রশিদ উদ্দিনের গান

রশিদ উদ্দিন ১৮৮৯ সালের ২১ শে জানুয়ারি নেত্রকোণা পৌরসভাধীন বাহিরচাপড়া গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা কুস্তিগীর হিসেবে গৌরীপুরের জমিদারের নিকট থেকে বাড়িসহ একখন্ড লাখেরাজ কৃষিজমি প্রাপ্ত হন। এ জমির উপর তৈরি বাড়িতে রশিদ উদ্দিনের পিতা মরহুম মশ্রব উদ্দিন তার তিন ছেলে মল্লিক উদ্দিন, রশিদ উদ্দিন এবং নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে গড়ে তুলেন এক ছোট্ট সংসার। বড় ছেলে মল্লিক উদ্দিন এন্ট্রাস পাস করে নেত্রকোণার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কেরাণির চাকুরি গ্রহণ করেন।

 

রশিদ উদ্দিনের গান

 

রশিদ উদ্দিনের গান :

বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন আত্মভোলা। তাই বড়ভাইয়ের নিকট বাল্যশিক্ষা পাঠ ছাড়া কোনো বিদ্যালয়ে তার লেখাপড়া হয়নি। রশিদ উদ্দিন ১৫/১৬ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী পুখুরিয়া গ্রামের টাকনা মিস্ত্রির সান্নিধ্যে এসে একটু একটু করে একতারা বাজিয়ে বাউলগান শিখতে শুরু করেন।

তখন বাহিরচাপড়া গ্রামে কৃষ্ণলীলা গান শুরু হয়। রশিদ উদ্দিন কৃষ্ণের অভিনয় করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী বাংলা বেতাটিসহ সর্বত্র কবিগানের ব্যাপক প্রসার ছিল। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, দোলপূজাসহ হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে কবিগান ছিল এ অঞ্চলে এক বিশেষ আকর্ষণ।

পাশাপাশি টিপু পাগলের নেতৃত্বে ১৮২৭ সনে পরিচালিত ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার পর ল্যাংটা ফকিরদের জলসা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। তখন বাহিরচাপড়া গ্রামে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থেকে এক ল্যাংটা পীরের আগমন ঘটে। ১৯০৯ সনে রশিদ উদ্দিন এ ল্যাংটা শাহের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজ বাড়িতে হালকা-জিকিরের জলসায় মেতে ওঠেন।

বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন তাঁর বড় ছেলে আরশাদ উদ্দিনের দুই বছর বয়সে তাকে মৃত্যুশয্যায় রেখে হঠাৎ একরাতে গৃহত্যাগ করেন। গৃহত্যাগী হয়ে তিনি প্রথমে আসেন তাঁর ওস্তাদ কটিয়াদির ল্যাংটা শাহের আখড়ায়। সেখান থেকে তিনি ল্যাংটা শাহকে সাথে নিয়ে চলে যান আসামের লাউরের পাহাড়ে।

এক বছর সেখানে অবস্থানের পর চলে আসেন সিলেটের শাহ পরানের মাজারে।মাজারে ভ্রমণ রশিদ উদ্দিনের আধ্যাত্মিক সাধনা ও বাউলতত্ত্বের চর্চায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।

 

রশিদ উদ্দিনের গান
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আসুন দেখে নেই তার গানের সম্ভার:

এই বিশ্ব হইতেছে দৃশ্য

এই বিশ্ব হইতেছে দৃশ্য
অবশ্য কে তারে করেছ সৃজন।
হেরি অসম্ভব কাণ্ড ভাণ্ড সব
জ্ঞান হয় কর্তা আছে কোন জন।।
অদ্ভুত অপারগ অনন্ত এই অখিলে
এই সৃষ্টিতে কেউ স্রষ্টা না থাকিলে
যাইত জগত পড়ে বিশৃঙ্খলে
সুশৃঙ্খলে কি আর শোভিত এমন।।
অন্ধকারে আলো ব্যাধিতে ঔষধী
এ সমুদয় সেই বিধাতারই বিধি
এই সব উপায় না থাকিত যদি
হইত না জীবের কভু স্বভাবে সাধন।।
চন্দ্র মা তপন তারকা গগন
বিরাম বাসনা দিয়া বিসর্জন
নবগ্রহ ছয়ে ব্রিগ্রহ ভয়ে
নিত্য নিয়মিত স্রষ্টার হইতেছে ভ্রমণ।্
নিশ্চয়ই স্রষ্টার করুণার গুণে
স্নেহের সঞ্চার হয় মাতাপিতার মনে
সন্তান জন্মিবার পূর্বে দুগ্ধ দেয় মায়ের স্তনে
হবে বলে বাচ্চার জীবন ধারণ।।
পাগল রশিদ উদ্দিন কয়
এই সৃষ্টির লাগিয়া
স্তরে স্তরে কত কিছু রাখিয়াছে সাজাইয়া।
যখন যাহা চাই, হাত বাড়াইলেই পাই
অবিশ্বাস করা শুধু অকারণ।।

