বিজয় সরকারের গান

বিজয় সরকারের গান  নিয়ে আজকের আয়োজন।যিনি বাংলাদেশের[৩] (তৎকালীন বাংলা) নড়াইলের ডুমদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী। কবি তার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সমধিক পরিচিত।তার পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী ও মাতার নাম হিমালয়া কুমারী।  পিতামহের নাম গোপালচন্দ্র বৈররাগী । তিনি স্থানীয় টাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

বিজয় সরকারের গান

 

বিজয় সরকারের গানঃ

কবি তার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। তার বহু জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে এ পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে / সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে”, তুমি জানো না রে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা , ” আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে ” প্রভৃতি অন্যতম।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে নেপাল বিশ্বাস নামক একজন শিক্ষকের কাছে যাত্রাগানের উপযোগী নাচ, গান ও অভিনয় শেখেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি স্কুল পাল্টান। প্রায় সবখানেই তিনি এমন এক বা একাধিক শিক্ষক পান, যাদের কাছে তিনি গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।

অল্প বয়সে পিতামাতা হারানোয় তার লেখাপড়া বেশিদূর এগোয়নি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেন।তিনি স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতার কাজ করেন। কিছুদিন করেন নায়েবের কাজ। পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লোক ও আধুনিক গান চর্চা করতেন।

 

বিজয় সরকারের গান
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

পোষা পাখি উড়ে যাবে।

পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী….
একদিন ভাবি নাই মনে
সে কি আমায় বলবে কখনে….
একদিন ভাবি নাই মনে !!
খেলতো পাখি সোনালী খাঁচায়…
বলতো কত কি আমায় !!
বসে রুপালি আড়ায়….
ফটিকের বাটি ভরে
কত খাবার দিতাম থরে থরে
নিষ্ঠুর পাখি খাইতো আনমনে…
একদিন ভাবি নাই মনে
জংলার পাখি করল সর্বনাশ…
এখন শুধুই হাই হোতাস !!
কোথায় করব তার তালাশ…
কে এমন দরদী আছে
সে বলে দিবে আমার কাছে…
পাখি আমার গেছে কোন বনে
একদিন ভাবি নাই মনে
আগে যদি জানতাম পাখির মন…
ও সে করিবে এমন !!
তারে দিতাম না এ মন…
বনের পাখি বনে গেল…
আমার বুকে দিয়ে ভীষণ ছেল…
তারে আর কি ফিরে পাবো জীবনে
একদিন ভাবি নাই মনে
পাখির মায়ায় পড়ে কত লোক…
পেল আমার মত সুখ !!
তাদের জল ভরা দুই চোখ…
অসীম গগনের পাখি..
তারে আপন বলে কেন ডাকি রে…
পাগল বিজয় কাঁধে বসে বিজনে !!
একদিন ভাবি নাই মনে।
পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী….
একদিন ভাবি নাই মনে !!
সে কি আমায় বলবে কখনে….
একদিন ভাবি নাই মনে ।

সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে

এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে
তোমার নগদ তলব তাগিদ পত্র এসে পরবে যবে
মোহ ঘুমে যে দিন আমার মুদিরে দুই চোখ
পাড়াপড়শী প্রতিবেশী পাবে কিছু শোক
তখন আমি যে এই পৃথিবীর লোক ভুলে যাবে সবে
যত বড় হউকনা কেন রাজা জমিদার
পাকা বাড়ি জুড়ি গাড়ি ট্রানজিস্টার
তখন থাকবে না কোন অধিকার বিষয় ও বৈভবে
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা আকাশ বাতাস জল
যেমন আছে তেমনি ঠিক রইবে অবিকল
মাত্র আমি আর থাকবোনা কেবল জনপূর্ণ ভবে
শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ বন্ধ হলো যেন
এই পৃথিবীর অস্বস্তি বোধ থাকবেনা আর হেন
পাগল বিজয় বলে সেই দিন যেন এসে পড়ে কবে।

