনিলে না বাঁচে
(৭২৩)
শুনে দূরস্ত কথা, মর্মে ব্যাথা, একথা কই কার যুতে। লোকের বিশ্বাস যোগ্য হয়। না তাতে। আছে পঞ্চ জনার একই আত্মা, তারা বেড়ায় এক সাথে। আর এক জনার পার আর এক জন আছে তাতে। পাঁচ জনাতে করে বিরোধ, পারে না এক জনার সাথে ॥ পাঁচ জনা পাঁচ গ্রামে থাকে, সদায় করে কলরব। কেউ কারও নয়, আশা পূর্ণ সার সব । ওর কেহই মাতা কেহই পিতা, কেহই হয় ভগ্নীর সোবাদ ।
ভাইকে ডাকে বাবা বলে, একি অবিচার। বাপের সাথে যেয়ে পাতায় ভাই সোবাদ ॥ দেখেছ এমন রীতি বিপরীতি, গুনে পড়ে দেখলাম ভাই/তাদের এমনি রীত দেখি বিপরীত, সদাই বসে ভাবি তাই। আবার কেউ গুরু মা’রে স্বর্গবাসী হয় । কেউ ব্রাহ্মণ মা’রে করে ধর্ম, একি নীতি দেখতে পাই। আমি ইদু অবিশ্বাসী তাই, বসে বসে ভাবি হায়; কানা কালা ল্যাংড়া বোবা, বসে বিচার করেন তায় ।
(৭২৪)
চমৎকার এক কথা শুনলাম ভাই, বল এখন কোথায় যাই। কাতর দেলে ইদু বিশ্বাস কয়। ওস্তাদ আমার পাগলা কানাই, তিনার কাছে শুনতে পাই । ওয়ে তিনটি সন্তান দূর্গার আছে ভাই। ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব জন্ম গ্রহণ করে, তারা সব জংগলেতে যায় ॥ ওযে দূর্গার পেটে শিব জন্মে ছিল, তখন দূর্গা বলিল, পুত্র, তুমি আমারে যে বিয়ে কর ।
আবার তুমি হলে মা জননী, বিয়ে করি কোন শাস্তরী, আমি ধন্য ধন্য বলি মা তোমার ওযে কৈলাশ থেকে শিবের শিব একটি ব্রত করিল । দূর্গা তখন কি কাজ করিল । ওযে অন্তরে তার প্রণয় হলো, সেও কথাটি বলতে হল । আবার অনেক রকম জন্ম নিয়ে, সঙ্গ কাটে ঘরে গেল । ওয়ে শত জন্ম পালনের পর, শিব দুর্গার বিয়ে করিল ।
(৭২৫)
বিপদ আমার জনক পতি জগধাত্রী তারা” । তোর বাপের যে বিপদ, তা তরাত । ওরে যজ্ঞেতে, ভূতে মুতে ভাসাল যজ্ঞ তারা। একি! বিনাশ হল যাগ, বাপ হল। তোর ছাগ, ছাগলেরই বাপ বলে ডাকিস তোরা। মাগো জনক তোমার প্রজাপতি। প্রসূতি জননী । পুত্র হনু গজানন, হরে সাধনের ধন, করি মুণ্ডুজানি । পিতা পুত্র মাতা জননী, স্বামী ভোলা পেটের জ্বালা, দিন ঝোলা বয় রজনী।
পদে পদে বিপদ মাতা, মা তোর ছাগলের গৃহিনী ৷ এসব ঘটনা ঘটালো সর্বজনা, ঘটে ঘটে ঘটনা । তুমি তার কৃত বটে, ঘটে ঘটে ঘটনা। নির্বোধ সন্তানের মনে সর্বদা চঞ্চলা । চাতকের মত বেড়ায় খেলে, থিজালত মা মা বলে, ঐ পেটের জ্বালা, আমার মা কি তখন উতলা। থাক বা না থাক মা তোর ইঁদু, কান্দে কেবল ক্ষুধার জ্বালা । নাই শক্তি ভজন ভক্তি মা, অন্ন দে মা অন্নদা মঙ্গলা ॥ ১-জগতমাতা । ২-উদ্ধারকারী । ৩-পার করা । ৪-যজ্ঞ । ৫-জ্বালাতন করা ।
(৭২৬)
ওমা, ব্রহ্মাস্বরী ভব তারা, ভাবছি বসে ভবানী, তুমি তরাও তরাও ওমা তরাও তারণ কর্তা তারিণী । ওমা কু-মঙ্গলে সর্বস্থলে তোমার এসব কীর্তি । তুমি যারে দিয়েছ এই পদ ছায়া, সে হয়েছে মহারথী। আমি মূর্খ মতি ইদু বিশ্বাস, কি হবে আমার গতি । তুমি বিপদ ভগুনা করতে পার, করুণাময় পিরিতি । ওমা নির্গুনের পারে তোমার দয়া নাই, আমি ভাবছি বসে ঐ । জগৎ জুড়ে নাম শুনি, তোর নাম করুণাময়ী। আমি ভাবছি বসে ইদু বিশ্বাস, অবশেষে দিও আশ্বাস, ওগো ব্রহ্মা নন্দ রানী ॥
(৭২৭)
আমি যে ভাবে আছি ও ভবে, ভবে তুমি তারা কাত্যায়নী । তুমি আমার মাতা, পিতার মাতা, হও জগতের মাতা, মাতার মাতা, মাতা আছে কারামন যোগ্যতা । মনে প’ড়ে গেছে সব, আমার ইন্দ্রজিতার কথা ॥ মহামায়া নাইকো দয়া, আরও সে ইন্দ্রজিতা, বধ করিয়ে দিল তারে। মাগো, রাবণ মহাভণ্ড ছিল, বিনাশ তুমি করলে তারে । তবুও মেহের আছে ঐ চরণে । দ্বীন হীন ইঁদুর প্রতি মাগো মা, তুমি চাও ফিরে |
(৭২৮)
শক্তি দেহে থাকতে ক’লে নিঃশক্তি। ভজি আল্লাহ, পড়ি কালুল্লাহ, কই বুল্লাহ-আমারে জ্বালা কি তাইতি । বর্ণে বর্ণে করেছ সৃষ্টি, দৃষ্টি তায় সবের প্রতি । তারা কি তোর বাপের ঠাকুর, ইঁদুর কি দোষ এতদূর, তাইতি সাংচুর হয়ে সম্প্রীতি । যে সময় করে ক্ষতি, অভয় দিয়ে তার করো মুক্তি । শক্তি তোমার অসুর শক্তি । দিয়ে আসক্তি হরণে, কাওদি তারা দৈত্য তারা, তরাও কোন গুণে।
এই হীন শক্তি হীন ভক্তি, মুক্তি বোঝে না জবানে । এই ত্রৈলক্ষ্য তোমার সৃষ্টি, দৃষ্টি আছে কোন খানে । তা সুধায় এক্ষণে, করো না মা ফাটি ফুটি, ও ছাগল মুখো বেটি, চরণ দুটি দাও না কেনে, রাখিব হৃদ-পদ্ম সনে। ঐ বাসনা রসনা অনেক দিনে
(৭২৯)
মেরো না মোর ঝি, আমি ইদু দেখি মা তোর এই অচল । তোর বাপ মিন্সে, তার অচল । পরের দুঃখে ভিক্ষার স্বামী, তিনারও অচল । মা তোমার সব দফাতে অচল । আমি কূ-পুত্র আমারও অচল । চলুক বা না চলুক আমার গৃহেতে শিঘ্র চল 1 দিব কি বিদ্যা খাদ্য, আদ্য পদ ধরে করিব ভজন । করে যাজন ভোজন, ঘৃণা করিস বিটি পাছে বলে যবন। সাধু চোর সকলেই তো সৃজন, প্রমাণ রাজা দশানন । আমার চলুক বা না চলুক, পাপে তাপে পূর্ণ আমার তরী । অচল অচল কন্যে চালায় কি ফিকিরী ॥ (অসম্পূর্ণ)