 

 

মানুষ ধর, মানুষ ভজ

মানুষ ধর মানুষ ভজশোন বলি রে পাগল মন।মানুষের ভিতরে মানুষকরিতেছে বিরাজন।।মানুষ কি আর এমনি বটেযার চরণে জগত লুটেএই না পঞ্চ ভূতের ঘটেখেলিতেছে নিরাঞ্জন।চৌদ্দ তালার উপরে দালানতার ভিতরে ফুলের বাগান।লাইলী আর মজনু দেওয়ানসুখেই করে যে আসন।।দুই ধারে দুই কঠোরাহায়াত মওত মাইঝখানে ভরাসময় থাকতে উঠরে ত্বরানিকটেতে কালসমন।সোনার পুরী আন্ধার করেযেদিন পাখি যাবে উড়েশূন্য খাঁচা থাকবে পড়েকে করবে আর কার যতন।।তালাশে খালাশ মেলেতালাস কর রঙমহলেউঠিয়া হাবলঙের কূলেচেয়ে থাকব সর্বক্ষণ।দেখিবে হাবলঙের কূলেদুইদিকেতে অগ্নি জ্বলেভেবে রশিদউদ্দিন বলেচমকিছে স্বর্ণের মতন।

আমার শুয়া চাঁন পাখি

শুয়া চাঁন পাখিআমার শুয়া চাঁন পাখিআমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকিআমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকি
তুমি-আমি জনম ভরা ছিলাম মাখামাখিতুমি-আমি জনম ভরা ছিলাম মাখামাখিআজি কেন হইলে নীরব, মেলো দু’টি আঁখি রে পাখিআমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকি
বুলবুলি আর তোতা, ময়না, কত নামে ডাকিতোরে কত নামে ডাকিশিকল কেটে চলে গেলেকারে লইয়া থাকি রে পাখিআমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকি
তোমার-আমার এই পিরিতি চন্দ্র-সূর্য সাক্ষীতোমার-আমার এই পিরিতি চন্দ্র-সূর্য সাক্ষীহঠাৎ করে চলে গেলে, বুঝলাম না চালাকি রে পাখিআমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকি
শুয়া চাঁন পাখিআমার শুয়া চাঁন পাখিআমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকিআমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকি

এই যে দুনিয়া কিসেরো লাগিয়া

এই যে দুনিয়া
কিসের লাগিয়া
এত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই
এই যে দুনিয়া
এই যে দুনিয়া
কিসের লাগিয়া
এত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই
এই যে দুনিয়া

ছায়া বাজী

পুতুল রূপে
বানাইয়া মানুষ।
যেমনি নাচাও
তেমনি নাচি
পুতুলের কি দোষ।
ছায়া বাজী
পুতুল রূপে
বানাইয়া মানুষ।
যেমনি নাচাও
তেমনি নাচি
পুতুলের কি দোষ।

যেমনি নাচাও

তেমনি নাচি।
যেমনি নাচাও
তেমনি নাচি।
তুমি খাওয়াইলে
আমি খাই
আল্লাহ।
তুমি খাওয়াইলে
আমি খাই
এই যে দুনিয়া
কিসের লাগিয়া
এত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই
এই যে দুনিয়া

তুমি বেহেস্ত

তুমি দোজখ
তুমি ভাল মন্দ
তুমি ফুল তুমি ফল
তুমি তাতে গন্ধ।
তুমি বেস্ত
তুমি দোজখ
তুমি ভাল মন্দ
তুমি ফুল তুমি ফল
তুমি তাতে গন্ধ।
আমার মনে
এই আনন্দ।
আমার মনে
এই আনন্দ।
কেবল আল্লাহ
তোমায় চাই
আমি কেবল আল্লাহ
তোমায় চাই
এই যে দুনিয়া

কিসের লাগিয়া
এত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই
এই যে দুনিয়া

 

 

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment