বর্তমান প্রজন্মের কয়েকজন মরমীকবির গান – বাউল শিল্পী বা বাউল সাধক বা বাউল একটি বিশেষ ধরনের গোষ্ঠী ও লোকাচার সঙ্গীত পরিবেশক, যারা গানের সাথে সাথে সুফিবাদ, দেহতত্ত্ব প্রভৃতি মতাদর্শ প্রচার করে থাকে। বাউল সাধক বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকে।
মূলত বাউল সংগীত একধরনের বাংলা সুফিবাদ সংগীত ছিল। বাউল গান পঞ্চবিংশ শতাব্দীতে লক্ষ্য করা গেলেও মূলত কুষ্টিয়ার লালন সাঁইয়ের গানের মধ্য দিয়ে বাউল মত পরিচিতি লাভ করে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের নিকট। বাউলদের সাদামাটা জীবন ধারণ ও একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউলদের বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।

Table of Contents
বর্তমান প্রজন্মের কয়েকজন মরমীকবির গান
এক
সয়াল শাহ
জন্ম ১৯৫৪ খ্রিঃ- দিরাই; সুনামগঞ্জ। পুস্তিকাঃ কাঙাল দুয়ারে হাজির প্রকাশকালের উল্লেখ নেই।
১.
কালা শাহ আউলিয়া বাবা রহমতের খনি।
আমি পাপীর চরণতলে আশ্রয় দিবায়নি ।
বাবা তুমি গুণে গুণবান দান করেছেন পাক ছুবাহান।
ফকির সাধু মজনু মস্তান দেয় নামের ধ্বনি ॥
বাবা তুমি কাঙালের ধন তাই তো কাঙাল করে রোদন।
রসিক সুজন মন মহাজন তুমি অন্তর্যামী ।
কী দিয়া সেবিব চরণ বাবা জানি না সাধন ভজন।
তোমারই পবিত্র চরণ গায় লাগবনি ॥
পাগল সয়াল কুলনাশা মুখে নাই ডাকিতে ভাষা।
রহমতের বিন্দু ছিটা আমায় দিবায়নি ।
২.
ও মুর্শিদ কোলে নিবায়নি
অকূল সাগরে আমার জীর্ণ তরণী ।
মুর্শিদও, তুমি ছাড়া ডাকব কারে কে আছে সঙ্গিনী
নির্ধনিয়ার ধন তুমি অন্ধের নয়নমণি
মুর্শিদও, সাধন ভজনহীনও আমি কেমনে বাই তরণী
অকূল নদীর ঢেউ দেখিয়া কাঁদে আমার প্রাণি
মুর্শিদও, আমি আশেক তুমি মাশুক দেই নামের ধ্বনি
পারের কাণ্ডারী তুমি পাতকী তরানি
মুর্শিদও, অকূলের কূল তুমি মুর্শিদ বলেন জ্ঞানী গুণী
সয়াল শাহ ডুবে মরলে কলঙ্ক তোমারই
৩.
ভবপারে তুফান ভারি জানি না সাঁতার দয়াল মুর্শিদও কাঙাল জানিয়া করো পার
মুর্শিদও, একে আমার ভাঙা তরী কূল কিনারা নাই পাড়ি ভয় পাইয়া কাঁদে আমার প্রাণ মুর্শিদও
আমি অধম গুনাগার, তোমার কাছে ভারাভার রাখো মারো সব তোমার এক্তিয়ায়
মুর্শিদও, তুমি ছাড়া ডাকব কারে দরদি নাই এ সংসারে নিজও গুণে করো যদি পার ও মুর্শিদও
শিশু যখন আকূল হয়ে, মা মা বলে কেঁদে ফিরে জননী কি ঘরে বসে আর
মুর্শিদও, আন্তজ্ঞাতি সব ছাড়িয়া যোগিনীর বেশ ধরিয়া আশায় আছি পাইতাম দিদার মুর্শিদও
সয়াল শাহ পাগলমতি, চরণছায়ায় রাখো যদি
পাবে শান্তি ঘুচিবে আঁধার ।
৪.
ও মন আছ কার আশায় হলো না মন পারে যাওয়া, বেলা বয়ে যায়
মন রে বরজখে থাকিয়া খাড়া দমের ঘরে দেও পাহারা, চোরা ছয়জন লুটিবে তোমায়
তুমি হইয়া চেতন চোরা ছয় জন কর শাসন নইলে মন ঠেকবে পারঘাটায়
মন রে মুর্শিদ রূপ করিয়া ধিয়ান বাও নৌকা হইয়া সাবধান, বাইলে নৌকা যাবে কিনারায়
না বাইলে যাবে মারা, কাল কুম্ভির নৌকাতে ভরা ঠেকবে নৌকা ঐ বালুচরায়
মনরে সময় থাকতে করো সন্ধান সাধের বেলা অবসান আঁধার হলে যাবে মন কোথায়
করে দেখ বিবেচনা, কেউ তখন তোমার রবে না সয়াল শাহ তোর হবে কী উপায়
৫.
ওরে মনা ভাই ঘুমে কেন মজাইলে মন
এ ভব বাজারে আইলে করিতে বেপার
মহাজনের ধনরত্ন ভরিয়া ভাণ্ডার
কাম কামিনীর সঙ্গ পাইয়া মজাইলে মন
হেলাতে রং তামেশা কাটাইলে জীবন
মাঝি মাল্লায় ঠিক করিয়া শীঘ্র ধরো পাড়ি।
আইড়া কোণে সাজে করিয়া আসবে তুফান ভারি ।
সা সা শব্দে ঢেউ উঠিবে দেখিবে যখন।
কাঁদিলে দরদি তোমার কে হবে তখন ॥
দালানকোঠা পাকা বাড়ি করলে জমিদারি।
নিশি কাটায় সুখ শয্যায় পেয়ে সুন্দর নারী ।
দমের বাঁশি বাজাও বসি হইয়া চেতন।
এক জায়গায় রাখতে পারল না সয়াল শার মন ।
৬.
পাগল মনও রে এদেশে কি থাকব চিরদিন
দিবে যদি ভবপাড়ি মুর্শিদ ধরে রাস্তা চিন
ঘোরাফেরায় গেল জীবন করলে না পথের আয়োজন
কেউ হবে না তোমার আপন কাল সমন আসবে যেদিন ॥
মরণ কথা হয় কি স্মরণ কী করিবে আসলে সমন
ভাই বন্ধু স্ত্রী পুত্রগণ
কে হবে তোমার জামিন ॥
হায়রে হায় কী করিলাম রিপুবশে বশী হইলাম
সয়াল শাহ ভাও না বুঝিলাম কী জবাব হাশরের দিন ॥
৭.
আদর করে দুধও কলা খাবাই আমি যারে লো প্রাণসই সে একদিন ছাড়িয়া যাবে মোরে রে ॥
সই লো সই, দালানকোঠায় ফুল বিছানা এয়ারকন্ডিশন রুম, কামিনীর সঙ্গ পাইয়া দিলাম সুখের ঘুম
রং তামেশায় আনন্দের ধূম করলাম জনম ভরে লো প্রাণসই
সই লো সই, আপন বলে ভাবি যারে সে আসলে পর, জীবননদীর তীরে বাঁধলাম আমার বাড়িঘর
অন্তরে সমনের ডর কোনদিন জানি ধরে লো প্রাণসই
সই লো সই, সয়াল শাহ দয়ালের কাঙাল দয়া করে যদি রহমান রহিম নামের আশা করি নিরবধি
চোখের জলে বহে নদী চিন্তায় তনু ঝরে লো প্রাণসই
৮.
কীসের আশায় বাঁধলে বাড়িঘর পাগল মন আমার
কীসের আশায় বাঁধলে বাড়িঘর
মনরে আসলে তুই যাবে একা কেউ হবে না সাথী আপনজন তোর পর হইবে, নিভলে ঘরের বাতি
চড়ে যাবে বাঁশের পালকী অন্ধকার কবর
মনরে আসা যাওয়া ভবের খেলা ভাবলে না একবার এ দুনিয়ার জমিদারি কিছুই নয় তোমার
স্ত্রী পুত্র সবই অসার চক্ষু মুজলে সবই পর
মনরে রংপুরের বাজারে এসে করছ খেলাধুলা হঠাৎ একদিন চেয়ে দেখবে ডুবল সাধের ভেলা।
হবে কি তোর পারে যাওয়া আসলে তুফান ঝড়।
মনরে মুর্শিদ নাম স্মরণ করো গলে পরো মালা মুর্শিদ বিনে কে কিরবে ভাঙা ঘর উজালা! সয়াল শার ঘরের পালা করে যে নড়চড় ।
৯.
ও মন আসিয়া ভবের হাটে রঙ্গ রসের মন মজাইয়া লাগলে মায়ার ছাটেরে ।
মনরে অকূল সাগরের পাড়ি চেয়ে দেখ মন বেপারী জীর্ণ তরী ছয় চোরায় ধন লোটে।
কাণ্ডারী বিহনে নৌকা ফিরে ঘাটে ঘাটেরে।
মন রে শেষ হইলে ভবের ভ্রমণ সমন নিয়ে আসবে পিয়ন হাজিরা দিতে হবে কোটে।
সেই কোটের হুকুমদার।
শুনেছি ওয়াহেদুল কাহার দয়ামায়ার চিহ্ন নাহি জোটে রে।
মনরে কাল সমন আসিবে যখন কেউ তোমার শুনবে না রোদন ভাইবন্ধুগণ চড়াইবে পালকিতে।
সয়াল কারে দিবে দোষ দিন কাটাইলে হইয়া বেহুশ – ভক্তি মাশুল ঘটল না ললাটে রে।
১০.
কী সুখেতে আছি আমি এবার দেখে যাও আসি।
ওরে বিদেশী।
প্রেম করে সুখ হইল না গোকূলে হইলাম মিছা দোষী ।
হাসি খুশি করে কত করলে ভালবাসা, আসি বলে চলে গেলে ঘটাইলে দুর্দশা।
কারবা জানি পুরাও আশা ভাবি দিবানিশি ।
দিনরজনী অভাগিনী কাঁদি অনিবার, আমার কথা তার মনে কি পড়ে না একবার।
প্রাণবন্ধুর পিরিতে আমার সর্বকূল বিনাশী ।
ওই শোনা যায় বাঁশির ধ্বনি কে জানি বাজায়, জল ভরিবার ছল করিয়া যাব যমুনায়।
রূপ দেখে প্রাণ জুড়াব হায় কয় সয়াল উদাসী ।
১১.
বন্ধু পরদেশীর
তুমিনু সুজন।
কেমনে ভুলিয়া রইলায় পাষাণের মতন ।
বন্ধুরে কাছে এসে ভালবেসে হয়েছিলে সাথী,
আসি বলে চলে গেলে ঘটালে দুর্গতি।
নয়নজলে দিবারাতি ভিজে মোর বসন ।
বন্ধুরে আসিয়া দেখে যাও একবার আছি কত সুখে, কুল গেল কলঙ্কী হইলাম দাগ লাগাইলাম জাতে।
বুঝি তোর বিচ্ছেদের বিষে হইবে মরণ।
বন্ধুরে কার কাছে কই মনের দুঃখ কইলে কেউ বোঝে না, সবাই আমায় পাগল বলে কেউ ভালবাসে না।
সয়াল শার তুমি বিনা কে আছে আপনা ।
১২.
আমারেনি পড়ে তোমার মনেরে বন্ধু।
ভুলিয়া রইলে কেমনে ।
প্রাণবন্ধুরে ভালবাসি গলে মোর প্রেমরশি দূরে বসি ধীরে ধীরে টানে।
মন করে আনচান যারে সঁপেছি প্রাণ চোখের পানি ঝরে রাত্র দিনে ।
এই যদি ছিল মনে নিদয়া নিঠুর বেইমানে কাঁদাইয়া মারিবে পরানে।
আসিল না কালাচান যৌবন হল অবসান পোড়া প্রাণ জুড়াব কেমনে ॥
তোমার প্রেমে এত দোষী মন্দ বলে প্রতিবেশী অবুঝ মন বোঝে না তুমি বিনে।
কয় সয়াল শাহ দীনহীনে শান্তি নাই মরণ বিনে মন বৃন্দাবন আঁধার সে বিহনে ।

॥ দুই ॥
শাহ আব্দুল ওদুদ পুস্তিকা প্রেমের মরা প্রকাশকাল- ২০০২ দীলতরঙ্গ প্রকাশকাল- ১৯৯৯ জন্ম- ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ, ছাতক, সুনামঞ্জ।
১.
নাম ছাড়া কেউ নাই সংসারে নামের সাথে নাম রইয়াছে দেখনা মন চিন্তা করে ।
নাম ছাড়া ছাড়িলে নিশ্বাস-পরকালের নাইরে আশ্বাস হিসাবে ছাড় শ্বাস প্রশ্বাস থাকিওনা ঘুমের ঘোরে ।
যোগী ঋষি মনিবর নাম সাধনে হইলো অমর পান করিয়া নামের জহর জিয়ন্তে গিয়াছে মরে ॥
নামের পরশ তুচ্ছ হাওয়া- মাহুত পুরে আসা যাওয়া কঠিন কর্ম তারে পাওয়া ভবের পোষাক গায়ে পরে ।
হৃদয়ে আস্তানা করে চৌদ্দ ভুবন বিরাজ করে পাহারা দেয় চৌকিদারে থাকিয়া আমানত পুরে।
উচা নিছা না চিনিয়া- চলা যায়না অন্ধ হইয়া আব্দুল ওদুদ কইন ভাবিয়া মনের মানুষ থাকে দূরে।
২.