(৭৩০)
ইদু বিশ্বাস করে প্রকাশ, এসে কথা কথার পরে। এক নারীর পেটে আর এক নারীর জন্ম হয়েছে কোন শহরে। সে শহর ঘেরা কুলুপ করা, পুরুষ যেতে না পারে। সে শহরে নারী বাঁঝা, মারতেছে প্রেমের মজা, দেখলাম দুই নয়নে ॥ (অসম্পূর্ণ)
(৭৩১)
নামটি আমার ইদু বিশ্বাস, ঘোড়া মারা বাড়ি। চুল পাকে হয়ছে হুড়ো, দেখে সব জোয়ান বুড়ো, করে দৌড়াদৌড়ি। কেহ হাসি মুখে পাকা দাড়ি। ছিল রওশন, শ্যাম কানাই, নাই তুলনা! পাঁচুড়ে গাঁ যার বাড়ি। দিগরের কোৱমানুল্য, লক্ষীপুরের তরীবুল্য, পাগলা কানাই বেড়বাড়ি ॥ আবালপুরের পাগলা কোরেশ বেশ ছিল বয়াতি। হাগড়ার বিনোদ, তিলক হোসেন, আড়ংঘাটার নওয়াজ, আজিম পুটের বসতি ।
বাকালীর আকবর বয়াতি । বড় আকবর খাঁ, বাড়ি ক’চো গাঁ, জাহের আলি, তাহের আলি ঘুনিতি। আড়োর নৈমদ্দি, যার বুদ্ধি, বিদ্যার নাগর, বুদ্ধির সাগর মৌলভী সম্প্রীতি দানেশ, ধোনাই, মীরজান, বুদোই, বদন, মদন, হেরাজ ভুল্য, গানেতে বেড় না পাইল । ইদুর তাড়াতাড়ি যাওয়া হল ।
(৭৩২)
ইদু বিশ্বাস বলে, পঞ্চ জনার একই আত্মা আছে ভবেতে গাঁথা। একই চন্দ্র সে জন্ম নিল, পাণ্ডব বংশে; কুস্তি রানী পঞ্চ জনের হয় মাতা। দুর্বাশার মন্ত্র শুনে কম, মুনি ঠাকুর এই কথা । যাবে ইচ্ছা করবা পতি, সেই এসে পুরাবে তা । পরীক্ষার কারণ করিলেন স্মরণ, সূর্য দেব আসিলেন তখন। আবার সূর্য বাসে, কুস্তি এসে, বলে সূর্য বিধু ব’সে দাও ধ্বনি দাও এখন আমায় আলিঙ্গন ।
(৭৩৩)
খোদার নুরে রাসুল পয়দা, ব্যক্ত কোন খানে। রাতুনেতে রাখলেন বারী কোন খানে । আবার কি প্রকারে রাখলেন বারী, প্রকাশ করে কও আমারে । কয় ইঁদু বিশ্বাস এই বেদনা, লেখা দলিলের কোনে ।
মূর্খ তা জানবে কেনে-শুকর হলে তা জানে । আশ্চর্য এক কার্য দেখে, বসে আমি ভাবতেছি । একটি লোকের ৭০ হাজার মুণ্ডু, আমি দেখে এসেছি। পুরুষ কিংবা মেয়ে হয়, তা বল বয়াতি । আবার বাপ করিল কন্যা হরণ, আহা মরি কি ঘটনা। বিনা বীজে জন্ম হল, সেও তো আরেক জনা । আবার পুরুষ কোথায় গর্ভ ছিল, কও বয়াতি তার ঠিকানা। ধূয়োর জবাব দেচ্ছে নবাব, এই বারে যাবে জানা। ইদু বিশ্বাসের সাধ্য হবেনা, এসব বিধির ঘটনা ॥
(৭৩৪)
শুনি কথা থাকি-মাতা না ছিল যখন। কিসির জন্য পয়দা হল, আসমান-জমিন ত্রি-ভুবন; কও দিন শুনি সে সকল কারণ । কীট-পতঙ্গ-তরুলতা, এরা সব ছিল কোথায় কোথায় ছিল মূল। মা-খাকির কথা কইতে আমার ভয় করে এই দুনিয়ার মাঝারে । যত বান্দা সকলেরই গোর হবে, মা-খাকির উপরে। মা থাকির গোর হবে কোথায়, তাই বল আমারে ।
আওরতের পেটে পুরুষ হয়, তা জানেন সকলে । কোন বা পুরুষের পেটের মধ্যে, তিনটি সন্তান আছে। এই কথাটি বেশ করে, বুঝিয়ে দাও আমারে। ইদু বিশ্বাস ভাবে হত, পাইনা সে কথার অর্থ; কথাতো যথার্থ ॥
(৭৩৫)
ধন্য কলির অবতার, দেখি এবার ভয়ংকার; ভাবছি তাই মনে মনে, দেখে হাস আসে আমার । আবার মরার প্যাটে জ্যান্ত সন্তান, তাই দেখি এবার । শুনি তাই যথা তথা, আজা হয় তার জন্মদাতা; একি অবিচার ॥ বলতে আমার ডরায় বুক, মা না দেখলো পুত্রের মুখ; আজি হইলো নাতনী, অতি সুখ। সন্তান হয়ে মাতা মরলেন, ঐ বিটা বেকুব। বিধাতা মাতার বৈমুখ, এ বড় দুঃখ ।
শুনি তাই যথা তথা, মিছে নয় শাস্তরের কথা; আমার কিসে দুঃখ ॥ বলতে মরবি ভরে প্রাণ, দয়াল বন্ধু মালেক সৰ্ব্বহান; কখন কি করি না জানি সন্ধান । সুতা হইতে মাতা মলেন, আজির নন্দন । কেউ লাগেছে ধন্ধ, আমি অন্ধ। চার যুগেতে বাক্য মধু, শোনা আছে কাছে সাধু, ইঁদুর পছন্দ |
(৭৩৬)
ইদু বিশ্বাস বলে-এক রথ গড়ায়ে দীনবন্ধে । ওরে দীন গদাগদ, এমন রথ, দেখি না ব্রহ্মান্ডে । ৬৪ জোড়া চলে, রথ চলে উল্টো কলে; আর সুতোর শাখা, দেখতে বাকা; রথ চালাচ্ছে মন-পবন হিল্লোলে ॥ সে রথ সুতোর তাপে, আর রাম রাম প্রভু রাম, চিন্তা রাম স্মরণ ।
ত্বরাও সুতোর দীনবন্ধু, দীননাথের মুক্তারণ । এযে কি অন্যায় কারন, পাপীগণ হচ্ছে তারণ । বহুত বহুত লোক থাকিতে, স্বতী নারীর পতি দেখি মরণ; এ দেখি অন্যায় কারণ ॥ সিন্দ্র-খোপে ইন্দ্র-মনি, রয়েছেন তপোজপেত । সুতোর গুণমান রথের প্রমাণ, শতদল” মধ্যে চলে । সুতোর ছাড়া টানে দড়া: মন পবন হিল্লোলে, দেখেছ সকলে ॥ ১-সাধন যন্ত্র । ২-বীর্য । ৩-ধ্যানে। ৪-ফুল / লক্ষ্মী ।
(৭৩৭)
