Site icon Folk Gurukul [ লোকগান গুরুকুল ] GOLN

প্রেম-পাথারে যে সাঁতারে তার মরণের ভয় কী আছে-লালন শাহ

প্রেম-পাথারে যে সাঁতারে তার মরণের ভয় কী আছে

লালন শাহ এর গান প্রেম-পাথারে যে সাঁতারে তার মরণের ভয় কী আছে আজকের আয়োজন

প্রেম-পাথারে যে সাঁতারে তার মরণের ভয় কী আছে

 

প্রেম-পাথারে যে সাঁতারে তার মরণের ভয় কী আছে।

স্বরূপ মরণে সদা মত্ত যারা ঐ কাজে ॥

শুদ্ধ প্রেম রসিকের ধর্ম

মানে না বেদবিধির কর্ম

রসরাজ রসিকের মর্ম

রসিক বৈ আর কে জেনেছে ॥

শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ

এই পঞ্চে হয় নিত্যানন্দ

যার অন্তরে সদা আনন্দ

নিরানন্দ জানে না সে ॥

পাগল পায় পাগলের ধারা

দুই নয়নে বহে ধারা

যেন সুরধনীর ধারা

লালন কয় ধারায় ধারা মিশে আছে ॥

 

লালনের ধর্ম বিশ্বাস

লালনের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে গবেষকদের মাঝে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে, যা তার জীবদ্দশায়ও বিদ্যমান ছিল।[টীকা ১] তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত প্রবাসী পত্রিকার মহাত্মা লালন নিবন্ধে প্রথম লালন জীবনী রচয়িতা বসন্ত কুমার পাল বলেছেন, “সাঁইজি হিন্দু কি মুসলমান, এ কথা আমিও স্থির বলিতে অক্ষম।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় লালনের জীবদ্দশায় তাকে কোনো ধরনের ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করতেও দেখা যায়নি। লালনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। নিজ সাধনাবলে তিনি হিন্দুধর্ম এবং ইসলামধর্ম উভয় শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। তার রচিত গানে এর পরিচয় পাওয়া যায়।

প্রবাসী পত্রিকার নিবন্ধে বলা হয়, লালনের সকল ধর্মের লোকের সাথেই সুসম্পর্ক ছিল। মুসলমানদের সাথে তার সুসম্পর্কের কারণে অনেকে তাকে মুসলমান বলে মনে করতেন। আবার বৈষ্ণবধর্মের আলোচনা করতে দেখে হিন্দুরা তাকে বৈষ্ণব মনে করতেন। প্রকৃতপক্ষে লালন ছিলেন মানবতাবাদী এবং তিনি ধর্ম, জাত, কূল, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদি অনুসারে মানুষের ভেদাভেদ বিশ্বাস করতেন না।

বাংলা ১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত মাসিক মোহম্মদী পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লালনের জন্ম মুসলিম পরিবারে বলে উল্লেখ করা হয়। আবার ভিন্ন তথ্যসূত্রে তার জন্ম হিন্দু পরিবারে বলে উল্লেখ করা হয়।

লালনের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন,

লালনের পরিচয় দিতে গিয়ে সুধীর চক্রবর্তী লিখেছেন,

কাঙাল হরিনাথ তাঁকে জানতেন, মীর মশাররফ চিনতেন, ঠাকুরদের হাউসবোটে যাতায়াত ছিল, লেখক জলধর সেন বা অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় তাঁকে সামনাসামনি দেখেছেন কতবার, গান শুনেছেন, তবু জানতে পারেননি লালনের জাতপরিচয়, বংশধারা বা ধর্ম।

একটি গানে লালনের প্রশ্ন:

এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে।
যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান
জাতি গোত্র নাহি রবে।

 

 

কিছু লালন অনুসারী যেমন মন্টু শাহের মতে, তিনি হিন্দু বা মুসলমান কোনোটিই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন ওহেদানিয়াত নামক একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদের অনুসারী। ওহেদানিয়াতের মাঝে বৌদ্ধধর্ম এবং বৈষ্ণব ধর্মের সহজিয়া মতবাদ, সুফিবাদসহ আরও অনেক ধর্মীয় মতবাদ বিদ্যমান। লালনের অনেক অনুসারী লালনের গানসমূহকে এই আধ্যাত্মিক মতবাদের কালাম বলে অভিহিত করে থাকে। লালন মূলত অসাম্প্রদায়িক ও মানবধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন।

আরও দেখুন :

প্রেম-পাথারে যে সাঁতারে তার মরণের ভয় কী আছে-লালন শাহ

Exit mobile version