হিংসা করা মহাপাপ সত্য সর্ব শাস্ত্রে কয় ।
কৃপা তো নয় পথের ধূলি যত ইচ্ছা নিবে তুলি রিপুকে জলাঞ্জলি দেওয়াটাও সহজ নয় ।
করা কঠিন বলা সোজা
বুঝলেনারে মন বেবুঝা
মন পাগলা তোর মনরে বোঝা মনের মানুষ মনেই রয়।
আব্দুল ওদুদ ঠেকছে ভবে
কান্দিয়া আর কি লাভ হবে
দোষী তো সকলেই কবে প্রেমের মরা সইতে সয় ।
৩.
গাউছুল আজম বাবা মাওলানা আমি তোমার প্রেমে দেওয়ানা ।
ফটিকছুড়ে পাক আস্তানা হাজার হাজার ভক্ত আসে হইয়া দেওয়ানা আনন্দে গায় তোমার গান হইয়া ফানা ।
তোমার দরবারে হইয়া হাজির ভক্তকূলে করে সদা নামেরই জিকির পাইতে রহমতের নীর করে প্রার্থনা ।
আব্দুল ওদুদ প্রেম ভিখারী কৃপা দান করো বাবা হক ভান্ডারী পাপী জেনে লও উদ্ধারী এই কামনা।
8.
আগে মন চোরারে বান আগে দিল চোরারে বান চোরায় চুরী করি ঘটাইব নিধান ।
ঘর থাকি ঘরে যায় স্বভাবটা তার ভালনায় বেদিশা করিয়া দৌড়ায় বানাইয়া অজ্ঞান ।
চুরি করা তারই অভ্যাস লোভ দেখাইয়া করে বিনাশ তারে করিয়া বিশ্বাস হারাইলাম সম্মান ।
মন চোরাটা বড় চঞ্চল- ভালা মানুষ করে পাগল
হারাইলাম লাখের সম্বল তার ভাবে করে ধিয়ান
ঘরে বাহিরে দৌড়ে চোরা- ধরতে গেলে দেয়না ধরা
আব্দুল ওদুদ সর্বহারা মুর্শিদ মৌল্লা নিগাবান ।
৫.
আওরে ভাই চলে যাই হাইকোট বাবার দরবারে
পাক দরবারে গেলে পরে শান্তি মিলে অন্তরে।
হাই কোর্টের প্রশাসক যিনি খাজা শরফ উদ্দিন চিস্তি জানি ধনের ধনি রহমতের খনি পাঠাইলেন পরোয়ারে ।
হাই কোর্টে আছেন শুইয়া জিন্দা রুহি আউলিয়া অলি বাংলা নামধরিয়া আছেন ঢাকা শহরে।
হাই কোর্টের ভাবুক যারা অন্তরে তার আগুন ভরা গানের সুরে ডাকে তারা বুক ভাসায় আখি নীরে
হাই কোর্টে আছেন বসি বাউল সাদক যুগি ঋষী, আর কতমন বিলাসী ইচ্ছা মত ঘুরে ফিরে ।
বলে শাহ আব্দুল ওদুদ ফকির আছি বাবা নত শির দরজায় ভিখারী হাজির প্রেম ভিক্ষা দাও আমারে ।
৬.
বাউল সাজলে কি আর চলে কাজে কর্মে মিল না থাকলে কি হবে এই লম্বা চুলে ।
নামে কামে যুক্ত করে নৌকা দৌড়াইলেন শুকনায় সৈয়দ শানূরে খ্যাতি আছে ইতিহাসের পাতায়।
অমর হইয়া আছেন দুনিয়ায় প্রমাণে মিলে ।
করিয়া আল্লাহর জিকির- শিতালংশা হইলেন ফকির মুর্শিদ রূপে কররেন
ফিকির ভেবে চিন্তে দিলে বেদ বিধান নাই কোনো কালে প্রমাণ রহিল পাক দলিলে ।
কালা শাহ ফকির দূর্বিণ শাহ গাইলেন ভাবেরই গান
শাহ আব্দুল করিমের গানে ভাটিয়াল নদী হয় উজান।
গানের অন্য অর্থ জ্ঞান মহা বিপদ না বুঝিলে।
অভাবে স্বভাব নষ্ট কুমতির আগ্রাসন
প্রেমের গান গাইয়া ভবে প্রেমিক হইল কতজন?
ভক্তি দিলে মুক্তি মিলে দেখরে ভাই কোরান খুলে।
বাউলে বাউল বানায় মাথায় রাখায় লম্বা চুল
পাগল হইয়া পাগল খুঁজে ছেড়ে দিয়া জাতি কূল
এ ওদুদ কয় করেছি ভুল সাতার দিয়া ভবের জলে।
৭.
পড়ো ইল্লাল্লার জিকির-
যে নামে পাবে দিদার দয়াল নবীজীর।
মুর্শিদ রূপে ধ্যানে মগ্ন ভাবে নতশির, ইল্লাহ জপিতে থাক সব করিয়া বাহির দয়ালের হইবে দয়া মুর্শিদের খাতির।
লা শব্দে মারিয়া টান মস্তকে দাও বাড়ি হা শব্দে ছাড়িয়া শ্বাস যাইও শান্তি পুরী।
ইল্লাল্লাহ রাখিও কূলবেতে স্থির।
নাভীমূলে আছেরে ভাই মুর্শিদেরই ধন আমানত ঠিক রাখিলে হইবে মহাজন।
ওলী নবী আউলিয়া সাধনের ফকির ।
সাধনা বলে খুলো ছয় লতিফার তালা তোমার এই অন্ধকার ঘর করো উজালা রূপ সাগরে ডুবে দেখ দিদার নবীজির ।
কপাল দোষে এ ওদুদের হইলনা সাধন অবহেলায় চলে গেল সাধের জীবন পুলছিরাতে দিদার পাইবনি এলাহির।
৮.
ওমন গুরু ভজরে-থাকিতে যৌবন- দিন গেলে দিন আর পাবেনা-ঘটবে বিড়ম্বন ওমন-গুরু ভজরে ।
ওমনরে-গুরু নামে কর খেলা করিয়া যতন
যাহার কাছে আছেরে ভাই অমূল্য রতন ।
ওমনরে-দয়াল গুরু পারের কাণ্ডার নির্ধনিয়ার ধন কৃপাগুণে ত্বরাইয়া নিবা পাপী-তাপী জন।
ওমনরে-ছয় রিপুরে ধ্বংস করে ধরো পাক চরণ বিপদের কাণ্ডারী মৌলা মুর্শিদ গুণধন ।
ওমনরে-আব্দুল ওদুদ ভাবিয়া কয় গেল এ জীবন
কপাল মন্দ জুটিলা-গুরুজীর চরণ ॥
৯.
কি সুন্দর বানাইলো মানব তরী দয়াল কুদরতের কারিগরী ।
আব-আতশ খাক বাদে-নাও বানাইলো মনের সাধে মনি মুক্তা দিলো বোঝাই ভরি।
উপরে বাতাস নীচে পানি-মধ্যখানে তেলের খনি চলিতেছে দিন রজনী পবনেতে ভর করি ।
মানব তরী বোঝাই করা-চৌকিদারে দেয় পাহারা বেকিয়ালে ডুববে ভরা চালাও যত্ন করি ।
মাঝি মাল্লা যতজন-কুমন্ত্রণা দেয় সর্বক্ষণ বিফলে যায় সোনার জীবন ডুবে মানব তরী
আব্দুল ওদুদ সরল মনে-নৌকা বায় নিশি দিনে নিজকে নিজে নাহি চিনে উঠল তুফান ভারি ।
১০.
মানুষ পাওয়া বড় কষ্ট মনের মানুষ না পাইলে কিছুতেই মন হয়না তুষ্ট ।
সঙ্গগুণে লোহা ভাসে স্বয়ং প্রেম দেবতা হাসে মানবতা অনায়াসে উপাধি পায় সর্বশ্রেষ্ঠ ॥
করিয়া নিঃস্বার্থ পিরিতি ঠিক রাখ ভাই মনের গতি
না বুঝিয়া রীতিনীতি হইওনা আর পথ ভ্রষ্ট ॥
যার সনে যার ভালোবাসা
তার অন্তরে তার প্রেম পিপাসা এ ওদুদের পুরলনা আশা জাতি কূল সবই নষ্ট।
১১.
ভিখারী তর দুয়ারে খাড়া একটু দয়া করতে যদি
শাহ আলী বাগদাদী বাবা শাহ আলী বাগদাদী ।
জানি তোমায় পীরানের পীর তোমার দরবারে হয়েছি হাজির
চরণে নোয়াইয়া শির ডাকিতেছি নিরবধি।
তোমার দয়ার নাই সীমা কর জোড়ে চাইতেছি ক্ষমা
গাই তোমারই নামের সামা অন্তরে লইয়া প্রেম ব্যাধি।
পাক চরণে দিয়া ভক্তি কত- জনে পাইল মুক্তি
ডুবাইওনা আমার কিস্তি ভয়ে সদায় কাঁদি
বসাইয়াছ প্রেমের বাজার ভক্ত গনের নাই পারা পার
আব্দুল ওদুদ চাহে দিদার কাঠগড়াতে হয়ে বন্দি।
১২.
বাবা শাহপরান-
আমার প্রতি হও মেহেরবান
তুমি যারে দয়া করো দূর হয় তাহার সব নিধান ।
জালালী কবুতর খাইলায় মনেরই অভিলাষে
দম ফুঁকিয়া আবার তুমি উড়াইলায় আকাশে
দেখাইলায় কারামতী কবুতরের দিয়া প্রাণ ।
কি বলবো মহিমা তোমার অধমেরই মুখেতে
আমি অধম আশা রাখি তোমার দয়া পাইতে
কাঙাল জেনে অধমেরে করো কিছু দয়া দান ।
টিলার উপর রওজা শরীফ আছো জিন্দা ঘুমাইয়া
কতো রোগী ভালা হইলো গাছের পাতা খাইয়া
তুমি যারে করো দয়া ছরকাতে সে পায় আহসান ।
পাক চরণের ধূলা পাইতে মনে জাগে বাসনা
পাগল ওদুদ কয় কান্দিয়া আমারে দাও শ্বান্তনা
আশাতে দিওনা ছাই তুমি আমার প্রাণের প্রাণ ।’

॥ তিন ॥
শাহ সিরাজুল ইসলাম ওরফে আদর শাহ জন্ম- ১৩৩০ বঙ্গাব্দ- মৌলভীবাজারে) পুস্তিকা- ভবসাগর-প্রেমের লহর প্রকাশকাল- ১৪০৫ বঙ্গাব্দ, ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ।
১.
বলে মনুরায় সঙ্গ গুণে লোহা জলে ভাসিয়া বেড়ায়
কাণ্ডারী বিহনে নৌকা, বাতাসে ঘুরায়।
বলে মনুরায়।
মনরে আপন হয়ে আপনকে মারে করি কি উপায়
সুমতির ঘরে কুমতি আসিয়া, ঝগড়া লাগায়। ঐ
মনরে কাল ননদী ছয়জন বাদী, বল যাই কোথায়
দিবারাত্র চিন্তা করে কাঁদে অন্তরায়। ঐ
মনরে কার কাছে যাই দুঃখ বলি, মন্দ কয় আমায়
আদর শাহ কয় কর্মদোষে, বৃথা জীবন যায়
সঙ্গগুণে লোহা জলে ভাসিয়া বেড়ায়।
২.
আমারে দি তোমার মায়া নাইরে, কালিয়ার কানাই
তোমার দয়া আমারে দিয়া নাই।
যেদিন দেহ সাঙ্গ হইবে, দুহাতে কাংকন ভাঙ্গিবে
কান্দাকান্দি করবা সবাই মিলিয়ারে
নিষ্টুর কালিয়ার কানাই। ঐ
নব যৌবন চলে গেল, বৃদ্ধকালে দেখা দিল
আগের মত বল শক্তি নাইরে কালিয়ার কানাই। ঐ
প্রভু যারে দয়া করে অন্ধকারে আলো করে
ভাঙ্গা গড়া সবই তোমার, কামাইরে কালিয়ার কানাই। ঐ
যারে লইয়া করলাম মেলা সে দুশমন শেসের বেলা
আদর শহা বলে, সঙ্গের সাথী নাইরে
নিষ্টুর কালিয়ার কানাই। ঐ।
৩.
দারুণ খন্নাছের জ্বালায়, সইতে না পারি
সাতা পাচা ঘর বানাইয়া দেহ মেস্তরী। (ধোয়াপদ)
দারুণ খন্নাছের জ্বালায় সহিতে না পারি।
যা করলাম রং বাজারে, করলাম দোকানদারি
লাভে মুলে ভাঙ্গিয়া খাইলাম, উপায় কি করি। ঐ
রংগে ঢংগে দিন কাটাইলাম, লইয়া রঙ্গিনী
স্ত্রী পুত্র এগনা বেগনা, একদিন সব হবে বৈরী। ঐ
ঘর বানাইতে সবাই মিলে, যাইত স্থান ঠিক করি
সেই ঘরে রাখিও আমায়, পিন্ধাইয়া সাদা শাড়ী। ঐ
এদেশে দরদী নাইরে আর, আসব না ফিরি
আদর শাহ বলে শেষের কালে ছবুর শাহ্ কাণ্ডারী
সাতাপাচা ঘর বানাইয়া দেহ মেস্তরী।
8.