ইদু বিশ্বাস বলে-আমার সন্ধ হল দেলে, মাছের পেটে কন্যা হল, তোমরা শোন সকলে; মচ্ছ গন্ধা নাম রাখিল, ভবের পারে। আবার আষ্টে গন্ধ করে তার গাঁয়, সেই কারণে বিয়ে না হয়। কোথা হতে এক মুনি আসে, আরাম দেচ্ছে নাভীস্থলে; বলবো কি সেথায় আবার পদ্ম ফুলের বাস হলো তার গাঁয়। সেই কারণে বিয়ে না হয় ॥ আর কুয়ো মুড়ি ঝাউ তালায়, মুনির সংগে মিলন হয় ।
স্বর্গের হস্তি ভুমিস্থলে আ’লো, ওরে দুই মস্তান মারেছিল; অম্বালিকা-আম্বালিকা বিধবা হল । ভাশুর বনেতে ছিল, সেই সন্ধানে চলে আলো; চোখ বান্দে জাত রক্ষা করে, কাল-পৌরীর ছেলে হল । বলবো কিহে তাই-বংশ রক্ষা করবার জন্য, ভাশুর সোয়ামী তার হয়। বিপদে পড়িব যখন, চরণ তলে আসবো তখন; শোনবো ওর তিনটি কথা, মহলাতে যায়ে কন্যে কন্যে বলে রে হায় হায় ॥
(৭৩৮)
জয় দুর্গা-দুর্গা নাশিনী। আমি ভজন সাধন না জানি, পার কর সিন্ধু বিন্দু- বাসিনী । আর আমি তারা ডাকি হারা, ও মা তারা-মম ঘাটে কই মা তারা, ডাকছি দিবা রজনী । বিপদ উদ্ধার কর হে মা তাইরেনী ॥ আর বিপদার্থে দেও ঐ দুটি চরণ, চরণ দিবা না মাগো-কি কারণ; তুমি যে ইদুর সাধনার ধন । আবার ঐতোনে থাকলে পরে, যাইওনা তুমি তার উদরে; আমারে কি পাইতো ব্ৰহ্মা- তোমার কি আর পিতারই ধন, শক্তিরূপ সাধলে মাগো-বলো বৈতরণী॥
(৭৩৯)
জয় দুর্গে মা দুর্গে, দুর্গে নাশিনী, আমি সাধন ভজন না জানি; সিন্ধু পার কর বিন্দু বাসিনী । আমি ডাকি তারা ও মা তারা সর্বঘাটে আছো তারা; মম ঘাটে কই মা তারা, ডাকছি দিবা রজনী। বিপদস্থানে রক্ষা কর হে মা তাইরেনী । শুমা বিপদার্থে দেও দুটি চরণ-চরণ দিবা না মা কি কারণ । তুমি যে ইদুর সাধনার ধন। অযতনে সাধলে পরে, যাওনা তুমি তার উদরে; আমার ও যে পৈতৃক ধন, তোমার কি আর পিতৃ ধন; পুত্র সাধ সাধন মা-বল বৈতরণী ॥
(৭৪০)
বুড়োকালে শুনলাম আজগবী এক রঙের কথা, শুনে মোর লাগেছে ধাঁ ধাঁ । মৃত দেহ জিন্দা করে, বেশ বিটার বাহা ক্ষমতা । মত্ত হয়ে থাকে, ব’সে জীব জন্তু খায় সে ধ’রে; ৭০ হাজার মাথা, খানিক জিন্দা ভবের পরে; খানিক হয় মৃতা ॥ আর গোল করোনা ভাই সকলরা, আরাক কথা পলো মনে; হস্ত ছাড়া ৭০ হাজার পদ, ছিল তারে।
৭০ হাজার ছিল মাথা, কি বলিব তাহার কথা; এক এক মাথার পারে, ৭০ হাজার মুখ ছিল, ৪ কোড়ল ৭০ হাজার মুখ, কোন শকশের ছিল ॥ কোরানেতে লেখা কথা মিথ্যা নাই, বিধান করলে এসব কথার অর্থ পাওয়া যায় । আজ বয়াতি তোমারে বলি-ধুঁয়োর মানে দেও আজ আমায়। মুর্খ মতি ইদু বিশ্বাস, কুদরত উল্লার কুদরত বুঝতে পারলাম নাই ॥
(উঃ পদঃ পাগলা কানাই, ১৬)
(৭৪১)
দেখবি যদি গাছের মদি, বিকশিত আছে সেই জবা। সংচিত রংচিত গরল সরল থাকে জবা। বংশী বাদন পুত্র মদন, বদন ভরে দেখতে পাবা। ফুলের সৌরভে জগৎ মোহিত, বাপরে বাবা । আমি ধন্য বলি ধন্য বলি সেই জবা, থাকে যাহার সুভাগ্যেতে; সে ফুলে-ফল জোগেতে পাবা যে ফল হয়, সে ফল পায়, যার সুভাগ্যের কপাল, সেই পাবে সে ফল । ওরে ব্রহ্মা ফুলে সংগে রংগে, মিল হয়ে আছে চিরকাল ।
তার জীবনাত্মা লালনকত্তা, জননী দৃষ্টি চীরকাল । দেবের দেব ইশ্বর, দেবের দেব সেই মহাদেব মহাকার; রক্ষা কর জীবন কার। সকল প্রভু ছেড়ে গেলে সেদিন হবে ঘোর অন্ধকার ॥ সুরা সুরে গন্ধে ভরা, সব নৈরাকারে বাঞ্চা সকলে । ও তোর মধুর লোভে মুন্দির গো-দুই গাছ যদি মেলে । ধরণ-করণ বর্ণ স্বর্ণ মূল পরোতা, অন্তরে থাকে যাহার কপালে । মানব জনম সফল হয় তার, যদি ইদু যায় একবার সেই কোলে ॥
(৭৪২)
ইদু বিশ্বাস বলে ভাই সকলরা-ফিঙে হল পাখির রাজা, একি অবিচার। ওরে মানিক জোড়ের লম্বা ডানা, ডওরায় বেড়ায় ভাসে; টিয়ে কেন খাঁচায় ব’সে । ওরে ময়নাতে কচ্ছে কথা-ওরে এত পাখি থাকতে কেন, ফিঙে হয়েছে পাখির রাজা আবার শালিক থাকে গাঙের দিয়াড়ে, আর কুল্লোর যখন পরশ মনি-ঝোড় জংগল মারে বেড়ায়; এ কথা ঠিকরে বাজে কয়।
ওরে দইরাজা নাচে বেড়ায়, ময়ূরীর নেও দেখ, পেঁচা পেখম ধরতে চায় | ভাত শালিক কয় কাতর হালে, কতরা সে ভাবে আবার গোয়ালি বসে। ঝড় আলি সেই চিল শকুন-ডালের পরে মাথা খোশে; চেগা চিগরিয়ে বেড়াচ্ছে।
ওরে ঘুঘু মল ভাগাড়ে-চালের বাতায় চড়ই কই-আমি আর হা’সে বাঁচিনে। ওরে গড়ুই হল পাখির বারী, বৈ হল সে বিদ্যাধারী; আবার কাগা হল দিনকানা । ওরে রাত হইলে সেই হু-তুম তুম–কারও কাছে ভেড়ে না । দিনকানা কয় শোনরে বাদুর ভাই-ঝুল খেল গাছের গোড়ায় । এই কথাটি কাতর হালে ইদু বিশ্বাস কয় ॥
(৭৪৩)
ইদু বিশ্বাস বলে হায় রে হায়, কি দায় ঠেকেছি আমি এবার । সুলতান মোল্লাহ বেড়ে গেল ছল, তাই নিয়ে হতেছে গোলমাল; গণ্ডগোল হতেছে সভাকার তোমরা সব গোল করোনা ভাই সকলরা, ছওয়াল বেড়ে গেছে, জবাব দেব তার। ওরে ওর ছলের জবাব দেয়া, কোন কষ্ট নাই আমার।