আপন ঘরে বেঁধেছে গোলমাল

ক্ষ্যাপারে পাগলরে তোর আপন ঘরে বেঁধেছে গোলমাল,

এবার পরের ঘরে গেছেরে তোর নিজের ঘরের মালামাল।।

তোর বসত করা ঘরের মধ্যে ছয়জন ফেরে তোর বিরুদ্ধে

একাকী তাহাদের যুদ্ধে পারবি নারে বেসামাল।।

দশজন তোর বাহির দরজায়, ছয়জন তোর ভিতর কামরায়
বিষয়ের বিষ-দাঁতে কামড়ায় মোহের মহাকাল,
ওঝা আছে পরতন্ত্রে, বিষ চলে তার চালান মন্ত্রে
ষড় রিপুর ষড়যন্ত্রে সব করে দিলো পয়মাল।।
বাহিরে বীরত্ব ভারি, ভিতরে প্রবাল অরি
তোর দিয়ে নাকে দড়ি ঘুরায় চিরকাল,
বিষয় বিষে হয়ে মত্ত, জাগলোনা আর আত্মতত্ত্ব
ভুলে গেলি পরস্বার্থ কেবল স্বার্থের ঝামাল।।
টাকা পয়সা সিন্ধুক ভরা পার হইতে তোর নাই এক কড়া
ঘাটের মাঝি ভীষণ কড়া দূরন্ত ভয়াল,
ধূলায় দিয়ে গড়াগড়ি কুড়ায়ে লও পায়ের কড়ি
শ্রীগুরুর চরণে পড়ি নিজেরে করো সামাল।।
অজানা এই সংসারপুরে, পথ না চিনে মরলি ঘুরে
পড়ে গেছিস অনেক দূরে, এলো সন্ধ্যা কাল,
মোহে মুগ্ধমহীতলে দগ্ধচিত্তে বিজয় বলে
বাস করলি বাঁশ গাছের তলে ত্যাগ করে কৃষ্ণ তমালা।।

আমি জানিতে চাই দয়াল

আমি জানিতে চাই দয়াল তোমার
আসল নামটি কি
আমরা বহুনামে ধরাধামে
কত রকমে ডাকি

কেউ তোমায় বলে ভগবান
আর গড কেউ করে আহ্বান
কেউ খোদা কেউ জিহুদা
কেউ কয় পাপীয়ান
গাইলাম জনম ভরে মুখস্থ গান
মুখ বুলা টিয়াপাখী

সর্বশাস্ত্রে শুনিতে যে পাই
দয়াল তোমার নাকি মাতাপিতা নাই
তবে তোমার নামকরন কে করলে সাঁই
বসে ভাবি তাই
তুমি নামি কি অনামি সে সাঁই
আমরা তার বুঝি বা কি

কেহ পিতা কেহ পুত্র কয়
আবার বন্ধু বলে কেউ দেয় পরিচয়
তুমি সকলেরই সকল আবার
কারো কেহ নয়
তোমার দেওয়া আসল পরিচয়
কে জানে তা কি না কি

বিজয় বলে মনের কথা কই
আমি খাঁটি ভাবের পাগল নই
আমার গোল বেঁধেছে মনের মাঝে
তাতেই পাগল হই
আমার বুকে যা আই মুখে তা কই
কাঁটা কান চুলে ঢাকি।

 

দরদীয়া রে কোন দেশে যাবো

দরদীয়া রে কোন দেশে যাবো
তোর লাগিয়া রে
আমার জীবনে মরনে সুখ নাই
ঐ মুখ না দেখিয়া রে

ঝিল্লিমুখর ঘর-বাড়ি সব রজনী নিঝুম
একা একা বসে আছি চোখে নাইরে ঘুম
কাঁদে আমার সাথে বনের কুসুম
রজনী জাগিয়া রে

আধ ফালি এক চাঁদের হাসি
শেফালী বনে
———————- ?
আছি প্রতীক্ষায় এই শূণ্য ভুবনে
মিলন

তটিনী চলেছে ঢেয়ে
সে কার তল্লাসিয়া রে

—————-
বিজয় সরকার

 

তুমি জানো নারে প্রিয়

তুমি জানো না, জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা।

তোমায় প্রথম যেদিন জেনেছি, মনে আপন মেনেছি
তুমি বন্ধু আমার মন মানো না।

ও.. তুমি জানো না, জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা।

ফাল্গুন দোল পূর্ণিমায় মধুর মৃদু-মন্দ বায়ু বয়
ফুলবনে পুলকেরও আল্পনা,
ফুলবনে পুলকেরও আল্পনা।
আবার মধুরও মাধবী রাতে, বধুয়া তোমারি সাথে
করেছিলাম মধু নিশি যাপনা।
তুমি জানো না, জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা।

চলে গেলে আমায় ফেলে,
কি আগুনে বুকে জ্বেলে,
একদিনও দেখিতে বন্ধু এলে না,
একদিনও দেখিতে বন্ধু এলে না।

তোমায় পেলে দুঃখের কুটিরে,
দেখাইতাম বক্ষ চিরে,
বুকের ব্যাথা মুখে বলা চলে না।
ও.. তুমি জানো না, জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা।

কাষ্ঠ-যোগে দাবানল,
জ্বালায় পোড়ায় বন জঙ্গল
মন পোড়ানোর আগুন বন্ধু তাহা না।
কত বিরহীর অন্তর তলে,
বিনা কাষ্ঠে আগুন জ্বলে,
জলে গেলে আগুণ বন্ধু নেভে না।
তুমি জানো না, জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা।

ওরে আমি খুঁজিয়া জনম জনম,
ক্ষিতি অপ তেজ মরুৎ ব্যোমে,
বহু খুঁজে না পাই বন্ধুর ঠিকানা,
বহু খুঁজে না পাই বন্ধুর ঠিকানা।
পাগল বিজয় বলে চিত্ত চোর,
আসবে কি জীবনে মোর,
বুকে রইলো আশা ভরা বাসনা।
ও.. তুমি জানো না, জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা।

 

আরও পরুনঃ

লালন শাহের গান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Comment