দেহতরী ডুবে গেল কাম সাগরে (ধোয়াপদ)
জ্ঞানের বৈঠা ভেঙ্গে গেল, ঢেউয়ের জোয়ারে। ঐ
ঐ দেহে পঞ্চআত্মা, আর যত মাল মাত্তা
সব ডুবিয়া গেল খাস্তা, ঐ ভবের বাজারে। ঐ
সঙ্গের সাথী যতই ছিল, কাম নদীতে সব ডুবিল
হাবুডুবু কত খাইলো, ভাঙ্গা বৈঠা লইয়া ঘোরে। ঐ
এই দেহ ভান্ডার পুরে, দাড়ি মাঝি ঠিক করে
গুরুর কাছে শিক্ষা নিয়ে, যাও নদীর পারে।
মন মনুরা দেহের মাঝি, নৌকা বায়গো দিশাছাড়া
আদর শাহরী ভাঙ্গাতরী, যদি গুরু দয়া করে
জ্ঞানের বৈঠা ভেঙ্গে গেল, ঢেউয়ের জোয়ারে। ঐ
৫.
মিত্রই শত্রু হয় জগতে (ধোয়াপদ)
স্ত্রী পুরুষ আত্মীয় স্বজন, কেহ নয় আপন ভবেতে। ঐ
মিথ্যা এই জগতে জ্ঞান লাভ হয়, ধন দৌলতে
মান ডুবে যায় রূপ সাগরে কাম নদীর কুলেতে। ঐ
পাকা দালান ঘরেতে শান্তি নাই, সাত তালাতে
চিন্তা ছাড়া মানুষ নাই জগতে, আহার জোগায় কুদরতে। ঐ
ধনী গরীব এই জগতে একদিন যাবে কবরেতে
থাকবে না কেহ এজগতে, স্মৃতি রইবে ভবেতে। ঐ
আঠার হাজার মখলুকাতে, পুজিতেছে দিবারাতে।
আদর শাহ কয় ঐ আসাতে, তরাবে দয়াল দুই কুলেতে। ঐ
মিত্রই শত্রু হয় জগতে।
৬.
পানিতে বানাইল আদম, পানি পয়দা কিসেতে
আব আতশ খাক বাদ, মিশাইল এই দেহেতে
পানিতে বানাইল আদম, পানি পয়দা কিসেতে।
পানিতে রং মিশাইলো, কায়া দিল কত রংগেতে
উপরে হাওয়া নীচে পানি, মধ্যে আগুন জ্বলতেছে। ঐ
আদম হতে খুদে খোদা, মাইয়া বানাইল কুদরতে
নাম রাখিল হাওয়া বিবি, ঐ সংসার বাড়াইতে। ঐ
ছোট্ট হাড্ডি দিল, জোড়া লাগইল কিমতে
ঐ দেহেতে লাইট বসাইল, দেখতে সুন্দর জগতে। ঐ
ক্ষুদ্রতে আছে প্রভু ঐ কায়া ঘরেতে
আদর শাহ বলে এই কারিগর, দেখছনি কেউ জগতে। ঐ
পানিতে আদম পয়দা; পানি পয়দা কিসেতে।
৭.
মুর্শিদ এরই চরণ তলে বিকাইলো না গুনাগার
ওগো মুর্শিদের নাম সম্বলে ভবনদী হবে পার।
ওগো বিকাইলোনা গুণাগার।
মুর্শিদ এরই হাতে ধরা, জান মাল কুরবান করা
তোমার বলতে কিছুই নাই আর
তোমার মাতব্বরী, হেখরী ছাড়রে, নইলে হবে বেকরার
তোমার নাম সম্বলে ভবনদী হবে পার।
ভবের যত বাবুয়ানা মুর্শিদ ধরলে সবই মানা
সুদ মদ গাজা ছাড়া
নাইলে তুমি পড়বে ফেরে, একদিন হবে গ্রেফতার
নাম সম্বলে ভব নদী হবে পার।
অগতির গতি মুর্শিদ, দুই কুলেরী অধিকার
নিকতির পাল্লা মুর্শিদেরী গাড়।
পাগল আদর শাহরী এই মিনতী গো মুর্শিদ
আউলা সুতা ভাও কর আমার
তোমার নাম সম্বলে ভবনদী হব পার।
৮.
প্রেমের তরি ডুবে গেল রূপ সাগরে
হাবু ডুবু খেয়ে ভাসি ননদি বহতালের ডরে
প্রেমের তরি ডুবে গেল, কাম সাগরে।
শাশুড়ি ননদি একিঘরে সদায় তাহারা কৌশল করে গো
সাধু সন্ন্যাসি ফকির বৈষ্ণব, দরবেশের মন হরে। ঐ
আমাই কামাই হুমাই ঘুমাই, চারিজনে কর্ম করে
টগাই গুশাই চিন্তামনি, সদায় ঝগড়ার চন্দি করে। ঐ
কাল সাপিনী রাক্ষসিনী পাইলে বিচাইয়া মারে
আদর শাহ পড়ছে ফেরে ডুবলো ঐ কাম সাগরে।
প্রেমের তরি ডুবে গেল প্রেম সাগরে।
৯.
রূপেতে রূপ মিশাইয়া, মন করেছ চুরি গো
ওগো তুমি রূপের কুমারী। (ধোয়াপদ)
তুমি বিনে একলা ঘরে, কেমনে শুইয়া থাকি
হৃদয়ের জালা অঙ্গ কালা, সদায় রূপ নিহারী। ঐ
রাধে গো শুইলে স্বপনে দেখি, বুকে লইয়া থাকি
জাগিয়া কেন পাইনা তোমায়, কোথায় দেও লুকি। ঐ
রাধেগো অষ্ট সখি সঙ্গে নিয়া, জ্বলের ঘাটে দেখি,
কদম তলে করিও দেখা, বাজাইয়া মুররী। ঐ
দিবানিশী মোর অন্তরে, জ্বালায় জ্বলে পুড়ি,
আদর শাহ কয় গুছবে জ্বালা, যে দিন দর্শন করি।
ওগো তুমি রূপের কুমারী।
১০.
মুর্শিদ দয়াবান, ফাতকী রে চরণ কর দান
তোমার চরণে, পড়ে থাকি, দুই কোলেতে দেও স্থান।
ফাতকীরে চরণ কর দান।
মুর্শিদ মৌলার প্রেম বাগানে, ফুটিয়াছে নানান ফুল
আসিক ছাড়া পায় না গন্ধ, নাই ফুলেরী সমতুল-
মারীফতির কল কৌশল নিয়ে, বাউল মাস্তান গায় গান। ঐ
চন্দ্র সাধন করছে যেজন, সেজন হয়েছে মহাজন
কাম সাগরে যায়না মারা, লাভ করেছে অমূল্য ধন
কাম কুম্ভিরে খায়না তারে, সাগরে দিয়াছে বান। ঐ
আবে জম জম, আবে কাওসার, পান করেছে যেইজন
একুল সেকুল যায়না মারা করছে যেজন দম সাধন
মুর্শিদ পদে ভক্তি করি, আদর শাহরী নাইগো সান
ফাতকীরে চরণ কর দান।
১১.
মুর্শিদ তুমি দয়ার সাগর, দয়া কর মোরে
তুমি না করিলে দয়াল আমি যাব কোথাকারে
ওগো মুর্শিদ দয়া কর মোরে।
মুর্শিদ গো তুমি দয়াল বলে, নাম শুনেছি এ ভব সংসারে
ফাতকীরে কাঁদাইয়া তুমি থাক কত দূরে। ঐ
মুর্শিদ আমার পরশ মনি সরব ধ্বনী থাক প্রেম বাজারে
তোমার রাঙ্গা চরণ পাইতে আমার, সদায় নয়ন ঝরে। ঐ
সর্বশাস্ত্রের নন্দীনি তুমি ওগো মুর্শিদ থাক জ্ঞান পুরে
বিপদের কাণ্ডারী মুর্শিদ, দয়া কর আদর শাহরে
ওগো মুর্শিদ দয়া কর মোরে।
১২.
মুর্শিদ প্রেমে ভক্ত হইয়া আনন্দে খেলায়।
সাগর পাড়ি দিয়ে যায়,
ও মনরে কাম রঙ্গের তরঙ্গ ঢেউ, উঠে মনিকোঠায়।
ঐ নদী পাড়ি দিয়ে যাব মুর্শিদের কৃপায়।
মনরে না জানিয়া ত্রিপূণ্যের ঘাটে, স্নান করিতে যায়
ডুব দিলে ঘাড়ে ধরে, কাম কুম্ভিরে খায়।
সাগরে পাড়ি দিয়ে যায়।
মনরে ঐ ঘাটে খরিদ বিক্রি, করেন মুর্শিদ ও মৌলায়
চন্দ্র সাধন অমূল্য ধন, মুর্শিদ পুরে, পাওয়া যায়। ঐ
ও মনরে সাধনের বলে ভক্ত কাম সাগরে যায়,
আদর শাহ বলে ডুবিয়া মরে, ফাসিক ঐ রাস্তায়
মুর্শিদ এসে ভক্ত হইয়া আনন্দে খেলায়।

॥ চার ॥
মকদ্দস আলম উদাসী ছাতক, সুনামগঞ্জ জন্ম-১৩৫৪ বঙ্গাব্দ পুস্তিকা- পরার জমিন প্রকাশকাল- ১৯৯৯
১.
আমার মাঝে কতই সাজে যুগে যুগে রং ধরেছে
সেই হতে এ যাবত কত কীর্তি-কাণ্ড করেছে ।
প্রথমে সে নিজেই পরম জীব নামে গঠিত আদম
নিঃশ্বাসেতে সেই তার দম পরির্তন হইতেছে।
রমণীতে যে আকর্ষণ জীবাত্মা সে নিজেই গন্ধম
সর্প আর ময়ূরে পরম ভূতাত্মায় স্থান পেয়েছে ॥
জীব-ভূত-প্রেতাত্মায় কাম হতে ইন্দ্রিয় যোগায় থাকিয়া সর্ব জায়গায় প্রেমভাবে কাম তুলতেছে।
স্তনেতে মজিয়া মন সুধাপানে হয় আকর্ষণ লিঙ্গেতে হয় দু’টি বচন-আসা যাওয়া করতেছে ।
পাপ পূণ্যের নাই আকৃতি জ্ঞান গুরু সাজে যদি স্বর্গে নরকের বসতি কয় উদাস মকদ্দাসে ।
২.
চোরের থাংগি তুমি দিলে আচোরাও চোর হয়ে যায় ভাবে বুঝি কল ঘুরালে ।
জানলাম তুমি সাধু ভক্ত, বিশ্বাস রাখি পাকা পোক্ত অবশেষে রয় না শক্ত তোমার দেওয়া তুমি নিলে ।
প্রেমের মাঝে কামের বাসা মিটাও তব নিজের আশা থাকতে এত ভালোবাসা হঠাৎ কেন রাগ করিলে ।
হিংসা নিন্দা অহংকারে সদায় রাখো দূরে দূরে তুমি থাকতে তোমার ঘরে যাবে কি আর অমঙ্গলে ।
কয় উদাসী মকদ্দসে তুমি থাকো আমার কাছে মালকোঠার ধন চলে গেছে আমায় কেন ঘুম পাড়ালে ।
৩.
আমার বাসরে উদয় চন্দনী গো বন্ধুয়া আসিল ঘরে।
আঁধার নাশিতে জোছনা রাতে ঝিলিমিলি বাজে নুপরে।
সজনী সই শ্যামের মুখে হাসি হাতে মোহন বাঁশি আসিল সুখের পালা।
কাজল আঁখিজোড়া শ্যামের মাথা চূড়া মুচকি হাসে ধরে রাধার গলা ।
সজনী সই নৃত্য করে সখিগণে অতি আনন্দ মনে ধামাইল করে হাতে তালি দিয়া।
গলেগলে জড়াজড়ি কণ্ঠমালা বদল করি পুষ্পে দিল বাসর সাজাইয়া ।
সজনী সই বলে মকদ্দস উদাসী রাধাকৃষ্ণের মিলামিশি দেখিবারে পায় ভক্তগণে।
আমার কপালে ছাই দীন বন্ধুর দেখা নাই দুঃখ রইল মনে। সজনী সই
8.
আমি মরিয়া যাইমুরে বন্ধু তোমার প্রেমের শুলে আমি কুলের বৈরী লোকের বৈরী হইয়াছি গোকূলেরে ।
ঘর বাড়ি ছাড়াইয়া আনলে ঠাঁই দিলে না কোলে কান কানতে বুক ভাসিল দুই নয়ানের জলে রে ।
কেমন করে দেহা থইয়া প্রাণী আমার নিলে প্রেমের ছুরি বুকে দিয়া পরানে বধিলে রে ।
মকদ্দস উদাসী কয় ফিরিয়া না চাইলে শান্তি হবে জন্মের মত আমি মইরা গেলেরে ।
৫.