কর্তারা সব সভায় বসে করেন বিচার; আমি তাই বলি, বিনি বিচী জন্ম হয় কার ॥ আর প্রেমাবিন্দু ব্যক্তি ছিল, তার কন্যে সয়ম্বরা, রুপেতে মনোহরা; ওই বদটা তারই ঘটিল। ওরে নিত্য নিত্য মনি-কটি আরেক নিত্য, দেলেতে গোশ্যা ভরে তনুক ধরে; মনি তাহার বল ছিল । বিনি বিচী সেই নারীর গর্ভ হল । আমি তাই বলি তোমার ছলের উত্তর এই হলো |
(প্রশ্ন পদ নম্বরঃ ৭৫৯, সুলতান)।
(৭৪৪)
ওরে মেহের চাঁন নীল রতন, আচ্ছা কথার জিজ্ঞাসন; করেছো গোপাল, এই কপাল বড় ধন । কপাল জোরে এই সংসারে, কতজন করছে মহাজন । কপাল জোরে পায়ে থাকে, কতজন রাজ সিংহাসন ॥ তুমি জিজ্ঞাসিলে যে কথা, পষ্ট করে বলবো তা; পবন ঠাকুর বিয়ে করে, ভোজ রাজার শ্রুতা। ও তাই কিষ্টকালে শাশুড়ি বলে, আমি জামাই পায় কোথা । অংগে এসে প্রবেশ ক’রে, ঠান্ডা করুক আত্মা ॥
তুমি যেমন ছওয়াল বেড়েছো, তেমনি জবাব পায়েছো; বড়ই খুশি হয়েছো, জাতি পুত আসতি ভাতার, মাগীর দুধ খায়েছো । কয় রতি প্রমাণ রাখো, বলছে ইদু অনেক সাধু জ্ঞাতক আছো । তা যদি না করাতো-মদ খায়েছো ॥
(৭৪৫)
শোনরে ভাই সকলরে, ভাবতেছি রাজ আসরে; তোমরা দশজনাতে মেহের করে এই অধমকে নেও গো তারে। দশ চরণ পাব বলে, আয়ছি চলে, মনে বড় আশা করে । পদ ধুলি দিও গো বালুক বলে । আর একটা ছলের মানে শুনবো আমি, ঐ বয়াতির কাছে । ওর কামার দোকানের নিন আর হাতুর, কোনটা আবার গড়ায় আগে। এ কথার বিচার করে বয়াতি ভাই, সেওটা আসে বলো মোরে । ওস্তাদ বলৈ গো- আমি মানবো তারে ।
আর একটা ছলের মানে শুনবো ঐ বয়াতির কাছে। আয় বড়তে সস্তান হলো, বল বয়াতি কার উদরে। বিয়ে নাই হতি, বিনে পতি, জন্মাইল এই ভবের পরে । ইঁদু বিশ্বাস ভাবে বলে, ও তা হলো কি প্রকারে ।
(উত্তর পদঃ ২০৮, পাগলা কানাই) |
(৭৪৬)
আজব এক কথা আমার ঐ বয়াতি বলেছে। শুরে পঞ্চ ওক্ত নামাজ আমার মওলায় বলেছে। ভুলি নাই সেসব কথা ইদু বিশ্বাসের মনে আছে ॥ আবার পঞ্চ ওক্ত নামাজের মসলা, বলে যাব এই সভায়। পঞ্চ শুক্ত নামাজের যদি ৮৮ সিজদা হয় । আবার ৫৪ টা রুকু সিজদা হয়, বলে গেলাম এই সভায় ॥ আর নমল সূরায় দুই বিসমিল্লাহ আছে, বিসমিল্লাহ নাই তওবাতে । আবার সূরা ফীল বিচে নয় মীম, মীম নাই ইন্না তাইনাতে ॥
(প্রশ্ন পদঃ ০৬, পাগলা কানাই)
(৭৪৭)
রাম নাম জপে বাল্মিক ভবে। রাম দরশন শ্রী বিভিষণ লংকায় চীরজীবে, পিরিত যেমন সুহৃদ রতন অমূল্য ধন ভবে, ও মন আর কি এমন হবে। পিরিত যেমন অতুল্য, হায় তুল্য নাইকো তার; অমূল্য ধন, ধনঞ্জয় তার করেছে যতন । ও যার রথের সারথী ব্রহ্ম সনাতন । বিস্তর বিপদ নিস্তার হয়েছিল সেই কারণ, আর এক যোদ্ধাপতি, কুরুপতি কূ-রীতি দুর্জোধন । আছে বহু সেনা অগননা, প্রেম জানে না সে জন ।
দেখ গতি, কুরুপতি সংপ্রতি সে নিধন। প্রেম কি ধন! প্রেম কি ধন!! প্রেম কি ধন!!! দেখ ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ আদি যোদ্ধাপতি সর্বজন । পার্থ হতে পতন । ইদু বিশ্বাস বলে ভাই, পিরিত বিনে সুহৃদ নাই, প্রেম, প্রেম কর গো সবে (আঃ আঃ চৌঃ থেকে, পৃ. ৪৩)

সুলতান মোল্লাহর পদ আড়ুয়া ডাঙ্গা, ঝিনাইদহ
(৭৪৮)
সালাম আলাইকা, সালাম জানায় আল্লাজীর ঠাঁই । ও সালাম জানাই হজরত নবীর পায় । সালাম সালাম হাজার সালাম, সালাম জানাই হজরত আলীর পায় । মক্কায় সালাম, মদীনায় সালাম, সালাম জানাই বরকতিনীর পায় । সালাম নেওনা মা-খাকি, হামেহাল যার বুকে থাকি; শুনি কুল-দনের ভার তোমার বুকি । ও মা পাগলা কানাইর শব্দের সালাম, বড় কাতর হালে সালাম জানাচ্ছি, সালাম, নেওগো মুর্শিদজী ।
মা বাপের কদমে সালাম, যা হাতে এই দুনিয়া দেখি ॥ সালাম দশজনের পায়, বালকেরা আলো আসরে । বালকের হিল্লা আছেন গো আল্লাহ: যদি স্বরসতী দয়া করে, সালাম জানাই তিনারে, পীর ফেরেস্তার পায়ে সালাম, সাধু লোক দরবেশের পায়, সুলতান মোল্লাহ আলো আসরে, আমার রাখবেন দোয়া করে ।
(৭৪৯)
মন চোঙ্গা কাটে গঙ্গা শুধু কাঁচা খাবার কর্ম নয়। আমার মুরশিদ ফকির পাগলা কানাই কয়ে যায় । ফুরকান লয়ে হয়রত নবী আলেন দুনিয়ায়। চার কলেমা পড়ায়ে তারে দ্বীনের পথে নেয়। দ্বীনের পথে হয়োনা বে-দ্বীন, পড় পড় রব্বুল আলামিন । আখেরাতে হীরার ধারে, সুলতান তরাবি যেদিন ॥ (অসম্পূর্ণ)
(৭৫০)
কোথায় ছিলে হেথায় এলে, মন এখন যায় বা কোথায় । মজলী তুই কিবা কাজে বল দেখি মন আমার কাছে, এখন তার করোনা উপায় । মাতৃ গর্ভে ছিলিরে মন, তোর দেহ ছিল জলময় । তোমার কিছুই মনে নাই । তোর হস্ত-পদ-ছের হইল, যখন তোর জ্ঞান না ছিল, তখন তোর দেহ বানাইল নীরের পারে আপন করে মন, আয়লি ভবের পার। আপন তোর কোন চীজ আছে, বলো দেখি মন আমার কাছে, এ কথা বলতেছি তোমায় ।
