Site icon Folk Gurukul [ লোকগান গুরুকুল ] GOLN

লালন শাহের গান

লালন শাহের গান

লালন শাহের গান

লালন শাহের গান নিয়ে আজকের আয়োজন। (১৭ অক্টোবর ১৭৭৪ – ১৭ অক্টোবর ১৮৯০)[২] ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি; যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত।[৩] তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক ফকির সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে ফকিরি গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘।[৪][৫] তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

 

Table of Contents

লালন শাহের গানঃ

লালনের গান লালনগীতি বা লালন সংগীত হিসেবে পরিচিত।[৬২] লালন তার সমকালীন সমাজের নানান কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক বিভেদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে তার রচিত গানে তিনি একই সাথে প্রশ্ন ও উত্তর করার একটি বিশেষ শৈলী অনুসরণ করেছেন। এছাড়া তার অনেক গানে তিনি রূপকের আড়ালেও তার নানান দর্শন উপস্থাপন করেছেন।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।
কেউ মালায় কেউ তসবি গলায়,
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায়।
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়,
জাতের চিহ্ন রয় কার রে।।
যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামনী চিনি কিসে রে।।
জগত্‌ বেড়ে জেতের কথা,
লোকে গৌরব করে যথা তথা।
লালন সে জেতের ফাতা
ঘুচিয়াছে সাধ বাজারে।

 

 

কে বোঝে সাঁইর লীলা খেলা

কে বোঝে সাঁইর লীলা খেলা।
ও সে আপনি হয় গুরু আপনি চেলা॥
সপ্ত-তালার উপরে সে,
নিরূপ রয় অচিন দেশে,
প্রকাশ্য রূপ লীলা রসে
চেনা যায় না লেগে বেদের ঘোলা॥
অঙ্গের অবয়বে সৃষ্টি,
করিল সে পরম ইষ্টি,
তবে কেন আকার নাস্তি
বলে, না জেনে সেই ভেদ নিরালা।

যদি কারো হয় চক্ষু দান
তবে সেরূপ দেখে বর্তমান,
লালন বলে, তাহার জ্ঞান ধ্যান
হরে দেখিয়ে সব পুথির পালা।

 

জাত গেল জাত গেল বলে

জাত গেল জাত গেল বলে

একি আজব কারখানা।
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।।

আসবার কালে কি জাত ছিলে
এসে তুমি কি জাত নিলে।
কি জাত হবা যাবার কালে
সেই কথা ভেবে বলো না।।

ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
এক জলে সব হয় গো শুচি।
দেখে শুনে হয় না রুচি
যমে তো কাউকে ছাড়বে না।।

গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়।
লালন বলে জাত কারে কয়
এই ভ্রম তো গেল না।।

 

আপন ঘরের খবর লে না

আপন ঘরের খবর নে না।

অনা’সে দেখতে পাবি
কোনখানে সাঁইর বারামখানা।।

কমলকোঠা কারে বলি
কোন মোকাম তার কোথা গলি।
কোন সময় পড়ে ফুলি
মধু খায় সে অলিজনা।।

সূক্ষ্মজ্ঞান যার ঐক্য মুখ্য
সাধকেরই উপলক্ষ।
অপরূপ তার বৃক্ষ
দেখলে চোখের পাপ থাকে না।।

শুক্লনদীর সুখ সরোবর
তিলে তিলে হয় গো সাঁতার।
লালন কয় কীর্তিকর্মার
কীর্তিকর্মার কী কারখানা।।

 

সময় গেলে সাধন হবে না

দিন থাকিতে তিনের সাধন কেন করলে না।।

জানো না মন খালে বিলে
থাকে না মীন জল শুকালে।
কি হবে আর বাঁধাল দিলে, মোহনা শুকনা।।

অসময়ে কৃষি করে
মিছামিছি খেটে মরে।
গাছ যদিও হয় বীজের জোরে, ফল ধরে না।।

অমাবস্যায় পূর্নিমা হয়
মহাযোগ সেই দিনে উদয়।
লালন বলে তাহার সময় দণ্ড রয় না।।

 

 