কাটার খুলিয়া টেস্টার লাগাইয়া টেস্টিং করিয়া দেখো ট্র্যান্সমিটার।
লাইন করিলে কাট আপ একি হায় বাপরে বাপ পলকে আলো হয় অন্ধকার ।
লাইনে দিলে কানেকশন টেস্টারে পাবে একশন তাহার মাঝে আছে ফিটিং ওয়ার।
মেইন সুইচ অফ করিলে সন্দেহ না থাকে দিলে বাল্ব আগে ফিট করে নাও দেখিয়া হোল্ডার ।
বাল্বেতে লাগাও কানেকশন ওয়ার ফিটিং মনের মতন অন করিয়া দেখ চাইয়া রবে না আঁধার।
যদি থাকে প্লাগ সিস্টেম টেপ রেডিও বাজাও হরদম টেলিভিশন দেখতে পাবে দুচক্ষে তোমার ।
কয় উদাসী মকদ্দসে ক্যামরা রইল গুরুর কাছে আমার কাছে ক্যাসেট রইয়াছে ভিডিওর কারবার।
কামিনী কাঞ্চনের নিশায় মনে কত ছবি বানায় মধ্যে মধ্যে ব্লু চিত্র দেখি ভিসিআর।
৬.
কোথায় ছিলাম কই আসিলাম আবার কোথায় যাই চলে
এসব কথা ভাবতে গেলে মানুষে পাগল বলে ।
মায়ের কোলে জন্ম নিলাম আদর সোহাগে রইলাম হোঁচট খাইয়া দুঃখ পাইলাম শান্তি পাই মা ডাকিলে।
যৌবনের আগমনে যে নিশা লাগল নয়ানে নব বধূর আগমনে থাকিলাম খুশী হালে ।
রমণীর মন পাইতে মিশিয়া সমাজের সাথে ঠগা খাইলাম আধা পথে ঘিরিল মায়ার জালে ।
কয় উদাসী মকদ্দসে চিন্তারোগে ধরিয়াছে বলব দুঃখ কাহার কাছে শান্তি পাব মরিলে ।
৭.
আমার একাউন্ট খালি এখন কি করে চলি বন্ধ হলো চলা হাট-বাজারেরে চিন্তা করি বসে ভাঙ্গা ঘরে ।
মুনিবের দেওয়া টাকা দোকানে ছিল বাকির খাতায় লিখতে লিখতে ভর্তি হইল নগদ বিকি নাই কেমনে মহাজন বুঝাই জিজ্ঞাসা করে যদি আমারে ।
না খাইলাম না পরিলাম দুঃখের সীমা নাই সময়ের মন্দ পড়িলে ছাড়ে সোদ্দের ভাই।
আমার আপন হলো পর তাদের নিদয়া অন্তর কেউ নিল না মোরে আপন করে ।
চলার পথে দেখলাম কত রঙের পতাকা স্বার্থকে নিঃস্বার্থ ভেবে হয়েছি বোকা।
কয় মকদ্দসে আমার মনে ভেবেছে সুখী হবো যেদিন যাব কয়বরে ।
৮.
ভালোবাসার লুডো খেলায় মিশে থাকতে মনে চায়।
খেইড় পাতাইয়া দিলে তুমি দেখিতেছ সব ইশারায়।
ছক্কাতে ছয় রিপু দিলে, হিংসানিন্দার গুটি চলে, কাম-ক্রোধ-লোভ মায়ার বলে প্রেমের ভাবে ধাক্কা খায়।
সুমতির পাকা গুটি- কুমতি সব দিল কাটি হিসাবেতে বানাউটি কইতে এসব হাসি পায় ।
ষটচক্রে চাল বসে না কামের ঘরে ঢুকে গণা, লালে ধলায় গৃহে জানা মকদ্দসের বুঝা দেয় ॥
৯.
ব্রে খেলাতে উইনার যদি হবে আয়।
মিলিটারি গেইম খেলাতে মাইনাছ হবে গুরুর কৃপায় ।
তেরোপাতা হাতে নিয়া জাতে জাতে মিশাইয়া দুরি তিরি চারি পাঞ্জা প্রতিদ্বন্দ্বী ছর খেলায় ।
ইসকার বিবিতে বারো হরতন তেরো পাতায় তেরো পাঁচ-পাঁচ পঁচিশের ঘরে-লীলা করে বিধাতায় ।
মাইনাছ হলে বারো কমে চব্বিশ হাজার ছয় শ দমে খেলা হইলে ছামে ছামে কল ডাকতেও পারা যায় কলেতে করো না ভুল ফুল পঁচিশের গণ্ডগোল মকদ্দস হইল আকুল ছক্কারে কেমনে ফাঁসায় ।
১০.
গিয়াছে মোর চোখের জ্যোতি নিয়াছে হরণ করিয়া কাপনার ভিতর ছিল মুতি ॥
শরীরে হয় অলসতা জোরায় জোরায় হলো ব্যথা ভয় লাগে মানুষের কথা পড়ি না আর কিতাব পুঁথি।
চশমা দিযা কয়দিন চলি শুকাইল মাথার খুলি শুনলে লোকের পায়ের তালি কম্বল গায়ে মারি গুতি ।
মাঝে মাঝে ডিসেন্টি হয় কত রক্ত আর হবে ক্ষয়
বেশী খাইলে বদ হজম হয় বদনা লইয়া কুথাকুথি ।
কেউ কেউ ঘৃণা করে বিরক্তিতে থাকে দূরে
মকদ্দস কয় যাব মরে শত্রু আমার সঙ্গের সাথী।
১১.
আমার মন কান্দে তোমারও লাগিয়া
যাইও না পরানের ধন আমারে একা থইয়া ।
যে জ্বালা আমার অন্তরে ছাই হইলাম পিরিতের জুরেরে নিরলে পাইলে তোমারে কইতাম দুঃখ বুঝাইয়া ।
দয়ার সাগর তুমি জনমের পিপাসী আমিরে তোর লাগি করি পাগলামি মান কুলমান ত্যাজিয়া।
তুমি যদি আমায় লইয়া রইতে সঙ্গে সাথী হইয়ারে মকদ্দসে কয় ভাবিয়া যাইত আগুন নিভিয়া।
১২.
হরির কীর্তনে নৌকা ছাড়োরে বাজাইয়া মিরদং সব ছাড়িয়া সুমতির সঙ্গে করো সং।
নায়ে আছে গৌরহরি নিবেন আমায় সঙ্গে করি শ্রীগুরুর বাক্য স্মরি হইয়া যাও তং।
শ্রীমতী শ্রীরাধিকা এই নৌকাতে ছবি আঁকা চউকেতে দূরবীন আঁকা কইরোনা বং বং।
মকদ্দস উদাসীর নৌকা ঘাটে বেঁধে যায় না রাখা শুধু মাত্র আমি একা ভরসা সুহং।
সং-সঙ্গ তং-তন্ময় বংবং-বকবক সুহং-সুসঙ্গ
১৩.
কোন মেস্তরী বানাইয়াছে রঙিন ট্রলার সামনে হেডলাইট দিয়াছো পসর হয় আঁধার।
সারঙ্গে দূরবীনে দেখে এপার ও সেপার ঘণ্টিতে কমান মানে না বেগড়া ড্রাইভার।
বটেশনে চলছে একলাখ চব্বিশ হাজার সিরিয়ালে দিছে ভাসাইয়া সুপার ভাইজার।
মকদ্দস উদাসী কয় মোর মেশিনে জঙ্গার বৈঠায় মোর পানি ধরে না ফেনের ডেইট ওভার ।
১৪.
রাঁধার কথা নাই কি তোমার মনে বন্ধুয়া ও
ফাঁকি দিয়া মন ভুলাইলায় কেনে ।
থাকো তুমি যত দূরে করলাম টেলি মনের তারে
ফোন নম্বারের কি বা প্রয়োজন।
দীলের আয়নায় দেখছি সবতা, আর মোরে দিবেনা ব্যথা
যে কথা কইছলাম দুইও জনে ।
তোমার হাতে গান লেখিয়া, বিন পিয়নে দাও পাঠাইয়া যাইতে দূরে চলছ বিনা ট্রেইনে।
না লাগে তোর মোটরগাড়ি, বিনা প্লেইনে আকাশে উড়ি রকেট ছাড়া চলছে কোন আসমানে ॥
উদাস মকদ্দসে কয়, যদি তোমার দয়া হয় আসতে পারো মিশিয়া পরানে।
তোমার কাছে নাই কমতি, বিনা তেলে জ্বালাও বাতি বুকেতে ফিট করে ইলেকট্রি রাখিলে রৌশনে।
১৫.
নামের লিঙ্গ প্রেমের যোনী সঙ্গমে পাবে দিদার মুর্শিদ রূপ নয়নে আছে যার ।
ফুটিলে ইলমে লেদুনি কালির লিখা কেউ মানেনি কোরান পুরান হাদিছ ফেকাহ পড়িলেও সব যায় বেকার।
মুর্শিদের আওয়াজ পেলে গোপন ঘরের তালা খুলে দেখবে হীরা মানিক লালে অন্ধকার ঘর পরিষ্কার।
প্রাণেতে প্রাণ মিশে গেলে শরমের পর্দা খুলে বেশী কইলে কয় দলিলে হবেরে তুই গোনাগার ।
মীমের পর্দায় দিলে হাত মিশবে আপন ছিফতে জাত মকদ্দসে পাইয়া সাক্ষাৎ ভুলেতে ঘর অন্ধকার ।

॥ পাঁচ॥
পীর তাজুদ আলী মোহম্মদপুর, সুনামগঞ্জ। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি এবং সিলেটের বাউল সঙ্গীত শাহজালাল ও চৈতন্যে প্রভাব গ্রন্থ থেকে। বয়স- আনুমানিক ৬৫ বৎসর।
১.
ত্রিগুনী ফকির সাধু হইবেন না।
প্রথমেতে এরা তিনজন
মুছে ফেলা যাবেনা।
তাহার ঊর্ধে চলে যান পীর মুর্শিদ গুরু বিনে পাবেনা সন্ধান।
বৈরাগী বিশিষ্ট যারা এক ছাড়া দুই বুঝেন না।
তারা ডরান না চিতানল প্রেম আগুনে পুড়তে পুড়তে বাড়ছে বাহুবল।
পোড়া মানুষ কয়বার পুড়ে বুঝে সুঝে দেখেন না।
ফকির তাজুদে বলে বিশ্বপতির দিদার মিলে আশিকের দিলে।
রীপু আদির সঙ না ছাড়লে মালা টিপলে হবে না।
২.
উপবাসে মানুষ মরে না, অ মনা।
উপবাসে মানুষ মরে না।
রীপু আদী মরিয়া যায়।
রোহানীর তেজ কমে না।
আগে পাছ আন পাছে মর বাদীয়াল আজায়েবে পাবে রোহানীর খবর।
জিয়ন্তে মরছে যারা ঐ মানুষ আর মরে না।
ফকির তাজুদে বলে আমানতে ক্ষিয়ানতকারীর টা টা কাপালে।
করজোড়ে নিষেধ করি আমার মত মইর না।
৩.
বিষ্ণু নামটি কেন এত মজাদার।
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরে
তিনে মিলে এক আকার।
গেছি নারায়ণ ভুলে নিজের ইচ্ছায় উঠে বসছি জমেরই কোলে।
ব্রহ্মচারী নাম ফুটালে না জাতি এ ব্রহ্মের আচার।
ফকির তাজুদে বলে গুরুবিনে রক্ষা নাহি এ কূল সেকূলে।
গুরু বাক্যে সিদ্ধি মিলে বিষ্ণুই প্রেমের মূলাদার।
8.
আমি জিজ্ঞাস করি গুরুধন ব্রহ্মচারীর আচার-বিচার কি রকম।
না চিনিলে কেমন করে করি আমি এ সাধন।
যদি ভগবানই সার ব্রহ্মবিনে কোন লোকের নাই কেন উদ্ধার।
ধোকায় পরে জগতবাসী নরকে করছি গমন ।
অনেকে বলে কলিতে নামই বড় নাম নিলে চলে।
ব্রাহ্মণ দ্বারা পিও দিলে এক দৌড়ে স্বর্গে গমন।
ফকির তাজুদে বলে ব্রহ্মের আচার না করিলে রক্ষা নাই মূলে।
আত্মশুদ্ধি না করিলে নরকে হবে পতন।
৫.
রা মিমের অপর নাম কুণ্ডলিনী।
মনা তুমি জান নি
রা মিমের অপর নাম কুণ্ডলিনী।
সে যে নাগেরই প্রধান সর্বদাই ধ্বংস করে বিশ্ব জীবের প্রাণ।
মধু হইতে মিষ্ট অতি ছলনাময়ী সংকুনী ।
শুনে সিঙ্গার ধ্বনি পূর্ণজীবন লাভ করিবেন ঐ রমণী।
হাশরে জমাএত করি বিচার করবেন রবগণি ।
ফকির তাজুদে বলে ইছা নবীর জন্ম দারায় কিছুটা মিলে।
ফু হইতে জীবন পাইলা কুরানের অমর বাণী ।
৬.
নাগ হইতে কুণ্ডলিনীর কাহিনী।
ফেছে ফেছে বর্ণমালা কয় ফেছে কি নাম খানি।
জান একেতে দুরা দুইয়েতে বুরা তিনে কাল নগিনী।
চাইরেতে সঙ্গ বলে এই জাতেরি রাজরাণী ।
পাঁচেতে হস্তি বলে ছয়েতে ছিনতুনী।
সপ্তমে পদ্মনাগ সব নাগের শিরমণি।
ফকির তাজুদে বলে পাচ তরিকার বলে খাজা আহাদের কুলে।
এক আল্লা বিনা দলিলে বলিয়া গেছেন তিনি।
৭.