আপন বলতে কেহই তোর নাই । হলি পরের ধনে অধিকার, হয়েছ এবার। ধনীর ধন সে বুঝিয়ে নেয়, সে দিন তোর ঘটিবে দায়, থাকা যে হবে ভার ॥ তিন কোনার তিন সৃষ্টি এসে, করলেন দেহেরই গঠন। তখনই ১৮ চীজ করিল গণন। সরকারী হুকুম আ’লো, পাঁচ কাম তোর ফরজ হল, আছে সে ধড়েরই উপর। দিন থাকিতে সাধন ভজন, হয় যাতে তুষ্ট মহাজন, সেইটা উচিত তোমার । সুলতান গানে মজে, ধূয়ো-জারী করল সার ॥
(৭৫১)
ফকিরী করবি যদি মন, তবে আদমকে চেন। আদমে হাওয়া পয়দা, গড়েছেন আপে খোদা, সে কথা হাদিসেতে জান । ও তার মাটে ছবি দেখতে খুব, জোড়া হল কেমন । ও সে পিরিতে তায় জান । জানিস নানা যোগ সাধন, সাধনে পারি ধন, যদি থাকে মন ॥ ১৮ চীজে ওজুদ পয়দা, কিভাবে শুনতে পায়। মা-বাপের আট চীজ আছে, শুনি মুর্শিদের কাছে, সে চীজের তুল্য আদি নাই।
আর সরকারের দশ চীজ আছে, নাম জানিনে শুনতে পাই; চিনে নে মন তাই ॥ চিনবে বলে দলে দলে মন, কত জন হতেছে ফকির, কত জন কত ভাবে, বসে আছে অনুরাগে, কত জন করিয়া ফিকির । ও তারা সেতারাতে তার টানিয়ে, দম কয়ে মারে জিকির; মনটা কর স্থির । তাই সুলতান মোল্লাহ বলে আল্লাহ, আসরে তুমি হিল্লাহ, আমি নাদান ব্যক্তি |
(৭৫২)
পিরিত পিরিত লোকে বলে, কোন জাগায় ঠিক না পাই। এখন কার কাছে শুনি তাই । মরেছে ওস্তাদ পাগলা কানাই, সুলতানের আর শুনার জাগা নাই ॥ কোন যোগেতে ভেসেছিল ডিম্বু ক্ষীরদেতি । কোন যোগেতে হইল ডিম্বুর উৎপত্তি ।
হেন ডিম্বুর পাশে ছিল কোন সতী । আকার সাকার নাহি ছিল তার, কোন জাগাতে ডিম্বুর হয় উৎপত্তি ॥ আকার সাকার নাহি ছিল তার, তিন ফলে হয় বর। ও সে পিতা বলবে কার । মর্মান্তে তোতার কর্ণে এসে, কে জপেছিল । জলেতে জপের মালা কোথায় পাইল । সে দিন জল ছিল স্থল হল, শুনি সে বৈষ্ণব হইল । বৈষ্ণব হলি শোন বলি, তুলসী চন্দন কোথায় পাইলো ॥
(৭৫৩)
ভাঙ্গা ঘরে বসত করে মন, তোর এতই অহংকার। অহংকার যে কামিলকার, মিল দিয়ে বান্দা সে ঘর, অন্ধকারে সেই যে ঘর তৈয়ার। অন্ধকারে সেই যে ঘরে, এসে দেখি দ্বীপ্তকার, ঘরেরই মাঝার। ঘরে এসে পড়লাম ফেরে, সুখ নেই মোর সেই যে ঘরে; চিনে নেও সেই সৃষ্টিধর ॥ আর ভাঙ্গা ঘরের বলবো কিরে মন, ঘরের ১৪ পোয়া রাগ। রাগের ভাগ বেশী ঘরে, তাইতো ঘর এমনি করে, ভারতে হতেছি অবাক ।
ওরে ১৪ ঘর সে ঘরের মদি, আরও একটি ফুলের বাগ। তার জাগায় জাগায় ভাগ । ও তাই সুলতানের হলো চিনা জ্বালা, ঘরেতে করছে খেলা, রাগের মানুষ নিরাগ ॥ চার চন্দ্র ঘরে বলবো কিরে মন, উদয় সে ঘরেরই মাঝার। তিন চন্দ্র যোগে জাগে, এক চন্দ্র সদায় থাকে, উদয় সে ঘরেরই মাঝার । কত যোগী মনি অহর্নিশি, ঘর দেখিয়ে চমৎকার, করে নেও বিচার। তাই চন্দ্র ধরবো ঘরের মদি, তবে কাজ হবে সিদ্ধি, অধর চন্দ্র অধর |
(৭৫৪)
আজব একটি ঘর বেন্দেছে কর্মিকার সে ঘর দেখ ভবের পার। ওরে তিনটি জাতির চারটি ছেলে, আছে দুই খুঁটির পার। তারা এক ঘরে বাস করে। তারা কেউ চলে না কারও বশে, তারা এক রসোইতি চলে, প্রভাতে দেয় সন্ধে বাতি, স্তরে প্রতি ঘরে ঘরে ।
সে ছেলে যে চেনে সে মানে, আছে ছেলে এক ঘরে । আছে সেই কালু বালার ঘরে। পূর্ব কোনে জ্বলছে আগুনরে, তার পশ্চিমে দাহন করে। উত্তরে তার পিন্ডি দিয়ে, দক্ষিনে সে মরে। ছেলেই চেনে সহজ মানুষ, মাতালে চেনবে কেমন করে । আড়ুয়া ডাঙ্গার সুলতান মোল্লাহ যায় কয়ে রে কয়ে-তারা সব ছেলের সন্ধান পায়ে, কত ফকির দরবেশ আলেম ফাজেল-তারা সব ফেরছে দ্বারে দ্বারে। ঘরের এক মন মহান্ত, সে পোহায় ধনি দ্বারে ।
(৭৫৫)
আজব এক ফুল ফুটেছে কালিদায় । গোপনেতে আছে সে ফুল পষ্ট নাই । ও তাই সুলতান কয়, দেখে ভয় রে ফুল-ফুলে চন্দ্র সূর্য উদয় । যুবক কালে সুফল ফলে রে-লাগেনা ব্রহ্মা বিষ্ণুর পূজায়। যোগমত হয় সরোবরে উদয় । বে-যোগেতে খুঁজলে পাবা না-যোগমত উদয় হচ্ছে তথায় ॥ আমার আল্লাহ-তালার হাতে আছে সেই ফুল । লগ্ন যোগে প্রতি পদে ফোটে ফুল । কত ফকির বৈষ্টম আলেম ফাজেল চেষ্টা করে সেই যে ফুল ।
সরোবরে তাদের যেয়ে লাগে ভুল । ও তাই হায়াকুল-মালেকুল রে ফুল-সে ফুলে বদ্ধ মালেকুল। ফুলটি যথা তথায় আছে রাছুল । ওরে লাল জরদ আর সিয়া সফেদ-চার রঙ্গে বিকসিত ফুল ॥ ও তাই ওস্ত দি আমার পাগলা কানাই কয়েছে। হস্ত ধরে ষড়-চক্র শিখাইছে। ভাঙ্গিসনে লোকের কাছে রে সুলতান-যাবি তুই দিন কতক কাল বাঁচে। দল পদ দল যে ভাবে রয়েছে । ওরে যে না জানে ষড়-চক্র বাবা, তার গল্প করা মিছে ।
(৭৫৬)
