শূন্য ভরে ছিলেন যখন গুপ্ত জ্যোতির্ময়-লালন শাহ

লালন শাহ এর গান শূন্য ভরে ছিলেন যখন গুপ্ত জ্যোতির্ময় – আজকের আয়োজন

শূন্য ভরে ছিলেন যখন গুপ্ত জ্যোতির্ময়

 

শূন্য ভরে ছিলেন যখন গুপ্ত জ্যোতির্ময়-লালন শাহ

শূন্য ভরে ছিলেন যখন গুপ্ত জ্যোতির্ময়।

লা-শরিকালা কালুবালা ছিলেন লুকায় ॥

রাগের ধুমায় কুওকারময়

সুখনাল ঝরে নৈরাকার হয়

আপনার রসে আপনি ভাসে

ডিম্বকার দেখায় ॥

অন্ধকারে রতিদানে

ছিল সে না পতির রূপদর্পণে

হ’ল সেই না পতির সঙ্গে গতি

নীরে পদ্মময় ॥

তার আগাগলি ডিম্ব ছোটে

চৌদ্দ ভুবন তাইরি পেটে

সিরাজ সাঁই কয় অবোধ লালন

এ ভেদ বুঝতে পারলে হয় ॥

শূন্য ভরে ছিলেন যখন গুপ্ত জ্যোতির্ময়-লালন শাহ

 

লালনের জনপ্রিয়তা

শহরে, গ্রামে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে বাউলসংগীত। সব ধরনের শ্রোতাই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করে বাউল গান। এ গানের অসম্ভব জনপ্রিয়তার পেছনে আছে এর সর্বজনীনতা, গভীর মানবিকতা বোধ। ইউনেসকো যে স্বীকৃতি বাউল গানকে দিয়েছে, তার অধিকাংশ কৃতিত্বই লালন সাঁইয়ের। মানুষ লালনের গান শুনেই বাউল গান নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বেশি।

ইউনেসকোর স্বীকৃতির সুফল কী জানতে চাইলে তরুণ গবেষক সাইমন জাকারিয়া জানান, এই স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলার বাউল গানের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এর ফলে বাউল গানের সংরক্ষণ ও প্রসারেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিয়ে এ ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

তিনি আরো জানান, ওই ঘোষণার পর ইউনেসকো বাউল গানের বাণী ও সুর সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পকলা একাডেমি একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের দিকে ওই প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া অঞ্চলে ফিল্ড ওয়ার্কের মাধ্যমে বাউল গানের বাণী ও সুর সংগ্রহের কাজ চলে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫০০ বাউল গান নিয়ে ‘বাউলসংগীত’ নামে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে ১০০টি গানের ইংরেজি অনুবাদ এবং দেড় শ গানের স্বরলিপি যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় বাউলদের কণ্ঠে অবিকৃত সুরে গাওয়া পঞ্চাশটি বউল গান সিডিতে ধারণ করে ওই গ্রন্থের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সাইমন জাকারিয়ার মতে, বাংলার অমূল্য সম্পদ বাউল গান সংরক্ষণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাউলশিল্পী অধ্যুষিত অঞ্চল সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, নাটোর প্রভৃতি অঞ্চলে ফিল্ড ওয়ার্ক শুরু করা উচিত। না হলে কালের গর্ভে অনেক গান এবং গানের সুর হারিয়ে যাবে। বাউল গানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ইউনেসকোর সনদপত্রটি সংরক্ষিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি জাতীয় লেখক ও সাহিত্য জাদুঘরে।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি যখন বিশ্বায়নের হাওয়া লাগল বাংলাদেশে, তার পরের কয়েক বছর বাউল গানের অন্ধকার যুগ। হিন্দী ধুমধাড়াক্কা আর এমটিভির অশ্লীল বন্যায় বাংলা গানের তখন হাসফাস অবস্থা। দু’একটা উল্লেখ করার মত ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। ফিড্ ব্যাকের সঙ্গে আবদুর রহমান বয়াতীর যুগলবন্দীতে ‘মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি/কোন মিস্তরী বানাইয়াছে’ – তারুণ্যের একনম্বর পছন্দের তালিকায় ছিল বেশ ক’ মাস।

 

শূন্য ভরে ছিলেন যখন গুপ্ত জ্যোতির্ময়-লালন শাহ

 

বাউল গানের সুন্দরীতমা চাঁদ ঢাকা পড়ে রইল অপসংস্কৃতির কালো মেঘে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লেগেছে বেশ ক’বছর। তবে যে নতুন রূপে বাউল গানের প্রকাশ ঘটল একবিংশ শতাব্দীতে তার সঙ্গে তুলনা চলেনা আগেকার কোন সময়েরই।ইউনেস্কো ২০০৫ সালে বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।

আরও দেখুন :

শূন্য ভরে ছিলেন যখন গুপ্ত জ্যোতির্ময়-লালন শাহ

 

Leave a Comment