মোমবাতি জালাইলে মনারে অগ্নিপূজা নয়
সর্বত্রে বিরাজিত আল্লাহ দয়াময়।
নামে তুরা ময়দান হয় মুসার সাথে আলাপ করলেন প্রভু দয়াময়।
অগ্নি হইতে উটছে ধ্বনি কোরানেতে কয়।
ফকির তাজুদ আলী কয় আল্লাহ বিনে ত্রি-জগতে আপন কেহ নয় মরার আগে দর্শন পেয়ে মরণ যদি হয়।
৮.
প্রজাপতির বেশে দেব নারায়ণ।
সর্বফুলে বিরাজিত জানেন ফকির সাধুগণ।
তার আরেক নাম ভ্রমর সহস্রাতে বসত বাড়ি দক্ষিণে বহর।
অহংসুহং মন্ত্র বলে আসা-যাওয়া সর্বক্ষণ।
ফকির তাজুদে বলে আড়াই পেছি কুণ্ডলিনী না মারিলে।
জানিয়া রাখ সাধু কূলে হবে না ব্রহ্ম সাধন।
৯.
নিজকে নিজে না চিনিলে তর্কে কি হয় সমাধান তত্ত্ব জান।
আমনত রক্ষাকারী মহাপ্রাণ।
যদি সিদ্ধ গুরু হয়
তোমাকে বুঝাইয়া দিলে বুঝিবে নিশ্চয়।
অনেক মুরা খালি বাসন কথায় বারতায় মহাজন।
ত্রিশের মায়নি বুঝিলে সাত হরফে কুরআন শরীফ হাদিছে বলে।
নিজে নিজে জ্ঞানী হলে কি বুঝবে আল্লারী সান।
ফকির তাজুদেরী প্রাণ আল্লা নবী না চিনিলে জ্ঞানের কি প্রমাণ।
আন্তাজি ডুসাইলে পরে হবে কি তর পরিত্রাণ।
১০.
পাঞ্জতন গরীবে নেওয়াজ চাই আমি মেহেরবানি।
দিলকো আন্ধায় দান কর হে মুতমা ইল্লা রোহানী।
রামিন হইতে উৎপত্তি হবে যেদিন হাশরে সুপারিশ করিয়া সেদিন বাঁচাইয়া লইও মোরে।
ডাকিতেছি কর জোড়ে উজ্জ্বল কর রোহানী।
ভক্তের প্রতি সদয় হইয়া দেওনা ফয়েজ নূরানী যে ফয়েজে শক্ত হবে জিকিরে সালাতখানি।
আল্লাহু আকবার ও ধ্বনি মাখলু কানদের জবানি।
আবে কাওছারের কথা কি বলব আমি নাদান দ্বীন দুনিয়ার মালিক যিনি কালামে করছেন বয়ান।
যে পাইছে তাহারি সন্ধান।
খুলছে ইলমে লুদনি।
ফকির তাজুদে বলে মাবুদ আল্লা পাকসাই জিওনে মরণে মনিব আমি তোমার দয়া চাই।
দয়া কর অ-দয়াল সাঁই রবের কুল কাদের গণি।
১১.
বীজান্তে, ডাকি দুর্গা জননী সমীমে অসীম তুমি সৃষ্টিকুল ত্বারিনী।
তোমায় অষ্টাঙ্গে প্রণাম বিশ্ব ব্যাপিয়া তুমি তুমি স্বর্গধাম।
আদি অন্ত সব বিত্তান্ত তুমি অন্তর যামিনী ।
তুমি বিশ্ব ব্রজধাম অনন্ত অসীম তুমি সর্বজীবের প্রাণ।
অসুর নাশিনী তুমি গণেশ জননী ।
ফকির তাজুদে বলে জীবকূল ত্বরাইতে এসো পূজামণ্ডপে।
দয়া করো ভক্তকূলেওগো উদ্ধারিণী।
১২.
অফুরন্ত প্রেম প্রীতি তোমারই অন্তর দয়া কর ভগবতি সর্বজীবের স্বর ।
তুমি অনাদীর আদি বিশ্ব ব্যাপিয়া তুমি অসুর বিরোধী আসা যাওয়া বারণ আন্তে ডাকে গো অন্তর ।
তুমি সয়ালের দয়াল বিশ্ব জননী তোমায় ডাকি এ কাঙ্গাল।
আসিয়া মোর হৃদ আসনে জুড়াও গো অন্তর ।
ফকির তাজুদের মাতা ভক্তকূল জননী তুমি জীবের অমৃতা।
শ্রী চরণে জানাই প্রীতি দয়ারই সাগর ।

॥ছয়॥
আব্দুল মতিন মাস্টার জন্ম: ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ; সৈয়দপুর; সুনামগঞ্জ পুস্তিকা: মতিন-গীতিকা
১.
দিলের মাঝে আন্ধাইর কোঠা শ্যাম কালিয়ার কাছারি সভাসদ বসাইয়া রাখে বিচার করে উকিল ধরি ।
দুইটি বাতি আন্ধাইর ঘরে লাগাইয়াছে কারিগরে জ্বালাইলে প্রেমের শিখা উজ্জ্বালা হয় অন্তরপুরী ।
কোঠা কোঠা সারি সারি সাজাইয়াছে সুন্দর করি সব কোঠায় লাগাইল তালা মালকোঠা সাবধান করি ।
কোন কোঠায় বসিয়া কালা কোন কোঠায় প্রেমের মেলা কোন কোঠায় ডাকাতের দল মাল কোঠা করিল চুরি।
মতিন সাড়া দেও সাবধান করি ।
২.
ভুলিলো কেমনে বন্ধে ছাড়িলো কেমনে জ্বলি-জ্বলি উঠে পরান বন্ধের পিরিতের আগুনে ।
পতঙ্গ আগুনে পোড়ে ফুলে-ফুলে ভ্রমর উড়ে আমিতো চাঁদের চকোর ধন্য কর সুধা দানে ।
আপন বেগে পাগল পারা বহে শত নদীর ধারা সকলে হইল বিলীন বাইয়া সাগর পানে ।
চাতক উড়ে মেঘের আশে মেঘ উড়ে যায় অন্য দেশে মেঘের আশে ঐ চাতকী মতিন উড়ে বনে বনে।
৩.
বল সখি বলগো আমায় কোন কলে বন্ধুরে পাওয়া যায়।
ভাবের রশি ধ্যানে বান্ধো প্রাণবন্ধের যুগল পায় ।
প্রেমে কাও প্রেমে মূল ভাবে ফল ধ্যানে ফুল।
যতনে সিঁচিলে পানি প্রেমের ফসল তোলা যায়।
ভক্তি ভরে গাছ লাগইয়া অনুরাগে বেড়া দিয়া।
সাধনে ফুটাইলে ফুল প্রেম ভ্রমরা উড়ে যায় ।
প্রেমবৃক্ষ রোপণ করি জল ঢালো কলসী ভরি।
ডালে মূলে ফুলে ফলে মনের মানুষ প্রেম বিলায়।
মতিন মনমানসী ধরা যায় ।
8.
বুঝলে না বুঝলে না বুঝলে না গো মনার মা তোরে কেন স্বামী গছেনা ভালো বউ স্বামী ছাড়েনা কুলোটা বউ ঘরে তুলেনা।
কেন হইলো এই দুর্মতি নাগর লইয়া কর পিরিতি পাড়াময় ঘুরিয়া বেড়াও দেওর-ভাশুর মানোনা।
হায়রে, কামিনী মদনের জ্বালা কইল তোমার মন উতালা
ছয় নাগরে মন রাঙ্গাইলে স্বামীর সেবা হইলো না।
কুলটা অসৎ নারী কোন মুখে যাও স্বামীর বাড়ি যত্র তত্র কাল কাটাইলে স্বামীর প্রেমে মজলে না।
স্বামীর চরণ ধরলেনা ।
৫.
সোনা বন্ধুরে ভুলিয়া রইলে কার বাসরে ।
আশা দিয়া নৈরাশ করে পিরিত করে থাকে দূরে প্রেমানলে বাঁচেনা প্রাণ ছাই হইলাম জ্বলে পুড়ে ।
দুই নয়নে বহে ধারা কানতে কানতে হইলাম সারা জানতাম যদি তার বাসনা করতাম কি প্রেম সাধ ধরে ।
দয়াল বন্ধু দেও দেখা তুই বিনে প্রাণ যায়না রাখা জ্বলন্ত প্রাণ জুড়াই আমি দেখিয়া দুই নয়ন ভরে।
বাজাও বীণা মনের তারে ঝংকার তোলো মধুর সুরে তুমি আমার মনমানসী কান্দে মতিন চরণ ধরে ।
৬.
মনু গাঙ্গের তিনটি দাড়া নাও বাইমু কোন দাড়ায় অবুঝ মনা বোঝ না পায় ঠেকিয়াছে বিষম দায়।
কোন দাড়ায় মাজনের বাড়ি কোন দাড়ায় ডাকাতের আরি কোন দাড়ায় আপন ঠিকানা কে কাণ্ডারী আমার নায় ।
চোখের আন্ধা মনে ধান্ধা পাতাইয়াছে কত ফান্দা হারাইলাম পথের দিশা দিশারী নাই পথ দেখায় ।
কে ধরাইলো এমন পাড়ি কে ভাসাইলো আমার তরী দেখিনা তার কূল-কিনারা কান্দে মতিন নিরালায়।
৭.
দারুণ খান্নাসে জ্বালায়
মইলাম আমি করি কি উপায় সখি তোরা বলে দে আমায় ।
মদন ঠাকুর হইয়া সাথী ফন্দি করে কতইতি কামিনীরে লয় জাগাইয়া কামের ডিঙ্গি ভাসায় যমুনায়।
মদন ঠাকুর যৌবন-বেপারী নাও সাজাইয়া ধরে পাড়ি রঙ্গে বঙ্গে রঙ্গ খেলিয়া কামের ডিংগি বাইয়া যায়।
বুঝলোনা ভাই ঠাকুর চান্দে জড়াইল কঠিন ফান্দে হিকাইয়া বুঝাইয়া মারে ডুবাইয়া যমুনায় ।
৮.
উল্টা স্রোতে নাও বাইয়া নাও ঠেকছে ভাটির চরায় ভাটির টানে হালে ডিলে উজান ঘাটে নাও লাগায়।
দাড়ি মাল্লা যায় পলাইয়া গোনার সব যায় হাটিয়া গোনের দাড়ি গেল ছিড়ে নাও আটকাইল পারঘাটায়।
গোনারু ভাই দিল পাড়ি উজান ঘাটে তার বাড়ি নামের খবর কেউ করে না ভাঙ্গিল নাও গাছ তলায়।
ছন কাটিলাম বন কাটিলাম ধানে ছোঁচায় বোঝাই দিলাম নাও গেল না উজ্জান ঘাটে মতিন ঠেকছে বিষম দায়।
৯.
মনা রইয়াছ ভুলিয়া ভবের মায়ায় মগ্ন রইলে কামিনীর সং লইয়া ।
কামিনীর সঙ্গ ধরি মদন গাঙে বাইলে তরী বাঁকের মোড়ে নাও ডুবিল তোমার মানিক রতন লইয়া।
কয় দিন আছো ভবের পারে যাবে মনা দুই দিন পরে পর পারে তোর বসতি কি ধন যাইবায় লইয়া।
রইলে মনা অচেতন করলেনা গোরের আয়োজন পরার ঝিয়ের যাত্রা দিলে মতিন নিজের নাক কাটিয়া।

॥ সাত ॥
ইলিয়াছ উদ্দীন জন্মঃ ১৯৬১ খ্রিঃ নবীগঞ্জ; হবিগঞ্জ ১৪ বৎসর বয়সে ইংল্যান্ড গমন। বর্তমানে ইংল্যান্ড প্রবাসী। যেখানে বসেই নিয়মিত লিখছেন। সাহিত্যপত্রিকা- সাঁই থেকে সংগৃহীত। প্রকাশকাল- ২০০১
১.
তোরা কে কে যাবে প্রেমের হাটে আয়রে ছোটে আয়… অমূল্য ধন বিকাইতেছে মুর্শিদ মৌলায়। আয়রে ছোটে আয়
প্রেম আছে জাতে জাতে রসিক যারা পারে চিনিতে রে অরসিকের যাইতে নিষেধ, ভাব নাহি যার অন্তরায় ।
প্রেমের পথে ছয়জন চোরা দিবা রাতে দেয় পাহারারে বিপাকে ধন লুটে তারা, পরিলে কুমন্ত্রণায় ।
খরিদদার থাকিলে পরে অমূল্য ধন কিনতে পারে রে ইলিয়াছ উদ্দিন কয় মুর্শিদ ধরে, তাল্লাশ করো অধরায় ।
২.
ওরে ওমন বেভুলা আর কত করিবে তুমি ভবের খেলারে ।
দাঁত পড়িল চুল পাকিল শমনে ডাক দিলা ধরে জোরে নিবে তোরে ভাঙ্গিয়া এ মেলারে ।
আসা যাওয়া ভবের খেলা ভাবলা না নিরালা
আসলি একা যাবে একা কেহ নয় সঙ্গিলারে ।
মিছে মায়ায় মত্ত হইলে পাইয়া জরু পোলা
চক্ষু কুলে দেখলে না তোর ডুবু ডুবু বেলারে ।
দম থাকিতে পড়ো গলে দয়াল নামের মালা
ইলিয়াছ উদ্দীন লও রে খোশে মুখে আল্লা আল্লা রে ।
৩.