সুলতান মোল্লাহ বলেরে আল্লাহ, ফুলের কথা শোন। লাল জরদ সিয়া সফেদ, চার ফুল দুনিয়ায় আলো। এক ফুল গোপনেতে র’লো । গুপ্ত কথা ব্যক্ত হল, সে কথা আমার বলতে হল । হাওয়া ভরে আ’লো সে ফুল, আব্দুল্লাহ বাদশা পালো । সেই ফুলেতে আমার দ্বীন মুহাম্মাদ পয়দা হল। আর শোন ভাই মোহাম্মদের বানী-নামাজ পড় সকলি-শহরেতে পয়দা হল কলমা কর জারী।
ও ফজরে চার যোহরে বারো আছরে চার পড়। মাগরিবে সাত রাকাত নামাজ এশাতে এগারো। ছুন্নাতে চৌদ্দ পড়ে ফজরে চার পড় ॥ আর সকল পৃথিবী ভাগে ছিল-রাকাতে রাকাতে ছুরা লাগিয়ে আলহামদু পড়। পার হবা সেই পুল-সুরাতে, তাতে হীরার ধার, তা’ নইলে পড়বা ফেরে, রোজ হাসরে জুলমাত হবে বড় ॥
(৭৫৭)
আমি শুনে আলাম এক আনকা কথা, তার মর্ম পাবি কোথা, এক গর্ভেতে চার জনার মাথা । ওরে তিনটি ছেলে একটি মেয়ে, আচ্ছা মেয়ের ক্ষমতা। জগৎ জোড়া সেই মেয়ের কথা। ওসে স্বোয়ামীকে ডাক দিয়ে কয়, তুমি আমার হও পিতা ॥ আর সেই যে মেয়ে আছে সংসারে, তোমরা দেখ দিব্য ঘরে ঘরে । পষ্ট লেখা যাচ্ছে শান্তরে । আর সেই যে মেয়ের ক্ষমতা দেখে, মরি মনের হুতাশে, ফেরে সুলতান ফেরে বনে বনে ।
পিতা হয়ে হরণ করতেছে, বল কিসের কারনে ৪. কে পুরায় তার মনের আশ, সন্ধে নামে কন্যে ছিল তার। আর সেই গর্ভেতে জন্ম নিল, আজার ডাকে বলে বাপ । এসব কথা বলা মহাপাপ । তুই পন্ডিত ছিলি রাখাল হলি কেন-ভাড়ো তুই কাটলি ঘোড়ার ঘাস।
(৭৫৮)
নামটি ইদু গানটি মধুবেশ, তোমার আসলেই যায় ভুল। তবে কেন এত ভুলে, গানটি সভায় গাইলে, একথা না করে স্থুল। দীননাথ থাকে বেষ্ট, সর্বদায় বিয়াকুল । সূর্য দেবের ঈশ্বর ভাবে, ও গান করলে স্থুল ॥ তবে কেন এত উক্তি, দাড়া গড়া বিনা শক্তি, সে কথা শাস্ত্রে মানে না। দাড়া গড়া যত জোড়া, শক্তি ভিন্ন কিছু না, জানেন সাধু জনা। ষড়-চক্র করলে মোক্তার, যে জাগা নৌকা তৈয়ার, তুমি মণিপুর চেন না ।
হিরুলাল এস শক্তি ভাসে, বসে মণিপুর। শক্তি আছে দাড়ালির গঠন, ভুবনের মাশুল । এইছা ভবে গড়া তরী, না পা’য়ে কৌশল । ওরে শক্তি বড় ধন । শক্তির জোরে হাওয়া খেলে, চলাচল ভূবন ডালে, ভাবে বলে সুলতন |
(৭৫৯)
সুলতান মোল্লাহ বলে গো আল্লাহ একটা কথা মনে হয়েছে। ওস্তাদ সাহেব আমার পাগলা কানাই মরে গিয়েছে। বড় ভালই হয়েছে, আমার আর না দেরী আছে । শোন গো ও বয়াতি, তুমি রাগ কর পিছে । সেও কথাটি বলতে আমার অন্তরেতে লাগে ভয় । পন্ডিত হনু লোকটি তুমি, একি সমাচার: কও তার উত্তার । কও দিন শনি বিনা বিচী, জন্ম হল কার ॥(অসম্পূর্ণ) (উত্তর পদঃ ৭৪৩-ইঁদু
উজোল শেখ বেড়বাড়ি, ঝিনাইদহ
(৭৬০)
বিনা কাষ্ঠের তকতা জুড়ে, রথ খানি তৈয়ার করে, রেখেছো তার নয়টি পথ। হায়াত ময়ুত রেজেক দৌলাত, রেখেছে আপন হাত। আর আতশ থাক বাদ ধ’রে, চার চীজে তৈয়ার করে, চুঁড়ার পারে বসে মন্ত্রি ভোলানাথ । রথের গড়ন সারা, তিন গাছ গড়া, ৬৪ জোড়া ২২ চূঁড়ার পর। খেলা করে বাঞ্চা (বানছা) খুড়ো, রথ চালায় সে তারাস বুড়ো, জ্বলে দুই বাতি রথের মদি চূঁড়ার পর। আর নড়ভড়ে হয়েছে ঢাকা, তার জাট পড়েছে ঢিলা।
উজোল বলে আমার হারিয়ে গেছে, রণ থিলার দুই খিলা ॥ আমার হয়েছে ভাটি, ভর পড়েছে রথের জাটি, আমি রাখবো না আর পুরোনো রথ, তালি দিয়ে নিতে চাই । দেখিয়ে দেরে তোৱা-শোন বলি ভাই-কালা চাঁন্দ মিস্ত্রির বাড়ি, কোন পথ দিয়ে যায় |
(৭৬১)
উজোল বলে শোন মিয়া ভাই, ভবে এসে আমার কি লাভ হল। লাভের জন্য এসেছিলাম রে, আমার আসল মূল সব হারালো। মহাজনের ধন এনেছি দুই ভাই । তুমি কি যেন কি করেছ রে, ও আমার আসল পুঁজি নাই ॥ মিয়া ভাই মুর্শিদ আমার, যদি দয়া করে । তার ছাড়া উপায় নাই, প্রাণ কাঁপে ডরে। পীর মুর্শিদের দোয়া যদি পাই, আল্লাহ ভরাবেন আমায়
(৭৬২)
আমারে আয় প্রাণের গোপাল, আয় করি কোলে। তোর কোমল কান্ত শুকায়ে গেল যাদু, তোমার কথা বলে যাদু যাদু করছে মোরে, আসে বল ও ঠ্যাকারে। কোন নাম ধরে ডাকবো যাদু, সে রইল বন্ধ কারাগারে যে নাম ধরে ডাক দিয়েছ যাদুরে, সন্তোষ হলাম তোমার ডাক শুনে। আন্দাজে ঘোড়া পার কর সাগরে, তুমি ডুবে মরবা নিহার বাবুর দ’রে । আর ইন্দুরী যন্ত্র বাজায়, ছুঁচোয় করে গান।
ছার পোকার পায় নেপুর দিয়ে, জোনাকির পায় হেরিকেন। নাচে বাহার দেয় চুলচুলে, ওরে জুড়ি বাজায় খেঁকশিয়ালে ॥ বায়ু পোকার প্রসব, খালাস করে তিনজনে । আর ব্যাথায় মলো জলের কাছিম, উজোল তাই ভনে ।
পাস্তা পাড়া, বাদুড়ে, বসির হাট, ভারত
(৭৬৩)
কানাই ভাই বলেন মোরে, পড়েছি কঠিন অনবিচারে। জন্মে ছিল যার উদরে, সেই মা তারে বিয়ে করে। আবার স্বোয়ামী রয়েছেন যেয়ে স্ত্রীর উদরে ॥ সে মেয়ে এমনি সতী, তারে মান্য করে পশুপাখি। তার রূপে করে জগৎ আলো, পুরুষের পেটে জন্মে ছিল, কে তারে জন্ম দিল, হবে তোমার ক্ষতি ॥ আজব এক কথা শুনে, বেড়াচ্ছি আকাশ পাতাল ভেবে, তুমি যেমন সরোস মুনি, ধূয়োর মানে বল শুনি, জানে শুধু মুনি ঋষি, বাল্লুক শাহ না জানি।
হরমনি
(৭৬৪)
কয় শ্রীমতি বিন্দে দ্যুতি, শুনে যা এক নতুন কথা। আমি ঘাটে যাই যখন, দেখেছি তখন, তিন বাঁকা এক নাগর ছোঁড়া । তাহার হাতে বাঁশী মাথায় চুঁড়া। ব’সে যমুনার ঘাটে লো-তার রূপ দেখিয়ে বিচ্ছেদ মনে ওঠে। ছোঁড়ার অঙ্গ বাঁকা ভংগি বাঁকা, বাকায় বাকায় সেজেছে ভাল, আমার মনে বলে লো-যেয়ে দিই প্রেম আলিঙ্গন ॥ আমি আয়ছি বৃন্দে তোরে কতি, সেরূপ কেমন দেখবি যদি ওসে নাগর কেমন ।
প্রেম করে শিব ভোলা উর্দ্ধ নয়ন, ওসে ভষ্ম মাখে ক্যান । আছে শক্তি রূপে বাউলা কেশি, শিব হল সে শশ্মশানবাসী; পিরিতের নজির দেখে হরমনি হয় অজ্ঞান, আবার শিবের বুকে পা দিয়ে মা হেট নয়নে ক্যান ॥
(উত্তর পদঃ ১২৬, পাঃ কাঃ)
খোদাবক্স বিশ্বাস
(৭৬৫)
শোন মোমিন সিলামালেকম, সালাম জানাই দশের চরণ । নিহার করে শোনবেন দশজন । খোদাবক্স বলে ও নিয়ামত, তোর আমি আর বলব কি । জিজ্ঞাসিলাম বয়াতির নাম কি। মূর্খ মতি খোদাবক্স কয়, লিখা পড়া জানি নাই, শুদ্ধ কথা কোথা যে পাই । আমার সকল হল ফাঁকি জুকি কেবল ভরসা ওস্তাদ পাগলা কানাই । যার নাম নিয়ে দেশ বিদেশে বেড়ায় ৷ আর এক ছল পুছতাম ভাই, কোন শকশের চামড়া নেই গাঁয়।
এ ছল পুঁছতাম নারে ভাই, তোর স্বভাব শুনে ছল পুছতে হয় । তুমি নাকি ছুঁয়ো বানতি পার ভাই। আবার ছুঁয়ো কেবল বান্দে গেছে-বেড়বাড়ির পাগলা কানাই। তা ছাড়া ধুয়ো বান্দে গায়, এ কথা বেদ পুরাণে নাই |
ছাবের আলি কাঞ্চনপুর, ঝিনাইদহ
(৭৬৬)
ছবের বলে ছমিরদ্দি জনম ভরে গাও জারী-চিনি তোমার কেশবপুর বাড়ি। তুমি এক ভিটেতে বসত কর, নয় তার নয় গলি তারি। আগে ছিলে ছিরাম পুর গাঁয়, পরে আইলে উদর ডাঙ্গায়, ও ভাইরে ভাই এখন বসত দেখি ব্যাং নদীর তীরি ॥ তুমি নিত্য কর গোঁসাই পূজা, ঘরে তোমার চা’ল শন্যি। ফুটফুটানি সদায় জাগজারী, আমরা সবাই জানি । তোর ডাানি আনতে বায় আটে না, পাঁচ টাকার এক জামা রাখ, তা শোধ হয় না।
ও তা বাকি রাখ ভাইরে ভাই, নোটিশ জারী করবে কোন দিনি ॥ তোমার বিত্তি বেসাত নেবে বেঁচে, হায়রে বাকির দায়েকেতে । কোন দিন যেন রশি দিয়ে বাঁধবে ঠিক পথে । আমার মনে বলে যায়। পালায়ে, নিশ্চিন্তপুর থাকি যায়ে, ও ভাইরে ভাই আর এক জ্বালা, হবে রোজ কেয়ামতে
ছমিরদ্দিন বিশ্বাস কেশবপুর, ঝিনাইদহ
(৭৬৭)
হাসতি হাসতি মনে হলো রে ভাই, একটি মনের কথা। এক নারী ভবের পরে, রাত দিন সে বিরাজ করে, তোমরা শুনবা নাকি তা। তার ১২ হস্ত ১৩ চক্ষু, পৃষ্ঠেতে হয় ৭ টি মাথা, বর্ধমান জাদা, তার দিন গেলে হয় দুই দুই ছেলে, ডাকতেছে মা মা বলে, সে যে বিধাতার ক্ষমতা । সেই যে নারীর ৬ জন পতি ভাই, তারা আছে ভবের পারে। তার একজন খোঁড়া একজন ল্যাংড়া, এক জন তার কানে শোনে না, এই রকম ৬ জনা।
৬ জনের ৬ নাম আছে, থা গুরুর কাছে, মনে আছে এখন। ছেলের নাম কাঁচা সোনা, কি বলবো তার ঘটনা, জগৎ সে মোহিত করেছে। কথা বলি দশের কাছে, শাস্ত্রেতে জানা গেছে। তাই জমিরদ্দি কয় কাছিমন্দি, তোর যেমন কাঁচা বৃদ্ধি, ভাঙ্গিসনে লোকের কাছে |
নছরদ্দিন বিশ্বাস
(৭৬৮)
মন আমার চার কালেমা পড়, তুমি নেক পথেতে চল, বদ কাজে হয়ো না রাজী, আজাব হবে বড়। দোয়া গণ্ডল আরশ পড়। ওরে পঞ্চ মানিক তিরিশ মতি, হজ্জ যাকাত না ছাড়ো। সুন্নত ফরজে হবে লিখা, বেহেস্তে হবে জাগা, সুখের খাঠ পালঙ্ক পাবা, বেহেস্তের শামানা। তাই বুঝে মন চল ফের, হে সাধের পাগলা ম 1 শোন ভাই গোর আজাবের কথা, আমার হৃদয়ে আছে গাঁথা, থেকে থেকে প্রাণ চমকে ওঠে, কি হবে বিধাতা।
এ সব কোরান কিতাবের কথা। মনকির নকির এসে যেদিন, গোরে করবে খাড়া। মারবে জুলমাতের কোড়া। হাড়ে মাংশে মনি মগজ, খোবে না কোন জোড়া। তাই ভেবে নছরদ্দি বলে, তোর দিন গেল বিফলে। পাঁচ শুরু নামাজ পড়ো, কোন সুরা ফজরে রং বাহার স্থলে, রং এ কিবা করে। তাই বুঝে মন কর্ম সাধ, তোর দিন যে গেল বয়ে
তাইজদ্দিন মোল্লাহ ভগবান নগর, ঝিনাইদহ
(৭৬৯)
বলে তাইজদ্দিন মোল্লাহ দশের হুজুরী। আজব এক কথা শুনে মন দুঃখে মরি। শুনি আসমানের উপরে, একটি সভা হয়েছে ভারী । মালেক দীননাথ শুনবে নাকি, সব বয়তীর জারী | গিয়েছে পাগলা কানাই, আরমান আর তরিকুল্য (তরীবুল্লাহ)। রাহুল খাঁ, নছরদ্দি, বিনোদ আর কুরমুলা (করম উল্লাহ)। গেছে মুনির যাহের, পাগলা কোরেশ, অছিম আর এনাতুল্য। তারা সকলে গিয়েছে চলে, আমারে যাতি বুলা।
তাই শুনে ভাবি আমি-কি হবে গো আল্লাহ। অবশেষে গেল ইদু বিশ্বাস আর সুলতান মোল্লাহ। আর গেল নিমকের আবেদ মোল্লাহ। আর পাগলা কানাই আগে গিয়েছে-খোল হাকিমের সামনে খাড়া রয়েছে। এদেশে কানাইর সংগে যারা পারতো না, তারা কানাইর সংগে আছে। ডিগ্রী করা, ডিগ্রী কানাইর হাতে। আদালতে পড়ে যাবে সব ধরা। তারা পারবে না কেউ কানাইর সাথে, তার আছে ডিগ্রী করা ।
মেহের চাঁদ হরিশংকরপুর, ঝিনাইদহ
(৭৭০)
করলে যা দেল দরিয়ার ঠিক ঠিকানা । তবে চিনবি সেই মালেক রব্বানা । মায়ের ডানির অংগে নূর তরঙ্গ, বাম অংগে ভেদ আছে পোৱা । আছে নূর তাজেলা জহরা, সরাবন তহুরা পাবে, বেহেশতের বান্দা হবে যারা ॥ রসমায়া সুখ সাগরা, সেইখানে আল্লাহর কানুরা, খোদার নূরে নবীর পয়দা, নবীর নূরে সারে দুনিয়া । নূরের সন্ধান করো মন রসনা । যে নূরেতে আদম পয়দা, সেই নবীর তরিক চেন না।
পবনের পর সোয়ার হয়ে, আছেন মালেক সাঁই। দেহের মাঝে হাওয়া মানুষ, সদায় আসে যায় । চাঁদের অমবশ্যা বয়াতি ভাই, শতদল কোমলে রয়। ওরে মেহের চাঁদ তাই কয়-সূর্যের অমাবশ্যা বয়তী, বায়তাল পদ্মে হয় ।
নইমুদ্দিন বিশ্বাস আড়ুয়া, ঝিনাইদহ
(৭৭১)
আজব তরী মরি মরি শুকনো দিয়ে যাও বায়ে দাড়াও দেখি ও নতুন নায়ে । কোন মেস্তেরী গড়েছে তরী, বাওহা মরি ত্রি-বালা লয়ে। সে সুতোর জগতের বন্ধু, গড়েছে তরী ভব সিন্ধু, দিয়ে কিঞ্চিত বারী বিন্দু, রাখেছে তরী সাজায়ে । পাঁচ পাছা পঁচিশের ঘরে রাখেছে ঠিক দিয়ে । ভূষারী ব্যাপারী হয়ে জ্ঞানের মাস্তুল বাঁধেছে । ভক্তির নিশান তুলে দিয়েছে। কয় নইমদ্দি মন্ডা তুফান, খোড়া বাদাম টানে দেছে।
মন মাঝি হাল ধরেছে আটে। কষে মার এছার বোটে, ভবের পাড়ি গিয়েছে উঠে, তার কি ভবে ভয় আছে। গুরুর নামে ডাংকা মারে, শংকা গেছে । ত্রিপিনে তিরো ধারা ওমন ব্যাপারী, সাধু যারা চেনে তারা চালাচ্ছে তরী । তোর পাকেতে ডুবলো তরী, বল বল উপায় কি করি, দিবি দিবি ভব সিন্ধু পাড়ি, মুর্শিদের চরণ ধরি। ঘুরছে পাকে জটের দড়ি । হালিতে মানায় না পানি, ছিঁড়েছে তাহার টানা দড়ি, তরীর তরঙ্গ দেখে, আমি গুরুর চরণ ধরি ॥ পাগলা করেশ |
আবাল পুর, ঝিনাইদহ
(৭৭২)
করেশ বলে ওর ময়না, ও সুখের পাখি। ভোরে যত্ন করে রত্ন ভেজে, আমি পালন করেছি। কোন দিন যাবা আমারে ছেড়ে, দিয়েরে ফাঁকি কত দৈ দুগ্ধ ক্ষীর ননী, খাওয়াইলাম তোরে । এবার গেলে পরে আর আসবানা, এই সুখের বাসরে। কত শাল সুন্দরীর বিছানা রবে পড়ে. এই সুখের বাসর ঘরে, ভাই বিরাদার বন্ধু, স্বজন, সকলই হবে পর। আগে যদি জানতাম ময়না যাবারে ছাড়ে। তবে আমি না রাখতাম সুখের বাসর ঘরে। মায়া জালে বন্দি হলিবে কিসের কারণে হারান মন্ডল |
সাবকে বিন্নী, ঝিনাইদহ
(৭৭৩)
হারান বলে ও মন ভোলা, তুমি ছাড়ো রংয়ের খেলা, ঐ চেয়ে দেখ ডুবে যায় বেলা। যেদিন আসবে শমন, সাই নিরাপন করো না অবহেলা । শরীয়ত কবুল করো, নবীজির তরীক ধরো, তা না হলে রোজ হাসরে, ঘটবে বিষম জ্বালা । মন তুমি শরীয়তের গুরু চিনে নাও, যদি ভব নদী পাড়ি দাও, দমে দমে আল্লাহর নামটি লও। দমে দমে হরদমেতে একিন মনে যাগা দাও যে দিন হবেরে তোর আখের ফানা, থাকবে না তোর কোঁচা টানা, সে দিন রোজ হাসরে তোর রাহুতি রব্বানা।
মন তুমি মহাজনের মাল নিয়ে ষোলআনা। তবে করতেছে বেচাকেনা, বাদী মন তোর নাই কোনো জনা। এমন অসৎ লোকের সংগে আসে, চোখ থাকতে হয়েছ কানা। যে দিন তোর জুয়ো চোরে, দেবে তোর পুঁজি মারে, তাই বুঝে ভজো মন, মুর্শিদ রব্বানা বাহাদুর বিশ্বাস |

শিকারপুর, ঝিনাইদহ। মৃত্যু ১৯৬৩ সাল
(৭৭৪)
শোনলো বউ তোমারে বারে বারে করি মানা। তোমার বোঝাইলে কেন বোঝনা । আমি নিষেধ করি ও সুন্দরী, পাড়ায় পাড়ায় যাইয়ো না; বেড়াও ঘরে ঘরে আঁখি ঠারে, পান চাবানোর ভাব গেল না। তোমার ভাসুর শ্বশুর পাইলে কসুর, করবে দূর, আর ঘরে রাখবে না । তোমার সংগের সাথী উপপতি রিপুরে ৬ জনা, তুমি তাদের কথায় ভিজাইওনা মন। তাদের সাধন করে বাধ্য রাখ রিপুরে ছয় জন আছে নয়নদি আর কামিরদ্দি, বড় ষণ্ডা ওরা দুই জন। তারা হাসে হাসে কাছে বসে, কয় মধুর বচন ।
আছে মদনা বিটা বড় ঠ্যাটা, বাঁধায় লোঠা, তার না কখন । তুমি হওগে নরম, চোক্ষের শরম, ঠিক রাখিও মন। ভক্তি দ্বারা কর স্বামীকে সাধন। স্বামীয়ে অমূল্য নিধি, চিনলিনে কখন। আছে হিংসা নিন্দা মোঃ তিনজন, তারাইতো ৰদেৱ মহাজন। তাৱে তরফ কর কথা ধর নবিজীর বচন। তাই বলে বাহাদুর কর সবুর, তবেতো পাবি তুই স্বামীর দরশন।
আরও দেখুন :