আছে আদি মক্কা এই মানব দেহে

আছে আদি মক্কা এই মানব দেহে

দেখ না রে মন ভেয়ে।
দেশ দেশান্তর দৌড়ে এবার
মরছো কেন হাঁপিয়ে।।

করে অতি আজব ভাক্কা
গঠেছে সাঁই মানুষ-মক্কা
কুদরতি নূর দিয়ে।
ও তার চারদ্বারে চার নূরের ইমাম
মধ্যে সাঁই বসিয়ে।।

মানুষ-মক্কা কুদরতি কাজ
উঠছে রে আজগুবি আওয়াজ
সাততলা ভেদিয়ে।
আছে সিংহ দরজায় একজন দ্বারী
নিদ্রাত্যাগী হয়ে।।

তিল পরিমাণ জায়গার ভিতর
গঠেছেন সাঁই ঊর্ধ্বশহর
এই মানুষ মক্কাতে।
কত লাখ লাখ হাজি করছে রে হজ
সেই জায়গায় বসিয়ে।।

দশ-দুয়ারী মানুষ-মক্কা
মুর্শিদপদে ডুবে দেখ গা
ধাক্কা সামলিয়ে।
ফকির লালন বলে গুপ্ত মক্কা
আদি ইমাম সেই মেয়ে।।

 

 তিন পাগলে হলো মেলা

তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে ।।

একটা পাগলামি করে
জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
আবার হরি বলে পড়ছে ঢলে
ধূলার মাঝে ।।

একটা নারকেলের মালা
তাতে জল তোলা ফেলা করঙ্গ সে
পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি
বুঝবি শেষে ।।

পাগলের নামটি এমন
বলিতে অধীন লালন হয় তরাসে
চৈতে নিতে অদ্বৈ পাগল
নাম ধরে সে ।।

তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে

 

 

এসব দেখি কানার হাট বাজার

এসব দেখি কানার হাট বাজার

বেদ বিধির পর শাস্ত্র কানা
আর এক কানা মন আমার।।

পণ্ডিত কানা অহংকারে
মাতবর কানা চোগলখোরে।
সাধু কানা অন বিচারে
আন্দাজে এক খুঁটি গেড়ে,
চেনে না সীমানা কার।।

এক কানা কয় আর এক কানারে
চল এবার ভবপারে।
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বারে বার।।

কানায় কানায় উলামিলা
বোবাতে খায় রসগোল্লা।
লালন তেমনি মদনা কানা
ঘুমের ঘোরে দেয় বাহার।।

 

মিলন হবে কত দিনে

আমার মনের মানুষের সনে।।

চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছে কালো শশী।
হব বলে চরণদাসী
তা হয় না কপাল গুণে।।

মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন
লুকালে না পায় অন্বেষণ।
কালারে হারায়ে তেমন
ঐ রূপ হেরি এ দর্পণে।।

ঐ রূপ যখন স্মরণ হয়
থাকে না লোকলজ্জার ভয়।
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
ও প্রেম যে করে সেই জানে।।

কে বানাইলো এমন রঙমহল খানা।

কে বানাইলো এমন রঙমহল খানা

হাওয়া দমে দেখ তারে আসল বেনা।।

বিনা তেলে জ্বলে বাতি
দেখতে যেমন মুক্তা মতি
জলময় তার চতুর্ভিতি মধ্যে খানা।।

তিল পরিমাণ জায়গা সে যে
হদ্দরূপ তাহার মাঝে
কালায় শোনে আঁধলায় দেখে নেংড়ার নাচনা।।

যে গঠিল এ রঙমহল
না জানি তার রূপটি কেমন।
সিরাজ সাঁই কয় নাইরে লালন তার তুলনা।।

 

বাড়ির কাছে আরশিনগর।

বাড়ির কাছে আরশিনগর

সেথা এক পড়শি বসত করে।
আমি একদিনও না দেখিলাম তাঁরে।।

গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
নাই কিনারা নাই তরণী পারে।
মনে বাঞ্ছা করি দেখব তারে
কেমনে সে গাঁয় যাই রে।।

কি বলবো সেই পড়শির কথা
তার হস্তপদ স্কন্ধমাথা নাইরে।
ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর
ক্ষণেক ভাসে নীরে।।

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো
যম যাতনা সকল যেতো দূরে।
সে আর লালন একখানে রয়
তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে।।

 

আরও  পড়ুনঃ

কাঙাল হরিনাথের গান

 

Exit mobile version