দয়াল দয়া কররে তোমার দয়া মায়া বিনে তরী যায় মোর মরে।
দয়ালরে একে আমার জীর্ণ তরী পাপেতে বোঝাই ভাংগা বৈঠা ছিড়া বাদাম ঝাংগা রশি নাইরে ।
দয়ালরে- অকূল নদীর তরংগ দেখে পরাণ কান্দে ডরে হাংগর কুম্বির ভাসে ডুবে স্ব স্ব শব্দ করেরে ।
দয়ালরে- দিবস গেল অবহেলে ছয় সংগিনীর দোষে সন্ধ্যা কালে সবাই ফেলে গিয়াছে বিদেশেরে।
দয়ালরে- তোমার নাম সম্বল জানিয়া ভাসিলাম সাগরে যদি ইলিয়াছ উদ্দীন ডুবে মরি কলংক তোর নামে রে ।
8.
ও মন চলরে ও মন চলরে ধররে সোজা পথ। ছাড় দিলের ভিন্ন মতামত।
হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, শিখ, পুস্ত, খ্রীষ্টান সকলই এক মায়ের সন্তান ছাড়া নহে কারো।
একই স্রষ্টার সৃষ্টি সারা আঠারো হাজারো ধর্ম একটি পালের নৌকা সবাই মিলে বোঝাই ভরো ।
এক মসজিদের নামাজ পড়ে এক কাতার এক আসনে বাহিরে জাত ভেদাভেদ করে শুধু অজ্ঞানে ইলিয়াছ উদ্দীন বলে হিংসা লংকা পুড়ে হিংসা যার দীলে সে পশুত্বের ধারা ।
৫.
আমায় দেখে লোকে বলে হয়েছি পাগল।
তুমি দেখাও চান্দ মুখ- আমার দুরে যাবে দুঃখ কথা কও মধুর হাসি হাসিগো।
পূর্বে তুমি আমার সনে করেছিলে পণ ধরাধামে ভুলিবেনা থাকিতে জীবন এখন সবই দেখি ছল- দিলে সরলে গরল আয়ানের সনে খেলছো বসি গো ।
রাধে তোমায় বিনয় করি দাও গো দরশন তোমায় না হেরিলে আমার অবশ্য মরণ।
কবি ইলিয়াছ উদ্দীন কয়- তুমি না দিলে প্রণয় গলেতে বাঁধিব প্রেম ফাঁসিগো ।
৬.
প্রেম আগুন জ্বালাইয়া বুকে- কাঁদাইলে অবলারে ওরে আমার প্রাণবন্ধু কালা ও কালা- যৌবনের রাখিলে একেলা ।
যৌবন নদী নিরবধি- ঢেউ খেলে উতালা তুমি বিনে কে ভাসাইবে প্রেম পিরিতের ভেলারে ওরে আমার প্রাণ বন্ধু কালা।
সাপের বিষে ওঝা মানে- দমন হয়রে জ্বালা প্রেমের বিষে উজান চলে মরণ তাতে ভালারে ওরে আমার প্রাণ বন্ধু কালা।
আওরে কালা মিটাই জ্বালা এঙ্কে করি খেলা ইলিয়াছ উদ্দীন তোমার লাগি রাখছে দুয়ার খোলারে ওরে আমার প্রাণ বন্ধু কালা।

॥ আট ॥
শাহ আব্দুল করিম সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ধল গ্রামের অধিবাসী। ১৩২২ বঙ্গাব্দে জন্ম। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লোককবি। একুশে পদক প্রাপ্ত। প্রকাশিত পুস্তিকা- কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে।
১.
হাওয়ার পাখী ভরা আমার মাটির পিঞ্জিরায়।
পাখী যাইতে পারে যায় না উড়ে পিঞ্জিরার মায়ায়।
শুনিলাম মুর্শিদের কাছে পাখী ধরার সন্ধান আছে ধরতে যে জন চায়।
ধরছে যে জন সে মহাজন মুর্শিদী লীলায়।
আঁখির কাছে পাখীর বাসা করে পাখী যাওয়া আসা দুই জানালায়।
ঘরে বাইরে ঘোরেফিরে রয় না এক জায়গায়।
দেখা দিত কথা কইত পোড়া প্রাণে শান্তি দিত মন মনোরায়।
পাইনা তারে সন্ধান করে মনে যারে চায়।
পাখীর সঙ্গে নাই চিনাজানা, দুই নয়নে দেখতে পাইনা, কেমনে আসে যায়।
পাখী রবে নারে যাবে উড়ে চোখের ইশারায় ।
পাখী যদি যাবে ছাড়ি দালান কোঠা ঘরবাড়ী বানলাম কার আশায়।
বাউল আবদুল করিম বলে এই রঙ্গের দুনিয়ায়
২.
কই তাকি আইলাম কই বা যাইতাম।
কেনে বা আইলাম, ভাবিয়া না পাইলাম কার কাছে সেই খবর লইতাম ।
ঠেকলাম মায়াজালে দিন গেল বিফলে বুঝে না মন পাগলে, কারে কি কইতাম।
আমার কেউ নয় লাগিয়াছে ভয় দেশে যাইবার সময়, কি লইয়া যাইতাম ।
সদায় এই ভাবনা, দুনিয়াদারী যন্ত্রণা সহিতে পারিনা, কই সইতাম।
পরের বাড়ী পরের ঘর, জানিলে সেই খবর তবে কি রং বাজারে মন বিকাইতাম ॥
ধন দৌলত পরের বুঝ হইলে করিমের আসল মনিবের গোলাম হইতাম।
আমি আমার হইয়া, আমারে লইয়া পরের গান থইয়া আমার নিজের গান গাইতাম ।
৩.
মানুষ যদি হইতে চাও, কর মানুষের ভজনা।
সবার উপরে মানুষ, সৃষ্টিতে নাই যার তুলনা ॥
নিজলীলা প্রকাশিতে, আপে আল্লাহ্ পাকজাতে।
প্রেম করল মানুষের সাথে, তার আগে আর কেউ ছিল না ।
প্রেম ছিল আরশ মহলে, স্থান পাইল মানুষের দিলে।
আসল মানুষ কারে বলে, কি নাম তার কই ঠিকানা ।
সব দেশে সব জায়গায় মানুষ, প্রেম খেলাতে নারী পুরুষ।
মানুষেতে আছে মানুষ রয়না মানুষ মানুষ বিনা ।
আবদুল করিম হুশে থাকো, মানুষ ভালবাসতে শিখ।
অন্তরে অন্তরে মাখ, রবে না ভবযন্ত্রণা ।
8.
মনের মানুষ অতি ধারে।
মক্কা কাশী বৃন্দাবন নাই তার প্রয়োজন ভক্ত যেজন হইতে পারে ।
হিন্দু কি মুসলমান, শাক্ত বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকলই সমান প্রেমের বাজারে।
তত্ত্বজ্ঞান আগে যার, ঘুছে যায় আঁধার, কেহ ঘোরে ভব অন্ধকারে ।
কেহ বলে সাকার, কেহ বলে নিরাকার মিমাংসা নাই তার ভবপুরে।
তত্ত্ব জ্ঞানী যতজন, সাধু ফকির মহাজন সকলেই বলে সে মানুষের ঘরে ॥
মানুষের মাঝে মানুষের কাজে মানুষের সাজে বিরাজ করে।
আপনি হাসিয়া উঠে সে ভাসিয়া ভক্তজনের হৃদয়পুরে।
আবদুল করিম বলে মোহমায়াজালে পড়ে আছি অন্ধকারে।
ঘুচিত আঁধার, দেখিতাম দিদার আমি আমার হইলে পরে।
৫.
মানুষ হলে মানুষ মিলে, নইলে মানুষ মিলে না।
মানুষের ভিতরে মানুষ সহজে ধরা দেয় না।
মানুষ থাকে নিগুম ঘরে, সিংহাসন তার মণিপুরে যে জন তারে ধরতে পারে শমনের ধার ধারে না।
সেই মানুষ ধরিতে চাও, স্বরূপেতে মন মজাও, নামের বাঁশী দমে বাজাও, দেখবে আজব কারখানা।
থাকতে মানুষ আপন ঘরে সন্ধান করে ধর তারে, দিন গেলে আর হবে নারে ছুটলে পাখী ধরা যায় না।
পীর আউলিয়া যারা ছিলেন, মানুষ ধরে মানুষ হলেন ইব্রাহিম মস্তানে বলেন, করিমরে তুই ভুল করিস না।
৫.
মানুষ হলে মানুষ মিলে, নইলে মানুষ মিলে না।
মানুষের ভিতরে মানুষ সহজে ধরা দেয় না।
মানুষ থাকে নিগুম ঘরে, সিংহাসন তার মণিপুরে যে জন তারে ধরতে পারে শমনের ধার ধারে না।
সেই মানুষ ধরিতে চাও, স্বরূপেতে মন মজাও, নামের বাঁশী দমে বাজাও, দেখবে আজব কারখানা।
থাকতে মানুষ আপন ঘরে সন্ধান করে ধর তারে, দিন গেলে আর হবে নারে ছুটলে পাখী ধরা যায় না।
পীর আউলিয়া যারা ছিলেন, মানুষ ধরে মানুষ হলেন ইব্রাহিম মস্তানে বলেন, করিমরে তুই ভুল করিস না।
৬.
মানুষ হয়ে তালাশ করলে মানুষ পায়।
নইলে মানুষ মিলে নারে বিফলে জনম যায় ।
মানুষের ভক্ত যারা, আত্মসুখ বুঝেনা তারা।
দমের ঘরে দেয় পাহারা, মনমানুষ ধরবার আশায় ।
যে মানুষ পরশরতন, সেই মানুষ গোপনের গোপন, দেয় না ধরা থাকতে জীবন, পথে গেলে পথ ভোলায় ।
মানুষে মানুষ আছে, পাপী তাপী সবার কাছে ফাঁদ পেতে চাঁদ যে ধরেছে, চাঁদ দেখে অমাবস্যায় ।
মানুষ আছে বিশ্বজোড়া, সহজে সে দেয় না ধরা, আবদুল করিম বুদ্ধিহারা, ঘর থইয়া বাইরে ঘুরায়।
৭.
মানুষে মানুষে বিরাজে খোঁজে যে জন সে-ই পায়।
পাওয়ার পথে গেলে পরে অনায়াসে পাওয়া যায় ।
অনেকে পেয়েছে যারে, কেন পাবনা তারে, দেখ নিজে বিচার করে, পাওয়া যায় না কোন কথায় ।
খুঁজলে পরে পাবে দেখা, সে যে কাঙ্গালের সখা, দয়াল বলে নামটি লেখা, রয়েছে লতায় পাতায় ।
চিনে নেও আপনারে, দূরে যেতে হবে নারে, পাওয়া যাবে আপন ঘরে, বলছেন নবী মোস্তফায় ।
কোরানে প্রমাণ দিতেছে, শারগ হতে আরও কাছে আবদুল করিম আশায় আছে, তিলেক দরশন চায় ।
৮.
ভাবছ কি মন পীর বিনে নবীরে পাওয়া যায়। পীরের বাক্য কর লক্ষ্য, ভেদ বুঝে নেও ইশারায় ।
পীরের চরণ অমূল্য ধন, সুসময়ে কর যতন। হলে পীরের মনের মতন, প্রাণে প্রাণে মিশে যায় ।
ফানা পীর শেখ হাসিল হলে, ফানা পীর রাসুল মিলে। ফানা ফিল্লায় যাবে চলে, থাকিলে সোজা রাস্তায় ।
কবর হাসর ফুলসেরাতে, তরবি পীরের উচ্ছিলাতে। আল্লাহ রসুল মিলে তাতে, আকুল প্রাণে যেজন চায় ।
পীরের পদে আশ্রয় নিলে, বিনামূল্যে বিকাইলে পাগল আবদুল করিম বলে, ভব জালা দূরে যায়।
৯.
গুরুর বাক্য লওরে মন, বিষয়টা মধুর।
নাম স্মরণে, মিলবে ধ্যানে, দীননাথ দয়ার ঠাকুর।
গুরু যারে দয়া করে, তরাবে অকুল পাথারে, যাবে যদি ভব পারে, সব ছেড়ে হও দিন মজুর ।
প্রেমের তত্ত্ব প্রেমিক বিনে, পাবে কই শাস্ত্র পুরাণে।
ভক্তজনে তত্ত্বজেনে নিশাতে আছে বিভোর।
আপন ঘরে মানুষ থইয়া, বাহ্যিকে রইলে মজিয়া।
ঘোর করিয়া দেখনা চাইয়া, মণি কোঠায় মনচোর ।
কালসাপিনী ধরতে পার, আসল বাদ্যার সঙ্গ কর।
এ করিমের কথা ধর নয়ন রাখ মাসুকপুর।
১০.
আশেকের রাস্তা সোজা; আশেক থাকে মাসুক ধ্যানে এই তার নামাজ, এই তার রোজা।
আশেক চায় না আবেদ হতে আশেক চায় না স্বর্গে যেতে। আশেক চলে নেস্থী পথে, হতে চায় না বিশ্বের রাজা ।
আশেক মৌলার খেলার পুতুল আশেক প্রেম বাগানের বুলবুল, ফানা পীর শেখ ফানায়ে রাসুল ফানা ফিল্লায় রুহু তাজা ।
আশেক হলে, মাসুক মিলে, এই কথা ঠিক আসলে। করিম কয়, তা না হলে বেতবাগানে চন্দন খোঁজা ।
১১.
জ্ঞান হইল নূরের আলো, অজ্ঞানতা অন্ধকার। জ্ঞান-আলোকে আঁধার নাশে, জ্ঞানের প্রদীপ আছে যার ।
জ্ঞানে হইল মানুষ শ্রেষ্ঠ, হার মানিল ফেরেস্তায়, নত শিরে তাজিম করে, পড়িয়া মানুষের পায়; সেই মানুষ এসে দুনিয়ায়, বসাইল ভবের বাজার।
জ্ঞানের আঁখি না খুলিলে, ভালমন্দ বুঝা যায় না, তত্ত্বজ্ঞান না হইলে নিজের খবর মিলে না; স্বরূপের দেখা পায় না, পায় না সে আল্লাহর দিদার ।
শুদ্ধ শান্ত হইতে পারলে হকিকতের নিশানী, ভাগ্যবলে যদি মিলে গায়েবে এল্মে লুদুনী; যে মানে মুর্শিদের বাণী করিম কয় সৌভাগ্য তার।
১২.
মন আমার যায় না সুপথে- কি করি এখন।
পাগল মনে বুঝ মানে না হইল না সাধনভজন ।
হয়ে আমি দিশেহারা, হল না মোর বিচার করা আমি বা কোনজন।
রিপুর বশে বশী হয়ে চিনিলাম না পর-আপন ।
সুসময়ে সুকৌশলে আপন ঘরে খুঁজলে মিলে অমূল্য রতন।
সময় থাকতে ভজিলাম না মুর্শিদের রাঙ্গা চরণ ।
কামিনী-কাঞ্চনের দেশে বন্দী হইলাম অষ্টপাশে ভাবি সর্বক্ষণ।
বাউল আবদুল করিম বলে হইল না ভুল সংশোধন ।
১৩.
কেন মন মজিলে রে মিছা মায়ায় আসবে শমন বানবে যখন ঠেকবে তখন বিষম দায় ॥
আছো ভবে যাইতে হবে, চির দিন কি ভবে রবে এ সব কি তোর সঙ্গে যাবে, যা দেখতেছ এ ধরায়।
সামনে তিমির রাতি-কে আছে তোর সঙ্গী সাথী, মামলার যেদিন উঠবে নথি হবে সেদিন নিরূপায় ।
ঘাটের তরী ঘাটে বান্ধা পাছে সার হইবে কান্দা, বেলা গেলে হলে সন্ধা পাড়ি দেওয়া হবে দায়।
বেলা থাকতে নৌকা ছাড়, ভাবের বৈঠা পাছায় ধর, মাল্লা ছয়জন বাধ্য কর, যাবে নৌকা কিনারায়।
সুজন বেপারী যারা, পাড়ি দিয়ে গেল তারা, কত জনের লাখের ভরা, ডুবাইল মাঝ দরিয়ায়।
করিম কয় মন বেপারী, সামনে অকুল পাড়ি, মুর্শিদ বিনে নাই কাণ্ডারী, ভবপুরের পারঘাটায় ।
১৪.
মনরে পাগলও মনা, তুমি কার ভরসা কর? কারে বাঁচাইতে গিয়া, কারে তুমি মার-রে মন ।
কে হয় কতক্ষণের সাথী, নিজে বিচার কর। ধোন্ধে ফকির ধ্যানে দিদার, আপন কর্ম সার-রে মন।
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, ছয় রিপুকে মার। দেহমন পবিত্র করে, নামাজ রোজা কর-রে মন ।
মায়ার বাঁধন করে ছেদন, আমার আমার ছাড়। শেষের দিনে ঘোর নিদানে, কে করবে উদ্ধার-রে মন ।
অজানাকে জানতে চাইলে, মুর্শিদচরণ ধর। পাক দরিয়ার পানি দিয়া, অজু-গোসল কররে মন ।
পাগল আবদুল করিম বলে, মরার আগে মর। তবে সে পাইতে পার, বন্ধুয়ার দিদার ওরে মন ।
১৫.
এমন এক রঙ্গের দেশ আছে পাগল বিনা ভাল লোক নাই। সেই দেশে যাইতে পারি না, ভব বাজারে ঘুরে বেড়াই ।
দেশের নাম হয় পাগল পাড়া ভাল লোক নাই পাগল ছাড়া। সে দেশে বাস করে যারা আত্মসুখে দিয়াছে ছাই ।
সেই দেশেতে যারা থাকে দোষী কয় বিদেশী লোকে। স্ত্রীকে মা বলে ডাকে, জাতের বিচার সেই দেশে নাই ।
খেলে তারা পঞ্চরসে, গানবাদ্যকে ভালবাসে আবদুল করিম ভাবছে বসে কি করে সেই দেশেতে যাই ।
১৬.
মেয়েরূপী ফুল ফুটেছে বিশ্ববাগানে। এই ফুল বেহেস্তে ফুটিয়াছিল কুদ্রতী শানে ॥
ঐ ফুল বেহেস্তে ছিল, ঐ ফুল দুনিয়ায় আইল। ফেরেস্তা ভুলিয়া গেল, ঐ ফুলের ঘ্রাণে ॥
ফুটেছে ফুল নানা বেশে, ফুলকে সবাই ভালবাসে। একটি ফুলের তিনটি রসে খেলে তিনজনে ।
পুরুষ ভ্রমরা জাতি, দেখিয়া ফুলের জ্যোতি। কেউ দিতেছে আত্মাহুতি, মূল না জেনে ।
প্রেম রস চিনে না যারা, আমার মত কর্মপুড়া। করিম কয় রসিক ছাড়া, বুঝে না অন্যে ।
১৭.
শুনবে কি বুঝবে কি ওরে মন ধুন্দা? এই দুনিয়া মায়াজালে বান্ধা ।
কতজন পাগল হইয়া, মায়াতে মন মজাইয়া, আপনার ধন পরকে দিয়া, সার হইয়াছে কান্দা।
বহুরূপী রঙবাজারে, মন থাকে না মনের ঘরে, রং দেখাইয়া প্রাণে মারে লাগাইয়া ধান্ধা- এই দুনিয়া মায়াজালে বান্ধা।
ছেড়ে দিয়া মায়াপুরী, দিতে হবে ভবপারি, চেয়ে দেখ মনবেপারী, দিন গেলে হয় সন্ধ্যা।
আপন যদি ভাল বুঝ, সুসময়ে মুর্শিদ ভজ, জ্ঞান থাকিতে পাগল সাজ, চোখ থাকতে হও আন্ধা- এই দুনিয়া মায়াজালে বান্ধা ।
সময়ে কাজ সাধন কর, নবীর মতে মনকে গড়, আপন কর্ম আপনি সার, করুক লোকে নিন্দা।
কাটিয়া মায়ার বাঁধন, যে হয়েছে মানুষ রতন করিম কয় নাই তার মরণ, সব সময় সে জিন্দা- এই দুনিয়া মায়াজালে বান্ধা।
১৮.
এ সংসারে জুয়া খেলা, হার জিতের কারবার।
রসিক বৈ কেউ জানে নারে কি আছে ভিতরে তার ।
মন কে তুই পাগল হলে, আসল দিয়া জুয়া খেলিলে।
আপনার কপাল আপনি খাইলে এমন দিন হবে না আর।
তোর ঘরে মুর্শিদের ধন, হেলাতে করলে না যতন।
করবে যদি স্বরূপসাধন ষড়রিপুর সঙ্গ ছাড় ।
না জানি কি নিশা খাইলাম, লাভের আশায় মুল হারাইলাম ।
আবদুল করিম দোষী হইলাম না করে নিজের বিচার ।
১৯.
নেশাপুরে এসে আমি হয়ে গেলাম নেশাখোর।
মূলসাধনে ভুল করেছি ভবের নেশায় হয়ে ভোর ।
সবই নেশাতে পাগল, আছে এতে আসল নকল।
অন্তরে সরল-গরল, কেউ সাধু আর কেউ যে চোর।
ঠেকলাম আমি মধ্যপথে, দিন গেল চিন্তা-ভাবনাতে।
যে পাগল আসল নেশাতে, আমি বলি সে চতুর ।
কামিনী-কাঞ্চনের ধাঁধা, এই নেমাতে জগৎ বাঁধা।
করিমের মন বেহুদা, কাছে বস্তু ভাবে দূর ।
২০.
সোনার যৌবন আমার বিফলে গেল।
যৌবন জোয়ারে, ভাটা দিলে পরে, আর কি উজান ধরে বলো গো বলো ।
অঙ্কুর বয়সে, ছেলে খেলায় মিশে, ভাবি অনায়াসে, যৌবন এলো।
যৌবনে মায়াজাল, মদন মাঝি হইয়া কাল, মহাজনের মাল, নদীতে ডুবাইলো ।
বন্ধু প্রেমের মহাজন, (তার) অফুরন্ত ধন, না চাহিতে কত জন, আগে পাইল।
আমি ভিখারী, দ্বারে দ্বারে ফিরি, বুঝিতে নারি কেন-নিদারুণ হইল।
আবদুল করিম ভাবে, আর কি দেখা হবে? একদিন দেখা দিবে, আশা ছিল।
থাকিতে সময়, হইয়া সদয়, বন্ধু দয়াময়, দেখা না দিল ।
২১.
যৌবন রে ঠেকছি তোরে লইয়া রাখব কি করিয়া।
তুমি যদি ছেড়ে যাবে, রঙ্গের খেলা ভঙ্গ হবে, দেখি যে ভাবিয়া ।
যৌবন-রে-সোনারূপা হইতায় যদি আদর করিয়া হৃদয় সিন্দুকে ভরে রাখতাম তোরে যত্ন করে, তালা চাবি দিয়া ।
যৌবন রে-নদীর জোয়ার ভাটা দিলে ফিরে ফিরে আয়।
যৌবন জোয়ার ভাটা দিলে আষাঢ় মাস চলে গেলে, আসে না আর ফিরিয়া ।
যৌবন রে-কত আশা ছিল মনে তোমারে পাইয়া।
আগে কি আর জানি আমি ছাড়িয়া যাইবায় তুমি শাহ করিমরে থইয়া ।
২২.
কাম নদীর তরঙ্গ দেখে করে ভয়।
জানতে পারে পরম তত্ত্ব গুরুর মন্ত্র যেজন লয় ।
নদীর নাম হয় কামাল সাগর, মাসে একবার উঠে লহর, সাধু জনে রাখে খবর, যোগে মিশে সেই সময়।
না জেনে কেউ পরলে পাঁকে, ঐ নদীর ঘুর্ণিবাকে, না জানি কি জিনিস থাকে, জাহাজ নৌকা টেনে লয় ।
নদীতে হয় নোনা পানি, কালকুম্ভিরের বসত জানি, যে হয়েছে পরশমণি, তারে দেখলে দূরে রয়।
সাধু জ্ঞানী আরিফ যারা, ঐ নদীর ভাও জানে তারা,।
হয়ে রাজহংসের ধারা, জল ফেলে দুধ বেছে লয়।
পড়িও না রিপুর ফাঁদে, ভক্তি রেখ মুর্শিদপদে, পড়বে না কোনো বিপদে, নিলে মুর্শিদ পদাশ্রয়।
আবদুল করিম মূঢ়মতি মুর্শিদ বিনে নাই তার গতি, কাঙ্গাল জেনে দাসের প্রতি, যদি মৌলার দয়া হয়।

॥ নয় ॥
মানস পাল চৌধুরী স্থায়ী নিবাস-লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম বর্তমান নিবাস- মোমিন রোড চট্টগ্রাম। জন্ম- ২৬ ডিসেম্বর ১৯৫৫ খ্রি:
বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ক-বিশেষ শ্রেণীর লোকসঙ্গীত শিল্পী। বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত সঙ্গীত শিল্পী। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত গীতিকার। সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য ভারত ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ ও সম্মামনা লাভ। ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর পিতা মৃত এস সি পাল ছিলেন একন স্বনামধন্য কীর্তনীয়া।
বাউল গান
১.
শ্রীগুরুর দেহ হরি মন্দির বিশ্বাস রাখো মন গুরু তোমায় দিতে পারে অমূল্য রতন বিশ্বাস রাখো মন, তুমি বিশ্বাস রাখো মন ।
গয়া-কাশী-শ্রীবৃন্দাবন যতো তীর্থ আর সকল তীর্থ গুরুর দেহ শ্রীগুরু করো সার, তোমার গুরুর মাঝে বিরাজ করে পূর্ণ ব্রহ্ম সনাতন ।
গুরু সাধন, গুরু ভজন করা আত্ম সমর্পন গুরু-শিষ্যের অভেদ আত্মায় হয় মধুর মিলন ।
বাউল মানস ভেবে কয়, গুরু পাবো বলে বাসা যেন বাঁধতে পারি শ্রীচরণের তলে ওমন, অন্তিম কালে গুরুর সঙ্গে যাবি চলে শ্রীবৃন্দাবন ।
২.
অবুঝ মন আগে করো শেষের আয়োজন ভব পারে যেতে হবে ডাক দিলে তোর মহাজন ।
থাকতে সময় গুরু ধরো সাধন ভজন আগে করো গুরু কৃপা হলে পরে পাবে অমূল্য রতন ।
ওমন, আর করো না অবহেলা পশ্চিমে ডুবিলো বেলা ছাড়ো, তুমি মায়ার খেলা ভাবো, একবার নিরঞ্জন ।
৩.
গুরু গো আমার জ্ঞান নয়নে পড়লো ছানি হায়রে, দেখি না এ নয়নে তব কৃপা বিনে দয়াল দেখবো কেমনে।
হলো না সাধন-ভজন শুধু করলাম কাল ক্ষেপণ গুরু ভক্তি হলো না মোর বিপথে গমন ওরে, তুমি হলে মন মহাজন কৃপা করো গোপনে ॥
গেলো চার কালের তিন কাল জীবনে এলো রে বৈকাল মায়া জালে বন্দি হয়ে গেলো ইহকাল এ অন্ধজনে খুঁজে মরে পর কালের সন্ধানে।
8.
আমি যার আশাতে ঘুইরা বেড়াই দোতারাটা লই গানে গানে উদাস মনে, পথ চেয়ে রই আজো পথ চেয়ে রই ।
আপন ভেবে সরল প্রাণটা দিয়া ছিলাম যারে তার লাগিয়া সব হারালাম এ’ভব সংসারে, তারে, না বুঝিয়া ভুল করিলাম ওলো প্রাণ সই ॥
সরলে গরল মিশাইয়া করলাম একি ভুল দিবা-নিশি তার ভাবনায় গেলো মাথার চুল ।
মরণ যদি হয়গো আমার তার বিরহ শোকে তোমরা, বেঁধে দিও দোতারাটা আমার পোড়া বুকে, ওরে, সেতো আমার, দুঃখের সাথী যাবে ওসে কই ।
৫.
আনতে পারো ওঝা-বৈদ্য যতই খাও ঔষধ পথ্য কিছু হবে-না-তাতে মরণ কারো কথা শোনে না শোনে না- শোনে না ।
এতো সাধের মানব জমি পেলিরে তুই মন শুদ্ধভাবে চাষ না দিলে পাবি না ফলন, ও তোর, গুরু নামের ট্রাক্টর বিনে চাষতো হবে না।
জন্মিলে মরিতে হবে সেতো চিরন্তন শমন যদি আসে দ্বারে করবি কি তখন, কি নিয়ে তুই যাবি পাড়ে করলি না সেই ভাবনা ।
৬.
ভোলামন… শ্রীমতির কদম ডালে মৌচাক বাইন্দ্যাছে মৌচাক দেখতে শোভা, মন লোভা তা’তে কালার নজর পইড়াছে ॥
মৌ ভরা ঐ মৌচাক খানি দেখতে চমৎকার পিরিতির মধুর ছোঁয়ায় দোলে বারে বার, ওরে, না জানি কোন মধু করে মৌচাক খানি গইড়াছে ।
শোন তোরে কই, ওরে ভোলা মন, রসিক বিনে বে-রসিকে পায় না দরশন ।
কোন কারিগর বানাইলো তা তারে তালাশ কর তারই কাছে গেলে পাবি মৌচাকের খবর, অধম মানস বলে মৌচাক ধরলে মরনের ভয় রইয়াছে।
৭.
আমার শিশু-কিশোর রঙের যোইবন গেলো রে তিন কাল শেষ কালেতে এক তারা তুই বাঁধাইলি গোলমাল।
কাঁচা বয়স রসের মেলা প্রেম জোয়ারে ভাসিয়ে ভেলা কাটাইলি দিন, মন পাগলা হইয়া বে সামাল ।
তোর পিরীতির ফাঁদে পড়ি এলো-মেলো সংসার বাড়ি দয়াল, কোন কুলে ভিড়াবে তরী বুঝি না হালচাল।
৮.
তোরে ঐ নদীতে ডুব না দিতে কতো বারণ করেছি এখন কেন বলিস মনা মরেছি হায় মরেছি ।
সেই নদীতে আবর্জনা কতো রঙের ভাসে ফেনা ডুব দিলে তোর হবে জানা তাই তো তোরে বলেছি।
সারাজীবন করলি বসত আমার আঙ্গিনায় আমার কথায় না মাখিলি বিবেক হলুদ গায়।
গুরুর প্রেমে মাখো সাবান প্রেম নদীতে করো স্নান তবে, বলবিরে তুই জুড়ালো প্রাণ বড়ই শান্তি পেয়েছি ॥
৯.
প্রাণের বান্ধব রে কোন বা দোষে, ঘরের বাহির করলে আমারে বলো, করলে আমারে ।
তোমার সনে, পিরীত করি অঙ্গ হইলো কালা কোথায় গেলে পাবো দর্শন জুড়াইতাম জ্বালা ।
তোমার লাগি, মন উদাসী কান্দি দিবা-নিশি পাগল করা বাজাও বাঁশী আবার কোন বা দূরে বসি।
প্রেমের মালা, হইলো বাসি দেব কার গলে যদি না পাই, তোমার দেখা প্রাণ ত্যাজিব জলে ।
১০.
জন্মে কেনো, নারী হইলাম রে আমি, হইলাম কেন রাধা শ্যাম যদি হইতো রে রাধা বুঝতো আমার, (মনের) ব্যাথারে জন্মে কেনো, হইলাম রাধা রে ।
এ’দেহ তমাল ডালে ওরে, বসতো শ্যাম পাখি উদাসী বানাইতো আমার শ্যাম বন্ধুয়ার বাঁশীরে ।
রতনেরে যতন করে রাখতাম হৃদয় ভরে দিবা-নিশি দু’নয়নে দেখতাম প্রাণ, ভরে রে ।
কলঙ্কের হার, নিলাম রে গলে ওরে, প্রাণ কানাই কিনিয়া বাঁচিবে তোমার বিনোদিনী রায় রে ॥
কি আর বলিবো, হায় রে ব্যাথার ব্যথি নাই ও শ্যাম, মরণ কালে না আসিলে কি হবে উপায় রে ॥
১১.
আজি এ জোছনা রাতে বসিয়া সান বাঁধা ঘাটে প্রেমের পাশা খেলবো দু’জনায় আসিবে আসিবে শ্যাম রায় আমার, আসিবে আসিবে শ্যাম রায় ।
ভালোবাসা নূপুর করে দেবো চরণে প্রেম বেলির মালা দেবো মধু এ লগনে, আঁচল দিয়ে, গড়বো বাসর কদম্ব ছায়ায় ।
আসে যদি নাগর বন্ধু অতি গোপনে রাখবি ঘিরিয়া তারে সব সখি জনে, ছল না করিয়া যেন পালিয়ে না যায় ।
১২.
চলো সখি চলো সখি প্রেম নগরে যাই সেথা আছে শ্যাম কালিয়া দেখতে মন চায় তারে দেখতে মন চায় ।
অধরে তার মুচকি হাসি যেন মুক্তো ঝরে উদাস করা বাঁশীর সুরে হৃদয় আকুল করে, তার লাগিয়া মন পাখিটা কাঁদিয়া বেড়ায়।
তারে যদি পাইগো সখি পোড়া এ অন্তরে মন পিঞ্জরে রাখতাম বেঁধে সারা জনম ভরে, স্বপনেতে দেখি শুধু সাক্ষাতে না পাই ।
মহা প্রভু স্মরণে
১৩.
প্রণাম জানাতে এলাম তোমার শ্রীধামে, প্রভু তোমার শ্রীধামে। পূণ্যতীর্থ শ্রীধাম, তোমার আদি বাসস্থান, ভক্তের জোয়ার নামে ঢাকা দক্ষিণে ॥
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য যিনি শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, রূপেই তিনি কতো গৌর ভক্ত কাঁদে সেথা কৃপার সন্ধানে ।
আমি অতি পাপী জন দাও প্রভু দরশন, চরণ ধূলা চাহে, হীন অধমে ।
তুমি তো জয় মহাপ্রভু তব কৃপা বিনে কিছু, হয় না কভু। আমায় নিজগুণে পার করিও তোমারি নামে ।
মুর্শিদী গান
১৪.
ওরে ও পাপী-তাপী জন করো হে মুর্শিদের ভজন একবার ডাকে তারে মন-প্রাণ ভরে পারের কর্তা তিনি মোদের প্রেমের মহাজন।
এ’ ভবে জন্ম নিয়া, কি না করিলাম লোভে মোহে মত্ত হয়ে, তারে ভুলিলাম ভব পারে কে ত্বরাবে ভালি না রে মন ।
এ ভবের মায়াজালে, আটকা পড়িয়া আমার মত কাঁদিস নারে, ভক্তিহীন হইয়া ভক্তিসুধা পান করিলে হয়রে পাপ মোচন।
ভক্তিগীতি
১৫.
বারো আউলিয়ার আবাদ ভূমি সোনার চট্টগ্রাম শাহ্ জালাল- শাহ্ পরান সিলেটের পরান রে সিলেটেরই জান ।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সিলেটের সুর্মা দুটি নদীর পাড়েকতো-বাবা’র মহিমা, শাহ্বদর-শাহ্জালাল আসন তার প্রমাণ।
চট্টল বীর সূর্যসেন-সাহিত্যে করিম পণ্ডিতে আস্কর আলী- কবি রমেশ শীল মাইজ ভান্ডারে আজব খেলায় গোলাম রহমান ।
গৌর গৌবিন্দ-হাসন-আরকুম আরো দূর্বিনশাহ্ রাধা রমণ শাহ্ আব্দুল করিম-সিলট গীত রাজা তাঁদের, চরণ ধূলো মাথায় রেখে গেয়ে যাবো গান।
শিল্পী-কবি-সাহিত্যেকের, প্রাণের বাংলাদেশ লালন সাঁইয়ের বাউল গানে, ঘুচায় মনের ক্লেশ এ’সব গান হারিয়ে গেলে কাঁদবে সবার প্রাণ ।
১৬.
পিতা-মাতা করো ভক্তি যত সন্তান গণ ইহ জীবন ধন্য করো শুদ্ধ করে মন ।
এক সাগর রক্ত ঢেলে মা পেয়েছে তোমায় কোলে সেই মায়েরি চরণ তলে জীবন করো পণ।
মাতৃভক্তি পিতৃ টানে জয় আনে জীবন সোপানে দেখো তোমরা এই ভুবনে তারাই মহৎ জন ।
স্বর্গের চেয়ে পিতা বড়ো সরল প্রাণে বিশ্বাস করো পিতা-মাতার সেবার গুণে পাবে পরম ধন ।

॥ দশ ॥
জন্ম: ১৩২৩ ছিদ্দেক শাহ বাংলা-২৯ পৌষ (১৯১৭ খ্রি:) মৃত্যু: ১৩৯৬ বাংলা-২৮ পৌষ (১৯৯০) জন্মস্থান: গ্রাম-মাইবাড়ি, ইউনিয়ন-আপ্তাবনগর, জেলা-সুনামগঞ্জ।
ক্বারি হিসেবে পরিচিত ছিলেন- পেশায় ছিলেন দর্জি। পাঁচ শতাধিক সঙ্গীতের রচয়িতা বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত আদর্শ শিশু শিক্ষা নিকেতনে চাকরিরত পুত্র সেবুল মিয়া।
সঙ্গীতসমূহ সেবুল মিয়ার নিকট থেকে সংগৃহীত; যিনি ১৯৯৬ খ্রি: থেকে বাংলাদেশ বেতার এবং ২০০০ খ্রি: থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
১.
কি আজব কারিগর বানাইয়াছে দেহঘর হিসেব করিয়া গড়লো ঐ দেহ বাসর ।
হাড়, মাংস, রক্ত দিয়া রগের টানায় দেয় বান্দিয়া আব, আতশ, থাক বাদে দিল তার ভিতর ।
সেই ঘরে আছে কোঠা আট কুটুরি নয় জানালা রবি শশি দুই বাত্তি জ্বলে নিরন্তর ।
বাহাত্তর হাজার তারের জোড়া মধ্যখানে দিছে গোড়া বুধি, বল, হুসের বেরা ঐ মানব শহর ।
চৌদ্দ রিকাব, বার বুরুজ দশদিক তার চন্দ্র সুরুজ সুজন মেস্তরি গড়লো অতি মনোহর ॥
ছিদ্দেক শার মাটির ঘর না হইল অতি সুন্দর জানেনা কী পাপে সে কষ্ট করলো জনম ভর ।
২.
বন্ধুর প্রেমে মন মজাইয়া জীবনটা করেছি ভুল মনের ভিতর ছেল বিন্ধিয়া হইল মোর পিত্তশূল ।
প্রথম প্রেমে দেখার কালে আমারে করে আকুল বলেছিলে তুমি আমার পড়াইছিলে কানে দুল।
না জানিয়া না ভাবিয়া প্রেমের মালা দেখাইলে কী যাদু করিল বন্ধে দিন রাত্রি আগুন জ্বলে নিদাগেতে দাগ লাগইল কলংকী করলো গোকুল।
এই জগতে প্রেমিক যারা মইর না ভাই অকালে সারা জনম ভুলের মাশুল দিতে হবে সকলে।
পড়লো ছিদ্দেক দশম দশায় মিটলোনা প্রেমের গোল।
আরও পড়ূনঃ
